আন্তর্জাতিক

নির্বাচন এবং শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশির ব্যাপক অংশগ্রহণের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের প্রত্যাশার বার্তা দিয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটি এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংলাপের প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেছে।

তারা বলেছেন, আমরা সংলাপের পক্ষে। তবে এর সঙ্গে (সংলাপ) আমরা যুক্ত নই। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের প্রধান উজরা জেয়া। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

বৈঠকে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিকে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সচিব বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলী কৌরসহ বিভিন্ন খাতের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা নির্বাচন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়। অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট।

বাইডেন প্রশাসনের বার্তা স্পষ্ট হয় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতির মাধ্যমে। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দৃষ্টিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা দিয়েছে। এতে সুশীল সমাজ ও স্বাধীন মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকারের উন্নয়ন ও মৌলিক স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে।

এসব আলোচনায় ঘুরেফিরেই এসেছে কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছাড়াই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের কথা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন প্রসঙ্গে সরকারের তরফে বলা হয়, সেপ্টেম্বর নাগাদ আইনের সংশোধন করা হবে। এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে।

উজরা জেয়া সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে চায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উজরা জেয়া বলেন, আমরা সবাই সংলাপের পক্ষে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই। এই সফরে নির্বাচনের কথা বারবারই এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছেন। উজরা জেয়া নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার প্রতি জোর দিয়েছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসাবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন উজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। দলটি আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করবে।

বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে।

নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে জোরালো প্রত্যয়ের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের পালটা কর্মসূচি হিসাবে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের পাশের সড়কে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের সংঘাত, সহিংসতা ছাড়াই গতকালের পালটাপালটি সমাবেশ শেষ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি বলেন, গতকাল বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা। ভবিষ্যতেও এটির প্রতিফলন থাকবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

উজরা জেয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকরা যাতে অবাধে এবং কোনোরকম ভয়ভীতি ও নিপীড়নের শিকার না হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।

তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন উজরা জেয়া।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বহুমাত্রিক ও নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করে, সেটা তাকে জানিয়েছেন। শ্রম আইনের সংশোধনে বাংলাদেশ গত এক দশকে কী অর্জন করেছে, সেটাও তুলে ধরেছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে উদ্যোগ চলমান আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন, নাগরিক অধিকার, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া তিন দিনের সফরে আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াকে স্বাগত জানান।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রমিক ইস্যু, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানব পাচার রোধসহ অভিন্ন মানবিক উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করবেন।

একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলটি মানবাধিকার, রোহিঙ্গা শরনার্থী সংকট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

আন্ডার সেক্রেটারি এবং তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের দেখতে বুধবার ভোরে সরাসরি কক্সবাজার যাবেন এবং তাদের অন্যান্য ব্যস্ত কর্মসূচি বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও উজরা জেয়া আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএআইডি’র এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর উপ-সহকারী এডমিনিসট্রেটর জঞ্জালি কাউর।

জেয়া গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সার্বজনীন মানবাধিকারের অগ্রগতি, উদ্বাস্তু ও মানবিক ত্রাণকে সহায়তা, আইনের শাসন ও মাদকবিরোধী সহযোগিতা, দুর্নীতি ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই, সশস্ত্র সংঘাত প্রতিরোধ এবং মানব পাচার নির্মূলে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন এর আগে বলেন, জেয়া তুলনামূলকভাবে একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা এবং তার কর্তৃত্বের আওতা ‘বেশ প্রশস্ত’।

আন্তর্জাতিক

অতিরিক্ত ২ হাজার ৬১ কোটি টাকা (১৯০ মিলিয়ন ডলার) ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ ঋণ বাংলাদেশের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় হবে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এডিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে ঋণের এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিরিক্ত এ অর্থায়নের মাধ্যমে সব ধরনের আবহাওয়ার উপযোগী করে ১৩৫০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার হবে। উপজেলা পর্যায়ে ১৮০টি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয়ে ট্রাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়াবে।

এ বিষয়ে এডিবির প্রধান পল্লী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মাসাহিরো নিশিমুরা জানিয়েছেন, গ্রামীণ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় অতিরিক্ত অর্থায়ন এটি, যা দেশটির গ্রামীণ সড়কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। কৃষি এলাকাগুলোকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পটি গ্রামীণ এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করছে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে ‘রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট’ নামে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন করা, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্থাগুলোর সক্ষমতা জোরদার, গ্রামীণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তনসহ গ্রামীণ সড়ক নিয়ে মহাপরিকল্পনার উন্নয়ন করা।

আন্তর্জাতিক

সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রুপিতে করা সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ সেখান থেকে বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে আর সে দেশে রপ্তানি করে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছিল, ব্যবসায়ীরাও এর দাবি করে আসছেন অনেক দিন ধরে, এবার তা বাস্তব রূপ পেল। এখন ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও বাণিজ্য হবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, মঙ্গলবার থেকে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা চালু হলো। দু’দেশের মধ্যে যে সর্ম্পক তা আরও দৃঢ় হলো। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে। বাণিজ্যে দু’দেশ আরও এগিয়ে যাবে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যি ক্ষেত্রে দারুণ সফলতা রয়েছে। আমরা চাই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উভয় দেশ সহজ ভাবে বাণিজ্য করতে পারবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলি রেজা ইফতেখার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বিডার চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন।

বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক উভয় দেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক।

আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিলেন দুই লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী। আরও প্রায় ২ লাখ ৬৮ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। শুক্রবার মাই মিডিয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মে. গোলাম সারোয়ার।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ হাইকমিশন ৪ লাখ ২৩ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ হাজার ৭৬৩টি সত্যায়ন আবেদনের বিপরীতে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৬৯ জন কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চার বছর পূর্বে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। পরবর্তীতে গত বছরের ২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপনপূর্বক ২০২২ সালের আগস্ট থেকে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার গতি কিছুটা কম থাকলেও চলতি বছরের প্রথম থেকেই পুরোদমে কর্মী যাচ্ছেন দেশটিতে।

এদিকে ছয়টি খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে ১১ লাখ ৩৬ হাজার ২২টি কর্মসংস্থান কোটা অনুমোদন করেছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে উৎপাদন খাতে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ১০৬টি, নির্মাণ খাতে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৯টি, সেবা খাতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯০টি, আবাদে ৮৫ হাজার ৬৭৮টি, কৃষিতে ৪৯ হাজার ৪৭৩টি এবং খনি ও খনন খাতে ৩৭৬টি কোটা অনুমোদন করা হয়েছে।

মোট কোটার মধ্যে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯০টি বা ৪১ শতাংশ চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত ১৬ জুন দেওয়ান রাকায়াতের (জাতীয় সংসদ) প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য লিম লিপ ইঞ্জির (পিএইচ-কেপং) এক প্রশ্নের জবাবে মালয়েশীয় মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমার এসব তথ্য জানান।

শিবকুমার বলেন, নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে বিদেশি কর্মীদের প্রবেশ প্রক্রিয়ার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশের স্বার্থ ও খ্যাতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে শ্রমের মানদণ্ড মেনে চলার দিকেও নজর রাখছে মালয়েশিয়া সরকার।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ১১-১৪ জুলাই বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

শুক্রবার এক টুইট বার্তায় এ বৈঠকের কথা জানান উজরা জেয়া।

টুইটে তিনি বৈঠকের বিষয়ে বলেন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায্য শ্রম চর্চা এবং মানবিক সহযোগিতা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে ধন্যবাদ। আমি আমাদের শক্তিশালী অংশীদারত্বকে আরও গভীর করতে আগ্রহী।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উজরা জেয়ার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশে আসছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএইডের এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিটেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলী কৌর।

চারদিনের ওই সফরে তিনি উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। তার এ সফর মূলত দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে এবং যোগাযোগ আরও জোরদার করার একটি প্রচেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ব্যস্ততা ছাড়াও কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।

উল্লে­খ্য, উজরা জেয়া গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে, সর্বজনীন মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতে, শরণার্থী ও মানবিক ত্রাণকে সমর্থন করতে, আইনের শাসন ও মাদকবিরোধী সহযোগিতা, দুর্নীতি ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, সশস্ত্র সংঘাত রোধ করতে এবং মানবপাচার নির্মূলে বিশ্বব্যাপী মার্কিন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু রাজনীতিবিদের ভূমিকাকে নব্য ঔপনিবেশবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া। মস্কো মনে করে, এ ধরনের পদক্ষেপ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের’ চেষ্টা।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইটে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলা হয়।

টুইটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ইউরোপ এবং আমেরিকার কিছু রাজনীতিবিদের চিঠি প্রকাশের বিষয়টি আমরা লক্ষ করেছি। এটি হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদ এবং একটি স্বাধীন দেশে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের আরেকটি অপপ্রয়াস।’

আন্তর্জাতিক

বিশ্ববাজারে চালের দাম ১১ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আবহাওয়াজনিত কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় চালের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এল নিনো ধাঁচের আবহাওয়ার প্রভাবে অদূরভবিষ্যতে চালের দাম আরও অন্তত ৫ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বে চাল রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ ভারত। আন্তর্জাতিক বাজারের ৪০ শতাংসেরও বেশি চাল সরবরাহ করে দেশটি। ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আরইএ) প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণ রাও রয়টার্সকে বলেন, ভারত বরাবরই সবচেয়ে কম দামে চাল রপ্তানি করে। কিন্তু দেড় বছর ধরে চাল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোয় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চালের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় সরকারকে চালের জন্য কৃষকদের চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হয়। যে কারণে বাড়াতে হয় রপ্তানিমূল্যও। ভারত রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধি করায় অন্য সরবরাহকারীরাও দাম বাড়াতে শুরু করেছে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাজারবিষয়ক সূচক বলছে, বৈশ্বিক বাজারে চলতি জুলাইয়ে চালের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত মাসে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাগোষ্ঠী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন আর বেলারুশে নেই। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) এমনটি জানিয়েছেন।

এর আগে, ২৭ জুন লুকাশেঙ্কো বলেছিলেন, সংকট নিরসনে ২৪ জুনের এক চুক্তির অংশ হিসেবে প্রিগোজিন বেলারুশে এসেছেন।

২৪ জুলাই ওয়াগনার গোষ্ঠী বিদ্রোহ ঘোষণা করে মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সেদিন সকালে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যরা ইউক্রেনে তাদের ফিল্ড ক্যাম্প থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডনে প্রবেশ করে।

শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে তারা আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং মস্কোর উত্তরে আরেকটি শহর ভোরোনেজের সামরিক স্থাপনা দখল করে নেয়।

যোদ্ধারা মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে, ক্রেমলিন মস্কোসহ অনেক অঞ্চলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করে। মস্কোর মেয়র শহরের বাসিন্দাদের বাইরে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে চলতে বলেন।

এর জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যারা রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

রুশ টিভি চ্যানেল রশিয়া ২৪-এর খবরে তখন বলা হয়, বেলারুশের নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ও প্রিগোজিনের মধ্যে বৈঠকে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। সৈন্যরা যুদ্ধের মাঠে ফিরে যেতে শুরু করে। পরে প্রিগোজিন বেলারুশে চলে যান।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) লুকাশেঙ্কো সাংবাদিকদের বলেন, প্রিগোজিন সেন্ট পিটার্সবার্গে (রাশিয়ার দ্বিতীয় বড় শহর) রয়েছেন। তিনি আর বেলারুশের মাটিতে নেই।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডাটা অনুযায়ী প্রিগোজিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বাণিজ্যিক জেট বুধবার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কোর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার ফ্লাইটি রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে যাচ্ছিল। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে, ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন এই জেটে ছিলেন কি না।

আন্তর্জাতিক

জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) বয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরীক্ষামূলক খালাসের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রোববার মধ্যরাতে তেল খালাসের কথা। এমটি হোরে জাহাজে সৌদি আরব থেকে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে খালাস দেশের ইতিহাসে প্রথম। সাগরের তলদেশে স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। এরপর সেখান থেকে ১১৬ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গায় অবস্থিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ট্যাংকে তেল পাঠানো হবে। আগে বন্দরের বহির্নোঙরে ভেড়া ট্যাংকার থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হতো। এ জটিল প্রক্রিয়ায় সময় ও অর্থ বেশি লাগত। ১১-২০ দিন লাগত এবং তেলের অপচয়ও হতো। নতুন পদ্ধতিতে তেল খালাসের সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এ পদ্ধতিতে তেল খালাসে বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত তেল) নিয়ে আসা এমটি হোরে জাহাজ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ। সাধারণত এতদিন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ বা অয়েল ট্যাংকার আসত। কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে সিঙ্গেল মুরিং পয়েন্টে এক লাখ টনেরও অধিক ধারণক্ষমতার সুপার ট্যাংকার ভিড়তে পারবে। ২৪ জুন সিঙ্গেল মুরিং বয়া এলাকায় এমটি হোরে ভেড়ানো হয়। পরদিন তেল খালাস শুরুর কথা থাকলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, দেশের ইতিহাসে বিশালাকার মাদার ট্যাংকার থেকে সমুদ্রে স্থাপিত ভাসমান বয়ায় তেল খালাস শুরু হচ্ছে। দেশের জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী অধ্যায়। স্মার্ট বাংলাদেশে একটি ‘স্মার্ট টেকনোলজির’ সংযোজন হলো। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে। বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। আগে বহির্নোঙরে লাইটারিংয়ের মাধ্যমে একটি জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে সময় লাগত ১১ থেকে ২০ দিন। এখন লাগবে মাত্র দুই দিন। অতিরিক্ত সময় বসে থাকার জন্য জাহাজপ্রতি দিনে ৩০-৪০ হাজার ডলার গুনতে হতো। এখন এ টাকা সাশ্রয় হবে। রিজার্ভ সমৃদ্ধ হবে। ছোট ছোট লাইটার জাহাজের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হতো। খালাসের সময় কিছু তেল সাগরেও পড়ত। এখন এ রকম কিছুই হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা এ ধরনের জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। তাই বিপিসি যে কোনো সময় পুরোদমে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু করলে আমরা সাপোর্ট দিতে পারব। এজন্য আমরা প্রস্তুত।

বিপিসি-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে সমুদ্রপথে বছরে ৬০ লাখ টনেরও বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকারগুলো থেকে ইআরএলের ট্যাংকারে সরাসরি তেল খালাস করা সম্ভব হয় না। এর ফলে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙর করতে হয়। এরপর ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়। এতে একেকটি জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে সময় লেগে যায় ১১ থেকে ২০ দিন। এ পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় ২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) হাতে নেওয়া হয়। ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে খরচ আরেকটু বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিপিসির এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। মহেশখালীতে দুই লাখ টন ধারণক্ষমতার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মহেশখালী থেকে ১১৬ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৯০ লাখ টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করা যাবে। এর মাধ্যমে সময় সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নামের এ প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন কাজও শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও সময় লাগবে।