আন্তর্জাতিক

ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলা বাড়ার মধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একটি ভার্চ্যুয়াল ভাষণে আরও সাহায্যের জন্য মরিয়া আবেদন জানিয়েছেন।

ইউক্রেইনের স্বাধীনতা রক্ষায় জেলেনস্কি তার দেশে আরও বিমান পাঠানোর আহ্বান জানান।

রাশিয়ার বিমান হামলার মুখে ইউক্রেইনকে প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তিনি আবারও ‘নো-ফ্লাই জোন’ প্রতিষ্ঠার পুরোনো আর্জি জানিয়ে বলেন, “এই চাওয়া কি খুব বেশিকিছু?”

জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ার ভয়াবহ বিমান হামলার জবাব দেওয়া এবং নো-ফ্লাই জোন আরোপ করার অনুরোধ জানাচ্ছে ইউক্রেইন। রাশিয়া কেবল আমাদের দেশেই আক্রমণ করেনি, তারা আমাদের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে আক্রমণ শানিয়ে চলেছে।”

পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনে নো ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠায় রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে তাদের যুক্তি হল, এই ব্যবস্থা নেওয়া হলে রাশিয়ার সঙ্গে নেটোর সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।

তবে নো-ফ্লাই জোনে রাজি না হলেও নেটো দেশগুলো এ পর্যন্ত অস্ত্র ও মানবিক সহায়তাসহ অন্যান্য আরও সহযোগিতা, সমর্থন ইউক্রেইনকে করে আসছে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ইউক্রেইনকে যে সহায়তা করেছে সেজন্য জেলেনস্কি তার কংগ্রেসের ভাষণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেন, “আমাদের আরও সহায়তা দরকার।”

ইউক্রেইনকে সাহায্য-সহযোগিতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘ব্যক্তিগতভাবে জড়িত’ থাকারও কৃতিত্ব তাকে দেন জেলেনস্কি।

তবে তিনি কংগ্রেসকে আরওকিছু করা এবং রাশিয়ার সামরিক যন্ত্র থেমে না যাওয়া পর্যন্ত মস্কোর ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপাতে থাকার আহ্বান জানান। রাশিয়ান ফেডারেশনের সব রাজনীতিবিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেন তিনি।

সব আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে রাশিয়ার বাজার অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, “তাদের বাজার ছেড়ে দিন। কারণ, তারা আমাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।” রাশিয়ার আরও যেসব ফার্ম আছে সেগুলোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টির জন্যও মার্কিন আইনপ্রণেতাদেরকে আহ্বান জানান তিনি।

বিবিসি জানায়, জেলেনস্কির ভাষণের শুরুতেই মার্কিন কংগ্রেসে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এ সময় সবাই উঠে দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে সংবর্ধনা জানায়।

এরপর ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ থেকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এই নগরী নিত্যদিনই ক্ষেপণাস্ত্র আর বিমান হামলার শিকার হচ্ছে। কিন্তু এখনও এর পতন হতে দেয়নি। আমরা সেরকমটা এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারি না।”

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনই ইউক্রেইন সবচেয়ে বাজে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং তারা রাশিয়ার আগ্রাসন ৮ বছর ধরে প্রতিহত করে আসছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে সরাসরি এক আবেদন রেখে জেলেনস্কি তার বক্তব্য শেষ করেন। তিনি বাইডেনকে শান্তির নেতা হওয়ার আহ্বান জানান।

জেলেনস্কি বলেন, “আপনার দেশে শান্তি কেবল আপনি এবং আপনার জনগণের ওপর নির্ভর করে না, বরং আপনার পাশে যারা আছে এবং যারা শক্তিশালী তাদের ওপরও নির্ভর করে।”

শক্তিশালী কথাটির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এ শব্দের মানে কেবল বিশালকায় কিংবা পরাক্রমশালী হওয়া নয়, বরং সাহসী হওয়া এবং নিজেদের ও বিশ্বের নাগরিকদের জীবনের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত থাকাকে বোঝায়।”

“ইউক্রেইনের জনগণ নিজেদের পাশাপাশি ইউরোপ এবং গোটা বিশ্বের মূ্ল্যবোধের জন্য লড়াই করছে”, বলেন জেলেনস্কি।

আন্তর্জাতিক

চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) তিন ইউরোপীয়ান প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে কিয়েভের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রুশ আগ্রাসন শুরু পর কিয়েভে এটাই প্রথম কোনো বিদেশি মন্ত্রী পর্যায়ের সফর।

সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা পোল্যান্ডের মাতিউস মোরাভিয়েস্কি ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইয়ানেস ইয়ানশা । জেলেনস্কির কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এ সফর নিয়ে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতিউস মোরাভিয়েস্কি বলেছেন, ইতিহাস তৈরি হচ্ছে সেখানে থাকা আমাদের কর্তব্য। এই সফর আমাদের জন্য নয়, বরং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য—যাদের একটি অত্যাচারমুক্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা বলেন, এই সফরের উদ্দেশ হলো ইউক্রেন এবং তার স্বাধীনতার প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন প্রকাশ করা।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ২০তম দিনে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই তিন প্রধানমন্ত্রী এমন একটি শহরে যাচ্ছেন যেখানে এখনও বোমাবর্ষণ চলছে। যেখানে প্রায় ৩৫ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকই পালিয়ে গেছে এবং অনেকে ভূগর্ভস্থ স্টেশনে রাত কাটাচ্ছে।

এদিকে একই দিন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কয়েকটি আবাসিক এলাকায় পৃথক বোমা হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা। এ হামলায় অন্তত দুই জনের প্রাণহানি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে রাজধানীজুড়ে ৩৫ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করেছেন কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎচকো।

আন্তর্জাতিক

কানাডার সংসদে মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি ভাষণ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি।

চরম মুহুর্তে সাহায্য করার জন্য কানাডাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তবে তিনি ফের ইউক্রেনের আকাশে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করার বিষয়টি তুলেছেন।

তিনি অনুরোধ করেছেন রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে ন্যাটো জোট যেন নো ফ্লাই জোনের বিষয়টি নিয়ে ভাবে।

আর এ নো ফ্লাই জোন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, গত ২০ দিনে তিনি ও ইউক্রেনের জনগণ বুঝে গেছেন তাদের আসল বন্ধু কারা।

এ ব্যাপারে জেলেনস্কি বলেন, আপনারা কি ভাবতে পারেন বন্ধু দেশকে আমরা আহ্বান করছি দয়া করে আকাশ বন্ধ করুন, আকাশ সীমা বন্ধ করুন, বোমা হামলা থামান।

এর জবাবে তারা এ পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি। আর তারা বলছে আরেকটু ধৈর্য্য ধরুন!

জেলেনস্কি আরও বলেন, তবে গত ২০ দিনে এ ঘটনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের আসল বন্ধু কারা।

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার জন্য পশ্চিমারা মস্কোর ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলাকে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ‘নাৎসিমুক্ত’ করার একটি ‘বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করেছেন। অবশ্য পশ্চিমারা পুতিনের এই দাবিকে যুদ্ধের জন্য ভিত্তিহীন অজুহাত বলে অভিহিত করেছে।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ অর্থনীতির ওপর আরোপ করা হয়েছে কঠোর অবরোধ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে দেশটি থেকে। এই অবস্থা মারাত্মক প্রভাব ফেলছে সেদেশের নাগরিকদের রোজকার জীবনে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সেই আঁচ কিন্তু রুশবাসীর গায়েও লাগছে।জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, চাকরি হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।দেখে নেওয়া যাক রাশিয়ার দৈনন্দিন জীবনে এই যুদ্ধ কী প্রভাব ফেলছে:

রান্নার তেল, চিনি এবং অন্যান্য মৌলিক পণ্যের দাম বাড়ছে
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরপরই, রাশিয়ায় ভোক্তামূল্য ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মস্কো এবং অন্যান্য শহরের দোকানগুলোতে পণ্য মজুদ রাখার অভিযোগ পাওয়ার পর ওষুধ এবং অন্যান্য কয়েকটি জিনিস বিক্রি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রুবলের মান কমে গেছে।

এদিকে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন ডলার এবং ইউরো ব্যবহার করতে না পারার পর রাশিয়া তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চীনা ইউয়ান ব্যবহার করবে বলে দেশটির অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ সোমবার বলেছেন।

চিনির দামও ২০ শতাংশ বেড়েছে।

স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের দাম বেড়ে গেছে
বিধিনিষেধের কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় স্মার্টফোন এবং টেলিভিশনের দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

নাইক ও অ্যাপলের মত বড় ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়ায় তাদের পণ্য বিক্রি করছে না।

ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর প্রভাব
রাশিয়ান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুইফট আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা দেশটির আর্থিক লেনদেন অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে।

অ্যাপল, গুগল পে, মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে।

রাশিয়ানরা জামাকাপড় এবং খাবারের জন্য বেশি ব্যয় করছে
রাশিয়ার রাষ্ট্রচালিত প্রমসভ্যাজব্যাঙ্ক (পিএসবি) জানিয়েছে, রাশিয়ানরা ইলেকট্রনিক্স এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কিনছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাপড় ও খাবারের জন্য বেশি ব্যয় করেছে রুশরা। নিষেধাজ্ঞার কারণে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য মজুদের প্রবণতাও বেড়ে গেছে।

মুদ্রাস্ফীতি এবং মজুদ করার জন্য তাড়া-এই দুই কারণেই একজন সাধারণ রুশ নাগরিক মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফেব্রুয়ারির তুলনায় গড়ে ২১ শতাংশের বেশি ব্যয় করেছে।

এছাড়া ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে, ফার্মেসি বিক্রি ২২ শতাংশ এবং জামাকাপড়, জুতার চাহিদা এবং সুপারমার্কেটগুলোতে ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে বলে পিএসবি।

১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
৪ মার্চ পর্যন্ত বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ১০.৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনীতি মন্ত্রকের মতে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মূল্যস্ফীতি ৯.০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে গেছে।

সাপ্তাহিক মুদ্রাস্ফীতি আগের সপ্তাহে ০.৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দুই দশমিক ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির এই হার ১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ।

গণমাধ্যমের ওপর খড়গহস্ত
ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন ও সরকারের সমালোচান করায় বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের খবর পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ রাশিয়ানদের ভরসা এখন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

আন্তর্জাতিক

আগের তিনবারের মতো এবারের আলোচনারও প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা। যদিও তাদের মধ্যে আলোচনায় যুদ্ধ বিরতি হবে কি না এ নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে।

কারণ ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা দেবেন শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

আর এ কারণে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে মরিয়া হয়ে আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি।

সোমবার রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার আগে নিজেরে প্রতিনিধিদের কাছে জেলেনস্কি জানান, তারা যেন যে কোনো উপায়ে তার সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালান।

ইউক্রেনের স্থানীয় সময় রোববার রাতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের অংশ হিসেবে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেই সময় তিনি জানান, আমাদের প্রতিনিধিদের একটি পরিষ্কার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার বৈঠকের ব্যবস্থা করা।

তিনি আরও বলেন, আমি জানি এ বৈঠকের জন্য সবাই অপেক্ষা করে আছে। যদিও এটি একটি কঠিন গল্প। একটি কঠিন পথ। কিন্তু এই পথই আমাদের দরকার।

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন পরিস্থিতি এবং সেখানে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম পশ্চিমাদের রাশিয়াবিরোধী প্রচারণার প্রতিধ্বনি করছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দর ভি মানতিতস্কি। একে ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক নষ্ট করার ‘ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’ বলে জানান তিনি।

রোববার বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, রেডিও ও টিভি চ্যানেলের প্রধানদের কাছে এক খোলা চিঠিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন। চিঠিতে ইউক্রেনে কেন রাশিয়া হামলা চালিয়েছে তার ব্যাখ্যাও দেন রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত চিঠিতে আরও বলেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং সেখানে রাশিয়ার পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশি মিডিয়ার একটি অংশের দৃষ্টিভঙ্গি পক্ষপাতমূলক। এ দৃষ্টিভঙ্গিকে সেই শক্তিগুলোর ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টার ফল বলে মনে করি যারা সর্বদা রুশ ফেডারেশন এবং বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাকে ক্ষুন্ন করতে চেয়েছিল, যা ৫০ বছর আগে শুরু হয়েছিল।

১৯৭১ সালের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশিরা ভারত ও তৎকালীন ইউএসএসআর-এর সক্রিয় সমর্থনে অবাঙালি নিপীড়কদের শাসন উৎখাত করেছিল। আমি আশা করি যে আমার খোলা চিঠির মাধ্যমে, আপনার পাঠকরা ইউক্রেনের চারপাশের উন্নয়ন সম্পর্কে একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হতে সক্ষম হবেন।

পশ্চিমা মূলধারার মিডিয়া থেকে রাশিয়াবিরোধী প্রচার এবং স্পষ্ট রুশো-ফোবিক হিস্টিরিয়ার পটভূমিতে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশি কিছু সংবাদপত্র এবং সম্প্রচারকারীরা ব্যাপকভাবে পশ্চিমা প্রতিধ্বনি ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, সম্পাদকদের কাছে তার চিঠিটি ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ করে সামরিক অভিযানের পেছনের লক্ষ্য এবং কাজগুলো আবারও বাংলাদেশি পাঠকদের কাছে ব্যাখ্যা করার একটি প্রচেষ্টা। লক্ষ্যগুলো হলো- ইউক্রেনের রুশভাষী বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা যারা আট বছর ধরে কিয়েভ শাসন দ্বারা গণহত্যার শিকার, নব্য ফ্যাসিবাদ দূর করতে ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশ রোধ করা এবং ইউক্রেনে ন্যাটো সামরিক ঘাঁটি স্থাপন বন্ধ করা।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের কাজগুলো হলো- ডিমিলিটারাইজ করা এবং ইউক্রেনকে নাৎসি মতাদর্শ থেকে মুক্ত করা, মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ইউক্রেনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নব্য ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটানো, রাশিয়ান ফেডারেশনের সীমান্তে সামরিক হুমকি দূর করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকিস্বরূপ ইউক্রেনের আক্রমণাত্মক সত্তাকে নিরস্ত্র করা এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউক্রেনের বেসামরিক জনসংখ্যা এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং শাস্তি দেওয়া। আমরা ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করার পরিকল্পনা করি না। আমরা ইউক্রেনের জনগণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত নই। আমরা জোর করে কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা বহুবার ব্যাখ্যা করেছি যে ইউক্রেনের পরিস্থিতি এমনভাবে বিকশিত হয়েছে যে এটি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করে আসছে।

আন্তর্জাতিক

ইরাকের কুর্দিস্তানে আঘাত এনেছে এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র। স্থানীয় সময় রোববার সকালে ছোড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মার্কিন কনস্যুলেটেও আঘাত হানে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরান থেকে ছোড়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

এবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরান। শুধু তাই নয়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ‘গোপন ইসরাইলি ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে দেশটি।

ইরাকে অবস্থিত ইরানের রাষ্ট্রীয়-টিভির এক সংবাদদাতা রোববার একথা জানিয়েছেন বলে আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সিপাহ নিউজ একটি বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডস কর্পস ওই শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইহুদিবাদীদের উদ্দেশ্য করে নিক্ষেপ করেছে।

সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দুই কর্মকর্তা নিহত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর রোববার ইরবিলে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দুই কর্মকর্তা নিহতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলে পরিচিত ইসরাইলের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড মঙ্গলবার সতর্ক করেছিল যে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের চিরশত্রু ইসরাইলকে ‘এই অপরাধের মূল্য দিতে হবে’।

রোববার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরাকের পূর্ব দিকের সীমান্ত থেকে এসেছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাই সেগুলো ইরান থেকে ছোড়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল।

কুর্দি নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, রোববার ‘বারোটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ কুর্দিস্তানের রাজধানী ইরবিলে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটে আঘাত হানে।

কুর্দিস্তান কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইরাক ও কুর্দিস্তানের সীমানার বাইরে থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছিল।ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পূর্ব দিক থেকে আসছিল।

হামলার জেরে মার্কিন কনস্যুলেটের ক্ষতি না হলে সামনে থাকা স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল কুর্দিস্তান ২৪-এর অফিস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি বলে ইরবিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

কুর্দিস্তান অঞ্চলসহ ইরাকে সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে আনছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে মার্কিন সেনারা।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারিতে ভোগ্য পণ্যের মূল্য আরও বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে আর ইউক্রেইনের যুদ্ধের কারণে অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সামনের মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

রুটিন পরীক্ষার সময় ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে ভারতের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘নিক্ষিপ্ত হয়ে’ ‘দুর্ঘটনাবশত’ পাকিস্তানে গিয়ে পড়েছে জানিয়ে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে দিল্লি।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃবিতে বলেছে, বিষয়টি তারা ‘গুরুত্বের সঙ্গে’ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ভারতের ওই ক্ষেপণাস্ত্র তাদের দীর্ঘদীনের শত্রু পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে পড়ে গত বুধবার। তবে ওই ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ওয়ারহেড (বিস্ফোরক) ছিল না।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন ঘটনা ‘অপ্রীতিকর পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের তরফ থেকে। এরপরই ভারত বিবৃতি দিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করল ভারত।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “৯ মার্চ নিয়ম মাফিক পরীক্ষার সময়, কারিগরি ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাবশত ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষিপ্ত হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক, তবে কারো প্রাণহানি হয়নি, এটা স্বস্তির খবর।”

আন্তর্জাতিক

জার্মান চ্যান্সেরল ওলাফ স্কলজ ও ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন।

আর এই ভার্চুয়াল বৈঠকে অনতিবিলম্বে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ ও স্কলজ।

জার্মানির সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিনকে ওলাফ স্কলজ ও এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অনুরোধ করেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যেন আলোচনার মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটায়।

রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের প্রতি তারা অনুরোধ করেছেন যেন তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। পুতিন তাদের এ অনুরোধ রাখার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বন্দর শহর মারিউপোল। এ শহরে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশ্বনেতারা।

রেডক্রসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মারিউপোলের অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। খাবার ফুরিয়ে আসছে। পানি ফুরিয়ে আসছে। দ্রুত এ শহর থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে যেতে হবে।

মারিউপোল থেকে সাধারণ মানুষকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া এই শহরে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি করতে আগ্রহী না।