জাতীয়

সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় বৃদ্ধা রোগীর পাশে বসে কেঁদে ফেলা মানুষটি একজন সংসদ সদস্য (এমপি)। ভদ্রলোক শুধু এমপিই নন, দেশের অন্যতম শীর্ষ ধনী, আরএকে সিরামিকসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (সুখন)।

শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান এই এমপি। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রায় শত বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধার পাশে মেঝেতে বসে পড়েন। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যান, চোখে পানি চলে আসে তার।

একজন শীর্ষ ধনী ও সংসদ সদেস্যর এমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নেটিজেনদের মধ্যে। প্রশংসায় ভাসছেন এই সংসদ সদস্য। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি সব রোগীদের মধ্যে ঈদ উপহার তুলে দেন।

এসময় তিনি বলেন, আমাদের যতটুকু সাধ্য আছে তার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে যেতে চাই। কোনো রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.অভিজিৎ রায় জানান, আজকে এমপি স্যার হাসপাতালে রোগীদের দেখতে আসেন। রোগীদের জন্য ঈদ উপহার ও ছোট বাচ্চাদের জন্য খেলনা নিয়ে আসেন। এসময় শতবর্ষী রোগী সাজেদা বেগমকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং মেঝেতে রোগীর পাশে বসে পড়েন তিনি।

সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (সুখন) এমপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে এমপি হন এবং সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এবং সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন আহম্মদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরানুল হক ভূইয়া, ওসি মো. সোহাগ রানা প্রমুখ।

জাতীয়

ঢাকাসহ দেশের পাঁচটি বিভাগে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

শনিবার (৩০ মার্চ) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

রোববার (৩১ মার্চ) রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

সোমবার (০১ এপ্রিল) রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

শনিবার দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ১৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জাতীয়

শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং অত্যন্ত গোপনীয় তথ্যভান্ডার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইল্যান্সে (নজরদারি সফটওয়্যার) অবৈধ সংযোগের তথ্য মিলেছে।

বিএসইসির ভেতরের একটি চক্র টানা ৭ বছর ধরে এ কাজ করে আসছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে সার্ভেইল্যান্স এরিয়ার বাইরে সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপন করে কাজ করছে তারা।

এর সঙ্গে জড়িত আছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তার একটি চক্র। বিষয়টি ইতোমধ্যে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এখনো সংযোগই বন্ধ হয়নি।

নিজস্ব অনুসন্ধান ও বিএসইসির অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এমন চঞ্চল্যকর তথ্য।

এসব ঘটনায় হতবাক বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, তথ্য পাচারের কারণে বড় অঙ্কের টাকা আয় হয়। এই টাকা দেশে থাকছে, নাকি দেশের বাইরে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তবে যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে শেখ মাহবুব উর রহমান শনিবার বলেন, সংযোগটি আমি নেইনি। ২০১২ সাল থেকে যখন যে পরিচালক ছিলেন, তার রুমেই এই সংযোগ ছিল। সেখান থেকেই আমি পেয়েছি। ফলে অবৈধ বলার সুযোগ নেই।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শনিবার বলেন, এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। শুধু বিএসইসি নয়, স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভেইল্যান্স থেকেও তথ্য পাচারের কথা শোনা যাচ্ছে। এখানে যাদের দায়িত্ব রয়েছে, তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। এর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। পুঁজিবাজারের স্বার্থেই এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত।

পাশাপাশি এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা আয় হয়। এই আয়ের টাকা দেশে থাকছে নাকি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার বাজারের লেনদেন, নজরদারি এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার গোপন তথ্যভান্ডার। এখানে দৈনন্দিন লেনদেন, কারা কিভাবে লেনদেন করছে, কে কোন শেয়ার কিনছে সে তথ্য থাকে। চারটি প্রতিষ্ঠানের সার্ভেইল্যান্স রয়েছে।

এগুলো হলো-বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার বিএসইসির। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লেনদেন মনিটরিং করা হয়।

এছাড়া সার্ভিল্যান্সের মাধ্যমে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিএসইসি। দীর্ঘদিন থেকে এই সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বাইরে পাচারের অভিযোগ এসেছে। ২০১১ সালে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সার্ভেইল্যান্স থেকে তথ্য পাচারের কথা বলা হয়।

ওই রিপোর্টে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএসইসির কাছে সুপারিশ করা হয়। তবে ওই সময়ে বিএসইসির নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম ছিল না।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২০১২ সালে নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার কেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বিএসইসির সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বাইরে আসার বিষয়টি দুঃখজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে-শেয়ারবাজারে সার্ভেইল্যান্সের গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম কমিশনের নজরে আসে। তৎকালীন সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্বে থাকা কমিশনার মো. আবদুল হালিমের স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্ট ওইদিনই কমিশনে জমা হয়।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি আমাদের নজরে এসেছে, সার্ভেইল্যান্স পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত নির্ধারিত রুমের বাইরে এই সফটওয়্যারটির আরেকটি ওয়ার্কস্টেশন রয়েছে। এই সংযোগটি বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানের নিজ রুমে। এর কোনো বৈধ অনুমোদন নেই।

যেহেতু কমিশনের নজরদারি ব্যবস্থা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গোপনীয়। যে কারণে সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ব্যবস্থা এবং সীমাবদ্ধ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ওই কর্মকর্তার এ ধরনের কার্যক্রমে বিধিনিষেধ এবং নিরাপত্তা ভঙ্গ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।

এরপর ওইদিনই পরিচালক মাহবুব উর রহমানকে এই সংযোগের অনুমোদনের প্রমাণ সরবরাহ করতে বলা হয়। উত্তরে তিনি একটি অনুমোদনপত্র দেখিয়েছেন, যা হাইস্পিড (উচ্চগতির) কম্পিউটার চালানোর ব্যাপারে কমিশন তাকে দিয়েছে। কিন্তু সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যারটির বাইরে সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে অনুমোদন নেই। অর্থাৎ তিনি বৈধতার অনুমোদনের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ অবস্থায় সংযোগটি দ্রুত নজরদারি কক্ষে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সুপারিশ আমলে না নিয়ে এখনও সেই সংযোগটি কক্ষেই রেখেছেন তিনি।

পাশাপাশি ওই রিপোর্টে বেশকিছু বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রথমত, এ সংযোগটি তিনি কখন থেকে এবং কিভাবে পেয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, অনুমোদনহীনভাবে কে তার জন্য সফটওয়্যার সংযোগ স্থাপন করেছেন। তৃতীয়ত, এ সংযোগের উদ্দেশ্য কী ছিল। চতুর্থ বিষয় হলো-কিভাবে তিনি এই বর্ধিত সংযোগের ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিলেন। এক্ষেত্রে নজরদারি ব্যবস্থার অপব্যবহার হয়েছে কিনা। বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এই গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারে কোনো নির্দেশিকা নেই। যারা এখানে কাজ করেন, তাদের ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি গাইড লাইন থাকা জরুরি। না হলে এই প্রক্রিয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের নিরাপত্তা দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, সংযোগই বন্ধ হয়নি।

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার মো. আবদুল হালিম শনিবার বলেন, ওই সময়ে সার্ভেইল্যান্সের ব্যাপারে কিছু একটা সুপারিশ ছিল। কিন্তু আমি এখন আর সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্বে নেই। ফলে এরপর কী হয়েছে আমি আর বলতে পারব না।

তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সার্ভেইল্যান্সের দায়িত্বে থাকা বর্তমান কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, সার্ভেইল্যান্স অত্যন্ত গোপনীয় ও সুরক্ষিত তথ্য। আমাদের আইনেও এ ব্যাপারে সুরক্ষা দেওয়া আছে। যাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে, তাদেরকেই এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখান থেকে তথ্য পাচার হলে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তবে কেউ তথ্য পাচার করছে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে আমারে কাছে অভিযোগ নেই। আমি নিশ্চিত করছি, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।

২০১৭ সালে বিএসইসির অফিস দিলকুশার জীবন বীমা টাওয়ার থেকে আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সময় এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) শেখ মাহবুব উর রহমান।

ওই সময়ে তার রুমে এই অবৈধ সংযোগটি স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে টানা ৭ বছর ধরে চলে এসেছে অবৈধ সংযোগ। প্রথমে কিছুদিন কারও নজরে আসেনি। পরবর্তী সময়ে কমিশন জানলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ছিল। এর সঙ্গে কমিশনের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।

জানতে চাইলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন- সার্ভেইল্যান্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের। তারা নিরাপত্তা না দিলে কী করার আছে?

তিনি বলেন, এই সফটওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে। কিভাবে পরিচালনা করা হয়, কারা পরিচালনা করছে এবং সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ফিচারগুলো কিভাবে করা হয়েছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কমিশন যদি সিকিউরিটি না দেয় তাহলে কী করবেন?

অনুসন্ধানে জানা গেছে-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে ২০১২ সালে নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সুইডেনের কোম্পানি ‘ট্রাপেটস এবি’র কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারে কেনা হয় সফটওয়্যারটি। এই সফটওয়্যারটির নাম ‘ইনস্ট্যান্ট ওয়াচ মার্কেট’ (আইডব্লিউএম)।

এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সুইডেনের হলেও আঞ্চলিক ভেন্ডর ছিল ভারতীয় কোম্পানি ‘চেলা সফটওয়্যার। প্রতি তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি এবং মেইনটেইন্যান্স বাবদ প্রতিবছর নবায়ন ফি ৫০ হাজার ডলার। তিন বছরে দেড় লাখ ডলার। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে রিয়েল টাইম এবং হিস্টোরিক্যাল দুটি ডাটাই দেখা যায়। ভারতের চেলা সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই সিস্টেম কেনা হলেও সফটওয়্যার কেনার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।

বর্তমানে চেলা সফটওয়্যারের মালিকানায়ও পরিবর্তন এসেছে। ফলে বিএসইসির সিস্টেমে কোনো সমস্যা হলে সুইডেনের কোম্পানি ট্রাপেটসের টেকনিক্যাল টিম সহায়তা দেয়। আজ ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকে এই সফটওয়্যারের নতুন ভার্সন ব্যবহারের কথা রয়েছে।

বিএসইসির বৈধ সার্ভেইল্যান্স রুমের নিরাপত্তার জন্য এখানে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ট্রেডিং সফটওয়্যারের সঙ্গে ডেডিকেটেড সফটওয়্যারে রিয়েল টাইম কানেকটেড। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের ‘প্যাকেট ডাটা’ তারা গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে কারও আইপি এবং ম্যাক সিস্টেমের সমন্বয় হলেই ওই ডাটা গ্রহণ করা হয়।

এক্ষেত্রে দুর্ঘটনাবশত কোনো হ্যাকার প্রবেশ করলেও একইসঙ্গে আইপি এবং ম্যাক সিস্টেমের সমন্বয় সম্ভব নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভেইল্যান্সের রিয়েল টাইম ডাটা তারা গ্রহণ করেন। কিন্তু আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএলের রিয়েল টাইম ডাটা পায় না। এক্ষেত্রে তারা দিন শেষে ডাটা গ্রহণ করে।

এছাড়াও বিএসইসির সপ্তম তলায় অবস্থিত সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের ওয়ার্ক স্টেশনে দুটি রুম। বর্তমানে তিনজন কাজ করছেন। একটি রুমে মূল সফটওয়্যার সিস্টেম। অন্য রুমে যারা কাছ করছেন, তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং সামান্য বিশ্রামের জায়গা। যারা কাজ করছেন এর বাইরে সফটওয়্যার রুমে কারও প্রবেশের অধিকার নেই। এখানের বিদ্যুতের লাইনও আলাদা।

অনুমতি ছাড়া মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ নেই। রুমের মধ্যে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। কেউ মোবাইল দিয়ে ছবি তুললেও তা কন্ট্রোল রুমে ধরা পড়বে। তবে মূল সার্ভেইল্যান্স রুমের বাইরে অবৈধভাবে স্থাপিত রুমে মানুষের স্বাভাবিক যাওয়া আসা রয়েছে। এই রুমে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে তা বেশ কিছুদিন ধরে নজরদারি করেছে । যে সেখানে মানুষ নিয়মিতভাবেই যাতায়াত করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে-শেয়ারবাজারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর নানাভাবে বাইরে আসছে। টাকার বিনিময়ে এসব তথ্য বেচা-কেনা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, কারসাজির সঙ্গে জড়িত বড় সিন্ডিকেট এবং প্রভাবশালী একটি মহল এসব তথ্য ব্যবহার করছে।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান রিয়েল টাইম ডাটা পেয়ে যায়। আবার লেনদেন শেষে বিকালের মধ্যেই ওইদিনের পুরো তথ্য বাইরে চলে আসে। কোন বিনিয়োগকারী বা ব্রোকারেজ হাউজ কোন কোম্পানি শেয়ার কী পরিমাণে কিনেছে, তার সব তথ্যই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বিও অ্যাকাউন্টের (শেয়ার লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হিসাব) তথ্যসহ বাজারে চলে আসে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের শেয়ারবাজারে এই তথ্য পাচার বা কিংবা অবৈধ সংযোগ একেবারেই অস্বাভাবিক। কারণ পৃথিবীর কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে গোপনীয় এই তথ্য পাচার অসম্ভব। এ কারণেই খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টে সার্ভেইল্যান্সের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।

ইব্রাহিম খালেদের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের তথ্য সংরক্ষণ জরুরি। এখান থেকে তথ্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে। কিভাবে এবং কারা তথ্য পাচার করে তার একটি তালিকা কমিটির হাতে এসেছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম থেকে তথ্য পাচারের সুযোগ নেই। কারণ ওই রুম অত্যন্ত সুরক্ষিত। ওখানে অন্য কারও প্রবেশাধিকার নেই। যারা কাজ করেন, তারা সেখানে মোবাইল, ইন্টারনেট এবং পেনড্রাইভ কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারেন না। এসব কিছু ব্যবহার সেখানে নিষিদ্ধ। এছাড়াও সেখানে সিসিটিভি রয়েছে। সবকিছু নজরদারিতে রাখা হয়।

জাতীয়

বিএনপির সাতটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগর শাখা নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। তেরোটি মহানগরের (সাংগঠনিক) মধ্যে খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, গাজীপুর, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহীতে আগের মতো ত্যাগী ও পরীক্ষিত বড় কোনো নেতা তৈরি করতে পারেনি দলটি।

দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে সাংগঠনিক অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এসব মহানগরের অধিকাংশই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে কর্মী সংকটে পড়ছে। তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ওপর নির্ভর করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়।

এর কারণ হিসাবে নেতারা জানান, বরিশালসহ কয়েকটি মহানগরের কমিটি গঠনে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক তথ্য দেননি। এসব মহানগরের ত্যাগী ও প্রভাবশালী একটি গ্রুপকে বাদ রেখে অনেকটা ‘অপরিচিত’ নেতাদের দিয়ে কমিটি করেছে।

যে কারণে তারা সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারছে না। আর খুলনাসহ কয়েকটি মহানগরে ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেক নেতা রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। এসব মহানগরে দলের হাইকমান্ড বিশেষভাবে ‘নজর’ না দিলে অতীতের মতোই আগামী দিনেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আসবে না বলে মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, বিএনপির তৃণমূল থেকে উঠে আসা খুলনার পরীক্ষিত নেতা ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মহানগরের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কারণে তাকে অব্যাহতি দেয় দল। মঞ্জু মহানগরের সভাপতিসহ নানা পদে ছিলেন।

খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে তার ত্যাগ সবাই স্বীকার করেন। অথচ মঞ্জু তিনবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও এখনো তাকে দলে নেওয়া হয়নি। মহানগরে তার অনুসারীদেরও কোনো পদে রাখা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় আড়াই মাসের আন্দোলনে মহানগরের বর্তমান নেতৃত্ব মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে; কিন্তু মঞ্জুর মতো নেতাকে ব্যবহার করতে না পারাটা দলের ব্যর্থতা বলে স্থানীয় অনেকেই স্বীকার করেন।

একইভাবে বরিশালের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের মতামতকে উপেক্ষা করে মহানগরের কমিটি দেওয়া হয়। সেই কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদের পর্যন্ত রাখা হয়নি। এবারের আন্দোলনে এই নগরীর নেতাকর্মীরা সরোয়ার ও তার কর্মীবাহিনীর অনুপস্থিতি অনুভব করেছেন।

কুমিল্লায়ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ছিলেন জনপ্রিয় নেতা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার বদলে সেরকম জনপ্রিয় নেতা সেখানে আর তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।

গাজীপুর মহানগরে হাসান উদ্দিন সরকার ও সাবেক মেয়র প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের মতো জনপ্রিয় নেতা তৈরি হয়নি। সর্বশেষ হাসান উদ্দিন সরকার মহানগরের কমিটিতে থাকাকালীন কর্মীবাহিনী তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান কমিটি গঠনের পর ফের দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

এ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রয়াত মান্নানের পুত্র এম মঞ্জুরুল করীম রনিকে রাখা হলেও তিনি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারেননি। মাঠের আন্দোলনে তো নয়ই, কোনো সাংগঠনিক কাজেও তাকে মহানগরের নেতাকর্মীরা পাচ্ছেন না। ফরিদপুরে একসময় বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমান ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো নেতারা ছিলেন। কিন্তু এখন যাদের হাতে কমিটি দেওয়া হয়েছে, তারা ততটা সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারছেন না।

রাজশাহীতেও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর মতো নেতা একসময় মহানগরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এখনকার নেতৃত্ব দুই গ্রুপে বিভক্ত। নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা। অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও এটিএম কামালকেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।

পরে গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈমুর ‘তৃণমূল বিএনপির’ মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়ে নির্বাচনেও অংশ নেন। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এ দুই নেতাকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তারাই ছিলেন নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত মুখ। তাদের স্থলে এ রকম আর কোনো নেতা তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।

বিএনপির সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৩টি মহানগর রয়েছে। এগুলো হলো-ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, গাজীপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা মহানগর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈসাকে আহ্বায়ক ও মামুন-অর-রশিদকে সদস্যসচিব করে রাজশাহী মহানগরের ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। তখনই এ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মহানগরের একটি অংশ।

তারা অভিযোগ করেন, কমিটি গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন ভুলের খেসারত সামনে বিএনপিকে দিতে হবে। বরিশাল মহানগরেরও একই অবস্থা। নানা নাটকীয়তার পর মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদকে সদস্যসচিব করে একই বছরের ২১ জানুয়ারি কমিটি দেওয়া হয়।

স্থানীয় নেতারা জানান, মহানগরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীদের বাদ দিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়। একতরফা কমিটি করার কারণে মহানগরে তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারছে না বর্তমান নেতৃত্ব।

কুমিল্লা মহানগরের কমিটি নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে এ মহানগরে প্রথমবার আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পিএস পরিচয়দানকারী আবদুর রহমান সানির শ্বশুর রাজিউর রহমান রাজিবকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

এছাড়া রাজিবের এক ভাইকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আরেক ভাইকে সদস্য করা হয়। অথচ তারা এর আগে বিএনপির কোনো পদে ছিলেন না। এমনকি অতীতের কোনো আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের দেখা যায়নি। এ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়।

পরে কমিটি ঘোষণার রাতেই নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় ঘোষিত কমিটি থেকে আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমিরসহ ৪৪ সদস্যের কমিটির বেশ কয়েকজন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে আমিরুজ্জামানকে বিএনপির সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আলীকে। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিউর রহমান রাজিব, সেলিম খান, শাহ আলম মজুমদার ও মো. বিল্লাল, সদস্য শাখাওয়াত উল্লাহ, কোহিনুর আক্তার, আবদুল্লাহ আল মোমেন, হারুন অর রশিদ ও নাসির উদ্দিনকে কমিটি এবং দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পরে তিন মাসের মধ্যে ৩১ আগস্ট ফের ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে রাজিউর রহমান রাজিব দ্বিতীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হন। রাজিউর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জয়ী হন।

তারেক রহমানের পিএস পরিচয়দানকারী আবদুর রহমান সানির শ্বশুর হওয়ার কারণে আবারও তাকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তারা বলেছেন, রাজিউর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করেন। তাকে মহানগর বিএনপির দুটি কমিটিতেই যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। অতীতে দলীয় কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি। অথচ অন্যদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার, পদ কেড়ে নেওয়া ও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নেতাকর্মীদের দাবি, তিন কমিটিতে দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব পদে রাখলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হতো। ফরিদপুর মহানগর কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সেখানে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং চলছে। অগণতান্ত্রিকভাবে ও অযোগ্যদের দিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার অভিযোগ এনে তখন সংবাদ সম্মেলনও করে নতুন কমিটির একাংশ। নারায়ণগঞ্জ মহানগরও সাংগঠনিকভাবে ততটা শক্তিশালী নয়।

একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জেলা ও বিভাগভিত্তিক হেভিওয়েট নেতা তৈরি করা গেলেও গ্রুপিংয়ের কারণে তা ধরে রাখা যায়নি। যে কারণে আন্দোলনে যতটা ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমাদের কাছে পদ-পদবি বড় না। দেশ বড়, দল বড়। আগে যেভাবে আমরা দল গড়ে তুলেছিলাম, এখন দল আরও বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কোয়ালিটি লিডারশিপ আমাদের আরও দরকার। নেতৃত্ব দিতে মেধা, যোগ্যতা, সহনশীলতা, কখনো কখনো সাহসী কর্মকাণ্ড যেটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য তা লাগে। ভালো ব্যবহার, নিষ্ঠা, শ্রদ্ধাবোধ তো রয়েছেই। এগুলো কিছুটা পরিবার থেকে আসে, কিছুটা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকেও শিখতে হয়। যাদের এসব কোয়ালিটি আছে, তারা ভালো নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপিও অনেক শক্তিশালী। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছি। এমনিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। সেটা ছিল, আছে-এটা এমন কিছু না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘এক নেতার এক পদ-এমন কথা বলে আমাকে বরিশাল মহানগরে রাখেনি। মহানগরে দ্রুত কমিটি করতে গিয়ে তা শক্তিশালী হয়নি। সঠিক জায়গায় সঠিক নেতৃত্ব হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। আবার কমিটি করতে গিয়ে পুরোনোদের একবারে বাদ দিয়ে দিয়েছে, যারা যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতা ছিলেন; যারা মাঠে ছিল না-এ ধরনের সংখ্যা কমিটিতে এখন বেশি। সক্রিয় লোকজন পদ পায়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের সময় আমি জেলে ছিলাম, মহানগরের নেতৃত্ব কি করতে পেরেছেন নীতিনির্ধারকরা তো তা অবশ্যই দেখেছেন।’

অবশ্য বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টিতে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে এখনো থানা নির্ধারণ করেনি, তাই কমিটি হয়নি। আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো ১ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছিলাম। প্রায় তিন মাস কারাগারে ছিলাম। এত গ্রেফতার-হামলা-মামলা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা যতটুকু করতে পেরেছেন তা করেছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘নগরের ৫টি থানা ও ৩১টি ওয়ার্ডে আমরা ভোটের মাধ্যমে কমিটি করেছি। এখন মহানগরের সম্মেলন বাকি আছে’। নির্বাচনের আগে আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হরতাল, অবরোধসহ সব কর্মসূচিই মহানগরে শতভাগ সফল হয়েছে। মহানগরেই ৪২টি মামলা হয়েছে, যেখানে ৫শ এর বেশি আসামি, অজ্ঞাত তো আছেই।

জাতীয়

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এত ব্যাংক দিলেন কেন-এমন প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাড়তে বাড়তে এখন বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যেসব ব্যাংক দেওয়া হয়েছিল, এর কোনোটাই ভালো করছে না। এসব ব্যাংকের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করা। পদ্মা ব্যাংকের মতো এগুলোকে নাম বদলে ভালো করার চেষ্টা না করে লিকুইডেট (বিলুপ্ত) করে দেওয়াটা সবচেয়ে ভালো।

শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ছায়া সংসদ’ বিতর্ক শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিপক্ষ দল বিজয়ী হয়েছে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক আগেই বলেছিলাম, এত ব্যাংকের অনুমোদন দিলে মার্জারের (একীভূতকরণ) সিদ্ধান্তে যেতে হবে। দেরিতে হলেও মার্জার অ্যাকুইজেশনের সিদ্ধান্তটা ভালো। তবে মার্জারের মাধ্যমে ব্যাংক লুটেরা বা দুর্নীতিবাজরা যাতে পার না পেয়ে যায়, এ বিষয়ে খুব গুরুত্বসহকারে নজর রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রলেপ দিয়ে ব্যাংক খাতের চিকিৎসা করা যাবে না। অর্থনীতির স্বার্থে এটাকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আমাদের দেশে মার্জারের ভালো উদাহরণও রয়েছে। যেমন ইস্টার্ন ব্যাংক এখন একটি সবল ব্যাংক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ভালো ব্যাংক যেন দুর্বলের প্রভাবে নড়বড়ে হয়ে না যায়। পাশাপাশি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী গ্রাহকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, আমি জানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট বছরের পর বছর পড়ে থাকে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয় না। অন্যদিকে পরিচালকরা তাদের ঋণ ভাগাভাগি করতে থাকে। এগুলো একটি অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ। এজন্য ব্যাংকের আইনে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথা যে আইন আছে, সেটার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিযোগীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগতভাবে দুর্বল। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ওপরে নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকলে হবে না। অর্থনীতির স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হয়। দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।

প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতার বিষয়ের (ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ) পক্ষে প্রাইম ইউনিভার্সিটি এবং বিপক্ষে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন।

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এগুলো হচ্ছে-ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সংস্কারের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা করা। আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করা। ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিসহ ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের নামের তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা।

আর্থিক খাতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিসহ ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান, নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ, দেশে-বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা করে এনবিআর ও দুদকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করা। শুধু সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত নয়, যারা ব্যাংক দুর্বল করার জন্য দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে সরকারের ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকালীন এসব অসৎ ব্যক্তি পার পেয়ে যেতে না পারেন।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর ক্ষতির দায় কে নেবে তা স্পষ্ট করা। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানত গ্রহণ ও বিতরণ ছাড়া অন্যসব কার্যক্রম বন্ধ করা। দুর্বল ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণ আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর অধিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম না হয়। ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করতে হবে। যাতে মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী পর্ষদ যেন ব্যবস্থাপনা কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে এবং ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সুফল পেতে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা, যাতে কোনো পক্ষপাতমূলক সংবাদ ব্যাংক একীভূত প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

জাতীয়

দেখতে দেখতে মাগফিরাতের দিনগুলোও শেষ হয়ে গেল। আজ ২০ রমজান। আগামীকাল থেকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পয়গাম নিয়ে মুমিনের দরজায় কড়া নাড়বে নাজাতের দশক।

সংযমের এ মাসে আত্মপর্যালোচনা করা দরকার-আমরা রহমত ও মাগফিরাতের কতটা কামাই করতে পারলাম।

আল্লাহর প্রিয় হতে পারলাম কতটুকু। নবিজির ভালোবাসা কতটা ধারণ করলাম। তাহলে মুক্তির দশক থেকে পরিপূর্ণভাবে উপকৃত হতে পারব।

বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতে, রমজানের প্রত্যেক দশকেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত থাকে। তবে পৃথক পৃথক তিন দশকে বিশেষ তিনটি বিষয়ের প্রাবল্য থাকে। তাই নাজাতের এ সময়ও আল্লাহর কাছে রহমত ও মাগফিরাত কামনায় কোনো বাধা নেই।

প্রিয় পাঠক! মোবারক এ মাসে কল্যাণ ও করুণার স্রোতঃধারা দ্রুত বয়ে চলছে। কৃচ্ছ্রসাধন, সংযম ও সহমর্মিতার সাধনার মাধ্যমে এ সময় যে যতটা সাওয়াব কুড়াবে, তার জীবন হয়ে উঠবে ততটা আনন্দময়।

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি হলো ইফতারের আনন্দ। আরেকটি হচ্ছে দিদারে ইলাহির আনন্দ। সারা দিন না খেয়ে সন্ধ্যায় যখন রোজাদার এক গ্লাস ঠান্ডা পানির শরবত পান করেন, তখন কী যে ভালো লাগে, এর তুলনা করা চলে না।

রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারের অনুভূতি-আনন্দ কখনোই রোজা না রেখে খাওয়ার মতো হবে না। এটা একটা চিরন্তন ঐশী ব্যাপার। আরেকটি আনন্দ হলো দিদারে ইলাহির আনন্দ।

আল্লাহপাককে দেখার সাধ। তার সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্যের আনন্দ। আমরা যদি সারা জীবন দেহ ও আত্মাকে পাপাচার থেকে উপোস রেখে আল্লাহপাকের কাছে হাজির হতে পারি, তাহলেই আমাদের আত্মার ইফতার হবে প্রভুকে দেখার সৌভাগ্য অর্জনের মাধ্যমে।

খোদাকে দেখার আনন্দে আমাদের দেহ-মন সজীব ও সতেজ হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, দেহের রোজা মাত্র কয়েক ঘণ্টার। আর এর আনন্দ হলো দুনিয়ার ইফতার। আর আত্মার রোজা একজীবনের। এর আনন্দও সৃষ্টিজগতের সেরা আনন্দ-দিদারে ইলাহির আনন্দ।

এই এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যেন একজীবনের আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ নিতে পারি-এটাই সিয়াম সাধনার মূল শিক্ষা। রোজা মুসলমানদের ইমান ও বিশ্বাসের উন্নয়ন, আদর্শ চরিত্রগঠন, নিয়মানুবর্তিতা, আমানতদারি, সহমর্মিতা, পরোপকার এবং আল্লাহর রাসুলের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। মার্জিত জীবনাচার ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয় সিয়াম।

সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে সেহরি গ্রহণ আবার সময়মতো ইফতার করা, যথাসময়ে তারাবি নামাজ আদায়সহ অন্য অনেক আমল পালনে সময়ানুবর্তী হওয়ার মহান শিক্ষা আমরা রমজান থেকে পাই।

রমজানের শিক্ষা যদি আমরা বাকি জীবনে চর্চা করতে পারি, তাহলে পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনেও আমরা সফল হতে পারব, এটা নিশ্চিত বলা যায়। আল্লাহতায়ালাই একমাত্র তওফিকদাতা।

জাতীয়

ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কাছে জিম্মি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিক ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছে। এ কারণে তাদের ৪-৫ দিন পর একবার গোসল করতে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের শরীরে দেখা দিয়েছে এলার্জিজনিত নানা সমস্যা। জিম্মি এক নাবিকের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারের বিষয়ে হঠাৎ করেই মালিক পক্ষ মুখ বন্ধ করেছে। নাবিকদের মুক্তিপণের বিষয়ে কতটুকু কী হয়েছে, ঈদের আগে তাদের মুক্ত করা যাবে কিনা- এ বিষয়ে নতুন করে তাদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। বক্তব্য নেওয়ার জন্য বুধবার কবির গ্রুপের অধীন এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিমকে ফোন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিপণ নিয়ে দস্যুদের প্রতিনিধির সঙ্গে দেনদরবার চলছে। অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে এই গ্রুপের আরেক জাহাজ এমভি জাহান মণি জাহাজ ও এর ২৭ নাবিককে মুক্ত করতে মালিক পক্ষকে ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছিল। এটি উদ্ধার করতে সময় লেগেছিল ১০০ দিন। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে সময় কম লাগতে পারে। কিন্তু মুক্তিপণ বেশি লাগতে পারে। জাহাজে সোমালি ভাষা ও ইংরেজি ভাষা বলতে পারেন এমন একজন দোভাষী নিয়োগ করেন জলদস্যুরা। ওই দোভাষীর কথায় জিম্মি নাবিকরা বুঝতে পারছেন মুক্তিপণ নিয়ে দেনদরবার কিছু একটা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জাহাজের এক নাবিকের স্বজন বলেন, জাহাজ জিম্মি করার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ফুরিয়ে এসেছে। প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য এক ঘণ্টা পানি দেওয়া হচ্ছে। ওয়াশ রুমে ব্যবহার করতে হচ্ছে সাগরের পানি। ৪-৫ দিন পর একবার গোসল করতে দেওয়া হচ্ছে। যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন তারা ছাড়া অন্য নাবিকদের এক কেবিনেই গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। একদিকে প্রতিদিন গোসল করতে না পারা, অন্যদিকে গাদাগাদি করে রাখার কারণে প্রায় প্রত্যেক নাবিকের চর্মরোগজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা বেশ অস্বস্তিতে আছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইসরাত জাহান বলেন, ‘৪-৫ দিন গোসল না করলে যে কোনো মানুষ ইম্পেটিগো বা ত্বকে খোসপাঁচড়া হতে পারে। শরীরের ঘাম থেকে ব্যাকটেরিয়াজনিত দাদ রোগে ভুগতে পারেন। তাছাড়া এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। দুই দিনে তিন দফা স্থান বদল করে এই জাহাজ নেওয়া হয় সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলে। উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি অবস্থান করছে। ভারী অস্ত্র নিয়ে জলদস্যুরা পাহারা দিচ্ছে জিম্মি নাবিকদের। এরই মধ্যে ইইউ যুদ্ধজাহাজ, ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজও জিম্মি জাহাজটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। জিম্মি নাবিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কোনো ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না। সমঝোতার মাধ্যমে মুক্তিপণ দিয়েই নাবিকদের অক্ষত ও নিরাপদে উদ্ধারে স্বজনদের মতামত যেমন আছে, তেমনি মালিক পক্ষও সেটি চাইছে। জিম্মি করার এক সপ্তাহ পর ২০ মার্চ জলদস্যুদের প্রতিনিধি মুক্তিপণ নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে আশার আলো দেখা দেয়। তবে যোগাযোগের পর আরও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এই এক সপ্তাহে অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে সে বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট আর পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে মালিক পক্ষও নতুন করে কিছু বলছে না।

সূত্র জানায়, জাহাজ জিম্মি করার পর কোন প্রক্রিয়ায় কোথা থেকে টাকা সংগ্রহ করে দস্যুদের কাছে পৌঁছানো হবে তা নিয়েই চলছে আলোচনা। কৌশলগত কারণে তাই মালিক পক্ষ জিম্মি মুক্তির বিষয়ে নতুন করে কিছু বলছে না। নাবিক পরিবারকেও এ বিষয়ে বাড়তি কিছু না বলার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ২০১০ সালে এস আর শিপিংয়ের এমভি জাহাজ মণি নামে যে জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল সেটি জিম্মি করার ১০০ দিন পর উদ্ধার হয়। ওই জাহাজের ২৭ নাবিককেও তখন অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। মালিক পক্ষ স্বীকার না করলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ওই জাহাজটি ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল। হেলিকপ্টারে করেই সরাসরি জলদস্যুদের কাছে মুক্তিপণের ডলার পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও জিম্মিদের উদ্ধার করতে এবার এর চেয়ে বেশি ডলার খরচ করতে হতে পারে মালিক পক্ষকে। শুরুতেই জলদস্যুরা ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে- এমন খবর প্রচার হলেও মালিক পক্ষ এর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

গত ১২ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে সোমালিয়ার প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিংয়ের জাহাজটি দখলে নেয় একদল সশস্ত্র জলদস্যু। তারা জাহাজটিকে প্রথমে সোমালিয়ার গারাকাড উপকূলে নিয়ে যায়। পরে আরও প্রায় ৫০ মাইল দূরে গোদবজিরান উপকূলসংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তর করে। জাহাজটি বর্তমানে উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে।

জাতীয়

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

হাজার বছরের সংগ্রামমুখর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে।
স্বাধীন বাংলাদেশ এবার ৫৪ বছরে পা দিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর নতুন করে জেঁকে বসে সামরিক জান্তা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করে পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়, পূর্ব বাংলা থেকে ছিল তার হাজার মাইলের ভৌগলিক বিছিন্নতা। শুধু তাই নয়, ভাষা-সংস্কৃতির কোনো মিল ছিল না বাঙালিদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের। তা সত্ত্বেও ধর্মের উন্মাদনাকে পুঁজি করে পূর্ব বাংলাকে সঙ্গে যুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে।

বাঙালির ওপর চেপে বসা পাকিস্তান রাষ্ট্রের যাত্রার শুরুতেই পূর্ব বাংলার মানুষ সীমাহীন অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সব দিক থেকে বিভিন্নভাবে বৈষমের স্বীকার হয়। বঞ্চিত হতে থাকে ন্যায্য অধিকার থেকে। তবে এই পরিস্থিতিকে তখন থেকেই মেনে নেয়নি এ ভূখণ্ডের মানুষ। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলার ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদে নামে, আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। দ্রুতই এই আন্দোলন সংগ্রামগুলো একত্রিত হয়ে জাতীয় সংগ্রামে রূপ নিতে থাকে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে পরিণত হয় এবং ’৭১ -এ রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর বাঙালির এই আন্দোলন-সংগ্রামকে সংগঠিত ও নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তানের দুঃশাসন আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি শুরু থেকেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামে। দানবরূপী পাকিস্তান রাষ্ট্রের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে বাঙালি ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তোলে। মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সংগ্রামের পথ প্রশস্ত হয়। ’৫৪-তে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-তে শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে এসে উপনীত হয়। পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসন, অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির ধারাবাহিক আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

বাঙালির এ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে শেখ মুজিব বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ও বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স) দেওয়া বক্তব্যে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। তথন থেকেই বাংলার সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করে। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। এর আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান—‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। ….চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। ’ বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা প্রথমে ইপিআরের ওয়্যারলেস মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, নারী, পুরুষ, বাংলার সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গণহত্যা শুরু করে, বর্বরোচিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে তাদের দোসর জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে বাঙালি। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাথ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন এই মহান স্বাধীনতা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।

জাতীয়

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মতো মাথা গরম না করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বেশি কথা বললে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো।

বেশি কথা বললে খুঁজে খুঁজে বের করব, বিএনপির কে কে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করে।

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে গণহত্যা দিবস স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ দুপুরবেলা নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করেছেন। আমি জানতে চাই, মির্জা ফখরুল আপনি একাত্তরে কোথায় ছিলেন? একাত্তরে কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? কোন সেক্টরে আপনি যুদ্ধ করেছেন? ২৫ মার্চের গণহত্যা নিয়ে তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। তারা কারা? তারা পাকিস্তানের দালাল। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ভুয়া।

তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা কোনো দিনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। তারা দালাল। এ দালালদের জন্য ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও আমরা পাইনি। এ দালালদের জন্য আজও আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা পাইনি। পাকিস্তানের নাগরিকেরা বছরের পর বছর আমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে আছেন। কথা দিয়েও পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার জন্য একটিবারও দুঃখ প্রকাশ করেনি। পাকিস্তানের কোনো সরকার, সরকারি দল প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে এ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। সেই পাকিস্তানের যারা দালালি করে, তারা স্বাধীনতার শত্রু। বিএনপি পাকিস্তানের দালালি করে, তারা আমাদের শত্রু। এই শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, জেলে চার নেতাকে হত্যা করে। এই বিএনপি আমাদের জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করে, ৭ মার্চ নিষিদ্ধ করে, ১৬ ডিসেম্বরের নায়ককে নিষিদ্ধ করে, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার স্থপতিকে নিষিদ্ধ করে। কে করেছিলেন? জিয়াউর রহমান।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখছে তারা। ফখরুল সিঙ্গাপুর থেকে এসে দিবাস্বপ্নে বিভোর। বিদেশে আমাদের (আওয়ামী লীগ) বন্ধু আছে, প্রভু না। বিএনপির প্রভু আছে। যারা তাদের স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করে। আমাদের বন্ধুরা একাত্তরেও আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো বিদেশি বন্ধু হস্তক্ষেপ করেনি। বিএনপির প্রভুরা যখন এ নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করেছিল, তখন আমাদের বন্ধুরা আমাদের পক্ষে, নির্বাচনের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে সেদিন দাঁড়িয়েছিল।

তিনি বলেন, আজ বিএনপির লোকদের বাড়িঘরে গিয়ে বুঝতে হবে, রান্নাঘরে যা যা তারা ব্যবহার করে, এর মধ্যে ভারতীয় পণ্য কোনটি কোনটি। রান্নাঘরে যান, প্রত্যেকের ঘরে ভারতীয় পণ্য। শোয়ার ঘরে যান, প্রত্যেকের শাড়ি-কাপড় ভারতীয় পণ্য। এখন রিজভী রাজনীতি করার জন্য গা থেকে কাশ্মীরি শাল ফেলে আগুনে পুড়িয়েছেন। আরও কয়টি শাল রিজভীর ঘরে আছে, কে জানে! ভারতীয় পণ্য ছাড়া খাবার জোটে না।

বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, আপনিও রিজভীর মতো মাথা গরম করবেন না। বেশি কথা বললে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো। বেশি কথা বললে খুঁজে খুঁজে বের করব, বিএনপির লোকেরা কী কী ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির আন্দোলন ভুয়া, বিএনপির অভ্যুত্থান ভুয়া, বিএনপির ২০ দফা ভুয়া, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ভুয়া। ডাবল ভুয়া। এর চেয়ে ভুয়া আর কিছু নেই। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা নেই, বঙ্গবন্ধু নিয়ে কথা নেই, গাজা-ইসরায়েল নিয়ে কথা বলে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এস মান্নান কচির পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, জাতীয় সংসদের হুইপ সানজিদা খানম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।

জাতীয়

নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর থেকে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনাও ছিল। অবশেষে অভিভাবকদের দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে এ মাসের শুরুতে সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিল সরকার। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী তারা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মিডটার্ম ও চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার। মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলবে। এতে ছয়টি সেশন থাকবে। চার ঘণ্টা থাকবে ব্যবহারিক।

জানা গেছে, রোববার শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। সে অনুযায়ী, শ্রেণিভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বছরে দুটি। প্রতি বিষয়ে ৫ ঘণ্টার লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে আগের পদ্ধতিতে আর পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষাকে এখানে ‘মূল্যায়ন’ বলা হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, রোববার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় পরীক্ষা পদ্ধতি ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরেকটি সভা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মার্কিং (চিহ্নিত) করার নিয়ম থাকবে না। ‘রিপোর্ট ভালো’, ‘অর্জনের পথে’ এবং ‘প্রাথমিক পর্যায়’ এমন তিন ভাগে ফলাফল হবে। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে।

খসড়া অনুযায়ী, মিডটার্ম ও বার্ষিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে নতুন কারিকুলামের আলোকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে। আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা হবে নিজ স্কুলে।

চলতি বছরের জুন থেকে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন হবে স্কুলে। এর আগেই সব চূড়ান্ত হবে জানিয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেছেন, অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে খসড়া করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

চলতি মাসের শুরুতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চ‚ড়ান্ত করতে সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)। কমিটিতে সদস্য হিসাবে কাজ করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান। এছাড়া আরও বিভিন্ন দপ্তরের ৯ কর্মকর্তাকে সদস্য হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি সাধারণ বিষয় পড়তে হবে। এসএসসি পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ওপর। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতিবছর একটি করে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। গত বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে এ নিয়ম। এর আলোকে ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা হবে।