আন্তর্জাতিক

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট একটি দেশকে কতটা চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায় তার জ্বলন্ত উদারহণ শ্রীলঙ্কা। দেশটির এ অবস্থা বিশ্বজুড়ে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকার এবং নাগরিকদের চরম দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। চোখ রাঙাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্ব বাজারে বিশৃঙ্খলা।

ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম এবং জিম্বাবুয়ে ঋণ খেলাপি দেশে পরিণত হয়েছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বেলারুশসহ আরো অন্তত এক ডজন দেশ খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে।

এসব দেশের মাথার উপর অকল্পনীয় ঋণের বোঝা চেপে আছে। বিশেষজ্ঞরা হিসাব করে বলেছেন, সংখ্যার হিসাবে এই ঋণের বোঝার পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ঋণের বোঝা আর্জেন্টিনার মাথার উপর। দেশটিকে ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তারপর আছে ইকুয়াডর এবং মিশর। দেশদুটিকে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা এখনো আশা ছাড়েননি। তারা বলছেন, যদি বিশ্ববাজার শান্ত হয়ে আসে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বেশ কিছু সমর্থন পাওয়া যায় তবে হয়তো কিছু দেশ খেলাপি হওয়া এড়িয়ে যেতে পারবে।

সেসব দেশ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে:

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসো কালোবাজারে এখন প্রায় ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বিপজ্জনক মাত্রায় কমে গেছে। ২০২০ সালে দেশটি তাদের ঋণ পুনর্গঠন করেছিল। ওই সময় তাদের বন্ড বাণিজ্যের যে হার ধরা হয়েছিল এখন তারও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

২০২৪ সাল পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত যথেষ্ট ঋণ আর্জেন্টিনা সরকারের কাছে নেই।

ইউক্রেইন

রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেইনকে অবশ্যই তাদের প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে দেশটিকে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। যদি তারা সেটা পরিশোধ করতে না পারে তখনই সংকট দেখা দেবে।

সহায়তার অর্থ এবং রিজার্ভ থেকে সম্ভবত কিইভ তা পরিশোধ করতে পারবে। যদিও দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত জ্বালানি কোম্পানি ‘নাফতোগেজ’ এ সপ্তাহে দুই বছরের জন্য দেশটিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা বন্ধ রাখতে বলেছে। বিনিয়োগকারীদের ধারণা দেশটির সরকার এই পরামর্শ অনুসরণ করবে।

তিউনিসিয়া

ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আফ্রিকা থেকে বেশ কয়েটি দেশ আইএমএফ-র সঙ্গে দেনদরবার করছে। তিউনিসিয়া সেগুলোর মধ্যে সবথেকে ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রায় ১০ শতাংশ ঘাটতি বাজেট এবং সরকারি কর্মীদের মজুরি হিসেবে বিশ্বে সবেচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর একটি তিউনিসিয়া। দেশটির জন্য আইএমএফ প্রকল্প সুরক্ষিত রাখা বা অন্তত সেগুলো অনুসরণ করা কঠিন হবে। কারণ দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সাঈদ দেশটির শাসন ব্যবস্থার উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আরো শক্তিশালী করতে চাইছেন।

এদিকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারুয়ান আব্বাসি বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে একটি চুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।”

ঘানা

এ বছর ঘানার ‍মুদ্রা সেডির মূল্য প্রায় একচতুর্থাংশ কমে গেছে। দেশটি এরইমধ্যে কর থেকে প্রাপ্ত তাদের রাজস্বের অর্ধেকের বেশি ঋণের সুদ প্রদাণে ব্যয় করছে। সেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

মিশর

মিশরে ঋণ ও জিডিপির অনুপাত প্রায় ৯৫ শতাংশের কাছাকাছি। ফান্ড ফার্ম ‘এফআইএম ‍পার্টনারস’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের ব্যয় মেটাতে মিশরের ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়বে।

মিশর তাদের মুদ্রা পাউন্ডের ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করেছে এবং গত মার্চে আইএমএফ-র কাছে সহায়তা চেয়েছে।

কেনিয়া

কেনিয়া তাদের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ঋণের সুদ প্রদাণে ব্যয় করে। তাদের বন্ডের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং বর্তমানে কোনো পুঁজি বাজারে তাদের প্রবেশাধিকার নেই।

ইথিওপিয়া

জি২০’র ‘কমন ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্পের’ আওতায় ঋণ ত্রাণ পাওয়া প্রথম দেশগুলোর একটি হওয়ার চেষ্টা করছে ইথিওপিয়া। চলমান গৃহযুদ্ধের কারণ দেশটির অগ্রগতি থমকে গেছে। যদিও এর মধ্যেও দেশটির তাদের একমাত্র ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বন্ড পরিষেবা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তান

পাকিস্তান এ সপ্তাহে আইএমএফ-র সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে। দেশটির অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে ওই চুক্তিটি করতে পারা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি দরকারি ছিল। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের অত্যধিক দাম বৃদ্ধি দেশটির আমদানি ব্যয় ভারসাম্য পুরোপরি নষ্ট করে দিয়েছে।

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৮০ কোটি মার্কিন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যা দিয়ে দেশটির বড়জোর তাদের পাঁচ সপ্তাহের ব্যয় মেটাতে পারবে।

গত সপ্তাহের শেষে পাকিস্তানের মুদ্রার রুপির রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। দেশটির নতুন সরকারকে দ্রুত ব্যয় কমাতে হবে। কারণ এখন তাদের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণের সুদ প্রদাণে ব্যয় করতে হবে।

বেলারুশ

পশ্চিমা কঠোর নিষেধাজ্ঞা গত মাসে রাশিয়াকে ঋণ খেলাপি করে ছেড়েছে। ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এখন বেলারুশকেও একই কঠোর আচরণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

ইকুয়াডর

লাতিন আমেরিকার এই দেশটি মাত্র দুই বছর আগে একবার খেলাপি হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট গিয়েরমো লাসোকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ আবারও ইকুয়াডরকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে।

এছাড়া নাইজেরিয়া এবং এল ‍সালভাদোরও একই কাতারে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার প্রিন্স সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সৌদি-মার্কিন সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বিষয়টি উত্থাপন করেন বলে জানিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, প্রিন্স সালমান তার কাছে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে জামাল খাসোগির হত্যার সঙ্গে জড়িত নন।

প্রিন্স সালমান এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। বাইডেনের কাছে প্রিন্স সালমান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ভুলের বিষয়টি তুলে ধরেন বলে আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেরও ভুল হয় উল্লেখ করে প্রিন্স সালমান বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে’। এসময় তিনি ইরাকের আবু গারিব কারাগারে বন্দি নির্যাতনসহ ওয়াশিংটনের ‘বেশ কয়েকটি ভুলের’ বিষয় তুলে ধরেন।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-আরবিয়া এক সৌদি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বাইডেন ও প্রিন্স সালমান ‘জামাল খাসোগি হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন’ এবং প্রিন্স সালমান ‘নিশ্চিত করেছেন যে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক এবং আমরা এর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করার জন্য সব আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি’।

২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি আরবের দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সৌদি হিট স্কোয়াডের সদস্যরা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও রিপোর্ট দেওয়া হয় প্রিন্স সালমান খাগোসিকে হত্যার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।

রিপোর্ট প্রকাশের পর বাইডেন বলেছিলেন, সৌদি আরবকে একটি একঘরে রাষ্ট্র করে দেবেন তারা।

তবে সবকিছু ভুলে সৌদি সফরে গেছেন জো বাইডেন নিজে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, প্রিন্স সালমান তার কাছে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে জামাল খাসোগির হত্যার সঙ্গে জড়িত নন।

এ ব্যাপারে বাইডেন বলেন, আমি সরাসরি বলেছি।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে, আমরা কারা, আমি কি সে হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চুপ থাকা ঠিক নয়। আমি সব সময় আমাদের মান বজায় রাখব।

তিনি আরও বলেন, প্রিন্স সালমান বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত নন।তবে আমি তাকে জানিয়েছি, আমি মনে করি তিনি জড়িত।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মুষ্টি মেলান। তাদের এ ছবি প্রকাশের পর জামাল খাসোগির কর্মস্থল ওয়াশিংটন পোস্ট ও তার বাগদত্তা তীব্র সমালোচনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতেই সৌদি আরবের সঙ্গে আবার সম্পর্ক উন্নয়ন করছেন তারা।

আন্তর্জাতিক

বহু নাটকের পর শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতা গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুর পৌঁছার পর পদত্যাগ করেন এ লঙ্কান প্রেসিডেন্ট।

দেশটির অনলাইন সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর’ এ খবর নিশ্চিত করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা আপে আবেওয়ারদেনের কাছে গোতাবায়া নিজের পদত্যাগপত্র ইমেইল করেছেন। শুক্রবার (১৫ জুলাই) এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

খবরে আরও বলা হয়, গোতাবায়া বুধবার (১৩ জুলাই) স্পিকারের কাছে পদত্যাগের মেইল করেন। স্পিকারও পদত্যাগ পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কিন্তু, এর অনুমোদন ও কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে স্পিকারের আলোচনা করতে হয়। যে কারণে বিষয়টি সামনে আসতে দেরি হয়। এখনও পদত্যাগ পত্রটি নিয়ে আইনি আলোচনা চলছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গোতাবায়া সিঙ্গাপুর অবতরণের পর এটি পাঠিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সেটি গ্রহণ করা হবে কিনা, তাও অস্পষ্ট।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও ডেকান হেরাল্ড’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া গোতাবায়ার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী খুশির জোয়ার বয়ে যায়। কলম্বোয় বিক্ষোভকারীরা আতশবাজি পুড়িয়ে উদযাপন করেন।

এদিকে, মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুর পৌঁছার পর গোতাবায়া রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে সিঙ্গাপুর সরকার নিশ্চিত করেছে, লঙ্কান প্রেসিডেন্ট তাদের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। বরং ব্যক্তিগত সফরে রয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রেফতার থেকে দায়মুক্তি থাকায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজ দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া। এরপরও তিনি পদত্যাগ করেন।

পালিয়ে বুধবার ভোরে সামরিক প্লেনে চড়ে দেশ থেকে মালদ্বীপে পাড়ি জমান গোতাবায়া। মালদ্বীপেও বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। সেখান থেকে সৌদিয়া এয়ারলাইনের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে পৌঁছান।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঁচ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সমন্বিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস এ বরাদ্দ ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংস্থাটি থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ৭.২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ধেকেরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

এ তহবিলটি জাতিসংঘের সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (সিইআরএফ) থেকে আসে, যার লক্ষ্য একটি নতুন সংকটের উদ্ভব হলে সমন্বিত এবং অগ্রাধিকারমূলক পদ্ধতিতে ত্রাণ প্রচেষ্টা শুরু করা। সিইআরএফ দ্রুত সাড়াদান প্রতিক্রিয়ার ফোকাস হলো সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য উচ্চ প্রভাব তাৎক্ষণিক জীবন রক্ষাকারী সহায়তা করা।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস বলেছেন, এ অঞ্চলে বন্যার মাত্রা সাম্প্রতিক স্মৃতিতে অভিজ্ঞতার চেয়ে বেশি নাটকীয়। অনেক পরিবার আক্ষরিক অর্থে তাদের নিজস্ব সবকিছু হারিয়েছে। অনেকেই এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন। বন্যার পানি খুব ধীরে ধীরে কমছে এবং তাদের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকারের জরুরি সাড়াদান প্রতিক্রিয়ার প্রতি আমাদের সমর্থন বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, পানীয় জল, নগদ অর্থ, জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্বাস্থ্যবিধি কিট ও শিক্ষা সহায়তা দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

চীনে টাইফুন আঘাত হেনেছে। টাইফুনের প্রভাবে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে ব্যাপক ঝড় ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে জনবহুল গুয়াংডং প্রদেশসহ ওই অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাত এবং দুর্যোগের উচ্চ ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির আবহাওয়াবিদরা।

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার দিকে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে যাওয়া এই টাইফুনের নাম হিবিস্কাস ফুলের থাই নাম অনুযায়ী ‘চাবা’ রাখা হয়েছে।

শনিবার সকালের দিকে গুয়াংডং প্রদেশের মাওমিং শহরে চাবার লেজ আঘাত হানে বলে চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। খবর আলজাজিরার।

শনিবার উত্তাল দক্ষিণ চীন সাগরে ৩০ জন আরোহীবাহী একটি ইঞ্জিনিয়ারিং জাহাজ ভেঙে দুই টুকরা হয়ে গেছে। টাইফুন চাবার প্রভাবে ভেঙে যাওয়া এই জাহাজের দুই ডজনের বেশি আরোহী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

হংকং কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা উদ্ধারকাজের নাটকীয় ফুটেজে দেখা গেছে, একজন ক্রুকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় প্রায় আধা-নিমজ্জিত জাহাজের ডেকের ওপর সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রথম হেলিকপ্টার সেখানে পৌঁছার আগেই অন্য ক্রু সদস্যরা ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেছেন।

আবহাওয়া কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা গাও শুয়ানঝু বলেছেন, তীব্রতা মাঝারি মাত্রার হলেও সময়ের সাথে সাথে চাবা শক্তি হারিয়ে ফেলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে এই টাইফুনের প্রভাবে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এমনকি ক্রমবর্ধমান বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচুর মৌসুমী জলীয় বাষ্প থেকে তীব্র বর্ষণ হতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ ৬০০ মিলিমিটার (২৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ রয়েছে।

চীনে টাইফুন সাধারণত স্থায়ী হয় গুয়াংডংয়ের পশ্চিমাঞ্চলে। এই এলাকা এবং গুয়াংজির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পূর্বে ও দ্বীপ প্রদেশ হাইনানে বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ের কারণে ভূমিধস, শহরে জলাবদ্ধতা এবং বন্যা হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তা গাও।

তিনি বলেছেন, হাইনান প্রদেশে শনিবার জরুরি মোকাবিলার স্তর দুইয়ে উন্নীত করা হয়েছে। এই দ্বীপজুড়ে ট্রেন চলাচল স্থগিত এবং হাইকু ও সানইয়া শহরের মধ্যে চলাচলকারী ৪ শতাধিক বিমানের ফ্লাইটের উড্ডয়ন এবং অবতরণ বাতিল করা হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, চাবার প্রভাবে ঝড় এবং বৃষ্টিপাতের কারণে ম্যাকাও দ্বীপপুঞ্জে একজন আহত হয়েছেন।

হংকং থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নিখোঁজ ক্রুদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে ইতোমধ্যে তিনজন ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। হংকংয়ে সরকারি পরিবহন সংস্থা বলেছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে ওই তিন ক্রুকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের নেতা রমজান কাদিরভ শনিবার দাবি করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী মিলিশিয়া এবং রুশ সেনারা ইউক্রেনের লিসিচানস্ক শহর অবরুদ্ধ করেছে।

এর আগে রুশপন্থি একজন কর্মকর্তাও লিসিচান্সক ঘিরে ফেলার দাবি করেন।

তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এটি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।

রুসলান মুজায়াতচুক নামে ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের একজন মুখপাত্র টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, লিসিচানস্কে হামলা বেড়েছে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে শহরটি ঘিরে ফেলা হয়নি এবং লিসিচানস্ক ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

তবে রমজান কাদিরভ দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, লিসিচানস্ক ঘিরে ফেলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে বড় অভিযান শুরু করা হবে।

এ ব্যাপারে টেলিগ্রামে কাদিরভ বলেছেন, ফাঁদ বন্ধ হয়ে গেছে। মিত্র সেনারা লিসিচানস্ককে পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে। বলা যায় শহরটিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান শুরু হবে। শত্রুদের (ইউক্রেনীয় সেনাদের) এখন যাওয়ার কোনো জায়গা নেই কারণ শহরের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সব পথ অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে এর আগে বলা হয়েছিল লিসিচানস্কে ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ২ হাজার সদস্য আছে, যারা বিদেশী ভাড়াটে যোদ্ধাদের রক্ষা করছিল।

শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় লুহানেস্ক পিপলস রিপাবলিকের সেনা এবং রুশ সেনার লিসিচানস্কের তেল শোধনাগার, মাত্রোস্কায়া খনি এবং জেলটিন প্ল্যান্টটি দখল করেছে।

আন্তর্জাতিক

অধিকৃত ইউক্রেইন অঞ্চল থেকে বৃহস্পতিবার শস্যের চালান পাঠাতে শুরু করেছে রাশিয়া। ৭ হাজার টন সিরিয়ালের চালান নিয়ে একটি জাহাজ ইউক্রেইনের রুশ অধিকৃত বারদিয়ানস্ক নগরীর বন্দর থেকে যাত্রা করেছে।

রুশপন্থি এক আঞ্চলিক কর্মকর্তা একথা জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি।

কিইভ কয়েক সপ্তাহ ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, রাশিয়া ও এর মিত্ররা দক্ষিণ ইউক্রেইন থেকে শস্য চুরি করছে এবং ইউক্রেইনের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রেখে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সড়কপথেই শস্যের চালান পরিবহন করা হয়ে এসেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বারদিয়ানস্ক বন্দর থেকে শস্য চালান শুরু হওয়ার মানে হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেইন থেকে তৃতীয় কোনও দেশে গম রপ্তানির জন্য সাগরপথ উন্মুক্ত হল।

রুশপন্থি প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তা টেলিগ্রামে বলেছেন, “বেশ কয়েকমাসের বিলম্বের পর এই প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ বারদিয়ানস্কের বাণিজ্যিক বন্দর ছেড়ে গেল। বন্ধু দেশগুলোতে ৭ হাজার টন শস্য পাঠানো হচ্ছে।”

এই কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের জাহাজগুলো এই যাত্রায় “নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে”। তবে কার্গো জাহাজটি কোন গন্তব্যে যাবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

আজভ সাগরের উত্তর উপকূলীয় নগরী বারদিয়ানস্ক। এটি ইউক্রেইনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেপোরোজিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর প্রথম কয়েক সপ্তাহেই দক্ষিণের খারসন এবং জেপোরোজিয়ার বেশিরভাগই চলে যায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।

আন্তর্জাতিক

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে আরোপ করা বিধি-নিষেধ শিথিলের পর দুই বছর পর ফের পবিত্র নগরী মক্কা হাজিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। শুক্রবার সাদা পোশাক পরে, রোদ থেকে বাঁচতে হাতে ছাতা নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ কাবা প্রদক্ষিণ করেন। এর মাধ্যমে হজের প্রথম আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন তারা।

করোনার কারণে আরোপ করা বিধি-নিষেধের কারণে গত দুই বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ মানুষ হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাও শুধুমাত্র সৌদি আরবের জনগণ এ সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার প্রায় প্রায় ১০ লাখ মুসলিম পবিত্র হজ পালন করবেন।

দুই বছর করোনার কারণে কোনো বিদেশি নাগরিককে হজ পালন করার সুযোগ দিতে পারেনি সৌদি আরব।

কিন্তু এবারই বিদেশিদের পবিত্র নগরী দেখার সুযোগ ও হজ করার সুযোগ দিয়েছে সৌদি সরকার।

তবে সৌদি আরব জানিয়েছে এবার শুধুমাত্র ১০ লাখ মানুষ হজ পালন করতে পারবেন। সাধারণ সময়ের তুলনায় যা অর্ধেকেরও কম।

তাছাড়া ১৮-৬৫ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তিরাই শুধু হজ পালন করার অনুমতি পেয়েছেন এবার, যাদের সবাই করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

কোনো ঝামেলা ছাড়াই হজের মৌসুম শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি। এ কারণে বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাজ্যকে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকার ওপর থেকে অন্যায্য বোঝা কমাতে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের বিশ্বনেতা ব্রিটেনকে এ প্রস্তাব দেন তিনি।

আজ প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪-২৫ জুন কিগালিতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রুসের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মোমেন এ প্রস্তাব করেন।

একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবিলম্বে প্রর্ত্যাবাসনের জন্যে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

কারণ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ আর বইতে পারছে না।

মোমেন ট্রুসের কাছে দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকায় সেদেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের অচলাবস্থার কথা তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি ৭০ ও ৯০-এর দশকে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এবং পরবর্তীকালে ঢাকার সাথে সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক তথ্যের উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ওই সময়ে পশ্চিমাদের অবরোধের শিকার হয়ে মিয়ানমার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে তা ঘটছে না। বরং আইসিজেতে বিচারের রায় এবং রোহিঙ্গাদের ওপর তাদের নিপীড়নের জীবন্ত প্রমাণ সত্ত্বেও ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্য গত তিন বছরে মিয়ানমারে আড়াইশো কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ৫০ কোটিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করেছে, তাদের রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করা প্রয়োজন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদার আতিথেয়তার জন্যে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, যুক্তরাজ্য বিষয়টি দেখতে পারে, কিন্তু, এটির সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন।

মিয়ানমারে বর্তমানের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ট্রুস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

এছাড়া, ব্রিটিশ এই মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, আসিয়ান ও জি ৭ দেশগুলোকে সাথে নিয়ে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে।

উভয়ের এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বৈঠকে উভয়মন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দু’দেশের ঐতিহাসিক ও মূল্যবোধ ভিত্তিক সম্পর্কের বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করেন।

তারা ভারত মহাসাগরে অভিন্ন নিরাপত্তা স্বার্থ এগিয়ে নেয়া, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব জোরদার এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা সহযোগিতা বাড়ানোসহ উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে একটি উচ্চাভিলাষী এবং নিরন্তর সম্প্রসারিত বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত অংশীদারিত্বের সারণী ধরে বেক্স্রিট পরবর্তী বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী যৌথভাবে উদযাপনে সম্মত হয়।

মোমেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়িক ভিসা কম দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে ব্রিটিশ মন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার্থীর কম সংখ্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবছর অন্তত ৭ থেকে ৮ হাজার উচ্চশিক্ষার্থী যাতে যুক্তরাজ্যে যেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়িক ভিসা সুবিধা ঢাকাকে ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান।

ব্রিটেন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উভয়মন্ত্রী দুদেশের রাজধানীতে যৌথভাবে গ্লোবাল গার্লস এডুকেশন সামিট, ক্লাইমেট লিডার্স ডায়ালগ এবং রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজনে দুদেশের পররাষ্ট্রদপ্তরের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।

উভয়ে বর্তমান ইউক্রেন পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিশ্বখাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহসহ আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে নিবিড়ভাবে কাজ করতে সম্মত হন।

মোমেন বলেন, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে বাংলাদেশ গভীরভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।

যুক্তরাজ্যের সাথে বেক্সিটোত্তর বাণিজ্যিক সম্পর্কে বাংলাদেশ বৃহত্তম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। মোমেন বর্তমান জীবন যাত্রার ব্যয়, ব্রিটেনের খুচরা ব্যবসায়ীদের মূল্য পরিশোধ না করা এবং মহামারির পর বাতিলকরণের কারণে পোশাক শিল্পের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত শূন্য শুল্কের যে বিশেষ জিসএসপি সুবিধা দিয়েছে তা আরো বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

দুদেশের মন্ত্রী বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আলোচনার মাধ্যমে উভয়দেশের বর্ধিত বাণিজ্য অংশীদারিত্ব ও এবং একটি ভবিষ্যত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অন্বেষণ করার বিষয়ে আবারো একমত হন।

ড. মোমেন বিশেষ করে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক এ বছরে যত দ্রুত সম্ভব ট্রুসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

বৈঠককালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম উপস্থিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেইনে যুদ্ধ লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রাশিয়া একশ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্লুমবার্গের বরাতে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ১০ কোটি ডলারের একটি কিস্তি শোধ করার জন্য রোববার পর্যন্ত সময় ছিল রাশিয়ার হাতে। ওই অর্থ তাদের হাতে ছিল এবং মস্কো তা দিতেও চাইছিল।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের হাতে ওই ডলার পৌঁছানোর কোনো উপায় আপাতত নেই।

বিবিসি লিখেছে, ঋণ খেলাপি হওয়া যে কোনোভাবে এড়াতে চাইছিল ক্রেমলিন, কারণ এটা রাশিয়ার মর্যাদার ওপর বড় ধরনের ধাক্কা। রুশ অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ এই পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন একটি ‘প্রহসন’ হিসেবে।

রাশিয়া বিদেশি ঋণে শেষবার খেলাপি হয়েছিল ১৯১৮ সালে, বলশেভিক বিপ্লবের সময় কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির লেনিন জারশাসিত রুশ সাম্রাজ্যের ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকার করেছিলেন।

