জাতীয়

দেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ সৃষ্টি, পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানোর সুযোগ রেখে ইন্টার্নশিপ নীতিমালা, ২০২৩ এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।

ইন্টার্নদের নির্দিষ্ট হারে ভাতা ও ছুটির সুযোগ রেখে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা অন্য কোনো প্রকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপ প্রদান করতে পারবে।

ইন্টার্নশিপ প্রদানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইন্টার্নশিপ প্রদানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা; পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানো এবং সরকারি দপ্তরের কাজের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত করতে উৎসাহ প্রদান করা।

নীতিমালার কার্যপরিধি

কার্যপরিধি হিসেবে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বাংলাদেশের নাগরিক এই ইন্টার্নশিপের আওতায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত ইন্টার্নশিপ এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে না।

সামরিক বা বেসামরিক বা আধাসামরিক সকল প্রকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার কর্তৃক ঘোষিত কী পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কর্মে ইন্টার্নশিপ প্রদান করা যাবে না।

আবেদনকারীর যোগ্যতা

নীতিমালা অনুসারে, ইন্টার্নশিপ প্রার্থীর আবেদন করার জন্য আগ্রহীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; প্রার্থীকে কমপক্ষে স্নাতক/সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে (অবতীর্ণ প্রার্থীসহ); স্নাতক/স্নাতকোত্তর/সমমানের ডিগ্রি অর্জনের দুই বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং একজন প্রার্থী একবার সরকারি অফিসে ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন।

ইন্টার্ন বাছাইয়ের ভিত্তি ও প্রক্রিয়া

নীতিমালায় বলা হয়েছ, ইন্টার্ন বাছাই হবে মেধার ভিত্তিতে; বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে (সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত); এবং আবেদনকারীর ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্র বাছাইয়ের প্রেক্ষাপট এবং এক্ষেত্রে তার সম্ভাব্য অবদানের বর্ণনার ভিত্তিতে।

সুষম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইন্টার্ন বাছাই করতে হবে। এজন্য নীতিমালার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তার ও তার অধীন দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের অধিক্ষেত্র বিবেচনায় প্রত্যেক অর্থ বছরের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগের সংখ্যা নির্ধারণ করবে। দপ্তর, সংস্থা, বিদ্যমান সুযোগের বিপরীতে ইন্টার্নশিপ প্রদানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন বাছাই করে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বরাবর মনোনয়নের অনুমতি গ্রহণ করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে ইন্টার্নশিপের স্থান, সংখ্যা, মেয়াদকাল, বিশেষ দক্ষতা, ভাতা (যদি থাকে), বাছাই প্রক্রিয়া প্রকৃতি বিষয় উল্লেখ করতে হবে।

ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ৩-৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবে। বাছাই কমিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রয়োজনের বিষয় বিবেচনা করে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ইন্টার্ন বাছাই করবে। নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর আবেদনকারীদের এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।

ইন্টার্নশিপের মেয়াদকাল

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইন্টার্নশিপের মেয়াদকাল সর্বনিম্ন তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারবে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।

ইন্টার্নশিপের ব্যয় নির্বাহ

ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে আলাদা অর্থনৈতিক কোড সৃজন করবে। ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ অর্থ বিভাগের অনুমোদন বা বাজেট বরাদ্দ থাকা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কোড থেকে ইন্টার্নশিপের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করবে।

ইন্টার্নশিপের ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা

নীতিমালা অনুসারে, ইন্টার্ন প্রতিমাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ ভাতা প্রাপ্য হবেন। ভাতা ছাড়া ইন্টার্ন অন্য কোনো ভাতা বা সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। ভাতা প্রাপ্তির প্রাক্কালে প্রতিমাসে ইন্টার্নকে তার সন্তোষজনক কর্মকালের বিষয়ে সুপারভাইজারের নিকট থেকে প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে হবে।

ইন্টার্নশিপ চলাকালীন ইন্টার্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কর্মে নিযুক্ত রয়েছে মর্মে কোনোরূপ প্রত্যয়ন প্রাপ্য হবেন না; সফলভাবে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ প্রাপ্য হবেন।

ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করা কোনোভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী, অস্থায়ী বা অন্য কোনো প্রকার চাকরির ক্ষেত্রে প্রাধিকার বা অগ্রাধিকার হিসাবে গণ্য হবে না।

ইন্টার্নশিপে যোগদানের শর্ত

ইন্টার্নশিপে যোগদানের সময় অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তার মৌলিক যোগ্যতা ও অন্যান্য গুণাবলির বর্ণনা সংবলিত প্রত্যয়ন; স্নাতক/স্নাতকোত্তর/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ, অথবা উক্তরূপ পরীক্ষাসমূহে অবতীর্ণ হওয়ার প্রত্যয়ন (যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক) পত্রের কপি; জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং অন্য কোনো কর্মে নিয়োজিত থাকলে প্রয়োজনীয় অনাপত্তি সনদ দিতে হবে।

কর্মে যোগদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন মনে করলে ইন্টার্নের পুলিশ ভেরিফিকেশন করাতে পারবে।

ইন্টার্নশিপের অব্যাহতি বা অবসান

কাজের মান সন্তোষজনক না হলে; আচরণ সরকারি সেবা প্রদানের প্রচলিত রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে; রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে; দেশে প্রচলিত আইনের দ্বারা নির্ধারিত কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলে; পূর্বানুমতি ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকলে; কর্তৃপক্ষের কোনো আইনসংগত দাপ্তরিক আদেশ অমান্য করলে একজন ইন্টার্নের ইন্টার্নশিপ বাতিল বা অবসান হতে পারে।

একজন ইন্টার্ন নিজ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে সুপারভাইজারের মাধ্যমে ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বরাবর ইন্টার্নশিপ থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারবে।

ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ইন্টার্নশিপ চলাকালীন যে-কোনো সময় ওপরে বর্ণিত কারণে অথবা অন্য যে-কোনো যথাযথ কারণ উল্লেখপূর্বক অথবা কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই ইন্টার্নশিপ বাতিলের অধিকার সংরক্ষণ করবে।

ইন্টার্নের দায়িত্ব, কার্যাবলি ও দায়বদ্ধতা

নীতিমালা অনুযায়ী, ইন্টার্নের দায়িত্ব, কার্যাবলি ও দায়বদ্ধতা হবে- সুপারভাইজার কর্তৃক অর্পিত সব দাপ্তরিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা; ইন্টার্ন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট সব আইন, বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা ইত্যাদি মেনে চলা; সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার স্বার্থে এবং প্রয়োজনীয় অফিস সরঞ্জামাদি সুরক্ষার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও কার্যাবলি

ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রদান, সামগ্রিক ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম তদারকি ও মূল্যায়ন করবে।

ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কার্যাবলি

নীতিমালায় ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কার্যাবলি হিসেবে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ইন্টার্নশিপের চাহিদা বা যৌক্তিকতা নিরূপণ; ইন্টার্নের কর্মের সুনির্দিষ্ট শর্তাবলি নির্ধারণ; ইন্টার্নশিপের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ, বাজেট নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ ও বাছাই কমিটি গঠন; বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে ইন্টার্ন মনোনয়ন করবে।

সরকারি বেতনস্কেলের নবম গ্রেডের নিচে নয় এবং সরকারি কর্মে ন্যূনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এমন একজন কর্মকর্তাকে সুপারভাইজার নিয়োগ করবে কর্তৃপক্ষ।

দাপ্তরিক ও প্রাসঙ্গিক পেশাভিত্তিক কাজে প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করে ইন্টার্নদের নিয়োজিত করা, যাতে তারা সরকারি পেশাগত জ্ঞান, কাজের ধরন ও কর্মদক্ষতা অর্জন করতে পারে। ইন্টার্নদের কাজের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট নির্ধারণ করা; যেমন: কাজের জায়গা, প্রয়োজনীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, বিভিন্ন উপকরণ ইত্যাদি।

ইন্টার্নদের যথোপযুক্ত কর্ম পরিবেশ ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা। এসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণের লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়সমূহ ন্যূনতম যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট ‘অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ কমিটি’ গঠন করবে।

সফলভাবে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর ইন্টার্নকে সনদ প্রদান; ইন্টার্নশিপ শেষে ইন্টার্ন কর্তৃপক্ষ সনদ প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে অথবা এই বিষয়ে অন্য কোনোরূপ জটিলতার উদ্ভব হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আপিল কর্তৃপক্ষ হিসাবে বিবেচিত হবে।

বিশেষ পরিস্থিতিতে (অসুস্থতা, ব্যক্তিগত সমস্যা ইত্যাদি) ইন্টার্নশিপ শেষ করতে না পারলে প্রমাণক সাপেক্ষে ইন্টার্নশিপ কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ দুই মাস পর্যন্ত ছুটি মঞ্জুর করবে। দুই মাসের অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হলে ইন্টার্নের ইন্টার্নশিপে যোগদানের সুযোগ থাকবে না। ছুটিকালীন ভাতা দাবি করা যাবে না।

