খেলাধুলা

কাকতালীয়! ভারতের ইনিংসের প্রথম বলে রোহিত শর্মা চার মারার পর দ্বিতীয় বলে বোল্ড। শ্রীলংকার ইনিংসের প্রথম বলে পাথুম নিশাঙ্কা এলবিডব্ল–। রোহিতের ঘাতক মাদুশাঙ্কা। নিশাঙ্কার শিকারি বুমরা।

বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়েতে দুদলের শুরুর মিলটুকু ছাড়া আর সবকিছুতেই অমিল। ভারতের ইনিংসে ছুটল রানের ফোয়ারা। শ্রীলংকার ইনিংসে উইকেট-বৃষ্টি। এ বছর সপ্তমবার ৩৫০-এর বেশি রান মজুদ করল ভারত তিন তিনটি সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে।

আর শ্রীলংকা তিন রানে চার এবং ১৪ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে এশিয়া কাপ ফাইনালের দুঃস্বপ্ন ফিরিয়ে আনল। কলম্বোয় ৫০ রানে অলআউট হয়ে ১০ উইকেটে ভারতের কাছে হেরেছিল শ্রীলংকা। মুম্বাইয়ে মেন্ডিসরা মুখ থুবড়ে পড়লেন ৫৫ রানে। ৩০২ রানের রেকর্ডরাঙা জয়ে সবার আগে ভারত পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।

প্রথম সাত ম্যাচের সাতটিই জিতল স্বাগতিকরা। বিশ্বকাপে রানের হিসাবে এটি দ্বিতীয় বড় জয়। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে এরচেয়ে বড় জয় আছে মাত্র তিনটি। বিপরীতে শ্রীলংকার ৫৫ রান বিশ্বকাপে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। বিশ্বকাপে এরচেয়ে কম রানে অলআউট হয়েছে শুধু কানাডা ও নামিবিয়া।

মোহাম্মদ শামি ও মোহাম্মদ সিরাজের যুগল তাণ্ডবে ২৯ রানে আট উইকেট হারিয়ে কানাডার ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার বিব্রতকর রেকর্ডকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল লংকানরা। মহেশ তিকশানা (১২) ও কাসুন রাজিতার (১৪) ব্যাটে সেই লজ্জা এড়াতে পারলেও ১৯.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

শামি ১৮ রানে পাঁচটি ও সিরাজ ১৬ রানে নেন তিন উইকেট। এবারের আসরে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই ১৪ উইকেট হয়ে গেল শামির। সবমিলিয়ে ১৪ ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন শামি। বিশ্বকাপে মিচেল স্টার্কের সর্বোচ্চ তিনবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও ছুঁয়েছেন ভারতের এই অভিজ্ঞ পেসার।

২০১১ সালের ২ এপ্রিল এ মাঠেই মুত্তিয়াহ মুরালিধরনের শ্রীলংকাকে ছয় উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতেছিল শচীন টেন্ডুলকারের ভারত। উত্তরসূরিদের লড়াই দেখতে কালও মাঠে ছিলেন দুই কিংবদন্তি। শচীন ফিরেছেন আরেকটি সুখস্মৃতি নিয়ে, মুরালির সঙ্গী নতুন দুঃস্বপ্ন।

শামি-সিরাজদের তাণ্ডবের আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আট উইকেটে ৩৫৭ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। যা বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিবিহীন সর্বোচ্চ ইনিংস। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও শুবমান গিল ৯২, বিরাট কোহলি ৮৮, ও শ্রেয়াস আয়ার ৮২ রানে আউট হন। তিনজনকেই ফেরান ৮০ রানে পাঁচ উইকেট নেওয়া মাদুশাঙ্কা।

শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছোঁয়ার অপেক্ষা বাড়লেও কোহলি কাল গড়েছেন এক পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি আটবার এক হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ সাতবার এই কীর্তি ছিল শচীনের। প্রথম ওভারে রোহিতের বিদায়ের পর জীবন পেয়ে ১৮৯ রানের জুটি গড়েন গিল ও কোহলি।

মাত্র আট রানের জন্য বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি মিস করেন গিল। তিন রানের ব্যবধানে একই আক্ষেপে পোড়েন কোহলি। এর পর শ্রেয়াসের ৫৬ বলে ৮২ রানের টর্নেডো ইনিংসে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে যায় ভারতের স্কোর।

খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৮৯ রানের বিশাল টার্গেট তাড়ায় তীরে গিয়ে তরী ডুবাল নিউজিল্যান্ড। শেষ ওভারে ১৯ রান করতে না পরায় বিশ্ব রেকর্ড গড়া হয়নি কিউইদের। হারলেও তারা বিশাল টার্গেট তারায় লড়াই করেছে।

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ৫ রানের জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বিশ্বকাপের রেকর্ড পাঁচ আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।

শনিবার ভারতের ধর্মশালায় বিশ্বকাপের চলমান ১৩তম আসরের ২৭তম ম্যাচে মুখোমুখি হয় বিশ্বকাপের হট ফেভারিট নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া।

ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই তাণ্ডব চালাতে থাকেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। উদ্বোধনীতে ১৯.১ ওভারে ১৭৫ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার। ৬৫ বলে ৫টি চার আর ৬টি ছক্কায় ৮১ রান করে ফেরেন ওয়ার্নার।

ট্রাভিস হেড মাত্র ৬৭ বলে ১০টি চার আর ৭টি ছক্কায় ১০৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন। মাত্র ২৪ বলে ৫টি চার আর এক ছক্কায় ৪১ রান করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৪ বলে ৪টি ছক্কার আর দুটি চারের সাহায্যে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এমন ব্যাটিং তাণ্ডবে ৪৯.২ ওভারে ৩৮৮ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া।

বিশ্বকাপের চলতি আসরে শ্রীলংকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪৫ রানের টার্গেট তাড়ায় জয়ের রেকর্ড গড়েছে পাকিস্তান। তাদের সেই রেকর্ড ভাঙতে হলে আজ নিউজিল্যান্ডকে করতে হতো ৩০০ বলে ৩৮৯ রান।

এমন বিশাল টার্গেট তাড়ায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করে জয়ের দুয়ারে গিয়ে হোচট খায় নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবিন্দ্রর সেঞ্চুরি ৮৯ বলে ৯টি চার আর ৫টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ১১৬ রান করেন। ড্যারেল মিচেল ৫১ বলে ৬টি চার আর এক ছক্কায় ৫৪ রান করেন। জেমস নিশাম ৩৯ বলে তিন চার আর সমান ছক্কায় ৫৮ রান করেন। শেষ ওভারে ১৯ রান করতে না পারায় কাঙ্কিত জয় পায়নি নিউজিল্যান্ড।

খেলাধুলা

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিংয়ের পরও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৮৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়ায় টাইগাররা হেরে যায় ১৪৯ রানে।

বিশ্বকাপের চলতি আসরে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩৪৫ রানের টার্গেট তাড়ায় জয়ের ইতিহাস গড়ে পাকিস্তান। তাদের সেই রেকর্ড ভাঙতে হলে বাংলাদেশকে আজ ৩৮৩ রান করতে হতো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমে ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় টাইগাররা।

দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিং করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২৩৩ রানে অলআউট হয়ে ব্যবধান কমালেও পরাজয় এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।

টাইগারদের বিপক্ষে ১৪৯ রানের বিশাল জয়ে নিউজিল্যান্ডকে হটিয়ে ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় পজিশনে উঠে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

মঙ্গলবার ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৪৯ বলে ৯০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন হেনরি ক্লেসেন। ৬৯ বলে ৬০ রানে ফেরেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এদিন দলীয় সর্বোচ্চ ৩৮২ রান করে প্রোটিয়ারা। এর আগে ২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে সর্বোচ্চ ৩৬৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ রানে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় উইকেটে এইডেন মার্করামের সঙ্গে ১৩৭ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৬৯ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৬০ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মার্করাম।

এরপর চতুর্থ উইকেটে হেনরি ক্লেসের সঙ্গে রীতিমতো তাণ্ডব চালান ডি কক। এই জুটিতে তারা মাত্র ৮৭ বল মোকাবেলা করে ১৪২ রানের জুটি গড়েন। ইনিংস ওপেন করতে নেমে ৪৫.১ ওভারে দলীয় ৩০৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ডি কক। তার আগে চলতি বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম ম্যাচে তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান।

হাসান মাহমুদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৪০ বলে ১৫টি চার আর ৭টি ছক্কার সাহায্যে ১৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ডি কক। ডি কক আউট হওয়ার পর ব্যাটিং তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন হেনরি ক্লেসেন ও ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ২৫ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন তারা।

একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন হেনরি ক্লেসেন। নার্ভাস নাইনটিতে আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে দুটি চার আর ৯টি ছক্কার সাহায্যে খেলেন ৯০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ডেভিড মিলার ১৫ বলে এক চার আর ৪টি ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানে।

বাংলাদেশ দলের হয়ে ৯ ওভারে ৭৬ রান খরচ করে কোনো উইকেট পাননি মোস্তাফিজুর রহমান। ৯ ওভারে ৭৬ রানে ১ উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। মাত্র ৬ ওভারে ৬৭ রানে ২ উইকেট নেন পেসার হাসান মাহমুদ। ৯ ওভারে ৪৪ রানে ১ উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৫ ওভারে ২৭ রানে কোনো উইকেট পাননি নাসুম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩ ওভারে ২০ রানে কোনো সাফল্য পাননি।

৩৮৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩০ রান করে বাংলাদেশ। এরপর মাত্র ১ রানের ব্যবধানে হারায় ৩ উইকেট। একের পর এক সাজঘরে ফেরেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, ওয়ানডাউনে ব্যাটিংয়ে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

৩ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩১ রান। এরপর ২৭ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় আরও ২ উইকেট। ১৭ বলে ৮ রান আর ৪৪ বলে ২২ রানে ফেরেন ওপেনার লিটন দাস। দলীয় ৮১ রানে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ১৯ বলে ১১ রানে ফেরেন।

৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে কঠিন চাপের মধ্যে অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিং করে ১০৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রিয়াদ। ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ২২৫তম ম্যাচে এটা তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান রিয়াদ। দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

মাহমুদউল্লাহর অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিংয়ের পরও ৪৬.৪ ওভারে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে রিয়াদ একাই করেন ১১১ বলে ১১টি চার আর ৪টি ছক্কায় ১১১ রান। এছাড়া ৪৪ বলে ২২ রান করেন ওপেনার লিটন দাস। ১৯ বলে ১৯ রান করেন স্পিনার নাসুম আহমেদ।

খেলাধুলা

ব্যাটারদের পর বোলারদের অসাধারন নৈপুন্যে ওয়ানডে বিশ^কাপ ইতিহাসে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে লজ্জার হার উপহার দিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। নিজেদের বিশ^কাপ এবং ওয়ানডে ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার ইংলিশদের। এর আগে ইংল্যান্ডের বড় হার ছিলো ২২১ রানের। ২০২২ সালে মেলবোর্নে দ্বিপাক্ষীক সিরিজে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২২১ রানে হেরেছিলো ইংলিশরা।

এই জয়ে ৪ ম্যাচে ৩ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে থাকলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে নবমস্থানে নেমে গেল ইংলিশরা। ৪ ম্যাচে ২ পয়েন্ট আছে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস-শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানেরও। পয়েন্ট সমান হলেও রান রেট বিবেচনায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ, নেদারল্যান্ডস সপ্তম, শ্রীলংকা অষ্টম এবং সর্বশেষ দল হিসেবে দশমস্থানে আছে আফগানিস্তান। ৪ ম্যাচে সমান ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ দু’টি স্থানে রয়েছে যথাক্রমে- নিউজিল্যান্ড ও ভারত।

হেনরিচ ক্লাসেনের সেঞ্চুরির সাথে তিন ব্যাটারের হাফ-সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬৭ বলে ১০৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ক্লাসেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান প্রোটিয়াদের। জবাবে ২২ ওভারে ১৭০ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।

মুম্বাইয়ে টস জিতে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম বলেই চার মারেন প্রোটিয়ার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। পেসার রিচ টপলির পরের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৪ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ডি কক। শুরুতে ডি কককে হারানোর চাপ দলকে বুঝতে দেননি আরেক ওপেনার হেনড্রিক্স ও তিন নম্বরে নামা ডুসেন। ১৭তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান দু’জনে। ৪৯ বলে ডুসেন ওয়ানডেতে ১৩তম এবং ৪৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ অর্ধশতক করেন হেনড্রিক্স।

২০তম ওভারে ৮ চারে ৬১ বলে ৬০ রান করা ডুসেনকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার আদিল রশিদ। ১১৬ বলে দলের স্কোরে ১২১ রান যোগ করেন ডুসেন ও হেনড্রিক্স।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক আইডেন মার্করামের সাথে জুটি গড়ার চেষ্টা করে বেশি দূর যেতে পারেননি হেনড্রিক্স। তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান রশিদ। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৫ বলে ৮৫ রান করা হেনড্রিক্সকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান রশিদ।

হেনড্রিক্সের সাথে না পারলেও চতুর্থ উইকেটে ক্লাসেনের সাথে হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন মার্করাম। তাদের জুটিতে দলের রান ২শ পার হয়। ৩৫তম ওভারে মার্করামকে ৪২ রানে থামিয়ে ইংল্যান্ডকে আনন্দে মাতান টপলি।

ছয় নম্বরে নামা ডেভিড মিলারকে দুই অংকের কোটা পার করতে দেননি টপলি। ৫ রানে বিদায় নেন তিনি। ৩৭তম ওভারে ২৪৩ রানে মিলার ফেরার পর দলের বড় স্কোরের পথ তৈরি করেন ক্লাসেন ও মর্কো জানসেন। ইংল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলে ৪৭তম ওভারে ওয়ানডেতে চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পান ৬১ বল খেলা ক্লাসেন। বিশ^কাপে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে এটি ষষ্ঠস্থানে। এবারের আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের এটি পঞ্চম সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৫ সালেও এক আসরে সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছিলো প্রোটিয়া ব্যাটাররা।

ক্লাসেনের সেঞ্চুরির পর শেষদিকে মারমুখী রুপ নেন জানসেন। ইনিংসের শেষ ৩ ওভারে ১০ বল খেলে ৪০ রান তুলেন জানসেন। ৩৫ বলে ওয়ানডেতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন জানসেন।

শেষ ওভারের প্রথম বলে পেসার গাস অ্যাটকিনসনের বলে আউট হন ক্লাসেন। ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৭ বলে ১০৯ রান করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রথম বিশ^কাপ খেলতে নেমে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে এটি তৃতীয়স্থানে জায়গা পেয়েছে।
ষষ্ঠ উইকেটে জানসেন-ক্লাসেন ৭৭ বলে ১৫১ রান যোগ করেন। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ষষ্ঠ বা তার নীচের দিকের উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি।

ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় সমান রান এনে দেন জানসেন। শেষ ১০ ওভারে ১৪৩ রান পায় প্রোটিয়ারা। এরমধ্যে শেষ ৫ ওভারে ৮৪ রান ছিলো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানেডেতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান দক্ষিণ আফ্রিকার। এই নিয়ে প্রথমে ব্যাটিং করে টানা ষষ্ঠবার ৩শর বেশি রান করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৪২ বলে অপরাজিত ৭৫ রান করেন জানসেন।

টপলি ৮.৫ ওভারে ৮৮ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া অ্যাটকিনসন-রশিদ নিয়েছেন ২টি কওে উইকেট।

৪০০ রানের পাহাড় সমান টার্গেটে খেলতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার চার পেসারের তোপের মুখে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। ১০০ রানে ৮ উইকেট হারায় তারা। জনি বেয়ারস্টো ১০, ডেভিড মালান ৬, জো রুট ২, বেন স্টোকস ৫, হ্যারি ব্রুক ১৭, অধিনায়ক জশ বাটলার ১৫, ডেভিড উইলি ১২ ও আদিল রশিদ ১০ রানে ফিরেন। এ অবস্থায় বিশ^কাপ ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক হারের মুখে পড়ে ইংল্যান্ড।

কিন্তু নবম উইকেটে ব্যাট হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের উপর তান্ডব চালান লোয়ার অর্ডারের দুই ব্যাটার অ্যাটকিনসন ও উড। চার-ছক্কার বন্যায় ৩২ বল খেলে ৭০ রান তুলে ইংল্যান্ডকে লজ্জার হারের মুখ থেকে রক্ষা করেন তারা। ২২তম ওভারে স্পিনার কেশব মহারাজ ইংল্যান্ডের নবম উইকেট হিসেবে অ্যাটকিনসনকে তুলে নিলে ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ইনজুরির কারনে ব্যাটিং করেননি টপলি।

অ্যাটকিনসন ৭টি চারে ২১ বলে ৩১ রানে আউট হলেও, ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৭ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন উড। দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়েৎজি ৩৫ রানে ৩টি, লুঙ্গি এনগিডি-জানসেন ২টি করে এবং কাগিসো রাবাদা-মহারাজ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন ক্লাসেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : 

দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৯৯/৭, ৫০ ওভার (ক্লাসেন ১০৯, হেনড্রিক্স ৮৫, জানসেন ৭৫*, টপলি ৩/৮৮)।

ইংল্যান্ড : ১৭০/১০, ২২ ওভার (উড ৪৩*, অ্যাটকিনসন ৩৫, কোয়েৎজি ৩/৩৫)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৯ রানে জয়ী।

খেলাধুলা

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল আফগানরা। বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৬৯ রানে হারাল আফগানরা। এশিয়ার উঠতি দলটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম কোনো ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেল।

ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে উভয় দল অতীতে পাঁচ ম্যাচে অংশ নেয়। অতীতের সেই পাঁচবারের দেখায় একক আধিপত্য বিস্তার করে জয় পায় ইংল্যান্ড।

রোববারের আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুইবার দেখা হয় আফগানিস্তান-ইংল্যান্ডের। সেই দুই ম্যাচে জয় পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু আজ ভারতের দিল্লির অরুন জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২৮৪ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।

দলের হয়ে ৫৭ বলে ৮টি চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ৮০ রান করেন ওপেনার রমানউল্লহা ‍গুরবাজ। ৬৬ বলে তিন চার আর দুটি ছক্কায় ৫৮ রান করেন ইকরাম আলি খিল। ২৮ রান করে করেন ইবরাহিম জাদরান ও মুজিব উর রহমান।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে মুজিব উর রহমান-রশিদ খান ও মোহম্মদ নবিদের স্পিন আর ফজলহক ফারুকি-নাভিন উল হকের গতিতে বিধ্বস্ত হয়ে ৪০.৩ ওভারে ২১৫ রানেই অলআউট হয় ইংল্যান্ড। দলের হয়ে ৬১ বলে ৭টি চার আর এক ছক্কায় সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন হ্যারি ব্রুকস। এছাড়া ৩২ রান করেন ওপেনার ডেভিড মালান।

আফগানিস্তানের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন স্পিনার রশিদ খান ও ‍মুজিব উর রহমান। দুই উইকেট নেন মোহাম্মদ নবি। একটি করে উইকেট নেন পেসার নাভিন উল হক ও ফজলহক ফারুকি।

খেলাধুলা

দাপুটে বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে প্রচণ্ড চাপে ফেলে দিয়েছে আফগানিস্তান। ১১৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৬ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ১৩৪ রান। দলটির স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে টিকে আছেন শুধু হ্যারি ব্রুক। প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে বলার মতো রানও এসেছে কেবল ব্রুকের ব্যাট থেকেই। এরইমধ্যে ৪৫ বলে ফিফটির দেখা পেয়েছেন তিনি।

বাকিদের মধ্যে রানের দেখা পেয়েছেন কেবল ওপেনার ডেভিড মালান। তার ৩৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসটি থামিয়েছেন আফগান স্পিন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো আউট হয়েছেন মাত্র ২ রান করে। দ্বিতীয় ওভারে আফগান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি।

এরপর জো রুট (১১) ও অধিনায়ক বাটলার (৯) ফেরেন দ্রুতই। দলীয় ৯১ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড পরে ১১৭ রানে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায়। রশিদ খানের বলে লিয়াম লিভিংস্টোন (১০) এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলে লক্ষ্যের অনেক দূরে থাকতেই দলের পঞ্চম উইকেট হারায় ইংলিশরা। তখনও একপ্রান্ত আগলে রাখেন ব্রুক।

দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে এর আগে টস জিতে আগে ফিল্ডিং বেছে নেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পাওয়া একাদশের প্রতি আস্থা রেখে দল সাজিয়েছে ইংল্যান্ড। তবে একটি পরিবর্তন এসেছে আফগানিস্তানের একাদশে। টুর্নামেন্টের প্রথম জয়ের খোঁজে থাকা দলটি আজ নাজিবউল্লাহ জাদরানের পরিবর্তে খেলাচ্ছে ইকরাম আলী খিলকে।

ইংল্যান্ডের আমন্ত্রণে আগে ব্যাটিং নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটে ঝোড়ো শুরু পায় আফগানরা। ক্রিস ওকস, রিস টপলি ও স্যাম কারানের মতো পেসারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন দুই ওপেনিং ব্যাটার রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহীম জাদরান। এর মধ্যে ৩৩ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন গুরবাজ। একই পথে হাঁটছছিলেন ইব্রাহীমও। তাদের জুটি শতরান পার হওয়ার পর আঘাত হানেন আদিল রশিদ। এই ইংলিশ লেগ স্পিনারের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ইব্রাহীম। তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮ বলে ২৮ রান।

দলীয় ১১৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো আফগানিস্তান পরবর্তী ৮ রানে আরও দুই উইকেট হারায়। ১৯তম ওভারে আদিল রশিদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন রহমত শাহ (৩)। পরের বলেই রান আউট হয়ে ফেরেন দারুণ খেলতে থাকা রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৭ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮০ রান।

পাঁচে নামা ওমরজাই ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও টিকতে পারেননি। ২৪ বলে ১৯ রান করে ফিরেছেন লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে ক্রিস ওকসের ক্যাচ হয়ে। অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহীদিও (১৪) পারেননি ধাক্কা সামাল দিতে। রুটের নিরীহদর্শন স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর মিছিলে যোগ দেন মোহাম্মদ নবিও (৯)। তবে সেখান থেকে লড়াই শুরু করেন ইকরাম আলিখিল ও রশিদ খান। একপ্রান্ত আগলে দলকে ভালো সংগ্রহের পথে নিয়ে যান আলিখিল। ৬৬ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। এরপর এক বল হাতে রেখে অলআউট হওয়ার আগে রশিদ খান (২৩) ও মুজিব উর রহমান (২৮)-এর ছোট দুটি ইনিংসে ভর করে ২৮৪ রানের সংগ্রহ পায় আফগানরা।

খেলাধুলা

স্বপ্নের ফানুস উড়েছিল বেশ। প্রথম ম্যাচের আগে-পরে দলকেও লেগেছিল বেশ ফুরফুরে।

সময় বদলেছে। দ্বিতীয় ম্যাচের পর বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা অবশ্য খুব বেশি অপ্রত্যাশিত ছিল না বাংলাদেশের জন্য। প্রতিপক্ষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলে কথা! কিন্তু হারের ধরনেই মূলত ছিল হতাশা।

চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাই বেশ সিরিয়াস ছিলেন ক্রিকেটাররা। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং অনুশীলন করেছেন সবই। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর দলের ভেতরের কথোপকথন।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় টুর্নামেন্টে আমরা ভালো শুরু করেছি। সত্যি বলতে আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারি নাই। আমরা এই ম্যাচ নিয়ে এতো বেশি চিন্তিত না। সামনের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি, ভালো একটা ম্যাচ খেলতে পারব। ’

‘সেই ম্যাচ হারের পর দলের আলোচনা সেরকম কিছু ছিল না। লম্বা একটা টুর্নামেন্ট। এমন না যে ৯ ম্যাচেই আমরা জিতবো। এখানে হার-জিত থাকবে। এখান থেকে আমরা কিভাবে ক্যামব্যাক করতে পারি, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ দলের সামনে এখন কঠিন তিন প্রতিপক্ষ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর পুনেতে নামতে হবে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে। এর পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি কি তাই সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ?

শান্তর জবাব, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচই আমাদের জন্য জরুরি। আমার মনে হয় না, এখনই সেমিফাইনাল নিয়ে চিন্তা করা খুব জরুরি। একটা একটা করে ম্যাচ যেতে চাই। যদি কালকের (আজ) ম্যাচটা ভালোভাবে শেষ করি তাহলে যে লক্ষ্যটা থাকবে সেখানে বেশ ভালভাবে এগোতে পারব। ’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ

বিশ্বকাপের চলমান ১৩তম আসরের ১১তম ম্যাচে আজ মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডে। শুক্রবার ভারতের চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় খেলাটি শুরু হবে।

এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড চলতি বিশ্বকাপে দুটি করে ম্যাচ খেলে। সেই দুই ম্যাচে টানা জয় পায় নিউজিল্যান্ড।

আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দেয় কিউইরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে আসরের শুভ সূচনা করে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তা পায়নি টাইগাররা।

আজ তূতীয় ম্যাচে টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে যাওয়া নিউজিল্যান্ডকে মোকাবেলা করবে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।

নিউজিল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ: ডেভন কনওয়ে, উইল ইয়াং, রাচিন রবীন্দ্র, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ড্যারেল মিচেল, টম ল্যাথাম, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার, ম্যাট হেনরি, ইশ সোধি ও ট্রেন্ট বোল্ট।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ:  লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

খেলাধুলা

ক্রিকেট বিশ্বকাপের রেকর্ড ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন দল অস্ট্রেলিয়া। তাদেরকে স্রেফ উড়িয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল।

বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের চলমান ১৩তম আসরের ১০ম ম্যাচে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা। এদিন নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অসিদের পরাস্ত করে প্রোটিয়ারা।

এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪২৮ রান করে ১০২ রানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

আজ বৃহস্পতিবার ভারতের লখনৌতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে (১০৯) ভর করে ৭ উইকেটে ৩১১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৭০ রানে ৭ উইকেটে হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া।

এরপর মার্নাস লাবুশেন, মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের ৪৫, ২৭ ও ২২ রানের সুবাদে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪০.৫ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় অসিরা।

কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামছি ও কেশভ মহারাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সুবাদে ১৩৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

খেলাধুলা

তাসকিন আহমেদ জিম থেকে বেরিয়েছেন কেবল। কৌতূহলী সাংবাদিকরা দু-চারটা কথা বের করতে চাইছিলেন তার মুখ থেকে।

তিনি কেবল বললেন ‘ভালো আছি। আজকে শুধু জিম করলাম। ’ এরপর তিনি চেপে বসলেন মাঠে আসা পাঁচ ক্রিকেটারের জন্য আনা ছোট বাসটিতে।

এর আগে মুশফিকুর রহিম-তানজিম হাসান সাকিব বের হলেও কথা বলেননি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। ম্যাচের আগে ও পরে ছাড়া তাদের কারোরই কথা বলার অনুমতি নেই। এসবের পেছনে আছেন একজন- সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপ শুরুর মাস কয়েক আগে অনেকটা নাটকীয়ভাবে অধিনায়কত্ব দেওয়া তাকে।

কয়েকদিন আগে সাকিব জানিয়েছেন, নেতৃত্ব নিতে খুব একটা আগ্রহীও ছিলেন না তিনি। তবে দলের কথা ভেবে বিসিবির অনুরোধে দায়িত্ব নেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ দারুণ শুরু করেছে, পেয়েছে ৬ উইকেটের স্বস্তির জয়। সাকিবকে অধিনায়ক করাই কি এখন সম্ভাব্য সেরা সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে?

এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিসিবি পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটুকে। ধর্মশালায় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এখন অবধি তো তাই মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে দলে যারা আছে, তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন্সি করার মতো ম্যাটেরিয়ালগুলো যদি আমরা দেখি; অনেকগুলো প্লেয়ারেরর মধ্যে আছে। কিন্তু যাদের মধ্যে আছে, তাদের মধ্যে থেকে সম্ভাব্য সেরা অপশন হচ্ছে সাকিব আল হাসান। সাকিবের একটা ব্যাপার হচ্ছে সে অনেক অভিজ্ঞ, অনেকদিন ধরেই খেলছে। চাপ নেওয়ার যে ব্যাপারটা থাকে, সেটা সে খুব সহজেই সামলাতে পারে। ’

‘আমরা কর্মকর্তা হিসেবে বা আপনারা, দর্শকদের কথা বলতে পারি; আমরা যে পরিমাণ টেনশনে ছিলাম আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হবে। সেখানে আমাদের যতটুকু টেনশন ছিল, আমার মনে হয় না প্লেয়ারদের মধ্যে সেটি ছিল। কারণ ম্যাচের আগের দিনও তাদের মাইন্ড সেট আপ খুব শক্তিশালী ছিল। ওদের এই এটিচিউডে বোঝা গেছে তারা অত বেশি চিন্তিত না। তারা তাদের বেস্ট পসিবল যেটা দেওয়ার, সেটাই চেষ্টা করবে। কাজে লাগানো, পরিকল্পনা করা ও সেটা প্রয়োগ করার মধ্যেই তাদের মূল ফোকাসটা আছে। ’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে মাঠে ছিল বেশ উজ্জ্বীবিত। শুরুতে আফগানদের ৪৭ রানের জুটির পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দল। ক্রিকেটারদের দেখে মনে হয়েছে তারা বেশ ‘চার্জড আপ’। সেটি নজর এড়ায়নি বিসিবি কর্তারও।

টিটু বলছিলেন, ‘আমরা সবসময় যেটা বলি, এগারোজন ক্রিকেটারের একটা দল হয়ে খেলা। সেটা কিন্তু আমরা কালকে শুরু থেকেই দেখেছি। সাকিব অসাধারণ অধিনায়কত্ব করেছে। আমাদের যে ফিল্ডিং করেছে সবাই, তারা যেভাবে ব্যাটিং ও বোলিং করেছে। এ সবটাতেই কিন্তু বোঝা গেছে তাদের শতভাগ দেওয়ার ইচ্ছে ও সেটি দিচ্ছে। ’

খেলাধুলা

ধর্মশালায় রং লেগেছে— বিশ্বকাপের রং। রং লেগেছে হয়তো ঢাকায় অথবা পুরো বাংলাদেশে।

শঙ্কার মেঘে ঢেকে যাওয়া আকাশে সূর্য উঠেছে পাহাড়ের বুকে এসে। গ্যালারিতে ঢোল-তবলার বাড়িতে ফেটে পড়ছে উচ্ছ্বাস। পাহাড়ের মায়াবী সৌন্দর্য দেশের ক্রিকেটেও। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় স্বপ্নের শুরু হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয়ে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই আফগানদের স্রেফ গুঁড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা।
সাকিব আল হাসান তেঁতে থেকেছেন, তাতিয়েছেন বাংলাদেশকে। মেহেদী হাসান মিরাজ হয়ে ওঠেছেন অবিশ্বাস্য রকমের ভালো। বাংলাদেশ ফিরে আসতে পারে, দেখিয়েছে এমন কিছুও। জয়ের উচ্ছ্বাস তাই বাড়তি আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর করেছে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপে ঠিক যেমন শুরুর দরকার ছিল, হয়েছে তেমন কিছুই। আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ওই রান পাড়ি দিয়েছে ৯২ বল হাতে রেখে। বিশ্বকাপে বলের হিসেবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।

অথচ শুরুটা ছিল ভীষণ হতাশার। আফগানিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার রান করছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও ছিল আশাহীন। সবকিছুই বদলে যায় সাকিবের এনে দেওয়া প্রথম উইকেটের পর, ইব্রাহিম জাদরানকে আউট করেন তিনি। ২৫ বলে ২২ রান করে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে ক্যাচ দেন আফগান ওপেনার।

পরের উইকেটটা কার? সাকিব আল হাসানেরই। এবার রহমত শাহ সিলি মিড অফে দাঁড়ানো লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন ২৫ বলে ১৮ রান করে। শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা আফগান অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শহীদিকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৮ রান করতে তিনি খেলেন ৩৮ বল। ম্যাচের রং বদলের সঙ্গে বাংলাদেশের শরীরী ভাষাও হয়ে যায় ভিন্ন রকম। প্রতিটি রানের জন্য ক্ষুদা, তীব্রতা আর না হারার জেদ চেপে বসে। উইকেট পাওয়ার পর উৎযাপনেও থাকে সেসবের ছাপ।

তৃতীয় ব্যাটারকে ফেরানোর স্রেফ চার বল পর আবার সাফল্য পায় বাংলাদেশ। এবার মোস্তাফিজুর রহমান হন ত্রাতা। আফগানিস্তানের হয়ে ভীতি ছড়ানো রহমানউল্লাহ গুরবাজ তার বলে এগিয়ে এসে তুলে মারতে যান কাভারের ওপর দিয়ে। কিন্তু বল কিছুটা স্লো হওয়ায় ডিপ কাভারে ধরা পড়েন গুরবাজ।

আফগানিস্তানের পরের ব্যাটাররা থেকেছেন কেবল আসা-যাওয়ার মিছিলে। শেষ আট উইকেট তারা হারায় মাত্র ৪৬ রানে। ১১২ রানে দুই উইকেট থেকে গুটিয়ে যায় ১৫৬ রানে এসে। সাকিব পরে উইকেট পান আরও একটি। মেহেদী হাসান মিরাজও তার সমান উইকেট নেন, ৯ ওভারে দেন কেবল ২৫ রান। পেসারদের চার উইকেটের মধ্যে শরিফুল দুই আর তাসকিন ও মোস্তাফিজ নেন এক উইকেট করে।

বাংলাদেশ যখন জবাব দিতে নামলো, ওখানেও শুরুতে হতাশাই ছিল। তানজিদ হাসান তামিম রান আউট হয়েছেন খুবই অদ্ভূতভাবে। পরে লিটন দাস যখন ফিরলেন, একটু ভয় ভয়ও হয়তো হচ্ছিল সবার। কিন্তু ছিলেন একজন, এখন তিনি অবশ্য এখন নিয়মিতই থাকছেন বেশ ভালোভাবে- মেহেদী হাসান মিরাজ। উদাহরণটা ঠিকঠাক হলো কি না কে জানে, তবে বাংলাদেশের তরকারিতে আলু একটি ‘কমন’ ব্যাপার। মিরাজ বাংলাদেশ দলে দিন দিনই হয়ে উঠছে তেমন কিছু।

যখন, যেখানে নামছেন; দরকার হচ্ছে বল হাতে, পারফর্ম করছেন দ্বিধাহীনভাবে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি ছুয়েছিলেন। এবার রান পেলেন মূল পর্বের ম্যাচেও। রান নিতে মাঝ পথে গিয়ে আউট হয়ে লিটনের ’না’তে ফিরে আসতে হয় তানজিদ হাসানকে। পরে অবশ্য তানজিদও ড্রাইভ দেননি, জোরেও দৌড়াননি। ১৩ বলে ৫ রান করে ফিরতে হয় সাজঘরে।

এরপর লিটন দাস ফজল হক ফারুকির বলে ইনসাইড এজে হন বোল্ড। ১৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। পরের গল্পটা মিরাজের। তিনে ব্যাট করতে এসে দুর্দান্ত করেন তিনি। মাঝে একবার এলবিডব্লিউ আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলেও বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরির পর মিরাজ আউট হয়েছেন নাভিন উল হকের ওভারে রশিদ খানের লাফিয়ে উঠে নেওয়া দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৫ চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। তার বদলে সাকিব এসে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টেকেননি। ১৯ বলে ২ চারে ১৪ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর অবশ্য বিপদ ঘটেনি আর। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন শান্ত। ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নিয়ে ৮৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।