আন্তর্জাতিক

ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য ‘মানুষকে হত্যা’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কভিড মহামারি ও টিকা নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ‘ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের’ ভূমিকা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসি জানায়, ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলোকে সম্প্রতি ব্যাপক চাপের মধ্যে রেখেছে হোয়াইট হাউস। ফেসবুক বলেছে তারা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ‘আগ্রাসী পদক্ষেপ’ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা মানুষ হত্যা করছে। যারা টিকা দেয়নি, শুধু তাদের মধ্যেই এখন মহামারি বিরাজমান।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, দেশটিতে সম্প্রতি কভিড-১৯-এ মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব দেখা গেছে শুধু টিকা দেয়নি এ রকম কমিউনিটিগুলোতে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি গত শুক্রবার বলেছেন, ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুজব মোকাবেলায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এটাও পরিষ্কার যে আরো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।’

ফেসবুকের মুখপাত্র কেভিন ম্যাকঅ্যালিস্টার মন্তব্য করেছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান প্রমাণ নেই, এমন অভিযোগের কারণে বিভ্রান্ত হবে না।

ফেসবুক আলাদা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা কভিডসংক্রান্ত এক কোটি ৮০ লাখ ভুয়া তথ্য এবং ক্রমাগত নিয়ম ভেঙেছে এমন বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট অপসারণ করেছি।’

বিবিসি জানায়, ‘কন্টেন্ট’ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফেসবুক সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে। তবে মহামারি নিয়ে ভুয়া ‘কন্টেন্ট’ এখনো ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায় প্ল্যাটফর্মটিতে। গত মার্চ মাসে এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে ভ্যাকসিনবিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের প্রায় ছয় কোটি ফলোয়ার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭.৯% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অন্তত ৫৯.২% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন। তবে টিকা নেওয়ার জন্য যোগ্য যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেকেই টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। টিকার ওপর তাঁদের ভরসা নেই বলে তাঁরা জানান। ফেসবুক, গুগল আর টুইটারের প্রধান নির্বাহীদের গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে ভুয়া তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। টুইটারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের বলেন, ‘পোস্ট মডারেট’ করার বিষয়ে টুইটার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই জানান, ইউটিউব বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট সরিয়ে নিতে কাজ করছে। পাশাপাশি ভ্যাকসিনবিষয়ক তথ্য প্রচার করায়ও ভূমিকা রাখছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের ছেলের বিব্রতকর ই-মেইল ফাঁসের সময় ‘সেন্সর’ করার অভিযোগ স্বীকার করার পরই এমন অভিযোগ উঠল।

আন্তর্জাতিক

অতি সম্প্রতি ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠার খবরটি  গণমাধ্যমে যথাযোগ্য গুরুত্বে প্রচারিত হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব কালচারাল রিলেশনস’ কর্তৃপক্ষ, যারা উদ্যোগটি নিয়েছিল  তারা জানিয়েছে, চেয়ারটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রক্তার্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও বাংলাদেশের জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।

ব্রিটিশ ভারতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। ১৯১১ সালের ১২  ফেব্রুয়ারি  ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ এক রাজকীয়  kalerkanthoদরবারে কলকাতা থেকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হয়  আরো ২০ বছর পর লর্ড আরউইনের হাতে ১৯৩১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩০-এর  দশকে এসে সিদ্ধান্তটি ত্বরান্বিত হয় স্বদেশি আন্দোলনের তীব্রতায় এবং বিশেষত বঙ্গভঙ্গ রোধ আন্দোলনে বাঙালি জনগোষ্ঠীর সক্ষমতায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা কলকাতা ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে নানা কারণে। প্রধানতম কারণ যে বাংলার মহানগরী কলকাতা তাদের জন্য ক্রমান্বয়েই অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল। অতএব সুবিশাল ভারতকে শাসন করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা অধিকতর নিরাপদ দিল্লি থেকে।   এই স্থানান্তরের পর থেকেই ব্রিটিশের নতুন রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে দিল্লি। এর আগে এই  শহরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক আধিপত্যকালে এই শহরে প্রথমত ১৭৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দিল্লি কলেজ, যা জাকির হোসেন কলেজ নামে এখন পরিচিত। এরপর ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্ট স্টিফেন কলেজ, ১৮৯৯ সালে গড়ে ওঠে হিন্দু কলেজ এবং ১৯১৭ সালের রামজাস কলেজ। এরপর ১৯২২ সালে গড়ে ওঠে দিল্লি ইউনিভার্সিটি। সেই থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, যেখান থেকে ভারতীয় রাজনীতি, বিজ্ঞান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু শ্রেষ্ঠ মানুষের জন্ম ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতের প্রায় সব প্রান্তে বড় এবং বিশ্বখ্যাত বহু বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, কিন্তু দিল্লি ইউনিভার্সিটি আজও তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য  নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতএব এমন একটি মর্যাদাশীল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রজনকের নামে একটি চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্ব বহন করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক ও স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি পাকিস্তানের ২৩ বছরের সামরিক ও ধর্মতান্ত্রিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গ বা সেদিনকার পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন চার দশকেরও বেশি সময় আগে, দেশের স্বাধীনতার প্রতিপক্ষদের  সম্মিলিত আগ্রাসনে।  ১৯৭৫-এর সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ঘাতকরা  সদ্যঃস্বাধীন বাংলাদেশের স্বাভাবিক যাত্রাপথ রুদ্ধ করতে চেয়েছিল। অনেকটা সফলও হয়েছিল তারা। যে জাতীয় চেতনা ও আদর্শের ভিত্তিতে এই যুগশ্রেষ্ঠ মহানায়কের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক আধিপত্যবাদী অগণতান্ত্রিক অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি গণমানুষ একটি জাতীয় গণবিপ্লব সম্পন্ন করেছিল, সেই আদর্শকেই প্রতিপক্ষরা ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তারা বঙ্গবন্ধুকে বিস্মৃতিতে হারিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই দুই যুগের অমানিশার পর নতুন ভোরের আলো দেখা দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনর্জাগরিত হয়েছে। অতএব বাংলাদেশের ইতিহাস ও তার অন্তরাত্মার সঠিক পরিচর্চা ও সংরক্ষণে বঙ্গবন্ধুচর্চা একটি অতি জরুরি  কাজ। এটি কোনো হুজুগে রাজনৈতিক বিষয় নয়, কোনো শ্রেণি বা পেশার সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারও নয়, এটি এমন এক অতি প্রয়োজনীয় জাতীয় দায়িত্ব, যাকে সম্পাদন করতে হবে পরিপূর্ণ আবেগ ও  ইতিহাসের নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে।

বাংলাদেশের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে এসব কাজে ব্রতী হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার জীবনাদর্শ নিয়ে গবেষণায় আছে। এই উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ার প্রতিষ্ঠা ছাড়াও পূর্ণ নতুন কোর্স ও ডিপার্টমেন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর নামে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি মনে করি এসব উদ্যোগ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

তবে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে এসব উদ্যোগের কতটা নিছক রাজনীতির হুজুগে বিবেচনায় বা কতটা সত্যিকারের বোধ থেকে উৎসারিত। দেশে সম্ভবত এখন ৩৭টি কিংবা আরো বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, আছে ৯৫টি ব্যক্তিমালিকানার বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কয়েকটি মাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্য কোথাও বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’ বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা করে। এরপর কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তারও পরে চেয়ারটি প্রতিষ্ঠা পায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদে। খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও চেয়ারটি স্থাপন করা হয়েছে জানতে পেরেছি। এসব উদ্যোগের পেছনের মূল উদ্দেশ্য মহান এই নেতার জীবন ও কর্ম, তাঁর রাজনীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করা। তবে কতটা সফলভাবে এসব উদ্যোগ  প্রয়োজনীয় গবেষণায়  রত হতে পেরেছে এবং যদি না পেরে থাকে তাহলে সীমাবদ্ধতাগুলো কী, সেগুলোও মূল্যায়নের দাবি রাখে বৈকি।

জাতির পিতার নামে এমন কোনো চেয়ার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণার বিষয়টি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। যত দূর জানি, এসব পদে যাঁরাই নিয়োগ পাবেন তাঁদের মূল কাজ হবে গবেষণা এবং নির্মোহ ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নানা যোগ্য কর্মসূচি নিয়ে চেয়ারটির মর্যাদা রক্ষা করা। এসব কাজ অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে, অন্যথায় এই চেয়ার প্রতিষ্ঠা অর্থহীন হবে। বলা বাহুল্য, দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন মহলে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। কারণ বঙ্গবন্ধু চেয়ারের প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছে মূলত কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে। সেখানে রয়েছে যেমন বঙ্গবন্ধুর  স্বাধীনতা-পূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক জীবন, তেমনি আছে সদ্যঃস্বাধীন দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণে তাঁর অবদানের চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা। আমার বিশ্বাস, জাতীয়  ইতিহাসের এসব মৌলিক দিকগুলোর ওপর বিস্তারিত ও বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা হওয়া উচিত। কারণ এসবের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে স্বমহিমায় প্রস্ফুটিত হবেন।

শুধু দেশের মাটিতে নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতেও বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে থাইল্যান্ডে অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, যা একটি আন্তর্জাতিক মর্যাদাশীল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই চেয়ারে যাঁরা বসবেন তাঁরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তির বিষয়ে উচ্চতর গবেষণায় রত হবেন, যেন তা বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ স্থাপনে ভূমিকা রাখে। যত দূর জানি, এআইটিতে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার ফেলো’ বৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে, যা গবেষণারত ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করে। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক জয়শ্রী রায় এই চেয়ারের প্রথম ব্যক্তি। আইইটির চেয়ারটির পত্তন করা হয়েছে মুখ্যত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণা এবং একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, উচ্চশিক্ষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সেই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে।

অন্যদিকে ব্রাজিলের মর্যাদাপূর্ণ ‘দি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাজিল’ তার ‘সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’ ডিপার্টমেন্টে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা করেছে। দৃশ্যতই এই উদ্যোগ লাতিন আমেরিকার সমাজে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়টি একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদেরও উদ্যোগ নিয়েছে।

ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রধান মিত্র দেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তঘেরা ভারত, যার সঙ্গে গণমানুষের ঐতিহাসিক মেলবন্ধন আছে। অতএব ভারতের মাটিতে কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা পায়, তখন তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে, সেটিই প্রার্থিত। স্বভাবতই আশা করতে পারি যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারটি একদিকে যেমন ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে আঞ্চলিক শান্তি ও সৌহার্দ স্থাপনে এর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। জেনেছি, চলতি বছরে  ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে চেয়ারটি স্থাপনের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগটি দুই দেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখুক, একই সঙ্গে জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলার বিকাশ ও লেনদেনে ভূমিকা রাখুক—এই আমাদের  প্রত্যাশা।  দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পি সি যোশী বলেছেন, ভারতের মাটিতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার উপলক্ষটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক, কারণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্ত জীবনের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নৃতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই চেয়ার অলংকৃত করবেন এবং এতে বাংলাদেশসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ উন্মুক্ত হবে। আমার বিশ্বাস, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার পরিবর্তিত সময়ের বাস্তবতায় দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, যদি উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনায় অগ্রসর হওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, এই  চেয়ারের আওতায় নৃতত্ত্ব, ভূগোল, ইতিহাস, বাংলাসহ আধুনিক ভাষাগুলো, সংগীত, শিল্পকলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সমাজবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হবে। আশা রাখি ভারতের মাটিতে এই বঙ্গবন্ধু চেয়ার এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে সফল হবে। কারণ বাংলাদেশের হলেও বঙ্গবন্ধু এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবন-সংগ্রাম ও আদর্শ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়নে তাৎপর্যবহ।

শুধু ভাষা ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম একই সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন্যও বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি শুধু ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে  ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেননি, একই সঙ্গে বিভাগপূর্ব কালের জনজীবনের দ্বন্দ্ব, তিক্ততা ও নানা অভিজ্ঞতা তাঁকে এমনভাবে সমৃদ্ধ  করেছিল যে তিনি তাঁর সময়ে মানুষে মানুষে সৌহার্দ ও  শান্তি স্থাপনের অগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সে কারণে ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হলে তা দুই দেশের গণমানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু শুধু সফল প্রবাদতুল্য রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন একই সঙ্গে প্রবল অসাম্প্রদায়িক ও সাহসী সমাজসংস্কারকও, যিনি সব কূপমণ্ডূকতার বাইরে দাঁড়িয়ে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সত্যের পথে সাহসী করে তুলেছিলেন। কাজেই তাঁর মানবতাবাদী নীতি ও আদর্শ শুধু আজকের জন্য নয়, অনাগত দিনের সমাজ নির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের দেশগুলোকে একযোগে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শুক্রবার উজবেকিস্তানের তাসখন্দে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদার করার লক্ষে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োইয়েভ আয়োজিত ‘সেন্ট্রাল অ্যান্ড সাউথ এশিয়া:রিজিওনাল কানেক্টিভিটি- চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপারচুনিটি’ শীর্ষক সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির মতো চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য সম্মেলনটির আয়োজন খুবই সময়োপযোগী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বে-বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) নামক সংস্থার মাধ্যমে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এবং ভারত (বিবিআইএন) এই দেশগুলোর মধ্যে যাত্রী, কর্মী এবং যানবাহনের কার্গো ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৫ সালে একটি মোটর যানবাহন চুক্তি (এমভিএ) স্বাক্ষর করেছে।

তিনি সহযোগিতা ও উন্নয়নের জন্য মধ্য ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মধ্যে ভালো সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আন্তর্জাতিক

তথ্যপ্রযুক্তি ও এই সংক্রান্ত সেবাখাতে বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্প্রাসারিত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও বাংলাদেশে অবস্থিত তুরস্কের দূতাবাসের মধ্যে আইসিটি খাতে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সভায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ওসমান তুরান বলেন, আইসিটি খাতে তুরস্ক ও বাংলাদেশ একসাথে কাজ করতে পারে। দু দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাতে সফল ব্যবসায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠে এজন্য আমরা কাজ করছি। তুরস্কের বাজারে বাংলাদেশের আইটি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সহজে ব্যবসা করতে পারে সেজন্য বেসিসকে আমরা সবধরনের সহযোগিতা করবো।

অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সভায় বর্তমানে বাংলাদেশে আইসিটি খাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডের কথা উল্লেখ করে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, তুরস্কের আইটি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে। এক্ষেত্রে তারা তাদের লভ্যাংশের শতভাগ দেশে ফিরিয়ে নিতে পারবে। বাংলাদেশ এখন আইসিটি খাতে ১০ লক্ষের উপরে দক্ষ জনবল আছে।

তিনি আরো বলেন, এই খাতে তুরস্কের বিনিয়োগের ফলে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে। বেসিস আইসিটি খাতের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে। আমরা আশাবাদী তুরস্কের সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসা বাড়বে। আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার অতীতের সুসম্পর্কের কথাও তুলে ধরেন বেসিস সভাপতি।

অনুষ্ঠানে বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন, আইসিটি খাতের পণ্য ও সেবা রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপ আমাদের প্রাথমিক বাজার। তুরস্ক ইউরোপের বাজারে আমাদের ব্যবসা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে আইসিটি খাতে ব্যবসা বাড়ানোর অবাধ সুযোগ আছে। এই খাতের ব্যবসায়ীরা পরস্পর একসাথে কাজ করলে উভয়েই লাভবান হবে। বাংলাদেশে বর্তমান ব্যবসার পরিবেশ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো। বিশেষ করে আইসিটি খাতে সরকারের দেওয়া বিশেষ সুবিধা এই খাতে ব্যবসা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে বেসিস ও বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত উভয়ে সহমত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় বেসিস থেকে আরও যুক্ত ছিলেন যুগ্ম-সচিব ইনামুল হাফিজ লতিফী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক নাদিয়া তাবাসসুম।

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের মুখে একের পর এক অঞ্চল দখলে নিতে উঠেপড়ে লাগা তালেবান গোষ্ঠী এবার সহিংসতার মধ্যেই তিনমাসের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব রেখেছে। তবে এর পেছনে তারা জুড়ে দিয়েছে ৭ হাজার বন্দি তালেবান যোদ্ধকে মুক্তি দেওয়ার শর্ত।

বিবিসি জানায়, আফগান সরকারের এক আলোচক নাদের নাদেরি তালেবানের এই প্রস্তাবকে ‘মস্তবড় দাবি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে সরকার এই দাবির প্রেক্ষিতে কী করবে তা এখনও জানায়নি।

নাদেরি জানান, তালেবান নেতারা জাতিসংঘের কালো তালিকা থেকেও তাদের নাম বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।

বিবিসি’র এক সংবাদদাতা বলছেন, গতবছর আফগান সরকার পাঁচ হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই রণক্ষেত্রে ফিরে গিয়ে দেশে সহিংস পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে বলেই ধারণা করা হয়।

মার্কিন ও নেটো বাহিনীর সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করার পর থেকে আফগানিস্তানে তালেবান সংঘাত বেড়ে গেছে। সরকারের সঙ্গে তালেবান গোষ্ঠী আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করলেও আফগান বাহিনীর ওপর হামলা বন্ধ করতে রাজি হয়নি। আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের আলোচনায় অগ্রগতি থমকে আছে।

ওদিকে, তালেবান বন্ধ করছে না হামলাও। তবে বৃহস্পতিবার তালেবান বাদঘিস প্রদেশের কালা-ই-নাউয়ে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে বলে প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের বরাতে এক খবরে জানিয়েছে রয়টার্স।

খবরে বলা হয়েছে, আরও কোনও হামলা হওয়া ঠেকাতে বৃহস্পতিবার পশ্চিমাঞ্চলীয় বাদঘিস প্রদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘অনির্দিষ্টকালের অস্ত্রবিরতি’ চুক্তি করেছে তালেবান। আদিবাসী নেতাদের মধ্যস্থতায় তালেবানের সঙ্গে এই চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদেশটির গভর্নর হুসামুদ্দিন শামস।

তিনি বলেন, “১০ আদিবাসী নেতা অস্ত্রবিরতির দায়িত্ব নিয়েছেন। সুতরাং তারা প্রথমে তালেবানের সঙ্গে কথা বলেন এবং তারপর স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই উভয়পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছেছে।” চুক্তির আওতায় তালেবান বাদঘিসের রাজধানী কালা-ই-নাউয়ের উপকণ্ঠে সরে যেতে রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে তালেবানের মুখপাত্র কোনও অস্ত্রবিরতিতে রাজি হওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, নিরীহ মানুষ হতাহতের ঘটনা এড়াতে তারা কালা-ই-নাউ শহর ছেড়ে গেছেন।

বাদঘিসের প্রাদেশিক কাউন্সিলের মুখপাত্র আব্দুল আজিজ বেক বলেছেন, “আফগানিস্তানে একমাত্র কালা-ই-নাউ শহরেই তালেবান অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে।” তবে এ বিষয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কর্মকর্তাদের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তালেবান যোদ্ধারা বাদঘিসের সব জেলার দখল হাতের মুঠোয় নেওয়ার পর সেখানে তাদের অস্ত্রবিরতির এ খবর এল।

এর কয়েকদিন আগে তালেবান আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে। যদিও তাদের দাবি নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা যায়নি। আর আফগান সরকার এ দাবি প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তবে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে তালেবান যোদ্ধাদেরকে নানা জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পারাপার এলাকা দখলে নিতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া, অন্যান্য কিছু সূত্রের আনুমানিক হিসাবমতে, আফগানিস্তানের ৪শ’ জেলার এক তৃতীয়াংশের বেশি এখন তালেবানের হাতে।
বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানের স্পিন বলদাক সীমান্তে ওয়েশ-চামান সীমান্ত ক্রসিং দখলে নেওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে তালেবান বাহিনী।

ভিডিওতে দেখা গেছে, সীমান্তের ‘পাকিস্তান-আফগানিস্তান ফ্রেন্ডশিপ গেইটের’ সামনে যোদ্ধারা সাদা কাপড়ে কালো অক্ষরে লেখা পতাকা ওড়াচ্ছে। এই ক্রসিংয়ের এক পাশে আফগানিস্তানের ওয়েশ শহর অন্যপাশে পাকিস্তানের চামান শহর অবস্থিত।

স্পিন বলদাক সীমান্তে ওয়েশ-চামান সীমান্ত ক্রসিং দখল নিয়েও বৃহস্পতিবার পরষ্পরবিরোধী খবর এসেছে। আফগান সরকার এই এলাকা পুনর্দখল করেছে বলে দাবি করেছে। ওদিকে, তালেবানের দাবি, এ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ এখনও তাদের হাতেই আছে।

এর আগে আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং তালেবানের দখলে নেওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।তবে আফগান সরকার সে সময়ও ক্রসিংটি তাদের দখলে থাকারই দাবি করে।

এরও আগে ৭ জুলাই আফগানিস্তানের বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নাউয়ে তালেবান যোদ্ধারা ঢুকে পড়ে হামলা চালানোর পর তাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করে আফগান বাহিনীকে শহরটি পুনর্দখল করতে হয়েছিল। এভাবে গোটা দেশজুড়েই আফগান বাহিনীকে তালেবানের অগ্রযাত্রা রুখতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি আশঙ্কা করেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প অভ্যুত্থান ঘটাতে পারেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ট্রাম্পের আচরণে জেনারেল মার্ক মিলির মধ্যে এই আশঙ্কা জেগেছিল। খবর সিএনএনের।

পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সাংবাদিক ক্যারল লিওনিং এবং ফিলিপ রাকার তাদের একটি প্রকাশিতব্য বইয়ে জানিয়েছেন, মার্ক মিলি এবং অন্যান্য জয়েন্ট চিফস পদত্যাগের বিষয়েও আলোচনা করেছিলেন। তারা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবৈধ আদেশ না মেনে এক এক করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বইটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘আই অ্যালন ক্যান ফিক্স ইট’। আগামী মঙ্গলবার বইটি বাজারে আসার কথা।

বইটিতে ট্রাম্পের শেষ বছরের দিনগুলো বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা কী ধরনের আচরণ করেছিলেন সেই তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি লেখকরা দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ট্রাম্পের সাক্ষাত্কারও নিয়েছিলেন। বইটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসে একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা যিনি প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেন, সেই তিনি কী পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন সেই সম্পর্কে জানা যাবে।

আন্তর্জাতিক

তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের একটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশিসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন। বাংলাদেশ ছাড়াও বাসটিতে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের অভিবাসী ছিলেন।

আজ রবিবার সকালে ইরান সীমান্তের কাছে ভ্যান প্রদেশের মুরাদিয়ে জেলায় বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই সময় গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তরস্কের দুর্যোগ এবং জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) থেকে চিকিৎসক দল, দমকল বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী ও জরুরি কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বাসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। কোন দেশের কত জন মারা গেছেন, সেটিও এখনো জানা যায়নি।

ইউরোপে প্রবেশের জন্য তুরস্ককে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এভাবে তুরস্ক হয়ে বহু অভিবাসী ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রবেশ করেছে। যাদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য সংখক বাংলাদেশি রয়েছে যারা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসব অভিবাসী প্রত্যাশীরা জীবনঝুঁকি নিয়ে সাগরপথ পাড়ি দেয়। আবার অনেকে মিনিবাস ও ট্রাকে করে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করে।

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফিলিস্তিনিদের পশ্চিম তীরের অধিবাসীদের ইসরায়েল। শুক্রবার (৯ জুলাই) ফের এ বর্বরোচিত হামলা চালায় ইহুদিবাদীরা।

এদিন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে আকাশ থেকে টিয়ারশেল ছুড়েছে তেল আবিব। এতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। খবর আল-জাজিরার।

ইসরায়েলের অধিকৃত ভূখণ্ডে বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে পশ্চিম তীরের বেইতা গ্রামে মিছিল বের করেন ফিলিস্তিনিরা। একপর্যায়ে তাদের বাধা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। জবাবে ঢিল ছুড়ে ও আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন আন্দোলনরীরা। সে সময় দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে স্থলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য কোরে ড্রোনের সাহায্যে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি। তাদের নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলি সেনাদের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের বেইতা গ্রামে ইসরায়েলি বসতি নিয়ে সংঘর্ষকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার দূত মাইকেল লিংক। এছাড়াও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের নির্বিচার হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ।

মাইকেল লিংক বলেন, ভূমি দখল করে ইসরায়েলের একের পর এক বসতি নির্মাণ পুরোপুরি অবৈধ এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল। তথ্য ও প্রমাণ অনুসারে, এ ধরনের কাজের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের জন্য তাদের বড় মাশুল দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বহুতল ভবন ধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৯তে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। শুক্রবার ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ মৃতদেহগুলো উদ্ধারের পর নিখোঁজের সংখ্যা ৬১ তে নেমে এসেছে।

ভবন ধসের ঘটনার আড়াই সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন মায়ামি-ডেড কাউন্টির মেয়র ডেনিয়েলা লেভিন কেভা। গত ২৪ জুন প্রথম প্রহরে সার্ফসাইডের ১২ তলা এ সুউচ্চ ভবনটির বিশাল একটি অংশ ধসে পড়ে। ওই সময় ভবনটির ১৫৬ ইউনিটের অধিকাংশ বাসিন্দাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ৪০ বছরের পুরনো ভবনটি কেন ধসে পড়ল, তদন্তকারীরা তা এখনও বের করতে পারেননি।

ভবনটি ধসে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপের আকারই দাঁড়ায় ৪ থেকে ৫ তলার সমান। শতাধিক উদ্ধারকর্মীর টানা ১৬ দিনের তৎপরতায় ওই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ভবনটির বেশিরভাগ অংশ ধসে পড়ার পরও একটি অংশ দাঁড়িয়ে ছিল, ওই অংশের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল, পরে সে অংশটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ধ্বংসস্তূপ সরানো ও মৃতদেহ উদ্ধারের কাজে গতি আসে।

লেভিন কেভা জানান, ভবনটির ৯ তলায় বাস করা বিংক্স নামের একটি বিড়ালকে ধসের দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর চ্যামপ্লেইন টাওয়ার সাউথের জায়গায় কি হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি পরিবারের আইনজীবীরা ধসে পড়া ভবনের জায়গায় নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক

আগামী ২০ জুলাই মঙ্গলবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত আজ রবিবার ১১ জুলাই জিলহজ মাসের প্রথম দিন ঘোষণা করেছে। জিলকদ মাস শেষ হয়েছে গতকাল। ১৯ জুলাই পবিত্র হজ। বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা কবে সেটা জানা যাবে আজ সন্ধ্যায়।

পবিত্র ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণ এবং ১৪৪২ হিজরি সনের পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনায় আজ সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে (বাদ মাগরিব) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা হবে। গতকাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা পারভীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে পবিত্র ঈদুল আজহার দিন তারিখ ঘোষণা করা হবে।

ঈদুল আজহা কবে, জানা যাবে আজ

বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। টেলিফোন নম্বর: ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭। ফ্যাক্স নম্বর : ৯৫৬৩৩৯৭ ও ৯৫৫৫৯৫১।

সাধারণত সৌদি আরবে ঈদ উদযাপনের পরের দিন বাংলাদেশে ঈদ উদযাপিত হয়। সে হিসাবে ২১ জুলাই বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। তবে পুরো বিষয়টিই চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে।