আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন যাদের হৃদয় পাথরের তৈরি শুধুমাত্র তারাই চুপচাপ গাজার ঘটনা দেখে যেতে পারে। যেখানে ইসরায়েল প্রায় চার সপ্তাহ ধরে আকাশ ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার মস্কোতে এক সভায় বক্তৃতাকালে পুতিন সতর্ক করেন এই দুঃসহ ঘটনাগুলো সহিংসতাকে উসকে দিতে ব্যবহৃত হতে পারে আর এই জন্যই আবেগ থেকে সরে আসা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ঘটতে থাকা ভয়াবহতার কারণে সেখানে ক্রোদের স্ফুলিঙ্গ তৈরি করা সহজ, খুবই সহজ। আপনি যখন এই দুর্দশা দেখেন এবং রক্তাক্ত শিশুদের দিকে তাকান, তখন আপনার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়, আপনার চোখে জল আসে। এটি হল যে কোনো মানুষ সাধারণ প্রতিক্রিয়া। যদি এই প্রতিক্রিয়া কারো না থাকে, তাবে সে হৃদয়হীন, তার হৃদয় পাথরের তৈরি।

রাশিয়ার দাগেস্তান প্রশাসনিক কেন্দ্র মাখাচকালা অঞ্চলের বিমানবন্দরে ২৯ অক্টোবর অস্থিরতার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পুতিন বলেন, ইসরায়েল থেকে ফিরে আসা ইহুদিদের ওপর হামলা ফিলিস্তিনিদের কোনো ভাবেই সাহায্য করবে না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের অবশ্যই এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে যৌক্তিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে, বুঝতে হবে এই সব কোথা থেকে আসে এবং এই আশুভ শক্তির মূল কোথায়।

ইউক্রেনের দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসনের কারণে কিয়েভের কাছে সরবরাহ করা অস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এখন তারা বলছে ইউক্রেন পাঠানো অস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যে দেখা যাচ্ছে। অবশ্যই এটা ঘটছে কারণ তারা (ইউক্রেনীয়রা) অস্ত্র বিক্রি করছে। সেখান থেকে তা (পশ্চিমা অস্ত্র) তালেবানসহ অন্য সব জায়গায় যাচ্ছে।

বিপুল সংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং ওষুধের সংকটে ভুগছে যাদের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত নারী ও শিশু। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান তেল আবিব বারবার উপেক্ষা করছে। আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ধারাবাহিক নির্জাতনের প্রতিবাদে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১৪শ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ৯২২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ২৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

শুধু গাজা নয়, ঘরপোড়া আগুনে জ্বলছে পশ্চিম তীরও। অঞ্চলটির ঘরে ঘরে এখন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার আতঙ্ক। ফিলিস্তিনিদের বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলছে তারা। ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে ১৭১ বার। প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে ২৬টি। সম্পত্তির ক্ষতি করেছে এমন ঘটনা ঘটেছে ১১৫টি। বসতি স্থাপনকারীরা প্রাণহানিসহ সম্পত্তিরও ক্ষতি করেছে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ৩০টি। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর বসতি স্থাপনকারীদের করা বিভিন্ন আক্রমণ নথিভুক্ত করেছে তারা।

গত ২৮ অক্টোবর দক্ষিণ পশ্চিম তীরের খিরবাত জানুতা অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হন প্রায় ২৪টি ফিলিস্তিনি পরিবারের মোট ১৪১ জন বাসিন্দা। যাদের অর্ধেকই শিশু। তাদের প্রায় ৫০টি আবাসিক কাঠামো ও পশু থাকার স্থান ভেঙে ফেলা হয়। নিজেদের ৫ হাজার গবাদি পশু নিয়ে এদিন অঞ্চলটি খালি করেন তাধরা। এই অঞ্চলের আবু খালেদ (৪৩) বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর আমাদের বাড়িঘর, পানির ট্যাঙ্ক, সোলার প্যানেল ধ্বংস করেছে তারা। আর এ কারণেই আমরা বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।’ যদিও এমন অভিজ্ঞতা খিরবাত জানুতা অঞ্চলের জন্য নতুন নয়। গত ৭ অক্টোবর থেকে ৯৮টি পরিবারের ৩১৩ শিশুসহ অন্তত ৮২৮ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত করার প্রতি তিনটি ঘটনার মধ্যে একটিরও বেশি ঘটনায় হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে গুল চালানোসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন বসতি স্থাপনকারীরা। প্রায় অর্ধেক ঘটনায় ইসরাইলি বাহিনী আক্রমণকারীদের সঙ্গে থেকেছে অথবা তাদের সক্রিয় সমর্থন দিয়েছে। অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত সরাসরি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ক্ষতি বা ধ্বংস হয়েছে ২৪টি আবাসিক কাঠামো, ৪০টি কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত কাঠামো, ৬৭টি যানবাহন ও ৪০০টিরও বেশি গাছ ও চারা। পশ্চিম তীরের আরেক অঞ্চল আলগানুব। গত ৯ অক্টোবর এই অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মোট ৪০ জন বাসিন্দা। নিজেদের ভিটেবাড়ি ছেড়ে যেতে বন্দুক ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাদের। বলা হয়েছে, এক ঘণ্টার মধ্যে এই অঞ্চল ছেড়ে চলে না গেলে তাদের হত্যা করা হবে। বাস্তুচ্যুতদের একজন আবু জামাল (৭৫) বলেন, ‘বসতি স্থাপনকারীরা আমাদের তাঁবুতে আগুন দিয়েছে, আমার ছাগল চুরি করেছে। আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে।’

গত ১২ অক্টোবর পশ্চিম তীরের নাবলুস অঞ্চল থেকে আট পরিবারের মোট ৫১ জনকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। তাদেরও বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি আর রাতে তাঁবুতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সেপ্টেম্বরে ওসিএইচএ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের ২৮টি সম্প্রদায়ের ১ হাজার ১০৫ জন মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বাস্তুচ্যুত হয়েছে চারটি সম্প্রদায়। অন্য ছয়টি সম্প্রদায়ের ৫০ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে সাতটি সম্প্রদায়ের।

২০২২ সাল থেকে বসতি স্থাপনকারীদের হামলার শিকার হয়ে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৯৩৩তে পৌঁছেছে। এছাড়া ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বাড়িঘর ধ্বংসের শিকার হয়ে ২০২২ সালে আরও ১ হাজার ৩২ জন ফিলিস্তিনি ও ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫২ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বাস্তুচ্যুত করা ছাড়াও ফিলিস্তিনের চলাফেরায় অবরোধসহ বিভিন্ন মানবিক পরিষেবা থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন চলছে গ্রেফতার অভিযান। শুক্রবারও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। অভিযান চালানো হয়েছে পশ্চিম তীরের নাবলুস, তুলকারম ও রামাল্লায়। তবে বেশিরভাগই গ্রেফতার হয়েছেন হেব্রন থেকে। শহরটির দক্ষিণে আল-ফাওয়ার শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে ২৫ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

প্রচ্ছদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বের প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিন।

বৃহস্পতিবার ‘প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা অ্যান্ড দ্য ফেট অব ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক চার্লি ক্যাম্পবেলের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে টাইম ম্যাগাজিন।

সেপ্টেম্বরের শুরুতে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করার উদ্দেশ্যে ঢাকার বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন চার্লি ক্যাম্পবেল।

সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা, যিনি গত এক দশকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুততম বর্ধমান অর্থনীতির দেশ হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাপক উত্থান ঘটিয়েছেন।

এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার আগেও ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময়ের হস্তক্ষেপকারী সামরিক শক্তি এবং ইসলামপন্থিদের মোকাবিলা করে কৃতিত্বের সঙ্গে দীর্ঘ এই সময় তিনি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার বা ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশিবার নির্বাচনে জয়ী শেখ হাসিনা আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আবারও জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী এ কারণে যে, আমার দেশের জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারা আমার প্রধান শক্তি।’

আন্তর্জাতিক

ইসরাইল যেহেতু একটি দখলদার শক্তি; তাই দেশটির নিজেকে রক্ষার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। বুধবার চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এমন মন্তব্য করেন রুশ প্রতিনিধি।

খোদ ইসরাইলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এমন সংবাদ দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে সেখানে নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া এভাবেই সরাসরি ইসরাইলের বিরোধিতা করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা শুধু ইসরাইলের কথিত আত্মরক্ষার অধিকার নিয়েই কথা বলে যাচ্ছে। অথচ একটি দখলদার শক্তি হিসেবে তাদের সেই অধিকার নেই।

তিনি আরও বলেন, শুধু ফিলিস্তিনিদের ইস্যুগুলোর সমাধান করার মাধ্যমেই ইসরাইলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব। অবশ্যই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান করতে হবে। ইহুদি জনগোষ্ঠী শত শত শতাব্দী ধরে নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের কষ্ট কেমন হতে পারে- সেটা তাদেরই সবচেয়ে ভালো বোঝা উচিত। সাধারণ মানুষদের এভাবে হত্যা করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না এবং মৃতরাও বেঁচে ফিরবে না।

রাশিয়ার দূত তার ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ‘ভণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের রাস্তা বানচাল করার জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করেন নেবেনজিয়া।

আরব দেশগুলো যেভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে ঠেলে দিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছে তারও সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রতিনিধি।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের এক রাতের বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার শত শত ভবন। শনিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা পরিষেবা। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ‘শত শত ভবন ও ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তীব্র বোমাবর্ষণ উত্তর গাজার ভূখণ্ড একেবারে বদলে দিয়েছে। চেনার কোনো উপায় নেই। রাতারাতি হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ইট-পাথরের দেওয়াল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ বোমা হামলা উত্তর গাজার জাবালিয়া জেলায় হয়েছে। ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আক্রমণে প্রায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, উত্তর গাজা উপত্যকার বেইত লাহিয়া শহরে এবং তাল আল-জাতার এলাকায় ইসরাইলি হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। কয়েক ডজন আহতকে উদ্ধার করা হয়েছে। হামলার ফলে যোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবাও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রকাশিত সাদা-কালো ফটোতে দেখা গেছে, সাঁজোয়া যানের একটি কনভয় রাতে গাজায় প্রবেশ করেছে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, হামাসের রকেট লঞ্চার এবং কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন হামাস সদস্য নিহত হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের স্থলবাহিনী রাতে হামাসের লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সেনারা কোনো আঘাত না পেয়ে গাজা উপত্যকা ছেড়ে চলে যায়। গাজায় ইসরাইলের তীব্র বোমাবর্ষণের কয়েক ঘণ্টা আগে, সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি, হামাস যোদ্ধাদের গাজার হাসপাতাল থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর এবং বেসামরিক মানুষকে মানবঢাল হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছিলেন। পরবর্তীতে ড্যানিয়েল ঘোষণা করেছেন, সেনাবাহিনী তার স্থল আক্রমণ প্রসারিত করবে।

এদিকে, হামাস আন্দোলনের সশস্ত্র বাহিনী আল-কাসেম ব্রিগেড ঘোষণা করেছে, তারা ইসরাইলি বাহিনীর একটি আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। আল-কাসেম ব্রিগেড জানায়, ইসরাইল শুক্রবার ভোরবেলা গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফাহ সৈকতে অবতরণ অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছিল। আমরা এ অভিযানে পালটা জবাব দিয়েছি।

আন্তর্জাতিক

বিগত তিন সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধ বিরতির জন্য বারবার আলোচনা করেও সফল হতে পারেনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার অভিভাবক এই পরিষদের উপর্যুপরি ব্যর্থতার পর শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক যু্দ্ধবিরতির জন্য আনিত একটি প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হয়।

বিগত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ শিশুসহ প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুবরণ করে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ। বিগত ২০ দিন ধরে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতির কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও কোন প্রস্তাবই সফলতার মুখ দেখেনি। অবশেষে গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত জরুরি সেশনে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে ভোটাভুটি আহ্বান করা হলে তা দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হয়। উপস্থিত সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ১২১টি দেশ পক্ষে, ১৪টি বিপক্ষে এবং ৪৪টি দেশ ভোট দানে বিরত থাকে।

বাংলাদেশের পক্ষে এ প্রস্তাবে ভোট প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। তিনি এই বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য প্রদানকালে ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য অধিকার অর্জনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার দৃঢ় আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান করে।

রাষ্ট্রদূত মুহিত আরো বলেন, আমরা শুধু এই প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট প্রদান করিনি। নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্বের কোথাও শান্তি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কোন প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জরুরি সেশন আহ্বান করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সেই জরুরি সেশন যাতে অবিলম্বে আহ্বান করা হয়, সেজন্য আমরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছি। অন্যান্য দেশ যাতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, সেইজন্য সম্ভাব্য দেশগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে প্যালেস্টাইন বিষয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক চলাকালে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অটল ও অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সকল স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি।

এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে অবিলম্বে গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি হবে। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা হবে। সেখানে মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীরা অবাধে প্রবেশের সুযোগ পাবে। বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ঔষধের সরবরাহ নিশ্চিত হবে। হাসপাতালগুলো যাতে আহত ও অসুস্থ নাগরিকদের সেবা দিতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করার পথ উন্মুক্ত হবে। একটি স্বাধীন, টেকসই ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের জনগণের বৈধ আকাঙ্খার ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান অর্জনে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, এই প্রস্তাবটি গ্রহণের প্রাক্কালে কানাডার পক্ষ থেকে ৭ অক্টোবর ইসরাইলে সংঘটিত হামলার বরাতে হামাসের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে একটি সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। কিন্তু ইসরাইলের আগ্রাসী কার্যকলাপ ও বর্বরোচিত হামলার বিষয়ে উক্ত সংশোধনীতে কোন উল্লেখ না থাকায় মুসলিম বিশ্বসহ অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবনাটি প্রত্যাখান করে।

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ইসরাইলে হামাসের হামলা এমনিতেই হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে গাজাবাসীকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে গুতেরেস বলেছেন, এটি স্বীকার করে নিতে হবে ইসরাইলে হামাসের হামলা এমনিতেই হয়নি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের মধ্যে রয়েছে। তারা দেখেছে তাদের ভূখণ্ড স্থিরভাবে গ্রাস করা হয়েছে, তারা সহিংসতায় জর্জরিত হয়েছে, তাদের অর্থনীতির গলা টিপে রাখা হয়েছে, তাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে এবং বাড়ি-ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই সমস্যার রাজনৈতিক সমস্যার যে আশা তাদের ছিল সেটি হারিয়ে যাচ্ছে।

তবে তিনি সঙ্গে এও জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দিয়ে হামাসের হামলাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না। সঙ্গে হামাসের হামলার জন্য ফিলিস্তিনিদের সমষ্টিগত শাস্তির বিষয়টিকেও বৈধতা দেওয়া যাবে না।

জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেছেন, এ ধরনের কঠিন মুহূর্তে, নীতির উপর ঠিক থাকা খুবই জরুরি। বেসামরিকদের সম্মান ও রক্ষার নীতির মাধ্যমে যেটি শুরু।

এছাড়া গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তবে গুতেরেস বলেছেন, যে পরিমাণ ত্রাণ এখন গাজায় ঢুকছে সেগুলো বিশাল সমুদ্রের পানির একটি ছোট ফোটার সমান।

মহাসচিব গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদে এমন বক্তব্য দেওয়ার পর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসরাইল। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের দূত গিলার্ড ইর্ডান বলেছেন, গুতেরেসের এ বক্তব্য ‘জঘন্য’ এবং ‘ভয়ানক’। এটির সঙ্গে আমাদের অঞ্চলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মহাসচিব গুতেরেসের সমালোচনা করে ইসরাইলি দূত আরও বলেছেন, তার এ মন্তব্য সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যাকে বৈধতা দেওয়ার সামিল। এটি খুবই দুঃখজনক তার মতো ব্যক্তি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান যেটি সৃষ্টি হয়েছিল ইহুদিদের উপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের (হোলোকাস্টের) পর।

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনের গাজায় ঘুম ভাঙলেই লাশ দেখছে মানুষ। প্রতিমুহূর্তে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এত মৃত্যু আর লাশ দেখে সেখানকার অধিবাসীরা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। চোখ শুকিয়ে গেছে। কাঁদলে অশ্রু আসে না চোখে। তবুও বিশ্ববিবেক নীরব।

আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে ২৪ ঘণ্টায় সাত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে হামলার ১৮তম দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ১৬ হাজারের বেশি মানুষ।

এমন অবস্থায় ইসরাইলের মাটিতে পা রেখেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তেল আবিবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রোঁ বলেছেন, সন্ত্রাস ফ্রান্স ও ইসরাইলে কমন শত্রু। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাড়াইয়ে আপনারা (ইসরাইল) একা নন।

গাজা সংঘাতের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ওয়াশিংটন সফর করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৃহস্পতিবার বিশেষ জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মানবিক সহায়তার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে। এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি ও এনডিটিভি।

গাজার চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০৪ জন নিহত হয়েছেন। রাতে হামলা হয় গাজার উত্তরাঞ্চলের আল-শাতি ও জাবালিয়ার আল-বালাদ শরণার্থীশিবিরে।

এছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলের আল-বুরেইজ ও দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ও খান ইউনুস এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আল শাতি ও জাবলিয়ায় রাতভর হামলার পর ঘুম থেকে উঠেই প্রতিবেশী প্রিয়জনদের লাশ দেখছে মানুষ। এসব এলাকায় কবর দেওয়ারও জায়গা নেই। অতিরিক্ত কবর খুঁড়ে দাফন করা হচ্ছে লাশ।

ফিলিস্তিনের একটি সংবাদ সংস্থার খবর, রাফাহ এলাকায় ইসরাইলি হামলায় ৩০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। আর খান ইউনুসে শিশুসহ ২৩ জন মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে।

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি সকালে এক্স বার্তায় (সাবেক টুইটার) বলেন, গাজা উপত্যকায় ৪০০টির বেশি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে মসজিদও রয়েছে। তিনি বলেন, হামাসের সদস্যরা মসজিদে বসে বৈঠক করছে। এ কারণে মসজিদে হামলা চালাতে হচ্ছে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাছাড়া মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলাপ করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন সফরে ইসরাইল ও ইউক্রেনের ‘পরিস্থিতি’ নিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এই সংকট সমাধানে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চাপ দেওয়া হবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হবে কি না, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

এ সফরকে সামনে রেখে সোমবার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ওয়াং। চলমান সংকট সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেন তিনি।

এক বিবৃতিতে ওয়াং বলেন, প্রতিটি দেশেরই আত্মরক্ষা করার অধিকার আছে। কিন্তু বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসরণ করা উচিত।

‘কার্যকর আন্তর্জাতিক শান্তি সমাবেশের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ফিলিস্তিনির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালকিকে বলেন, দ্বিরাষ্ট্র সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবে চীন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সফরের আগে ইসরাইল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিসি সুনাক ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এলিসি প্যালেস জানিয়েছে, ইসরাইলের প্রতি ‘পূর্ণ সংহতির’ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এই সফরে গেছেন ম্যাক্রোঁ।

এদিকে জর্ডান ও মৌরিতানিয়ার অনুরোধে গাজা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবার এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ কোনো পরিস্থিতিতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে সাধারণ পরিষদকে এগিয়ে আসতে হয়।

১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে নতুন এক প্রস্তাব পাশের চেষ্টা করছে। এর আগে গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায়।

অপরদিকে ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছিলেন, তিনি আশা করেছেন যে ইইউ নেতারা মানবিক সহায়তার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করবেন।

লুক্সেমবার্গে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর জোসেপ বোরেল বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে মানবিক সাহায্যের সুবিধার্থে একটি মানবিক বিরতির ধারণা নেতারা সমর্থন করবেন। তেমন একটি বিরতি বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওইদিনই পালটা আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। এরপর থেকে নির্বিচার হামলা চলছে। অবরুদ্ধ রয়েছে গাজা উপত্যকা।

অন্যদিকে ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের হামলা ও তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের দেশে নিহত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন

আন্তর্জাতিক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। পাশাপাশি সহিংসতা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সোমবার বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানানো হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ তথ্য জানিয়ে আবারও আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো সব পক্ষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। এর মধ্যে আছেন সরকারি কর্মকর্তারা, আইন প্রয়োগকারীরা, রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া এবং অবশ্যই ভোটাররা।

এ সময় ম্যাথিউ মিলারের কাছে ওই সাংবাদিক জানতে চান- ২৮ অক্টোবর বিরাট রাজনৈতিক র্যালি করার কথা ঘোষণা করেছে বিরোধী দল। একে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাংলাদেশে। র্যালিতে বাধা দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে শাসকগোষ্ঠী। এর মধ্যে রয়েছে গ্রেফতার, অভিযোগ গঠন, এমনকি এখন রাতের বেলায়ও বিচার করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ান ইউরেনিয়াম ব্যবহারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি কোনো পদক্ষেপ বিবেচনা করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ইস্যুও তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শুধু নিজের নিরাপত্তা নয়, দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই মঞ্চ থেকে অনেকবার আপনি ভিয়েনা কনভেনশন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে এই প্রেক্ষাপটে আপনার মন্তব্য কি? জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি আবারও বলব ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন্স-এর অধীনে কূটনৈতিক চত্বর ও এর কর্মকর্তাদের সুরক্ষিত রাখতে সবরকম যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্যবাধকতা আছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা আশা করি, দেশের ভেতর যুক্তরাষ্ট্রের সব মিশন ও কূটনীতিকদের সেফটি ও সিকিউরিটি রক্ষায় সব রকম উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সরকার।

আন্তর্জাতিক

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে এক সপ্তাহ আগেই জানা যাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দাবি করা হয়েছে, এআই আগে থেকেই আসন্ন ভূমিকম্প সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে এবং তা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভুল হবে।

এআই মডেলটি নিয়ে দেশটিতে ৭ মাসের আন্তর্জাতিক ট্রায়াল দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় এক সপ্তাহ আগে প্রায় ২০০ মাইলের মধ্যে ১৪টি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে তারা এও জানিয়েছেন, এটি বিশ্বের যে কোনো কোণে কাজ করবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ট্রায়ালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউটি) উন্নতকরণ এআই মডেলটি ডিজাইন করা অন্য ৬শ মডেলের মধ্য থেকে প্রথম সারিতে স্থান করে নেয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন ভূমিকম্প বিশারদ ইয়াং চেন। গবেষণার ফলাফলটি আমেরিকার সিসমোলজিক্যাল সোসাইটির বুলেটিনে প্রকাশিত হয়।

টেক্সাস সিসমোলজিক্যাল নেটওয়ার্ক প্রোগ্রামের (টেক্সনেট) এক প্রবীণ গবেষক আলেক্সজান্দ্রোস স্যাভাইদিস বলেছেন, ভূমিকম্প যেহেতু আপনি দেখতে পান না সেহেতু গবেষকদের পাওয়া ওই ফলাফল অভূতপূর্ব সাফল্য বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। যা মানুষের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

গবেষণাটি টেক্সনেট, টেক্সাস কনসোর্টিয়াম ফর কম্পিউটেশনাল সিসমোলজি এবং ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা সমর্থিত ছিল। গবেষকদের মতে, এই এআই প্রযুক্তি আমেরিকা, ইতালি, জাপান, গ্রিস, তুরস্ক এবং টেক্সাসে সিসমিক ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক উন্নত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।