আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুক্রবার জানিয়েছে, গাজায় সমস্ত খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে গেছে। কারণ ইসরাইল গত ২ মার্চ থেকে সীমান্ত পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে এখন খাবারের জন্য হাহাকার!

এদিন এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘আজ ডব্লিউএফপির নিয়ন্ত্রণে থাকা গাজা উপত্যকার রান্নাঘরগুলোতে তাদের হাতে মজুদ থাকা সর্বশেষ খাবার সরবরাহ করেছে’।

আনাদোলু জানিয়েছে, এই রান্নাঘরগুলো গাজার অর্ধেক জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার মাত্র ২৫ ভাগ জোগান দিয়ে আসছিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, তারা যে ২৫টি বেকারিকে সহায়তা করে আসছিল, তা গত ৩১ মার্চের মধ্যেই গমের আটা ও রান্নার জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা প্যাকেটজাত খাবারও ওই সময়ে শেষ হয়ে যায়।

সংস্থাটি এ সময় সতর্ক করে জানায়, এখানে নিরাপদ পানীয়জল ও রান্নার জ্বালানির মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। মানুষ এখন খাবার রান্না করার জন্য পোড়ানোর মতো কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে আনাদোলু জানাচ্ছে, গাজা বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত অবরোধের শিকার হয়েছে। ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া উপত্যকাটিতে টানা সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক বা বাণিজ্যিক সহায়তা প্রবেশ করেনি।

সেখানে যুদ্ধবিরতির সময়ের তুলনায় বর্তমানে খাদ্যের দাম ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মৌলিক পণ্যের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। যার ফলে শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী ও বয়স্কদের জন্য গুরুতর পুষ্টিহীনতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, ১০ লাখ মানুষের চার মাসের জন্য যথেষ্ট হবে এমন ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা সীমান্ত খুললেই গাজায় পাঠানো যাবে।

একই সঙ্গে সংস্থাটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আবারও একটি ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না’।

পাশাপাশি, ‘গাজার নাগরিকদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অবিলম্বে গাজায় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে’ বলে বিশ্বের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত করেছে। ভারতের পানি শক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি বৃহস্পতিবার তার সমকক্ষ পাকিস্তানের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজাকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে এই স্থগিতাদেশের ঘোষণা দেন।

চিঠিতে ভারত অভিযোগ করে, ‘জম্মু ও কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের ধারাবাহিক আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ’ এবং চুক্তি পুনর্বিবেচনায় পাকিস্তানের অনিচ্ছাই এই সিদ্ধান্তের কারণ। চুক্তির ৬৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম স্বাক্ষরকারী একপক্ষ এমন চরম পদক্ষেপ নিয়েছে।

পাকিস্তান ভারতের এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সিন্ধু পানি চুক্তি একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হয়েছে এবং এটিকে একতরফা স্থগিতাদেশের কোনো বিধান নেই।

এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী (সতলজ, বিয়াস ও রাভি) এবং পাকিস্তান তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব) নিয়ন্ত্রণের অধিকার পায়। এখন চুক্তি থেকে ভারতের একতরফা সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের সামনে কি কোনো বিকল্প রয়েছে?

এনএসসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তার অধিকার অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করতে পারে; যার মধ্যে শিমলা চুক্তিও রয়েছে। বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান যদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করা শুরু করে, তাহলে ভারত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অভিযোগও জানাতে পারবে না। অপরদিকে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের কাছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করতে পারে।

প্রথমত, এটা বোঝা জরুরি যে, সিন্ধু পানি চুক্তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা ভারতের এটাই প্রথম নয়। এই চুক্তিটি ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের মধ্যে করাচিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও এটি টিকে ছিল। ১৯৭০ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় চেনাব নদীর উপর সালাল বাঁধ নির্মাণ করে চুক্তি লঙ্ঘন করে। তবুও এই চুক্তি ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও টিকে ছিল।