আর যে কোনো ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে রাশিয়া শেষবার কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিনের মেয়াদের শেষ দিকে ওই সময়টায় রাশিয়া মারাত্মক রুবল সঙ্কটে ভুগছিল। সে কারণে অভ্যন্তরীণ বন্ডের সুদ দিতে ব্যর্থ হলেও বিদেশি ঋণে খেলাপি হওয়া এড়াতে পেরেছিল মস্কো।

কিন্তু এবার সেটা এড়ানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে।

বিশ্বের প্রধান আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকেও রাশিয়ার বড় ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়া হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। ফলে রাশিয়ার রপ্তানি বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়, কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার পণ্য কিনে এখন ডলারে দাম পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না কোনো দেশের পক্ষে।

রাশিয়া সরকার বলেছে, তারা তাদের সব কিস্তিই সময়মত পরিশোধ করতে চায় এবং রোববারের আগ পর্যন্ত তা পরিশোধ করতে তারা সক্ষমও হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত চার মাসে দেশে ও দেশের বাইরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ তারা ডলার অথবা ইউরোতে শোধ করেছে।

রাশিয়ার কাছে ১৫টি আন্তর্জাতিক বন্ড রয়েছে যেগুলোর অভিহিত মূল্যে দেনার পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার, যার অর্ধেকই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দেনা হিসেবে রয়েছে। এরকমই একটি বন্ডের কিস্তি বাবদ ১০ কোটি ডলার পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে খেলাপি হতে হল মস্কোকে।

ছবি: রয়টার্সছবি: রয়টার্সএই কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত তারিখ আসলে ছিল ২৭ মে। ইউরোক্লিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে ওই অর্থ বিনিয়োগকারীদের হাতে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু সেখানেই সেখানেই টাকাটা আটকে যায়।
স্বার্বভৌম ঋণের কিস্তি নির্ধারিত তারিখে দিতে না পারলে ৩০ দিনের অন্তর্বর্তী সময় পাওয়া যায়। সেই সময়ের মধ্যে কিস্তি গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে পারলে খেলাপি হওয়া এড়ানো যায়। সেই একমাস রোববার শেষ হয়েছে, তার মধ্যে কিস্তি শোধ করার উপায় রাশিয়ার ছিল না।

ইউরোক্লিয়ার বলেছে, তারা রাশিয়ার কিস্তির অর্থ আটকে দেয়নি, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা মানতে তারা বাধ্য।

রাশিয়া ঋণ খেলাপি হতে পারে- এ সম্ভাবনা গত ফেব্রুয়ারিতেও কারও মাথায় আসেনি। তাদের লেনদেন চিত্র সবসময় ভালো অবস্থাতেই ছিল।

যেসব দেশ খেলাপি হয়, আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে তাদের প্রবেশাধিকার রহিত হয়, যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাশিয়া এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। তারপরেও, একবার খেলাপি হলে এর পরিণতি আরও অনেক দূর গড়াতে পারে।

এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্রেডিট ডিফল্ট সোয়াপস (সিডিএস) নিয়মের দ্বারস্থ হতে পারেন। অর্থাৎ, সেসব বন্ডের বিপরীতে বীমা করা থাকলে বিনিয়োগকারীরা এখন সেখান থেকে টাকা চাইতে পারেন। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক জেপি মরগানের হিসাবে এরকম বীমা দাবির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৬ বিলিয়ন ডলার।

শুধু আন্তর্জাতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাকারীরাই রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের সঙ্গে যুক্ত নয়, অনেক রুশ বিনিয়োগকারীও পশ্চিমা ব্যাংকের মাধ্যমে ওই বন্ড কিনেছেন। যেহেতু এই বন্ডগুলো রাশিয়ার ব্যাংকগুলোরও মূলধনের একটি অংশের যোগান দিচ্ছে, তাই ওইসব ব্যাংকও ঝামেলায় পড়তে পারে।

মস্কো খেলাপি হওয়ায় রাশিয়ার করপোরেট মহলও ভুগতে পারে, যেহেতু তারা আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার থেকেই তাদের বিনিয়োগ সংগ্রহ করে থাকেন, যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার।