জাতীয়

দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্টের তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।

তারা হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।

মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদ মতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিয়াছেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়াছেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এই তিন বিচারপতিকে প্রায় ৫ বছর ধরে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।

জাতীয়

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে জাতীয় পার্টির সাবেক এক সংসদ সদস্যকে জনতা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে।

রোববার বিকালে চুনারুঘাট পৌরসভার পশ্চিম পাকুড়িয়া খোয়াই বেইলি ব্রিজে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল পিটুনির শিকার হন বলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান জানান।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা রানা (৫৮) ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, বিকালে রানা মোহাম্মদ সোহেলকে বহনকারী গাড়িটি শ্রীমঙ্গল থেকে সাতছড়ি যাওয়ার পথে চুনারুঘাট খোয়াই বেইলি ব্রিজে যানজটের মুখে পড়ে।

এ সময় গাড়িটি পেছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রানা মোহাম্মদ সোহেল তার সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়েন।

তখন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আশপাশের মানুষ সেখানে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে জনতা রানা মোহাম্মদ সোহেলের ওপর চড়াও হয়। পরে তারা পুলিশকে খবর দেয়।

চুনারুঘাট থানার ওসি মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “পিস্তলসহ রানা মোহাম্মদ সোহেলকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার বাড়ি রংপুর জেলার কেরানীপাড়া এলাকায়। তিনি রাস উৎসব দেখতে শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন। পরে শ্রীমঙ্গল থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান বলেন, “সেনাবাহিনী তাদের লোক হিসেবে তাকে হেফাজতে নিয়ে গেছে। আমরা তার অস্ত্রটি জব্দ করেছি। অস্ত্রটি লাইসেন্স করা কিনা যাচাই-বাচাই চলছে।”

তিনি বলেন, “সাবেক মেজর কেন কী কারণে গুলি করলেন বিষয়টি তদন্ত করলে জানা যাবে।”

জাতীয়

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে তিনদিনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগ না হলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গকে বিচ্ছিন্নের হুঁশিয়ারি দিয়েছে রংপুরের ছাত্র-জনতা।

রোববার সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। উপদেষ্টা পরিষদে রংপুর বা উত্তরাঞ্চলের কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলবাসী তাদের দাবি আদায়ে আরও কঠোর আন্দোলনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ সময় বক্তারা জানান, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পর দেশে যে বিপ্লব ঘটে, তাতে সরকার পতনের পর ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নিলেও উত্তরবঙ্গ থেকে একজনও উপদেষ্টা নিয়োগ হয়নি। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েক দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ হলেও রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের কেউ স্থান পাননি। এ নিয়ে উত্তরের ছাত্র-জনতার মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সম্প্রতি রংপুরে দুজন উপদেষ্টা এলে তারা এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান। এ কথা জানার পর রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিনদিনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগ না হলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় ধরনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

উপদেষ্টা নিয়োগের দাবির কারণ হিসাবে বলা হয়, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রংপুর অঞ্চল উন্নয়নবঞ্চিত, রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদনে অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তিস্তা নদীসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তরবঙ্গের উপদেষ্টার প্রয়োজন। রংপুরের উন্নয়ন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে উপদেষ্টা নিয়োগ অপরিহার্য বলে তারা মনে করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির রংপুর জেলা সমন্বয়ক ইয়াসীর আরাফাত, আলমগীর নয়নসহ অন্য নেতারা। তারা বিশ্বাস করেন, দ্রুত উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হবে।

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সংবাদ প্রকাশের জেরে ও দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ছাত্রদল ক্যাডারের নেতৃত্বে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর মাহমুদের মাথা ও শরীর ইট দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তিনি দৈনিক কালবেলা প্রত্রিকার রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।

ঘটনা শেষে ছাত্রদল ক্যাডার ইয়াসিন বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রূপগঞ্জজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রতিবাদে রূপগঞ্জে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে সাংবাদিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ বড় ধরনের আলটিমেটামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছাত্রদল ক্যাডার ইয়াসিন মিয়া ওরফে ফেন্সি ইয়াসিন উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের সোনাব এলাকার আবু বক্করের ছেলে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গোলাকান্দাইল দক্ষিণপাড়া ৫নং ক্যানাল এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যৌথ বাহিনীর একটি দল ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা করে।

রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, কোনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, জমি দখলবাজসহ অপরাধীরা দলের কেউ না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ দলে কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই। অপরাধ করলে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

জাতীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান মুহিবের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখার নামে ৩০টি দলিলে রয়েছে অন্তত ৩৭ একর জমি। সব জমিই পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের আশপাশে। কম করে হলেও এসব জমির মূল্য দেড়শ কোটি টাকা হবে। রেখা একজন কলেজ শিক্ষক হয়ে কীভাবে এত জমির মালিক হলেন তা স্থানীয়দের কাছে এক রকম রহস্য।

তারা বলছেন, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান মুহিব। নির্বাচনে সহজেই তিনি এমপি নির্বাচিত হন। স্বামী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই টাকা আর জমির নেশায় পেয়ে বসে মুহিবপত্নীকে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়েই এত সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর তাপস সাহা গং নামে এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৮শ শতাংশ (৮ একর) জমি কেনেন রেখা। এই জমির অবস্থান ইটবাড়িয়া মৌজায়। দলিল নং-৪৫১২। ২০২৪ সালে ধুলাসার মৌজায় আলমগীর হোসেন হাওলাদারের কাছ থেকে নেন ৫ দশমিক ২৬ একর জমি। ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৬৬৭০নং দলিলে বৌলতলীতে রিয়াজুল ইসলাম মিলন তালুকদারের কাছ থেকে কেনেন ০.৬১ একর জমি। ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট কাউয়ারচর মৌজায় আব্দুস সত্তার গংয়ের কাছ থোকে নেন দেড় একর, দলিল নং ৪১২০। একই সালের ৩১ আগস্ট ১ দশমিক ৩৪ একর জমি কেনেন রেখা। যার দলিল নং ৪১১৯।

২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কাউয়ারচর মৌজায় ৩৯৬২নং দলিলে স্থানীয় দাদন মিয়ার ১ দশমিক ১২ একর জমি কেনেন মাত্র ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ধুলাসার মৌজায় মোশারেফ হাওলাদার গংয়ের কাছ থেকে নেন ১ দশমিক ২১ একর জমি। একই এলাকায় পরের বছরের ১৯ জুন ২৫৪৬নং দলিলে দশমিক ৩৮ একর জমি কেনেন।

২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর ৫২১২নং দলিলে বৌলতলী মৌজায় ১ দশমিক ৩৯ একর ধানী জমি নেন স্থানীয় আবুল কাশেম গংয়ের কাছ থেকে। ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি কাউয়ারচর মৌজায় আবদুল ছত্তার গংয়ের ০ দশমিক ৭৬ একর জমি লিখে নেন রেখা। যার দলিল নং -৪০১১। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ধুলাসার মৌজায় নাজিম সিকদার গংয়ের দেড় একর জমি দলিল করে নেন মহিবপত্নী ফাতেমা আক্তার। যার দলিল নং-৫০১৭। ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর কাউয়ারচরে জলিল গংয়ের ৩৯ শতাংশ জমি বাগিয়ে নেন রেখা।

২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ধুলাসার মৌজার সোনা মিয়া গং ও নুর সাঈদ গংয়ের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকায় কেনেন একটি জমি। একই জায়গায় ৪০৮২নং দলিলে রয়েছে রেখার আরও ৩০ শতাংশ জমি। বৌলতলীতে ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় আজিজুর রহমানের ১০২ শতাংশ জমি মাত্র ৬ লাখ টাকায় দলিল করেন রেখা। দলিল নং-৬৬৭২।

একই সালে তিনি ফিরোজা বেগমের কাছ থেকেও সমপরিমাণ জমি দলিল করেন একই স্থানে। যার দলিল নং-৬৬৭১। ধুলাসারের আব্দুল মালেক গংয়ের ১৯০ শতাংশ, গঙ্গামতিতে ৩০ শতাংশ, ২০২০ সালে রফিকুল ইসলাম গংয়ের কাছ থেকে কেনেন ১৫৪ শতাংশ জমি। এছাড়া ২০১৮ সালে ০.৪৫ একর, ২০১৯ সালে ০.২০ একর, ২০১৭ সালে দেড় একর ও ০.৪২ একর জমি কেনের রেখা।

ধুলাসার ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, স্কুল-কলেজের চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও টিআর কাবিখার কাজ না করে পুরো টাকা লুটপাট করে নিয়েছেন তিনি। সেই অর্থেই কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের মতো জায়গায় এত জমি কিনেছেন তিনি।

ফাতেমা আক্তার রেখা আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কলেজের অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ফাতেমা আক্তার কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রভাষক হয়েছেন। তার বেতন সর্বসাকুল্যে ৩৮ হাজার টাকার মতো।

এসব বিষয়ে জানতে ফাতেমা আক্তার রেখার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার কলাপাড়ার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তালা দেওয়া। স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে রেখাকে কোথাও দেখা যায়নি।

জাতীয়

গত কয়েকবছরের মতো ২০২৫ সালেও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (১৭ নভেম্বর) জনপ্রশাসন বিভাগ থেকে তারিখ চূড়ান্ত করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ও ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ইজতেমার প্রথম পর্ব জুবায়েরপন্থিদের অধীনে ও দ্বিতীয় পর্ব সাদপন্থিদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মুসলমানরা তাবলিগ জামাতের এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারিত্বের বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিরা। ২০১৫ সালে তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির একক নেতৃত্বের বিরোধিতা করেন পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকজন মুরব্বি। তাবলিগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দিন মারকাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শূরা নামে কমিটি গঠন করেন তারা।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশীদারিত্বের বিবাদে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি।

ওই সময়ের ১১ জন শূরা সদস্যের মধ্যে ৬ জন নিজামুদ্দিন মারকাজ ও মাওলানা সাদের পক্ষে অবস্থান নিলেও বাকি ৫ জন তার বিরোধিতা করেন। হেফাজতপন্থি আলেমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হলে বাংলাদেশেও বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ ছড়ায়। এ অংশের বাধায় মাওলানা সাদ ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি। বাংলাদেশে আসলেও ইজতেমায় অংশ না নিয়েই ফিরে যেতে হয় তাকে।

ওই বছরে ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হন।

এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই ভাগ হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। ২০১৯ সাল থেকে আলাদাভাবে বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলিগের কার্যকম পরিচালনা করেন তারা।

জাতীয়

আওয়ামী লীগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংগঠনিকভাবে গণহত্যা করেছিল। অথচ কিছু রাজনৈতিক দল সুবিধার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের আশ্রয় দিচ্ছে।

তাদের বিতাড়িত না করলে ছাত্র-জনতার আরেকটি যুদ্ধ হবে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ১০০ দিন উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের বিচার এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবিতে সমাবেশটি করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সম্প্রতি জনগণ উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। নাগরিক কমিটি এ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট বিবৃতি চায়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা রয়ে গেছে। তাদের হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। তাদের বিতাড়িত করুন। নয়তো ছাত্র জনতাকে আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। যেখানে ছাত্ররাই আগামীর রাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আওয়ামী দোসরদের আশ্রয় দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল টাকা বা অন্য কোনো উপায়ে আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছে। আপনারা এর থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনাদের রাজনৈতিক যন্ত্র-কলাকৌশল ছাত্ররা দখল করে নেবে।

তিনি অভ্যুত্থানে আহতদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা টাকার বিনিময়ে রক্ত বিক্রি করবেন না। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একদল নকল সার্টিফিকেট বানিয়ে আসল মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। ২৪’এর বিপ্লবে আমরা এটা হতে দেব না।

নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে এ গণহত্যা করেছিল। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন ছাত্রদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এদেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য, তাদের দলীয়ভাবে ব্যবহার করেছে।

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

জাতীয়

“আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।”

আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২০২৫ সালের শেষে এ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।

শুক্রবার রাতে তিনি বলেন, “আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।”

একসময় প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও ২০০৯ সালে তা বন্ধ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়। এ পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হত।

তবে করোনাভাইরাস মহামারীর জেরে ২০২০ সালে এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৩ বছর পর ২০২২ সালে ডিসেম্বরে ফের ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বৃত্তির জন্য নির্বাচিত ৮২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়।

তাদের মধ্যে ৩৩ হাজার জন ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) এবং ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন সাধারণ বৃত্তি পায়।

ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ২২৫ টাকা করে পায়। তাছাড়া উভয় ধরনের বৃত্তিপ্রাপ্তদের প্রতি বছর ২২৫ টাকা করে এককালীন দেওয়া হয়।

উপজেলা বা থানায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা বা থানা কোটা নির্ধারণ করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বণ্টন করা হয়। সাধারণ বৃত্তি বিতরণ করা হয় ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক।

সেবার দেশের প্রতিটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরের বছর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় আর বৃত্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “এ বছর তো আর সময় নেই, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনো চিন্তাভাবনার পর্যায়ে আছে।”

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যাওয়ায় আগামী বছর শিক্ষাক্রম সংশোধন হবে। তবে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে আগের শিক্ষাক্রমই বহাল ছিল। তবে আগামী বছর দুই শ্রেণির বই কিছুটা পরিমার্জন করা হবে।

সচিব বলেন, “আগের পাঠ্যক্রমে আমরা ফিরছি। বৃত্তি পরীক্ষাটা আগের মতই নেওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে। সমাপনী পরীক্ষা চালুর আগে যেভাবে বার্ষিক পরীক্ষা আর বৃত্তির জন্য আলাদা একটা পরীক্ষা নেওয়া হত, সেভাবে চিন্তা করা হচ্ছে।”

বৃত্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে- এ প্রশ্নে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণির মূল্যায়ন কোন পদ্ধতিতে হবে তা এনসিটিবি নির্ধারণ করে দেবে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।”

বৃত্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ পোহাতে হয় বলে আগে অভিযোগ ছিল অভিভাবকদের। এ বিষয়ে সচিব বলেন, “আগ্রহী পরীক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। আগেও এমনটি হত।”

জাতীয়
জাতীয়

শুধু ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের কারণে বুকের বাম পাশে ব্যথা হয় না।

ভোঁতা, তীক্ষ্ণ বা চাপ ধরা- অনুভূতি যেমনই হোক, বুকে বা নারীদের ক্ষেত্রে স্তনের তলার দিকে ব্যথা হওয়ার বিষয়কে মোটেই অবহেলা করা যাবে না।

আর সার্বিকভাবেই বুকে ব্যথা হওয়া স্বাস্থ্য সমস্যাকে ইঙ্গিত করে।

এই তথ্য জানিয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ক্যালিফোর্নিয়া’র সান্টা মনিকাতে অবস্থিত ‘প্রোভিডেন্স সেইন্ট জন’স মেডিকেল সেন্টার’য়ের চিকিৎসক ডেভিড কাটলার বলেন, “বুকের সব ব্যথা ‘হার্টঅ্যাটাক’ নির্দেশ করে না। অন্য কোনো আঘাত, হজম সমস্যা, হৃদপিণ্ডের অসুস্থতা, রক্ত প্রবাহে গণ্ডগোল এমন নানান করণে বুকের বাঁ দিকে ব্যথা হতে পারে।”

আট রকমের কারণে বাঁ বুকে বা স্তনের তলায় ব্যথা করতে পারে।

আঘাত

সম্প্রতি উল্টে পড়ে গিয়ে পাঁজরে আঘাত পেয়ে থাকলে, হতে পারে বুকে ব্যথা।

ডা. কাটলার বলেন, “বুকের দেয়ালে থাকা মাংস পেশি ফুলে যাওয়া, টান পড়া বা বেকায়দায় থাকলে সেখানে ব্যথা করতে পারে।”

সমাধান: বুকের পেশিতে হালকা ব্যথা হলে সময়ের সাথে সেটা সেরে যায়। এক্ষেত্রে আরাম পেতে গরম ভাপ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পাঁজরে কোনো ফাঁটল আছে কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হতে পারে।

কস্টোকনড্রাইটিস

বাম দিকে স্তনের হাড়ে ‍সুক্ষ্ম, চেপে ধরা ব্যথা, গভীর নিঃশ্বাসে বা কাশলে অবস্থা আরও খারাপ হয়- এরকম অবস্থাকে বলা হয় ‘কস্টোকনড্রাইটিস’।

ডা. কাটলার ব্যাখ্যা করেন, “স্তনের হাড় ও পাঁজরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী তরুণাস্থির প্রদাহের কারণে এরকম হয়। আর সাধারণত বয়সের চল্লিশের পরে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

সমাধান: এক্ষেত্রে পেশাদার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। ব্যথা কমানোর ওষুধসহ নানান ধরেনর সেবার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব।

হজমতন্ত্রে সমস্যা

পেটের সমস্যা থেকেও বুকে ব্যথা হতে পারে। এরকম কয়েকটি সমস্যার মধ্যে রয়েছে-

অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা জিইআরডি: পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালী দিয়ে উঠে আসলে এই সমস্যা হয়। ফলে বুকেও ব্যথা হতে পারে। অ্যান্টাসিড-ধর্মী ওষুধে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া অতিরিক্ত খাওয়া, তেলেভাজা মসলাদার খাবার, অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান এড়াতে হবে। কারও কারও ক্ষেত্রে ডাল ও বীজ ধরনের খাবার থেকেও সমস্যা হয়। এরকম হলে সেগুলো চিহ্নিত করে খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

গ্যাস্ট্রাইটিস: বা পাকস্থলীর ভেতরের আবরণে প্রদাহ। যা থেকে পেটে ব্যথা হয়। সেখান থেকে বুক বা স্তনের নিচে ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসক কারণ বের করে চিকিৎসা দিতে পারবেন। ঘরোয়া কোনো প্রতিকার নেই।

হিয়াটল হার্নিয়া: যখন পাকস্থলীর ওপরের অংশটি বুক এবং পেটকে স্ফীত ও বিস্তৃতি পেশি দিয়ে আলাদা করে ফেলে তখন এই অবস্থার তৈরি হয়। ফলে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে সবসময় দরকার হয় না, তবে ‘হার্টবার্ন’য়ের ওষুধ দিতে পারেন চিকিৎসকরা। এতেও সমস্যা না মিটলে হার্নিয়া অপারেশন’য়ের প্রয়োজন পড়বে।

স্তনের অবস্থা

নারীদের ক্ষেত্রে স্তনের চারপাশে ও নিচে ব্যথা হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে।

ম্যাসটাইটিস: যা কিনা স্তন কোষ সম্বন্ধীয় ব্যথা হিসেবে পরিচিত। স্তনদানকারী মায়েদের এমন সমস্যায় হয় দুধ আটকে গেলে।

জনস হপকিন্স মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে- এরফলে উষ্ণভাব, লালচে ও ফুলে যেতে আর ফ্লু হলে যেমন ব্যথা করে তেমন অনুভূত হয়।

সমাধান: অবশ্যই ধাত্রী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরাণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।

ফাইব্রোসিস্টিক ব্রেস্ট: মাসিক চলার সময় নারীদের সারা শরীরে হরমোনের ওঠানামা চলে। বিশেষ করে ৩০ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে যাদের বয়স। এর ফলে স্তনে পিণ্ডর মতো ফোলা অথবা দড়ির মতো রেখা ফুটে উঠতে পারে, বিশেষ করে মাসিক শুরুর আগ সময়ে। এটার জন্য বুকে বা স্তনে ব্যথাও হয়।

সমাধান: এটা ক্ষতিকর নয়। আর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায় না- জানান ডা. কাটলার। তবে কোনো পিণ্ড বা দলা কিংবা ফোলাভাব হলে অর্থাৎ স্তনে কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্তন ক্যান্সার: খুবই অস্বাভাবিক বা সচারচর দেখা যায় না, তারপরও স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে বুকে ব্যথা। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- স্তনে বা বগলে পিণ্ড হওয়া, স্তনের চারপাশ ফুলে ওঠা বা পুরু হওয়া, বুকের ত্বকে টোল পড়া ও অস্বস্তিভাব, স্তনাগ্রে লালচে ভাব বা স্তর পড়া, রস নিঃসরণ বা স্তনের আকারের পরিবর্তন।

সমাধান: “এসব লক্ষণ থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যত আগে চিকিৎসা শুরু করা যাবে ততই মঙ্গল”- বলেন ডা. কাটলার।

স্নায়ুর সমস্যা

কোনো কোনো নির্দিষ্ট কোনো স্নায়ুগত সমস্যা থেকে বুকে বা স্তনে ব্যথা হতে পারে।

থোরাসিস নিউরালজিয়া: “যখন পিঠের কোনো স্নায়ু সুক্ষ্মভাবে খোঁচা দেয় তখন বুকে সুক্ষ্ম বা কেউ ছুরি চালাচ্ছে এমন অনুভূতি হয়” বলেন ডা. কাটলার।

সমাধান: বুকে বা পিঠে কোনো আঘাত পেলে এমন হতে পারে। নানান ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়ে।

শিঙ্গলজ: যদি চিকেনপক্স বা জলবসন্তে শিকার হলে, ভালো হওয়ার পরও ভাইরাস আবার উদ্ভুদ হতে পারে ফুসকুড়ির আকারে। বিশেষ করে বয়স পঞ্চাশের পরে গেলে। এরপলে ত্বকের তলায় থাকা স্নায়ুতে প্রদাহ হয়। যেখানে থেকে জ্বালা, ব্যথা প্যাঁচানোর মতো অনুভূতি হতে পারে।

ডা. কাটলার বলেন, “যদি ভাইরার বুকের অংশে আক্রমণ করে তবে ব্যথা ও জ্বালাভাব অনুভূত হয়।

সমাধান: ডাক্তারকে জানাতে হবে ফুসকুড়ি উঠছে এবং একসময় জলবসন্ত হয়েছিল। এর কোনো চিকিৎসা না থাকলেও ‘অ্যান্টিভাইরাল’ ওষুধ দিয়ে দ্রুত উপশম সম্ভব।

ফুসফুসের সমস্যা

বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের রোগ থেকেও বুকে ব্যথা হতে পারে।

ফুসফুসে সংক্রমণ: ‘আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন’য়ের তথ্যানুসারে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস থেকে সুক্ষ্ম ও ছুরি চালানোর মতো ব্যথা বুকে হয়। বিশেষ করে গভীর শ্বাস নিলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। সাথে থাকবে জ্বর, নিঃশ্বাসে সমস্যা, ক্লান্তি।

প্লুরেসি: ফুসফুসে আবরণে ‘অটোইমিউন’ রোগ থেকে সংক্রমণ হয়। যে কারণে সুক্ষ্ম ব্যথা অনুভূত হতে পারে বুকে।

সমাধান: কারণ বের করে চিকিৎসা নিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকে সেরে যায়। তবে ডাক্তারই সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।

হৃদ সমস্যা

ডা. কাটলার বলেন, “বুক বা স্তনে বিশেষ করে বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ হতে পারে হৃদপিণ্ডের নানান সমস্যা।”

অ্যাঞ্জাইনা: এই অবস্থায় সাময়িকভাবে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কমে যায় তখন বুকে ব্যথা হয়। মনে হয় ‘হার্ট অ্যাটাক’ হচ্ছে।

ডা. কাটলার বলেন, “হার্ট অ্যাটাক’য়ের মতো এটাও এক ধরনের হৃদপিণ্ডের রোগ।”

সমাধান: বিশ্রাম বা ওষুধের মাধ্যমে সারানো যায়। এছাড়া জীবনযাত্রা পরিবর্তন, রক্তচাপের ওষুধ, বা কোলেস্টেরল কমানোতে সমস্যা সমাধান করা যায়। হঠাৎ এই ধরনের ব্যথা হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া জরুরি।

হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ: ‘পেরিকর্ডাইটিস’ বা ‘এন্ডোকার্ডাইটিস’য়ের মতো সমস্যা হয় যখন হৃদপিণ্ডের কোনো অংশ স্ফীত হয়। ভাইরাসের আক্রমণ বা নিউমনিয়া থেকে এরকম হতে পারে। সুক্ষ্ম ও ছুরি চালনার মতো ব্যথা হয় পেটের উপরিভাগ থেকে স্তনের নিচ পর্যন্ত।

সমাধান: রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসক সারানোর ব্যবস্থা করবেন। দরকার হতে পারে উচ্চ মাত্রার ‘অ্যান্টি-ইনফ্লামাটরি’ ওষুধ।

হার্ট অ্যাটাক: হৃদপিণ্ডের ধমনিতে রক্ত জমাট বেধে আটকে গেলে এই অবস্থা তৈরি হয়।

ডা. কাটলার বলেন, “এই অবস্থায় অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয় বুকে বাম দিকে, হাতে ঘাড়ে এবং চোয়ালে। এছাড়া বুকে চাপ ধরাভাব, ক্লান্তি, ঠাণ্ডা ঘাম, মাথা ঝিমঝিম, বমিভাব, নিঃশ্বাসে সমস্যা থাকবে।”

সমাধান: জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।