খেলাধুলা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তুলনামূলক দুর্বল দল যুক্তরাষ্ট্র। দলটির নিজস্ব কোনো খেলোয়াড় নেই। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গঠন করেছে বিশ্বকাপের সহ আয়োজক দেশটি।

আইসিসির এই সহযোগী দলটির বিপক্ষে লড়াই করেও জিততে পারেনি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের ম্যাচে সুপার ওভারে হেরে যায় পাকিস্তান। এই পরাজয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান নবম আসর থেকে বিদায়ের শঙ্কায় পড়ে গেল বাবর আজমরা।

আগামী পরশু রোববার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। সেই ম্যাচে হেরে গেলেই গ্রুপপর্ব থেকে পাকিস্তানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।

বিশ্বকাপের ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই করেছে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল। শেষ বলে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রান। হারিস রউফের করা ইনিংসের একিবারে শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ টাই করেন নীতিশ কুমার।

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারে দলের সেরা পেস বোলার মোহাম্মদ আমিরের হাতে বল তুলে দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। সুপার ওভারে ১৮ রান খরচ করে ১ উইকেট শিকার করেন মোহামবমদ আমির।

সুপার ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। প্রথম বলে কোনো রান নিতে পারেননি ইফতেখার আহমেদ। দ্বিতীয় বলে হাঁকান বাউন্ডারি। পরের ডেলিভারিতে ওয়াইড। তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ইফতেখার আহমেদ।

জয়ের জন্য শেষ তিন বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। পাকিস্তান শেষ তিন বলে ৮ রানের বেশি করতে পারেনি। সুপার ওভারে পাকিস্তান করে এক উইকেট হারিয়ে ১৩ রান। ৫ রানের জয়ে সুপার এইটে ওঠার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে বিশ্বকাপের চলতি আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ১৯৫ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করে দাপুটে জয় পায় যুক্তরাষ্ট্র। আজ পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথে একধাপ এগিয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের গ্রান্ড প্যারিস স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যাওয়া পাকিস্তান, শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করতে সক্ষম হয়েছে। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে ম্যাচ টাই করে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট হন তারকা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ফেরেন ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে নামা উসমান খান। এরপর ৪.৪ ওভারে স্কোর বোর্ডে মাত্র ২৬ রান জমা হতেই তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তারকা ব্যাটসম্যান ফখর জামান।

মাত্র ২৬ রানে প্রথম সারির ৩ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন অধিনায়ক বাবর আজম ও সহঅধিনায়ক শাদাব খান। চতুর্থ উইকেটে তারা ৪৮ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন।

এরপর কোনো রান যোগ করার আগেই সাজঘরে ফেরেন শাদাব খান ও আজম খান। শাদাব খান ২৫ বলে এক চার আর ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রান করলেও শূন্য রানে ফেরেন আজম খান।

দলের এই ব্যাটিং বিপর্যয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন অধিনায়ক বাবর আজম। ১৫.৫ ওভারে দলীয় ১২৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তিনি। তার আগে ৪৩ বলে দুই চার আর তিন ছক্কায় মাত্র ৪৪ রান করেন বাবর। এই রান করার পথেই ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলিকে ছাড়িয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েন বাবর।

১২০ বলে ১৬০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে এক উইকেটে ১০৪ রান করে জয়ের পথেই ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারালে রান তোলার গতি কমে যায়।

কিন্তু দলকে জয় উপহার দিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন মোনাঙ্ক প্যাটেল। তিনি ৩৮ বলে ৭টি চার আর এক ছক্কায় ৫০ রান করে ফেরেন। ২৬ বলে ৩৫ রান করেন আন্দ্রেস গৌস। ২৬ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন অ্যারন জোন্স। আর ১৪ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন নীতিশ কুমার। তিনি শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ টাই করেন। তখন ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে সুপার ওভারে জয় পায় যুক্তরাষ্ট্র।

খেলাধুলা

তারা হয়ত বয়সে আর তরুণ নন, তবে তাদের খেলায় তারুণ্যের ছাপ স্পষ্ট। এখনো ক্রিকেট মাঠে তারা ব্যাটে ঝড় তোলেন, বোলিংয়ে ত্রাস জাগান। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বিভিন্ন দলে বেশ কয়েকজন ‘বয়স্ক’ ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখাতে প্রস্তুত।

চলুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক, এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি বয়সি ৬ ক্রিকেটার কারা…

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ৩৮ (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের সবচেয়ে ‘প্রবীণ’ সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৮ বছর বয়সেও জাতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এই অলরাউন্ডার। দলে তরুণ প্রজন্মের অনেক ক্রিকেটার যখন ফর্মহীনতায় খাবি খাচ্ছেন, তখন মাহমুদউল্লাহ ব্যতিক্রম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে রয়েছে একটি ফিফটি এবং দুটি বিশোর্ধ্ব ইনিংস, এছাড়া দুটি ইনিংসে ছিলেন অপরাজিত। এবারের বিশ্বকাপে দলের বেশিরভাগ ব্যাটার আত্মবিশ্বাস সংকটে রয়েছেন। সেখানে মাহমুদউল্লাহ তার অভিজ্ঞতা দিয়ে চমক দিতে পারেন। যেমনটা দিয়েছিলেন গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর দলে সুযোগ পেয়ে আসরে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান এসেছিল তার ব্যাটে।

ফ্রাঙ্ক এনসুবুগা, ৪৩ (উগান্ডা)

প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে উগান্ডা। আর দেশের হয়ে খেলতে নেমেই ইতিহাস গড়েছেন ফ্রাঙ্ক এনসুবুগা। এবারের বিশ্বকাপে বেশি বয়সি ক্রিকেটার মাঠে নেমেই গড়েছেন অনন্য এক কীর্তি। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৪ অভার বল করে স্রেফ ৪ রান খরচ করে নিয়েছেন ২ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই এখন সবচেয়ে কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড। ৪৩ বছরের এনসুবুগা প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছেন বুড়ো হাড়ের ভেলকি কাকে বলে!

নাসিম খুশি, মোহাম্মদ নাদিম ৪১ (ওমান)

চলতি বিশ্বকাপে গড় বয়সের দিক দিয়ে ওমান সবার চেয়ে এগিয়ে। দলটিতে একজন নয়, দু’জন চল্লিশোর্ধ্ব ক্রিকেটার রয়েছেন। এর মধ্যে নাসিম খুশি উইকেটকিপার এবং মোহাম্মদ নাদিম পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল নাসিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটযাত্রা। এরই মধ্যে ওমানের জার্সিতে ৫০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তার।

মোহাম্মদ নাদিমের অভিষেক হয় ২০১৫ সালে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তিনি।  ৫৩টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে ৪৮৯ রান করার পাশপাশি ঝুলিতে পুরেছেন ৩০ উইকেট।

ওয়েসলি বারেসি, ৪০ (নেদারল্যান্ডস)

কমলা শিবিরের সবচেয়ে বেশি বয়সি ক্রিকেটার উইকেটকিপার ওয়েসলি বারেসি। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জন্ম নেওয়া বারেসির নেদারল্যান্ডসের হয়ে অভিষেক হয়ে ২০১০ সালে। ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। এর বছর দুয়েক পর ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে যাত্রা শুরু করেন তিনি।

ডাচদের হয়ে এরই মধ্যে ৪৬টি-টোয়েন্টিতে ৮১২ রান করেছেন, ডিসমিসালের সংখ্যা ২৯। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে একাদশে জায়গা হয়নি তার। তবে সুযোগ পেলেই বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখাতে পারেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

মোহাম্মদ নবী, ৩৯ (আফগানিস্তান)

আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী এখনো দলটির বড় নির্ভরতার নাম। মারকুটে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কার্যকরী অফ স্পিনে ৩৯ বছর বয়সেও দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলেছেন নবী, যা তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।

আফগানিস্তানের মিডল অর্ডারে ব্যাটিং এবং মিডল ওভারে কিপটে বোলিং করে দলকে বিশ্বকাপে দারুণ কিছু এনে দিতে পারেন এই অলরাউন্ডার।

খেলাধুলা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একসময় ক্রিকেট ছিল জনপ্রিয় খেলা। হাসবেন না। এই তথ্য একদম সত্য। ১৮৪৪ সালে নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জেস ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি হয়েছিল। তিনদিনের সেই ম্যাচে কানাডা জিতেছিল ২৩ রানে। রেকর্ড বইয়ে এটাই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। বিংশ শতাব্দীতে ক্রিকেটকে একটি মহৎ ক্রীড়ার মর্যাদা দিয়ে এর প্রচলন হ্রাস পেতে থাকে দেশটিতে। আর বেসবল, বাস্কেটবল, বক্সিং, রেসলিংকে মার্কিনিরা বরণ করে নেন তাদের পছন্দের খেলা হিসাবে।

১৮০ বছর পর সেই যুক্তরাষ্ট্রে টি ২০ বিশ্বকাপের দ্বারোদ্ঘাটন হচ্ছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ দিয়ে। উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচ আজ শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের দর্শকরা অবশ্য টিভি সেটের সামনে বসবেন রোববার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। একইদিন ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র গায়ানায় দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ পাপুয়া নিউগিনি। এই ম্যাচটি রোববার রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে দেখতে পাবেন বাংলাদেশের দর্শকরা।

টি ২০ মানে চার-ছয়ের বৃষ্টি। রানের বন্যা। বোলারদের অসহায়ত্ব। দর্শকদের আনন্দ। কুড়ি-বিশ ক্রিকেটের আনন্দে ডুব দিতে দুবছর পর টি ২০ বিশ্বকাপ এলো এমন দুটি উঠোনে, ক্রিকেটীয় সৌকর্য, গরিমায় যাদের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। ক্রিকেটীয় আভিজাত্য ও অহংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্থান অনেক উপরে। যদিও সময়ের নিষ্ঠুর থাবায় সেই অহংকারের পলেস্তারা অনেকটাই খসে পড়েছে। বিপরীতে ক্রিকেটের বিশ্বায়নে আইসিসি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বকাপের সহআয়োজকের মর্যাদা দিয়েছে, যাদের বলতে গেলে পুরো দলটাই অভিবাসীদের নিয়ে গড়া। গুগল জানাচ্ছে, নিউইয়র্ক থেকে গায়ানার জর্জটাউনে আকাশপথে সরাসরি ফ্লাইটে যেতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের আয়োজনও এই দূরত্বের মতো দুর্বোধ্য। আইসিসির মশকরাও হতে পারে, যেখানে ক্রিকেট যাপিত জীবনের ভূষণ আর যেদেশে খেলাটি ‘আগুন্তুক’ তাদেরকে একই বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়া।

একসময় মানুষের স্বাধীন ও উন্নত জীবনের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষার প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিল ‘আমেরিকান ড্রিম’। স্বপ্নের জীবনের খোঁজে স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে উন্মুখ থাকত সবাই। ফুটবলের মতো সত্যিকারের বৈশ্বিক খেলা হয়ে উঠতে আমেরিকান ড্রিমে আচ্ছন্ন হয়ে অবশেষে ক্রিকেটও পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। খেলাটির তিনটি সংস্করণের মধ্যে টি ২০ এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তাকে উন্মাদনায় রূপ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে টি ২০ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আসরটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজনের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে ক্রিকেটের উসর ভূমিতে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ২০ দলের ২০২৪ টি ২০ বিশ্বকাপের। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে টেক্সাসের ডালাসে উদ্বোধনী ম্যাচে পড়শি কানাডার মুখোমুখি হবে সহআয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে এই প্রথম মুখোমুখি হতে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকার দুটি দেশ।

টি ২০ বিশ্বকাপের নবম আসরের ১৬টি ম্যাচ হবে যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভেন্যু ফ্লোরিডা, টেক্সাস ও নিউইয়র্কে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ বাকি ৩৯টি ম্যাচ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয় ভেন্যুতে। ২০টি দল লড়বে চার গ্রুপে ভাগ হয়ে। পাঁচ দলের প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল পাবে সুপার এইট পর্বের টিকিট। সুপার এইটে থাকবে দুটি গ্রুপ। দুই গ্রুপ থেকে দুটি করে দল উঠবে সেমিফাইনালে। ২৭ জুন দুই সেমিফাইনালের পর ২৯ জুন বারবাডোজে ফাইনাল। ২০ দলের মধ্যে টি ২০র মহাযজ্ঞে এবারই অভিষেক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও উগান্ডার।

টি ২০ বিশ্বকাপের সব আসরে খেলা দলগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশই কখনো সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। এবারও সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। গ্রুপপর্ব পেরোনোই হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের চার প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল।

৮ জুন সকালে ডালাসে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। শিরোপার প্রশ্নে ‘ডি’ গ্রুপের কোনো দলই নেই ফেভারিটের কাতারে। এবার ফেভারিট ভাবা হচ্ছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে পাকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা মূলত প্রবাসী এশিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। টি ২০ বিশ্বকাপ দিয়ে দেশটির মূল জনগোষ্ঠীকে ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট করতে চায় আইসিসি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে পারলে ক্রিকেটের বিশ্বায়ন হবে আরও দ্রুত। বেসবল ও বাস্কেটবলের দেশ হিসাবে পরিচিত হলেও একসময় ক্রিকেটও জনপ্রিয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরুর আগে। ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে ইতিহাসের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। তারও বেশ আগে ১৮৪৪ সালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দুদিনের একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। সেই হিসাবে এই দুদলই ক্রিকেটের প্রাচীনতম প্রতিদ্বন্দ্বী! সময়ের পরিক্রমায় পরে উত্তর আমেরিকা থেকে ক্রিকেট নির্বাসিত হওয়ায় টি ২০ বিশ্বকাপে পাঁচমিশালি দল নিয়ে নিজেদের নতুন যাত্রা শুরু করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে।

খেলাধুলা

একাদশের ১১জন খেলোয়াড় একত্রে জ¦লে উঠলে, বিশে^র যেকোন দলকে যেকোন দিন বাংলাদেশ হারানোর সামর্থ্য রাখে বলেমন্তব্য করেছেন টাইগারদের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ও নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে তানজিম জানান, যেকোন দলকে হারানোর মতো দক্ষতা আমাদের আছে।

এ মাসেই ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতে দারুন চাঙ্গা ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। বিশ^কাপের আগে র‌্যাংকিংয়ের ১৯তম দল (বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ১৮তমস্থানে আছে) যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হেরে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের আত্মবিশ^াসে চিড় ধরেছে। কিন্তু এমনটা মানতে নারাজ তানজিম।

বাংলাদেশ দল মানসিকভাবে চাঙ্গা আছে বলে ফেসবুকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জানান তানজিম, ‘আমাদের দল খুবই আত্মবিশ্বাসী। আমাদের দল মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী আছে। বন্ধনও খুব শক্তিশালী। আমরা চাইলে যেকোন দলকে হারাতে পারি। আমাদের এগারো জন যদি মাঠে ঐদিন সেরাটা দিতে পারে, তাহলে কোন দলই আমাদের সামনে ব্যাপার না। আমরা যেকোন দলকে হারানোর মতো দক্ষতা রাখি।’

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিষেক হয় তানজিমের। এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ^কাাপে খেলবেন তিনি। বিশ^কাপে দলে সুযোগ পাওয়াটা তানজিমের কাছে স্বপ্নের মত লাগছে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে নিজের দেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করা। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকাটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। বিশ^কাপ দলে আমি আছি, এটা স্বপ্নের মত। এটা শুরু থেকেই ছিল। আমি যখন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলি, তখন থেকে আমার লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলবো। কখনও আমার আত্মবিশ্বাস কম ছিল না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারবো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নিজেকে সেভাবেই তৈরি করেছি। আমার লক্ষ্যই ছিলো এই পর্যায়ে গিয়ে আমাকে আধিপত্য বিস্তার করতে হবে।’

বিশ^কাপে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে দলের জয়ে অবদান রাখতে চান তানজিম, ‘বিশ্বকাপ সব সময়ই রোমাঞ্চকর। এটা সবারই লক্ষ্য। আশা থাকে বিশ্বকাপে খেলবো, সেখানে খেলে যেন দেশকে কিছু দিতে পারি। আমারও একই লক্ষ্য থাকবে। যদি সুযোগ পাই, আমার পারফরমেন্সে যেন দল বিজয় লাভ করে।’

বিশ^কাপের মত বড় মঞ্চে প্রথমবার খেলতে নেমে দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মত মানসিকভাবে শক্ত থাকতে চান তানজিম। তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের যে কঠিন মানসিকতা, সেটা আনার চেষ্টা করবো। সব সময় ভালো লাগে, তিনি মানসিকভাবে শক্ত থাকেন। যেকোন পরিস্থিতি খুবই শান্তভাবে সামাল দিতে পারেন। তার এ ব্যাপারটি আমার খুব ভালো লাগে।’

২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলে ছিলেন তানজিম। সেখানে তার সতীর্থ অনেকেই বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছেন।

তাদের মধ্যে ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং ভালো লাগে তানজিমের। হৃদয়ের ব্যাটিং নিয়ে তানজিম বলেন, ‘তাওহিদ হৃদয় আমার পছন্দের ব্যাটসম্যান। তার ব্যাটিং খুবই উপভোগ করি। তার হিটিং আমার খুবই ভালো লাগে। নেটে বল করতেও ভালো লাগে। তার এবং আমার মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জিং অবস্থা কাজ করে। আমি সব সময় তাকে বলি, আমাকে ছয় মারেন! ছয় মারেন! তো, আমি সব সময় তাকে চ্যালেঞ্জ দিই, সেও মজা পায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে।’

খেলাধুলা

মা বলতেন, তোর তামিম ভাই, সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাইদের দলে তুই কবে খেলবি। এটাই ছিল জাকের আলীর মায়ের স্বপ্ন। তাই তার বাংলাদেশ দলের অংশ হওয়া মানে, মায়ের স্বপ্ন পূরণ হওয়া।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা হবিগঞ্জের এই কিপার-ব্যাটার তাই খুশি মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য জাকের মঙ্গলবার বিসিবির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় কথা বলেছেন তিনি।

জাকের বলেন, ‘দল হিসাবে আমি চাইব, প্রতিটি ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স করতে এবং জিততে। দেশের জন্য বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে। এ বিষয়টা সব সময় ভাবনায় থাকে। ইচ্ছা আছে, যা আগে অর্জন করতে পারিনি, এবার যেন তা অর্জন করতে পারি।’

তিনি যোগ করেন, ‘যখন শুনলাম আমি দলে আছি, তখন থেকে ম্যাচ দেখা শুরু করে দিয়েছি। কার সঙ্গে কীভাবে খেলতে হবে, কোন প্রতিপক্ষের সঙ্গে কী রকম কৌশল নিতে হবে, সেগুলো নিয়ে ভাবছি। সেভাবেই এগোচ্ছি।’

তার কথায়, ‘কাছের সবাই গর্ববোধ করে। আম্মার স্বপ্ন ছিল, আমি দেশের হয়ে খেলব। উনি সব সময় বলতেন, তোর তামিম ভাই, সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাইদের দলে তুই কবে খেলবি। এটাই আমার আম্মার স্বপ্ন ছিল। এখন তিনি খুব গর্ববোধ করেন। আব্বা যতদিন ছিলেন, মাঠে বসে থাকতেন। আব্বা যখন থাকতেন না, আমার বোন নিয়ে যেত।’

জাকের বলেন, ‘আমার বড় ভাইকে দেখে ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমি যখন ক্রিকেট দেখা শুরু করি, সেসময় আমার ভাইও ক্রিকেট খেলত। এসব কারণে সবার ভালো সমর্থন পেয়েছি। আমি ২০১০ সালে বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিই, এখানে আসার পর স্বপ্ন বড় হতে থাকে। শুরুতে স্বপ্ন এত বড় ছিল না। তবে এখানে এসে যখন বড় ভাইদের দেখলাম, মনে হলো স্বপ্ন বড় করতে হবে। যদি আমি হবিগঞ্জে বসে থাকতাম, আমার মনে হয় না এতদূর আসতে পারতাম।’

খেলাধুলা

সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৮ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)।

কেকেআরের তৃতীয় শিরোপা জয়ে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে দলটির মেন্টর গৌতম গম্ভীরকে। গম্ভীরকে নিয়ে বেশি আলোচনা হওয়ায় আড়াল হয়ে যাচ্ছে কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের কৃতিত্ব।

তবে কেকেআরের তৃতীয় শিরোপা জয়ের নেপথ্যের নায়ক যে গম্ভীর নন, এমনটাই দাবি করলেন বরুণ চক্রবর্তী। তাকে সমর্থন করেন বেঙ্কটেশ আইয়ারও।

আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে বরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘সবাই কোচেদের কথা বলছেন, তবে আমি মনে করি কেকেআরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মূল ভিত্তিটা তৈরি করেছেন একজন। আমি অভিষেক নায়ারকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমাদের তৃতীয় শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান তার। পুরো মৌসুমে অভিষেক নায়ার কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তিনি পর্দার আড়ালে কাজ করেন, তাই কৃতিত্ব পান না। তবে নেপথ্যের নায়ককে কুর্নিশ জানানো উচিত।’

বরুণের মতো একই সুরে বেঙ্কটেশ আইয়ার বলেন, ‘বরুণ যে কথা বলল, যাবতীয় কৃতিত্ব পাওয়া উচিত অভিষেক নায়ারের। কিছু লোকের অবদান সবার নজরে পড়ে না। তবে অভিষেক নায়ারের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে যে রকম দায়িত্ব পালন করেছেন, সব কৃতিত্ব ওনার।’

খেলাধুলা

আঁটসাঁট বোলিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রেখে রেকর্ড গড়লেন রিশাদ হোসেন।

অভিষেকের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করা রিশাদ হোসেন এবার নাম তুললেন রেকর্ড বইয়ে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড গড়লেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে শনিবার ৪ ওভারে এক মেডেনসহ কেবল ৭ রান দেন রিশাদ। উইকেট নেন একটি।

খরুচে বোলিংয়ের শঙ্কায় ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে একটা সময় জাতীয় দলেও লেগ স্পিনাররা তেমন সুযোগ পেতেন না। এবার লেগ স্পিনেই সবচেয়ে কম রান দেওয়ার কীর্তি গড়লেন রিশাদ।

এতদিন রেকর্ডটি ছিল মাহমুদউল্লাহর। মিরপুরে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ৪ ওভারে এক মেডেনসহ ৮ রানে ১ উইকেট নিয়েছিলেন অভিজ্ঞ এইঅফ স্পিনার। ১০ বছরের বেশি সময় পর সেই রেকর্ড নিজের করে নিলেন ২১ বছর বয়সী রিশাদ।

ম্যাচে সব মিলিয়ে ১৭টি ডট বল করেন রিশাদ। বাকি ৭ বল থেকে একটি করে সিঙ্গেল নেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানরা।

টেক্সাসের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে পাওয়ার প্লে শেষে সপ্তম ওভারে প্রথম বোলিংয়ে আনা হয় তাকে। প্রথম ওভারে দেন ২ রান। পরের ওভার করেন মেডেন। এরপর ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে এসে দ্বিতীয় বলে তিনি নেন মিলিন্দ কুমারের উইকেট।

এ সময় তিন ওভার মিলিয়ে টানা ১৩টি ডট বল করেন রিশাদ। তার শেষ ওভার থেকে ৩ রান নিতে পারেন কোরি অ্যান্ডারসন ও শ্যাডলি ফন স্কালকয়েক।

যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংসে রিশাদ ছাড়াও একটি করে মেডেন নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান। এই সংস্করণে এবারই প্রথম কোনো ম্যাচে ৩টি মেডেন ওভার করলেন বাংলাদেশের বোলাররা।

এর আগে তিনবার আছে ২টি করে মেডেন ওভারের নজির।

খেলাধুলা

মোস্তাফিজুর রহমানের রেকর্ড গড়া ম্যাচে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ এড়াল টাইগাররা।

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটিতে টানা জয়ে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র। আজ শেষ ম্যাচে জিতে সিরিজে ২-১ ভাগ বসাল টাইগাররা।

এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে মোস্তাফিজের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১০৪ রানে ইনিংস গুটায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ দলের হয়ে মোস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন।

১২০ বলে ১০৪ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে দলকে ৫০ বল আগেই ১০ উইকেটের বড় জয় উপহার দেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। দুজনে ৭০ বলে ১০৮ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

দলের জয়ে ৪২ বলে ৫টি চার আর ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৫৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তানজিদ হাসান তামিম। এছাড়া ২৮ বলে ৪টি চার আর দুই ছক্কায় ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সৌম্য সরকার।

আজ শনিবার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্বোধনীতে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে ৪.৫ ওভারে ৪৬ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার অ্যান্ড্রিস গাউস ও শায়ান জাহাঙ্গীর।

এরপর মাত্র ১৪ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। বিনা উইকেটে ৪৬ রান করা যুক্তরাষ্ট্র এরপর ৫৮ রানের ব্যবধানে হারায় ৯ উইকেট। একের পর এক উইকেট পতনের কারণে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১০৪ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওপেনিং জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। তার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন অ্যান্ড্রিস গাউস। সাজঘরে ফেরার আগে মাত্র ১৫ বলে ৫টি চার আর এক ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন শায়ান জাহাঙ্গীর। তিনি ২০ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় ১৮ রান করে ফেরেন। তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা নীতিশ কুমারকে আউট করেন মোস্তাফিজ। তিনি ৯ বলে ৩ রানে ফেরেন।

অধিনায়ক অ্যারন জোন্সকে আউট করেন তানজিম হাসান সাকিব। মিলিন্দ কুমারকে আউট করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র শিবিরে একের পর এক আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। তার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন শ্যাডলি ভ্যান শাল্কউইক, জসদীপ সিং ও কোরি অ্যান্ডারসন। নিসরাগ প্যাটেলকেও আউট করেন মোস্তাফিজ।

জাতীয় দলের এই তারকা পেসার ৪ ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ১০ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন।

খেলাধুলা

সোহাগ-কাণ্ডে অবশেষে ফেঁসে গেলেন সালাম মুর্শেদীও। গত বছর আর্থিক অনিয়ম ও ক্রয়-সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা। এবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও অর্থ কমিটির প্রধান সালাম মুর্শেদীকে সে ঘটনায় জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা।

ফিফার স্বাধীন নৈতিকতাবিষয়ক কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার সালাম মুর্শেদীকে নৈতিকতা নীতিমালার ধারা ১৪-এর আওতায় এ জরিমানা করেছে। তারা জানিয়েছে, সব ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। আবু নাঈম সোহাগের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদও বেড়েছে আরও এক বছর।

ফিফার স্বাধীন নৈতিকতাবিষয়ক কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার মনে করে, সে ঘটনায় বাফুফের অর্থ কমিটির প্রধান হিসেবে সালাম মুর্শেদী দায় এড়াতে পারেন না। সে ঘটনায় ক্রয় ও অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়াগুলোতে দেওয়া হয়েছিল মিথ্যা তথ্য, ক্রয়াদেশ ছিল ত্রুটিপূর্ণ, সেই সঙ্গে ভুয়া দলিলও পরিবেশন করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, ক্রয়সংক্রান্ত অনেক কাগজপত্রে তাকে সই করতে হয়। বাফুফের কর্মচারীরা যা দেয়, সেটার ওপরই কাজ করেন। অনেক সময় স্ক্যান করা সইও ব্যবহৃত হয়। যদি দায়িত্বে অবহেলা হয়, তাহলে জরিমানা দিয়ে দেবেন তিনি। তবে এর মানে এই নয় যে, সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা আজ শুক্রবার দেবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক তারকা ফুটবলার মুর্শেদী।

খেলাধুলা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মতো আইসিসির সহযোগী দলের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হারের লজ্জার নজির গড়ল টাইগাররা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হাতছাড়া সাকিব-শান্তদের।

আগামী মাসের শুরুতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের নবম আসরে অংশ নেওয়ার আগে প্রস্তুতি জোরদারের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ।

আইসিসির এই সহযোগী সদস্য দলের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করে লজ্জার নজির গড়ল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৫৩/৬ রান করে ৫ উইকেটে হারে টাইগাররা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪৫ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১৩৮ রানে অলআউট হয় নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দলটি। দলের চরম ব্যাটিং বিপর্য়য়ের কারণে ৬ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে তাওহিদ হৃদয়ের ৫৮ রানের ইনিংসের পরও ১৫৩ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে হেরে ব্যাকফুটে চলে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দলটি।

আজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। এই ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৪৪ রান করে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্বোধনী জুটিতে ৬.৩ ওভারে ৪৪ রান করেন দুই ওপেনার স্টেভেন টেলর ও মোনাঙ্ক প্যাটেল।

২৮ বলে তিন চার আর দুই ছক্কায় ৩১ রান করে রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিনে বিভ্রান্ত হন স্টেভেন টেলর। তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল্ডেন ডাক মারেন আন্দ্রিস গুস। পরপর দুই বলে ২ উইকেট শিকার করে দলকে খেলায় ফেরান রিশাদ।

এরপর অ্যারন জোন্সকে সঙ্গে নিয়ে ৫৬ বলে ফের ৬০ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। ৩৪ বলে তিন চার আর এক ছক্কায় ৩৪ রান করে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন অ্যারন জোন্স।

পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০ বলে ১১ রান করে শরিফুলের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক তারকা অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসন।

ওই ওভারের চতুর্থ বলে ওপেনার মোনাঙ্ক প্যাটেলকে বোল্ড করেন শরিফুল। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৮ বলে চারটি চার আর এক ছক্কায় ৪২ রান করেন মোনাঙ্ক প্যাটেল।

২০তম ওভারে মোস্তাফিজের প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন হারমিত সিং। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান করে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ দলের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। ২ উইকেট নেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১ রানে ১ উইকেট পতনের পর ইনিংস মেরামত করার আগেই আউট হন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামমি। তিনি দলীয় ৩০ রানে ফেরেন।

এরপর তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৩৭ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়ে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সাম্প্রতিক সময়ে অফ ফর্মে থাকা অধিনায়ক শান্ত এদিনও বড় স্কোর গড়তে পারেননি। আগের ম্যাচে মাত্র ৩ রানে আউট হওয়া শান্ত এদিন ফেরেন ৩৪ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় ৩৬ রান করে।

দলীয় ৯২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। তিনি ২১ বলে ২৫ রান করে ফেরেন। আগের ম্যাচে করেছিলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৫৮ রান। দলীয় ১০৬ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সাকিব ২৩ বলে ৩০ রান করে ফেরেন। এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেন জাকির আলি অনিক, তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলাম ও রিশাদ হোসেনরা। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে হাতে ৪ উইকেট থাকার পরও শেষ ১৮ বলে ২১ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ।