আন্তর্জাতিক

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তানের একমাত্র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান। তখন যেন সবকিছু তারই পক্ষে কাজ করছিল।

ক্রিকেট খেলার সেই দিনগুলো থেকে তিনি একজন জাতীয় বীর, এরপর তার রূপান্তর একজন ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। বহু দশক ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে গেঁড়ে বসা প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পরিবারকে বেশ সংগ্রামের পর অপসারণ করতে পেরেছিলেন ইমরান।
আবেদনময় সব গান, প্রাণবন্ত রাজনৈতিক সমাবেশ, সামাজিক মাধ্যমে জোরালো উপস্থিতিসহ তার আবির্ভাব হয়েছিল দুর্নীতিবিরোধী নতুন শক্তি হিসেবে। তিনি পরিবর্তন আর নতুন পাকিস্তান গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

দেশটিতে এ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছিল ইমরান হয়তো সেই ইতিহাস বদলাতে পারবেন। কিন্তু তিনি সেই ইতিহাস বদলাতে পারেননি। তবে যে কারণে তার অবস্থান খুব সংহত মনে হয়েছিল সেই একই কারণ দিয়ে তার পতন ব্যাখ্যা করা যায়।

ইমরানপাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যদিও দুই পক্ষই এমন দাবি অস্বীকার করে। কিন্তু এখন তাদের সঙ্গে সেই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ২০১৮ সালে যদিও তার জনসমর্থন ছিল। একই সঙ্গে তার গোপন খুঁটির জোর ছিল সেনাবাহিনী।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বেশিরভাগ সময় ধরেই দেশটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর হাতে। সমালোচকরা ইমরানের শাসনকালকে ‘হাইব্রিড সরকার’ বলে আখ্যা দিয়ে এসেছে। তার প্রতি সেনা সমর্থনের নানা উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় যেসব সংবাদসংস্থা তার প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে তাদের অবস্থান সংকুচিত হতে দেখা গেছে। সে সময় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কিছু প্রার্থীকে প্ররোচিত করে অথবা চাপ প্রয়োগ করে তার দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

সেনাবাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে ইমরানের দলত্যাগী একজন বলছিলেন, সে তাদেরই সৃষ্টি। তারাই তাকে ক্ষমতায় এনেছে।

ইমরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফকে প্রথমে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। পরে তাকে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অনেকে সন্দেহ করেন যে শরীফ অতীতে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিন্তু তাকে ওই সময় সাজা দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

রাজনীতিতে শরীফের শুরুটা ছিল একজন সামরিক একনায়কের শিষ্য হিসেবে। পরের দিকে সেই সম্পর্ক থেকে স্বাধীন হয়ে উঠতে থাকেন। এ কারণে তিনি সেনাবাহিনীর রোষের মুখে পড়েন। তিনি সবসময় তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যা দিয়েছেন এবং তা অস্বীকার করে এসেছেন।

ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ইমরান বেশ গর্বের সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন যে নীতি নির্ধারণের বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার অবস্থান একই। যার একটি ফল ছিল ইমরানের সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সমালোচক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি এবং সাংবাদিকদের আক্রমণ ও অপহরণ।

বরাবরের মতোই সুশীল সমাজ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।

অন্যদিকে তা অস্বীকার করে এসেছে অভিযুক্ত দুই পক্ষই। এসব আক্রমণের জন্যেও কাউকে কখনো চিহ্নিত করা যায়নি। ইমরান জোর দিয়ে বলেছেন তার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা। যেমন তিনি সমাজ সেবা ব্যবস্থার বেশ কিছু সম্প্রসারণ করেছেন। দেশের বেশিরভাগ যায়গায় স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা চালু করেছেন। কিন্তু বেশ কিছু দিক দিয়ে তিনি হোঁচটও খেয়েছেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারের মতো একজন রাজনৈতিক নবিশকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ বিদ্রূপের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও উসমান বুজদারকে সরিয়ে দিতে রাজি হননি তিনি।

সে সময় গুজব ছড়িয়েছিল ইমরানের স্ত্রী, যিনি আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে পরিচিত, তিনি স্বামীকে সতর্ক করেছিলেন উসমান বুজদার তার জন্য শুভ শক্তি এবং তাকে সরিয়ে দিলে সরকারের পতন হবে।

ইমরানের জন্য অন্য আরো চ্যালেঞ্জ ছিল। দেশটির জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে চলেছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে এবং ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমে গেছে। ইমরানের সমর্থকরা বলেন এর পেছনে কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছিল।

জনগণের মধ্যে প্রচলিত কথা ছিল ‘শরীফ পরিবার হয়তো নিজেদের পকেট ভারি করেছে কিন্তু তার অন্তত কিছু কাজ করেছে। ’ তারপরও কিছুদিনের জন্য সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে ভাল বিকল্প ছিলেন ইমরান।

অন্যদিকে সেনাবাহিনী- বিশেষ করে সেনাপ্রধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠ জোরালো হতে শুরু করে। রাজনীতির গতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসে গত বছর। বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিবিসিকে জানান, পাঞ্জাবে সুশাসন নিশ্চিত করতে ইমরানের ব্যর্থতায় সেনাবাহিনীতে বিরক্তি বাড়ছিল।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এই সময় সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া এবং গোয়েন্দা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফায়েজ হামিদের মধ্যে বিরোধ দেখা যায়। ফায়েজ হামিদ পরিবর্তী সেনাপ্রধান হওয়ার আশা পোষণ করতেন। তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে সে ব্যাপারে কথাবার্তা বলেছিলেন।

যদিও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছিল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার মত ‘নোংরা কাজে’ উপযুক্ত মনে করা হলেও সেনাপ্রধান হিসেবে যোগ্য মনে করা হয়নি। জেনারেল বাজওয়া এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদের মধ্যেকার বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছিল গত গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রভাবশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতার সময়।

একজন সাংবাদিক একটি প্রশ্ন করেছিলেন, কিন্তু আইএসআই প্রধান বলে বসেন যে সময় শেষ হয়ে গেছে। এ সময় তাকে থামিয়ে দিয়ে জেনারেল বাজওয়া বলেছিলেন, আমি হচ্ছি সেনাপ্রধান এবং আমি সিদ্ধান্ত নেব কখন সময় শেষ হবে। এমনকি ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরও দেন সেনাপ্রধান। অক্টোবর মাসে তাদের দুজনের বিরোধ চরমে পৌঁছায় এবং এর মধ্যখানে পড়ে যান ক্যারিশমাটিক নেতা ইমরান।

জেনারেল বাজওয়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে নতুন কারো কথা ভাবছিলেন এবং বিভিন্ন পদে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন ইমরান। তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত আইএসআই প্রধান স্বপদে থাকুন সেটা চাইছিলেন ইমরান। তিনি মনে করছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ তাকে আরো একবার জয়ী হতে সাহায্য করতে পারবেন। তার পদ পরিবর্তন বিষয়ক প্রজ্ঞাপন সপ্তাহ তিনেক আটকে রাখা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়তে হয় ইমরানকে। এসব কারণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সরকারের সম্পর্কের ফাটল আরো প্রকাশ্য হয়।

ইমরানের বিরুদ্ধে যখন অনাস্থা ভোটের পরিকল্পনা হচ্ছিল, তার দল থেকে কারা বেরিয়ে যাবেন সেটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। তখন বেশ কটি সূত্র থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছিল, সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে ‘নিরপেক্ষ’ থাকবে বলে উল্লেখ করেছে।

ইমরানের দলত্যাগী একজন বিবিসিকে বলেন, তিনি এবং অন্য সংসদ সদস্যরা গোয়েন্দা বাহিনী থেকে ফোন কল পেতেন এবং তাদের বলে দেওয়া হতো কি করতে হবে। তবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ তার পদ থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে এমন ফোন কল বন্ধ হয়েছে বলে উল্লেখ করছিলেন তিনি।

বিবিসিকে সাংবাদিক কামরান ইওসাফ বলেন, সেনাবাহিনী ইমরান খানের মিত্রদের ‘সামাল’ দিয়ে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জায়গা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছিল।

পররাষ্ট্র নীতিতেও ইমরানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতবিরোধ ছিল। রাশিয়ান সেনাবাহিনী যেদিন ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করেছিল সেদিন মস্কো সফর করেছিলেন ইমরান। পশ্চিমা কর্মকর্তারা তদবির করছিলেন ইমরান যেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিন্দা জানান। কিন্তু তাতেও সাড়া দেননি ইমরান।

ওদিকে সেনাবাহিনীর ছিল একেবারে ভিন্ন সুর। জেনারেল বাজওয়া গত সপ্তাহে বলেছেন, রাশিয়ার এই হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এর আগে নিজের রাজনৈতিক ক্ষতির কথা ভেবে ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আংশিকভাবে পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে জেনারেল বাজওয়ার উদ্যোগ প্রতিহত করেছিলেন ইমরান। যদিও এর আগে উল্টো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে চেয়ে পাকিস্তানে সরকার পতন হয়েছে, কারণ তখন সেনাবাহিনী সেটা চায়নি।

ইমরান যদিও বারবার বলে গেছেন যে, তিনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়াবেন না এবং তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের শাসক পরিবর্তন চেষ্টার শিকার। ’ কারণ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি পশ্চিমাবিরোধী হয়ে উঠছে এবং আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধের সমালোচনা করেছে। যদিও তার এই দাবি অতিরঞ্জিত বলে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে ইমরানের সমর্থকরা মার্কিনবিরোধী মানসিকতায় ক্রমাগত ঢোলের বাড়ি দিয়ে চলেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও দেশটিতে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে ‘বিদেশি চক্রান্ত’ ধারণাটি বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। খেলোয়াড়ি জীবনে ইমরান খান তার দলের খেলোয়াড়দের একবার বলেছিলেন ‘কোণঠাসা হয়ে পড়া বাঘের মতো লড়াই করতে। ’ এখন তিনি ‘কোণঠাসা বাঘের মতো’ শক্তিশালী বিরোধী চরিত্রে পরিণত হতে যাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক

ফরাসি পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে। অনেকেরই ধারণা যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রোই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক জনমত যাচাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তার সম্ভাবনা নিতান্তই কম।

প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো মূলত ক্ষমতায় এসেছিলেন একটা বিশেষ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া হলেন্ডের দুর্বল শাসনামল এবং তিনি তার সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করায় ফরাসি ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী এমানুয়েল ম্যাঁক্রো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ গ্রহণ করেন।

কট্টর বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর এ আন্দোলন শেষপর্যন্ত সরকারকে বাধ্য করে তাদের কার্যক্রম থেকে সরে আসতে। তারপর করোনা ক্রাইসিস, দুই বছরের অধিক সময় সরকারকে নানারকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, যা সব ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় ছিল না। বিশ্বব্যাপী এ মহামারি সমগ্র মানব সমাজকে তার অস্তিত্বের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত করেছে ভ্যাকসিনের পক্ষে বা বিপক্ষে। সেই সাথে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তো আছেই। তার পরও ফরাসিদের মধ্যে দেশ পরিচালনার অন্য কোনো যোগ্য ব্যক্তিত্ব না থাকায় ম্যাঁক্রোকেই বেছে নিয়েছিল পরবর্তী ৫ বছরের জন্য; অন্তত জনমত যাচাইয়ে তা-ই মনে হচ্ছিল।

প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একচেটিয়া ইউক্রেনকে সমর্থনের ব্যাপারটা তারা গ্রহণ করতে পারেনি। পশ্চিমা বিশ্ব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউক্রেনকে শর্তহীন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিপরীতে রযেছে ফরাসি জনমত। যদিও ফরাসি মিডিয়াগুলো সর্বক্ষণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণায় ব্যস্ত এবং ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার বলে অভিহিত করছে। প্রকৃত কারণ বা বাস্তবতাকে তারা গুরুত্ব দেয় না।

স্বাধীনচেতা ফরাসিরা ১৯৬৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল দ্যু গলের নেতৃত্বে মার্কিন সংগঠন ন্যাটো থেকে বেরিয়ে এসে এক স্বাধীন নিউক্লিয়ার ডিসিশনের কার্যক্রম শুরু করে এবং সামরিক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল নীতি অবলম্বন করে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি ২০০৮ সালে এক অজানা কারণে পুনরায় ন্যাটোতে ফ্রান্সকে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। এরই এক নীরব প্রতিক্রিয়া আজ দৃশ্যমান, যেখানে প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো জনমত যাচাইয়ে ৩৫% জনগণের আস্থার পাত্র ছিলেন, অথচ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ৪২ দিন পর তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে ২৬.৫০ ভাগে। অন্যদিকে কট্টর ডানপন্থী মারিন লোপেনের জনপ্রিয়তা বেড়ে হয়েছে ১৫% থেকে ২৫%।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মারিন লোপেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছ থেকে নির্বাচনী খরচ বাবদ লোন নিয়েছিলেন ৩০ মিলিয়ন ইউরো। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায়ও তিনি রাশিয়ার প্রতি ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। ফরাসি গণতন্ত্রের বিশেষত্ব হচ্ছে, নির্বাচনগুলো পরিচালিত হয় দুই রাউন্ডে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীকে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই ৫০০ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাক্ষর দেয়া অনুমোদনপত্র জমা দিতে হবে। এটা অবশ্য মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। তারপর একটা নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে নির্বাচনী প্রচারণা ও খরচ করতে হবে। নির্বাচনী খরচ সর্তসাপেক্ষে সরকার পরিশোধ করে, যাতে টাকার জোরে কেউ নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে না পারে।

শতকরা ৫০ ভাগের অধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে সরাসরি জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে তার কম হলে ১৫ দিন পর দ্বিতীয় রাউন্ড মোকাবেলা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের সঙ্গে অন্য দলগুলো আলোচনা করে কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় আসার জন্য।

এবারের নির্বাচনে ১২ জন প্রার্থী, তবে তাদের ডান বা বামপন্থী হিসেবে বিবেচনা করলে দেখা যায়, ৪৫% ডান আর ২৮.৫০% বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী। অন্যদিকে মধ্যপন্থী ম্যাঁক্রো পেতে পারেন ২৬.৫০%। জনমত যাচাইয়ে এটাই হচ্ছে আজকের প্রতিচ্ছবি। উল্লেখ করা যায় যে ১৫ বছর ফ্রান্স শাসন করা প্রেসিডেন্ট মিতেরাঁর এবং ৫ বছর শাসন করা প্রেসিডেন্ট হলেন্ডের সোশালিস্ট পার্টির অবস্থা খুবই করুণ! অন্যদিকে ঐতিহাসিক দ্যু গল, সিরাক আর সারকোজির ক্লাসিক ডান দলেরও একই অবস্থা। কথা হচ্ছে- দিতীয় রাউন্ডের কোয়ালিশন আলোচনায় বাম ও ডান কোন পক্ষের শক্তি কী হতে পারে? বিষয়টা আরও নির্ভর করছে কত ভাগ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন এবং কত ভাগ ভোটার তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন না।

এবারের নির্বাচন তাই অনেকটাই অনিশ্চিত। কোনো কিছুই বলা যাবে না। যেমন প্রখ্যাত ফরাসি ব্যক্তিত্ব জ্যাক আতালি বলেছেন, “এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, যিনি কট্টর বর্ণবাদী দলের একজন ঐতিহাসিক নেত্রী।” যদি তা-ই হয়, তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

তবে যদি বাংলাদেশ বা ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে বলতে হয়, তাহলে ম্যাঁক্রোই উপযুক্ত ব্যক্তি, যার সঙ্গে আমাদের সরকার ও ব্যবসায়ীদের একটা অব্যাহত সম্পর্ক রয়েছে। আর রাষ্ট্র পরিচালনায়ও উনার অভিজ্ঞতা ও পরিপক্বতা এখন স্বীকৃত।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব খোয়ানোয় পদটিতে আসীন হতে চলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শেহবাজ শরিফ। তিনি পাকিস্তান পার্লামেন্টের বিরোধী জোটের নেতা ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-পিএমএল (এন) সভাপতি।

শনিবার (০৯ এপ্রিল) দিনগত গভীর রাত অর্থাৎ ১০ এপ্রিল ইমরান খানের ওপর আনা অনাস্থা ভোটে জিতে যায় পিএমএল (এন) নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। স্পিকারের পদত্যাগের পর প্যানেল স্পিকার পিএমএল (এন) নেতা আয়াজ সাদিক পরিচালনা করেন পুরো প্রক্রিয়া। এতে জাতীয় পরিষদের ৩৪২ ভোটের মধ্যে ১৭৪টি ভোট, অনাস্থা ভোটের পক্ষে পড়ে বলে ঘোষণা দেন আয়াজ।

পাকিস্তান মুসলিম লিগের (এন) মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, অধিবেশন পরিচালনা করায় আয়াজ তার ভোট দেননি। এছাড়া ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের ‘ভিন্নমত’ ভোট গ্রহণেরও প্রয়োজন পড়েনি।

ফলাফল ঘোষণার পর আয়াজ শেহবাজ শরীফের হাতে ফ্লোর ছেড়ে দেন, যিনি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বিরোধী জোটের প্রার্থী।

অনাস্থা ভোট শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পূর্বে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। ফলে অনাস্থা ভোট পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে প্যানেল স্পিকার পিএমএল (এন) নেতা আয়াজ সাদিকের ওপর।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, শনিবার (০৯ এপ্রিল) মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় ইমরান খানের ওপর অনাস্থা ভোটগ্রহণের সময়। কায়সার শনিবার সকাল থেকে পার্লামেন্টের অধিবেশনটি পরিচালনা করছিলেন। তবে সেটি প্রথমে ইমরান ও তার মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে মুলতবী করা হয়। পরে ইফতার ও এশার নামাজের কারণে ফের মুলতবী করা হয়।

এরপর পাক প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় পাক আর্মির ত্রিপল ওয়ান ইনফন্ট্রি ব্রিগেড। আকাশে ওড়ানো হয় সামরিক হেলিকপ্টার। উচ্চ সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয় পাকি সেনাদেরও। আবার ইসলামাবাদের সড়কে নামানো হয় ছয়টি ট্যাংক।

এই অবস্থার মধ্যে প্রধান বিচারপতি মধ্যরাতেও আদালত খোলা রাখার নির্দেশনা দেন। বলেন, অনাস্থা ভোট গ্রহণ না হলে সেটা হবে আদালত অবমাননা।

শেষমেষ পদত্যাগী স্পিকার কায়সার বলেন, আমি সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি আর এই পদে থাকতে পারি না। তাই পদত্যাগ করছি। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) নেতা আয়াজ সাদিককে তার আসনে বসতে বলেন এবং অনাস্থা ভোট গ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলেন। পরে রাতে ১২টার পরপর তিনি অনাস্থা ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

গত রোববার ইমরানের ওপর আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করেছিলেন পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। এরপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার আইন সভা ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশটির সুপ্রীম কোর্ট সেই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে আইনসভাকে পুনরুজ্জীবিত করার রায় দেন এবং একই সঙ্গে শনিবার (০৯ এপ্রিল) অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে দেন।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, অধিবেশন বসলেও তা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মুলতবী করা হয়। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ও আর্মির চাপে পড়ে অনাস্থা ভোটেই যেতে হয় ইমরান খানকে।

শেহবাজ শরিফ:

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেহবাজ মূলত একজন ব্যবসায়ী। ১৯৫১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এক কাশ্মিরি পরিবারে লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ শরিফ। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। লাহোর ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এরপরই তিনি পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্তেফাক গ্রুপে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রায় একই সময় তিনি রাজনীতিতে আসেন। মোট তিনবার নির্বাচিত হন পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রীর আসনে। আসেন জাতীয় রাজনীতিতেও।

বড় ভাই নওয়াজ শরিফ দু্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে চলে গেলে পিএমএল(এন) পরিচালনার দায়িত্ব নেন তিনি। কিন্তু ১৯৯৯ সালে পারভেজ মুশারফ অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসলে স্বেচ্ছায় সপরিবারের সৌদি চলে যান শেহবাজ। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে দ্বিতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৩ সালেও তিনি পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী হন।

 

আন্তর্জাতিক

অবশেষে অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এর মধ্যে দিয়ে মেয়াদ পূর্তির আগেই শেষ হলো তার প্রধানমন্ত্রিত্ব।

নির্বাচনে সময় অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন পাক ক্রিকেট টিমের সাবেক এই অধিনায়ক। দু’দিন আগেই বলেছিলেন শেষ বল অব্দি খেলে যাবেন। কিন্তু শেষ বলে আর রক্ষা হলো না।

শনিবার (০৯ এপ্রিল) দিনগত মধ্যরাতে স্পিকারের পদত্যাগের পর প্যানেল স্পিকার পাকিস্তান মুসলিম লিগের- পিএমএল (নওয়াজ) নেতা আয়াজ সাদিক পরিচালনা করেন অনাস্থা ভোট। এতে জাতীয় পরিষদের ৩৪২ ভোটের মধ্যে ১৭৪ ভোট অনাস্থা ভোটের পক্ষে পড়ে বলে ঘোষণা দেন আয়াজ।

পাকিস্তান মুসলিম লিগের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, অধিবেশন পরিচালনা করায় আয়াজ তার ভোট দেননি। এছাড়া ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের ‘ভিন্নমত’ ভোট গ্রহণেরও প্রয়োজন পড়েনি।

ফলাফল ঘোষণার পর আয়াজ শেহবাজ শরীফের হাতে ফ্লোর ছেড়ে দেন, যিনি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বিরোধী দলীয় প্রার্থী।

অনাস্থা ভোট শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। ফলে অনাস্থা ভোট পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে প্যানেল স্পিকার পিএমএল (এন) নেতা আয়াজ সাদিকের ওপর।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার (০৯ এপ্রিল) মধ্যরাত ১২টায় শেষ হয় ইমরান খানের ওপর আনাস্থা ভোটগ্রহণের সময়। কায়সার শনিবার সকাল থেকে পার্লামেন্টের অধিবেশনটি পরিচালনা করছিলেন। তবে সেটি প্রথমে ইমরান ও তার মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে মুলতবী করা হয়। পরে ইফতার ও এশার নামাজের কারণে ফের মুলতবী করা হয়।

এরপর পাক প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় পাক আর্মির ত্রিপল ওয়ান ইনফন্ট্রি ব্রিগেড। আকাশে ওড়ানো হয় সামরিক হেলিকপ্টার। উচ্চ সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয় পাকি সেনাদেরও। আবার ইসলামাবাদের সড়কে নামানো হয় ছয়টি ট্যাংক।

এ অবস্থার মধ্যে প্রধান বিচারপতি মধ্যরাতেও আদালত খোলা রাখার নির্দেশনা দেন। বলেন, অনাস্থা ভোটগ্রহণ না হলে সেটা হবে আদালত অবমাননা।

শেষমেষ পদত্যাগী স্পিকার কায়সার বলেন, আমি সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি আর এই পদে থাকতে পারি না। তাই পদত্যাগ করছি। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) নেতা আয়াজ সাদিক তার আসনে বসতে বলেন এবং অনাস্থা ভোট গ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলেন। পরে রাত ১২টার পরপর তিনি অনাস্থা ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

গত রোববার ইমরানের ওপর আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করেছিলেন পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। এরপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার আইন সভা ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে আইনসভাকে পুনরুজ্জীবিত করার রায় দেন এবং একই সঙ্গে শনিবার (০৯ এপ্রিল) অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে দেন।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অধিবেশন বসলেও তা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মুলতবী করা হয়। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ও আর্মির চাপে পড়ে অনাস্থা ভোটেই যেতে হয় ইমরান খানকে।

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেইনকে এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড হেগার।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০ টি দেশ কিইভকে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে বলে ওয়াশিংটন ঘোষণা দেওয়ার পরদিন শুক্রবার স্লোভাকিয়া এ ঘোষণা দিল।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে ইউক্রেইনকে এই প্রথম আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিল নেটো সদস্যদেশ স্লোভাকিয়া।

১৯৯৩ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর স্লোভাকিয়া সোভিয়েত আমলে নির্মিত এই এস-৩০০ ব্যবস্থা পেয়েছিল।

শুক্রবার কিয়েভ সফরে গেছেন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী হেগার। স্লোভাকিয়ার নিজেদের নিরাপত্তা অটুট রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করেছে। তখন থেকে রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে ইউক্রেইন বরাবরই পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র এবং ভারি সামরিক সাজ সরঞ্জামের আকুল আবেদন জানিয়ে আসছেন।

