আন্তর্জাতিক

সম্প্রতি ইয়েমেনের সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লোহিত সাগরের বন্দর এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। জবাবে এবার তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইয়েমেন।

ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ইয়েমেন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে দখলকৃত ভূমিতে অবস্থিত তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

শুক্রবার সকালে তেলআবিবে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দখলকৃত অঞ্চলের বড় অংশজুড়ে এয়ার রেইড সাইরেন বেজে ওঠে। পাশাপাশি হামলার কারণে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়।

ইসরাইলের জরুরি সেবাগুলো জানিয়েছে, হামলায় ১৮ জন আহত হয়েছেন। তারা সাইরেন শুনে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, দখলদার ইসরাইলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধেয়ে আসা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আটকাতে ব্যর্থ হয়।

এ হামলার ফলে ইসরাইল দখলকৃত ভূখণ্ডের অর্ধেক এলাকায় লকডাউন কার্যকর করতে বাধ্য হয়। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম এ ঘটনাকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এদিকে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দখলকৃত ইয়াফা (তেলআবিব) অঞ্চলে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে প্যালেস্টাইন-২ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সত্ত্বেও ক্ষেপণাস্ত্রটি তার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয় এবং এই অভিযানে হতাহতের পাশাপাশি বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়’।

ইয়েমেনের রাজধানী সানা এবং বন্দরনগরী হুদাইদায় ইসরাইলের বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই তেলআবিবে এই হামলার ঘটনা ঘটল।

এর আগে বৃহস্পতিবার সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ইয়েমেনের অন্যান্য স্থানে ইসরাইলি বিমান হামলা চালানো হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, সানা বিমানবন্দরে ‘ছয়টিরও বেশি’ হামলা চালানো হয়। পাশাপাশি আল-দাইলামি বিমান ঘাঁটিও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়।

আল-মাসিরাহ টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্ট অনুযায়ী, হুদাইদার কৌশলগত বন্দরনগরীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরাইল।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ গোষ্ঠীর মুখপাত্র মোহাম্মদ আব্দুস সালাম এই হামলাগুলোকে ‘ইয়েমেনি জনগণের বিরুদ্ধে একটি জায়নিস্ট অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন।

এর আগে বুধবার ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইল-দখলকৃত কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সাইরেন বাজায়। যা এক সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থবারের মতো ইসরাইলি বসতিতে সাইরেনের কারণ হয়।

এ বিষয়ে ইয়েমেনি সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, নতুন অভিযানে প্যালেস্টাইন-২ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। যা তেলআবিবে একটি ইসরাইলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

তেলআবিবে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানার পর ইসরাইলের প্রচারিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে সেখানে ১৬ জন আহত হন। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

আন্তর্জাতিক

লোহিত সাগরের অন্যতম বন্দর এবং ইয়েমেনের রাজধানী সানা বিমানবন্দরে ইসরাইলি বিমান হামলা ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

সেই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই হামলা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। আর এটি হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন রক্ষার সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী (ওয়াইএএফ) এবং ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি এবং সানা বিমানবন্দরে হামলাকে ‘বিশেষভাবে উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র জানান, সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লোহিত সাগরের বন্দর এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ইসরাইলের বিমান হামলা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।

এদিন সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ইয়েমেনের অন্যান্য স্থানে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই আগ্রাসনে ৬ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আদানোম গেব্রেয়েসুস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি ওই হামলার সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের মতে, এই হামলায় তাদের এক বিমানকর্মী আহত হয়েছেন এবং মোট তিনজন নিহত এবং ডজনখানেক আহত হয়েছেন।

গুতেরেস বলেন, পরিবহন অবকাঠামোতে ইসরাইলি হামলা ইয়েমেনে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। যেখানে ৮০ শতাংশ জনগণ এই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, মহাসচিব এ অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনার ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইয়েমেনের প্রতিক্রিয়া

এদিকে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় আনসারুল্লাহর রাজনৈতিক ব্যুরো জানায়, তারা ‘উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত’ এবং যে কোনো মূল্যে নিজেদের রক্ষা করবে।

এক বিবৃতিতে ‍ইয়েমেনি গোষ্ঠীটি বলেছে, এ ধরনের হামলা ইয়েমেনি জনগণকে গাজার প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। সূত্র: আল-মায়াদিন

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে দেশটির সরকার এবং ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের মধ্যে আলোচনার পথ আরও খানিকটা এগিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ রোববার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন। যে কমিটিতে থাকা ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরীক দলের সিনিয়র সদস্যরা পিটিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন।

পিটিআই এর আগে সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অসহযোগ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল। মূলত সেই প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এই প্রেক্ষিতে পিটিআইও তাদের পক্ষ থেকে একটি আলোচনা কমিটি গঠন করেছে। আর এর মাধ্যমে তারা উপলব্ধি করেছে যে, সংঘর্ষের নীতি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন জোটের কমিটিতে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইশকাক দার, রানা সানাউল্লাহ, সিনেটর ইরফান সিদ্দিকি, রাজা পেরভেজ আশরাফ, নাবিদ কামর, ড. খালিদ মাকবুল সিদ্দিকি, আবদুল আলীম খান এবং চৌধুরী সালিক হুসেইন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার আয়াজ সাদিকের সুপারিশে এই কমিটি গঠিত হয়েছে।

এদিন স্পিকার আয়াজ সাদিকের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, আলোচনার সময় জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের প্রতি প্রাধান্য দেওয়া হবে।

শাহবাজ শরীফ বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্ব মূলত পাকিস্তানের অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল’।

এর আগে শনিবার স্পিকার আয়াজ সাদিক নিশ্চিত করেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং আলোচনার জন্য কমিটি গঠনের অনুরোধ করেছেন। সরকারের প্রতি পিটিআইয়ের আস্থা সংকটের কারণেই মূলত এই আলোচনা শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পিটিআই নেতা গোহর খান শনিবার আদালতে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘আলোচনা হবে। কারণ এটিই একমাত্র সমাধান। অন্যাথায় গণ-অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে’।

তবে শাহবাজ শরীফের সরকার বলেছে, গণ-অসহযোগ আন্দোলনের হুমকির মধ্যে আলোচনা এগোবে না। সূত্র: জিও নিউজ

আন্তর্জাতিক

ব্যাংকের সমন্বিত নিরীক্ষা বা তার অংশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যোগ্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে। এ বিষয়ে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই বিধানবলে ব্যাংক কোম্পানি ও ব্যাংকিং নীতিমালার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে। তারা নির্দিষ্ট ব্যাংকে গভীর নিরীক্ষা চালাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আইন অনুযায়ী ‘স্পেশাল রেগুলেশনস অব বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪’ শীর্ষক এই বিধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক বৈঠকে প্রণয়ন করা হয়েছে।

রোববার দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই বিধান অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এই বিধানে বলা হয়েছে, ব্যাংকের সমন্বিত নিরীক্ষা বা তার অংশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যোগ্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে। সমন্বিত নিরীক্ষার শর্তাবলি এবং এ কাজের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যে সম্মানী দেওয়া হবে এবং যে পদ্ধতিতে তা পরিশোধ করা হবে, তা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।

আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সমন্বিত নিরীক্ষা বা তার অংশ তারা যেভাবে সুবিধাজনক মনে করে, সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। তবে এ–সংক্রান্ত শর্তাবলি নির্ধারণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের আলাদা চুক্তি হতে হবে।

সমন্বিত নিরীক্ষা কাজের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলো যাতে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে তাদের গ্রাহকদের বিষয়ে তথ্য জানায়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ এই বিধানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে সাধারণ অনুমতি দিয়েছে।

তফসিলি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেবে। চুক্তি অনুসারে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর গভর্নর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই প্রতিবেদন পরিচালনা পর্ষদের কাছে পেশ করবেন।

বিশেষ বিধানে সমন্বিত নিরীক্ষার সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে ঝুঁকিভিত্তিক বিস্তারিত নিরীক্ষা করা হবে, যার মধ্যে থাকবে সম্পদের মান পর্যালোচনা, করপোরেট সুশাসন পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং ব্যাংকের নীতি, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া এবং আইন ও নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিবিধানের পরিপালন বিষয়ে পর্যালোচনা।

এই বিধান জারি করার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রনমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দেশের বেশ কিছু ব্যাংক বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বিশেষ করে সম্পদের মান, করপোরেট সুশাসন, নীতিমালা এবং আইন ও বিধিবিধানের পরিপালনের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর সাধারণভাবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি পুরো ব্যাংকিং খাতের বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিশেষ বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘কিছু ব্যাংক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করা হবে। এ জন্য এই বিধি প্রনয়ণ করা হয়েছে।’

জানা গেছে, অনিয়মের কারণে সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংককে জানুয়ারি মাসের শুরুতে নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর আগে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পরীক্ষা করা হবে। শুরুতে ১২টি ব্যাংকে নিরীক্ষা চালানো হবে। ফলে এসব ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে।

আন্তর্জাতিক

বিশ্ব নেতাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মতো বন্ধু রয়েছে বলে জানালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বৃহস্পতিবার বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে পুতিনকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তিত্ব বা রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে এক কাপ চা শেয়ার করতে চান? উত্তরে পুতিন বলেন, জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক এবং ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির সঙ্গে তার খুব ভালো স্মৃতি রয়েছে।

এশিয়ার ক্ষেত্রে পুতিন উল্লেখ করেন যে, তার চীন ও ভারতের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। তিনি আমার কথা বলার মতো মানুষ’।

চলতি মাসের শুরুতে রুশ নেতা মোদি প্রশাসনের প্রশংসা করেন পুতিন। পুতিন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছেন। কারণ তারা ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, ভারতে বিনিয়োগ লাভজনক’।

একটি দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে এসব মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। আসন্ন এই সফরের তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে এটি আগামী বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রেমলিন এ মাসের শুরুতে ভারত সফরের কথা নিশ্চিত করেছে।

মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে নয়াদিল্লি ডিসকাউন্ট মূল্যে রাশিয়ার তেল কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। যার ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ গত বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হয়েছে।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারত প্রয়োজনের তুলনায় ৮৫ শতাংশেরও বেশি তেল আমদানি করে। বর্তমানে ভারতে শীর্ষ তেল সরবরাহকারী দেশ হলো রাশিয়া এবং নয়াদিল্লি প্রায়ই তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মস্কোর ভূমিকা তুলে ধরে।

কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ান তেল ও কয়লা কেনার মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে, যা একটি ব্যাপক জ্বালানি সংকট প্রতিরোধ করেছে।

জুলাই মাসে মস্কোতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, রুশ এবং ভারতীয় নেতারা সম্পর্ক আরও প্রসারিত করার বিষয়ে একমত হন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেন।

অর্থনৈতিক সহযোগিতার ধারাবাহিক বৃদ্ধি স্বাগত জানিয়ে উভয় পক্ষ স্বীকার করেছে যে, ভারতের তেল আমদানি দ্রুত বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা সমাধান করা প্রয়োজন। সূত্র: ‍আরটি ও স্পুটনিক

আন্তর্জাতিক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন চ্যালেঞ্জের লক্ষ্য এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ আগেই ইউরোপকে হুমকি দিয়ে রাখলেন ট্রাম্প।

বলেছেন, ইইউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বিশাল’ বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য মার্কিন তেল ও গ্যাস না কেনে, তাহলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ট্রাম্প শুক্রবার এক বার্তায় স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউরোপকে মার্কিন তেল ও গ্যাস বড় পরিমাণে কেনাকাটা করতে হবে। অন্যথায়, ‘পুরোপুরি ট্যারিফ আরোপ হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট তার সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ লিখেছেন, ‘আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছি, আমাদের তেল ও গ্যাস বৃহৎ পরিসরে কিনে তাদের বিশাল ঘাটতি পূরণ করতে হবে। অন্যথায়, পুরোপুরি ট্যারিফ!’

পুরোনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি

ট্রাম্প তার আগের মেয়াদেও বলেছিলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ইউরোপ আমেরিকার সুবিধা নিচ্ছে। আমরা তা ঘটতে দিয়েছি’। তখন তিনি ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত অর্থায়ন বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২২ সালের বাণিজ্য ঘাটতির তথ্য অনুযায়ী, ইইউর সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০২.৫ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপ থেকে দেশটির আমদানি ৫৫৩.৩ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি ৩৫০.৮ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প এই বাণিজ্য বৈষম্য দ্রুত ঠিক করতে চান।

‘সবার কাছেই হারাচ্ছি’

সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশ এখন সবার কাছেই হারাচ্ছে’।

তিনি এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাজে চুক্তিগুলোকেই’ দায়ী করেছেন। তার মতে, ট্যারিফই যুক্তরাষ্ট্রকে ধনী করবে।

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশে আমদানি পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ এবং অভিবাসন আইন কঠোর করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া

এদিকে ইইউ ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং প্যারাগুয়ের সঙ্গে একটি বৃহৎ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করেছে ইউরোপীয় সংস্থাটি।

চুক্তির পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েন ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, ‘বিপরীত দিক থেকে শক্তিশালী বাতাস বয়ে যাচ্ছে’।

তবে তিনি এই বাণিজ্য চুক্তিকে ‘ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যের সেতু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে ট্রাম্পের হুমকিরর পর প্রশ্ন উঠেছে, ট্যারিফ কি সত্যিই আমেরিকাকে ‘মহান’ করে তুলতে পারবে? নাকি ট্রাম্পের দেশ সত্যিকারের অর্থেই ‘সবার কাছে হারবে’?

কেবল সময় আর ডোনাল্ড ট্রাম্পই এর উত্তর দিতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: এনডিটিভি

আন্তর্জাতিক

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রয়টার্সের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, ওই চুক্তির আওতায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারত সরকারের থেকে কর সুবিধা পেলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই সুবিধা দেয়নি আদানি।

বরং গোপন করে গেছে সেই সুবিধা পাওয়ার তথ্যও।
পূর্ব ভারতের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানিটি বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের নথি এবং দুই পক্ষের মধ্যে চালাচালি হওয়া চিঠিপত্র অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই এ চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন।

চুক্তিটিও বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তাই এ বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে ফের দরকষাকষি করতে চায় ঢাকা।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও আদানি পাওয়ারের বিল পুরোটা পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে সরবরাহ করা বিদ্যুতের বিল বাবদ বাংলাদেশের কাছে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে আদানির। তবে পাওনার সঠিক অঙ্ক নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ রয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, আদানি ছাড়াই স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম। সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না থাকলেও স্থানীয় উৎপাদনই পর্যাপ্ত।

রয়টার্স জানায়, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল বিদ্যুৎ চুক্তির সঙ্গে ছিল আরেকটি বাড়তি বাস্তবায়ন চুক্তি। সেই চুক্তিতে কর সুবিধা হস্তান্তর বা ভাগাভাগির শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বাংলাদেশ এখন ২৫ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রসিকিউটররা আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে যে মামলা করেছেন, তা কাজে লাগিয়ে কোম্পানিটিকে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে চাপ দিতে পারবে বলে আশা করছে ঢাকা।

যদিও বাংলাদেশে আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়নি। তবে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে আদানির এক মুখপাত্র বলেন, কোম্পানিটি সব চুক্তিগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। ঢাকা চুক্তি পর্যালোচনা করছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পাননি। কর সুবিধা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোম্পানিটি সেসবের উত্তর দেয়নি।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে আদানি বলছে, প্রকল্পটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়েছে। ২০১৯ সালে দিল্লি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা দেয়। এর ফলে কেন্দ্রটি আয়কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য কর সুবিধা পায়।

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানি পাওয়ার ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তি এবং বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর-সংক্রান্ত সুবিধার পরিবর্তন দ্রুত বাংলাদেশকে জানানোর এবং সেই সুবিধা বাংলাদেশকেও দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল আদানি পাওয়ারের।

কিন্তু এ সুবিধার কথা জানানো কিংবা সুবিধা ভাগাভাগি— কোনোটিই করেনি আদানি পাওয়ার। ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ২২ অক্টোবর বিপিডিবির পাঠানো চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। চিঠিগুলোর কপি রয়টার্সের হাতে রয়েছে। ওই চিঠিগুলোতে বাংলাদেশকে এসব সুবিধা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে কোম্পানিটিকে।

মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে বিপিডিবির দুজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, তারা আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। ওই কর্মকর্তারা জানান, বিপিডিবির হিসাব অনুযায়ী, কর সুবিধা হস্তান্তর করা হলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে বাংলাদেশের প্রায় ০.৩৫ সেন্ট ব্যয় সাশ্রয় হতো।

রয়টার্সের দেখা বাংলাদেশ সরকারের একটি নথির তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এই হিসাবে বাংলাদেশের মোট সাশ্রয় হতে পারত প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, ভবিষ্যতে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনার সময় ব্যয় সাশ্রয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে।

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আদানির কোম্পানির সঙ্গে নাইরোবির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং দেশের বিদ্যুৎ গ্রিড সংস্কারের আকর্ষণীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

এর কয়েকদিন পর ইউরোপের বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি টোটালএনার্জিস ঘোষণা দেয়, তারা আর আদানির প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে না। এখন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা—যেখানে ভারত ও চীন প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা লিপ্ত—আদানির সঙ্গে তাদের বিভিন্ন চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে। কিছুদিন আগে নিউইউর্ক টাইমসও এমন খবর জানায়।

আন্তর্জাতিক

ইয়েমেনে উত্তেজনা বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আরব দেশটির আনসারুল্লাহ প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

সোমবার আনসারুল্লাহ সদস্য এবং ইয়েমেনের জেনারেল করপোরেশন ফর রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুর রহমান আল-আহনুমি তার এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে বলেন,

‘অধিকৃত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইয়েমেনি জনগণের সমর্থন বন্ধ করতে ইয়েমেনের মার্কিন দূতাবাস তাদের ভাড়াটে সেনাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে। তবে এদেশে উত্তেজনা বাড়ালে তা মার্কিন সেনা, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন তেল স্থাপনাগুলো এবং ওয়াশিংটন ও তাদের মিত্রদের জন্য নরকের দরজা খুলে দেবে’।

মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলার হুঁশিয়ারি

আহনুমি আরও বলেন, ‘আমরা যেখানেই মার্কিন স্বার্থ বা ঘাঁটি খুঁজে পাব—হোক সেটা আফ্রিকা বা পারস্য উপসাগর—আমরা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত। ইয়েমেন বহু আগেই এর জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে’।

একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, মার্কিন আগ্রাসনের জবাবে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী এর আগেও আমেরিকান জাহাজ ও নৌযানগুলোকে বৈধ লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল।

তাই নতুন করে উত্তেজনা বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বড় মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই আনসারুল্লাহ সদস্য।

মার্কিন ও ব্রিটিশ বিমান হামলা

এদিকে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্কিন ও ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান যৌথভাবে ইয়েমেনের উত্তরের হাজ্জা প্রদেশে একটি আক্রমণ চালিয়েছে। লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে আরব দেশটি চলমান সামুদ্রিক অভিযানের মধ্যেই ওই হামলা চালায় পশ্চিমা বাহিনী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইয়েমেনের আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম আল-মাসিরা জানিয়েছে, সোমবার সকালের এই বিমান হামলাগুলো মিডি জেলার বুহাইস এলাকায় আঘাত হেনেছে।

এছাড়া কৌশলগত পশ্চিমাঞ্চলীয় হুদেইদা প্রদেশের আত-তুহাইতা জেলাতেও হামলা চালানো হয়। তবে এ হামলায় সম্ভাব্য হতাহতের সংখ্যা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

ফিলিস্তিনের প্রতি ইয়েমেনের সমর্থন

ইসরাইল গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে ইয়েমেনি বাহিনী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন ঘোষণা করে। এরই জেরে লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে আসছে আরব দেশটি।

আনসারুল্লাহ ও ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ‘গাজায় ইসরাইলের স্থল ও আকাশপথে আক্রমণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের হামলা বন্ধ করব না’।

এদিকে ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ প্রতিরোধ আন্দোলন একাত্মভাবে ঘোষণা করেছে যে, তারা ফিলিস্তিনি সংগ্রামের পাশে থাকবে। মার্কিন ও পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। সূত্র: প্রেস টিভি ও মেহের নিউজ

আন্তর্জাতিক

ভারতের লোকসভায় সরব হলেন কংগ্রেসের প্রথমবারের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভারত সরকারের তরফ থেকে কাঙ্ক্ষিত ভূমকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন চলছে। লাগাতার আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দু, খ্রিস্টান-সহ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ।

এরপরই প্রিয়াঙ্কা দাবি তোলেন, এবার সময়ে এসেছে- ভারত সরকারের ফের একবার বাংলাদেশ ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন থামাতে মূলত দুটি দাবি উত্থাপন করেন প্রিয়াঙ্কা। তার বক্তব্য, প্রথমত- ভারত সরকারকে অবিলম্বে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। দ্বিতীয়ত- ভারত সরকারকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অনাচার ও অত্যাচার বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত মোদি সরকারকে খুব বড় কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। যদিও ইতোমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। সংখ্যালঘু নিপীড়নের সমালোচনা করেছেন।

বাংলাদেশের তরফ থেকেও তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং ভারতের মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারপরও চিত্রটা বিশেষ বদলায়নি।

এদিকে এদিন (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজয় দিবসকে ‘ভারতের জয়’ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে ‘মহান বিজয় দিবস’ পালন অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস যোগ দিলেও সেখানে ভারতের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের কাছে রীতিমতো পর্যুদস্ত হওয়ার পর এই দিনটিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। যার ফল- স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

এদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত স্মরণ করেন ওয়েনাডের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যে বীর সেনাদের অনমনীয় সংগ্রাম সেইদিন বিজয় এনে দিয়েছিল, তাদের তিনি শ্রদ্ধা জানান।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তারই নাতনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি মনে করিয়ে দেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা নিদারুণ অত্যাচার চালাচ্ছে, তখন বাকি বিশ্ব শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও (প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন) তৎকালীন ভারত সরকার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশকে রক্ষা করতে।

এ প্রেক্ষাপটে লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনার কাছে পাক বাহিনীর নতি স্বীকারের সাক্ষ্য- সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের বিখ্যাত ছবিটি পর্যন্ত তার স্থান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে! যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

আন্তর্জাতিক

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি এবং জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কার্যক্রমে সমর্থন জানিয়ে দুটি প্রস্তাবনা পাস হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি এবং জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর কার্যক্রমে সমর্থন জানিয়ে দুটি প্রস্তাবনা পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

আল-জাজিরা জানায়, বুধবার গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি করা প্রস্তাবের পক্ষে সাধারণ পরিষদের ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ১৫৮টি দেশ ভোট দিয়েছে। ৯ সদস্য দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত এবং ১৩টি সদস্য দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।

আর জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-একে সমর্থন জানিয়ে আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৫৯ দেশ। ৯ দেশ বিপক্ষে ভোট দেয় আর ১১ দেশ ভোটদানে বিরত ছিল বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, “গাজার আর অস্তিত্ব নেই। গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষুধা, হতাশা ও মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই যুদ্ধ আর চলতে পারে না। আমাদের এখনই যুদ্ধবিরতি দরকার। আমাদের এখনই বন্দীদের বাড়ি ফেরানো দরকার।”

অন্যদিকে, জাতিসংঘে আলজেরিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত বলেন, ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডির মুখে নীরবতা ও ব্যর্থতার মূল্য খুবই চড়া। কাল আরও চড়া হবে।”

গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় এই গোষ্ঠী বিরুদ্ধে অভিযানে নির্বিচারে বোমা ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।