আন্তর্জাতিক

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আগমনের প্রতিবাদে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। রাষ্ট্রপতি শহিদ মিনারে উপস্থিত হওয়ার পর পরই ‘গো ব্যাক চুপ্পু’ স্লোগান দেন তারা।

এছাড়া বিক্ষোভ থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, শেখ হাসিনার ফাঁসি ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আট দিন ধরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানরত ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।

মিছিলটি শামসুন্নাহার হলের সামনের ব্যারিকেড অতিক্রম করে শহিদ মিনারের কাছে শিববাড়ী মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশের বাধার মুখে মিছিলটি আটকে যায়। তখন ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিক্ষোভ থেকে ‘শহিদ আবু সাঈদ জিন্দাবাদ’, ‘জুলাই বিপ্লব জিন্দাবাদ’, ‘ড. ইঊনূসকে রাষ্ট্রপতি করো বিপ্লবী সরকার গড়ো’ ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগ চাই’, ‘রাষ্ট্রপতির ঠিকানা শহিদ মিনারে হবে না’, ‘খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো’ স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম ও গালীব ইহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজু আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম ও কায়েস আহমেদ; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব ইশতিয়াক আহমেদ ইফাত, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহবায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ; ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মেহেদি হাসান মাহি ও যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাকিব, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মো. ফরহাদ আহমেদ আলী প্রমুখ।

রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখিয়ে রাজু ভাস্কর্যের গণঅবস্থানে ফিরে আসেন ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা জানান, শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজু ভাস্কর্যে তারা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মিলিত হবেন। এতে বিগত আওয়ামী লীগ রেজিমের ফ্যাসিস্টদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ ও দলটির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গণঅবস্থান কর্মসূচি চলছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের অনশনের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে এতে সম্পৃক্ত হয় বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।

১৬ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর শহিদ রানা তালুকদারের পরিবার এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানান। তার অনুরোধে অনশন ভেঙে লাগাতার গণঅবস্থান চলছে।

গণবক্তৃতা, আবৃত্তি, জুলাই গণহত্যার তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, কবিতা আবৃত্তি ও র‍্যাপ সঙ্গীত পরিবেশনসহ নানা আয়োজনে চলছে এ কর্মসূচি।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্কের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর ভারতে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা। এ খবরে ভারতীয়রা খুশি হলেও, বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতে টেসলা যদি কারখানা চালু করে, তাহলে তাদের সঙ্গে ‘অন্যায়’ হবে বলে মনে করছেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেখানে ভারতের ওপর সমহারে শুল্ক বসানোর কথা বলছেন, সেখানে তারই ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ইলন মাস্ক ভারতে টেসলার কারখানা ও শোরুম খোলার পরিকল্পনা করছেন। এতেই ‘চটেছেন’ ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য।

একটি শো-তে ট্রাম্প বলে বসেন, ‘টেসলা যদি ওখানে (ভারতে) গিয়ে কারখানা বানায়, তবে তা নিজের দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে অন্যায় হবে।’ ইলন মাস্কের পক্ষে ভারতে কোনো গাড়ি বিক্রি করা ‘অসম্ভব’ বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের ভাষ্য, বিশ্বের প্রতিটি দেশ আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নেয় এবং তারা শুল্ক দিয়ে তা করে। বিশেষ করে ভারতে গাড়ি বিক্রি করা অসম্ভব (শুল্কের কারণে)। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য পরিকল্পনায় রয়েছে ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’। এর আওতায়, যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের পণ্যের ওপর একই হারে শুল্ক বসাবে।

ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি আমি বলি ২৫ শতাংশ, সবাই বলবে, ‘ওহ, এটা ভয়ানক।’ তাই এখন আমি আর তা বলি না। আমি শুধু বলি, তারা যা নেবে, আমরাও তাই নেব এবং জানেন কি এতে কী হয়? তারা থেমে যায়।

উল্লেখ্য, এর আগে জানা যায়, শিগগিরই ভারতের বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে টেসলা। ব্লুমবার্গ ও এনডিটিভি জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা সোমবার লিংকডইনে ১৩টি পদের জন্য প্রার্থী চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এসব পদের মধ্যে কাস্টমার সার্ভিস বা গ্রাহকসেবা ও ব্যাকএন্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদ উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সার্ভিস টেকনিশিয়ান ও বিভিন্ন উপদেষ্টার ভূমিকা সংবলিত পাঁচটি পদে মুম্বাই ও দিল্লি উভয় জায়গাতেই নিয়োগ দেওয়া হবে। আর কাস্টমার এনগেজমেন্ট ম্যানেজার এবং ডেলিভারি অপারেশনস স্পেশালিস্টের মতো কিছু পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে শুধু মুম্বাইয়ের জন্য। টেসলা এবং ভারত সরকারের মধ্যে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চললেও উচ্চ শুল্কের কারণে কোম্পানিটি এতদিন দেশটিতে প্রবেশ করেনি।

তবে ভারত সরকার সম্প্রতি ৪০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ির ওপর মৌলিক কাস্টমস শুল্ক ১১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করেছে। কয়েক বছর ধরেই ভারতের বাজারে আসতে চাইছিল টেসলা। এজন্য কোম্পানিটি ২০০-৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে।

এর আগে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি ইঙ্গিত দিয়েছিল, তারা ভারতে সাধারণত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ করতে চায়। তাদের লক্ষ্য ২৫-৩০ লাখ রুপির মধ্যে গাড়ি তৈরি করা। ভারতের আশপাশের দেশগুলোতে গাড়ি রপ্তানির পরিকল্পনাও তাদের আছে।

আন্তর্জাতিক

রাজধানী ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসাবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। ওই ভবনের নামকরণ করা হয়েছে তারই পরিবারের নামে। শনিবার যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

‘টিউলিপ সিদ্দিক লিস্টেড অ্যাজ রেসিডেন্ট ইন লাক্সারি বাংলাদেশি টাওয়ার ব্লক’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার এ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল। তখন তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

গুলশানের ওই ভবনটি যে এলাকায় অবস্থিত, তা মূলত বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও বড় করপোরেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যলায়ের জন্য বিখ্যাত। আদালতের নথি ও সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্রে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যুক্ত ‘পঞ্চম প্রপার্টি’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

তবে লেবার পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই বরং যে সম্পত্তি তার নয়, সে বিষয়ে তার কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দরকার নেই। তবে নগরমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের এক মাস পেরিয়ে গেলেও টিউলিপ সিদ্দিক এখনো তার সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয় ও বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে দেখেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির দেওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অনিচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। এ-সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ট্রেজারি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টিউলিপের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। অথচ তার নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত চান। অভিযোগ, লন্ডনে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকটি সম্পত্তি তিনি ব্যবহার করেছেন।

উল্লেখ্য, ৭৭ বছর বয়সি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত বছরের আগস্টে এক রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়ন চালানোর পর তিনি গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান। তার নির্দেশে চালানো দমনপীড়নের ফলে ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়। হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার ও গোপনে কারাবন্দি করার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরের কানাইয়ায় শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্ট একটি পারিবারিক অবকাশকেন্দ্র খুঁজে পেয়েছে। এই বাড়ির মধ্যে ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামে একটি প্লট রয়েছে। দুদক সেটির তদন্ত করছে বলে খবর প্রকাশের একদিন পরই দ্য টেলিগ্রাফ টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও সম্পদের তথ্য প্রকাশ করে।

পুরোনো সরকারি নথি থেকে দেখা যায়, ওই সম্পত্তিকে টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ ঠিকানা হিসাবে উলে­খ করা হয়েছিল। নথিটি ২০১৪ সালের মে মাসে ক্যামডেন কাউন্সিলরের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পরের তারিখে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত ১০তলা ভবনটি ২০১০ সালের দিকে নির্মিত। একটি বিজ্ঞাপনের তথ্যানুযায়ী, ওই ভবনে ছাদবাগান, দুই ও তিন বেডরুমের ঘরের ফ্ল্যাট এবং বারান্দাসহ আবাসিক ইউনিট রয়েছে। এ ধরনের বিশাল অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সঙ্গে ঢাকার দুই কোটি মানুষের বসবাসের পরিবেশের বড় ধরনের বৈসাদৃশ্য আছে।

ওই ভবন টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তার দাদা বা পুরো পরিবারকে উদ্দেশ করে নামকরণ করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

এ ভবনের মালিকানার বিষয়ে জানেন-এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, এটি পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমির ওপর নির্মিত। তবে পরিবারটি এখনো ওই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক কি না বা ভবনটির নামকরণ কার নামে হয়েছে, এ বিষয়ে লেবার পার্টি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক ‘সাম্প্রতিক সময়’ পর্যন্ত ওই ভবনে ছিলেন বলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তার বায়োতে লেখা ছিল। শফিক আহমেদ শেখ রেহানার স্বামী। আর রেহানা হচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন।

আন্তর্জাতিক

রুশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ইউক্রেন একদিনে আরও ২৩৫ সৈন্য হারিয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ব্যাটলগ্রুপ ইস্ট অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী একটি ট্যাঙ্ক, একটি সাঁজোয়া যুদ্ধযান এবং ১৪০ জনের বেশি সৈন্য হারিয়েছে।

রুশ মন্ত্রণালয়ের মতে, ব্যাটলগ্রুপ ইস্ট-এর ইউনিটগুলো ফ্রন্টলাইনের পরিস্থিতি উন্নত করেছে এবং দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের নোভোসিয়োলকা, বারলাটস্কোয়ে, নভোপোল, নভোওচেরেতোভাতোয়ে এবং জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের গুলিয়াইপোলের কাছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর তিনটি যান্ত্রিক, ট্যাঙ্ক ব্রিগেড এবং তিনটি প্রতিরক্ষা ব্রিগেডের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে।

একই সময়ে ব্যাটলগ্রুপ নর্থ ও ডিনেপ্রো অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ৯৫ জন সৈন্য, দুটি গোলাবারুদ ডিপো এবং তিনটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ কেন্দ্র হারিয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে জানিয়েছে, খারকিভ ফ্রন্টে, ব্যাটলগ্রুপ নর্থের ইউনিটগুলো সিনেলনিকোভো, মালিয়ে প্রোখোদি এবং ঝোভটনেভে এলাকায় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী, প্রতিরক্ষা ব্রিগেড ও ন্যাশনাল গার্ড ব্রিগেডের ওপর হামলা চালায়। এতে ইউক্রেনীয় বাহিনী ৩০ জন সৈন্য, দুটি ফিল্ড আর্টিলারি গান ও একটি যান হারায়।

এদিকে ব্যাটলগ্রুপ ডিনেপ্রোর ইউনিটগুলো জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের নোভোআন্দ্রেভকা, মালিয়ে শেরবাকি, কামেনস্কোয়ে, স্টেপনোগোরস্ক এবং খেরসন অঞ্চলের বেরিস্লাভ ও ওত্রাদোকামেনকায় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর তিনটি যান্ত্রিক, দুটি উপকূল প্রতিরক্ষা এবং দুটি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্রিগেডের ওপর হামলা চালিয়ে ৬৫ জন সৈন্য, একটি পদাতিক যুদ্ধযান ও সাতটি গাড়ি ধ্বংস করে। এছাড়া দুটি গোলাবারুদ ডিপো ও তিনটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ কেন্দ্রও ধ্বংস করা হয়েছে। সূত্র: তাস

আন্তর্জাতিক

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ১০ম স্থানে রয়েছে ইসরাইল।

নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সামরিক শক্তিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ফোর্বসের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি।

ফোর্বসের এ তালিকার পদ্ধতিটি পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুলের অধ্যাপক ডেভিড রেইবস্টেইনের নেতৃত্বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের সঙ্গে যুক্ত বিএভি গ্রুপের গবেষকরা তৈরি করেছেন।

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি শক্তিশালী দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদন আরো বলা হয়েছে, দেশটির জিডিপি ৩০ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যা সাড়ে ৩৪ কোটি।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের জিডিপি ১৯ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির জনসংখ্যা ১৪১ কোটি। আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দেশটির জিডিপি ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি।

এদিকে, ৩ দশমিক ৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি এবং প্রায় সাত কোটি জনসংখ্যার যুক্তরাজ্য রয়েছে তালিকার চতুর্থ স্থানে। পঞ্চম স্থানে থাকা জার্মানির জিডিপি ৪ দশমিক ৯২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং জনসংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি।

অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সমন্বয়ের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এর জিডিপি ১ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং জনসংখ্যা ৫১ কোটি ৭০ লাখ।

তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। যার জিডিপি ৩ দশমিক ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং জনসংখ্যা ৬৬ কোটি ৫০ লাখ।

জাপান রয়েছে অষ্টম স্থানে। দেশটির জিডিপি ৪ দশমিক ৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যা সাড়ে ১২ কোটি।

জিডিপি ১ দশমিক ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ৩৩ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার দেশ সৌদি আরব রয়েছে নবম স্থানে। এ ছাড়া তালিকায় ১০ম স্থানে রয়েছে দখলদার ইসরাইল। তাদের জিডিপি ৫৫১ বিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যা প্রায় ৯৪ লাখ।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানোর অনুরোধ পেলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কৃতি বর্ধন সিং।

বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার অধিবেশনে জন বৃত্তাসের লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি। খবর নিউজ এইটিন।

লিখিত প্রশ্নে রাজ্যসভার সদস্য জন বৃত্তাস জানতে চান, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে কিনা; চেয়ে থাকলে তারা কারণ হিসেবে কী বলেছে এবং ভারত সরকার তার প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে কিনা।

জবাবে কৃতি বর্ধন বলেন, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা বিভিন্ন অপরাধ করেছেন। তবে এ বিষয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশকে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো জানায়নি।

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।

এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে গণহত্যা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।

প্রায় তিনশ মামলায় শেখ হাসিনার বিচার চলার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেলিফোনে কথা বলেছেন। সোমবার (২৮ জানুয়ারি) দুই নেতার মধ্যে এ ফোনালাপ হয়।

এদিন ফোনালাপের পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন দুই নেতা। তারা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ আঞ্চলিক অনেক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন।

গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প বেশ কিছু অভিবাসন-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী রয়েছেন।

সোমবারের ফোনালাপ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আলোচনায় প্রযুক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, ট্রাম্প ভারতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বেশি কেনার ওপর জোর দিয়েছেন এবং দুই দেশের মধ্যে ‘ন্যায্য’ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফোনালাপ নিয়ে এক্স (আগের টুইটার) হ্যান্ডলে মোদি ট্রাম্পকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে উল্লেখ করে লেখেন, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আমরা পারস্পরিক লাভবানযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য অংশীদারত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের জনগণের কল্যাণ এবং বৈশ্বিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার দিকে একসঙ্গে কাজ করব।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত নাগরিকদের শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ভারত। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সহযোগিতা করতে এবং বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে এই পদক্ষেপ নয়াদিল্লির প্রাথমিক সংকেত।

প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে শনাক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য ভারত তাদের পরিচয় যাচাই করে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পরিচয় প্রকাশ না করে তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ভারতীয়দের সংখ্যা ১৮ হাজারের অনেক বেশি হতে পারে। কারণ, এটি স্পষ্ট নয় যে কতজন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পশ্চিম ভারতের, বিশেষ করে পাঞ্জাব ও গুজরাট রাজ্যের।

অন্যান্য অনেক দেশের মতো ভারতও ট্রাম্প প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করতে এবং তার বাণিজ্য হুমকির প্রভাব এড়াতে পর্দার আড়ালে কাজ করছে। অবৈধ অভিবাসন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল।

আন্তর্জাতিক

কূটনৈতিক সেবার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সৌদি আরবের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলানকে পদক দিয়েছে সরকার।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মঙ্গলবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতকে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স মেডেল’ প্রদান করেন।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশটিতে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চীন, রাশিয়াসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তৌহিদ হোসেন বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। দেশটিতে থাকা ৩০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সৌদি বিনিয়োগ এই বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। উভয় দেশ বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির পক্ষে সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে।

আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। ‘বাংলাদেশ মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ পাওয়ায় সৌদি রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান তৌহিদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান বলেন, মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স প্রদান করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ এখানকার রাষ্ট্রদূতদের কাজে আরও উৎসাহিত করবে। তবে এটা শুধু আমার অর্জন নয়, আমার মিশনের সব কর্মকর্তার পরিশ্রমের ফসল।

পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

বিদেশি ও স্থানীয় কূটনীতিকদের জন্য শেখ হাসিনার সরকার ‘বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ চালু করে। অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গবন্ধু শব্দটি বাদ দিয়ে মেডেলটির নতুন নাম দিয়েছে ‘বাংলাদেশ মেডেল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তকে ‘প্রত্যাশিত’ উল্লেথ করে বলেছেন, ইউএসএআইডি’র সাহায্য সাময়িক স্থগিতকরণ কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য নয়।

মার্কিন বৈশ্বিক সাহায্য-সহযোগিতা সম্পর্কিত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি কোনো বিশেষ দেশের জন্য নির্দিষ্ট নয়।

আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।

সম্প্রতি দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশে সহায়তা কর্মসূচি পর্যালোচনার জন্য মার্কিন সাহায্য সকল দেশের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট দেশ এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য নয়।

আদেশ জারির পর, মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে চলমান সকল প্রকল্প ও কর্মসূচির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তহবিল স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে, বাংলাদেশ সরকারকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি।

বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তৌহিদ বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে এটি নিশ্চিত করতে পারছি না, কারণ আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও তথ্য পাইনি। তবে, ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা প্রত্যাশিত। তিনি (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন যে, তিনি এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবেন। তারা পুনর্বিবেচনার জন্য সময় নিয়েছেন, তারা এটাই বলেছিলেন। ধারণা করা যেতে পারে যে, এই ধরনের তহবিল হ্রাস পাবে; এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন।’

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বার্ষিক তহবিলের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে তৌহিদ বলেন, ‘আমরা একটি নতুন বাস্তবতায় প্রবেশ করছি, এবং এতে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়।’

উপদেষ্টা বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন নীতি চালু করেছেন যা তার পূর্বসূরিদের নীতি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হবে। নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কৌশলগতভাবে কাজ করতে হবে।’

এদিকে ইউএসএইড বাংলাদেশ অফিসের পরিচালক রিচার্ড অ্যারন আজ ইউএসএআইডির সাথে চুক্তিবদ্ধ সকল স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাকে অবিলম্বে তাদের ব্যয় বন্ধ করার নির্দেশ সম্বলিত একটি নির্দেশনা জারি করেছেন।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইউএসএআইডির বাংলাদেশ কার্যালয়ের পরিচালক রিচার্ড বি অ্যারন শনিবার সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠনের জন্য এ নির্দেশনা জারি করে চিঠি দেন।

এতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির আওতাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির মার্কিন অংশের ব্যয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

এ নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস গত ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে জারি করা এক নির্দেশের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এদিকে ইউএসএআইডির অধিগ্রহণ ও সহায়তা বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক ব্রায়ান অ্যারনের পাঠানো চিঠিটির শিরোনাম, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ: যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তার পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্সামঞ্জস্যকরণ।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, এই চিঠিটি ইউএসএআইডি-বাংলাদেশের সব বাস্তবায়ন অংশীদারদের প্রতি একটি নির্দেশিকা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। যাতে আপনার সংশ্লিষ্ট ইউএসএআইডি-বাংলাদেশ চুক্তি, কার্যাদেশ, অনুদান, সমন্বিত চুক্তি বা অন্যান্য অধিগ্রহণ বা সহায়তা সরঞ্জাম অধীনে করা কোনো কাজ অবিলম্বে বন্ধ, থামানো বা স্থগিত করা হয়।

এতে অংশীদারদের সঙ্গে যেসব কাজ চলছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের জন্য সব যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান সব প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অধস্তনদের নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে মার্কিন দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্যনিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আরও অনেক কিছু মোকাবিলায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ফরেইন অ্যাসিস্ট্যান্স ডট গভ’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালের ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে মার্কিন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০—এর মধ্যেই ছিল।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল ও মিসরের জন্য সামরিক সহায়তাকে মার্কো রুবিও নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছে। গাজা যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে আরও বড় সামরিক প্যাকেজ দিচ্ছে। মিসর ১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় অঙ্কের প্রতিরক্ষা তহবিল পেয়ে আসছে। বাংলাদেশে খুব বেশি না হলেও সামান্য পরিমাণে সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই আদেশ অনুসারে, বাংলাদেশে সামরিক সহযোগিতার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

একই সঙ্গে এই নির্দেশনা অন্তত কয়েক মাসের জন্য মার্কিন সহায়তায় পরিচালিত পিইপিএফএআর কর্মসূচি বন্ধ রাখারও ইঙ্গিত দেয়। পিইপিএফএআর হলো এইচআইভি/এইডসবিরোধী কর্মসূচি, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষ করে, আফ্রিকার দেশগুলোর রোগীদের জন্য অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধ সরবরাহ করে।

২০০৩ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে চালু হওয়া এই কর্মসূচি প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য খাতে যে সহায়তা দেওয়া হতো বাংলাদেশে তাও বন্ধ হতে পারে।

ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক সাহায্যকে তার পররাষ্ট্রনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়, যা চীনের থেকে আলাদা। কারণ, চীন সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের দিকে বেশি মনোযোগী। ৮৫ দিনের মধ্যে সব বৈদেশিক সাহায্য পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ডলারের হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ দাতা দেশ। তবে ইউরোপের কিছু দেশ, বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, তাদের অর্থনীতির আকারের আনুপাতিক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি দেয়। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৬৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক সাহায্য দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ৯০ দিনের জন্য বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত করেন। তবে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা তখনই স্পষ্ট ছিল না। দারিদ্র্যবিরোধী সংগঠন অক্সফাম বলেছে, ট্রাম্প বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঐকমত্য থেকে সরে আসছেন।