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী হেগার বলেন, “আমি নিশ্চিত করে জানাচ্ছি, স্লোভাকিয়া এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেইনকে দান করেছে। রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলায় আত্মরক্ষার জন্য সহযোগিতার অনুরোধের ভিত্তিতে এটি দেওয়া হয়েছে।”

স্লোভাকিয়া এখন নিজেদের এস-৩০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জায়গায় ‍যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দিয়ে কাজ চালাবে।

মার্চে নেটো মিত্র দেশ জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস তিনটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্লোভাকিয়ায় নিয়ে যায়।

তখন এস-৩০০’র পরিপূরক হিসাবে ওই ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছিল এবং প্রতিস্থাপনের মতো অস্ত্র পাওয়া গেলে এস-৩০০ এর ব্যবহার বাদ দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছিল দেশটি।

আন্তর্জাতিক

জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, যে তিনি একদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের জারি করা রায় মেনে নিচ্ছেন। তবে এ রায়ে তিনি দুঃখিত।

ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই রায়ে দুঃখিত, কিন্তু আমি এটা মেনে নিচ্ছি। খবর- ডন, জিও নিউজ, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর।

শুক্রবার পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উদ্দেশে শুক্রবার ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

এতে সুপ্রিম কোর্টের এ রায় নিয়ে ইমরান খান আরও বলেছেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আদালত তাড়াহুড়ো করে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাতে আমি দুঃখিত। রায় দেওয়ার আগে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি দেখা উচিত ছিল। রায় দেওয়ার আগে বিষয়টি একবার হলেও দেখা উচিত ছিল।’

ইমরান খান আরও বলেন, পাকিস্তানের তরুণদের সামনে আমরা কি উদাহরণ দিয়ে যাচ্ছি। তারা যদি দেখে রাজনীতিবিদরা তাদের বিবেককে বিক্রি করে দিচ্ছে কি শিখবে?

৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। কিন্তু ৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট জানায় কাসেম সুরির সিদ্ধান্ত অবৈধ। কোর্ট ৯ এপ্রিল ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে আয়োজিত সাধারণ অধিবেশনে আয়োজিত ভোটে রাশিয়াকে বরখাস্ত করা হয়।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে ‘গণহারে এবং পরিকল্পিতভাবে নিপীড়ন এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ করেছে জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করেছে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রস্তাবটি ভোট দেওয়া দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন পাওয়ায় রাশিয়াকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৯৩টি দেশ, বিপক্ষে ২৪টি দেশ ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশসহ ৫৮টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল।এতে ভোটদানে বিরত দেশগুলোকে গণনা করা হয়নি।

রেজুলেশনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশ, ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া, চীন, বেলারুশ, কিউবা, ইরানসহ আরও কয়েকটি দেশ।

দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল। অন্যদিকে আফগানিস্তান অনুপস্থিত ছিল। এর আগে প্রথম রেজুলেশনে বাংলাদেশ ভোট দানে বিরত থাকলেও দ্বিতীয় রেজুলেশনে পক্ষে ভোট দেয়।

বৃহস্পতিবার তোলা প্রস্তাবে ‘ইউক্রেনে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে সেখানে রুশ বাহিনী দ্বারা পরিচালিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর নিয়ে।

রাশিয়া দাবি, তারা ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ইউক্রেইনের সেনা অবকাঠামো ধ্বংস করা। তারা সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কোনো দেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য সদস্য পদ পায়। রাশিয়া তার মেয়াদের দ্বিতীয় বছরে ছিল। মানবাধিকার কাউন্সিল কোনো দেশকে তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করতে পারে না। তবে তাদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের অনুমোদন দিতে পারে।

মস্কো এই কাউন্সিলের সব থেকে সরব সদস্যদের একজন ছিল। এখন বরখাস্ত হওয়ার কারণে তারা মতামত দেয়া বা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে না। তবে রুশ কূটনীতিকরা এখনো কাউন্সিলের বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক

সম্মান বাঁচানোর চেষ্টায় আস্থা ভোট এড়িয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার যে কৌশল বেছে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সেই ছক উল্টে দিয়ে তাকে ফের লজ্জাজনক প্রস্থানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের প্রস্তাব নাকচ করে যে সিদ্ধান্ত দেশটির ডেপুটি স্পিকার দিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট তাকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে বাতিল করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আহ্বানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে জাতীয় পরিষদ পুনরুজ্জীবিত করে শনিবার অধিবেশন শুরুর পাশাপাশি আস্থা ভোটের ফয়সালা করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ।

অর্থাৎ, ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খানকে এখন আইনসভায় আস্থার প্রমাণ দিতে হবে, যেখানে তার হার আগেই এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে আছে।

৩৪২ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে অন্তত ১৭৩ জন সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। কিন্তু তার বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব তোলার আগেই ১৭৭ জন সদস্যের সমর্থন জড়ো করে রেখেছে।

সেই লজ্জা এড়াতে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক গত ৩ এপ্রিল অভাবনীয় এক রাজনৈতিক কৌশলের মঞ্চায়ন ঘটান, যাকে সংবাদ শিরোনামে ক্রিকেট মাঠের গুগলি বলের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

ক্ষমতাসী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার হওয়া কাসিম খান সুরি অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল করে দেন এবং ইমরান খানের আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। যার পরিণতিতে পাকিস্তানের সামনে আবির্ভূত হয় এক সাংবিধানিক সঙ্কট।

বিরোধীদলগুলো সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য চলে যায় আদালতের হাতে।

ছবি: রয়টার্সছবি: রয়টার্সকী বলেছে আদালত?
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন লিখেছে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দেওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সেজন্য সেদেশের জনগণের মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সেই সিদ্ধান্ত আসে এক ঘণ্টা দেরিতে।

জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি জানান, পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ আলোচনা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব ওঠার পর ২৮ মার্চ অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছিল। ডেপুটি স্পিকার ৩ এপ্রিল ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেন। তার ওই রুলিং ছিল ‘অসাংবিধানিক’।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর স্পিকারকে ১৪ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হয়। কিন্তু সে সময় ইসলামাবাদে ওআইসি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর ২৫ মার্চ পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকা হলেও সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন না করেই ২৮ তারিখ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। ২৮ মার্চের অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ।

সংবিধান অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের পর তিন দিন পার হলেই ভোট করা যায়। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেওয়া যায় না। কিন্তু ২৮ তারিখ প্রস্তাব উত্থাপনের পর আবার ৩১ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।

এরপর ৩ এপ্রিল অধিবেশন শুরুর দিনই নাটকীয় পরিস্থিতিতে সেই প্রস্তাব বাতিল করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানেরে আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

কিন্তু হার মানতে নারাজ বিরোধী দলগুলো সুপ্রিম কোর্টে যায়। তাদের বক্তব্য ছিল, ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তে সংবিধান ও গণতন্ত্র ভূলণ্ঠিত হয়েছে।

অন্যদিকে ইমরান অভিযোগ তোলেন, রাশিয়া আর চীনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে তাকে উৎখাতের এই চক্রান্ত সাজিয়েছে বিরোধী দলগুলো।

পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের পদক্ষেপ সাংবিধানিক কিনা সেই প্রশ্নে তিন দিনের শুনানির পর বৃহস্পতিবারে রায় এল।

সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেছে, ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের রুলিং সংবিধান ও আইন পরিপন্থি। আইনগতভাবে এর কোনো কার্যকারিতা নেই। প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংবিধানসম্মত হয়নি। তাকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নেই।
প্রধান বিচারপতি আদেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ তার মন্ত্রিসভাকে পুনর্বহাল করতে হবে। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ডাকতে হবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।

আদালত বলেছে, পার্লামেন্টের অধিবেশনে কোনও এমএনএ’র অংশগ্রহণে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এবং সংবিধানের ৬৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আদালতের আদেশ পার্লামেন্টের প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

আদালতের এ রায়কে গণতন্ত্রের জয় হিসাবেই দেখছে বিরোধীরা। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লিগের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ রায়ের পর গণমাধ্যমকে বলেন, “আদালত নিশ্চিতভাবেই মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছে।”

আরেক বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, “আদালতের রায় গণতন্ত্র এবং সংবিধানের জয়। আল্লাহর ইচ্ছায় এবার অনাস্থা প্রস্তাবের প্রক্রিয়া শেষ হবে। আমরা নির্বাচনী সংস্কারের কাজে হাত দেব এবং একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাব।”

রয়টার্স লিখেছে, রায়ের পর আদালতে বাইরে উল্লাসে মেতে ওঠেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। দাঙ্গা পুলিশের ব্যারিকেডের অন্য পাশ থেকে ইমরান সমর্থকরা আমেরিকা বিরোধী স্লোগান তুলে তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন।

পতনের পথ

দুর্নীতি ঠেকানো ও অর্থনীতিকে ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই ঠিকভাবে পূরণ করে উঠতে পারেননি। তার ওপর মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার আর বিদেশি ঋণের বিপুল বোঝার কারণে দ্রুত জনসমর্থন হারাতে থাকে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ শতাংশ, একই সময়ে পাকিস্তানে তা ছিল ২৩ শতাংশ। মহামারী সামাল দিয়ে প্রশংসা পেলেও বাজার সামলাতে না পারায় ইমরানের গদি ছাড়ার দাবি জোরদার হতে থাকে।

ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ পূরণ হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমর্থন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হলে তার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে।

অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, বর্তমান সংকটের শুরু গত অক্টোবরে, যখন প্রধানমন্ত্রী খান পাকিস্তানের ক্ষমতাশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নতুন প্রধানের নিয়োগপত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত তিনি সামরিক বাহিনীর পছন্দ করা ব্যক্তিকেই নিয়োগ দিতে বাধ্য হন, কিন্তু ততক্ষণে মাঠ অনেকটা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এর আগে দুইবার ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে বেনজির ভুট্টো এবং ২০০৬ সালে শওকত আজিজকে সেই পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছিল এবং তারা দুজনই তাতে উৎরে গিয়েছিলেন।

কিন্তু এবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হলে ইমরানের উইকেট যে টিকবে না, সে বিষয়ে তিনি নিজেও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। তবে ভরাডুবির মুখেও তিনি জোর গলায় বলে আসছিলেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না।

পদত্যাগ কিংবা আস্থা ভোটের পরাজয় এড়াতেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনে যাওয়ার কৌলশ নিয়েছিলেন ৬৯ বছর বয়সী ইমরান খান। কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে।

এখন তিনি আস্থাভোটে হেরে উৎখাত হতে পারেন, কিংবা পদত্যাগ করে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বিদায় নিতে পারেন। ফল যাই ঘটুক, পাকিস্তানে কোনো প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে না পারার রেকর্ড অক্ষুণ্ন থাকবে।

আর যদি তিনি ‘অলৌকিকভাবে’ আস্থা ভোটে জিতে যান? এত কিছুর পর সেই সম্ভাবনা কেউ আর দেখছেন না।

রয়টার্স লিখেছে, ইমরানের দল আস্থা ভোটে হেরে গেলে বিরোধী দলগুলো জোট গড়ে তাদের একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করতে পারবে এবং ২০২৩ সালের অগাস্টে বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লিগের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ তার জোটসঙ্গীদের পাশে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শরিকরা তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রার্থী মনোনীত করেছেন।

বিরোধী দলগুলো অবশ্য এর আগে আগাম নির্বাচনের দাবিই জানিয়ে আসছিল। তারা মূলত পার্লামেন্টে ইমরানের রাজনৈতিক পরাজয়টা নিশ্চিত করতে আদালতে গিয়েছিল।

আর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনও বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, অক্টোবরের আগে তারা ভোটের আয়োজন করতে পারবে না।

এদিকে আদালতের রায়ে মন্ত্রিসভা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাশাপাশি দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গেও তিনি বসবেন। বিকালে তিনি ভাষণ দেবেন জাতির উদ্দেশে।

এক টুইটে ইমরান লিখেছেন, দেশের মানুষের প্রতি এটাই আমার বার্তা, “সবসময় যা করে এসেছি, ভবিষ্যতেও তাই করব। শেষ বল পর্যন্ত পাকিস্তানের জন্য লড়ে যাব।”

আন্তর্জাতিক

ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় বুধবার সকালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম রাউন্ডের নিরাপত্তা সংলাপ শুরু হয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাসুদ বিন মোমেন।যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস।

এর আগে দুদেশের মধ্যে সাত বার নিরাপত্তা সংলাপ হলেও এবারেই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে এই সংলাপ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে হচ্ছে।

এক টুইট বার্তায় পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা সংলাপ বুধবার সকালে শুরু হয়েছে।

দিনব্যাপী ওই বৈঠকে চারটি বড় সেশনে বিভিন্ন সাব-টপিক নিয়ে আলোচনা হবে। নিরাপত্তা সংলাপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেশন হচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতা।

আন্তর্জাতিক

‘প্রতিপক্ষ’ রাশিয়া এবং চীন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হাইপারসনিক অস্ত্র ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে সহযোগিতা করবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। তিন দেশের মধ্যে এই বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপি বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওই তিন দেশ অকাস নামে একটি সামরিক জোটের ঘোষণা করে। সে সময় তিন দেশের মধ্যে পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন প্রযুক্তি বিনিয়মের সিদ্ধান্ত হয়। এবার সেই সহযোগিতার পরিধি আরও বাড়াল ত্রিদেশীয় জোটটি।

মঙ্গলবার তিন দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার সশস্ত্র সাবমেরিন কর্মসূচি ভালোভাবে এগোচ্ছে। তাতে তারা সন্তুষ্ট। জোটের সদস্যরা পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা এই ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা হাইপারসনিক, কাউন্টার-হাইপারসনিক ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রসারিত করতে চাই। আমরা একে অন্যের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করব। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনের বিষয়টিও শেয়ার করব।

বিবৃতিতে ত্রিদেশীয় জোটটি আরও জানায়, আমাদের এই কাজের অগ্রসরের পর আমরা প্রতিরক্ষার অন্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়াব। তখন অন্য সহযোগীদেরও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

এদিকে, তিন দেশের এই পদক্ষেপে থেমে নেই তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত রাশিয়া ও চীন। মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের মতে, রাশিয়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত দেশ । চীনও আগ্রাসীভাবে এই প্রযুক্তির উন্নয়ন করছে।

গত মাসেই ইউক্রেনের দুইবার কিনজল হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করার দাবি করেছে মস্কো।

অন্যদিকে, পেন্টাগনের শীর্ষ জেনারেলের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন গত বছর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে একটি পারমাণু বহনে সক্ষম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে।