জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

আজ বুধবার (৭ জুলাই) এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

বুধবার (৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভারতের মুম্বাইয়েরে পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিলীপ কুমার। তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর।

অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন দিলীপ। গত ৩০ জুন তাকে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।

রবিবার তার আ্যকাউন্ট থেকে একটি টুইট করে দিলীপ কুমারের অসুস্থতার কথা জানানো হয়। টুইটে স্ত্রী সায়রা বানু, কিংবদন্তি অভিনেতার জন্য প্রার্থনা করার আবেদন করেছিলেন। চিকিৎসক ডা. নিতীন গোখলের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে তার চিকিৎসা।

চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে পানি জমেছে। করা হয় একাধিক পরীক্ষা।শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণ তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয় আইসিইউতে। এদিন সকালে চিকিৎসকরা জানান অভিমেতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।

জাতীয়

করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে আরোপিত বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নের জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ১-৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

বুধবার (৩০ জুন) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।

এর আগে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাতদিন মানুষের চলাচলে ‘বিধি-নিষেধ’ আরোপ করে ২১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এ সময় অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিধি-নিষেধের সময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এরইমধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, বিনা কারণে বাড়ির বাইরে গেলেই গ্রেফতার করা হবে।

১ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত আরোপ করা ‘বিধি-নিষেধ’ হলো:

১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে পরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকান বন্ধ থাকবে।

৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকাদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ডভ্যান/কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, রেল ও স্থল) এবং সংশ্লিষ্ট অফিসসমুহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪. টিকা কার্ড দর্শন সাপেক্ষে টিকা দেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঢালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি সময় নির্ধাররণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাফ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটিই দেশে একদিনে করোনায় শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে ২৮ জুন দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৬৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৫০৩ জনে। গত চারদিনে টানা শতাধিক মৃত্যু দেখলো দেশ।

বুধবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন ৮ হাজার ৮২২ জনসহ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৮৬ নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ হাজার ১০৫টি নমুনা। যেখানে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৫০ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ১১৫ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ ৫৭ জন। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চারজন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ৭২ জন ও মহিলা ৪৩ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ৯ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১৫ জনের মধ্যে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৩০ জন, ঢাকায় ১৭ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, রাজশাহীতে ২৩ জন, সিলেটে তিনজন, রংপুরে ১১ জন, ময়মনসিংহে ছয়জন ও বরিশালে দুইজন মারা গেছেন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

জাতীয়

দেশে করোনা সংক্রমণ এখন সর্বোচ্চ চূড়ায়। টানা তিন দিন শতাধিক মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল ১১২ জন, সোমবার ১০৪ জন এবং রবিবার ১১৯ জন করোনায় মারা গেছেন। গত সাত দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ২৮৫ জন এবং মারা গেছেন ৬৮৬ জন।

নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় ঊনত্রিশ দিনে আরো এক লাখ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় গতকাল দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেনের তীব্র সংকট। রোগীদের অক্সিজেনের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। অনেকের ৬ হাসপাতাল ঘুরেও মিলছে না অক্সিজেন। এ কারণে গ্রামাঞ্চলের রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এক বছর আগে। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনা রোগিদের উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অন্যতম। যেসব রোগির শ্বাসকষ্ট সহনীয় মাত্রায় থাকে, তাদের শ্বাস গ্রহণের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যাঁদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তাঁদের শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। সাধারণ রোগিদের জন্য আইসিইউতে যে অক্সিজেন দিতে হয়, তার পরিমাণ এক মিনিটে ৫/৬ লিটার। কিন্তু করোনা রোগির জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তার পরিমাণ মিনিটে ৭০/৮০ লিটার।

অনেক সরকারি হাসপাতালে আছে। তবে জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ হাসপাতালে নেই। বেসরকারি দুই থেকে তিনটি হাসপাতাল ছাড়া কোথাও এই অক্সিজেন নেই। বাতাসের মাধ্যমে এই অক্সিজেন তৈরি হয়। পিএসএ জেনারেটর স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে এই অক্সিজেন উত্পাদন করা সম্ভব। কিন্তু সময়মতো তা করা হয়নি।

জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের অক্সিজেন সংকটের কারণে গতকাল রোগী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যশোরে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও এই জেলার সবগুলো উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন আছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন।

পটুয়াখালীর দশমিনায় ৫০ শয্যার হাসপাতালে মাত্রাতিরিক্ত অক্সিজেন সংকট। অক্সিজেনের অভাবে রোগীরা মারা যাচ্ছে। নওগাঁয়ের পত্নীতলায় অক্সিজেন সংকট প্রকট। যশোরের শার্শায় গুরুজবাগান হাসপাতালটি ৫০ শয্যার। সেখানে অক্সিজেনের প্রকট সংকট। সেখানকার রোগীরা যশোরে দৌড়াচ্ছেন। এমন অবস্থা এখন সারাদেশের জেলা-উপজেলায় দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে দেশে ৭ হাজার ৬৬৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। দৈনিক হিসেবে এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।

দৈনিক হিসেবে এটি দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এদের নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট ১৪ হাজার ৩৮৮ জনের মৃত্যু হল। করোনা ভাইরাসে গত ২৮ জুন ৮৩৬৪ জন শনাক্ত ও ১০৪ জন মারা যান। গত ২৭ জুন ৫২৬৮ জন শনাক্ত ও ১১৯ জন মৃত্যু, গত ২৬ জুন ৪৩৩৪ জন শনাক্ত ও ৭৭ জনের মৃত্যু, গত ২৫ জুন ৫৮৬৯ জন শনাক্ত ও ১০৮ জনের মৃত্যু, গত ২৪ জুন ৬০৫৭ জন শনাক্ত ও ৮১ জনের মৃত্যু এবং গত ২৩ জুন ৫৭২৭ জন শনাক্ত ও ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ৪ হাজার ২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২০ ডিসেম্বর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর ৯৯ দিনে আরো ১ লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ায় ২৯ মার্চ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়ায়। ততদিনে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ, দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে হুহু করে। মাত্র ১৬ দিনে আরো ১ লাখ মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়লে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ এপ্রিল ৭ লাখ পেরিয়ে যায়। এই ১ লাখ শনাক্তে সময় লাগে ৪৭ দিন।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে আসে মে মাসে। পরের ১ লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগে দেড় মাস; দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে যায় ৩১ মে। ৯ লাখ শনাক্ত রোগীর দুঃখজনক মাইলফলকে পৌঁছানের আগে সোমবার রেকর্ড ৮ হাজার ৩৬৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকার।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার থেকে আবার সারা দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১ জুলাই থেকে সাত দিনের জন্য কঠোর লকডাউন জারির ঘোষণাও দিয়ে রাখা হয়েছে।

ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ২ হাজার ২৬৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ৩ হাজার ৯৯৮ জন থেকে কমে ৩ হাজার ০৬৮ জন এবং খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৪৬৪ জন থেকে কমে ১ হাজার ৩৬৭ জন হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৮১১ জন থেকে বেড়ে ১ হাজার ১২ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৮৮৩ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ঢাকা জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এই হার আগের দিনের মতোই সাড়ে ১৯ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার।

তবে রংপুর বিভাগে এই হার ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৫ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার।

জাতীয়

সিলেট বিভাগের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। থাকলেও অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। রয়েছে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে লোকবল সংকট। পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেই। ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা। কোনো কোনো উপজেলায় হাসপাতালও নেই। এসব কারণে বিভাগের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি কোনো কাজে আসছে না। কয়েক বছর ধরে যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, লাইট, অ্যানেস্থেশিয়া মেশিন ও ডায়াটার্মি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এক্স-রে মেশিন ও ইনকিউবেটরসহ আরও অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি কাজে আসছে না।

গাইনি বিভাগে চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে। জেলার ওসমানীনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পরও গড়ে উঠেনি উপজেলা হাসপাতাল।

এ কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে এখানকার মানুষকে ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী অন্য উপজেলা বালাগঞ্জ হাসপাতাল অথবা সিলেট শহরে যেতে হয়।

হবিগঞ্জ জেলার ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের ২টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিকল পড়ে আছে ২টি অ্যানালগ এক্স-রে মেশিনও। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও তার ফিল্ম নেই। এ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান সংকট রয়েছে। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি রুম মেরামত করে সেখানে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম।

মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এদিকে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে আল্ট্রাসনো ও এক্স-রে মেশিন সচল থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ডেন্টাল মেশিনটি। জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত লোকবল নেই। অপরদিকে জনবল ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় ১২ বছরেও চালু করা যায়নি চুনারুঘাট উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি ৩ বছর ধরে নষ্ট। ৪ বছর তালাবদ্ধ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাগার। সাধারণ এক্স-রে, ইউরিন টেস্ট, রক্ত, ব্লাড সুগার, হিমগ্লোবিন, ব্লাড গ্রুপিংসহ সাধারণ পরীক্ষা সেবা দিতে ব্যর্থ এই হাসপাতালটি। এই জেলার কুলাউড়া হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন ১৯৯৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। এরপর ২৬ বছর কেটে গেছে। উদ্বোধনের দিনই শুধু খোলা ছিল রুমটি।

এরপর আর রুমের দরজা খোলা হয়নি। শুধু এক্স-রে নয় ইসিজির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ১৫ বছর ধরে অকেজো।

শুধু এক্স-রে মেশিন নয়, ৫ বছর ধরে আধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি টেকনিশিয়ানের অভাবে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ করার পরও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। এতে আতঙ্কে থাকতে হয় ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের।

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপ?জেলার ৫১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে। ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা। রোগীদের নিুমানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। জেলার দিরাই উপজেলা হাসপাতালটি ২০১৬ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এটিতে চিকিৎসকসহ লোকবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের এক্স-রে রুমে ভূতুড়ে পরিবেশ। রক্ত, ইউরিনসহ কোনো ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ঝাড়ুদাররা এ মেশিন রাখার রুমটি দখলে নিয়ে থাকছেন।

জাতীয়

দেশে করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ১১৯ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৫ ও নারী ৪৪ জন।
এর আগে গত ২৫ জুন ১০৮ জন, গত ১৯ এপ্রিল ১১২ জন এবং ১৮ এপ্রিল হয়েছিল ১০২ জনের মৃত্যুর রেকর্ড।

এদিকে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২৬৮ এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৯ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৪২ জন বেশি মারা গেছেন। গতকাল ৭৭ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা মহামারিতে মারা গেছেন ১৪ হাজার ১৭২ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ১১ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান থাকলেও আজ দশমিক ০১ শতাংশ বেড়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩৪ জন এবং ষাটোর্ধ ৫৯ জন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৪ জন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ২২ জন করে, খুলনা বিভাগে ৩২ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন রয়েছেন।
এদের মধ্যে ৯৯ জন সরকারি, ১৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে, ৪ জন বাসায় এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ২ জনকে।

আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ২৪ হাজার ৪০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ২৬৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৯ হাজার ২৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ৩৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। গতকালের চেয়ে আজ ৯৩৪ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৯১ শতাংশ কম। এদিকে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৪ ঘন্টায় ৯ হাজার ৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮১ জন। গতকাল ৭ হাজার ৭৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৬৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০৬  জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৯ জন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৩ হাজার ২৯৫ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৪৬ জন কম সুস্থ হয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪ হাজার ১০৩ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৯০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৭ শতাংশ কম।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৬২৮ জনের।

আগের দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৮৪৪ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৪ হাজার ৭৮৪টি নমুনা বেশি সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৪ হাজার ৪০০ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৯ হাজার ২৬২ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৫ হাজার ১৩৮টি নমুনা বেশি পরীক্ষা হয়েছে।

জাতীয়

ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেইটে বিকট এক বিস্ফোরণে ভবন ধসে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ, আহত হয়েছে অনেকে।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই এলাকাটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে বলে স্থানীয়রা জানায়।

এতে তিনতলা একটি ভবন ধসে পড়ে; তার আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ঢাকার মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, “আমরা এই পর্যন্ত তথ্য পেয়েছি যে এই ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন।”

এদিকে এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

আহত অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ১২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। দুজনই পুরুষ।

ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “আহতদের মধ্যে চারজনের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। দুজনকে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়।”

রাত ১০টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিসাধীন স্বপন (৩৫) নামে একজন মারা যান।

ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশু এবং মধ্য বয়সী এক পুরুষ ব্যক্তির লাশ দেখেছেন। সেখানে আহত অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জান্নাত (২৫) নামে একজন মারা যান বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া‌।

ঢামেক হাসপাতাল জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “আমাদের এখানে এ পর্যন্ত ৩৯ জন রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে রাত সোয়া ১০টার সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাত (নামে এক নারী মারা গেছেন।”

নাহিদ নামে আহত এক যুবক ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের জানান, তিনি বাসে ছিলেন এবং খিলগাঁওয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। সাজ্জাদ নামে আরেক বাসযাত্রীও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহত পথচারীর মোহাম্মদ শাহ আলমের ছেলে সাগর তার বাবাকে ট্রলিতে করে ঢাকা মেডিকেল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। শাহ আলামের মাথায়-নাকে ব্যান্ডেজ।

সাগর বলেন, ঘটনার সময় তার বাবা ওই ভবনের নিচে ছিলেন। ছিটকে আসা কাচে তিনি আহত হন।

ঢাকা মেডিকেলে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন মো. মামুন (৩০), শাহ নেওয়াজ পাটয়ারী (৩৫), হৃদয়(২৩), আরিফুল ইসলাম (৩৯), মেহেদী হাসান নয়ন (২২), মাহাবুব আলম (৩৯), মো. মুসা শাহজাহান (৪৫), স্বপন (৩৫), মো. শহিদ (৬৫), সৈকত (৮), আবুল ফজল (২৮), সালেহা বেগম (৬০), লাকী আক্তার (৩২),সাজ্জাদ (১৮), আইয়ুব খাঁন (২৫), সুভাষ চন্দ্র সাহা (৬৫), আরমান (২৫), রতন (৩০),মোকতার (৩৫), আসাদ (৫৮)।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন আবুল কালাম আজাদ (৫৬), মোতালেব হোসেন (৪০), জামাল (৪০), নয়ন (৪০), আবুল কালাম (২৭) ও কালু (২৭)।

বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের বিভিন্ন ভবনের কাচ চৌচির হয়ে পড়ে। ছবি: ফেইসবুকবিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের বিভিন্ন ভবনের কাচ চৌচির হয়ে পড়ে। ছবি: ফেইসবুক
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে।

ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে।

সড়কের পাশের ওই ভবনের বিপরীত দিকে আড়ং রয়েছে। বিস্ফোরণে আড়ংসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে রাস্তায় পড়েছে।

সড়কের উপর লাব্বাইক ও আল মক্কা পরিবহনের দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসগুলোর কাচ ভেঙে পড়েছিল। এগুলোর ভেতরে রক্তের দাগও দেখা যায়।

রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে সড়কে থাকা একটি বাস দুমড়ে মুচড়ে যায়।
বিস্ফোরণের কারণ কী

বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।

বিস্ফোরণের পর স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, কোনো ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কোনো ভবনের জেনারেটর কিংবা এসি থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়।

“বৈদ্যুতিক সংযোগজনিত কোনো কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেনি বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। মাঝে সতর্কতামূলক কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়েছিল।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, “তিনতলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। অনেক ফ্রিজ থাকে সেখানে, তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ বলেন, গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তদন্তের পরই তা স্পষ্ট হওয়া যাবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুলও সাংবাদিকদের বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের যারা কাজ করেছে, তাদের সাথে কথা বলে যেটা বুঝেছি যে, এখানে কিছু গ্যাস জমে ছিল এবং এই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের সাতটা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দুইটা বাস বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।”

এটা নাশকতা কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে না।

“নাশকতা যদি হত, বোমা বিস্ফোরণ যদি হত, স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। আশেপাশের আপনারা গাড়ি দেখেছেন, বাস দেখেছেন, বাসে স্প্লিন্টারের কোনো আঘাত লাগেনি। কাজেই এটা বলা যায়, এটা বোমার কোনো ঘটনা নয়, গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।”

জাতীয়

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শুধু লকডাউন নয়, ভ্যাকসিন নির্ভরশীল হতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন কারখানা হবে গোপালগঞ্জে। শনিবার মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চীনের ভ্যাকসিনও চলে আসবে এবং ভ্যাকসিন কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে লকডাউন কার্যকর হলে এবং সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে খুব দ্রুতই করেনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সঙ্গে তিন কোটি ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত ১ কোটি ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। চীনের সঙ্গে দেড় কোটি ভ্যাকসিন চুক্তি ছাড়াও কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ভ্যাকসিন বুকিং দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাতীয়

দেশে টানা এক সপ্তাহ করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সাত দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৮৪৮ জন এবং মারা গেছেন ৫২৩ জন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৫৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত এক দিনে করোনায় মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ২৩ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ, খুলনায় টানা তিন দিন সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সরকার এপ্রিলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর মে মাসে দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে এসেছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু জুনের শুরু থেকে আবার বাড়ছে। গত ২৩ জুন শনাক্ত হন ৫ হাজার ৭২৭ জন।

গত ২২ জুন ৪ হাজার ৮৪৬ জন, ২১ জুন ৪ হাজার ৬৩৬ জন, ২০ জুন ৩ হাজার ৬৪১ জন, ১৯ জুন ৩ হাজার ৫৭ জন এবং ১৮ জুন ৩ হাজার ৮৮৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন। গত এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগী বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুও। গত ২৩ জুন ৮৫ জন, ২২ জুন ৭৬ জন, ২১ জুন ৭৮ জন, ২০ জুন ৮২ জন, ১৯ জুন ৬৭ জন এবং ১৮ জুন ৫৪ জন করোনায় মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ৩০ হাজার ৩৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা আগের দিন ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৩ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে সাত জন, বরিশাল বিভাগে তিন জন, রংপুর বিভাগে সাত জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।

চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪১ জনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান এ তথ্য জানান।

জাতীয়

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তবে এ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো সময় শাটডাউন ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে একথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সারাদেশে শাটডাউনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় সরকার তা ঘোষণা দেবে। আগের চেয়ে বিধিনিষেধ আরও কঠোর হবে। করোনা সংক্রমণ কমানোর জন্য যা করা প্রয়োজন হবে আমরা তাই করব।

তিনি আরও বলেন, মাঝে আমাদের সংক্রমণ ৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনো অনেক জায়গা আছে, যেখানে সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে আছে। ইতোমধ্যে ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোতে লকডাউন দিয়েছি। তারপরও ঢাকার মধ্যে লোকজন এসে যাচ্ছে। সংক্রমণ কমানোয় পদক্ষেপ নিতে আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’- এর সুপারিশ করা হয়।

এতে বলা হয়, দেশে কোভিড-১৯ রোগের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়, শাটডাউন চলা অবস্থায় জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেনো, সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন‘ ঘোষণা দেয় সরকার।

পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল রোজার ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক বসিয়ে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে বিধিনিষেধ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৬ জুন বিধিনিষেধ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার, যা ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে।