তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মঙ্গলবার জিম্বাবুয়ের জয় ২২ রানে। পাল্লেকেলেতে ৩০৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শানাকার সেঞ্চুরির পরও লঙ্কানরা থমকে যায় ২৮০ রানে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচের পর প্রথমবার এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কাকে হারাল জিম্বাবুয়ে। সব মিলিয়ে দুই দলের মুখোমুখি ৫৯ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের জয় হলো ১২টি।
শ্রীলঙ্কায় আগের সবশেষ সফরে ২০১৭ সালে প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের উৎসব করেছিল জিম্বাবুয়ে। ১-১ সমতা টেনে এবারও তেমন কিছুর সম্ভাবনা জাগাল তারা।
প্রথম ম্যাচে ২৯৬ রান করেও জিম্বাবুয়ে হেরে গিয়েছিল ৫ উইকেটে। এবার তাদের তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ক্রেইগ আরভিন। ৯৮ বলে ৯১ রানের ইনিংসে সফরকারী অধিনায়ক জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
ছয় নম্বরে নেমে ৪৬ বলে ৫৬ রান করেন সিকান্দার রাজা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শন উইলিয়ামসের ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান। কিপার-ব্যাটসম্যান রেজিস চাকাভা করেন ৪৭, আগের ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন ৭২ রানের ইনিংস।
বোলিংয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দুই পেসার টেন্ডাই চাতারা ও ব্লেসিং মুজারাবানি।
পাল্লেকেলের উইকেট এদিনও ছিল ব্যাটিং সহায়ক। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে টাকুদজোয়ানাশে কাইটানো ও চাকাভার আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে ভালো সূচনা পায় জিম্বাবুয়ে।
আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া কাইটানো ভালো শুরুর পর এবারও অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। লেগ স্পিনার জেফরি ভ্যান্ডারসের বলে বোল্ড হন তিনি ২৬ রান করে।
তিনে নামা আরভিনকে ৮ রানে মাহিশ থিকশানার বলে একবার এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পান ব্যাটসম্যান। কুসল মেন্ডিসের দারুণ স্টাম্পিংয়ে চাকাভা বিদায় নেন ফিফটির আগে। ৫০ বলে ৫ চার ও একটি ছক্কায় গড়া তার ৪৭ রানের ইনিংস।
এরপরই জিম্বাবুয়ে ইনিংসের সেরা ১০০ রানের জুটি পায় আরভিন ও উইলিয়ামসের সৌজন্যে। আরভিন ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৬ বলে। ৫৬ বলে ৩ চারে ৪৮ রান করে স্টাম্পড হন উইলিয়ামস।
ওয়েসলি মাধেভেরেকে টিকতে দেননি চামিকা করুনারত্নে। আরভিন ৫১ রানের আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন রাজার সঙ্গে। তার সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ভেস্তে দেন থিকশানা। বোল্ড হওয়া আরভিনের ৯১ রানের ইনিংসে চার ১০টি।
সেখান থেকে দলের স্কোর তিনশ পার করার কৃতিত্ব রাজার। ইনিংসের শেষ বলে আউট হন তিনি। ৪ চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ৫৬ রানের ইনিংস।
৫১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলার ভ্যান্ডারসে। অভিজ্ঞ পেসার নুয়ান প্রদিপ ২ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে দেন ৭৪ রান।
রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। ৩১ রানের মধ্যেই তারা হারায় ৩ উইকেট।
দারুণ লাইন-লেংথে বোলিংয়ের পুরস্কার পান চাতারা ও মুজারাবানি। নিজের প্রথম বলেই মুজারাবানি পেতে পারতেন উইকেট। কিন্তু কুসল মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলেন কাইটানো।
পরে দারুণ এক ডেলিভারিতে মেন্ডিসের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন চাতারা। আগের ম্যাচে ফিফটি করা পাথুম নিশানকা কট বিহাইন্ড হন মুজারাবানির বলে। এই পেসার নিজের পরের ওভারে বিদায় করেন প্রথম ম্যাচের সেরা দিনেশ চান্দিমালকে।
দুই চার ও একটি ছক্কায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেওয়া চারিথ আসালাঙ্কাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি অফ স্পিনার মাধেভেরে।
এরপরই কামিন্দু মেন্ডিসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন শানাকা। মুখোমুখি হওয়া ষষ্ঠ বলে তিনি ছক্কায় ওড়ান মাধেভেরেকে। দুজনের ব্যাটে বাড়তে থাকে রান।
চার মেরে মেন্ডিস ফিফটি পূর্ণ করেন ৭১ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে শানাকার লাগে ৫২ বল। ১২০ বলে ১১৮ রানের জুটি ভাঙে মেন্ডিসের বিদায়ে। ৮২ বলে তিনি করেন ৫৭ রান।
শানাকা চালিয়ে যান লড়াই। শেষ ৬ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৬৪ রান। চাতারাকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে শানাকা প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯৩ বলে। পরের বলেই লং অফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। স্টেডিয়ামে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
শ্রীলঙ্কার আশাও প্রায় শেষ হয়ে যায় সেখানেই। চামিকার ৩৪ রানের সুবাদে পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু। তাদের ইনিংসে ডট বল ১০০ এর বেশি, যা গড়ে দেয় বড় ব্যবধান।
আগামী শুক্রবার একই মাঠে হবে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ৩০২/৮ (কাইটানো ২৬, চাকাভা ৪৭, আরভিন ৯১, উইলিয়ামস ৪৮, মাধেভেরে ১, রাজা ৫৬, বার্ল ১৯, মাসাকাদজা ০, মুজারাবানি ০*, চাতারা ১*; প্রদিপ ১০-০-৭৪-২, চামিরা ৯-০-৪৭-০, শানাকা ২-০-১৪-০, ভ্যান্ডারসে ৯-০-৫১-৩ থিকশানা ১০-০-৪৯-১, চামিকা ৬-০-২৪-১, কামিন্দু মেন্ডিস ২-০-১৯-০, আসালাঙ্কা ২-০-১৫-০)
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩৮০/৯ (নিসানকা ১৬, কুসল মেন্ডিস ৭, কামিন্দু মেন্ডিস ৫৭, চান্দিমাল ২, আসালাঙ্কা ২৩, শানাকা ১০০, চামিকা ৩৪, চামিরা ১৩, ভ্যান্ডারসে ৪, থিকশানা ৪*, প্রদিপ ৫*; চাতারা ১০-১-৫২-৩, মুজারাবানি ১০-০-৫৬-৩, মাধেভেরে ৪-০-৩০-১, এনগারাভা ১০-১-৪১-১, মাসাকাদাজা ৮-০-৩৪-০, উইলিয়ামস ৬-০-৪৮-০, বার্ল ২-০-১৪-০)
ফল: জিম্বাবুয়ে ২২ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয়টি শেষে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রেইগ আরভিন