জাতীয়

করোনা ভাইরাসে দেশে প্রতিদিনই মৃত্যু বেড়ে চলেছে। তারপরেও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মাস্ক পরার যে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে তাও মানছে না কেউ কেউ।

এ অবস্থায় জনসচেতনতা বাড়াতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকার কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৪৮ জন।

এছাড়া একই দিনে আরো ২ হাজার ২৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ জন।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক দিনে আরো ২ হাজার ২৬৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন হয়েছে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৭টি ল্যাবে ১৫ হাজার ১৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ২৬ লাখ ৮০ হাজার ১৪৯টি নমুনা।

এদিকে ঢাকার কাওরান বাজার, ফার্মগেট ও ধানমিন্ডসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে চলাচল করা অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। ব্যবসায়ীরাও মাস্ক ছাড়া কেনাবেচা করে যাচ্ছেন। গণপরিবহনেও যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া যাতায়াত করতে দেখা গেছে। চালক-হেলাররাও মাস্ক ব্যবহার করছেন না। তার মাঝে তো সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।

জাতীয়

দেড় যুগ আগে সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় আসামি রাকিবুর রহমানের ক্ষেত্রে মামলা বাতিল করা হবে কিনা, তা মঙ্গলবার জানা যাবে।

হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাকিবের আবেদনে শুনানির পর মঙ্গলবার আদেশের জন্য রেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। আর রাকিবুর রহমানের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।

অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, অভিযোগ গঠনের পর থেকে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম বিলম্বিত করার জন্য আসামিরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আগামীকাল চূড়ান্ত আদেশ হবে।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় আসামির বয়স দশ বছর হয়ে থাকলেও তার ক্ষেত্রে ১৯৭৪ সালের ‘মাইনর অ্যাক্ট’ অনুযায়ী বিচার হবে।

ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়।

শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন। ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এক যুগ পর ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।

তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে বিএনপির তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

এরপর হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি রাকিব ২০১৭ সালে হাই কোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, ঘটনার সময় তার বয়স ছিল দশ বছর। সে আবেদনে ২০১৭ সালের ২৩ অগাস্ট হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়। সেই সঙ্গে মামলা বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করে।

মামলাটি এরপর সেভাবেই পড়ে ছিল। বিষয়টি জানার পর সম্প্রতি এ সংক্রান্ত রুল শুনানির উদ্যোগ নেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল এস এম মুনীর।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর হাই কোর্টে শুনানি শুরু হয়। কয়েক দফা শুনানির পর গত ৮ অক্টোবর রায় দেয় হাই কোর্ট।

রায়ে আসামি রাকিবুর রহমানের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম বাতিলের প্রশ্নে রুল খারিজ করে দেয়। সেই সঙ্গে মামলাটি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে নতুন করে আরো ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪১৬ জন।

একই সময়ে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪১৯ জন। এতে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ জন।

সোমবার বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, গত এক দিনে আরো ২ হাজার ১৮৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬১১ জন হয়েছে।

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্পের একমাত্র চিনিকলটি ক্রমাগত লোকসানে চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ভরা মৌসুমে আখ যোগান কম ও কারখানা ব্রেক ডাউনের কারণে চিনি উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। ফলে প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকা লোকসানের বোঝা ও নানা সংকটে চিনিকলটি পরিণত হয়েছে অতি রুগ্ন শিল্পে। শুধুমাত্র ২০০১-০২ থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত গত ১৯ বছরে দেশের বৃহত্তম এই চিনিকলটিতে লোকসান হয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে কুষ্টিয়া শহরে অদূরে জগতি নামক স্থানে ২২১.৪৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া চিনিকল। ১৯৬৫-৬৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এ মিলে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬-৬৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় চিনি উৎপাদন।

মিলের অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও এ মিলে লাভের চেয়ে লোকসানই হচ্ছে বেশি। তবে ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে ২ কোটি ৬১ লাখ ও ৯৫-৯৬ অর্থ বছরে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা মিলে লাভ হয়। এছাড়া বিগত ২০০১-২০০২ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত গত ১৯ বছরের হিসাবমতে লোকাসন হয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা। মিলের ব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. খোরশেদ আলম খন্দকার গত ১৯ বছরে ক্রমাগত লোকসানের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চালুর প্রথমদিকে মিলটি লাভজনক হলেও পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও মাথাভারী প্রশাসনসহ নানা কারণে ক্রমাগত লোকসানের ঊর্ধ্বগতিতে মিলটি এখন অতি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফলে লোকসানের বিশাল বোঝা মাথায় নিয়ে কৃষিভিত্তিক একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটি পড়েছে চরম হুমকিতে। এ দৈন্যদশায় মিলটি ঝিমিয়ে পড়ার পাশাপাশি ৩০ কর্মকর্তাসহ ৮৯০ জন কর্মচারীর চাকরি এখন হুমকিতে। শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না ৫-৬ মাস।

আরো পড়ুন: এবার শত শত ইমাম-মুসলিম নেতাদের বন্দি করেছে চীন

কলটির প্রতিদিনের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ১৫’শ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন। মিল জোনের আওতায় আখ চাষ হচ্ছে ৪০ একর জমিতে। এছাড়া বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় চাষি পর্যায়ে আখ চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৯শ’ ৯৩ একর জমিতে। প্রতিমন ১৪০ টাকা দরে চাষিরা মিলে চাষ সরবরাহ করেন। কিন্তু বিক্রিত আখের দাম পরিশোধে দীর্ঘসূত্রিতাসহ হয়রানি ও নানা জটিলতায় চাষি মিলে আখ সরবরাহে আগ্রহ হারাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত মিলটি আধুনিকীকরণ (বিএমআরই) করা হয়নি। ফলে বহু পুরাতন যন্ত্রাংশে সজ্জিত কারখানা প্রতি মৌসুমেই যান্ত্রিক ত্রুটিসহ ব্রেক ডাউনে চিনি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এছাড়া প্রতি মৌসুমে মিলে উৎপাদিত হাজার হাজার টন চিনি থাকে অবিক্রীত। আমদানিকৃত চিনির বাজার মূল্য কম হওয়ায় ডিলার ও ভোক্তারা দেশি চিনির পরিবর্তে কেমিক্যাল মিশ্রিত রিফাইন চিনির দিকেই বেশী ঝুঁকছেন। ফলে নানা সংকটে সম্ভাবনাময় এ মিলটি ঘুর দাঁড়াতে পারছে না। মিলটির আধুনিকরণসহ মিলটিকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন এলাকাবাসী।

মিলের আখ জোনের চাষি আব্দুস সাত্তার জানান, বিক্রিত আখের মূল্য পরিশোধে বিলম্বসহ নানা অনিয়মে লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে চাষিরা আখের পরিবর্তে অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষে ঝুঁকছে।

কুষ্টিয়া চিনিকলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাকিবুর রহমান খান লোকসানের সত্যতা স্বীকার করে জানান, মাড়াই মৌসুমে কাঁচামাল হিসাবে আখের সরবরাহ কম হওয়ায় মিলে চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। তবে এসব সংকট কাটিয়ে মিলটিকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জাতীয়

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা :দশম শ্রেণি শেষে ঐ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রথম পাবলিক পরীক্ষা, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে দুটি পাবলিক পরীক্ষা, তবে দুটি মিলিয়ে হবে চূড়ান্ত ফল, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন, পিইসি ও জেএসসি নিয়ে রূপরেখায় কিছু বলা হয়নি

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। তবে এই মূল্যায়ন পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে। পাঠদানের সময় ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ (শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন) ও বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সামষ্টিক মূল্যায়নের’ ভিত্তিতে শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। আর প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ‘দশম শ্রেণির’ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী দশম শ্রেণিতেই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় পরীক্ষা নিয়ে এমনই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও দেশের শিক্ষাবিদদের মতামতের আলোকে পরীক্ষা নিয়ে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই রূপরেখা তৈরি করেছে।

২০২২ সাল থেকে এই রূপরেখার আলোকে কারিকুলাম ও পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে দশম শ্রেণিতে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির আলোকেই এই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দশম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ থাকবে না। সবাইকে ১০টি বিষয় পড়তে হবে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানে ৫০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। এছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়—জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতিতে পুরোটাই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। ২০২৫ সালে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আর একাদশ শ্রেণি শেষে ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্তরে ৩০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে।

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। এসব শ্রেণিতে কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২০২২ সালে এবং ২০২৩ সাল থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হবে।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ নম্বরের ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক পরীক্ষা হবে ৩০ শতাংশ নম্বরের। এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হবে চতুর্থ শ্রেণিতে ২০২৪ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ২০২৫ সালে। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ২০২২ সালে এবং ৮ম শ্রেণিতে ২০২৩ সালে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তবে এই রূপরেখায় পঞ্চম শ্রেণি শেষে পিইসি ও অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ দুটি পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। সরকার এটা নির্বাহী আদেশে নিয়ে থাকে। যদি সরকার চায় তাহলে পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে মূল্যায়নের কাঠামো এই রূপরেখা অনুযায়ী হবে। সরকার নির্বাহী আদেশে পিইসি পরীক্ষা নিতে চাইলে ৭০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং ৩০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে নিতে হবে। তারপরই চূড়ান্ত ফল হবে।

পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে রূপরেখায় বলা হয়েছে, শিক্ষাক্রমে যোগ্যতাকে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, গুণাবলি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি বিশেষত পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীর মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ মূল্যায়ন করে। তাই প্রচলিত পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখে শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য অর্থাত্ শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, গুণাবলি ও মূল্যবোধ অর্জন সম্ভব হবে না। তাই পাবলিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি শিখনকালীন মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম রূপরেখায় মূল্যায়নকে কেবল শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা মূল্যায়ন, শিখন পরিবেশের মূল্যায়ন ও সে সঙ্গে শিখনের মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

জাতীয়

এলাকায় প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর গ্রামে দুই পক্ষের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে টেকেরহাট বন্দর সংলগ্ন মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের শ্রীযুতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিপক্ষের হাতে মারাত্মক আহত কালাম শেখকে (২৫) রাজৈর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।

নিহত কালাম শেখ রাঘদী গ্রামের মৃত জলিল শেখের ছেলে। আহতদের মধ্যে মুমুর্ষ ৬জনকে রাজৈর হাসপাতালে ভর্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য কালাই ফকির (৪৫), আয়ুব আলী (৬০), সহিদকে (৪০) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এলাকায় এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ৪/৫ দিন যাবৎ রাঘদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টুটুলের সমর্থকদের বিরোধ চলে আসছিল।

মুকসুদপুর থানা ওসি আবু বকর মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জাতীয়

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। বিশেষ করে রেল যোগাযোগ আধুনিকতায় এগিয়ে নিতে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে যমুনায় দেশের দ্বিতীয় ডুয়েল গেজ রেল সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। আগামী ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে নির্মাণ ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। যার ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাইকা দিচ্ছে। বাকিটা সরকার অর্থায়ন করছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে কাজ শেষ হলে তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে।

রবিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে সেতুটির প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে এক প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর পাশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বড়ো ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এখন যে গতিতে ট্রেন চলছে তা কিছুটা মন্থর। তবে ডুয়েল লেনের রেল সেতুটি তৈরি হলে ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়া দেশের সর্ব উত্তরের জেলা গুলোর সঙ্গে ঢাকার রেল পথ যোগাযোগ আরও সহজ করতে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত আলাদা রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই এই কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন: খুলনায় জুট মিলে আগুন, নেভাতে গিয়ে দগ্ধ ৪

এসময় সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবীবে মিল্লাত মুন্না, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, মহাপরিচালক মো. শামচুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জাতীয়

মানহীন ও চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি করে বেকায়দার দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজের মজুদ গড়ে উঠেছে।

আগের মতো চাহিদা না থাকায় বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। পচা পেঁয়াজ ফেলা হচ্ছে কর্ণফুলীতে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৫০ টাকার বেশি পড়লেও পাইকারি বাজারে সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না।

দিনের পর দিন পড়ে থাকার কারণে মানহীন পেঁয়াজে গজাচ্ছে অঙ্কুর। ফলে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে জানুয়ারিতে টিসিবি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে নেবে।

শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান খাতুন চাক্তাই পরিদর্শনে এলে ব্যবসায়ীদের এ আশ্বাস দেন।

চাক্তাই-খাতুনঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক মাসে হাজার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে।

চায়না থেকে আমদানি করা বেশিরভাগ পেঁয়াজই নিম্নমানের। চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আমদানির ফলে গুদাম এবং আড়তে হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজের মজুদ গড়ে ওঠে। তাছাড় মানহীন পচা পেঁয়াজও আমদানি হয়ে এসেছে জাহাজ ভর্তি হয়ে।

এর ফলে নষ্ট পেঁয়াজে এখন বাজার সয়লাব। দেশীয় ভালোমানের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হলেও আমদানিকৃত মানহীন পেঁয়াজের মূল্য ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বলছেন, গত ৪ মাসে মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরও অন্তত ১০ হাজার টন পেঁয়াজ। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে ১ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

এর ফলে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ জাহাজের কনটেইনারেই নষ্ট হয়ে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে আমদানি করা পেঁয়াজ অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ডগা গজিয়ে যায়। আবার সাধারণ কনটেইনারে আমদানি করা পেঁয়াজ পচে যায়।

উভয় সংকটের কারণে এবার পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বড় অঙ্কের লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন। প্রতিদিনই পচা পেঁয়াজ এখন খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের আড়ত থেকে বের হচ্ছে।

সরেজমিন কর্ণফুলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চাক্তাই খালের পাড়ে এবং কর্ণফুলীর তীরে রাতের অন্ধকারে কে বা কারা বস্তা বস্তা পচা পেঁয়াজ ফেলে দিয়ে গেছে।

পেঁয়াজগুলো আকারে ছোট। ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজের বস্তা থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ খাওয়ার উপযোগী পেঁয়াজ বেছে নিচ্ছেন। আবার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ নষ্ট ও নিম্নমানের পেঁয়াজগুলো ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন বাজার ও রাস্তাঘাটে বিক্রি করছেন।

ভ্যানগাড়িতে পেঁয়াজ বিক্রেতারা বস্তা প্রতি ২০০-৩০০ টাকায় কিনে বিক্রি করছেন। একটি পচা পেঁয়াজের বস্তা থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি মোটামুটি খাবার উপযোগী পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদফতর পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়ে চিঠি ইস্যু করে। চিঠিতে বলা হয়, কাটা, টুকরা ও গুঁড়া সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ এবং এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এরপর পর হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এর আগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। সেই সময় দুই দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে ডাবল সেঞ্চুরি পেরিয়ে যায়।

পরে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা মিয়ানমার, চীন, মিসর, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন।

খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্যাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজ আমদানিতে কেজিতে খরচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মান নষ্ট ও পচে যাওয়ায় সেসব পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি করতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ৪ মাসে মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

আরও পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। অধিক মুনাফার আশায় গণহারে পেঁয়াজ আমদানি করায় সবাই এখন বিপাকে পড়েছেন।

জাতীয়

দেশে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে (সাবস্টেশনে) আগুন দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিশেষ সমস্যা ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এ কাঠামোতে আগুন লাগা দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অস্বাভাবিক। অথচ গত আট মাসে দেশে স্বাভাবিক সময়ে অন্তত চারটি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটি উপকেন্দ্রে আগুন দুর্ঘটনা হয়েছে। এর ফলে বহুমুখী ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় জনগণ। রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতা, দায়িত্বে অবহেলা, আর্থিক দুর্নীতি এবং ট্রান্সফরমারসহ উপকেন্দ্রের অন্যান্য কেনাকাটায় সঠিক মান বজায় না রাখা—এ দুর্ঘটনার পেছনের কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানায়, গত আট মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত পাঁচবার বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। আগুনে পুড়ে যায় বিদ্যুতৎ সঞ্চালন-বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র ট্রান্সফরমারসহ নানা সরঞ্জাম। ফলে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন থাকে ঐ কেন্দ্রগুলোর আওতাধীন এলাকা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুত্ উপকেন্দ্রে আগুন লাগে। অন্ধকারে থাকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা। সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালীতে আগুনে পুড়ে ট্রান্সফরমার। দুই দিন পরে ১০ সেপ্টেম্বর ঐ একই উপকেন্দ্রে আরেক দফা আগুন লাগে। ফলে প্রায় এক সপ্তাহ ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় বিদ্যুেসবা বিঘ্নিত হয়। গত ১১ এপ্রিল বিকালে রাজধানীর রামপুরার উলন গ্রিডে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। গত ২০ মে কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারা সাবস্টেশনে আগুন লাগে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ঐ দুর্ঘটনা হয় বলে জানিয়েছে পিজিসিবি। এছাড়া গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জে নির্মাণাধীন উপকেন্দ্রে আগুন লাগে। ২০১৮ সালের ৩০ মে রাজধানীর পরিবাগে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লোকাল গ্রিড উপকেন্দ্র অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়।

সিলেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তিনটি কমিটির তদন্ত এখনো চলছে। চলতি সপ্তাহের শেষ বা আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা পড়তে পারে। এ উপকেন্দ্রটি ১৯৬৭ সালের। এর বাণিজ্যিক সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। পরে নানাভাবে সংস্কার ও বর্ধিত করা হয়। তাই কিছু কারিগরি অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। গ্রিড ও পিডিবির লাইনের সংযোগস্থলে এ দুর্ঘটনার সূত্রপাত। অন্য ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন বা সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনটি উপকেন্দ্রে অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। দুইটি উপকেন্দ্রে ট্রান্সফরমারের ওপরের অংশে থাকা বুশিং থেকে আগুন লাগে। সব দুর্ঘটনার সময়ই দেখা যায় সার্কিট ব্রেকার ঠিকভাবে কাজ করেনি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া উপকেন্দ্রে বড় ধরনের আগুন লাগা সম্পর্কে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক প্রকৌশলী বলেন, বৈদ্যুতিক অবকাঠামোগুলোর মধ্যে গ্রিড সাবস্টেশন খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এর যন্ত্রপাতি মানসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। সব উপকেন্দ্রেই সার্কিট ব্রেকারসহ কিছু সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা থাকে। অর্থাৎ কেন্দ্রের কোথাও সমস্যা-ত্রুটি দেখা দিলে তা যেন প্রকট না হয় অথবা না ছড়িয়ে পড়ে তা রোধ করতে সার্কিট ব্রেকার স্থাপন করা হয়। বিদ্যুত্ লাইনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ব্রেকারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়নি। এগুলো কাজ করেনি। তার মানে এগুলো আগে থেকেই নিম্নমানের বা ত্রুটিপূর্ণ ছিল, নয়তো পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে অকেজো হয়ে যায়।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণের পর সেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম রয়েছে। এ জন্য সরকার প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দও দেয়। পিজিসিবিসহ অন্য কোম্পানিগুলো তা ব্যয়ও করে। কিন্তু ঐ ব্যয়ের টাকা কোথায় হয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যয় করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না।

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী জানান, কারিগরি ত্রুটি-দুর্বলতার কারণে এ আগুন দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ ত্রুটিগুলোর কারণ আবার কয়েকটি। এক. পুরোনো সাবস্টেশন। দুই. সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। এক্ষেত্রে অনেকসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা করেন। কোম্পানির চেয়ে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের প্রতি তারা দায়বদ্ধ থাকার ফলে ঠিকভাবে কাজ করেন না। আবার বিদ্যুৎ চাহিদার কারণে উপকেন্দ্র পুরোদমে বন্ধ করে রক্ষণাবেক্ষণ করাও কঠিন। একই এলাকার জন্য দুটি উপকেন্দ্র থাকলে সেভাবে সংস্কার-রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হতো। তিন. সাবস্টেশনগুলোর সিংহভাগই বিদেশি ঋণ সহায়তায় নির্মিত। তাদের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় সর্বোচ্চ মানদণ্ড রক্ষা করা যায় না। এক্ষেত্রে একটি ইউনিফরম ব্যবস্থা থাকা দরকার। তিনি বলেন, সিলেটের উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের শীর্ষ পর্যায়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়ে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমাধানের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। এখন সেভাবেই কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আগুন লাগা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার বন্ধ এবং রক্ষণাবেক্ষণে যত্নশীল না হলে এমন অগ্নিকাণ্ড বন্ধ হবে না।

তড়িৎ প্রকৌশলী এবং কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ঠিকাদারদের নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের সুযোগ দিচ্ছে অনেকে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ কাজে গাফিলতি রয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যুত্ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষার উপায় নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। ঐ কমিটির সদস্য এবং পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনাগুলো সরকার সিরিয়াসলি গ্রহণ করেছে। কারণ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি দোষীদেরও শনাক্ত করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনা না হয় সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নে প্রতি মাসে বৈঠকও করবে কমিটি।

জাতীয়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বহু স্থানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাস্কর্য রয়েছে।

এসব ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সক্ষম সরকার। কারো বিরোধিতায় ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হবে না।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এম ভি ইকরাম জাহাজ পরিদর্শন শেষে ধোলাইখালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে একটি গোষ্ঠীর বিরোধিতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।

রাজধানীতে মৌলবাদী শক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করছে- এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অনেকেই অনেক কিছু বলে। এগুলো আমলে নেওয়ার মতো না। রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে কারো কোনো কথা আমলে নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কীভাবে আত্মসমর্পণ করেছে সেটা নির্মিত হবে। সারাদেশেই অসংখ্য ভাস্কর্য রয়েছে। এটাতো নতুন কিছু না।

এম ভি ইকরাম সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, নৌ-কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের সাক্ষ্য এম ভি ইকরাম জাহাজকে আন্তর্জাতিকমানের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। এজন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ ও ডিজাইন করার জন্য কারিগরি টিম গঠন করা হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি স্মৃতিচিহ্ন সরকার সংরক্ষণ করবে।

যুদ্ধ জাহাজ পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি বিজড়িত জাহাজটি সংস্কার করে ভালো একটি স্থানে রাখা হবে। এই জাহাজটি আমাদের একটি নির্দশন। জাহাজটি সংরক্ষণের জন্য দু’টি জায়গা পছন্দ করা হয়েছে। একটি হলো মাদারীপুরের এসপিটিআই প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও অপরটি চাঁদপুরের নদীবন্দরের পাশে। যুদ্ধজাহাজটি এমনভাবে সংরক্ষণ করা হবে যাতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নেভাল কমান্ডোর ইতিহাস সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারে।

সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অনেক ভাস্কর্য রয়েছে কিন্তু সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন না তুলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তি করাটা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা বাঙালিরা একটু আবেগী। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বন্ধ করার যে দাবি তারা তুলেছে সেটার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল, উপ-পরিচালক মোবারক হোসেন, নারায়ণগঞ্জ নৌ-থানার ওসি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।