টেস্টে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই জয়ও আবার এলো ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
ঐতিহাসিক এ জয়ের পর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলে বড় লাফ দিয়েছে টাইগাররা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়িনশিপের তালিকায় তিন ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ছয়ে।
গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড (১টি) ও শ্রীলঙ্কার (২টি) বিপক্ষে হেরে নয় নম্বরে নেমে যায় তারা। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জয়ের পর সেখান থেকে তিন ধাক উপরে উঠেছে বাংলাদেশ।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে ৫ ম্যাচের মধ্যে ২টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাতে তাদের পয়েন্ট এখন ২৪। সমান পয়েন্ট শ্রীলঙ্কারও, কিন্তু হেড টু হেডে টেবিলের ছয় নম্বরে টাইগাররা। আর শ্রীলঙ্কা আছে পাঁচে।
৯ ম্যাচে ৬ জয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ভারত। পরের তিনটি স্থানে আছে যথাক্রমে- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড। তালিকার সাতে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর আট ও নয়ে আছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
শেষ দিনে অসাধারণ বোলিংয়ে অবিস্মরণীয় জয় বাংলাদেশের
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের শেষ দিনে সাকিব-মিরাজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে তাদের মাঠে প্রথমবার হারানোর স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
কিছু জয় স্বপ্নের মতো। কিছু জয় ছাড়িয়ে যায় স্বপ্নকেও। বাস্তব নাকি রূপকথা, এরকম ঘোর লাগিয়ে দেয় যেন। টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের জয়ের আশা এরকম ছিল অভাবনীয়। শেষ দিনের খেলা শুরুর সময়ও সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল ছিল ‘ড্র।’ কিন্তু অনুমিত সেই চিত্রনাট্য বদলে দিল বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত বোলিং আর গোটা দলের উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে ধরা দিল অবিস্মরণীয় এক জয়।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
নিজেদের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে দেশের মাঠে প্রথমবার ১০ উইকেটে হারের তেতো স্বাদ পেল পাকিস্তান।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে ২১ আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম জয়ও এটিই।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রান তাড়ায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ও এটি।
আগের দিন শেষ বিকেলে ১০ ওভার বোলিংয়েই বেশ আগ্রাসন ও উজ্জীবিত মানসিকতার ছাপ রাখেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। নতুন দিনেও তারা ধরে রাখেন সেই ধারা।
দিনের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য জরুরি ছিল দ্রুত উইকেট নেওয়া। দলকে কাঙ্ক্ষিত সেই উইকেট এনে দেন হাসান মাহমুদ। নিজের প্রথম আর দিনের দ্বিতীয় ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানি অধিনায়ক শান মাসুদকে।
জীবন পেয়ে বাবর বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। আব্দুল্লাহ শাফিকের সঙ্গে তার জুটি জমে উঠতে থাকে। তবে তা বেশ বড় হতে দেয়নি নাহিদ রানার গতি। তরুণ এই ফাস্ট বোলার এ দিন ১৪৫ ছাড়িয়েছেন নিয়মিতই, ১৪৯.৯ কিলোমিটার গতির বলও করেন একটি। তার ১৪৬.৪ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিতে শরীরের দূর থেকে ড্রাইভ করার চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে আনেন বাবর (২২)।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় উইকেট বেশ ভালোই ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। তবে পরে ক্রমেই টার্ন করতে থাকে বেশ। বাউন্সও ছিল অসম। লাফিয়ে উঠেছে কোনো বল, কোনোটি নিচু হয়েছে ভয়ঙ্করভাবে। উইকেটের সহায়তা কাজে লাগান সাকিব ও মিরাজ।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই পাকিস্তানের রান মেশিন হয়ে ওঠা সাউদ শাাকিলকে দারুণ এক ডেলিভারিতে ফেরান সাকিব। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এবার রানের দেখাই পাননি।
দারুণ খেলতে থাকা শাফিকের উইকেটটি উপহার পায় বাংলাদেশ। হঠাৎই তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ৩৭ রানে উইকেট হারান এই ওপেনার।
তাকে ফিরিয়েই তিন সংস্করণ মিলিয়ে সফলতম বাঁহাতি স্পিনার হয়ে যান সাকিব। পেছনে পড়ে যান ড্যানিয়েল ভেটোরি (৭০৫ উইকেট)।
নতুন ব্যাটসম্যান সালমান আলি আঘা টিকতে পারেননি এক বলও। মিরাজের দারুণ ডেলিভারিতে স্লিপে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন সাদমান।
জয়ের সুবাস ততক্ষণে পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। মিরাজের নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারি বিদায় করে দেয় শাহিন আফ্রিদিকে। টিকতে পারেননি নাসিম শাহও।
খুররাম শাহজাদকে নিয়ে জুটিতে পাল্টা আক্রমণে ফিফটি করেন রিজওয়ান। তবে বড় বাধা হয়ে উঠতে পারেননি তিনিও। প্রিয় সুইপ খেলার চেষ্টায় মিরাজের বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি। একটু পর মিরাজই শেষ করে দেন ইনিংস।
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে পাঁচ টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়। গত বছর জয় ধরা দিয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার জয়ের দেখা পেলেন তিনি নিজের জন্মদিনে।
জয়টি হয়তো ভুলবেন না তিনি। ম্যাচটি আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডি.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬৫
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৩/১) ৫৫.৫ ওভারে ১৪৬ (শাফিক ৩৭, মাসুদ ১৪, বাবর ২২, শাকিল ০, রিজওয়ান ৫১, সালমান ০, আফ্রিদি ২, নাসিম ৩, শাহজাদ ৫*, আলি ০; শরিফুল ১১-২-২০-১, হাসান ১০-২-২০-১, সাকিব ১৭-৩-৪৪-৩, নাহিদ ৬-০-৩০-১, মিরাজ ১১.৫-২-২১-৪)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩০) ৬.৩ ওভা ৩০/০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*; আফ্রিদি ২-০-৮-০, নাসিম ৩-১-৭-০, সালমান ১.৩-০-৯-০)।
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।