চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বাংলাদেশের উঠতিরা জিতেছে ৬ উইকেটে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে ২-০ ব্যবধানে।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৪৩ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন সাইফ। ১০৯ বলে তিন অঙ্ক। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে তার সপ্তম সেঞ্চুরি। তাকে ঘিরেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ২৬১ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ২৭ বল বাকি থাকতে।
গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইনিংস খেলেন তৌহিদ ও আগের ম্যাচের নায়ক শামীম। সাবধানী শুরুর পর শট খেলতে শুরু করেন হৃদয়, ক্রিজে গিয়েই বোলারদের উপর চড়াও হন শামীম। ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়েন যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই দুই সদস্য।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ চলার সময় আইরিশদের অলরাউন্ডার রুহান প্রিটোরিয়াসের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর জানার পর ৩০ ওভার শেষে পরিত্যক্ত হয়ে যায় ম্যাচটি। তৃতীয় ম্যাচেও বাগড়া দেয় কোভিড-বিপত্তি। আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের সঙ্গে যুক্ত একজন স্থানীয় সাপোর্ট স্টাফের কোভিড পজিটিভ-নেগেটিভ ধাঁধায় পিছিয়ে যায় ম্যাচ শুরুর সময়। সকাল সাড়ে নয়টার জায়গায় খেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আয়ারল্যান্ড। ৭ রানে কাটা পড়েন প্রিটোরিয়াস। আরেক ওপেনার জেমস ম্যাককলাম খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানের বলে একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে পায়ে টান লাগলে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৫১ বলে খেলা তার ৪০ রানের ইনিংসে চার ৫টি।
থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি জেমেরি ললোর, হ্যারি টেক্টর। রান রেটও ছিল চারের নিচে। ২৮তম ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে আইরিশদের সংগ্রহ। সেখান থেকে বিস্ফোরক ইনিংসে দলকে আড়াইশ ছাড়ানো পুঁজি এনে দেওয়ার কৃতিত্ব লর্কান টাকারের।
ষষ্ঠ উইকেটে কিছুটা সহায়তা পান কার্টিস ক্যাম্পারের। তাদের ৬০ রানের জুটিতে দুইশ স্পর্শ করে আয়ারল্যান্ডের রান। এরপর প্রায় একাই খেলেন টাকার। ৩৫ বলে ফিফটি পাওয়া এই কিপার-ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৮২ রানে। তার ৫৩ বলের ইনিংস গড়া ৯ চার ও দুই ছক্কায়।
৫৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইমার্জিং দলের সেরা বোলার মুকিদুল ইসলাম। কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল দেন কেবল ২৮ রান। ঝড় বয়ে যায় খালেদ আহমেদের ওপর দিয়ে; ৭৬ রান দিয়ে এই পেসার উইকেটশূন্য।
রান তাড়ায় দ্রুত তানজিদ হাসানকে হারায় বাংলাদেশ। বাঁহাতি এই ওপেনার খেলছিলেন দেখেশুনেই। গুটিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। তবুও শেষরক্ষা হয়নি, প্রিটোরিয়াসের বলের লাইন মিস করে হন এলবিডব্লিউ।
অন্য প্রান্তে শুরু থেকেই শট খেলছিলেন সাইফ। রানও আসছিল দ্রুত। মাহমুদুল হাসান পান থিতু হওয়ার সময়। অধিনায়কের সঙ্গে তার জুটি জমে উঠেছিল। এমন সময়ে লেগ স্পিনার গ্যারেথ ডেলানির বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মাহমুদুল। ভাঙে ৫২ রানের জুটি।
বেশি দূর যেতে পারেননি ইয়াসির আলি চৌধুরি। পিটার চেইসের ভেতরে ঢোকা বলে ফিরে যান বোল্ড হয়ে। তার বিদায়ের পর একটু কমে রানের গতি।
সাইফ ও হৃদয় দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে টানেন দলকে। ১৪.১ ওভারে দুই জনে গড়েন ৬৮ রানের জুটি।
৯৩ রান থেকে সাইফ পুল করে চার হাঁকানোর পরের বল কাভার ড্রাইভে ওড়ান ছক্কায়, সেঞ্চুরি হয় ১০৮ বলে। এরপর টিকেননি বেশিক্ষণ। ডেলানিকে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে শেষ হয় তার পথচলা।
১২৫ বলে ১১ চার ও ৫ ছক্কায় ১২০ রান করেন সাইফ।
ক্রিজে গিয়েই দুটি বাউন্ডারি মারেন শামীম। শট খেলতে শুরু করেন হৃদয়ও। ৩০ বলেই পঞ্চাশ স্পর্শ করে তাদের জুটি। অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ইমার্জিং দল।
৪৪ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। তার সঙ্গে ৬৯ রানের জুটিতে শামীমের অবদান ৪৪। টানা দুই চারে ম্যাচ শেষ করে দেওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ২৫ বলের ইনিংসে ৭ চারের পাশে ছক্কা একটি।
আগামী শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে চতুর্থ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দল: ৫০ ওভারে ২৬০/৭ (ম্যাককলাম আহত অনুপস্থিত ৪০*, প্রিটোরিয়াস ৭, ললোর ২১, টেক্টর ৩৬, ক্যাম্পার ৪৩, টাকার ৮২*, ডেল্যানি ৯, গেটকেট ১, হিউম ১, গ্যারেথ ৪; মুকিদুল ১০-১-৫৩-৩, সুমন ১০-০-৫১-১, খালেদ ১০-০-৭৬-০, রকিবুল ১০-০-২৮-০, সাইফ ৪-০-২১-০, শামীম ২-০-৯-০, হৃদয় ৪-০-১৮-১)
বাংলাদেশ ইমার্জিং দল: ৪৫.৩ ওভারে ২৬৪/৪ (সাইফ ১২০, তানজিদ ১৭, মাহমুদুল ১৬, ইয়াসির ১৩, হৃদয় ৪৩*, শামীম ৪৪*; হিউম ৮-১-৪১-০, চেইস ৮.৩-০-৫২-১, প্রিটোরিয়াস ৮-২-৪১-১, গার্থ ৮-০-৫৭-২, ডেলানি ১০-০-৫২-২, ডেল্যানি গেটকেট ৩-০-১৭-০)
ফল: বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ২-০তে এগিয়ে