আন্তর্জাতিক

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে চারটি দেশের ৩৯ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশ চারটি হলো নিকারাগুয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর।

আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নিকারাগুয়ার ১৩ জন, গুয়াতেমালার ১০ জন, হন্ডুরাসের ১০ জন ও এল সালভাদরের ৬ জনের নাম রয়েছে।

গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উঠে এসেছে। ‘সেকশন ৩৫৩ করাপশন অ্যান্ড আনডেমোক্রেটিক অ্যাক্টরস রিপোর্ট ২০২৩’ নামের এই প্রতিবেদনটি মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এমন ব্যক্তিরা রয়েছেন, যারা জেনেশুনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন, এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। যারা উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি করেছেন বা দুর্নীতির তদন্তে বাধা সৃষ্টির কাজে লিপ্ত হয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কারও ইতোমধ্যে মার্কিন ভিসা থাকলে তা বাতিল করা হয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এল সালভাদরের সাবেক দুই প্রেসিডেন্টও আছেন।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানে জোর দিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে।

জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৩তম অধিবেশনে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়।

মিয়ানমারের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে এ প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্পষ্ট মতভেদ দেখা দেয়। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় বলে অনেক সদস্য রাষ্ট্র মতপ্রকাশ করে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকার অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও মতামত দেওয়া হয়। অবশেষে, নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

জাতিসংঘের এ প্রস্তাবে নির্যাতিত ও বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। এছাড়াও এতে প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা এবং এর নানারকম নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাখাইনে দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেওয়া হয়।

প্রস্তাবে, ক্রমহ্রাসমান ও অপর্যাপ্ত অনুদান-সাহায্য বিবেচনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ীদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াতেও সমর্থন জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক

‘গণতন্ত্রের বাতিঘর’ যুক্তরাষ্ট্রেই নেই গণতন্ত্র চর্চা। দেশের বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের মতে, অর্থনীতি থেকে শুর করে যে কোনো সরকারি ব্যয়, বন্দুকনীতি, অভিবাসন এমনকি গর্ভপাত বিষয়ে মার্কিন আইন এবং নীতি জনগণের নিজস্ব ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।

দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ৪৯ শতাংশ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের চর্চা ঠিকমতো হচ্ছে না। উলটোদিকে গণতন্ত্র চর্চা ঠিকভাবে হচ্ছে বলে মনে করেন মাত্র ১০ শতাংশ মার্কিনি। আর কিছুটা ভালোভাবে চর্চা হচ্ছে বলে মনে করেন ৪০ শতাংশ নাগরিক।

যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে কিনা অথবা গণতন্ত্রে দেশের স্বার্থ দেখা হয় কিনা সে বিষয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চালানো এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ।

স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশিত এ গবেষণায় এনওআরসি’র সম্ভাব্যতা ভিত্তিক আমেরিস্পিক প্যানেল থেকে প্রাপ্ত নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে। নাগরিক প্রতিনিধি হিসাবে ১ হাজার ২২০ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর ২২-২৬ জুন জরিপ চালানো হয়। সব উত্তরদাতাদের জন্য নমুনা ত্র“টির মার্জিন রাখা হয়েছে প্লাস বা মাইনাস ৩.৯ শতাংশ পয়েন্ট।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক নাগরিক জানান, দেশের কোনো রাজনৈতিক দলেই গণতন্ত্র চর্চা নেই। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বলে মনে করে ৪৭ শতাংশ। আর ৫৬ শতাংশ জানায় রিপাবলিকানদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা নেই।

জরিপে অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, কংগ্রেস দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সঠিকভাবে বজায় রাখতে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। আর ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে করে মাত্র ১৬ শতাংশ।

কানেকটিকাটের ব্রিস্টলে ৪৫ বছর বয়সি এক শ্রমিক মাইকেল ব্রাউন জানান, বরাবরই তিনি দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ।

ডেমোক্র্যাট অথবা রিপাবলিকান-দুদলের কেইউ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি আমাদের হত্যা করেছে।’ তিনি এখন কংগ্রেসের প্রতি বিশেষভাবে হতাশ বলে জানিয়েছেন। কারণ দেশে জনগণের কোনো ইচ্ছার প্রতিফলন হয় না।

শুধু অর্থনীতিই নয়, লিঙ্গ পরিচয় ও এলজিবিটিকিউ বিষয়গুলোতেও দেশের জনগণ যা চায় তার প্রতিফলন ঠিকমতো ঘটে না বলে জানিয়েছেন অর্ধেকের বেশি জরিপের উত্তরদাতা।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও নীতি তৈরিতে দেশের জনগণের মতামত নেওয়া উচিত বলে মনে করে ৭১ শতাংশ জনগণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মতামত নেওয়া হয় বলে মনে করে মাত্র ৪৮ শতাংশ।

জরিপে ‘আপনার মতো সাধারণ জনগণের মতামত’ সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় কিনা সে প্রশ্নে, সরকার তাদের মতামত সঠিকভাবে উপস্থাপন করছে না বলে জানান ৫৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। কিছুটা করা হয় বলে জানিয়েছেন ৩৫ শতাংশ।

এর মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ জানিয়েছে সরকার সঠিকভাবেই তাদের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে। জরিপে প্রতি ১০ জনে ৬ জন রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র ব্যক্তি মনে করে সরকার তাদের প্রতিনিধিত্ব ঠিকভাবে করতে পারছে না। এদিক থেকে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা প্রতি ১০ জনে ৪ জন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক কারালিন কিসলিং বলেন, ভোট দেওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের আরও অনেক উপায় রয়েছে।

তা হতে পারে রাজনৈতিক দলে সক্রিয় অংশগ্রহণ অথবা স্থানীয় সরকারের সভায় বক্তৃতা। কিন্তু তিনি আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন ধরনের পক্ষপাত মানুষকে এসবে অংশগ্রহণ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন দেওয়া। তিনি বলেন, আমি যে বার্তার ওপর জোর দিতে চাই, তা হলো- সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানানো। আসুন, আমরা জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দেই।

বাংলাদেশ সফরকালে ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্ভাব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা বর্জনের বিষয়ে উজরা জেয়া বলেন, এটা বাংলাদেশের জনগণের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা দেখছি না। আমি শুধু বলতে চাই যে, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিই না।

ভিসানীতি প্রসঙ্গে জেয়া বলেন- অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ঘোষিত অঙ্গীকারকে সমর্থন করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের আলোচনায় এটি খুব ইতিবাচকভাবে এসেছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ সরকারের উদারতা সম্পর্কে আমরা সচেতন। সুতরাং আমরা মূল্যায়ন করছি এবং আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। এটি যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে- এমন ধারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়েই এই সফর। আমাদের চাওয়া হলো- মার্কিন সরকার এই অংশীদারত্বকে আরও গভীর করুক। তিনি বলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে আরও মুক্ত ও উন্মুক্ত করতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমাদের অংশীদারত্ব অভিন্ন গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। জেয়া বলেন, অনেকেই হয়তো জানেন না যে, সমগ্র এশিয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী উন্নয়ন অংশীদার।

এই মার্কিন কূটনীতিক আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে ইন্দো-প্যাসিফিককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী যা মুক্ত এবং আরও সংযুক্ত, স্থিতিস্থাপক, সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটি শুধু একটি উদাহরণ যেখানে আমরা কংক্রিট উপায়ে আরও মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো প্যাসিফিক গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। সুতরাং আগামী দিনগুলোতে সহযোগিতার জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনার জায়গা রয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ এ কূটনীতিক বলেন, এ বিষয়ে আমি খুবই স্পষ্ট করে বলতে চাই। এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের সম্ভাব্য ইজারা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠবে যা করলে, জানালেন উজরা জেয়া

২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন, এটি সিদ্ধান্ত ও তথ্যের ‘সতর্ক গবেষণা ও বিবেচনার’ ফল।

বাংলাদেশ সফরকালে ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

জেয়া বলেন- প্রকৃতপক্ষে, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যা ও জোরপূর্বক গুমের ঘটনা হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লে­খযোগ্য অগ্রগতি দেখেছি। তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, অতীত ও বর্তমানের অপকর্মের জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে র‌্যাবের অর্থবহ সংস্কার করতে হবে। সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনা করা হবে বলে জানান মার্কিন জ্যেষ্ঠ এ কূটনীতিক।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ: রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে উজরা জেয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকে সমর্থন করে, তবে সেই প্রত্যাবসন নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই হতে হবে। এখন দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমারে এ পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। তাই আমরা বাংলাদেশ সরকারসহ সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যে অসাধারণ উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক

তৃতীয় চন্দ্রাভিযান শুরু করেছে ভারত। শুক্রবার (১৪ জুলাই) দেশটির স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে ‘চন্দ্রযান-৩’।

চাঁদে পৌঁছতে এর সময় লাগবে ৪০ দিন।

একটি এলভিএম-৩ রকেট দিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। চন্দ্রাভিযানে থাকছে একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে আর রোভার চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে।

ল্যান্ডারটি আগস্টের ২৩-২৪ তারিখে চাঁদের পিঠে নামার কথা। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ল্যান্ডারটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিক্রম’ আর রোভারটির নাম ‘প্রজ্ঞান’।

এই অভিযানে সফল হলে ভারত চতুর্থ দেশ হবে, যারা চাঁদের পিঠে পৌঁছাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন চন্দ্র অভিযানে সফল হয়।

আগের অভিযানে, ২০১৯ সালে ঠিক চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সময়ে ল্যান্ডার-রোভার ধ্বংস হয়ে যায়। তবে চন্দ্রযান ২ এর সেই অরবিটার এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বেস-স্টেশনে নিয়মিত তথ্য পাঠিয়ে চলেছে।

চন্দ্রযান– ৩ অভিযানেও ওই অরবিটারটিকেই ব্যবহার করা হবে বলে ইসরো জানিয়েছে।

তৃতীয় চন্দ্রাভিযানে ল্যান্ডার-রোভারটির অবতরণ করার কথা চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে।

ইসরোর প্রধান শ্রীধর পানিক্কর সোমনাথ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এই অংশটি নিয়ে আমাদের বিশেষ বৈজ্ঞানিক স্বার্থ আছে। চাঁদের বিষুব রেখা অঞ্চলটি নিরাপদে অবতরণের জন্য আদর্শ, কিন্তু ওই অঞ্চল নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক তথ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করতে চাই আমরা, তাহলে দক্ষিণ মেরুর মতো কোনো অঞ্চলেই যেতে হবে। কিন্তু সেখানে অবতরণের ঝুঁকি আছে।

সোমনাথ জানান, রোভারে পাঁচটি যন্ত্র থাকবে, যার মূল লক্ষ্য থাকবে চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রাকৃতিক চরিত্র, সেখানকার বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করা, আর চন্দ্রপৃষ্ঠের ঠিক নিচে কী হচ্ছে, তা খুঁজে দেখা।

ইসরোর বিজ্ঞানীরা বিবিসিকে জানান, চাঁদের পৃষ্ঠের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে চাঁদের বয়স আবিষ্কারেরও চেষ্টা হবে। চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই দক্ষিণ মেরু অংশেই ২০০৮ সালে পানির সন্ধান পেয়েছিল চন্দ্রযান-১।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শেষ দিন জানিয়ে দিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে এ ঘোষণা দেন শাহবাজ। বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে চাই যে, আগামী ১৪ আগস্ট হতে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের শেষ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অক্টোবরে যথাসময়েই নির্বাচন হবে। তফশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন।

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। সংবিধান অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন। বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হবে ১৩ আগস্ট। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট হওয়া নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঐতিহ্য বজায় রেখে ইমরানও পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।

গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। তারপর পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ মসনদে বসেন। শাহবাজ ১১টি দলের জোটের সমর্থনে নির্বাচিত হন; যা পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট নামে পরিচিত। ইমরান খান তার সরকার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাজ সরকারকে আগাম নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে থাকেন তিনি।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, নিম্নকক্ষ পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়। নতুন নির্বাচনের আগে ম্যান্ডেটসহ একটি ‘অরাজনৈতিক’ সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তাদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। শাহবাজ বলেন, ‘গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জাতি আমাকে দেশ পরিচালনার পবিত্র দায়িত্ব দেয়। সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্টে এই দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেব।’

আন্তর্জাতিক

ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ তাদের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামগুলো রাশিয়ার নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে বুধবার মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে, ওয়াগনার গ্রুপের কাছ থেকে তারা ট্যাংক, মোবাইল রকেট লঞ্চার এবং এন্টি এয়ারক্রাফটস সিস্টেমসহ দুই হাজারেরও বেশি সামরিক সরঞ্জাম বুঝে পেয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের কাছে আড়াই হাজার টনেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ এবং প্রায় ২০ হাজার ছোট অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ সরঞ্জামই যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি।

ব্যর্থ বিদ্রোহের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। গত ২৯ জুন মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে তার এই সাক্ষাৎ হয় বলে জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

ওই সাক্ষাতে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ প্রচেষ্টা এবং বিদ্রোহের একটি ‘মূল্যায়ন’ তুলে ধরেন।

আন্তর্জাতিক

নির্বাচন এবং শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশির ব্যাপক অংশগ্রহণের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের প্রত্যাশার বার্তা দিয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটি এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংলাপের প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেছে।

তারা বলেছেন, আমরা সংলাপের পক্ষে। তবে এর সঙ্গে (সংলাপ) আমরা যুক্ত নই। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের প্রধান উজরা জেয়া। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

বৈঠকে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিকে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সচিব বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলী কৌরসহ বিভিন্ন খাতের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা নির্বাচন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়। অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট।

বাইডেন প্রশাসনের বার্তা স্পষ্ট হয় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতির মাধ্যমে। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দৃষ্টিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা দিয়েছে। এতে সুশীল সমাজ ও স্বাধীন মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকারের উন্নয়ন ও মৌলিক স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে।

এসব আলোচনায় ঘুরেফিরেই এসেছে কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছাড়াই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের কথা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন প্রসঙ্গে সরকারের তরফে বলা হয়, সেপ্টেম্বর নাগাদ আইনের সংশোধন করা হবে। এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে।

উজরা জেয়া সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে চায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উজরা জেয়া বলেন, আমরা সবাই সংলাপের পক্ষে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই। এই সফরে নির্বাচনের কথা বারবারই এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছেন। উজরা জেয়া নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার প্রতি জোর দিয়েছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসাবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন উজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। দলটি আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করবে।

বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে।

নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে জোরালো প্রত্যয়ের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের পালটা কর্মসূচি হিসাবে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের পাশের সড়কে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের সংঘাত, সহিংসতা ছাড়াই গতকালের পালটাপালটি সমাবেশ শেষ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি বলেন, গতকাল বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা। ভবিষ্যতেও এটির প্রতিফলন থাকবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

উজরা জেয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকরা যাতে অবাধে এবং কোনোরকম ভয়ভীতি ও নিপীড়নের শিকার না হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।

তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন উজরা জেয়া।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বহুমাত্রিক ও নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করে, সেটা তাকে জানিয়েছেন। শ্রম আইনের সংশোধনে বাংলাদেশ গত এক দশকে কী অর্জন করেছে, সেটাও তুলে ধরেছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে উদ্যোগ চলমান আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন, নাগরিক অধিকার, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া তিন দিনের সফরে আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াকে স্বাগত জানান।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রমিক ইস্যু, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানব পাচার রোধসহ অভিন্ন মানবিক উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করবেন।

একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলটি মানবাধিকার, রোহিঙ্গা শরনার্থী সংকট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

আন্ডার সেক্রেটারি এবং তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের দেখতে বুধবার ভোরে সরাসরি কক্সবাজার যাবেন এবং তাদের অন্যান্য ব্যস্ত কর্মসূচি বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও উজরা জেয়া আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএআইডি’র এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর উপ-সহকারী এডমিনিসট্রেটর জঞ্জালি কাউর।

জেয়া গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সার্বজনীন মানবাধিকারের অগ্রগতি, উদ্বাস্তু ও মানবিক ত্রাণকে সহায়তা, আইনের শাসন ও মাদকবিরোধী সহযোগিতা, দুর্নীতি ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াই, সশস্ত্র সংঘাত প্রতিরোধ এবং মানব পাচার নির্মূলে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন এর আগে বলেন, জেয়া তুলনামূলকভাবে একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা এবং তার কর্তৃত্বের আওতা ‘বেশ প্রশস্ত’।

আন্তর্জাতিক

অতিরিক্ত ২ হাজার ৬১ কোটি টাকা (১৯০ মিলিয়ন ডলার) ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ ঋণ বাংলাদেশের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় হবে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এডিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে ঋণের এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিরিক্ত এ অর্থায়নের মাধ্যমে সব ধরনের আবহাওয়ার উপযোগী করে ১৩৫০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার হবে। উপজেলা পর্যায়ে ১৮০টি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয়ে ট্রাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়াবে।

এ বিষয়ে এডিবির প্রধান পল্লী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মাসাহিরো নিশিমুরা জানিয়েছেন, গ্রামীণ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় অতিরিক্ত অর্থায়ন এটি, যা দেশটির গ্রামীণ সড়কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। কৃষি এলাকাগুলোকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পটি গ্রামীণ এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করছে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে ‘রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট’ নামে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন করা, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্থাগুলোর সক্ষমতা জোরদার, গ্রামীণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তনসহ গ্রামীণ সড়ক নিয়ে মহাপরিকল্পনার উন্নয়ন করা।