‘ভালো মারতে পারিসনি’, সাদমান ইসলাম সুইপ শট খেলার পর আরেকপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বললেন লিটন দাস। তাদের দুজনেরই এখন রানের খোঁজ, বাংলাদেশ দলও অবধারিতভাবেই খুঁজছে রান।
বিচ্ছিন্নভাবে রান এসেছে বটে, কিন্তু দল হিসেবে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো সংগ্রহ গড়তে পারেনি খুব একটা।
ব্যাটারদের ব্যর্থতা যে দলকে ভোগাচ্ছে, তার প্রমাণ শেষ তিন টেস্টেই বাংলাদেশের জন্য লড়াইহীন হার। এমনকি ঘরের মাঠ মিরপুরে হওয়া টেস্টেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেই সিরিজ বাঁচানোর লড়াই দলের সামনে।
ওই টেস্টের আগে দল যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই, তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। কোচ বা অধিনায়কের আসার রীতি থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন তাইজুল ইসলাম। তার ভাষায়ই ‘টিম ম্যানেজম্যান্ট’ অর্থাৎ দলের পরিকল্পনা যারা করেন; তাদের অংশ নন তিনি। মানেটাও পরিষ্কার, পরিকল্পনাকারীরা আপাতত এড়িয়ে চলতে চান মিডিয়া।
অধিনায়ক তাহলে কোথায়? চট্টগ্রাম টেস্টের আগে তিনি ব্যস্ত ছিলেন লম্বা ব্যাটিং সেশনে। কিন্তু তার প্রায় পুরোটাই একটা নেটে, অনেকটাই নিভৃতে। শুরুতে তাকে বল থ্রো করেন সহকারী কোচ নিক পোথাস। ওই যাত্রায় তাদের সঙ্গী ছিলেন ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই অধিনায়ক হিসেবে শান্তর ইতি; এমন আলাপ এখন প্রবল। এই সময়ে নিজেকে অনেকটা আড়ালে রেখে মাঝে হেড কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গেও আলাপ সেরেছেন তিনি। ঘরের মাঠের শেষ টেস্টেই কি অধিনায়ক শান্তর ইতি?
প্রশ্নের জবাবটা দিতে পারেননি দলের প্রতিনিধি হিসেবে আসা তাইজুল ইসলাম। তার দাবি, ‘এই বিষয়ে কিছুই জানি না। ’ তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জয়েই চোখ রাখছেন অধিনায়কত্বে দৌড়া ‘পুরো তৈরি’ বলে ঘোষণা দেওয়া এই স্পিনার।
তাইজুল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য তো একটাই থাকবে। আমরা জেতার জন্যই খেলবো। তারপরও পরিস্থিতি কী আসবে ম্যাচ যখন পুরোটা হবে তখন বোঝা যাবে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে দল হয়ে খেলার জন্য। সেটা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, যে পার্টটাই বলেন না কেন। আমরা চেষ্টা করবো জেতার জন্য। ’
জয়ের পথে বাংলাদেশের জন্য অবশ্য চিন্তার জায়গা ব্যাটিং। সবশেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তারা অলআউট হয় স্রেফ ১০৬ রানে। এরপর আর ওই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটাররা।
চট্টগ্রামের উইকেট বরাবরই ব্যাটারদের জন্য সহায়ক হয়। এখানেই বাংলাদেশের ব্যাটারদের বড় সুযোগ ঘুরে দাঁড়ানোর। তাইজুলও বলেছেন প্রায় এমনই, ‘প্রতিটি ম্যাচ আসা মানেই একটা সুযোগ। সেদিক থেকে আমার মনে হয় যে আবার আরেকটা সুযোগ ব্যাটারদের কাছে আছে। ’
বাংলাদেশ দল যতই ভালো করুক, চট্টগ্রামের ব্যস্ত জীবনে খুব বেশি প্রভাব থাকবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। শহরের অনেক বাইরে স্টেডিয়াম হওয়ায় এমনিতেও বেশির ভাগ সময় গ্যালারি থাকে ফাঁকা। এবার গরম ও ছুটির দিন না থাকায় তেমন দর্শক হওয়ার কথা নয়। ম্যাচের আগের দিন টিকিট কাউন্টারগুলোও ছিল খালি।
দর্শক থাকুক অথবা না থাকুক, প্রতিপক্ষ শিবিরে যাই ঘটুক- দক্ষিণ আফ্রিকার সব মনোযোগ নিজেদের দিকেই। ১০ বছর উপমহাদেশে জিততে না পারার দাগ নিয়ে বাংলাদেশে পা রেখেছিল তারা- মিরপুরেই ওই দাগ মুছে গেছে। এখন তাদের চোখ সিরিজ জেতায়।
প্রায় সাত মাস পর চট্টগ্রামে টেস্ট হচ্ছে; এ ম্যাচে যারাই চোখ রাখবেন। তারা নিশ্চিতভাবেই চাইবেন মাঠের বাইরের সব আলোচনা থমকে গিয়ে মাঠের লড়াই যেন রোমাঞ্চ ছড়ায়- এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে দুই দলের ক্রিকেটারদেরই। বাংলাদেশের হয়তো একটু বেশিই।
কেন? প্রোটিয়া অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন চলার মাঝপথেই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় আলো। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার মুচকি হাসেন মার্করাম। তিনি কি বাংলাদেশ দলের অবস্থাটাও দেখেছেন কি না- কে জানে!
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, হাসান মুরাদ।