আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে দুটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান তীব্র সংঘর্ষের কারণে গত চার দিনে প্রায় ৪,০০০ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের কর্মকর্তারা। খবর এএফপির।

মিজোরামের স্বরাষ্ট্র সচিব ভানলালমাউইয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, এই শরণার্থীরা দীর্ঘ ঘন বনাঞ্চল পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে ভারতে প্রবেশ করেছেন। অনেকের আত্মীয়স্বজন ভারতের মাটিতে থাকেন। তাই তারা তাদের কাছেই থাকছেন। অন্যদের কমিউনিটি হলগুলোতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যটি ইতিমধ্যেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৩০,০০০-এর বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে।

মিজোরামের এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত চার দিনে আনুমানিক ৪,০০০ মানুষ ভারতে ঢুকেছে।

পুলিশ জানায়, মিয়ানমারের যে দুটি চিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে, তারা উভয়েই সামরিক শাসনের বিরোধী। এই সংঘর্ষ মূলত ‘চিনল্যান্ড’ নামক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, সীমান্তের অন্য পাশে পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ, তাই আমরা তাদের ফিরে যেতে বলিনি।

এএফপি বলছে, ভারত সরকার চীনের প্রভাব মোকাবিলায় মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী, ফলে তারা এখনো সরাসরি দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা করেনি।

আন্তর্জাতিক

ইরান-ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ইসরাইল। এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। মার্কিন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তাকার কারলসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। খবর এএফপির।

পেজেশকিয়ান বলেন, তারা চেষ্টা করেছিল। তারা সেই অনুযায়ী কাজ করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ হত্যাচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ছিল না। এটি ছিল ইসরাইল। আমি একটি বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলাম। যেখানে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তারা সেই জায়গাটিতে বোমাবর্ষণের চেষ্টা করেছিল।

তবে তিনি এই হামলার নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি। গত মাসে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ইরান-ইসরাইল সম্পর্ক বর্তমানে চরম উত্তেজনাপূর্ণ। এমন প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের এ বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ যুদ্ধে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকেও হত্যার কথা বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। তবে শেষমেশ তাকে হত্যা করতে পারেনি।

আন্তর্জাতিক

তুরস্ক আবারও যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর এজন্য সম্ভবত রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তারা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গত সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে আঙ্কারা জানায়, তারা আবারও এফ-৩৫ জেট প্রকল্পে যোগ দিতে ইচ্ছুক এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্মেলনে তুরস্ক তাদের বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘স্টিল ডোম’ সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে যেখান থে কে বাদ পড়তে যাছে রাশিয়ান এস-৪০০ সিস্টেম।

সম্মেলন শেষে বিমানযাত্রায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘স্টিল ডোম’ একটি একক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় কার্যকর প্রতিরক্ষা দেবে।

যদিও ‘স্টিল ডোম’ বেশ কিছুদিন ধরেই পরিকল্পনায় রয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি মে মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তুরস্কের ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর, সম্পূর্ণ একীভূত নেটওয়ার্ক, যা দেশীয় অস্ত্র ও সেন্সরগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করবে। তবে ২০১৯ সালে কেনা রাশিয়ান এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমটি এই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এস-৪০০ একটি বিদেশি প্রযুক্তি হওয়ায় এটি স্টিল ডোমের তথ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় অন্তরায় হতে পারে।

তবে তুরস্কের নতুন ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের রুশ নির্মিত এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এফ-৩৫ ফাইটার জেট প্রোগ্রামে পুনরায় যুক্ত হওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, তুরস্ক এখনো এফ-৩৫ প্রকল্পে ফেরার আগ্রহ হারায়নি এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও এই বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা হয়েছে।

২০১৯ সালে এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে তুরস্কের বহিষ্কারের পাঁচ বছর পরেও, তুরস্কের এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টুসাস) এখনও সংবেদনশীল এফ-৩৫ উৎপাদন সরঞ্জাম সংরক্ষণ করছে। বহিষ্কারের আগে, টুসাস এফ-৩৫ ফাইটারের ফিউজেলাজ বা মাঝের অংশ তৈরি করত, যার উৎপাদন ২০২২ পর্যন্ত চালু ছিল। ২০২৩ সালে, এফ-৩৫ ফাইটারের মূল প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যান জার্মানির রেইনমেটাল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে জার্মানির উইজে শহরে একটি নতুন অ্যাসেম্বলি লাইন স্থাপন করছে যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি চালু হওয়ার কথা। তুরস্কের কোম্পানিগুলো আগে এফ-৩৫ এর ১,০০০-এর বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করত।

এদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক ২৯ জুন জানান, এস-৪০০ কেনার কারণে তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা তাদের শীর্ষ কূটনীতিকদের বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

সব কিছু বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে তুরস্ক বছরের শেষ নাগাদ আবারও এফ-৩৫ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারে, আর এস-৪০০ হয়তো কোনো তৃতীয় দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হবে অথবা চিরতরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় তুরস্কে পড়ে থাকবে।

তুরস্কের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকার নিশ্চিত করেছেন, এস-৪০০ এখনো সক্রিয় নয় এবং একটি অজ্ঞাত স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী চাভিত চাগলার এই এস-৪০০ বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তান বা ভারতকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উল্লেখ করেন, যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সবমিলিয়ে আঙ্কারা এখন নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, যেখানে এস-৪০০ এর ব্যবহার হচ্ছে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

মাত্র এক টুকরো সিগারেটে তিন দিন জ্বলেছে গ্রিসের চিওস দ্বীপ। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১০ হাজার একর জমি। রোববার শুরু হওয়া এ দাবানল গ্রাস করেছে বণভূমি, চারণভূমি, জীববৈচিত্র্যসহ এক বিস্তৃত অঞ্চল। বুধবার আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অঞ্চলজুড়ে শত শত দমকলকর্মী আগুনের পুনঃপ্রজ্বালন ঠেকাতে কাজ করছেন। মঙ্গলবার রাতে আগুনের সূত্রপাত ঘটানোর সন্দেহে এক জর্জিয়ান নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন, তিনি একটি সিগারেট ফেলে দেন, যা থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে এ ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠতে না উঠতেই বুধবার বিকালে দেশটির আরেক দ্বীপেও ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দাবানল। বৃহস্পতিবার দেশটির দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। একইভাবে পুড়ছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনও। বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এপি।

ইউরোপজুড়ে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। যার জেরে ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। বুধবার গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য ক্রিট দ্বীপে দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়। দাবানলে কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় তিন হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

গ্রিক দমকল পরিষেবা জানিয়েছে, ২৩০ জনের বেশি দমকলকর্মী ক্রিটের একাধিক স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। ৩৮টি ইঞ্জিন ও পানিবাহী ট্রাক নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রিসের হালকিদিকি অঞ্চলেও নতুন একটি দাবানল দেখা গেছে। যেখানে ১৬০ জন দমকলকর্মী ও ৪৯টি ফায়ার ট্রাক আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ঝড়ো হাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং নেভানোর কাজকে জটিল করে তুলছে। বিভিন্ন অংশে নিয়ন্ত্রণে আনার পরও আবার আগুন জ্বলে ওঠায় পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে পড়ে। দমকল বাহিনী জানিয়েছে, অতিরিক্ত সাহায্যবাহী দল ও বিমান রাজধানী এথেন্স থেকে পাঠানো হচ্ছে। এর আগে রোববার ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়ে গ্রিসের চিওস দ্বীপ। ইতোমধ্যে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটানোর সন্দেহে এক জর্জিয়ান নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই নারী অনিচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে দাবানলের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ ইউরোপের দেশ গ্রিস। তবে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগুনের মাত্রা ও ধ্বংস অনেক বেশি মারাÍক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দাবানলের প্রভাব শুধু গ্রিসেই সীমাবদ্ধ নয়। জার্মানির সাক্সনি রাজ্যেও একটি বনভূমিতে আগুন লেগেছে। এতে অন্তত দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। রাজ্য থেকে শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্পেনেও দাবানলের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির কাতালোনিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে দুইজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১৬ হাজার একর জমি।

এপির খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে এই দাবানলের সূচনা হয় এবং বুধবার তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনের কারণে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ১৪ হাজার মিটার (৪৫ হাজার ফুট) উচ্চতার ছাই ও ধোঁয়ার একটি বিশাল কুণ্ডলী। এটি কাতালোনিয়ায় রেকর্ড করা অন্যতম বৃহৎ দাবানল বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস। এ বছর তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত ইউরোপের জনজীবন।

আন্তর্জাতিক

আগামী সপ্তাহের যেকোনো সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সামনের সপ্তাহে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গাজা ও ইরানে আমরা যে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমরা জিম্মিদের ফেরত পেতে চাই। খবর আল-জাজিরার।

গাজা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রচেষ্টার মাঝে আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।

খবরটি এমন সময় এলো যখন ইসরাইলের জন্য ৫১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তির অনুমোদন দিল ট্রাম্প প্রশাসন।

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। ওয়াশিংটন সফরের তথ্য নিশ্চিত করে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর ওইদিন থেকেই গাজায় বর্বরতা শুরু করে ইসরাইল। আড়াই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি সেনাদের অব্যাহত হামলার কারণে স্তূপে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা যায়নি।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এটি পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে পাকিস্তানের অষ্টম মেয়াদ এবং ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো সভাপতিত্ব পালন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে মাসিক ভিত্তিতে বর্ণানুক্রমিকভাবে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পরিবর্তিত হয়। জুলাই মাসের জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পড়েছে পাকিস্তানের ওপর।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৮২ ভোট পেয়ে পাকিস্তান অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। এবারের সভাপতিত্ব পাকিস্তানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে পাকিস্তান চলতি জুলাই মাসে পরিষদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার নেতৃত্ব দেবে।

যদিও এই মাসিক ঘূর্ণায়মান সভাপতিত্বের নির্বাহী ক্ষমতা নেই, তবু এটি সংশ্লিষ্ট দেশকে বৈশ্বিক ইস্যু—বিশেষ করে গাজা ও ইউক্রেন সংকটের মতো—নিয়ে আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেয়।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে বলেছেন, আমরা বিনম্রতা ও জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করছি। বিশ্বজুড়ে এখন সংঘাত ও মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

পাকিস্তানের সভাপতিত্বকালীন সময়ে দার দুটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক উন্মুক্ত আলোচনা। গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এই অধিবেশন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক মনোযোগ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ব বর্তমানে এক অস্থির, সংঘাতময় ও জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এ সভাপতিত্ব আমাদের জন্য একটি নীতিনিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চাই।

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের আগ্রাসনে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এটি ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। শুক্রবার এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ।

এই সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত নিহতের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। গাজার মন্ত্রণালয়টি জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৬,৩০০ ছাড়িয়েছে।

হারেৎজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি নিহত ছাড়াও বহু মানুষ পরোক্ষভাবে প্রাণ হারিয়েছেন— যেমন ক্ষুধা, ঠান্ডা ও রোগে আক্রান্ত হয়ে। এর কারণ গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল।

দৈনিকটি আরও বলেছে, ইসরাইলি মুখপাত্র, সাংবাদিক ও প্রভাবশালীরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত নিহতের সংখ্যা দেখে প্রায়শই সেটিকে বাড়িয়ে বলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে ক্রমে আরও বেশি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নিচ্ছেন— এমনকি বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় এটি হয়তো রক্ষণশীল হিসাবও হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ হোলোওয়ের অর্থনীতিবিদ এবং সংঘর্ষকালীন মৃত্যুর ওপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল স্প্যাগ্যাট গাজায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন।

এই সমীক্ষায় গাজার ২,০০০টি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ১০,০০০ মানুষ ছিল।

সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজা যুদ্ধে আনুমানিক ৭৫,২০০ জন ইসরাইলি সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন, যার সিংহভাগই ইসরাইলি গোলাবারুদের কারণে।

হারেৎজ বলছে, নিহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই শিশু (১৮ বছর বয়স পর্যন্ত) এবং নারী— যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অধিকাংশ যুদ্ধের তুলনায় ব্যতিক্রমী।

গবেষক স্প্যাগ্যাট বলেন, এই সমীক্ষার তথ্য গাজা যুদ্ধকে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও সিরিয়া, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যা গাজার চেয়ে বেশি হতে পারে, তবে গাজা যুদ্ধটি সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে যুদ্ধে জড়িত সামরিক সদস্যদের তুলনায়। আর এটি জনসংখ্যার অনুপাতে মৃত্যুহার বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, গাজায় সহিংসভাবে নিহত নারী ও শিশুর অনুপাত অন্যান্য সাম্প্রতিক যুদ্ধের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি— যেমন কসোভো (২০%), উত্তর ইথিওপিয়া (৯%), সিরিয়া (২০%) এবং সুদান (২৩%)।

স্প্যাগ্যাট বলেন, আমার ধারণা, গাজার প্রায় ৪ শতাংশ জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন। ২১’শ শতাব্দীতে আর কোনো সংঘাতে এত বেশি অনুপাতে মৃত্যু ঘটেছে কিনা, আমি তা জানি না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় ভয়াবহ অভিযান চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, মানবতাবিরোধী এ বাহিনীটি কোনো তোয়াক্কা করছে না।

গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এছাড়াও গাজায় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্থলবন্দর ব্যবহার করে পোশাকের পর এবার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশই বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ধারণা করছেন। খবর বিবিসির

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর ও রাজবাড়ী জুট মিলসের চেয়ারম্যান শেখ শামসুল আবেদিন বলেন, ভারতের নতুন সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের পাটশিল্পে কতটা পড়বে সেটি তারা বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি আরও বলেন, কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ হবে হয়ত। তবে স্থলবন্দর না হলে নৌপথে কীভাবে রপ্তানি চালু রাখা যায় সে আলোচনা এর মধ্যেই শুরু হয়েছে।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সাবেক সদস্য ও বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান বলছেন, স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ হলে সেটি নৌপথে রপ্তারি করে পোষানো খুবই কঠিন বিষয় হবে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই এসব পালটিপালটি পদক্ষেপ হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্যই বেশি ক্ষতিকর হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাকের পর পাট রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমার মনে হয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত আমাদের স্বার্থেই।

যদিও ভারতের সবশেষ পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বাকযুদ্ধের পর ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে।

ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন সরাসরি ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে, যা দ্রুত সমাধান করা দরকার বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ভারতের ঘোষণায় কী বলা হয়েছে

শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে নয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কথা প্রকাশ করা হয়।

যদিও ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পণ্য মুম্বাইয়ের নহ্ভা সেভা বন্দর দিয়ে ভারতে যেতে পারবে।

স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা এসব বাংলাদেশি পণ্যে মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি। এর মধ্যে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় রয়েছে এ তালিকায়।

ভারত এ ধরনের যে নয়টি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, এসব পণ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল প্রায় পনের কোটি ডলারের কাছাকাছি, যার প্রায় সবটাই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিল।

রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে, এই পনের কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে মাত্র বিশ লাখ ডলারের রপ্তানি স্থলবন্দর দিয়ে হয়নি।

তবে ভারতীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে ওই নয় ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ভারতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে, যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ নয়শ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। মূলত ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার হলো বাংলাদেশ।

ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হতো পোশাক এবং এরপর পাট ও পাটজাত পণ্যই দেশটিতে বেশি যায় বাংলাদেশ থেকে।

এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতেও বাংলাদেশ ভালো করছিল। এর ওপরে আগেই বিধিনিষেধ দিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশে কেমন প্রভাব পড়বে

শুক্রবার স্থলবন্দর দিয়ে নয়টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে তিন মাসে তিন দফায় বিধিনিষেধ দিল ভারত।

এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছিল।

তারও আগে গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল দেশটি।

এর আগে আটই এপ্রিল অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছিল ভারত।

এরপর ১৫ এপ্রিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সূতা আমদানি বন্ধ করে ঘোষণা করে বাংলাদেশ।

অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ভারত অনেক দিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু এখনকার পালটিপালটি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সংকট তৈরি করছে। এটা কারও জন্যই ভালো নয়। বাংলাদেশ ভারতের ওপর অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল। আবার ভারতীয় পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের উপরেও নির্ভরশীলতা আছে। তাই দুই পক্ষই যত দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে ততই দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি উপকৃত হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, তৈরি পোশাকের পরে ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্যই বেশি যাচ্ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। যদিও ২০১৭ সালে দেশটি বাংলাদেশি পাটপণ্যে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক আরোপ করে, যা ২০২৩ সালে আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।

শেখ শামসুল আবেদিন বলছেন, ওই শুল্ক আরোপের কারণেও বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য ভারতের রপ্তানিতে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশের পাট ভালো করছিল।

তিনি বলেন, এখন হয়তো কাঁচাপাট রপ্তানি সংকটে পড়বে। তবে একই সঙ্গে দেশে পাটের ফিনিশড গুড উৎপাদন আরও বাড়ানো সুযোগ আছে। যদিও নৌপথে ভারতের রপ্তানির সুযোগ এখনো আছে। সেটি কতটা কাজে লাগানো যায় তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতির পরও ইরানের ওপর ইসরাইলের নতুন হামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ‘বিরক্ত’ হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল লাভেল।

লাভেল বলেন, ট্রাম্প স্পষ্টতই নেতানিয়াহুর প্রতি খুবই বিরক্ত। এমনকি বলা যায়, তিনি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার মনে করছেন।

ইউরোপে একটি ন্যাটো সম্মেলনে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ইসরাইল এবং ইরান—দু’পক্ষই যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙেছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

তবে, ফিল লাভেল বলেন, যদিও ট্রাম্প দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন, তবুও তার বেশি রাগ ছিল ইসরাইলের ওপর, বিশেষ করে নেতানিয়াহুর আচরণের কারণে।

ওয়াশিংটন সূত্র জানায়, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নেতানিয়াহুর সমর্থন পাওয়ার পর ট্রাম্প কাতারের সহায়তায় ইরানের সাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরাইল ইরানে হামলা চালায়।

আন্তর্জাতিক

ইরান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মাদ মারান্দি ইজাদি আল-জাজিরাকে বলেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা করেও কোনো লাভ হয়নি—এমন অভিযোগ তুলে এনপিটি থেকে সরে আসতে পারে ইরান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটির ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে পারে তারা।

ইজাদি বলেন, ইরান এ চুক্তির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। অথচ এই সহযোগিতা কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি বরং ইরানের সেসব পারমাণবিক স্থাপনা ইসরাইলের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে কিন্তু হামলার শিকার হওয়া সব স্থাপনাই আইএইএর নিয়মিত নজরদারিতে ছিল। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এটি একেবারেই বেআইনি।

ইজাদি আরও বলেন, এ চুক্তির সদস্য না হয়েও অনেক দেশ পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরাইল নিজেই তার বড় উদাহরণ। ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসে, তাতে বৈধতার কোনো অভাব হবে না।

ইজাদি দাবি করেন, ইরানের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই বর্তমানে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে রয়েছেন এবং বিষয়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয়ভাবে আলোচনার টেবিলে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি এনপিটি থেকে সরে আসে, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি আরও বিতর্কিত হয়ে উঠবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

ইরান-ইসরাইল চলমান সংঘাতের কারণ হিসেবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে দায়ী করছে ইসরাইল ও এর মিত্ররা। ১২ দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলায় অগ্নিগর্ভ ইরান-ইসরাইল দুই দেশ। ২২ জুন ইসরাইলের হয়ে এই সংঘাতে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্রও। ইরানের তিন পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইস্পাহানে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিক্রিয়া কাতার, বাহরাইন, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এর পরপরই সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন—যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরাইল।

এরপর কয়েক ঘণ্টা নানা নাটকীয়তার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরাইল।