জাতীয়

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে ‘কারাগার’ ঘোষণা করেছে সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত এসেছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ শাখা৷

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল আসাদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে এবং দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট, ১৮৯৪ (১৮৯৪ এর নবম) এর ধারা ৩(বি) অনুসারে, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‌‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ ঘোষণা জারি করা হয়েছে এবং এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

তবে কোন উদ্দেশ্যে ভবনটি সাময়িক কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ পতিত ফ্যাসিবাদের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি সাবেক ও বর্তমান ২৪ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া হয়।

এরপর গত ১১ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসের মেসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তা ঢাকায় সেনা হেফাজতে আছেন। আমরা ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম। ১৫ জন আমাদের সেনা হেফাজতে এসেছেন।

তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিবের দায়িত্ব পালন করা মেজর জেনারেল কবির আহমেদ ইলিগ্যাল অ্যাবসেন্ট (পলাতক) বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

জাতীয়

বহুল আলোচিত ঢাকার সেই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরীকে অবশেষে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিলম্বে হলেও ২৯ সেপ্টেম্বর আইন ও বিচার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়, যা সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে গৃহীত হয়। সোমবার আইন অঙ্গনে এ খবর চাউর হওয়ার পর সবার মধ্যে একধরনের স্বস্তি নেমে আসে। বিশেষ করে তার দ্বারা যারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে বিচার ও আইনসংশ্লিষ্ট কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জানান, আওয়ামী আমলে ঢাকার সিএমএম থাকাবস্থায় রেজাউল করিমের ন্যক্কারজনক দলবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা কেউ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। তিনি যেখানেই কর্মরত ছিলেন, সেখানেই আইন ও বিচার অঙ্গনের অনেকেই তার দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এই দুর্নীতিবাজ বিচারকের কারণে জুডিশিয়াল ক্যাডারের সুনামও ক্ষুণ্ন হয়েছে। বলতে গেলে তিনি বিচারক হয়েও পদে পদে অবিচার করেছেন। নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছের লোক পরিচয় দিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আদালতকে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। তার কথামতো কাজ না করলেই রোষানলে পড়তে হতো অধীনস্থ বিচারকদের।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত ঢাকার সাবেক চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম জুডিশিয়াল সার্ভিসের শৃঙ্খলা বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত মর্মে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম জুডিশিয়াল সার্ভিসের শৃঙ্খলা বিধিমালা-২০১৭-এর বিধি ১১ অনুযায়ী রেজাউল করিম চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে কুমিল্লায় নারী ও শিশু আদালতে বদলি এবং পরবর্তী সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

এর আগে ঘুস গ্রহণ, জামিন বাণিজ্য, মামলায় প্রভাব খাটিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ বহুবিধ অপরাধের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদে গঠিত মন্ত্রিসভায় আনিসুল হক আইনমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বিচার বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা বাড়তে থাকে। ওই সময় থেকেই মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তাসহ অধস্তন আদালতের একাধিক বিচারক মন্ত্রীর আস্থাভাজন হয়ে পড়েন। এরপর আস্থাভাজনসংশ্লিষ্ট বিচারকরা নানা ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।

এছাড়া ওই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এক মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলে তাকে বেআইনিভাবে ‘অভ্যর্থনা’ জানান রেজাউল করিমসহ কয়েকজন বিচারক। তারা খাসকামরা থেকে বের হয়ে জয়কে গাড়ি থেকে নামিয়ে আদালত কক্ষে নিয়ে যান এবং সাক্ষ্য শেষে তাকে আবার গাড়িতে তুলে দেন। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় আদালতপাড়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সাক্ষী যত বড় ভিআইপি হোক না কেন, কোনো বিচারক এভাবে প্রটোকল দিতে পারেন না। মূলত ওইসময় ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে দলীয় ক্যাডারের মতো তারা এমনটি করেছিলেন। এমন অভিমত প্রকাশ করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম।

অভিযোগ রয়েছে, রেজাউল করিম চৌধুরী আওয়ামী লীগ আমলে ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে আদালতকে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট এই বিচারক আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে বিরোধী দল দমনে ছিলেন অতি-উৎসাহী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মৃত ব্যক্তিকে সাজা প্রদান, নির্বাচনের আগে ১৬১টি রাজনৈতিক মামলায় শুধু পুলিশের সাক্ষ্য নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে মামলা থেকে অব্যাহতি ও জামিন প্রদান, ডিজিএফআই-এর ভয় দেখিয়ে অধীনস্থ বিচারকদের জামিন দিতে বাধ্য করা হতো। তার কথামতো কাজ না করলে নেমে আসত নানা ধরনের হয়রানি। অনেককে শাস্তিমূলক বদলি করার ভয়ও দেখাতেন। এমনকি অকথ্য ভাষায় গালগালও করতেন। আবার কাউকে শায়েস্তা করতে মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা অভিযোগপত্র পাঠিয়ে সেটি নথিতে পুটআপ করাতেন। এসব কারণে অনেক সৎ, যোগ্য ও দক্ষ বিচারকরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না। হয়রানি এড়াতে এবং চাকরি রক্ষার স্বার্থে তারা অনেকটা বিবেকের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে বাধ্য হতেন। সূত্র জানায়, বহুল আলোচিত এই বিচারক এতটাই অর্থলোভী ছিলেন যে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে আদালতের নিলাম সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি তার সুবিধামতো গোপনে নিলাম ডেকে ফায়দা নিতেন। ওই সময় এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সিএমএম কোর্টের অফিস স্টাফরাও ভয়ে কিছু বলতে পারতেন না। সূত্র মনে করে, দুদুক এ সংক্রান্ত নথিপত্র অনুসন্ধান করলে পদে পদে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।

এছাড়াও বিচারক রেজাউল করিম ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিবির হেফাজতে থাকা মামলার আলামত হিসাবে জব্দকৃত একটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ও অন্য একটি যানবাহন অবৈধভাবে নিজের হেফাজতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি হাইকোর্টের আদেশও অমান্য করেন। অপরদিকে দলীয় পৃষ্ঠপোষক বিচারক হিসাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বাচলে সাত কাঠার প্লট পেতে সক্ষম হন। তার সর্বোচ্চ ৫ কাঠা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ৭ কাঠা প্লট অনায়াসে পেয়ে যান। তার লোভের এখানেই শেষ নয়। এই বিচারক একটি আবাসন ব্যবসায়ী গ্রুপের মামলায় বিশেষ সুবিধা দিয়ে এর বিনিময়ে রাজধানীতে পাঁচ কাঠার মূল্যবান প্লট নিজের নামে বরাদ্দ নেন।

এদিকে তিনি নিজ জেলা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে শহরে জাকির হোসেন রোডের ইয়াকুব সেন্টারে বড় পরিসরের ফ্ল্যাট কিনেছেন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরীরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে। তারা দেখবে আমার কোনো দোষ আছে কি-না। দুর্নীতির বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল সেখানে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। যা মীমাংসিত তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রটোকল দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি যেদিন আদালতে আসেন সেদিন এসএসএফ পুরো আদালত কন্ট্রোলে নিয়ে ফেলে। তখন আমি তাদের বলি যেন সবকিছু সফটলি করে। বিচার কাজে যেন বিঘ্ন না ঘটে। এ সময় আমি আমার করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন তিনি (জয়) আসেন। তখন তো আমি না গিয়ে পারি না। এ সময়ের জয় আর সে সময়ের জয় তো এক ছিল না।

জাতীয়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন থানা ও পুলিশের অন্যান্য স্থাপনা থেকে লুট হওয়া বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গুলি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অভিযান চালিয়ে বেশিরভাগ অস্ত্র উদ্ধার করলেও বাইরে রয়ে গেছে চাইনিজ রাইফেল, চাইনিজ এসএমজিসহ প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র ও প্রায় আড়াই লাখ রাউন্ড গুলি।

বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, লুট হওয়া এসব অবৈধ অস্ত্র–গুলিই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সাধারণ জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় দেশে মোট ৪৬০টি পুলিশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল—তার মধ্যে ১১৪টি থানা (ভাঙচুর ৫৮, অগ্নিসংযোগ ৫৬) এবং বিভিন্ন ধরনের ১,০২৪টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় মোট ৫,৭৫৬টি অস্ত্র লুট হয়েছে; এর মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪,৪১৩টি। এখনও বাকি আছে ১,৩৪৩টি অস্ত্র।

মোট লুট হওয়া গুলির সংখ্যা ৬,৫২,০৮২ রাউন্ড, যার মধ্যে ৩,৯৪,৪৩৪ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, চাইনিজ রাইফেল, পিস্তল ও কিছু চাইনিজ এসএমজি উদ্ধার হয়নি; তবে সি ক্যাটাগরির সব এসএমজি উদ্ধার করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি এক মাসের অভিযানে মোট ৬৫টি অবৈধ অস্ত্র ও ২৯৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে; একই সময় ৯,৭৯৪টি অস্ত্র এবং ২,৮৭,৩৫৯ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার হয়েছে।

কারাগার থেকে বন্দি পলায়ন ও অস্ত্র লুটকারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় নরসিংদী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, শেরপুর ও কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মোট ২,২৪৭ বন্দি পালিয়ে যায়; সেই সময়ে ৬৭টি অস্ত্রও লুট হয়—সেগুলোর মধ্যে ২৭টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আনুমানিক দেড় হাজার বন্দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৭০০ বন্দি স্বেচ্ছায় কারাগারে ফেরত আসে। পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে ৯৩ জন বিশেষ প্রকৃতির বন্দি ছিলেন—এদের মধ্যে ৬০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

লুট হাওয়া অস্ত্র ও গুলি বিক্রি অনেকে অভিযোগ করছেন, লুট হওয়া এসব অস্ত্র বাজারে বিক্রি হচ্ছে—চট্টগ্রামে গত মে মাসে গ্রেপ্তার মো. পারভেজ ও রিয়াজুর রহমানের কাছ থেকে লুট হওয়া রিভলবার ও গুলি উদ্ধার হয়; ঢাকায় খিলগাঁও থেকে আটক রাজিব হোসেনের কাছে চাইনিজ রাইফেলের ১২ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়; তিনি স্বীকার করেছেন এসব গুলি বিক্রি করতেন।

সীমান্তে অবৈধ অস্ত্র দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করার ঘটনা ঘটছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত অভিযানে বিভিন্ন অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হচ্ছে—সাম্প্রতিক অভিযানে পাওয়া গেছে দেশীয় পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্রের প্রবাহ ও লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের কাছে থাকার কারণে তা আগামী নির্বাচনে অস্থিরতার কারণ হতে পারে।

সরকারি পদক্ষেপ ও পুরস্কার ঘোষণা গত বছর আগস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিকভাবে প্রদত্ত সব আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স স্থগিত করে। সেইসঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্র ও গুলি থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় দেখা যায়, রাজধানীসহ ৬৪ জেলার থানায় মোট ৯,১৯১টি অস্ত্র জমা পড়েছে; কিন্তু ১,৬৫৪টি অস্ত্র জমা পড়েনি— তাই সেগুলো এখন অবৈধ বলে গণ্য হচ্ছে।

আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করেছে। শর্টগান/পিস্তল উদ্ধারে ৫০ হাজার টাকা, চায়না রাইফেল/এসএমজি উদ্ধারে ১ লাখ টাকা, এলএমজির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা; আর প্রতি রাউন্ড গুলির জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধবিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধের সঙ্গে জড়িত—তাই এগুলো যদি অপরাধীদের হাতে থেকেই যায়, তবে নির্বাচনের সময় বা অন্য কোনো সময়ে বড় ধরনের অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যায়। প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা-তথ্য কাজে লাগিয়ে লুট হওয়া অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। পাশাপাশি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া দাগি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আর জাতীয় নির্বাচন হবে দেশ জুড়ে, শুধু ঢাকাকে প্রাধান্য দিলে হবে না। সারাদেশ থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।

সরকার ও বাহিনীর প্রতিশ্রুতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে রাখার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, লুট হওয়া অস্ত্রের সবগুলো উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

পুলিশ বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও অবৈধ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হচ্ছে। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।

জাতীয়

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা এখন সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন, তাদের অবশ্যই আদালতে আনতে হবে।

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়ে সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনের এক দিন পর (১২ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তাজুল ইসলাম।

সেনাসদর সংবাদ সম্মেলন করলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়নি জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ডকুমেন্টারি পদ্ধতিতে কেউ বলেননি যে, আটক রাখা হয়েছে। মিডিয়াতে যেটা এসেছে, আমরা সেটা আমলে নিচ্ছি না। যেহেতু আমরা জানি না, তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না। আমাদের যদি বলা হয় যে আটক রাখা হয়েছে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে অবশ্যই আদালতের কাছে আনতে হবে। এটাই বিধান।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তাদের মধ্যে একজন বাদে বাকি ১৪ জনকে এবং অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) থাকা একজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।

বিগত আওয়ামী শাসনামলে গুম-নির্যাতনের দুটি এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একটি মামলায় গত ৮ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এরপর তুমুল আলোচনা এবং তাদের গ্রেফতারের দাবি উঠলে সেনাসদর এ বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশ করে জানায়, সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে আছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইনেও আছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতেও আছে যে, যেখানেই গ্রেফতার করা হোক, তাকে আদালতের জন্য যতটুকু সময় ব্যয় হবে, সেটুকু ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করতে হবে। এটাই আইনের বিধান।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন নয়, সংবিধানেও এটি স্বীকৃত যে গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার বেশি কাউকে আটক রাখা যায় না। যদি আদালত আপনাকে আটক করার অথরিটি দেন, কেবল তখনই আটক করতে পারবেন। যাকে যখনই গ্রেফতার করা হবে, আদালতের বিধান হচ্ছে, তখনই তাকে আদালতে আনতে হবে। আদালত তাকে আটক রাখতে বললে আটক রাখা হবে। আদালত তাকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব (অথরিটি) তখন আদালতের কাছে চলে যায়। এটাই হচ্ছে আইনি ব্যাখ্যা।’

এর আগে, সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা তা পায়নি। তবে তার আগেই চাকরিরত ওই কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার পদক্ষেপ নেয় তারা।

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর হঠাৎ করেই নিত্যপণ্যের বাজার আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে পণ্যের দামে লাগা আগুন এখন নিত্য-নৈমিত্তিক।

এতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। খেটে খাওয়া মানুষদের ইচ্ছে থাকলেও উচ্চমূল্যের কারণে তারা সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ডাল, ভাত আর সবজি জোগাড় করাই এখন স্বপ্নের মতো। পুষ্টির চাহিদা মেটাতে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ডিম; কিন্তু সেটিও এখন অনেকের নাগালের বাইরে। ক্রমবর্ধমান দামের চাপে নিম্নবিত্তের মতো মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বেকায়দায়।

নিত্যপণ্যের দাম সামলাতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এখন তাদের খাদ্যতালিকা ছোট করে ফেলছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনে কোনোভাবে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাজার খরচই নয়, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াতসহ প্রায় সব খাতে। সব মিলিয়ে পণ্যের দাম মেটাতে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। আর সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষ চুলায় হাঁড়ি তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য এখনো পুরোপুরি সংরক্ষণনির্ভর নয়। তাই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মৌসুমি ঘাটতি বা পরিবহন সংকট দেখা দিলেই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এই অস্থিরতার বড় কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে শহরের বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া ডলারের উচ্চ বিনিময় হারও দামের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। কারণ ডাল, ভোজ্যতেল, মসলা ও কিছু ফল আমদানি নির্ভর পণ্য। ডলারের দাম বাড়লে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়।

তারা আরও জানান, ব্যবসায়ীদের গোপন সমন্বয় বা অঘোষিত চুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পণ্যের ঘাটতি তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা খুবই সীমিত। এমনকি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানও অনেক সময় স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারছে না।

এদিকে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন টিম কাজ করছে এবং যেখানে সমস্যা ধরা পড়ছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বাস্তবে ভোক্তারা এর তেমন সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। দাম ওঠানামার কারণ হিসেবে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন— দুর্বল মনিটরিং, সরবরাহ চেইনের সমস্যা, পরিবহন সংকট, জ্বালানি তেলের বাড়তি খরচ, বাজার সিন্ডিকেট এবং কারসাজিকে।

রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তিনি সরেজমিনে দেখেছেন, প্রতিদিনই শাক-সবজি, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, সবজি, ডিম, মুরগি ও মাছের দাম পরিবর্তন হচ্ছে। বাজারে কোনো নির্দিষ্ট দামের নিশ্চয়তা নেই। একেক দিন একেক দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো দোকানে হয়ত কিছু কমে, আবার কোনো দোকানে বাড়তি দামে নিত্যদিনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে এখন প্রতিদিনই এমন অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। চালের দামও হয়ে উঠেছে অসহনীয়। গরিবের মোটা চাল কেজিতে ৬০ টাকা, আর সরু চালের দাম পৌঁছেছে ৯০ টাকায়। মসুর ডালের কেজি এখন ১৬০ টাকা। অন্যদিকে, ডিমের দাম কিছুদিন কম থাকলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে; প্রতি হালি ৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দামও স্থিতিশীল নয়, প্রায়ই ওঠানামা করছে।

সবজির বাজারে দামের উত্তাপ যেন কমছেই না। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে। শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, পটোল ৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, কচু ৬০ টাকা এবং গাজর ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছ-মুরগির দোকানেও একই পরিস্থিতি। সপ্তাহের ব্যবধানে চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের দাম ২০–৫০ টাকা বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০–৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি ২২০–২৬০ টাকা, আর পাঙাশের দাম ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। চাষের চিংড়ির কেজি দাম ৭৫০–৮০০ টাকা, এবং নদীর চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১০০০–১২০০ টাকায়।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০–১৮০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩০০–৩২০ টাকা। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০–৮০০ টাকা, আর খাসির মাংসের সর্বোচ্চ দাম ১২৫০ টাকা।

বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দামের বিশাল ব্যবধান তৈরি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

রায় সাহেব বাজারের ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে মাসে কয়েকবার দেশি মুরগি কিনতাম, এখন সেটা স্বপ্ন হয়ে গেছে। মাছ কিনতেও প্রায় দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে। বাজারের দাম আর আয়-রোজগারের সঙ্গে কোনো মিল নেই। অসাধু চক্রের সদস্যরা অদৃশ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

আরেক ক্রেতা মো. তুষার বলেন, বাজারে যে জিনিসের দাম কম, সেটাই কেনার চেষ্টা করি। কখন যে কোনটার দাম বাড়বে, বলা যায় না। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু পণ্য আনতেও হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

সূত্রাপুর এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন মোরশেদা আক্তার। পাঁচ বাসায় কাজ করে মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। এই অর্থ দিয়েই তিনি তার সংসার চালান। স্বামী যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটি দিয়ে ঘর ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ করেন। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের ঘরেও টানাপোড়েন শুরু করেছে। মোরশেদা ও তার স্বামীর আয় দিয়ে সংসারের খরচ এখন খুবই কঠিন। তিনি বলেন, মাসের শুরুতে বাজার কইরা কূল পাই না। বাজেটে মিলে না। খাওন-পরনের লাইগা আগে যা কিনতাম, হেডির অদ্দেকও (অর্ধেক) কিনতে পারি না।

বাসের হেলপারি করেন রহমত। তিনি তার সংসারের একক উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যে অর্থ আয় করেন, সেটি দিয়ে সংসার চালাতে তার প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত কয়েকমাসে রহমত ভালো কোনো খাবার খেতে পারেননি। ভাত আর ডিম দিয়ে চলছে তার দৈনিক খাবার।

রিকশাচালক নূরউদ্দিন বলেন, রাইতের মতো এহন দিনেও গরু-খাসির মাংস খাওনের স্বপ্ন দেখতে হয়। মুরগির মাংসও খাইতে পারি না বৌ-পোলাপান নিয়া। মাছও এহন বিলাসি খাওন হইয়া যাইতাসে। ডিম, ডাইল (ডাল) দিয়া ভাত খাইতাম। এহন এডিও দাম বাইড়া গেছে। ভাড়া ১০ টাকা বেশি চাইলে মাইনষে গালি দেয়। কেমনে সংসার চালামু? আমাগো কথা কেউ হুনেও না, আমাগোরে কেউ দেহেও না।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই দামের পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক সময় পণ্য কমে আসে, আবার কোনো সময়ে পরিবহন সমস্যার কারণে সরবরাহে বিঘ্ন দেখা দেয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়ে। ফলত প্রতিদিনই দামের ব্যবধান তৈরি হয়।

সূত্রাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আব্দুলাহ বলেন, সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মুলা, কচুর লতি, চিচিঙ্গা, গোল বেগুন, করলা, লম্বা বেগুন, পটোল, ধনেপাতা, ঢেঁড়শ, বরবটি সহ সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। শীতের আগাম সবজিও বাজারে এসেছে, কিন্তু দাম রীতিমতো আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে শিম ২০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেলেও এখন কিছুটা হাতের নাগালে এসেছে, ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে ‘নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান থেমে নেই’ বলে জানান। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে পণ্যের দাম সহনীয় করা হচ্ছে। ভোক্তার স্বার্থে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দামের যে অস্থিরতা চলছে তা শুধু একটি শ্রেণিকে নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করছে। এটি শুধু ভোক্তার জন্য নয়, সরকারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারে এই লাগামহীন দামের অস্থিরতা না থামলে জনজীবনে চাপ আরও বাড়বে। পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও ভোক্তা স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তিনি বলেন, পণ্যের সরবরাহ চেইনে অসঙ্গতি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার এবং স্থানীয়ভাবে গঠিত বাজার সিন্ডিকেট—এসবই এই অস্থিরতার মূল কারণ। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। এছাড়া সরকারের নীতিগত দুর্বলতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব বাজার ব্যবস্থাকে আরও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলেছে। শুধু তাৎক্ষণিক অভিযান নয়, প্রয়োজন পণ্যের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করা।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি৷ এই খারাপ অবস্থা হওয়ার কারণ, বাজার মনিটরিং না হওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে সংস্থাগুলো বাজারে অভিযান চালাতো, এখন নাই। অর্থাৎ সরকারের তদারকিটা একেবারে বাজারে নাই। সরকারকে আমরা অনুরোধ করব, তদারকি যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে জিনিসপত্র দাম আরও বাড়বে। এমন কোনো পণ্য নাই; চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। শুধুমাত্র আলু আর পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে কিনতে পারে না কেউ। এভাবে চলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, মানুষ একটা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আছে। যারা মধ্যবিত্ত ছিল, তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে ততই মানুষের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার থেকে সিন্ডিকেটটা যতক্ষণ না পর্যন্ত ভাঙতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি আসবে না। এর বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর বাজারে ভোক্তা নিষ্পেষিত হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজর দেওয়া। একই সঙ্গে মানুষ কিন্তু খুব কষ্টের মধ্যে আছে এবং থাকবে। এজন্য সরকারের কাছে ক্যাবের পক্ষ থেকে বলতে চাই, সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোতে দ্রুত সক্রিয় করা হোক।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। সচিব তাকে বলেন, ভোক্তার মাধ্যমে প্রত্যেকদিনের বাজার মূল্যের তথ্য নিচ্ছি। চিনি ও চালের দাম কমেছে। তবে শাব-সবজির বাজারে দাম খানিক চড়া। আলুর দাম আবার কম। পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছিল, আমরা আমদানির অনুমতি দিয়েছি; এ পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্য বার্ষিকী হিসেবে ঠিক আছে।

তাহলে এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ কি? উত্তরে বাণিজ্য সচিব বলেন, সবজির দামে সারা বছরই এমন হয়ে আসছে। বিশেষ করে ট্রানজিশন সিজনে। বর্ষার শস্য শেষ হবে, সামনে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠবে। ফলে সংশ্লিষ্ট বাজারে একটা ক্রাইসিস থাকবে, এতে দাম বাড়বে। পূজার কয়েকদিন আগে থেকে টানা বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বাজার একটু আনস্টেবল হয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে। ডিমের বাজারে আমরা আবার মনিটরিং জোরদার করবো।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু অন্য কিছু আইটেমের, যেমন চাল, ডাল, তেলের দাম কমেছে। চালের দাম গড়ে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। তেল বাড়ানোর জন্য একটি প্রস্তাব এসেছে, আমরা এখনো সেটা গ্রহণ করিনি, তাই খুচরা দাম এখনো বাড়েনি। ডালের দাম আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী কমেছে। চিনির ওপর যখন ডিউটি কমানো হলো—স্পেসিফিক ডিউটি ৬০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় আনা হলো— তারপর থেকে চিনির দাম বেশ সহনীয় হয়েছে। আমার কাছে গতদিনের রিপোর্ট আছে, সেখানে ডিমের দাম ৪২ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে দেখানো হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানত আমরা যা করি, তা হলো হোলসেল বাজারে গিয়ে সরবরাহ পরিস্থিতি যাচাই করা এবং অফিসারদের সেই জায়গায় পাঠানো। এটি করলে দাম মোটামুটি স্বাভাবিকের দিকে আসে। তবে চলমান ১৫ দিনের মতো বৃষ্টি কাঁচা সবজি ও ডিমের দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার, দৈনন্দিন খাবার ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সমস্যার মুখে পড়েছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেটের উপস্থিতি দামের অস্থিরতার বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সরকারি পর্যবেক্ষণ ও হোলসেল বাজারে সরবরাহ যাচাইয়ের মাধ্যমে কিছুটা স্বাভাবিকতা আনা সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবহন সমস্যা ও আমদানির ওপর নির্ভরতা দাম কমানোর ক্ষেত্রে সীমিত প্রভাব ফেলছে। দামের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সিন্ডিকেট বিরোধী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

জাতীয়

কেউ কাঁথা বিছিয়ে ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়েছেন, কেউ সামান্য কাগজ বা মাদুর পেতে শুয়েছেন; ৩ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এভাবেই রাতযাপন করছেন এমপিভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

রোববার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টা নাগাদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষকদের অনেকেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে ঘুমিয়ে গেছেন।

তারা জানিয়েছেন, ৩ দফা দাবিতে প্রজ্ঞাপন না হলে তারা এখান থেকে যাবেন না।

অন্যদিকে আজ শহীদ মিনার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সh এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা।

রাতে শিক্ষকদের অবস্থান তুলে ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের নিরীহ শিক্ষকদের ওপর পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ করা হয়েছে, টিয়ারশেল-জলকামান নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষকদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কর্মবিরতির কর্মসূচি মঙ্গলবার ছিল। যেহেতু আমাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে, তাই আমাদের কর্মবিরতির কর্মসূচি আগামীকাল এগিয়ে এনেছি। আগামীকাল থেকে সব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলবে।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, অল্প কয়েকজন থাকবে; বাকি সবাই শহীদ মিনারে অবস্থান নেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা না হবে, ততক্ষণ আমরা শহীদ মিনারে থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাব। একদিকে এখানে আমাদের লাগাতার ২৪ ঘণ্টা কর্মসূচি চলবে। অন্যদিকে সারা দেশের সব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলবে।

জাতীয়

জ্যোতিষশাস্ত্র সম্ভাবনার কথা বলে। কোনো কিছু নিশ্চিতভাবে হবে কিংবা ঘটবে তা বলে না।

রাশি অনুযায়ী এই সপ্তাহ কেমন যেতে পারে জেনে নিন।

পাশ্চাত্য রাশিচক্রমতে চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহগত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন রাশির জাতক জাতিকাদের নানান বিষয়ের শুভাশুভ পূর্বাভাস ও সতর্কতা জানাচ্ছেন জ্যোতিষশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম মাওলা।

মেষ রাশি (২১ মার্চ – ১৯ এপ্রিল) সপ্তাহের শুরুতে কোনো দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের কাছ থেকে কোনো অপ্রত্যাশিত খবর আপনার সময় উজ্জ্বলতর করে তুলবে। পারিবারিক শান্তি কোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যায় বিঘ্নিত হতে পারে। তবে চিন্তা করবেন না, সময়ে এর সমাধান হয়ে যাবে। সপ্তাহের মাঝদিকে প্রেমের ব্যথা অনুভব করবেন। আর প্রেমমূলক কল্পনাকে স্বপ্নে দেখার প্রয়োজন নেই। স্বপ্নগুলো সত্যি হতে পারে। সপ্তাহের শেষদিকে স্বাস্থ্য-বিষয়ক ব্যাপারে নিজেকে অবহেলা না করার জন্য সতর্ক থাকুন। অপ্রীতিকর ও হতাশানজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বৃষ রাশি (২০ এপ্রিল – ২০ মে) সপ্তাহের শুরুতে এ সময় করা বিনিয়োগ সমৃদ্ধি ও আর্থিক নিরাপত্তা বাড়িয়ে তুলবে। কোনো কাছের আত্মীয় আরও বেশি মনোযোগ চাইলেও সহায়ক ও সৃজনশীল হবে। সঙ্গীর অনুপস্থিতিতে তার উপস্থিতি বোধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সপ্তাহের মাঝদিকে পরিবারের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবেন না। তাদের সঙ্গে আপনার মত নাও মিলতে পারে। তবে হঠাৎ আপনার ব্যবহারে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সপ্তাহের শেষদিকে যদি বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যান তবে আপনার পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রেম আসতে পারে। যাদেরকে ভালোবাসেন তাদের উপহার দেওয়া এবং তাদের থেকে উপহার নেওয়ার পক্ষে শুভ সময়।

মিথুন রাশি (২১ মে – ২০ জুন) সপ্তাহের শুরুতে অত্যাধিক শক্তি ও অসাধারণ উদ্যম অনুকূলে ফলাফল আনতে পারে। গার্হস্থ্য উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী লাভের জন্য স্টক ও মিউচুয়াল ফান্ডে নিয়োগ করতে সুপারিশ করা হচ্ছে। সপ্তাহের মাঝদিকে রসিক আত্মীয় স্বজন দুশ্চিন্তা দূর করবে আর কাঙ্ক্ষিত মুক্তির স্বাদ দেবে। এ সময় দেখা করতে আসা আত্মীয়রা, যা ভেবেছিলেন তার থেকে অনেক ভালো হবে। সপ্তাহের শেষদিকে জমি সংক্রান্ত সুবিধাগুলো ও বিনোদন প্রকল্পে অনেক মানুষের সমন্বয় সাধন করতে একটি অবস্থানে আছেন। কোনো কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে পারায় ভূয়সী প্রশংসা পাবেন।

কর্কট রাশি (২১ জুন – ২২ জুলাই) সপ্তাহের শুরুতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়াতে মন বিচলিত থাকবে। গৃহের পরিবেশ মনমতো নাও হতে পারে। কাজের সাথে সম্পর্কিত হলে তীক্ষ্ণ মন প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠবে। নিজের কাজগুলো সহজেই সমাধান করতে পারবেন। সপ্তাহের মাঝদিকে ব্যবসা জোরদার করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যে কারণে নিকটবর্তী কেউ আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন। এ সময় করা বিনিয়োগ আপনার সমৃদ্ধি ও আর্থিক নিরাপত্তা বাড়িয়ে তুলবে। সপ্তাহের শেষদিকে একটি চিন্তা চেতনামূলক বই পড়ুনি ও চিন্তা ভাবনা উন্নতি করুন। সঙ্কটের মুহূর্তে আত্মীয়রা সাহায্য করবে।

সিংহ রাশি (২৩ জুলাই – ২২ অগাস্ট) সপ্তাহের শুরুতে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়িয়ে তোলার আদর্শ সুযোগ হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হতে পারে। ভুলবেন না অর্থ সাশ্রয় করা একটি ভালো অভ্যাস। সপ্তাহের মাঝদিকে উচ্চ ক্ষমতা এ সময় সদ্ব্যবহারে লাগানোর চেষ্টা করুন। কল্যাণকর সময়, আপনি হয়ত অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এক পরিতৃপ্তি জীবনের জন্য মানসিক কাঠিন্য বৃদ্ধি করুন। সপ্তাহের শেষদিকে আর্থিক দিক সামলানোর সময় বাড়তি সতর্কতা ও যত্ন এই সময়ের প্রধান মন্ত্র বলে মনে হবে। শুধু বসে থাকার পরিবর্তে কেন এমন কিছুতে নিযুক্ত হচ্ছেন না যা উপার্জন ক্ষমতা উন্নত করবে।

কন্যা রাশি (২৩ অগাস্ট – ২২ সেপ্টেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে আধ্যাত্মিক শক্তি ও অসাধারণ উদ্যম নিয়ে কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির খুব ভালো সুযোগ পেতে পারেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় সবার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবেন। সপ্তাহের মাঝদিকে যারা অদ্যবধি অযথা অর্থব্যয় করছিলেন তারা বুঝবেন যে আর্থিক অভাবের মধ্যে হঠাৎ প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। খরচ বৃদ্ধি মনকে ভাবিত করবে। সপ্তাহের শেষদিকে যতটা চান তার সব আকর্ষণই কেড়ে নেওয়ার পক্ষে দুর্দান্ত সময়। সামনে হয়ত অনেক কিছু জড়ো হয়ে থাকবে আর কোনটি এ সময় অনুসরণ করবেন সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হবে।

তুলা রাশি (২৩ সেপ্টেম্বর – ২২ অক্টোবর) সপ্তাহের শুরুতে কারও কারও জন্য ভ্রমণ ক্লান্তিকর হতে পারে। সঙ্গী প্রেম ও সংবেদনের আলাদা পৃথিবীতে রাজত্ব করাতে পারে। সাফল্য অর্জনের জন্য কর্মক্ষেত্রে অবিরাম কাজ করতে হবে। সপ্তাহের মাঝদিকে নিজের ও পরিবারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে সময়টিকে কাজে লাগতে পারেন। এমন পরিকল্পনা করুন যাতে অন্যের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ হয়। সপ্তাহের শেষদিকে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হতে পারে। আপনার অস্বাভাবিক আচরণে চারপাশের মানুষেরা বিভ্রান্ত হবে। আর হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় ছেড়ে চলে যাবে।

বৃশ্চিক রাশি (২৩ অক্টোবর – ২১ নভেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে শারীরিক মানসিক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। সতর্কতার সাথে যানবাহন চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ দূরের যাত্রায় উদ্যোগী হবেন। যা ক্লান্তিকর হলেও অত্যন্ত লাভজনক হবে। সপ্তাহের মাঝদিকে বসের ভালো মেজাজ কর্মক্ষেত্রে এ সময় পরিবশেকে বেশ সুন্দর করে দিতে পারে। সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতনরা তাদের পূর্ণ সহযোগিতার বিস্তার ঘটাবেন। তাই অফিসের কাজে গতি লাভ করবে। সপ্তাহের শেষদিকে যদি অন্যদের কথা মেনে বিনিয়োগ করেন তবে আর্থিক ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে। ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে পুরস্কৃত হতে পারেন। কারণ একটি পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন।

ধনু রাশি (২২ নভেম্বর – ২১ ডিসেম্বর) সপ্তাহের শুরুতে বিবাহিত জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় সত্যি চমৎকার দেখাচ্ছে। বিয়ে এ সময় সুন্দর মোড় নিবে। প্রেম ও রোমান্সের চরম মাত্রায় পৌঁছাবেন। কোনো অপ্রীতিকর ও হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। বরং এটি থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া উচিত। সপ্তাহের মাঝদিকে অত্যাধিক ভ্রমণ আপনাকে উন্মত্ত করে তুলবে। অন্য দেশে পেশাদারী যোগাযোগ বাড়াবার পক্ষে এটা উৎকৃষ্ট সময়। সপ্তাহের শেষদিকে অনেক শিক্ষার্থী কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফল্য পেতে পারেন। তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা গল্প করার পরিবর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সদ্ব্যবহার করার পরামর্শ রইল।

মকর রাশি (২২ ডিসেম্বর – ১৯ জানুয়ারি) সপ্তাহের শুরুতে প্রিয়জন একটু বিরক্তিকর বলে মনে হবে, যা মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। স্বামী/ স্ত্রীর মধ্যে অভিমান শুধু মাত্র একটি মনোরম স্মৃতির জন্য থেকে যেতে পারে। তাই একটি উত্তপ্ত তর্কের সময় সুন্দর সময়ের কথা মনে রাখতে ভুলবেন না। সপ্তাহের মাঝদিকে রক্তচাপের রোগীরা ভিড় বাসে ওঠার সময় তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিবেন। নয়ত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, অসুস্থ হতে পারেন। সপ্তাহের শেষদিকে সফর করা তাৎক্ষণিক ফলাফল না আনলেও ভবিষ্যতে লাভের জন্য ভালো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে। আইটি চাকুরিজীবীর বিদেশ থেকে কোনো ডাক পেতে পারেন।

কুম্ভ রাশি (২০ জানুয়ারি – ১৮ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের শুরুতে ভালোবাসার উচ্ছাসে স্বপ্ন ও বাস্তবতা এ সময়ে মিশে যাবে। এ সময় ভালোবাসা পূর্ণ চকলেট খেতে পারেন। ভুলভাব বিনিময় বা বার্তা সময়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কথা রাখার উপায় না থাকলে কথা দেবেন না। সপ্তাহের মাঝদিকে সেরকম একটি সময় যখন বিষয়গুলো নিজের ইচ্ছামাফিক চলবে। স্বামী/ স্ত্রী প্রারম্ভিক পর্যায়ের প্রেম রোমান্সের রিওয়াইন্ড বোতাম টিপবেন। সপ্তাহের শেষদিকে বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাবেন। তবে ড্রাইভিংয়ের সময় অতিরিক্ত যত্ন নিতে হভে। রাস্তায় থাকার সময় বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।

মীন রাশি (১৯ ফেব্রুয়ারি – ২০ মার্চ) সপ্তাহের শুরুতে ঘরে উৎসবের বার্তাবরণ আপনার উত্তেজনা কম করবে। নিশ্চিত করুন যে নিজে নীরব দর্শক না হয়ে থেকে এতে অংশগ্রহণ করেছেন। সমগ্র মহাবিশ্বের উচ্ছাস দুজনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। যারা প্রেমে পড়েছে, হ্যাঁ আপনি সেই ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন। সপ্তাহের মাঝদিকে যদি স্বাস্থ্যের যত্ন না নেন তবে চাপ অনুভব করতে পারেন। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সপ্তাহের শেষদিকে কাজের চাপ বিবাহিত জীবনকে ব্যবহত করেছিল বলে যে অভিযোগ ছিল তা বিলীন হয়ে যাবে। সঙ্গী অনুপ্রাণিত করবে। এ সময় সঙ্গীর সঙ্গে জীবনের সেরা মুহূর্ত হতে পারে।

জাতীয়

রাজধানীর ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজ ও হোলি রোজারি চার্চের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) রাত সোয়া ১০টার দিকে এ বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হঠাৎ একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং ধোঁয়া দেখা যায়। এরপর পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে আশপাশ থেকে সরে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, দুজন ব্যক্তি ককটেল ছুড়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে আরও দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।

জাতীয়

পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণভাবেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তৌহিদ বলেন, ‘আমি ওই বক্তব্যকে তাদের বিষয় বলে মনে করি না; এটি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়, আর এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই অযৌক্তিক।’

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সম্প্রতি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও অংশগ্রহণমূলক হলে ভারত বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে।

ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির চিঠি, তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা, এবং বিদেশে ভিসা-সংক্রান্ত নানা জটিলতাসহ সমসাময়িক বেশ কিছু ইস্যু নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

রাষ্ট্রপতির পাঠানো বলে উল্লিখিত একটি চিঠি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তৌহিদ বলেন, তিনি চিঠিটি পেয়েছেন, তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না।

তৌহিদ বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) শুধু তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন; এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’ তিনি জানান যে চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার অনেক পরে তাঁর হাতে পৌঁছায়।

বিদেশি মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণের বিষয়ে কোনো আইন বা সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে- এমন দাবিও তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সাবেক মন্ত্রীর বাসায় তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৌহিদ বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির বাসায় যাওয়া অপরাধ নয়। কূটনীতিকরা সাধারণভাবে যে কারও বাসায় যেতে পারেন। তবে সে সাক্ষাতের আলোচ্যবিষয় ও সম্ভাব্য ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।’

তুরস্কের সঙ্গে সম্ভাব্য সামরিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে তৌহিদ বলেন, এটি দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের অংশ।

‘তুরস্কের উল্লেখযোগ্য সামরিক প্রযুক্তি আছে। আমাদের ইতোমধ্যে অনেক দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে এবং তা আরও সম্প্রসারিত করা উচিত। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি বিষয়,’ তিনি বলেন।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এ ধরনের দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটনা হতে পারে। বাংলাদেশ কোনো সংঘাতে অংশ নিচ্ছে না, এবং আমরা কোনোভাবেই চাই না আমাদের নাগরিকেরা বিদেশি কোনো অভিযানে জড়াক।’

ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা বিষয়ে তৌহিদ জানান, কিছু দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে।

‘শিক্ষাভিসার চাহিদা অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছে, কিন্তু তারা বছরে মাত্র ২ হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে,’ বলেন তিনি।

তৌহিদ জানান, বাংলাদেশ জার্মান সরকারের কাছে শিক্ষার্থী কোটার সংখ্যা অন্তত ৯ হাজারে উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়েছে, যা বর্তমানে পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত কোটার সমান।

তিনি আরও বলেন, সরকার বিকল্প দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করার উপায় খুঁজছে, যাতে জট ও সেবা-সংকট নিরসন করা যায়।

তবে তিনি স্বীকার করেন, জাল নথি ও অনিয়মিত অভিবাসনের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এমনকি প্রকৃত আবেদনকারীরাও এখন সমস্যায় পড়ছেন। আমাদের প্রথমেই নিজেদের ভেতরের ত্রুটি ঠিক করতে হবে।’

জাতীয়

চলে গেছেন স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন তার জামাতা লে. কর্নেল সারোয়ার জাহান।

তোফায়েল আহমেদকে রাতেই চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) হাটহাজারী থানার ফতেহপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফনের কথা রয়েছে।

তোফায়েল আহমেদ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন। ২০০৬-২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠিত ‘স্থানীয় সরকার কমিশনের’ও সদস্য ছিলেন তিনি।স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

এ অধ্যাপকের নেতৃত্বে কাজ করেন সাত সদস্য। গত ২০ এপ্রিল তারা দুই খণ্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন।