আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রধান হিসেবে ভারতীয় কশ্যপ প্যাটেলকে মনোনীত করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার (১ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

এর মাধ্যমে বর্তমান এফবিআই প্রধান ক্রিস্টোফার রেইকে বিদায় করার ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেছিলেন প্যাটেল। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নিরাপত্তা ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে প্রকাশ্যে সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে রাম মন্দির সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘১৫০০ সালেও সেখানে (অযোধ্যায়) একজন হিন্দু দেবতার মন্দির ছিল। সেটা ধ্বংস করা হয়। তারা (ভারতীয় হিন্দুরা) ৫০০ বছর ধরে সে মন্দির পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছে।’

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই এফবিআইকে ঢেলে সাজানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমর্থন না জানালে যেকোনো কর্মীকে এই সংস্থা থেকে বহিষ্কার করা উচিত।

সেপ্টেম্বরে শন রায়ান শো শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘এফবিআইর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা শুধু গোয়েন্দাগিরিতে ব্যস্ত থাকে। আমি ওই (এফবিআই) ভবনে কর্মরত সাত হাজার কর্মীকে বের করে এনে তাদেরকে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে মোতায়েন করব, যাতে তারা অপরাধীদের পিছে ধাওয়া করতে পারেন। আপনারাও এক ধরনের পুলিশ। পুলিশের মতো আচরণ করুন। পুলিশের দায়িত্ব পালন করুন।’

এফবিআইর বর্তমান পরিচালক রেই’র চাকরির মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত। তবে সেই মেয়াদের আগেই যে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে, ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় এটা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেল। প্যাটেলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান এই আবেদন করেছেন। বুধবার আইসিসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সহিংসতার সময় এবং তার পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত অপরাধগুলোর তদন্ত করা হয়েছে।

একটি বিস্তৃত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পর কার্যালয় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে বর্তমানে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও মিয়ানমার প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং যিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিশেষ করে নির্বাসন এবং নিপীড়নের মতো অপরাধমূলক দায় বহন করেন। এসব অপরাধ মিয়ানমার ও আংশিকভাবে বাংলাদেশেও সংঘটিত হয়েছে।

করিম খানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমার কার্যালয় দেখতে পেয়েছে যে, এই অপরাধগুলো ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্রবাহিনী তাতমাদাও, জাতীয় পুলিশ, সীমান্তরক্ষী পুলিশ এবং কিছু অরোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকের সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে।’

মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদনের বিষয়ে করিম খান বলেছেন, এটি মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন। শিগগির আরও আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেছেন, এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকদের জন্য এটি নির্ধারণের সময় এসেছে যে, এই আবেদনটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করে কিনা। যদি আইসিসির স্বাধীন বিচারকরা পরোয়ানাটি জারি করেন,

তবে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার সব প্রচেষ্টা আদালতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করব। আমরা এই মনোযোগ আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে অব্যাহত রাখব। কারণ আমরা এই পরিস্থিতিতে আরও আবেদন জমা দেব।

আন্তর্জাতিক

এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হল, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জের ধরে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, উভয়পক্ষই এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে। এরপর বুধবার ভোর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হল, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জের ধরে।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ১০-১ ভোটে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পরপরই হোয়াইট হাউসে বক্তৃতা দিতে আসেন বাইডেন।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সঙ্গে তার কথা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪ টায় যুদ্ধবিরতি শুরু করতে তারা দুজনেই সম্মত হয়েছেন।

“বৈরিতার স্থায়ী অবসানের লক্ষ্য নিয়ে এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পরিকল্পনা করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের যা অবশিষ্ট আছে, তাদের আর ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে দেওয়া হবে না।”

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। একই সময়ে লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েল সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে, যাতে হিজবুল্লাহ সেখানে আবার কোনো অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ না করতে পারে।

এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাসান ফাদলাল্লাহ লেবাননের আল জাদেদ টিভিকে বলেছেন, এ চুক্তি লেবাননের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সম্প্রসারণকে সমর্থন করলেও হিজবুল্লাহ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

“হাজারো মানুষ আমাদের প্রতিরোধে যোগ দেবে। আমাদের নিরস্ত্র করার যে প্রস্তাব ইসরায়েলি দিয়েছিল, সেটা ভেস্তে গেছে।”

হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে আসা ইরান, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র দল হামাস কিংবা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসা হুতি বিদ্রোহীরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন এক এক্স পোস্টে লিখেছে, “এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ইসরায়েলি ও লেবানিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহু মাস ধরে চলা আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি।”

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিব বলেছেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে লেবানিজ সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ৫ হাজার সদস্যকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা হবে।

ইসরায়েলের নেতা নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রস্তুত। কিন্তু হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করলে তার ‘কঠোর জবাব’ ইসরায়েল দেবে।

তার ভাষায়, এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলকে এখন ইরানের হুমকির বিষয়ে আরো মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিশ্রাম, রসদের সরবরাহ বাড়ানো এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আরও বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যাপক শ্রম সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রম সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় শ্রম ও ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি একথা বলেন।

প্রফেসর ইউনূস প্রতিনিধি দলকে বলেন, “আমরা আমাদের শ্রম আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডের সম মানসমম্পন্ন করতে চাই। এটা আমার অঙ্গীকার।” তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কেবলমাত্র দেশের শ্রম আইন সংস্কার করতে এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ নিরসনের জন্য একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন শ্রম বিভাগের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি থিয়া মেই লি ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি ফে রড্রিগেজ।

দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শ্রম অধিকার গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশ থেকে পোশাক ও জুতা ক্রয়কারী শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো শ্রম আইন সংস্কার ও বাংলাদেশের কারখানায় শ্রমিক-বান্ধব পরিস্থিতি তৈরিতে অধ্যাপক ইউনূসের পদক্ষেপকে সমর্থন করে।

সরকার ও স্থানীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৮-দফা চুক্তিসহ পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে কেলি ফে রড্রিগেজ বলেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত সাড়ে তিন মাসে শ্রম খাতের জন্য যা করেছেন, ‘সেগুলো সবই তার বিস্ময়কর সাক্ষ্য।

মার্কিন কর্মকর্তারা মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে লাখো গার্মেন্টস ও পাদুকা শ্রমিককে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কারখানায় ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রতি বছর মজুরি পর্যালোচনার আহ্বান জানান।

পোশাক কারখানায় ন্যূনতম মজুরির সুবিধাদান প্রসঙ্গে থিয়া মে লি বলেন, ‘এটি ব্যবসার জন্য ভালো ও অর্থনীতির জন্যও ভালো।’ তিনি বলেন, কর্মী ইউনিয়ন হল ‘গণতন্ত্রের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র।’

তিনটি শীর্ষ মার্কিন ব্র্যান্ড পিভিএইচ, ক্যালভিন ক্লেইন এবং গ্যাপ ইনকর্পোরেটেডের সিনিয়র কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

পিভিএইচ কর্পোরেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল ব্রাইড বলেছেন, তারা বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারকে সমর্থন করেছেন। তারা কম্বোডিয়ায় অনুরূপ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন।

প্রফেসর ইউনূস ব্র্যান্ডগুলোকে প্রতি জানুয়ারিতে তাদের অর্ডারের মূল্যবৃদ্ধি ঘোষণা করার আহ্বান জানান, যাতে বাংলাদেশের নির্মাতারা সেই অনুযায়ী শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে পারে।

বৈঠকে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডেবও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রফেসর ইউনূসের ব্যাপক শ্রম সংস্কারকে পূর্ণ সমর্থন করে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার সাথে অংশীদার হতে চাই।’

আন্তর্জাতিক

“আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদেরই লড়াই করতে হবে।”

জুলাই মাসের কোনো একদিন কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ছোট্ট একটি নৌকায় করে নাফ নদী পেরিয়ে রফিক প্রবেশ করেন মিয়ানমারে, যে দেশ থেকে তিনি জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিলেন ২০১৭ সালে। তার উদ্দেশ্যে ছিল, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে যোগ দেওয়া।

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের ওই আশ্রয় শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। গত এক বছরে সেখানে সশস্ত্র দলগুলোর সদস্য সংগ্রহ এবং সহিংসতা- দুটোই বেড়েছে। ৩২ বছর বয়সী রফিকের মত হাজারো রোহিঙ্গা সেখান থেকে মিয়ানমারে ফিরে গেছেন যুদ্ধে যোগ দিতে। ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত অন্তত চারজনের বক্তব্য এবং দুটি ত্রাণ সংস্থার অভ্যান্তরীণ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জেনেছে রয়টার্স।

রফিক রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদেরই লড়াই করতে হবে।”

একহারা গড়নের শ্মশ্রুমণ্ডিত এই যুবক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে এসেছেন, কারণ সেখানে যুদ্ধ করার সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আশ্রয় শিবিরেই রফিকের সঙ্গে রয়টার্সের কথা হয়। তিনি বলেন, “লড়াই করা ছাড়া আমাদের আর পথ নেই।”

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে ২০১৬ সালে দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা।

মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হচ্ছেন।

রোহিঙ্গাদের অনেকে আবার সেই সব গোষ্ঠীর হয়ে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন, তাদের নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে। তারা লড়াই করছেন রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে।

রয়টার্স ১৮ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরের ভেতরে কীভাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সংগঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কথা বলেছেন। পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর লেখা দুটো অভ্যন্তরীণ ব্রিফিং দেখেছে রয়টার্স।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহ করেছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া, রোহিঙ্গাদের যুদ্ধে নামাতে জান্তা বাহিনীর অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রলোভন এবং এসব বিষয়ে বাংলাদেশি কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়টার্স পেয়েছে।

সেখানকার রোহিঙ্গা যোদ্ধা, ত্রাণকর্মী এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে রয়টার্স কথা বলেছে যারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। আর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মুসলমান রোহিঙ্গারা সুরক্ষা চেয়েছিল। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান রয়টার্সকে বলেন, কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) খুব বেশি কর্মী আছে বলে তিনি মনে করেন না।

কিন্তু নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।

অধ্যাপক খান বলেন, “দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে হতাশায় ভোগা শরণার্থীরা সহজেই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি অপরাধী চক্রের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে। এর প্রভাব এ আঞ্চলের অন্য দেশের ওপরও পড়বে।”

গত বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা।

তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানে পৌঁছানোর পর জান্তার সেনারা তাকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আফনা বলেন, “আমি যখন জান্তা সেনাদের সঙ্গে থাকতাম, তখন আমার মনে হত, আমি সেই লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, হত্যা করেছে।”

ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়ছে জান্তা বাহিনী। মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায় আরাকান আর্মিকে সমর্থন দিচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

মিয়ানমারে টিকে থাকা রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে আরাকান আর্মি দায়ী, আর তাদের সঙ্গে লড়ার বিষয়ে আরএসও যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে, চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে সেই বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছিল।

আবু আফনা বলেন, “আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।”

আবু আফনার ভাষ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ যুগিয়েছে।

একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং আরেক রোহিঙ্গা যুবকও রয়টার্সকে একই কথা বলেছে। ওই দ্বিতীয় রোহিঙ্গা যুবকের ভাষ্য, তাকে জান্তার পক্ষে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

তারা এটাও বলেছেন, জান্তা বাহিনী এর বিনিময়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথিপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের।

কারও কারও জন্য নাগরিকত্বের নথিপত্র দেওয়ার বিষয়টি খুবই খুবই লোভনীয় একটি প্রস্তাব, কারণ মিয়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এখন তাদের জীবন আবদ্ধ বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে।

আবু আফনা বলেন, “আমরা টাকার জন্য যুদ্ধে যাইনি। গিয়েছিলাম নাগরিকত্বের জন্য, ফিরে পেতে চেয়েছিলাম জন্মভূমি।

মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ‘নাগরিকত্ব ও আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি ও জবরদস্তি’ করে জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য দলে টানার তথ্য একটি ত্রাণ সংস্থার জুন মাসের ব্রিফিংয়ে রয়টার্স দেখেছে।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধার তথ্য অনুযায়ী, প্রলোভন দেখিয়ে ১৩ বছরের এক শিশুকে পর্যন্ত জোর করে যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তা বাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায় বলে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন । তারা এও মনে করেন, বাংলাদেশ কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে তাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দর কষাকষির জায়গা আরো বাড়বে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের রয়টার্সকে বলেছেন, তিনিও মনে করেন, সরকারের এখন রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

কাদের বলেন, বিগত বাংলাদেশ সরকারের আমলে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিলেও সার্বিক দিক নির্দেশনা না থাকায় সেভাবে সমন্বয় ছিল না।

রোহিঙ্গা যোদ্ধা আবু আফনা রয়টার্সকে বলেছেন, এ বছরের শুরুর দিকে কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মংডুতে নিয়ে যান।

সেদিনের এক কর্মকর্তার কথা থেকে উদ্ধৃত করে আফনা বলেন, “এটা তোমাদের দেশ, তোমরা লড়াই করে তোমাদের অধিকার ফিরিয়ে নাও।”

তবে রয়টার্স স্বাধীনভাবে তার এ কথার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

‘আতঙ্কের মধ্যে বসবাস’

রাখাইন রাজ্যে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও উন্নত মহড়া চালানো আরাকান আর্মিকে হটিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

তবে মংডুর লড়াই ছয় মাস ধরে চলছে এবং রোহিঙ্গা যোদ্ধারা বলছে, অতর্কিত হামলাসহ কৌশল বিদ্রোহীদের অভিযানের গতি কমিয়ে রেখেছে।

পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “আরাকান আর্মি ভেবেছিল তারা খুব শিগগিরই বিজয় অর্জন করবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে মংডু তাদের ভুল প্রমাণ করেছে।”

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের এবং বিষয়টির সাথে পরিচিত অন্য এক ব্যক্তির ভাষ্য, এ বছরের শুরুর দিকে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই আলোচনায় কোনো সমঝোতা হয়নি।

তারা রয়টার্সকে বলেছেন, রোহিঙ্গা বসতিতে আরাকান আর্মির আক্রমণের কৌশলে বাংলাদেশ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে, কারণ সহিংসতার কারণে শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর চেষ্টায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

যদিও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের অবস্থানে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

বর্তমানে কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আরএসও ও আরসা সেখানে প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়ছে।

মারামারি এবং গোলাগুলি এখন রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাতে মানবিক সহায়তাকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি রয়টার্সকে বলেন, ২০১৭ সালে শিবিরগুলো প্রতিষ্ঠার পর এখনই সহিংসতার ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

“চলতি বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে। বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন করছে। এমনকি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য হুমকি দিচ্ছে।”

বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককেনস সতর্ক করে বলেছেন, শরণার্থী শিবিরের জন্য বরাদ্দ আন্তর্জাতিক তহবিল আগামী ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

শরণার্থীদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উপার্জনের পথ না পেলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।”

গত মে মাসে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরিৎ উল্লাহ নিয়মিত রেশন জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এক সময় ধান ও চিংড়ি চাষ করতেন শরিৎ। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ এখন পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে কিছুই নেই। আমরা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি।”

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনের কাছে ‘এন্টি পার্সনাল’ স্থলমানই সরবরাহ করার ‘নতুন হুমকির’ নিন্দা করেছেন।

রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানানোর কয়েকদিন পর তিনি এ নিন্দা করলেন।

এন্টি পার্সনাল মাইন নিষিদ্ধ চুক্তির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে কম্বোডিয়ায় একটি সম্মেলনে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বজুড়ে ল্যান্ডমাইন অপসারণ ও ধ্বংসের প্রশংসা করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘তবে হুমকিটি রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- সমঝোতায় উপনীত হওয়া কিছু পক্ষের নতুন করে এন্টি পার্সনাল মাইনগুলোর ব্যবহার, সেইসাথে কিছু পক্ষের এই অস্ত্রগুলো ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে পড়া।’

তিনি সমঝোতায় স্বাক্ষরকারীকে ১৬৪টি রাষ্ট্রের প্রতি ‘তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ ও সমঝোতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এই সমঝোতায় সম্মত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন রয়েছে। তবে রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র এ সমঝোতায় সম্মত হয়নি।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাহবানা গুতেরেসের পক্ষ থেকে তার এ বক্তব্যটি প্রদান করেন।

মন্তব্যটি বিশেষভাবে ইউক্রেনের দিকে ইঙ্গিত করেছে কি না, তা জানতে এএফপি গুতেরেসের অফিস ও মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করেছে।

সম্মেলনে ইউক্রেনীয় দল মার্কিন ল্যান্ডমাইন সরবরাহ সম্পর্কে এএফপি’র প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনের ঘোষণা যে এটি কিয়েভে কর্মী-বিরোধী ল্যান্ডমাইন পাঠাবে। অবিলম্বে মানবাধিকার কর্মীরা এর তীব্র নিন্দা জানায়।

সম্মেলনটি কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটি ১৯৬০-এর দশক থেকে তিন দশকের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী বোমা ও মাইন বিস্ফোরিত দেশগুলোর অন্যতম কম্বোডিয়া।

১৯৭৯ সাল থেকে কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০,০০০ মানুষ স্থলমাইন ও অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক বিস্ফোরণে নিহত এবং এর দ্বিগুণ লোক আহত হয়।

আন্তর্জাতিক

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের মাঝে বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট করার বিষয়ে আলোচনা বেশ জোরে-শোরেই হচ্ছে। তবে এ নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও পর্যবেক্ষকরা।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষ বিশিষ্ট। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ৩০০ আসনের এই কক্ষের সদস্যদের নিয়েই এতোদিন গঠিত হয়েছে সরকার। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা সরকারের ইচ্ছারই কেবল প্রতিফলন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই কক্ষের সংসদ হলে উচ্চ কক্ষের অনুমোদনের ভিত্তিতেই কেবল বাস্তবায়ন হবে নিম্নকক্ষের সিদ্ধান্ত। এতে জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিম্নকক্ষে এলেও প্রতিষ্ঠা পাবে ক্ষমতায় ভারসাম্য। ফলে জনগণের ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসন অবসানের পর ভবিষ্যতে যেন কোনো দল সেই সুযোগ না পায় মূলত সেই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকেই দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের আলোচনা হালে পানি পেয়েছে।

অনেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশনকে এই পদ্ধতি আনার সুপারিশ করতে প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। তবে এমন প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের সংশোধন দরকার বলে মনে করছে ওই সংস্কার কমিশন। তাদের মতে সংবিধান সংস্কার কমিশনকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, দুই কক্ষের সংসদীয় পদ্ধতি চালু করতে হলে সংবিধানে সেই বিধান আনতে হবে। আবার সংবিধান সংশোধন করতে হলেও নিতে হবে দলগুলোর মতামত।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এই সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনের সময়কার এই সিইসি বলেন, আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত। এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সংসদ কয় কক্ষের হবে এটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, সংসদীয় পদ্ধতি থাকবে। আমেরিকান ওই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সিস্টেম আনার দরকার নেই। নির্বাচনকে সরলীকরণ করতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য যদি বন্ধ করা না যায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কেননা, মনোনয়নপত্র বাণিজ্যটাই নির্বাচনটাকে ট্রেডিংয়ে এনেছে। ২০ কোটি টাকা দিয়ে কিনবো, ১০ কোটি টাকা ছড়াবো। পাঁচ বছর থাকলে দুইশ, আড়াইশ কোটি টাকা লাভ করবো, সোজা হিসাব। এমপি চরিত্র নষ্ট হচ্ছে এইজন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশল ইউনিভার্সিটিরি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারি বলেন, পলিটিকস নিডস ইমিডিয়েট বেনিফিট। সবাই তাৎক্ষণিক সুবিধা চায়। বর্তমান সরকারের উচিত আগে দ্রব্যমূল্যে হাত দেওয়া। তাদের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া। সেটাই করা উচিত। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সবগুলো দলের না হলেও অন্তত বড় দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে করা যেতে পারে।

মানবাধিকার সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংসদের দুটি কক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। এই ব্যবস্থা চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা এই সুপারিশ সংস্কার কমিশনকেও দিয়েছি।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশন প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক ধরনের মতামত আছে। অনেক রকম গুরুত্বপূর্ণ, অভিনব, সৃজনশীল প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনেও এমন প্রস্তাব এলে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো। সব পর্যালোচনা করেই সরকারকে সুপারিশ দেবো। কিছু সুপারিশ নতুন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করবে।

আন্তর্জাতিক

কদিন আগেই শেষ হলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। আর এ বছরই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলো ভারতে।

দুটি দেশেরই আইনসভা দুই কক্ষবিশিষ্ট। বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশই দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার রীতি অনুসরণ করে।

দুই কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা বা বাইক্যামেরালিজম হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে আইনসভা দুটি পৃথক কক্ষে বিভক্ত থাকে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ শাসনব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও পর্যালোচনা নিশ্চিত করা।

বিপরীতে এক কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা বা ইউনিক্যামেরালিজম হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে আইনসভা শুধুমাত্র একটি কক্ষ নিয়ে গঠিত। এটি একটি বিকল্প মডেল হিসেবে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে কিছুটা সরল করে তোলে।

দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার মূল উদ্দেশ্য হলো একক কক্ষের হাতে ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ ও অপব্যবহারের ঝুঁকি এড়ানো। সমান ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কক্ষের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দিলে একক কক্ষের অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার শঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হলো, সরকারের ক্ষমতার যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা এবং সরকারের কর্মকাণ্ডকে সীমিত রাখা।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, একক কক্ষ এই ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করতে পারে না, কারণ সেই কক্ষের বেশিরভাগ সদস্য সাধারণত সরকারদলীয় প্রতিনিধিরা হয়ে থাকে এবং তারা সরকারের নির্দেশ অনুসারে ভোট দেয়। সমান ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় একটি কক্ষ থাকলে, সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।

এ ছাড়া দুই কক্ষবিশিষ্ট ব্যবস্থা আইনসভার প্রতিনিধিত্বমূলক ক্ষমতা বাড়ায়, কারণ এতে বিভিন্ন ভোটিং পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। ভিন্ন ভোটিং পদ্ধতির ফলে সংসদে বিভিন্ন স্বার্থ ও মতামতের সমন্বয় ঘটে, যা একে আরও গণতান্ত্রিক ও জনগণের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে।

৭৮ দেশে দুই কক্ষের সংসদ

আন্তর্জাতিক সংসদীয় ইউনিয়নের (আইপিইউ) দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯০টি জাতীয় সংসদের মধ্যে, ৭৮টি দুই কক্ষবিশিষ্ট (মোট ১৫৬টি কক্ষ) এবং ১১২টি এক কক্ষবিশিষ্ট। অর্থাৎ সদস্য দেশগুলোতে মোট ২৬৮টি সংসদীয় কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। আইপিইউর সদস্য ১৮১টি।

প্রাচীন গ্রিস ও রোমেও দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থার চর্চা ছিল। যদিও এগুলো পুরোপুরি দ্বিকক্ষীয় কাঠামো ছিল না। এথেন্সে শাসন ব্যবস্থায় দুটি প্রধান সংস্থা ছিল। প্রথমটি হলো এক্লেসিয়া, যেখানে সাধারণ নাগরিকেরা অংশ নিতেন। দ্বিতীয়টি অ্যারিওপেগাস বা পরামর্শদাতা পরিষদ।

রোমে সিনেট অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করত, আর প্লেবিয়ান অ্যাসেম্বলি সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগ ও মতামত প্রকাশের একটি মঞ্চ ছিল। এসব ব্যবস্থা বিভিন্ন সামাজিক স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষার ধারণা প্রতিফলিত করত। এ ধরনের প্রাথমিক কাঠামো পরবর্তী দ্বিকক্ষীয় আইনসভাগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।

প্রথম দ্বিকক্ষ সংসদ ব্রিটেনে

ইংলিশ পার্লামেন্টই প্রকৃতপক্ষে প্রথম দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গঠন করে। সেখানে হাউস অব লর্ডস ও হাউস অব কমন্স নামে দুটি কক্ষ ছিল। প্রথমটি অভিজাত ও ধর্মীয় নেতাদের জন্য। দ্বিতীয়টি সাধারণ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করত।

এই বিভাজন তখনকার সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ভূমিকা ও স্বার্থের পার্থক্যের কারণে প্রয়োজন হয়েছিল। আর এই কাঠামো পরবর্তী সময়ে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থাগুলোর জন্য একটি আদর্শ হয়ে ওঠে, যেখানে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয় ১৮ শতাব্দীতে। এতে রয়েছে সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস নামে দুটি কক্ষ। দেশটিতে নির্বাচন ব্যবস্থাও অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা। ১৮ ও ১৯ শতাব্দীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গঠিত হয়। ফ্রান্স ও ইতালির মতো ইউনিটারি রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছিল, যেখানে অভিজাত শ্রেণি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভাজন নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে, পরে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মতো ফেডারেল রাষ্ট্রে আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছিল। ইউরোপীয় দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থার ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এরিক হবসবাম ও ম্যাক্স ওয়েবারের মতো রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের লেখায়।

এরপর বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষত কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো ফেডারেল রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গঠিত হয়। কিছু ইউনিটারি রাষ্ট্র যেমন ফ্রান্স ও ইতালিতেও দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা রাখা হয় যাতে আইন প্রণয়ন এবং শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য থাকে।

দ্বিকক্ষীয় আইনসভা ব্যবস্থার বিকাশের ইতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এটি প্রথমে সামাজিক শ্রেণির ভারসাম্য এবং আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য গড়ে ওঠে, এবং পরবর্তী সময়ে ফেডারেল ও ইউনিটারি রাষ্ট্রগুলোতে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়।

নিঃসন্দেহে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো। তবে এটি বিশেষত বড় ও বৈচিত্র্যময় সমাজের জন্য কার্যকর, যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর বা অঞ্চলের স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন।
ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে দ্বিকক্ষ সংসদ

বাইক্যামেরাল সিস্টেম মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে। দুটি কক্ষে আইন পাসের বাধ্যবাধকতার কারণে গভীর পর্যবেক্ষণ ও ভারসাম্য নিশ্চিত হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সমন্বয় অঙ্গরাজ্য ও জনসংখ্যার ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।

দ্বিকক্ষীয় কাঠামো বিভিন্ন অঞ্চলের বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। এটি বৃহৎ ফেডারেল রাষ্ট্রে বিশেষভাবে কার্যকর। যেমন ভারতের রাজ্যসভা রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে লোকসভা জনগণের। ফলে প্রতিনিধিত্বের মধ্যেও বৈচিত্র্য দেখা যায়।

কোনো আইন পাসের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষীয় আইনসভায় আইনের গভীর পর্যালোচনা হয়। আইন পাসের প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় কক্ষ মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ দেয়। এতে ত্রুটি সংশোধন সহজ হয় পাশাপাশি তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা আইন প্রণয়নের ঝুঁকি কমে।

দুটি কক্ষের পৃথক কার্যক্রম রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অযাচিত আধিপত্য রোধ করে। তবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বাধ্যবাধকতা প্রক্রিয়া আইন পাসের প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ করে তোলে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া দুটি কক্ষের মধ্যে মতানৈক্য ও সংঘাত দেখা দিলে আইন প্রণয়ন জটিল হয়ে পড়ে। যেমন কোনো কক্ষে আইন পাস হলে অন্য কক্ষে তা প্রত্যাখ্যাত হতে পারে, যা রাজনৈতিক অচলাবস্থা পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া দুটি কক্ষ পরিচালনা করতেও বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়, যা অনেক সময় রাষ্ট্রের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। ছোট বা একজাতীয় রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষীয় ব্যবস্থা জটিলতা সৃষ্টি করে।

দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় সাধারণত নিম্নকক্ষের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরই প্রতিফলন। দেশভেদে নির্বাচন প্রক্রিয়া আলাদা হতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থা যেমন

উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যেমন কিছু দেশে উচ্চকক্ষের সদস্যরাও সরাসরি নির্বাচিত হন। আবার পরোক্ষ নির্বাচনও দেখা যায়। যেমন বিভিন্ন প্রাদেশিক পরিষদ বা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধির মাধ্যমে সদস্য নির্বাচন করা হয়। কিংবা রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই কক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া ভিন্ন এবং এটি দেশের ফেডারেল কাঠামো এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। সিনেটের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।

কংগ্রেসের দুই ধরনের সদস্যের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। এবারের নির্বাচনে মার্কিন নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসনের সব কটিতেই ভোট হয়েছে। অন্যদিকে সিনেট সদস্যদের মেয়াদ হয়ে থাকে ছয় বছর। তবে প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ ব্যবস্থা রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইনের একটি জটিল ব্যবস্থা, যা দেশটির সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত।

‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ইলেকটরস বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং তারাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করেন।

কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেট বা অঙ্গরাজ্যে ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি।

যদিও দুই কক্ষ ব্যবস্থা এখনো বিশ্বের অনেক দেশে কার্যকরী, তবে এর কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে। নিউজিল্যান্ড ১৯৫১ সালে দ্বিকক্ষীয় কাঠামো বাতিল করে ইউনিক্যামেরাল ব্যবস্থায় ফেরে।

দ্বিকক্ষীয় আইনসভা বৃহৎ এবং বৈচিত্র্যময় রাষ্ট্রের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা হলেও চীনের আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট। এর নাম হলো ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস। অন্যদিকে রাশিয়ার আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। এটি ফেডারেল অ্যাসেম্বলি নামে পরিচিত। এটি দেশের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে কার্যত রাষ্ট্রপতি আইনসভার চেয়ে বেশি প্রভাবশালী।

আন্তর্জাতিক

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এরকম যে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডিতে ড্যাফোডিল প্লাজায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ আয়োজিত ‘গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইক ২০২৪’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এডুকেশন সিস্টেম এরকম যে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না। বিশ্ব প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হচ্ছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ মুক্ত চিন্তা করবে, কল্পনা করবে, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি প্রকাশ করবে। তাহলে আমাদের পরিবর্তন আসবে।

উপদেষ্টা বলেন, নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে, এটি খুব ভালো খবর। উদ্যোক্তারা বেশির ভাগ বিদেশে চলে যান। তাদেরকে দেশে ধরে রাখার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ দেশের জন্য তাদেরকে বেশি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের এই অঞ্চলে উদ্যোক্তারা সফল হতে পারেনি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেটা হতে দেয়নি। তারা ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ দিয়ে কৃষিকে ধ্বংস করেছে। একটি শ্রেণি তৈরি করেছিল সেটা হল কেরানি শ্রেণি। ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দুইবার স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের লিগেসি রয়ে গেছে। আমরা সেখান থেকে বের হতে পারিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দক্ষতা বিশেষজ্ঞ গুণিজন দাল্লাকটি, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ ফারুক, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেনস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের সভাপতি ড. রুবিনা হোসেন এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইক ২০২৪ এর ন্যাশনাল হোস্ট ও বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন।

এ বছর গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ উইকে বিশ্বের ২০০টি দেশ জুড়ে উদ্‌যাপিত হয়। যেখানে ৪০ হাজারের বেশি ইভেন্ট এবং দশ মিলিয়ন মানুষ এই উদযাপনে অংশ নেয়। বাংলাদেশে গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক-বাংলাদেশ (জিইএন-বাংলাদেশ) ৫০টিরও বেশি অংশীদার সংস্থার সাথে ৫০০টির বেশি ইভেন্ট আয়োজন করে। যা সরাসরি ১ লাখ এবং ডিজিটালি ৩০ লাখ যুবককে প্রভাবিত করে।

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলি হামলায় বেইরুতের কেন্দ্রস্থলে একটি আটতলা আবাসিক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ১১ জন নিহত ও ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সিভিল ডিফেন্স এই হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে। খবর আল জাজিরা

শনিবার সকালে, ঘনবসতিপূর্ণ বাস্তা এলাকায় পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়। এটি এই সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বেইরুতে চতুর্থ হামলা।

এছাড়া বেইরুতের দক্ষিণবর্তী হাদাত এবং চৌইফাত এলাকাতেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। লেবাননের টাইর শহরের সৈকতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালিয়ে দুই জেলেকে হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে পরিচালিত পূর্ববর্তী হামলাগুলোতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে সংগঠনটির নেতা হাসান নাসরাল্লাহও রয়েছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাদের অভিযান তীব্রতর হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার লেবাননে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫শরও বেশি মানুষ নিহত এবং দশ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।