পরবর্তীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তার সরকার বিশ্বব্যাংকে সালাল বাঁধ নিমার্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় এবং ভারতকে বাঁধটি নকশা পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়। এরপর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে ভারত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে। এ চুক্তির ফলে বাঁধের স্পিলওয়ে গেটের উচ্চতা ৪০ ফুট থেকে ৩০ ফুটে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয় ভারত।

সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ইলিফ। ছবি: বিশ্বব্যাংক
ভারত চুক্তিটিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা এটিকে ঝেলাম, চেনাব এবং সিন্ধু নদীর পানি ঘুরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় বাধা বলে মনে করতেন। ২০০১ সালে ভারতের সংসদ ভবনে হামলার পর দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি স্থগিতের হুমকি দিয়েছিল। বিগত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি স্পষ্ট, ভারত বারবার সন্ত্রাসবাদের অজুহাত তুলে এই চুক্তিকে স্থগিত করার চেষ্টা করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের লক্ষ্য ছিল ঝেলাম ও চেনাব নদীর উপর আরও বেশি বাঁধ নির্মাণ।

২০০৭ সালে ভারত কাশ্মীর উপত্যকার বান্দিপুরার উত্তরে ঝেলাম নদীর উপর কিশনগঙ্গা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ জানালে প্রকল্প স্থগিত করতে হয় ভারতকে। পরে বিষয়টি সালিশি আদালতে পাঠানো হয়, যা এখনো বিচারাধীন।

পুনরায় ২০১৩ সালে ভারত কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলায় চেনাব নদীর উপর রাতলে বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। পাকিস্তান আবারও বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ করলে, ভারত নকশায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত আবার চুক্তটি বাতিলের হুমকি দেয়। অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে বেশি পানি পায়। প্রকৃতপক্ষে, এই দাবিটি ভুল।

গত বছর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু পাকিস্তান ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এরপর সর্বশেষ পেহেলগামে হামলার পর ভারত সরকার চুক্তিটি স্থগিতের ঘোষণা দেয় এবং প্রচার করে, ‘পানি অবরোধ’ করে পাকিস্তানকে ভয়াবহ পানি সংকটে ফেলা হবে।

তবে অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বিজেপি সরকারের এই দাবির সঙ্গে একমত নন। ইন্ডিয়া টুডে-তে অভিষেক দে লেখেন, ‘চুক্তি স্থগিত মানেই তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া যাবে এমন নয়; কারণ ভারতের হাতে এখনো সেই পরিকাঠামো নেই, যার মাধ্যমে সিন্ধু নদীর পানি থামিয়ে দেওয়া বা নিজের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। ভারত সর্বোচ্চ ৫-১০% পানি প্রবাহ কমাতে পারে।’

এই নদীগুলোর উপর বড় রিজার্ভার নির্মাণ করতে ভারতের কয়েক বছর লেগে যাবে। এর জন্য বিস্তৃত জরিপ এবং বিশাল অর্থের প্রয়োজন। পাকিস্তান এই প্রকল্পগুলোর কারণে দশ বছর পর সমস্যায় পড়তে পারে।

এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভারত সরকার মিথ্যা দাবি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এর বিপরীতে পাকিস্তান যদি শিমলা চুক্তি স্থগিত করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে ভারতই বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। বর্তমানে পাকিস্তানের হাতে শিমলা চুক্তি স্থগিতের অনেক যুক্তি রয়েছে। ভারত ১৯৮৪ সালে সিয়াচিন হাইটস দখল করে এ চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল। পরবর্তীতে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করে ভারত আবারও চুক্তিটি লঙ্ঘন করে।

এখন কল্পনা করা যাক, পাকিস্তান যদি শিমলা চুক্তি থেকে সরে আসে তাহলে কী কী হতে পারে। প্রথমত, পাকিস্তান আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শর্তে আবদ্ধ থাকবে না এবং কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার পথ খুলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা অন্য যে কোনো দেশ কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধবিরতির রেখা (সিএফএল) হিসেবে বিবেচিত হবে, যা কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আইন নেই যা যুদ্ধবিরতির রেখা অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। ভারত হয়তো ভাবতেও পারছে না, শিমলা চুক্তি স্থগিত হলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। ভারতের তথাকথিত ‘পানি অবরোধ’ হয়তো পাকিস্তানকে একেবারে শুকিয়ে ফেলবে না, কিন্তু পাকিস্তানের ‘শিমলা অবরোধ’র পর ভারত নিজেই সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আন্তর্জাতিক

ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত ১৫ এপ্রিল ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয় ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লাখো জনতা ফিলিস্তিনের পক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। আপনি নিশ্চয়ই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: বাংলাদেশের জনগণ কখনো ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝখানে ছিল না। তারা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে ছিল। ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল। কেননা তারা দেখছে, গত ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ নিজেদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য বাংলাদেশের বার্তা খুব স্পষ্ট—আমরা তোমাদের (ফিলিস্তিনের) পাশে আছি। এজন্য আমি বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও গৌরব বোধ করি।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘ দিন ধরে গণহত্যা চলে আসছে। তবে আমরা দেখছি, আরব বিশ্ব নীরবতা পালন করছে। আপনার মন্তব্য কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। শুধু আরবই নয়, সাধারণভাবে পুরো বিশ্বই নীরবতা পালন করছে। আর শুধু নীরবই নয়, কিছু দেশ এই গণহত্যার জন্ম দিচ্ছে, সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক না কেন। আর এটা ঘটছে এখন এই বিংশ শতাব্দীতে এসে, যখন আমরা মানবতা-গণতন্ত্র রক্ষা ও সকল নীতি নৈতিকতার কথা বলছি। যখন আমরা এসব বলছি, তখন কার্যকর ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, সম্পূর্ণ এর বিপরীত এক চিত্র। আমাদের ধর্ম, বর্ণ আলাদা হতে পারে। তবে সবার সাথে আমাদের যে মিল আছে, সেটা হলো আমরা সবাই মানুষ। আমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, আমাদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, প্রকৃতপক্ষে যারা মানবতার বিরুদ্ধে তাদের সকলের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই করার কথা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা করছি না।

তবে ফিলিস্তিনের জনগণ প্রকৃতপক্ষে মানবতার জন্যই লড়াই করছে। এই লড়াই অশুভশক্তির বিরুদ্ধে। এটা শুধু তাদের নিজেদের জন্য লড়াই নয়। আমি বিশদভাবে বলতে চাই না, কোন দেশ কী ভূমিকা পালন করছে। আমি বলতে চাই, বিশ্ব কিছুই করছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কোনো ভূমিকা পালন করছে না। যদিও তারা চেষ্টা করছে, তবে কিছু করতে পারছে না, কারণ তারাও চাপে রয়েছে। এখন আমরা কী করতে পারি? আমরা লড়াই বন্ধ করে দিতে পারি না। কেননা আমাদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। আমাদের শুধু ১৭ হাজার শিশুই মারা গেছে! পুরো বিশ্ব সেটা দেখছে। এখানে তো মানবতা নীরব।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা নিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জাতিসংঘকে অনেক সম্মান করি। তারা যতটা পারে, সেই চেষ্টাও করেছে। জাতিসংঘের ১৩০ জন কর্মী ইসরায়েলের আগ্রাসনে নিহত হয়েছে। তবে তাদের (জাতিসংঘের) ভূমিকা সীমিত। কারণ, তারা অপহৃত হয়েছে। আইনের ক্ষেত্রে তাদের পুরোপুরি কর্তৃত্ব নেই। কেননা সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলের সমর্থনে ভেটো দিয়ে আসছে, আর এটাই হলো প্রকৃত বাস্তবতা।

বাংলাদেশ গত সপ্তাহে পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ (ইসরায়েল ব্যাতিত) বাক্যটি সংযুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেটা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাসপোর্টে এটা (এক্সসেপ্ট ইসরায়েল) লেখা ছিল। তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বাক্যটি পাসপোর্ট থেকে প্রত্যাহার করে। আমার শক্তিতে যতটুকু কুলায়, তখন আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম, যেন সরকার ওই সিদ্ধান্তটা বাতিল করে। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। আমার মনে আছে, সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান কামাল) সঙ্গে আমার একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে আমি খুব স্পষ্ট করে বলেছিলাম—যখন আমাদের ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরছে, শিশুদের রক্ত ঝরছে, গাজা উপত্যকায় এখনো আমরা অধিকার হারা আর এই মুহূর্তে এটা করা হলে ইসরায়েলকে একটি উপহার দেওয়া হবে। তবে তার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) উত্তর ছিল—আমরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব, (পাসপোর্ট) আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে চূড়ান্তভাবে আমরা সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। আমরা চেষ্টা করি, কখনো সফল হই, কখনো হই না।

তবে এখন যেটা আবার হয়েছে, এটা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন ও সংহতি ঘোষণা। গত সপ্তাহে ঢাকায় প্রায় ২০ লাখ লোক সমবেশ করে সংহতি জানিয়েছেন। আর পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ যুক্ত হয়েছে। এই দুই ঘটনা আমাদের গৌরাবান্বিত করেছে।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন গণহত্যা চলছে। কীভাবে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান হতে পারে?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এটা মিলিয়ন ডলারের একটি প্রশ্ন। এটা সমাধান সম্ভব, তবে অন্য অংশে ইসরায়েল এই সংকটের সমাধান চায় না। কারণ তাদের শক্তি আছে, তাদের পেছনে আমেরিকা আছে। এখানে ভুল বা সঠিক কোনো ইস্যু নেই, এখানে রয়েছে—শক্তি আর শক্তিহীনতার ইস্যু। আমরা এই সংকট সমাধানে ১৯৯০ সাল থেকে ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করে আসছি। ইতোমধ্যে ৩৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে, রক্ত ঝরছে। আর তারা আমাদের বেশিরভাগ ভূমি দখলে নিয়েছে। আপনারা জানেন, ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন মাত্র ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আমরা শুধুমাত্র ২২ শতাংশ ভূমি চেয়েছি, আমাদের রাষ্ট্রের জন্য। আর তাদের ৭৮ শতাংশ। কিন্তু তারা এটাও মানছে না। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা শুধু ফিলিস্তিন নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশটাই চায়। তারা যতক্ষণ না মাথা থেকে এই অসুস্থতা না সরাবে, ততক্ষণ শান্তি আসবে না।

হামাস (ফিলিস্তিনের একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল, যারা গাজা শহর নিয়ন্ত্রণ করে) ও ফাতাহ (প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্টের) এর মধ্যে বিভক্তির জন্য ফিলিস্তিন সংকট সমাধান হচ্ছে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এই বিভক্তি আসলেই দুঃখজনক একটি অধ্যায়। এই বিভক্তির কোনো ন্যায্যতা নেই। তবে দুভার্গ্যজনক হলেও এটা হয়েছে। তবে বিভক্তি থাকলেও সংকট সমাধান করা যাবে না, সেটা সত্য নয়। এটা ইসরায়েলের প্রচারণা, এর পেছনে যাওয়া উচিত নয়। আমরা এ বিষয়ে খুব সতর্ক। আমরা (হামাস-ফাতাহ) একই জিনিস চিন্তা করি। আমরা আমাদের নিজস্ব দেশ চাই। তবে তারা (হামাস) ভিন্নভাবে বিশ্বাস করে। তারা ভিন্ন পন্থা বিশ্বাস করে। আর আমরা (ফাতাহ) বিশ্বাস করি, আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই শান্তি আনতে চাই। কেননা আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো অবস্থানে নেই। আমাদের আলোচনাই করা উচিত। আমরা ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করেই এই সংকটের সমাধান চাই। এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। আমরা যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ করতে চাই না। হত্যার জন্য সংগ্রাম করতে চাই না। রক্তপাত চাই না। এটা আমাদের ধরন। তবে আপনি যদি চাপিয়ে দেন, আমরা সেটা করতে বাধ্য হব। আমরা ১৯৬৫ সাল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, আর এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আমরা যদি আলোচনায় ব্যর্থ হই, তাহলে তখন হামাস বলতে পারে—তোমরা ব্যর্থ, এখন একমাত্র উপায় যুদ্ধ।

আমি বলতে চাই, প্রতিটি ফিলিস্তিনির উচিত পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন)-এর ব্যানারে একত্রিত হওয়া, যেটা ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা। আশা করি, আমাদের হামাসের ভাইয়েরা এখানে এগিয়ে আসবেন। আর ফিলিস্তিনের জনগণকেই ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে দিন, কে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে যতই বিভক্তি থাকুক না কেন, এখন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের উভয়ের শত্রু একই। এটাই এখন বাস্তবতা। আমরা বিভক্তিকে পাশ কাটিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

আন্তর্জাতিক

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা চালিয়েছে শত শত অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী।সোমবারের এই হামলা ছিল ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভারের দ্বিতীয় দিনের অংশ হিসেবে সংগঠিত হামলা।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, ৭৬৫ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি পুলিশের নিরাপত্তা সহযোগিতায় আল-মুগাররাবা গেট দিয়ে আল-আকসা প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তারা দলবদ্ধভাবে প্রবেশ করে মসজিদের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় ও হামলা চালায়।

এর আগের দিন রোববারও (পাসওভারের প্রথম দিনে) প্রায় ৫০০ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী একইভাবে আল-আকসায় প্রবেশ করে ও হামলা চালায়।

পাসওভার কী?

পাসওভার হলো-ইহুদি ধর্মের অন্যতম পবিত্র উৎসব। এ উৎসব হজরত মূসা (আ.)-এর সময় মিসর থেকে ইসরাইলিদের নির্গমন স্মরণে পালিত হয়।

অবৈধ প্রবেশ ও আগ্রাসনের পরিসংখ্যান

ফিলিস্তিনি ওয়াকফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রমজানে (২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিল) ২১ বার আল-আকসা মসজিদে অবৈধভাবে ঢুকে হামলা চালানো হয়।

জেরুজালেম গভর্নর অফিসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ১৩,০৬৪ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী আল-আকসায় প্রবেশ করে।

আল-আকসা মসজিদের গুরুত্ব ও ইহুদিদের ধারণা

আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান।তবে ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা একে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে অভিহিত করে। তাদের দাবি, সেখানে তাদের প্রাচীন দুটি উপাসনালয় ছিল।

এ নিয়ে ফাখরি আবু দিয়াব নামে জেরুজালেম বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ কিছুদিন আগে আল-আকসা মসজিদের পাশের ‘ডোম অব দ্য রক’ মসজিদে ইহুদি উগ্রপন্থিদের গতিবিধি সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, এই পবিত্র স্থানটিকে ইহুদিকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে আল-আকসার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

তাসনিম নিউজ জানায়, ফাখরি আবু দিয়াব পাসওভারের ছুটি এগিয়ে আসার সঙ্গে আল-আকসা মসজিদের ওপর ইহুদিবাদীদের অভূতপূর্ব অপতৎপরতা বৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, চরমপন্থি ইহুদি গোষ্ঠীগুলো আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে আক্রমণের পরিধি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা প্রকাশ্যে তালমুদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং ডোম অব দ্য রক মসজিদের কাছে দুম্বা জবাইয়ের চেষ্টা করছে। ইহুদিবাদীদের এই পদক্ষেপ উস্কানিমূলক এবং আল-আকসা মসজিদকে ইহুদিকরণের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলোর একটি।

আল-কুদস প্রসঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ইহুদিবাদীদের এইসব কর্মকাণ্ডে দখলদার পুলিশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

এমনকি ইসরাইলি চরমপন্থি মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক সমর্থনে সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যেহেতু আরব এবং মুসলিম বিশ্ব নীরব এবং নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে, সে কারণে এই গোষ্ঠীগুলো এ ধরনের উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হচ্ছে।

আবু দিয়াব জোর দিয়ে বলেন, আল-আকসা মসজিদকে পরিকল্পিতভাবে ইহুদিকরণের লক্ষ্যে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং সেখানে ইহুদিবাদীদের ক্রমাগত উপস্থিতি তাদের ওই আন্দোলনকে ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করবে।

আন্তর্জাতিক অবস্থান

ইসরাইল ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় পূর্ব জেরুজালেম দখল করে এবং ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে সংযুক্ত করে। যদিও তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা কখনোই স্বীকৃত হয়নি।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় ২২ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি চিত্রশিল্পী দীনা খালেদ জাউরুব নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণে এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দীনা খালেদ জাউরুব গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রতিকৃতি আঁকার জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন। ২০১৫ সালে, সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের অধিকারের ওপর আঁকা চিত্রকর্মের জন্য আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।

খান ইউনিসের পশ্চিমে স্যান্ড বিচ রিসোর্টের কাছে তার পরিবারের আশ্রয়কেন্দ্রের একটি তাঁবুতে ইসরাইলি বোমা আঘাত হানে। এ হামলায় জাউরুব প্রাণ হারান।

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান স্পষ্টভাবে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির যেকোনো পরিকল্পনাকে সৌদি আরব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

শুক্রবার তুরস্কের আনাতোলিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘গাজা যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ’-এর মন্ত্রীপর্যায়ের কমিটির বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এ সময় অভিযোগ করে বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা ন্যূনতম জীবনধারণের সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত’।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির সঙ্গে শর্তযুক্ত করা উচিত নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত সহায়তা সরবরাহে বাধা দূর করতে একযোগে কাজ করা।

প্রিন্স ফয়সাল এ সময় গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য চলমান আলোচনার প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর ও কাতার-এর ভূমিকারও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে-

গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের যেকোনো রকম জোরপূর্বক স্থানান্তর বা বিতাড়নের বিরোধিতা করা হয়েছে।

UNRWA  (ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা)-এর প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমকে একত্র করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অবিলম্বে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিও জানানো হয়েছে, যা জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ অনুযায়ী হওয়া উচিত।

দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, যেমন- বসতি সম্প্রসারণ, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং জমি দখলের কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তি করতে আগ্রহী। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প।খবর রয়টার্সের।

সংবাদমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে বাণিজ্য নীতিতে আরও স্থিরতা আসবে।

এ সময় ট্রাম্প বলেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে ভালো লাগবে।

চলমান আলোচনা নিয়ে বলতে গিয়ে ট্রাম্প আরও বলেন, মনে হয় উভয় দেশের জন্য ভালো কিছু একটা করা সম্ভব হবে।

ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কেও মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, সংঘাতের অবসানের অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছি।

এদিকে, তার ট্রেড পলিসি নিয়ে বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, শুল্ক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব জাতীয় ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা তার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন প্রথম দেশ হিসেবে চুক্তি করার ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি এমন চুক্তি করতে চান যা তার দেশের জন্য উপকারী।

বৈঠকে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, যদি চুক্তি না করা হয়, তাহলে ৯০ দিনের বিরতির পর উচ্চতর শুল্ক আবারও বলবৎ করা হবে। তিনি বলেন, তার সরকার কোনো দেশ বা কোম্পানিকে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে না।

এর আগে চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া অনেক দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে শুক্রবার শুল্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হয় না।

সবশেষ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে।

আন্তর্জাতিক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার কাছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি উত্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকাস্থ থাই দূতাবাসের আরো বেশি ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সক্ষমতা নেই, ফলে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশিদের দীর্ঘ বিলম্ব এবং লম্বা লাইন ধরতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে থাই প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশিরা যারা থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে আসেন তারা অনেকে ভিসা জটিলতার সম্মুখীন হন।’

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

ড. ইউনূস এসময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্র সম্পর্ক এবং বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করলে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের সময় কমাতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা এক দশকেরও বেশি সময় আগে চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর চিয়াং মাইয়ের মধ্যে ফ্লাইট চালু করার সময় এয়ার এশিয়ার প্রভাবের কথা স্মরণ করেন।

বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্ব এই আঞ্চলিক জোটে নতুন গতিশীলতা সঞ্চার করবে।

বৈঠকের শুরুতে ড. ইউনূস বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এবং চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।

তিনি প্রয়াত রাজা ভূমিবলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি ১৯৭২ সালে থাইল্যান্ডের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বীকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আলোচনার বিষয়বস্তুতে বিনিয়োগ প্রধান্য ছিল, এসময় ড. ইউনূস আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে থাই কোম্পানিগুলোকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধার্থে দুই দেশের মধ্যে রেল, সড়ক, সামুদ্রিক এবং বিমান যোগাযোগ উন্নত করার গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি পরামর্শ দেন, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশ নিতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা প্রস্তাব করেন উভয় দেশই যত দ্রুত সম্ভব একটি দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) তৈরির জন্য একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করবে, যাতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করা যায়।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিওটিও) মামলা করেছে চীন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।

খবর বিবিসির।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন। পাশাপাশি এই শুল্ক সংস্থার সদস্যদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে দুর্বল করে।

তিনি আরও বলেন, এটি একপাক্ষিক প্রভাবশালী আচরণ, যা বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপদে ফেলছে। চীন এর তীব্র বিরোধিতা করছে।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের আরোপ করা ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। দেশটির এমন পদক্ষেপ বাণিজ্য সংকটকে আরও গভীর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। চলতি বছরের শুরুতে তিনি ২০ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। ফলে মোট শুল্কের মোট হার হবে ৫৪ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানো হয়, যার মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, কিছু নথিভুক্ত ঘটনায় ধর্ষণের হুমকি এবং শারীরিক যৌন নিপীড়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব হামলা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকেরা।

কিছু নারীকে বেআইনিভাবে আটক, নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়। মূলত, নারীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা এবং আন্দোলনে তাদের ভূমিকা দুর্বল করাই এসব সহিংসতার উদ্দেশ্য ছিল।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে অনলাইন নিউজপোর্টাল ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনূদিত সেই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্ব।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমানতালে বিভিন্ন বয়সী নারীরাও অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এসব নারী শিক্ষার্থীর ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হামলা করেছিল ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা। নারীদের ওপর এমন অনেক সহিংসতার বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছে ওএইচসিএইচআর।

প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, বিক্ষোভের প্রথম দিকে অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তারা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন, এর মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকিও ছিল। কিছু নথিভুক্ত ঘটনা অনুসারে, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যৌন নির্যাতনও চালিয়েছেন। ওএইচসিএইচআর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা হিসেবে যৌনসহিংসতা এবং ধর্ষণের হুমকি সম্পর্কিত অভিযোগও পেয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য কম জানানোর যে চর্চা তার পরিপ্রেক্ষিতে ওএইচসিএইচআর মনে করে যে, তাদের পক্ষে যৌন সহিংসতার সম্পূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি মনে করে, এ ধরনের ঘটনার পুরো বিস্তৃতি নির্ধারণ করতে এবং এর প্রভাব অনুসন্ধানে আগামীদিনে এর গভীর তদন্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভিকটিমদের যেন প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সময়কালে সংঘটিত এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের একটি পরিকল্পিত ও বিস্তৃত দমননীতির প্রমাণ দেয়। এর মধ্যে বেআইনিভাবে শক্তি প্রয়োগ, চিকিৎসাসেবায় বাধা দেওয়া, বেআইনি গ্রেপ্তার, বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না; বরং আন্দোলন দমন, জনগণকে ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক বিরোধীদের সংগঠিত হয়ে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ঠেকানোর সুপরিকল্পিত কৌশলের অংশ ছিল।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের ওপর সহিংসতা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী বিক্ষোভকারীরা সরকারি নিরাপত্তাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় এবং কুমিল্লা, সাভার, সিলেট ও রংপুরের মতো শহরেও নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। উপরন্তু নারীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়।

সহিংসতা চালানোর সময় নারীদের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হতো সে বিষয়ে সংস্থাটি বলছে, নারী বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার সময় হামলাকারীরা মুখ, বুক, তলপেট ও নিতম্বের মতো নির্দিষ্ট অঙ্গগুলোর ওপর আঘাত করে, যা শুধু শারীরিক যন্ত্রণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং লাঞ্ছিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। এসব হামলার সময় নারীদের উদ্দেশ করে (অপ্রকাশযোগ্য গালি) ইত্যাদি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগ/ছাত্রলীগের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা নারীদের ধর্ষণ, জোরপূর্বক নগ্ন করা এবং অন্যান্য যৌন সহিংসতার হুমকি দেন।

ওএইচসিএইচআর বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আওয়ামী লীগের লোকদের চালানো যৌন সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলেছে, আগস্টের শুরুতে ঢাকায় এক ঘটনায়, বাঁশের লাঠি হাতে একদল ব্যক্তি এক নারীকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি বিক্ষোভকারী কি না। তার ব্যাগ ও মোবাইল ফোন তল্লাশি করে তারা বাংলাদেশি পতাকা খুঁজে পেলে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। তারা তার চুল টেনে ছিঁড়ে, শার্ট ছিঁড়ে ফেলে, এবং বুকে ও নিতম্বে হাত দেয়, পাশাপাশি তার বুকে আঁচড় দেয় ও যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্য ছোড়ে। জুলাই মাসে ঢাকায় অন্য এক ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী এক নারী বিক্ষোভকারীকে, তার মা-সহ পরিবারের সব নারী সদস্যকে ধর্ষণের হুমকি দেয় এবং তাকে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করে, যার মধ্যে ছিল বুকে ও যৌনাঙ্গে হাত দেওয়া এবং অশ্লীল মন্তব্য করা। ঘটনার পর ওই নারী ফোনে ধর্ষণের হুমকি পেতে থাকেন, যা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন যে, ছাত্রলীগ সমর্থকরা কুমিল্লায় বেশ কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছিত করে, যার মধ্যে দুজন ছাত্রীও আছে, যাদের তারা আটক করে শরীরে অযাচিত হাত দেয় এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

তবে সামাজিক কারণে সহিংসতার শিকার নারীরা তা প্রকাশ করতে আগ্রহী হন না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীরা প্রায়শই অভিযোগ জানাতে অনাগ্রহী থাকেন। কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিকার ব্যবস্থা না থাকা, প্রতিশোধের ভয় (বিশেষ করে অপরাধীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে) এবং সামাজিক কলঙ্ক নিয়ে আশঙ্কার কারণে তারা অভিযোগ করতে চান না। ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, মনোসামাজিক সহায়তা ও আইনি সেবা পান না। যারা অভিযোগ করতে ইচ্ছুক তাদেরও যথাযথ সুরক্ষা, সম্মান ও স্বনির্ভরতা দেওয়া হয় না।

ওএইচসিএইচআরের মতে, নথিভুক্ত ঘটনাগুলোর চেয়ে বাস্তবে আরও অনেক বেশি সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাই যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আরও গভীর ও লিঙ্গ-সংবেদনশীল তদন্ত পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।