খেলাধুলা

স্বর্ণা আক্তারের ব্যাটে ঝড় ২৩২ রানের পাশাপাশি বাংলাদেশ শিবিরে এনে দিয়েছিল বিশ্বাস। ৭৮ রানে যখন অর্ধেক ইনিংস হাওয়া হয়ে গেল, তখন সে বিশ্বাসের পাল আরও জোর হাওয়া পাচ্ছিল। তবে শেষমেশ সে বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হলো, বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আশা জাগিয়েও শেষমেশ হারল ৩ উইকেটের ব্যবধানে।

টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে সাত উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত চার উইকেটে হেরেছিল তারা। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাজে দিন কাটে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সোমবার আবারও দারুণভাবে লড়ল টাইগ্রেসরা, যদিও শেষ হাসি হাসল প্রোটিয়ারা।

বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং নেয় এবং ৫০ ওভারে করে ২৩২ রান ছয় উইকেটে। ওপেনার শারমিন আক্তার সুপ্তা করেন ৫১ রান, খেলেন ৭৭ বল। অন্যদিকে অলরাউন্ডার শর্ণা আক্তার ৩৫ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। এটি বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রুততম অর্ধশতক।

ফারজানা হক (৩০), রুবিয়া হায়দার (২৫) ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা (৩২) ব্যাট হাতে ভালো অবদান রাখেন। ইনিংসের শেষ দিকে রিতু মনি ৮ বলে করেন ১৯ রান। শেষ ১০ ওভারে দল তোলে ৮২ রান।

২৩৪ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের স্পিনাররা দারুণ বোলিং করে ২৩ ওভারের মধ্যেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন, ৭৮ রানে তারা খুইয়ে বসে ৫ উইকেট।

কিন্তু এরপরই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মারিজান ক্যাপ ও ক্লোয়ি ট্রায়ন। ক্যাপ করেন ৫৬ ও ট্রায়ন ৬২ রান। এই জুটি প্রোটিয়াদের জয়ের পথে নিয়ে যায়। শেষ দিকে নাদিন ডি ক্লার্ক আগের ম্যাচের মতোই দায়িত্ব নেন। শেষ ওভারের আগেই তাকে ক্যাচ মিস করে বাংলাদেশ, আর সেই ভুলেই শেষমেশ ম্যাচ হাতছাড়া হয়। তিন বল বাকি থাকতেই তিন উইকেটে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

খেলাধুলা

জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া নাসির হোসেনের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে চ্যাম্পিয়ন রংপুর।

জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে খুলনা বিভাগকে হারিয়েছে রংপুর। দলের হয়ে ফাইনালে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসির হোসেন।

রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান করেছে খুলনা বিভাগ। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন মোহাম্মদ মিঠুন।

ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়।

১২০ বলে ১৩৬ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রংপুর। ৭ ওভারে ৬১ তুলে দেন দুই ওপেনার জাহিদ জাভেদ আর নাসির হোসেন।

জাহিদ ২৪ বলে ২৭ করে আউট হন। হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়ে ফেরেন নাসির। তিনি ৩১ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ৫টি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কা হাঁকান।

খেলাধুলা

ফিফার গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল। এছাড়া বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ইয়ুথ গার্লস কম্পিটিশন কমিটির সদস্য হয়েছেন বাফুফে সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ।

বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে নেপাল ফুটবল ফেডারেশন তাদের কর্মকর্তাদের ফিফা কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির খবর প্রকাশ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের দুই কর্মকর্তার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

ফিফার এই কমিটি সাধারণত কাজ করে থাকে বিশ্ব ফুটবলে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইসল্যান্ডের থরভালদুর ওরলিগসন এবং ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ভেনেজুয়েলার হোর্হে গিমেনেজ।

কমিটিতে তাবিথ আউয়ালের পাশাপাশি বাহরাইন, রুয়ান্ডা, কানাডা, হংকং, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, স্কটল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

এছাড়া কিরণের পাশাপাশি ফিফার ইয়ুথ গার্লস কম্পিটিশন কমিটিতে আছে ইয়েমেন, কঙ্গো, কোরিয়া ডিপিআর, কম্বোডিয়া, পেরু, ইরান, নেপাল, জাম্বিয়া, আরুবা, মার্কিন সামোয়া, গ্রেনাডা, ল্যাটভিয়া, এবং অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা।

খেলাধুলা

এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারতের শিরোপা জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পাঁচ উইকেটের জয়ের পর এক্স–এ তিনি লিখেন, ‘খেলার মাঠে অপারেশন সিঁদুর।

ফল একই—ভারতের জয়! ক্রিকেটারদের অভিনন্দন। ’
মোদির এই বার্তায় সাড়া দিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক সুর্যকুমার যাদব। এএনআই–কে তিনি বলেন, ‘দেশের নেতা যখন সামনে থেকে খেলেন, তখন ভালো লাগে। মনে হয়েছে উনি স্ট্রাইক নিয়ে রান তুলছেন। সামনে স্যার দাঁড়িয়ে থাকলে খেলোয়াড়রা অবশ্যই আরও মুক্তভাবে খেলতে পারে। ’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পুরো দেশ এখন উদযাপন করছে। দেশে ফিরে আমরা আরও অনুপ্রেরণা আর প্রেরণা পাবো ভালো করার জন্য। ’

তবে শিরোপা উৎসবে বড় বিতর্ক দেখা দেয় ট্রফি গ্রহণকে ঘিরে। ভারতীয় দল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) চেয়ারম্যান ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মোহসিন নাকভির হাত থেকে শিরোপা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে চ্যাম্পিয়ন হয়েও ভারতীয় ক্রিকেটাররা কল্পিত ট্রফি হাতে ছবি তোলেন।

এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সুর্যকুমার বলেন, ‘আমরা এটা প্রাপ্য ছিলাম। কোনো চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি না দেওয়ার ঘটনা আমি কখনো দেখিনি। ’

বিসিসিআই আগেই এসিসি–কে জানিয়েছিল, রাজনৈতিক ভূমিকা ও ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নেবে না ভারত।

অন্যদিকে, ভারতের কাছে হেরে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান মহসিন নকভি প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্যের জবাবে এক্স–এ লেখেন, ‘যদি যুদ্ধই গৌরবের মাপকাঠি হয়, তাহলে ইতিহাসে পাকিস্তানের হাতে ভারতের বহু অপমানজনক পরাজয় লিখিত আছে। ক্রিকেট ম্যাচ সেই সত্য বদলাতে পারবে না। খেলায় যুদ্ধ টেনে আনা হতাশার পরিচয় এবং খেলার চেতনাকেই কলঙ্কিত করে। ’

বিশ্লেষকদের মতে, নাকভির বক্তব্য ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রয়াস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ থেকে শুরু করে কারগিল সংঘাত পর্যন্ত বহুবারই ভারতীয় সেনার কাছে পরাস্ত হয়েছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে মাঠে ভারত বারবার পাকিস্তানকে হারিয়েছে। ফাইনালেও ৫ উইকেটের জয়ে এশিয়া কাপ শিরোপা তুলে নেয় সুর্যকুমারের দল।

ফাইনালের পর ট্রফি বিতরণী অনুষ্ঠান দেরি হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা। শেষে ব্যক্তিগত পুরস্কার নেওয়ার সময়ও ভারতীয় ক্রিকেটাররা নকভিকে এড়িয়ে যান। শেষ পর্যন্ত শিরোপা ছাড়াই উদযাপন করেন সূর্যকুমার-গিলরা।

খেলাধুলা

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে আবার হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর যাত্রা শুরু করল ভারত।

গ্রুপ পর্বে ব্যাটে-বলে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর এবার সংগ্রহটা ভালোই পেল পাকিস্তান। কিন্তু বোলিং ও ফিল্ডিং ভালো হলো না তাদের। আভিশেক শার্মা ও শুবমান গিলের বিস্ফোরক জুটিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের আবারও অনায়াসে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর যাত্রা শুরু করল ভারত।

খেলাধুলা

মুস্তাফিজ ও শেখ মেহেদির দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ের দারুণ দুটি ফিফটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার ফোর অভিযান শুরু করল বাংলাদেশ।

শেষ ওভারের প্রথম বলটি যখন পুল করে বাউন্ডারিতে পাঠালেন জাকের আলি, উল্লাসে মেতে উঠলেন গ্যালারির বাংলাদেশ সমর্থকেরা। ডাগ আউটে থাকা ক্রিকেটাররাও লাফিয়ে উঠলেন খুশিতে। ম্যাচ তখন কার্যত শেষ, দুই দলের স্কোর সমান। কিন্তু শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ! দাসুন শানাকার পরের তিন বলেই বিদায় দুই ব্যাটসম্যানের, রান নেই মাঝের বলেও! নন-স্ট্রাইকে থাকা শামীম হোসেন যেভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ছুড়ে মারলেন ব্যাট, তাতেও শঙ্কা জাগল আরও। বাংলাদেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে না তো!

শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর নাটকীয় কিছু হলো না। পঞ্চম বলে নাসুম আহমেদের ব্যাটে বল লাগতেই ছুটলেন দুই ব্যাটসম্যান। ফিল্ডার সরাসরি থ্রো লাগাতে পারলে বিপদ হতে পারত যদিও। তবে তখন আর সেসব ভাবে কে! জয়ের উচ্ছ্বাসই তখন সবচেয়ে বড় সত্যি।

শেষে এসে একটু গুলিয়ে ফেললেও ব্যাটে-বল দাপুটে পারফরম্যান্সে দারুণ জয়ের মঞ্চ আগেই সাজিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। সেই পথ ধরেই শ্রীলঙ্কাকে চার উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর অভিযান শুরু করল লিটন কুমার দাসের দল।

দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে জয়ের ভিত গড়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদি হাসান। রান তাড়ায় স্ট্রোকসমৃদ্ধ দুটি ফিফটি উপহার দিয়ে দলকে এগিয়ে নেন সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। বিফলে যায় দাসুন শানাকার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।

দুবাইয়ে শনিবার ছয়টি ছক্কায় শানাকার ৩৭ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে তোলে ১৬৮ রান। পরে বল হাতে শেষ ওভারে দুটি উইকেট নেন শানাকা। তবে বাংলাদেশ জিতে যায় ১ বল বাকি রেখে।

অসাধারণ বোলিংয়ে চার ওভারেরে স্রেফ ২০ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ২৫ রান দিয়ে দুটি নেন মেহেদি।

রান তাড়ায় ওপেনিংয়ে চার ছক্কায় ৪৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন সাইফ। তার টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেক। এই ম্যাচে দেখিয়ে দিলেন, তিনিও পারেন! মায়ের দেশের বিপক্ষে ম্যাচ-সেরা তিনিই।

যার ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই, সেই হৃদয়ও জ্বলে উঠে উপহার দেন ৩৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস।

দলের দারুণ জয়ের দিনে দুটি মাইলফলকের দেখাও পেয়েছেন দুজন। ১৪৯ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন মুস্তাফিজ। রানের তালিকায় সাকিবকে (২৫৫১) ছাড়িয়ে এখন সবার ওপরে লিটন (২৫৫৬)।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার শুরুটা করে দারুণ। বাঁহাতি পেসের সামনে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার কারণে যাকে একাদশে এনেছিল বাংলাদেশ, সেই শরিফুল ইসলামের ওপরই ঝড় বইয়ে দেন কুসাল মেন্ডিস ও পাথুম নিসাঙ্কা। তার প্রথম ওভারে ফ্লিক করে ছক্কা মারেন মেন্ডিস, পরের ওভারে টানা তিনটি চার মারেন নিসাঙ্কা।

মেন্ডিসের ব্যাটে চার ও ছক্কা হজম করলেও নাসুম আহমেদ প্রথম দুই ওভারে রান দেন ১৩।

পঞ্চম ওভারে আক্রমণে আসা তাসকিনকে ছক্কায় স্বাগত জানান নিসাঙ্কা। তবে ওভারের শেষ বলে তাকে ফিরিয়েই হুঙ্কার ছুড়েন অভিজ্ঞ পেসার। টুর্নামেন্টের সফলতম ব্যাটসম্যান ফেরেন ১৫ বলে ২২ রান করে।

পাঁচ ওভারে ৪৪ রান তোলা শ্রীলঙ্কাকে এরপর চেপে ধরে বাংলাদেশ। শেখ মেহেদি হাসানকে ছক্কায় দলের পঞ্চাশ পূর্ণ করেন মেন্ডিস। পরের ওভারে তাকে (২৫ বলে ৩৪) ফিরিয়ে শোধ তোলেন অফ স্পিনার।

পাওয়ার প্লে শেষে টানা তিন ওভারে আসেনি বাউন্ডারি। কামিল মিশারা (১১ বলে ৫) কেনো উপায় না পেয়ে মেহেদিকে রিভার্স ল্যাপ খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান। অভিজ্ঞ কুসাল পেরেরা ১৬ বল খেলে করতে পারেন ১৬।

একাদশে ফেরার ম্যাচে দারুণ বোলিং করেন শেখ মেহেদি। ছবি: বিসিবি ফেইসবুক।

বাঁহাতি ব্যাটসম্যানে ঠাসা ব্যাটিং লাইন আপে মেহেদির অফ স্পিন সামাল দিতেই মূলত পাঁচে নামানো হয় দাসুন শানাকাকে। প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন তিনি, একটু পরই শরিফুলকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে ঝড়ের বার্তা ছড়িয়ে দেন। নাসুমের শেষ ওভারে একটি চারের পর ছক্কা মারেন দুটি, এর একটি ১০১ মিটার লম্বা!

তার সঙ্গে চারিথ আসালাঙ্কার জুটিতেই মূলত গতি পায় লঙ্কান ইনিংস। সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কের জুটিতে ৫৭ রান আসে ২৭ বলেই।

শ্রীলঙ্কার রান এক পর্যায়ে ১৭৫ ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। তবে ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা মুস্তাফিজ শেষেও রাশ টেনে ধরেন। তার শেষ দুই ওভার থেকে রান ওঠে মাত্র ১১।

এর মধ্যেই ৩৮ রানে শানাকার কঠিন একটি ক্যাচ নিতে পারেননি শামীম হোসেন। আসালাঙ্কার ক্যাচ দুই দফায় ফেলেন তাওহিদ হৃদয়। এর দ্বিতীয়টিতে অবশ্য তার দারুণ থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন লঙ্কান দলপতি (১২ বলে ২১)।

আরেক প্রান্তে শরিফুলের শেষ দুটি ডেলিভারি ছক্কায় উড়িয়ে দেন শানাকা। শেষ ওভারের প্রথম বলে তাসকিনকে চার মারলেও পরের টানা চার ডেলিভারি তিনি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। তবে শেষ ডেলিভারি আবার পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে।

টি-টোয়েন্টিতে তার সবশেষ ফিফটি ছিল ২১ ইনিংস আগে, সেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে।

রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। নুয়ান থুসারাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলে বোল্ড হন তানজিদ হাসান। এই সংস্করণে ছয় ম্যাচে চারবার এই স্লিঙ্গিং পেসারের কাছে উইকেট হারালেন বাঁহাতি ওপেনার, এর তিনবারই বোল্ড।

ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আসে লিটনের ব্যাট থেকে। তবে এরপরই পাল্টা আক্রমণে চমকে দেন সাইফ। বাংলাদেশেক নানা সময়ে ভোগানো থুসারাকে একটি ছক্কা মারেন তিনি ডাউন দা উইকেটে, আরেকটি চোখধাঁধানো ফ্লিক শটে। দুনিথ ওয়েলালাগেকে উড়িয়ে দেন মাথার ওপর দিয়ে।

সাইফকে দারুণ সঙ্গ দেন লিটন দাস। দুজনের জুটির ফিফটি আসে ২৮ বলেই। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৫৯ রান।

এরপরই ‘ট্রাম্প কার্ড’ ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কা। তাতে কাজও হয়। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার প্রথম ওভারেই সুইপ খেলে সীমানায় ধরা পড়েন লিটন (১৬ বলে ২৩)।

তবে হাসারাঙ্গা একাই তো আর সব করে ফেলতে পারবেন না! অন্য বোলারদের কাজে লাগিয়ে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়ে তোলেন সাইফ ও হৃদয়।

সাইফ ফিফটি পূরণ করেন ৩৬ বল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার আগের ফিফটি ছিল এশিয়ান গেমসে মালেয়েশিয়ার বিপক্ষে ৫২ বলে ৫০।

হাসারাঙ্গাকে স্লগ খেলতে গিয়ে শেষ হয় সাইফের ইনিংস।

তবে ওয়ালালাগের বল গ্যালারির দোতলায় পাঠিয়ে ততক্ষণে জেগে উঠেছেন হৃদয়। এরপর সামনে যখন পেলেন অনিয়মিত স্পিনার কামিন্দু মেন্ডিসকে, নিজের করণীয় বুঝে নিলেন দ্রুতই। দুটি চার ও একটি ছক্কায় ওভার থেকে নিলেন ১৬ রান।

বাংলাদেশের অনায়াস জয় তখন সময়ের ব্যাপার। ১৯তম ওভারে চামিরার একটি ফুল টসে এলবিডব্লিউ হয়ে যান হৃদয়। নিজের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

জাকের আলি ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলটিই পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারিতে। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে পাঁচ রানের। সেখানেও প্রথম বলে জাকেরের চার। এরপরই একটু বিপত্তি।

শানাকার স্লোয়ার হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান জাকের। পরের বলে রান নিতে পারেননি নতুন ব্যাটসম্যান শেখ মেহেদি। চতুর্থ বলে তিনি আউট হয়ে যান শর্ট ডেলিভারিতে। এরপর আর ভুল হয়নি কোনো।

গ্রুপ পর্বে যে দলের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ, তাদেরকে হারিয়েই শুরু হলো সুপার ফোর যাত্রা।

স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (নিসাঙ্কা ২২, কুসাল মেন্ডিস ৩৪, মিশারা ৫, কুসাল পেরেরা ১৬, শানাকা ৬৪*, আসালাঙ্কা ২১, কামিন্দু মেন্ডিস ১, হাসারাঙ্গা ২, ওয়েলালাগে ০*; শরিফুল ৪-০-৪৯-০, নাসুম ৪-০-৩৬-০, তাসকিন ৪-০-৩৭-১, মেহেদি ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২০-৩)।

বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (সাইফ ৬১, তানজিদ ০, লিটন ২৩, হৃদয় ৫৮, শামীম ১৪*, জাকের ৯, শেখ মেহেদি ০, নাসুম ১*; থুসারা ৪-০-৪২-১, চামিরা ৪-০-৩২-১, ওয়েলালাগে ৪-০-৩৬-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-২২-২, শানাকা ২.৫-০-২১-২, কামিন্দু মেন্ডিস ১-০-১৬-০)

ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইফ হাসান।

খেলাধুলা

আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলংকার জয়ে দুশ্চিন্তা কেটে গেল বাংলাদেশের। টাইগারদের সঙ্গে নিয়েই এশিয়া কাপের সুপার ফোরে চলে গেল শ্রীলংকা ক্রিকেট দল।

টুর্নামেন্টে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেও টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নিল আফগানিস্তান ক্রিকেট দল।

শনিবার থেকে শুরু হবে সুপার ফোরের খেলা। সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা। ২৪ সেপ্টেম্বর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। ২৫ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে বাংলাদেশ নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে।

সুপার ফোরের সূচি

১. বাংলাদেশ-শ্রীলংকা, ২০ সেপ্টেম্বর, দুবাই।

২. ভারত-পাকিস্তান, ২১ সেপ্টেম্বর, দুবাই।

৩. পাকিস্তান-শ্রীলংকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, আবু ধাবি।

৪. বাংলাদেশ-ভারত, ২৪ সেপ্টেম্বর, দুবাই।

৫. বাংলাদেশ-পাকিস্তান, ২৫ সেপ্টেম্বর, দুবাই।

৬. ভারত-শ্রীলংকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, দুবাই।

আফগানদের স্বপ্ন ভেঙে বাংলাদেশকে সুপার ফোরে তুললো শ্রীলঙ্কা

অবশেষে মিললো অপেক্ষার অবসান। ভাগ্য যেন বারবার পরীক্ষায় ফেলছিল বাংলাদেশকে।

গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ খেলে দুই জয় ও এক হার। সরাসরি সুপার ফোর নিশ্চিত করার মতো পরিস্থিতি ছিল না লিটন দাসের দলের। তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলাফলের দিকে। আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচ শেষে হাসি ফুটলো বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে।
আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করলো শ্রীলঙ্কা। এই জয়েই বাংলাদেশেরও কপাল খুলে গেল।

আফগানদের দেয়া ১৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে চাপে পড়ে লঙ্কানরা। দ্রুত ফিরলেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা (৬) ও টপ অর্ডার ব্যাটার কামিল মিশারা (৪)। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান কুশাল মেন্ডিস। দারুণ সব ড্রাইভ, কাট আর স্কোয়ার শটে দলকে টেনে নেন তিনি। ৫২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে খেলেন অপরাজিত ৭৪ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংস।

তাকে সঙ্গ দেন কুশাল পেরেরা (২৮), অধিনায়ক আসালঙ্কা (১৭) এবং শেষে ঝড় তোলেন কামিন্দু মেন্ডিস (১৩ বলে অপরাজিত ২৬)। ফলে ১৮.৪ ওভারেই জয় নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের শুরুটা বেশ নড়বড়ে ছিল। রাহমানউল্লাহ গুরবাজ (১৪) ও সেদিকুল্লাহ আতল (১৮) কিছুটা ছন্দ দেখালেও নিয়মিত বিরতিতেই পড়তে থাকে উইকেট।

মাঝের দিকে ইব্রাহিম জাদরান (২৪) এবং রশিদ খান (২৪) চেষ্টা করলেও লঙ্কান বোলারদের সামনে বড় কিছু করতে পারেননি। তবে এক প্রান্ত থেকে ঝড় তুললেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী। মাত্র ২২ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় খেললেন বিধ্বংসী ৬০ রানের ইনিংস। নবীর ব্যাটে ভর করেই ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তোলে আফগানিস্তান।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে নুয়ান তুষারা ছিলেন অসাধারণ। নিখুঁত ইয়র্কারের ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪ উইকেট।

চারিথ আশালাঙ্কার দলের এই জয়ে গ্রুপ ‘বি’ থেকে সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। কঠিন লড়াই করেও দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিতে হলো রশিদ খানের আফগানিস্তানকে।

খেলাধুলা

দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার আফগানিস্তানকে হারাতে পারল বাংলাদেশ, জিইয়ে রইল এশিয়া কাপে পরের ধাপে যাওয়ার সম্ভাবনা।

অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে দিলেন রাশিদ খান। ব্যাটের কানায় লেগে বল গেল শর্ট থার্ড ম্যানে। ফিল্ডার তাসকিন আহমেদ ক্যাচ নিয়েই হুঙ্কার ছুড়লেন। লিটন দাসের মুখে ফুটে উঠল চওড়া হাসি। রাশিদ তখন হতাশায় তাকিয়ে আকাশের দিকে। অধিনায়কের বিদায়ে শেষ হয়ে গেল আফগানিস্তানের শেষ আশা। বাংলাদেশের জয়ও কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল সেখানেই।

জয় ছাড়া এ দিন আর কোনো উপায় ছিল না বাংলাদেশের। ব্যাটিং ইনিংস শেষেও ছিল শঙ্কার দোলাচল। তবে দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ৮ রানে জিতে এশিয়া কাপে টিকে রইল লিটন কুমার দাসের দল।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, টি-টোয়েন্টিতে দেশের বাইরে ষষ্ঠবারের চেষ্টায় আফগানদের প্রথম হারাতে পারল বাংলাদেশ।

জয়ের পরও অবশ্য শেষটায় মিশে থাকল একটু অস্বস্তি। ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর তাসকিনের শেষ ওভারে নুর আহমেদের দুই ছক্কায় রান রেটে সমীকরণ আরেকটু কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য।

সুপার ফোর পর্বে খেলতে লিটনকে এখন তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে। সেই ম্যাচে লঙ্কানরা জিতলে বাংলাদেশ কোনো হিসাব ছাড়াই পৌঁছে যাবে ‘সুপার ফোর’ পর্বে। আফগানরা জিতলেও বাংলাদেশের আশা টিকে থাকবে, তবে সেক্ষেত্রে লঙ্কানদের হারতে হবে বিশাল ব্যবধানে।

রান রেটের সমীকরণের আগে জয়টা ছিল জরুরি। টস জয়ী বাংলাদেশ ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৫৪ রান। একসময় যদিও ১৭০-১৮০ রানের পথে ছিল তারা। কিন্তু প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৭ রান তোলা দল পরের ১০ ওভারে করতে পারে স্রেফ ৬৭ রান!

৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন তানজিদ।

মাত্র চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামা বাংলাদেশ তখন বড় ঝুঁকিতে। অনিয়মিত দুই স্পিনার সাইফ হাসান ও শামীম হোসেন মিলে ৪ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে কাজ কঠিন করেও তোলেন। তবে অন্য বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্স ও সম্মিলিত ফিল্ডিংয়ে আফগানদের আটকে রাখা যায় ১৪৬ রানে।

তিন উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার যদিও মুস্তাফিজুর রহমান, তবে সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে নাসুম আহমেদ। আসরে প্রথম খেলতে নেমে উইকেট শিকার করেন তিনি প্রথম বলেই। চার ওভারে স্রেফ ১১ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনারই ম্যাচের সেরা।

সাম্প্রতিক হতাশা কাটিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের মতো দুটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদও।

জয়ের চেষ্টায় মরিয়া বাংলাদেশ একাদশ সাজায় চার পরিবর্তন নিয়ে। পরিবর্তন আসে উদ্বোধনী জুটিতেও।

বাংলাদেশের শুরুটা জুটি হিসেবে দারুণ। তবে নতুন উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যানের ছিল দুই রূপ। সাইফ হাসানের ব্যাটিং ছিল অস্বস্তিময়, তবু টিকে যান পাওয়ার প্লের পুরোটা। ফাঁকে দু-একটি ভালো শটও খেলেন। তানজিদ ছিলেন রুদ্ররূপে। দুজনের সংযোগে শুরুর জুটিতে আসে ৬৩ রান।

প্রথম ওভাররে ফাজালহাক ফারুকির সুইংয়ে টালমাটাল সাইফ জীবন পান শূন্য রানে। বাঁহাতি এই পেসারের বলে তানজিদও সুযোগে মতো দেন। তবে তা কিপার ও স্লিপের মাঝ দিয়ে ছুটে যায় বাউন্ডারিতে। ওই ওভারে তানজিদের ব্যাট থেকে আসে চারটি বাউন্ডারি।

এএম গাজানফারকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন সাইফ, এই রহস্য স্পিনারকেই পাত্তা না দিয়ে দুটি ছক্কা মেরে দেন তানজিদ।

১১ ম্যাচ পর এই সংস্করণে অর্ধশত রানের জুটি পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে ওঠে ৫৯ রান।

রাশিদ খান আক্রমণে এসেই ভাঙেন জুটি। ধৈর্য হারিয়ে স্লগ করে বোল্ড হন সাইফ (২৮ বলে ৩০)।

লিটন দাস চেষ্টা করে একটু সময় নিয়ে থিতু হওয়ার। দশম ওভারে মোহাম্মাদ নাবির বলে পুল করে তানজিদের ছক্কায় দারুণ অবস্থানে থেকে পানি পানের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতির পর প্রথম বলেই ছন্দপতন। মোহাম্মাদ নুর বল হাতে নিয়েই ফেরান লিটনকে (১১ বলে ৯)। ২৮ বলে ফিফটি করা তানজিদ বিদায় নেন বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনারের পরের ওভারে।

তাওহিদ হৃদয়ের শুরুটা ছিল দারুণ। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই প্রিয় সুইপে ছক্কা মারেন তিনি নুরকে। তার রানিং বিটুইন দা উইকেট ছিল দুর্দান্ত।

তবে ক্রমশ গতি হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। রাশিদের ওভারে দুটি বাউন্ডারির পর আফগান অধিনায়কের কাছেই উইকেট হারান শামীম হোসেন (১১ বলে ১১)। হৃদয়ও পরের দিকে মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি (২০ বলে ২৬)।

জাকের আলি ক্রিজে যাওয়ার পরপরই নুরকে চার মারলেও পরে আর ব্যাট-বলেই করতে পারছিলেন না। শাফল করে বল লেগ সাইডে টেনে মার চেষ্টায় ব্যর্থ হন বারবার। ১৯তম ওভারে টানা তিন বলে রান নিতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত পর্যন্ত থাকেন ১২ বলে ১৩ রান করে।

শেষ দিকে দুটি বাউন্ডারিতে নুরুল হাসান সোহানের ৬ বলে ১২ রানের ইনিংসে দেড়শ ছাড়াতে পারে বাংলাদেশ।

শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে তারা।

এই পুঁজির পর যেমন দরকার ছিল, বাংলাদেশকে ঠিক তেমন শুরুই এনে দেন নাসুম। ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ করে দেন তিনি সেদিকউল্লাহ আটালকে। একটু পরে একইভাবে তার শিকার ইব্রাহিম জাদরান (১২ বলে ৫)।

দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রান তুলতে পারে আফগানরা। জুটি গড়ে ওঠার মুখে রিশাদ হোসেন ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন গুলবাদিন নাইবকে (১৪ বলে ১৬)।

ওপেন করতে নেমে তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। শামীম ও সাইফকে সামনে পেয়ে দুটি ছক্কা মারেন তিনি। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে তাকেও (৩১ বলে ৩৫) ফেরান রিশাদ।

মুস্তাফিজ দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে যখন ভেঙে দেন নাবির প্রতিরোধ (১৫ বলে ১৫), ম্যাচ তখন বাংলাদেশের মুঠোয়।

আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের মনে যদিও ছিল ভিন্ন ভাবনা। অনিয়মিত স্পিনার সাইফকে পেয়ে এক ওভারে ২০ রান নেন তিনি। তাসকিনকে হুক করে আছড়ে ফেলেন মাঠের বাইরে।

তবে স্লোয়ার ডেলিভারিকে ওমারজাইকে (১৬ বলে ৩০) ফিরিয়ে শোধ তোলেন তাসকিন। সোহানের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন কারিম জানাত।

বাংলাদেশের যন্ত্রণার যদিও শেষ হয়নি তাতে। রাশিদ ক্রিজে নেমে সহজাত ব্যাটিংয়ে আবার জাগিয়ে তোলেন আফগানদের আশা। ‘নো লুক’ শটে মুস্তাফিজকে ছক্কা মারেন তিনি, পরে চার মারেন দুটি।

সেই দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত রাশিদকে (১১ বলে ২০) ফিরিয়ে জিতে যান মুস্তাফিজ। সেই পথ ধরে একটু পরে জিতে যায় দলও।

এই জয় কতটা মূল্যবান, সেটি পরিস্কার হবে বৃহস্পতিবার এই মাঠেই শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান লড়াইয়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৪/৫ (সাইফ ৩০, তানজিদ ৫২, লিটন ৯, হৃদয় ২৬, শামীম ১১, জাকের ১২*, সোহান ১২*; ফারুকি ৪-০-৩৭-০, ওমারজাই ৩-০-১৯-১, গাজানফার ৩-০-৩২-০, রাশিদ ৪-০-২৬-২, নাবি ২-০-১৭-০, নুর ৪-০-২৩-২)।

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৬ (আটাল ০, গুরবাজ ৩৫, ইব্রাহিম ৫, নাইব ১৩, নাবি ১৫, ওমারজাই ৩০, জানাত ৬, রাশিদ ২০, নুর ১৪, গাজানফার ০, ফারুকি ২*; নাসুম ৪-১-১১-২, তাসকিন , মুস্তাফিজ ৪-০-২৮-৩, রিশাদ ৪-০-১৮-২, শামীম ১-০-১৬-০, সাইফ ৩-০-৩৯-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসুম আহমেদ।

খেলাধুলা

মাত্র ২৭ বল খেলেই জয় নিশ্চিত করল ভারত। আরব আমিরাতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের চলতি আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয় পেল টিম ইন্ডিয়া।

বুধবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের চলতি আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে আরব আমিরাতের মুখোমুখি হয় ভারতীয় ক্রিকেট দল।

এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কুলদীপ যাদবের লেগ স্পিন আর শুভম দুবের গতির মুখে পড়ে ১৩.১ ওভারে মাত্র ৫৭ রানে অলআউট হয় আমিরাত।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন আলিশান শরাফু। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম। ভারতের হয়ে ২.১ ওভারে মাত্র ৭ রানে ৪ উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। ২ ওভারে ৪ রানে ৩ উইকেট নেন শুভম দুবে।

সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে এক উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭ বলেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।

দলের জয়ে মাত্র ৯ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন শুভমান গিল। ১৬ বলে দুই চার আর তিন ছক্কায় ৩০ রান করে ফেরেন ওপেনার অভিষেক শর্মা। ২ বলে ৭ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব।

খেলাধুলা

আগামীকাল থেকে আরব আমিরাতে শুরু হবে এশিয়া কাপ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে হংকং। ১১ সেপ্টেম্বর এই হংকংয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বলেছেন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছাড়াই লিটন দাসের নেতৃত্বে দল কেমন করে তা দেখতে মুখিয়ে আছি। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা এই টুর্নামেন্ট ঝলক দেখাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে হার্শা ভোগলে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ সবসময় এক গ্রুপে থাকে। আমি বাংলাদেশের দলটি দেখছিলাম, যাদের জন্য এটা একটা বড় পরিবর্তন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং অন্যদের যুগ শেষে। তো এটা খুব আগ্রহজনক হবে যে লিটন দাসের অধীনে এই দলটা কীভাবে খেলে।’

হার্শা ভোগলে আরওর বলেন, ‘আর যদি তারা বড় কিছু করতে চায়, তাহলে তানজিদ হাসান, তানজিম হাসানের মতো খেলোয়াড়দের জন্য এটা একটা ব্রেকআউট টুর্নামেন্ট হতে হবে। আমি রিশাদ হোসেন সম্পর্কে শুনেছি, সময়ে সময়ে তার ভালো পারফরম্যান্স দেখেছি। তো এটাও তাদের জন্য একটা বড় টুর্নামেন্ট। পারভেজ হোসেন আরেকজন খেলোয়াড়, যাকে নিয়ে ক্রিকেটিং মহলে আলোচনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আর তাওহীদ হৃদয়, সে একজন আকর্ষণীয় খেলোয়াড় কারণ তাকে পরবর্তী বড় তারকা হিসেবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এটা ঘটেনি। তবে যারা তাকে দেখেছে তারা জানে তার মধ্যে সেই প্রতিভা আছে।’

বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ প্রসঙ্গে হার্শা বলেন, ‘এটা ইন্টারেস্টিং যে মেহেদি হাসান মিরাজ, একজন চমৎকার অফ স্পিনার, উপরের দিকে ব্যাটিং করছিল। তবে এই দলে মেহেদি হাসান মিরাজ নেই।’