আন্তর্জাতিক

“আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদেরই লড়াই করতে হবে।”

জুলাই মাসের কোনো একদিন কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ছোট্ট একটি নৌকায় করে নাফ নদী পেরিয়ে রফিক প্রবেশ করেন মিয়ানমারে, যে দেশ থেকে তিনি জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিলেন ২০১৭ সালে। তার উদ্দেশ্যে ছিল, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে যোগ দেওয়া।

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের ওই আশ্রয় শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। গত এক বছরে সেখানে সশস্ত্র দলগুলোর সদস্য সংগ্রহ এবং সহিংসতা- দুটোই বেড়েছে। ৩২ বছর বয়সী রফিকের মত হাজারো রোহিঙ্গা সেখান থেকে মিয়ানমারে ফিরে গেছেন যুদ্ধে যোগ দিতে। ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত অন্তত চারজনের বক্তব্য এবং দুটি ত্রাণ সংস্থার অভ্যান্তরীণ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জেনেছে রয়টার্স।

রফিক রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদেরই লড়াই করতে হবে।”

একহারা গড়নের শ্মশ্রুমণ্ডিত এই যুবক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে এসেছেন, কারণ সেখানে যুদ্ধ করার সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আশ্রয় শিবিরেই রফিকের সঙ্গে রয়টার্সের কথা হয়। তিনি বলেন, “লড়াই করা ছাড়া আমাদের আর পথ নেই।”

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে ২০১৬ সালে দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা।

মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হচ্ছেন।

রোহিঙ্গাদের অনেকে আবার সেই সব গোষ্ঠীর হয়ে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন, তাদের নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে। তারা লড়াই করছেন রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে।

রয়টার্স ১৮ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরের ভেতরে কীভাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সংগঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কথা বলেছেন। পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর লেখা দুটো অভ্যন্তরীণ ব্রিফিং দেখেছে রয়টার্স।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহ করেছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া, রোহিঙ্গাদের যুদ্ধে নামাতে জান্তা বাহিনীর অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রলোভন এবং এসব বিষয়ে বাংলাদেশি কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়টার্স পেয়েছে।

সেখানকার রোহিঙ্গা যোদ্ধা, ত্রাণকর্মী এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে রয়টার্স কথা বলেছে যারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। আর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মুসলমান রোহিঙ্গারা সুরক্ষা চেয়েছিল। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান রয়টার্সকে বলেন, কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) খুব বেশি কর্মী আছে বলে তিনি মনে করেন না।

কিন্তু নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।

অধ্যাপক খান বলেন, “দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে হতাশায় ভোগা শরণার্থীরা সহজেই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি অপরাধী চক্রের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে। এর প্রভাব এ আঞ্চলের অন্য দেশের ওপরও পড়বে।”

গত বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা।

তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানে পৌঁছানোর পর জান্তার সেনারা তাকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আফনা বলেন, “আমি যখন জান্তা সেনাদের সঙ্গে থাকতাম, তখন আমার মনে হত, আমি সেই লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, হত্যা করেছে।”

ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়ছে জান্তা বাহিনী। মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায় আরাকান আর্মিকে সমর্থন দিচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

মিয়ানমারে টিকে থাকা রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে আরাকান আর্মি দায়ী, আর তাদের সঙ্গে লড়ার বিষয়ে আরএসও যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে, চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে সেই বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছিল।

আবু আফনা বলেন, “আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।”

আবু আফনার ভাষ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ যুগিয়েছে।

একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং আরেক রোহিঙ্গা যুবকও রয়টার্সকে একই কথা বলেছে। ওই দ্বিতীয় রোহিঙ্গা যুবকের ভাষ্য, তাকে জান্তার পক্ষে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

তারা এটাও বলেছেন, জান্তা বাহিনী এর বিনিময়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথিপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের।

কারও কারও জন্য নাগরিকত্বের নথিপত্র দেওয়ার বিষয়টি খুবই খুবই লোভনীয় একটি প্রস্তাব, কারণ মিয়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এখন তাদের জীবন আবদ্ধ বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে।

আবু আফনা বলেন, “আমরা টাকার জন্য যুদ্ধে যাইনি। গিয়েছিলাম নাগরিকত্বের জন্য, ফিরে পেতে চেয়েছিলাম জন্মভূমি।

মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ‘নাগরিকত্ব ও আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি ও জবরদস্তি’ করে জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য দলে টানার তথ্য একটি ত্রাণ সংস্থার জুন মাসের ব্রিফিংয়ে রয়টার্স দেখেছে।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধার তথ্য অনুযায়ী, প্রলোভন দেখিয়ে ১৩ বছরের এক শিশুকে পর্যন্ত জোর করে যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তা বাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায় বলে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন । তারা এও মনে করেন, বাংলাদেশ কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে তাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দর কষাকষির জায়গা আরো বাড়বে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের রয়টার্সকে বলেছেন, তিনিও মনে করেন, সরকারের এখন রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

কাদের বলেন, বিগত বাংলাদেশ সরকারের আমলে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিলেও সার্বিক দিক নির্দেশনা না থাকায় সেভাবে সমন্বয় ছিল না।

রোহিঙ্গা যোদ্ধা আবু আফনা রয়টার্সকে বলেছেন, এ বছরের শুরুর দিকে কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মংডুতে নিয়ে যান।

সেদিনের এক কর্মকর্তার কথা থেকে উদ্ধৃত করে আফনা বলেন, “এটা তোমাদের দেশ, তোমরা লড়াই করে তোমাদের অধিকার ফিরিয়ে নাও।”

তবে রয়টার্স স্বাধীনভাবে তার এ কথার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

‘আতঙ্কের মধ্যে বসবাস’

রাখাইন রাজ্যে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও উন্নত মহড়া চালানো আরাকান আর্মিকে হটিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

তবে মংডুর লড়াই ছয় মাস ধরে চলছে এবং রোহিঙ্গা যোদ্ধারা বলছে, অতর্কিত হামলাসহ কৌশল বিদ্রোহীদের অভিযানের গতি কমিয়ে রেখেছে।

পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “আরাকান আর্মি ভেবেছিল তারা খুব শিগগিরই বিজয় অর্জন করবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে মংডু তাদের ভুল প্রমাণ করেছে।”

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের এবং বিষয়টির সাথে পরিচিত অন্য এক ব্যক্তির ভাষ্য, এ বছরের শুরুর দিকে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই আলোচনায় কোনো সমঝোতা হয়নি।

তারা রয়টার্সকে বলেছেন, রোহিঙ্গা বসতিতে আরাকান আর্মির আক্রমণের কৌশলে বাংলাদেশ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে, কারণ সহিংসতার কারণে শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর চেষ্টায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

যদিও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের অবস্থানে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

বর্তমানে কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আরএসও ও আরসা সেখানে প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়ছে।

মারামারি এবং গোলাগুলি এখন রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাতে মানবিক সহায়তাকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি রয়টার্সকে বলেন, ২০১৭ সালে শিবিরগুলো প্রতিষ্ঠার পর এখনই সহিংসতার ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

“চলতি বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে। বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন করছে। এমনকি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য হুমকি দিচ্ছে।”

বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককেনস সতর্ক করে বলেছেন, শরণার্থী শিবিরের জন্য বরাদ্দ আন্তর্জাতিক তহবিল আগামী ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

শরণার্থীদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উপার্জনের পথ না পেলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।”

গত মে মাসে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরিৎ উল্লাহ নিয়মিত রেশন জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এক সময় ধান ও চিংড়ি চাষ করতেন শরিৎ। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ এখন পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে কিছুই নেই। আমরা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি।”

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনের কাছে ‘এন্টি পার্সনাল’ স্থলমানই সরবরাহ করার ‘নতুন হুমকির’ নিন্দা করেছেন।

রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানানোর কয়েকদিন পর তিনি এ নিন্দা করলেন।

এন্টি পার্সনাল মাইন নিষিদ্ধ চুক্তির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে কম্বোডিয়ায় একটি সম্মেলনে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বজুড়ে ল্যান্ডমাইন অপসারণ ও ধ্বংসের প্রশংসা করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘তবে হুমকিটি রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- সমঝোতায় উপনীত হওয়া কিছু পক্ষের নতুন করে এন্টি পার্সনাল মাইনগুলোর ব্যবহার, সেইসাথে কিছু পক্ষের এই অস্ত্রগুলো ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে পড়া।’

তিনি সমঝোতায় স্বাক্ষরকারীকে ১৬৪টি রাষ্ট্রের প্রতি ‘তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ ও সমঝোতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এই সমঝোতায় সম্মত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন রয়েছে। তবে রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র এ সমঝোতায় সম্মত হয়নি।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাহবানা গুতেরেসের পক্ষ থেকে তার এ বক্তব্যটি প্রদান করেন।

মন্তব্যটি বিশেষভাবে ইউক্রেনের দিকে ইঙ্গিত করেছে কি না, তা জানতে এএফপি গুতেরেসের অফিস ও মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করেছে।

সম্মেলনে ইউক্রেনীয় দল মার্কিন ল্যান্ডমাইন সরবরাহ সম্পর্কে এএফপি’র প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনের ঘোষণা যে এটি কিয়েভে কর্মী-বিরোধী ল্যান্ডমাইন পাঠাবে। অবিলম্বে মানবাধিকার কর্মীরা এর তীব্র নিন্দা জানায়।

সম্মেলনটি কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটি ১৯৬০-এর দশক থেকে তিন দশকের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী বোমা ও মাইন বিস্ফোরিত দেশগুলোর অন্যতম কম্বোডিয়া।

১৯৭৯ সাল থেকে কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০,০০০ মানুষ স্থলমাইন ও অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক বিস্ফোরণে নিহত এবং এর দ্বিগুণ লোক আহত হয়।

আন্তর্জাতিক

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের মাঝে বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট করার বিষয়ে আলোচনা বেশ জোরে-শোরেই হচ্ছে। তবে এ নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও পর্যবেক্ষকরা।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষ বিশিষ্ট। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ৩০০ আসনের এই কক্ষের সদস্যদের নিয়েই এতোদিন গঠিত হয়েছে সরকার। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা সরকারের ইচ্ছারই কেবল প্রতিফলন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই কক্ষের সংসদ হলে উচ্চ কক্ষের অনুমোদনের ভিত্তিতেই কেবল বাস্তবায়ন হবে নিম্নকক্ষের সিদ্ধান্ত। এতে জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিম্নকক্ষে এলেও প্রতিষ্ঠা পাবে ক্ষমতায় ভারসাম্য। ফলে জনগণের ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসন অবসানের পর ভবিষ্যতে যেন কোনো দল সেই সুযোগ না পায় মূলত সেই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকেই দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের আলোচনা হালে পানি পেয়েছে।

অনেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশনকে এই পদ্ধতি আনার সুপারিশ করতে প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। তবে এমন প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের সংশোধন দরকার বলে মনে করছে ওই সংস্কার কমিশন। তাদের মতে সংবিধান সংস্কার কমিশনকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, দুই কক্ষের সংসদীয় পদ্ধতি চালু করতে হলে সংবিধানে সেই বিধান আনতে হবে। আবার সংবিধান সংশোধন করতে হলেও নিতে হবে দলগুলোর মতামত।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এই সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনের সময়কার এই সিইসি বলেন, আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত। এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সংসদ কয় কক্ষের হবে এটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, সংসদীয় পদ্ধতি থাকবে। আমেরিকান ওই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সিস্টেম আনার দরকার নেই। নির্বাচনকে সরলীকরণ করতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য যদি বন্ধ করা না যায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কেননা, মনোনয়নপত্র বাণিজ্যটাই নির্বাচনটাকে ট্রেডিংয়ে এনেছে। ২০ কোটি টাকা দিয়ে কিনবো, ১০ কোটি টাকা ছড়াবো। পাঁচ বছর থাকলে দুইশ, আড়াইশ কোটি টাকা লাভ করবো, সোজা হিসাব। এমপি চরিত্র নষ্ট হচ্ছে এইজন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশল ইউনিভার্সিটিরি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারি বলেন, পলিটিকস নিডস ইমিডিয়েট বেনিফিট। সবাই তাৎক্ষণিক সুবিধা চায়। বর্তমান সরকারের উচিত আগে দ্রব্যমূল্যে হাত দেওয়া। তাদের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া। সেটাই করা উচিত। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সবগুলো দলের না হলেও অন্তত বড় দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে করা যেতে পারে।

মানবাধিকার সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংসদের দুটি কক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। এই ব্যবস্থা চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা এই সুপারিশ সংস্কার কমিশনকেও দিয়েছি।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশন প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক ধরনের মতামত আছে। অনেক রকম গুরুত্বপূর্ণ, অভিনব, সৃজনশীল প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনেও এমন প্রস্তাব এলে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো। সব পর্যালোচনা করেই সরকারকে সুপারিশ দেবো। কিছু সুপারিশ নতুন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করবে।

আন্তর্জাতিক

কদিন আগেই শেষ হলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। আর এ বছরই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলো ভারতে।

দুটি দেশেরই আইনসভা দুই কক্ষবিশিষ্ট। বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশই দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার রীতি অনুসরণ করে।

দুই কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা বা বাইক্যামেরালিজম হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে আইনসভা দুটি পৃথক কক্ষে বিভক্ত থাকে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ শাসনব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও পর্যালোচনা নিশ্চিত করা।

বিপরীতে এক কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা বা ইউনিক্যামেরালিজম হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে আইনসভা শুধুমাত্র একটি কক্ষ নিয়ে গঠিত। এটি একটি বিকল্প মডেল হিসেবে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে কিছুটা সরল করে তোলে।

দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার মূল উদ্দেশ্য হলো একক কক্ষের হাতে ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ ও অপব্যবহারের ঝুঁকি এড়ানো। সমান ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কক্ষের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দিলে একক কক্ষের অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার শঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হলো, সরকারের ক্ষমতার যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা এবং সরকারের কর্মকাণ্ডকে সীমিত রাখা।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, একক কক্ষ এই ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারে না, কারণ সেই কক্ষের বেশিরভাগ সদস্য সাধারণত সরকারদলীয় প্রতিনিধিরা হয়ে থাকে এবং তারা সরকারের নির্দেশ অনুসারে ভোট দেয়। সমান ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় একটি কক্ষ থাকলে, সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।

এ ছাড়া দুই কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা আইনসভার প্রতিনিধিত্বমূলক ক্ষমতা বাড়ায়, কারণ এতে বিভিন্ন ভোটিং পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। ভিন্ন ভোটিং পদ্ধতির ফলে সংসদে বিভিন্ন স্বার্থ ও মতামতের সমন্বয় ঘটে, যা একে আরও গণতান্ত্রিক ও জনগণের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে।

৭৮ দেশে দুই কক্ষের সংসদ

আন্তর্জাতিক সংসদীয় ইউনিয়নের (আইপিইউ) দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯০টি জাতীয় সংসদের মধ্যে, ৭৮টি দুই কক্ষবিশিষ্ট (মোট ১৫৬টি কক্ষ) এবং ১১২টি এক কক্ষবিশিষ্ট। অর্থাৎ সদস্য দেশগুলোতে মোট ২৬৮টি সংসদীয় কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। আইপিইউর সদস্য ১৮১টি।

প্রাচীন গ্রিস ও রোমেও দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থার চর্চা ছিল। যদিও এগুলো পুরোপুরি দ্বিকক্ষীয় কাঠামো ছিল না। এথেন্সে শাসন ব্যবস্থায় দুটি প্রধান সংস্থা ছিল। প্রথমটি হলো এক্লেসিয়া, যেখানে সাধারণ নাগরিকেরা অংশ নিতেন। দ্বিতীয়টি অ্যারিওপেগাস বা পরামর্শদাতা পরিষদ।

রোমে সিনেট অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করত, আর প্লেবিয়ান অ্যাসেম্বলি সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগ ও মতামত প্রকাশের একটি মঞ্চ ছিল। এসব ব্যবস্থা বিভিন্ন সামাজিক স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষার ধারণা প্রতিফলিত করত। এ ধরনের প্রাথমিক কাঠামো পরবর্তী দ্বিকক্ষীয় আইনসভাগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

প্রথম দ্বিকক্ষ সংসদ ব্রিটেনে

ইংলিশ পার্লামেন্টই প্রকৃতপক্ষে প্রথম দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গঠন করে। সেখানে হাউস অব লর্ডস ও হাউস অব কমন্স নামে দুটি কক্ষ ছিল। প্রথমটি অভিজাত ও ধর্মীয় নেতাদের জন্য। দ্বিতীয়টি সাধারণ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করত।

এই বিভাজন তখনকার সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ভূমিকা ও স্বার্থের পার্থক্যের কারণে প্রয়োজন হয়েছিল। আর এই কাঠামো পরবর্তী সময়ে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থাগুলোর জন্য একটি আদর্শ হয়ে ওঠে, যেখানে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয় ১৮ শতাব্দীতে। এতে রয়েছে সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নামে দুটি কক্ষ। দেশটিতে নির্বাচন ব্যবস্থাও অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা। ১৮ ও ১৯ শতাব্দীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গঠিত হয়। ফ্রান্স ও ইতালির মতো ইউনিটারি রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছিল, যেখানে অভিজাত শ্রেণি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভাজন নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে, পরে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মতো ফেডারেল রাষ্ট্রে আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছিল। ইউরোপীয় দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থার ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এরিক হবসবাম ও ম্যাক্স ওয়েবারের মতো রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের লেখায়।

এরপর বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষত কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো ফেডারেল রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গঠিত হয়। কিছু ইউনিটারি রাষ্ট্র যেমন ফ্রান্স ও ইতালিতেও দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা রাখা হয় যাতে আইন প্রণয়ন এবং শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য থাকে।

দ্বিকক্ষীয় আইনসভা ব্যবস্থার বিকাশের ইতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এটি প্রথমে সামাজিক শ্রেণির ভারসাম্য এবং আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য গড়ে ওঠে, এবং পরবর্তী সময়ে ফেডারেল ও ইউনিটারি রাষ্ট্রগুলোতে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়।

নিঃসন্দেহে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো। তবে এটি বিশেষত বড় ও বৈচিত্র্যময় সমাজের জন্য কার্যকর, যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর বা অঞ্চলের স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন।
ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে দ্বিকক্ষ সংসদ

বাইক্যামেরাল সিস্টেম মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে। দুটি কক্ষে আইন পাসের বাধ্যবাধকতার কারণে গভীর পর্যবেক্ষণ ও ভারসাম্য নিশ্চিত হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সমন্বয় অঙ্গরাজ্য ও জনসংখ্যার ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।

দ্বিকক্ষীয় কাঠামো বিভিন্ন অঞ্চলের বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। এটি বৃহৎ ফেডারেল রাষ্ট্রে বিশেষভাবে কার্যকর। যেমন ভারতের রাজ্যসভা রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে লোকসভা জনগণের। ফলে প্রতিনিধিত্বের মধ্যেও বৈচিত্র্য দেখা যায়।

কোনো আইন পাসের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষীয় আইনসভায় আইনের গভীর পর্যালোচনা হয়। আইন পাসের প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় কক্ষ মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ দেয়। এতে ত্রুটি সংশোধন সহজ হয় পাশাপাশি তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা আইন প্রণয়নের ঝুঁকি কমে।

দুটি কক্ষের পৃথক কার্যক্রম রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অযাচিত আধিপত্য রোধ করে। তবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বাধ্যবাধকতা প্রক্রিয়া আইন পাসের প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ করে তোলে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া দুটি কক্ষের মধ্যে মতানৈক্য ও সংঘাত দেখা দিলে আইন প্রণয়ন জটিল হয়ে পড়ে। যেমন কোনো কক্ষে আইন পাস হলে অন্য কক্ষে তা প্রত্যাখ্যাত হতে পারে, যা রাজনৈতিক অচলাবস্থা পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া দুটি কক্ষ পরিচালনা করতেও বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়, যা অনেক সময় রাষ্ট্রের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। ছোট বা একজাতীয় রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা জটিলতা সৃষ্টি করে।

দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় সাধারণত নিম্নকক্ষের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরই প্রতিফলন। দেশভেদে নির্বাচন প্রক্রিয়া আলাদা হতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থা যেমন

উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যেমন কিছু দেশে উচ্চকক্ষের সদস্যরাও সরাসরি নির্বাচিত হন। আবার পরোক্ষ নির্বাচনও দেখা যায়। যেমন বিভিন্ন প্রাদেশিক পরিষদ বা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধির মাধ্যমে সদস্য নির্বাচন করা হয়। কিংবা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই কক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া ভিন্ন এবং এটি দেশের ফেডারেল কাঠামো এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। সিনেটের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।

কংগ্রেসের দুই ধরনের সদস্যের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। এবারের নির্বাচনে মার্কিন নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসনের সব কটিতেই ভোট হয়েছে। অন্যদিকে সিনেট সদস্যদের মেয়াদ হয়ে থাকে ছয় বছর। তবে প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ ব্যবস্থা রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইনের একটি জটিল ব্যবস্থা, যা দেশটির সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত।

‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ইলেকটরস বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং তারাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করেন।

কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেট বা অঙ্গরাজ্যে ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি।

যদিও দুই কক্ষ ব্যবস্থা এখনো বিশ্বের অনেক দেশে কার্যকরী, তবে এর কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে। নিউজিল্যান্ড ১৯৫১ সালে দ্বিকক্ষীয় কাঠামো বাতিল করে ইউনিক্যামেরাল ব্যবস্থায় ফেরে।

দ্বিকক্ষীয় আইনসভা বৃহৎ এবং বৈচিত্র্যময় রাষ্ট্রের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা হলেও চীনের আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট। এর নাম হলো ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস। অন্যদিকে রাশিয়ার আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। এটি ফেডারেল অ্যাসেম্বলি নামে পরিচিত। এটি দেশের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে কার্যত রাষ্ট্রপতি আইনসভার চেয়ে বেশি প্রভাবশালী।

আন্তর্জাতিক

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এরকম যে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডিতে ড্যাফোডিল প্লাজায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ আয়োজিত ‘গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইক ২০২৪’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এডুকেশন সিস্টেম এরকম যে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না। বিশ্ব প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হচ্ছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ মুক্ত চিন্তা করবে, কল্পনা করবে, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি প্রকাশ করবে। তাহলে আমাদের পরিবর্তন আসবে।

উপদেষ্টা বলেন, নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে, এটি খুব ভালো খবর। উদ্যোক্তারা বেশির ভাগ বিদেশে চলে যান। তাদেরকে দেশে ধরে রাখার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ দেশের জন্য তাদেরকে বেশি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের এই অঞ্চলে উদ্যোক্তারা সফল হতে পারেনি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেটা হতে দেয়নি। তারা ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ দিয়ে কৃষিকে ধ্বংস করেছে। একটি শ্রেণি তৈরি করেছিল সেটা হল কেরানি শ্রেণি। ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দুইবার স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের লিগেসি রয়ে গেছে। আমরা সেখান থেকে বের হতে পারিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দক্ষতা বিশেষজ্ঞ গুণিজন দাল্লাকটি, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ ফারুক, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেনস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের সভাপতি ড. রুবিনা হোসেন এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইক ২০২৪ এর ন্যাশনাল হোস্ট ও বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন।

এ বছর গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইকে বিশ্বের ২০০টি দেশ জুড়ে উদ্‌যাপিত হয়। যেখানে ৪০ হাজারের বেশি ইভেন্ট এবং দশ মিলিয়ন মানুষ এই উদযাপনে অংশ নেয়। বাংলাদেশে গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক-বাংলাদেশ (জিইএন-বাংলাদেশ) ৫০টিরও বেশি অংশীদার সংস্থার সাথে ৫০০টির বেশি ইভেন্ট আয়োজন করে। যা সরাসরি ১ লাখ এবং ডিজিটালি ৩০ লাখ যুবককে প্রভাবিত করে।

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি হামলায় বেইরুতের কেন্দ্রস্থলে একটি আটতলা আবাসিক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ১১ জন নিহত ও ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সিভিল ডিফেন্স এই হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে। খবর আল জাজিরা

শনিবার সকালে, ঘনবসতিপূর্ণ বাস্তা এলাকায় পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়। এটি এই সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বেইরুতে চতুর্থ হামলা।

এছাড়া বেইরুতের দক্ষিণবর্তী হাদাত এবং চৌইফাত এলাকাতেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। লেবাননের টাইর শহরের সৈকতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালিয়ে দুই জেলেকে হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে পরিচালিত পূর্ববর্তী হামলাগুলোতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে সংগঠনটির নেতা হাসান নাসরাল্লাহও রয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাদের অভিযান তীব্রতর হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার লেবাননে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫শরও বেশি মানুষ নিহত এবং দশ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

জ্যোতিষশাস্ত্র সম্ভাবনার কথা বলে। কোনো কিছু নিশ্চিতভাবে হবে কিংবা ঘটবে তা বলে না।

রাশি অনুযায়ী এই সপ্তাহ কেমন যেতে পারে জেনে নিন।

পাশ্চাত্য রাশিচক্রমতে চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহগত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন রাশির জাতক জাতিকাদের নানান বিষয়ের শুভাশুভ পূর্বাভাস ও সতর্কতা জানাচ্ছেন জ্যোতিষশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম মাওলা।

মেষ রাশি (২১ মার্চ – ১৯ এপ্রিল) সপ্তাহের শুরুতে সতর্কতা অবলম্বন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সময়, যখন হৃদয় থেকে মস্তিষ্কের দরকার বেশি পড়বে। সঙ্গীর শরীর একটু খারাপ হতে পারে। স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই যত্নের প্রয়োজন। সপ্তাহের মাঝদিকে বিবেচকের মতো বিনিয়োগ করুন। স্বামী/ স্ত্রীর কৃতিত্বের প্রশংসা করুন। আর তার সাফল্য সৌভাগ্য নিয়ে আনন্দ করুন। যদি সঙ্গীকে নিয়ে রোমান্টিক ভ্রমণে যান তবে সম্পর্ক আরও ভালো হবে। সপ্তাহের শেষদিকে উত্তেজনাপূর্ণ সময় যখন ঘনিষ্ট সহকারীদের সঙ্গে বেশ কিছু বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। রাস্তায় চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

বৃষ রাশি (২০ এপ্রিল – ২০ মে) সপ্তাহের শুরুতে আপনার সব সময়ের ভালোবাসা প্রিয়জনের জন্য ফাল্গুন ধারার মতো প্রবাহিত হবে। এটা প্রেমে সৌভাগ্যের সময়। সঙ্গী দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কল্পনার উপলব্ধির সঙ্গে আপনাকে অবাক করে দেবে। সপ্তাহের মাঝদিকে এমন একটা সময় যখন ভালো মন্দ ঘটনা ঘটবে আর আপনাকে পরিশ্রান্ত ও বিপর্যস্ত করে ছাড়বে। আপনার অনিয়ন্ত্রিত রাগ সবার ক্ষতি করতে পারে। সপ্তাহের শেষদিকে দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করুন। উল্লেখযোগ্য লাভ পাবেন। সঙ্গীর ভালোবাসায় সময়টি মঙ্গলময় হয়ে উঠবে।

মিথুন রাশি (২১ মে – ২০ জুন) সপ্তাহের শুরুতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার দুর্দান্ত সময়। তবে ফোনে খুব বেশি কথা বলায় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। জমি ও আর্থিক লেনদেনের জন্য ভালো সময়। সম্পত্তি সংক্রান্ত কারবারে আশাতীত লাভবান হতে পারেন। সপ্তাহের মাঝদিকে গোলাপ আরও লাল হবে। আর বেগুনি নীল হবে, কারণ ভালোবাসার নেশা আপনাকে একটি উচ্চ আসন প্রদান করবে। বয়স্ক ব্যক্তি ও পরিবারের লোকজন ভালোবাসা এবং যত্ন প্রদান করবে। সপ্তাহের শেষদিকে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আর সুস্থ থাকতে নিয়মিতভাবে ‘হেল্থ ক্লাব’য়ে যান। কিছু শারীরিক সমস্যা পীড়া দিতে পারে।

কর্কট রাশি (২১ জুন – ২২ জুলাই) সপ্তাহের শুরুতে একজন আত্মীয় বিস্ময় প্রদান করতে পারে। পরিবারের সদস্যরা আপনাকে সঙ্গে রাখতে চাইবে। আপনিও তাদের সঙ্গে কোনো জায়গায় যেতে পারেন। সপ্তাহের মাঝদিকে আয়েস করার জন্য ঘনিষ্ট বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটান। প্রত্যেকে আপনার বন্ধু হতে চাইবে। আর সেটা স্বীকার করে খুশি হবেন। সম্পত্তি সংক্রান্ত কারবার বাস্তবায়িত হবে আর অবিশ্বাস্য লাভ এনে দেবে। সপ্তাহের শেষদিকে প্রেম বসন্তের মতো হয়। যেখানে ফুল, বায়ু, রোদ, প্রজাপতি সব থাকে। আপনি রোমান্টিক স্পর্শ অনুভব করবেন।

সিংহ রাশি (২৩ জুলাই – ২২ অগাস্ট) সপ্তাহের শুরুতে সামনে অনেক নতুন আর্থিক সুযোগ উপস্থাপন করা হবে। কোনো প্রতিশ্রুতি করার আগে ভালো করে সব দিক দেখে নিন। ব্যাংকিং কারবার খুব সতর্কতার সাথে সামলাতে হবে। সপ্তাহের মাঝদিকে আত্মীয়রা আপনার দুঃখ ভাগ করে নেবে। সমস্যাগুলো তাদের সঙ্গে খোলা মনে ভাগ করে নিন। কিছু আইনি পরামর্শের জন্য কোনো আইনজীবীর কাছে যাওয়ার জন্য ভালো সময়। সপ্তাহের শেষদিকে দৈনিক সূচি থেকে বিরতি নিন। বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যান। পরিবারের সঙ্গে সময় উপভোগ করবেন।

কন্যা রাশি (২৩ অগাস্ট – ২২ সেপ্টেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে সহজেই অগ্রগতি আসবে। উজ্জ্বল দিকে তাকান। নিজের বিবেচনার ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিবর্তন দেখতে পাবেন। প্রচুর আকর্ষণীয় আমন্ত্রণ পাবেন আর আকর্ষণীয় উপহারও আসতে পারে। সপ্তাহের মাঝদিকে অধিকাংশই অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধ করতে অতীতে যে সমস্ত অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন সেগুলো থেকে এখন ফল পাবেন। সপ্তাহের শেষদিকে আত্মীয়দের কাছে ছোট সফর ক্লান্তিকর দৈনিক কাজের সূচীর থেকে আরাম ও হালকা মুহূর্ত আনবে। ভ্রমণ, ভোজ এবং আনন্দ হালকা মেজাজে রাখবে। মানসিক চর্চার জন্য আকর্ষণীয় কিছু পড়ুন।

তুলা রাশি (২৩ সেপ্টেম্বর – ২২ অক্টোবর) সপ্তাহের শুরুতে একাকী ও নিঃসঙ্গ বোধ করতে পারেন। বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি যুক্তগ্রাহ্য অনুভূতি নেওয়া থেকে আটকাতে পারে। অবাস্তব পরিকল্পনার ফলে অর্থের অভাব দেখা দিতে পারে। সপ্তাহের মাঝদিকে প্রবল সহনশীলতা ও নির্লিপ্ততা ভীষণভাবে মানসিক ক্ষমতার উন্নতি করবে। আকস্মিক প্রেমঘটিত সাক্ষাৎ মেজাজ চাঙা করে তুলবে। জীবনকে উপভোগ করার চাহিদা নিজের মধ্যে কতটা দেখে নিন। সপ্তাহের শেষদিকে নির্দিষ্ট কিছু জরুরি পরিকল্পনা নির্বাহিত হওয়াতে নতুন অর্থনৈতিক লক্ষ্য এনে দেবে। এসময়ে করা বিনিয়োগ সমৃদ্ধি ও আর্থিক নিরাপত্তা বাড়িয়ে তুলবে।

বৃশ্চিক রাশি (২৩ অক্টোবর – ২১ নভেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়াতে পারেন। ধর্ম আলোচনায় খুব সুনাম অর্জন করতে পারেন। আপনার বক্তব্য সকলের মন জয় করতে সক্ষম হবে। সপ্তাহের মাঝদিকে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সমান তাকবে। অযথা কোনো তর্কে যাবেন না। সমস্যা হতে পারে। বাড়িতে শুভ কাজের জন্য খরচ বাড়বে। সহকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করায় মানসিক চাপ বাড়বে। সপ্তাহের শেষদিকে কারও মার্কেটিংয়ের কাজে যোগ দেওয়ার দীর্ঘ আশা বাস্তবায়িত হবে। শুধু মাত্র চারিদিকে তাকান। সব কিছু গোলাপি হয়ে উঠবে। সাফল্য নিশ্চিতভাবে আপনারই হবে।

ধনু রাশি (২২ নভেম্বর – ২১ ডিসেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে প্রশাসক ও সচিব পর্যায়ের সহকারী কর্মকর্তার জন্য শুভ সময়। তারা এ সময়ে বৈঠকে বসে সমঝোতার মাধ্যমে ভালো ফল লাভ করতে পারেন। কারও কারও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বগতি নতুন প্রেরণা সঞ্চার করবে। সপ্তাহের মাঝদিকে সামাজিক জীবন অবহেলা করবেন না। আপনার ব্যস্ত সময়ের মধ্য থেকে সময়ের বের করে স্বপরিবারে অনুষ্ঠানে যান। প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি থাকবে। আর প্রেমের সঙ্গে ভালো বন্ধন থাকবে। গবেষকরা বিশ্লেষণমূলক কাজের জন্য প্রশংসিত হবেন। সপ্তাহের শেষদিকে বৃথা অর্থ ব্যয় হতে পারে। নিজের বোকামির জন্য প্রতারিত হতে পারেন। আর্থিক সঙ্কট কেটে যাবে। তবে বেহিসাবী খরচ থেকে সংযত থাকুন। কৃচ্ছতা নীতি পালন করুন।

মকর রাশি (২২ ডিসেম্বর – ১৯ জানুয়ারি) সপ্তাহের শুরুতে বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ আসলে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গৃহীত ভ্রমণ লম্বা দৌড়ে লাভদায়ক হবে। ক্রীড়াবিদদের বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আছে। সপ্তাহের মাঝদিকে চাকরি ও ব্যবসায় সুযোগ লাভ করবেন। স্বল্প বেতনভোগী চাকরির পাশাপাশি ছোটখাট ব্যবসা আরম্ভ করলে ভালো করবেন। কর্মক্ষেত্রে অনুকূল হাওয়া মানসিক প্রফুল্লতা বৃদ্ধি করবে। সপ্তাহের শেষদিকে আমদানী রপ্তানি ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে তা অবসান হবে। সামাজিক বিষয়ে অংশ নিয়ে সুনাম পেতে পারেন। দীর্ঘদিনের মনোবাসনার সমাধান হবে।

কুম্ভ রাশি (২০ জানুয়ারি – ১৮ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের শুরুতে রাস্তাঘাটে চলাফেরা বা গাড়িয়ে ওঠানামায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রাতিষ্ঠানিক কর্তাব্যক্তিরা কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় বা টাকা লেনদেনের সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন। সপ্তাহের মাঝদিকে যেসব শিক্ষর্থীরা শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবেন। বিদেশে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। সপ্তাহের শেষদিকে বিশ্রামের সময় স্বল্প, যেহেতু স্থগিত কাজগুলো আপনাকে ব্যস্ত করে রাখবে। কর্মক্ষেত্রে জিনিসগুলো চমৎকার থাকবে বলে মনে হয়।

মীন রাশি (১৯ ফেব্রুয়ারি – ২০ মার্চ) সপ্তাহের শুরুতে খুঁজে পাবেন যে, জীবনসঙ্গী আপনার প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠছে। ব্যবসা করা লোকদের জন্য এটি ভালো সময় হবে। তবে নতুন ব্যবসা শুরু করতে সমস্যা হতে পারে। সপ্তাহের মাঝদিকে জিনিসপত্র হারানো, চুরি যাওয়া ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা আছে। বাস বা ছোট যানবাহনে চলাফেরায় সতর্ক হোন। সপ্তাহের শেষদিকে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে। বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে। বিদেশে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বা অর্থনৈতিক বিষয়ক শিক্ষার ব্যাপারে অনুকূল অবস্থা পেতে পারেন। আমদানী রপ্তানি ব্যবসায়ে নিয়োজিত থাকলে এখন বিনিয়োগের যোগ্য সময়। আমদানী করা পণ্য পাইকারীভাবে বাজারজাত করুন।

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়াকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি। একই সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরাইলের তাবেদারি বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের এক বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইরাভানি বলেন, ইসরাইলের অপরাধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অটল’ সমর্থন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ই মূল কারণ।

কী ছিল প্রস্তাবে

বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ দাবি করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়।

ইরাভানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মানবিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

ইরাভানি এ সময় সতর্ক করে বলেন, ইসরাইলের চলমান অপরাধগুলো ‘গভীরতর যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করছে, যা বৈশ্বিক প্রভাব ফেলতে পারে’।

তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ‘ইসরাইলের দায়মুক্তি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানান।

ইসরাইলের অব্যাহত হামলা ও মানবিক সংকট

এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৪,০৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ১,০৪,২৬৮-এরও বেশি।

অন্যদিকে লেবাননেও আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। সেখানেও সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি লেবানিজ নিহত এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

ইরাভানি এ সময় সিরিয়ার অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি শাসন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সিরিয়ার অবকাঠামো ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পিত নীতি অনুসরণ করছে’।

তিনি সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে একটি রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান।

বিশ্ব রাজনীতি ও সমাধানের পথে বাধা

ইরানের মতে, ইসরাইলের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির মদদ মানবিক প্রচেষ্টা ও আঞ্চলিক শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবে ফের ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।প্রস্তাবটি পরিষদের ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং এতে অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র এটি আটকে দেয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর থেকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অবরুদ্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র।

খসড়া প্রস্তাবে ৯টি ধারা ছিল। যার প্রথমটি সব পক্ষের দ্বারা অবিলম্বে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। প্রস্তাবে গাজায় সব বন্দিদের মুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা এবং বেসামরিক জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, প্রস্তাব গ্রহণের পর তিন সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিবকে এর বাস্তবায়ন নিয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস গাজা থেকে ইসরাইলে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে ইসরাইলি সেনাসহ প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনের বেশি মানুষকে বন্দি করে।

হামাস তাদের এই আক্রমণকে জেরুজালেমের পুরোনো শহরের আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের আগ্রাসী কার্যক্রমের প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এর জবাবে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করে এবং বিমান হামলা চালানো শুরু করে, যা লেবানন এবং সিরিয়ার কিছু অংশেও বিস্তৃত হয়। পরবর্তীতে গাজার ভেতরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৪,০০০ আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। সূত্র: তাস

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টারের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি)। আইসিসির এমন রায়ের পর নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি জানিয়েছে ইতালি, নেদারল্যান্ড ও কানাডা।

গাজা যুদ্ধের দায়ে আইসিসির কাছে থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে কি-না ইতালি; এ বিষয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রসেটো বলেন, নেতানিয়াহু সফর করলে তার দেশ তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য থাকবে।

রাজনৈতিকভাবে আইসিসির এই সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলেও আদালত ওয়ারেন্ট জারি করায় ইতালি সেটি মানতে বাধ্য সেটাই একরকম জানালেন ক্রসেটো। তার মতে, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টকে হামাসের মতো একই স্তরে রাখা আইসিসি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ ছিল। তবে যেহেতু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে কাজেই নেতানিয়াহু বা গ্যালান্টার যদি ইতালিতে আসেন তবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।

গাজায় গত ১৩ মাসে ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যার বেশিরভাগ মহিলা এবং শিশু। যার প্রেক্ষিতে আইসিসির এই রায়ের পর নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করতে সম্মত হয়েছে নেদারল্যান্ডস।

ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে যদি তিনি ডাচ মাটিতে পা রাখেন। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের জবাবে ভেল্ডক্যাম্প বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে লাইন পরিষ্কার। আমরা আইসিসিকে সহযোগিতা করতে বাধ্য… আমরা রোম সংবিধি শতভাগ মেনে চলি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল আইসিসির এই রায় নিয়ে জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা একটি আইনি বিষয়। রাজনৈতিক বিষয় নয়। ইইউয়ের ২৭টি সদস্য দেশ এবং অন্যান্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলি যা মানতে বাধ্য।

এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার দেশের সমর্থন ও আইসিসির ওয়ারেন্ট মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেকেরই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত। সংঘাতের শুরু থেকেই আমরা এটার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমরা আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের সমস্ত বিধিবিধান ও রায় মেনে চলব।’

ইসরাইল আইসিসির এখতিয়ার স্বীকার না করলেও এবং নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট আত্মসমর্পণ করবেন না বলে জানালেও তাদের চলাচলের সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।

আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি রোম সংবিধির আওতায় ১২৪টি দেশ রয়েছে। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে এসব দেশ বাধ্য।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী জোনাথন কুটাব বলেছেন, আইন তৈরি হয় এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে যে মানুষ তা মেনে চলবে। যারা আইন অমান্য করে, তারা নিজেরাই অপরাধ করছে।

কুটাব আরও বলেন, ইসরাইলের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা, পরোয়ানা কার্যকরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নেতানিয়াহু এই অভিযোগগুলোকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেছেন।

আইসিসির পরোয়ানা জারির পর নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ট যেসব দেশে গ্রেফতার হতে পারেন সেগুলো হলো:

আফগানিস্তান
আলবেনিয়া
অ্যান্ডোরা
অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারবুডা
আর্জেন্টিনা
আর্মেনিয়া
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রিয়া
বাংলাদেশ
বার্বাডোজ
বেলজিয়াম
বেলিজ
বেনিন
বলিভিয়া
বসনিয়া এন্ড হার্জেগোবিনা
বতসোয়ানা
ব্রাজিল
বুলগেরিয়া
বুরকিনা ফাসো
ক্যাপভার্দে
কম্বোডিয়া
কানাডা
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক
চাদ
চিলি
কলম্বিয়া
কমোরোস
কঙ্গো
কুক আইল্যান্ড
কোস্টারিকা
আইভরিকোস্ট
ক্রোয়েশিয়া
সাইপ্রাস
চেক রিপাবলিক
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো
ডেনমার্ক
জিবুতি
ডমিনিকা
ডমিনিকান রিপাবলিক
ইকুয়েডর
এল সালভেদর
এস্তোনিয়া
ফিজি
ফিনল্যান্ড
ফ্রান্স
গ্যাবন
গাম্বিয়া
জর্জিয়া
জার্মানি
ঘানা
গ্রিস
গ্রেনাডা
গুয়েতেমালা
গিনি
গায়ানা
হন্ডুরাস
হাঙ্গেরি
আইসল্যান্ড
আয়ারল্যান্ড
ইতালি
জাপান
জর্ডান
কেনিয়া
কিরিবাতি
লাটভিয়া
লেসোথো
লাইব্রেরিয়া
লিচেনস্টাইন
লিথুনিয়া
লুক্সেমবার্গ
মাদাগাস্কার
মালাবি
মালদ্বীপ
মালি
মাল্টা
মার্শাল আইল্যান্ড
মরিশাস
মেক্সিকো
মঙ্গোলিয়া
মন্টিনিগ্রো
নামিবিয়া
নাউরু
নেদারল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড
নাইজার
নাইজেরিয়া
নর্থ মেসিডোনিয়া
নরওয়ে
পানামা
প্যারাগুয়ে
পেরু
পোল্যান্ড
পর্তুগাল
দক্ষিণ কোরিয়া
রিপাবলিক অব মালদ্বীপ
রোমানিয়া
সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিস
সেইন্ট লুসিয়া
সেইন্ট ভিনসেন্ট এন্ড দ্য গ্রেনাডাইন্স
সামোয়া
সান মেরিনো
সেনেগাল
সার্বিয়া
সিচিলিস
সিয়েরালিওন
স্লোভাকিয়া
স্লোভেনিয়া
সাউথ আফ্রিকা
স্পেন
ফিলিস্তিন
সুরিনাম
সুইডেন
সুইজারল্যান্ড
তাঞ্জানিয়া
তাজিকিস্তান
তিমুর লিস্ত
ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো
তিউনিশিয়া
উগান্ডা
যুক্তরাজ্য
উরুগুয়ে
ভানুয়াতু
ভেনেজুয়েলা
জাম্বিয়া

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, আসন্ন বিচারপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অতীতের দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ গ্রহণের সময় ও সুযোগ নেই। এখানে প্রসিকিউটোরিয়াল যেসব সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলো অবশ্যই প্রতিহিংসা বা রাজনৈতিক সুবিধার ভিত্তিতে নয়, পুরোপুরি তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনবিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘অপরাধের সংজ্ঞা যথাযথভাবে নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ট্রাইব্যুনাল যে আইন ও বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়—উভয় ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ আনা দরকার। কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে বলিষ্ঠ পরামর্শ দিতে তিনি পিছপা হবেন না।

গত সোমবার নিয়োগ পেয়েছেন টবি ক্যাডম্যান। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩–এর সংশোধনীর খসড়া দেখার ও পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ট্রাইব্যুনাল ১৩ জন রাজনীতিবিদ এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৮ জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিক্ষোভকারী ও অন্যদের নিহত হওয়ার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

জুলাই–আগস্টের ওই তিন সপ্তাহে সহিংসতায় ১ হাজার ৫০০ জনের মতো নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইনবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, (ট্রাইব্যুনালের) প্রসিকিউশন টিমকে সহায়তা করতে ক্যাডম্যানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে প্রসিকিউশনকে শক্তিশালী করতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষেরও বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত বিচারকাজের কঠোর সমালোচনা করে ক্যাডম্যান বাংলাদেশে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাকে বাংলাদেশে এসে আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ওই বিচারে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের বিচার ও সাজার সম্মুখীন করা হয়।

কথা বলার সময় টবি ক্যাডম্যান অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘(ট্রাইব্যুনালের) বিচারকাজে এখন সবকিছু থাকবে, যা আগে ছিল না। বিবাদীদের অবশ্যই সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার সব ধরনের নিশ্চয়তা দিতে হবে, ইতিপূর্বে বিবাদীরা যা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিচার অবশ্যই ন্যায়বিচারের স্বার্থে হতে হবে, প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নয়।’

ক্যাডম্যান উল্লেখ করেন, ‘যদিও এটা (বিচারকাজ) যথাযথভাবে ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া করা অনেক কঠিন, অধিকতর সময়সাপেক্ষ ও আরও বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে; কিন্তু এই বিচার করার এটাই একমাত্র পথ। বিচার হতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে এবং অবশ্যই স্বীকৃত পন্থার অধীনে।’

ক্যাডম্যান বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে এই কাজটা যথাযথভাবে হওয়া এবং প্রসিকিউটররা তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা রাখবেন। এটা আমার অঙ্গীকার। এতে (বিচারকাজ প্রভাবিত করা) আমার কোনো স্বার্থ নেই এবং ব্যক্তিগত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে রাজনৈতিক দল বা অন্য যেকোনো স্বার্থসংশ্লিষ্টই হোন না কেন, তিনি যেন যথাযথ ও সুষ্ঠু বিচার পান, আমি সেটি নিশ্চিত করব।’

গত সেপ্টেম্বরে এ ব্রিটিশ আইনজীবী বাংলাদেশ সফর করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, আইন উপদেষ্টা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে আলাপে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন’ বলে জানান ক্যাডম্যান।

টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রবল আকাঙ্ক্ষা আমাকে প্রভাবিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং তা ঠিকভাবে করার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাও প্রভাবিত করেছে আমাকে।’