সুপারভাইজারের দায়িত্ব ও কার্যাবলি

নীতিমালা অনুযায়ী, সুপারভাইজার দাপ্তরিক কার্যক্রমের সঙ্গে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামকে সমন্বয় করে ইন্টার্নকে বিভিন্ন দায়িত্ব/কার্যাবলি দেবেন। পাশাপাশি ইন্টার্নদের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং কাজের মূল্যায়ন করা; আচরণ ও কাজের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সময়ে সময়ে ইন্টার্নের সঙ্গে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন।

বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে নীতিমালার প্রযোজ্যতা

এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব-স্ব মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়সমূহের তত্ত্বাবধানে যথোপযুক্ত ইন্টার্নশিপ নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সরকার এই নীতিমালার মাধ্যমে বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও ইন্টার্নশিপ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে এবং এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।

বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী ইন্টার্নদের ভাতা, ইন্টার্নশিপের মেয়াদ ও অন্যান্য বিষয়াদি নির্ধারণ করতে পারবে।

এফবিসিসিআই ও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন ইন্টার্নশিপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত পরিবীক্ষণ ও নির্দেশনা দেবে।

নীতিমালার ব্যবস্থাপনা

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব মন্ত্রণালয় এই নীতিমালার বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করবে। ‘ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ’ তার কার্যালয়ের ইন্টার্ন মনোনয়ন ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

ইন্টার্নশিপ বাস্তবায়নের সুবিধার্থে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি ব্যবস্থাপনা-পদ্ধতি সৃজন করা হবে।

জাতীয়

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭ শতাংশ মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর বৈধ হয়েছে ৭৩ শতাংশ মনোনয়নপত্র।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে মাঠের প্রতিবেদন একীভূত করে এমন তথ্য জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সংস্থাটির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল দুই হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছেন ৭৩১টি, যা মোট দাখিল করা মনোনয়নপত্রের ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ২৭ শতাংশ। আর বৈধ হয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র, যা দাখিল করা মনোনয়নপত্রের ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ বা ৭৩ শতাংশ।

২৯টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে এসব মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছিল। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হলো ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুছ সালাম জানান,  গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে) নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র এক সেট ও ছায়ালিপি ছয় সেটসহ) আপিল দায়ের করতে পারবেন।

এজন্য ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ করা হয়েছে নির্বাচন ভবনে। ১০ কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে।

তিনি আরও জানান, ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ করে আপিল শুনানি হবে ক্রমানুসারে।

আপিল আবেদনগুলো শুনানি শেষে ফল মনিটরে প্রদর্শন, রায়ের পিডিএফ কপি ও আপিলের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের ই-মেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আপিলের রায়ের অনুলিপি নিম্নোক্ত শিডিউল মোতাবেক নির্বাচন ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

অন্যদিকে রায়ের অনুলিপি আবেদনের ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে (উল্লেখ্য নামঞ্জুর আপিলের রায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে)।

জাতীয়

ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীর উত্তম।

তিনি বিএনপির কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ করেছেন।

আর সেই সমাবেশে অস্ত্র হাতে তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল জলিল মিয়াজীকে।

এসময় তিনি কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ হয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।

এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ১১(ঘ) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের অনুমোদন ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি অস্ত্র বহন করতে পারবেন না।

সমাবেশে শাহজাহান ওমরের বাম পাশে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন কবির হাওলাদার চেয়ারে বসা ছিলেন।

অপরদিকে ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল বসার বাদশা ও শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন।

শাহজাহান ওমর সমাবেশে বলেন, কাঁঠালিয়া আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। এখানে তরুণ লীগ, কিবরিয়া লীগ, বুড়া লীগ ও বাচ্চা লীগ থাকতে পারবে না। এখানে থাকবে শুধু শেখ হাসিনা গ্রুপ।

তিনি আরও বলেন, আমি এবং বিএনপির দলবলসহ আপনাদের মেহমান। আমাদের বরণ করে নেবেন। আমরা শিক্ষিত লোক, আমাদের সম্মান করলে আপনাদেরও সম্মান করব।

সমাবেশ শেষে তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

আগামী ১১ ডিসেম্বরের পর আবার দেখা হবে বলে জানান।

এসময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুলের তোড়া নিয়ে এলেও শাহজাহান ওমরকে ফুল দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ১১(ঘ) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের অনুমোদন ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি অস্ত্র বহন করতে পারবেন না।

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় শাহজাহান ওমরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসন্ধান কমিটি।

সোমবার বিকেলে ঝালকাঠি-২ এর নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও প্রধান সিনিয়র সহকারী জজ পল্লবেশ কুমার কুন্ড তাকে শোকজ করেন।

জাতীয়

আসন্ন নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। কারামুক্তির পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর পান্থপথের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘ওরা (বিএনপি) যাচ্ছে (নির্বাচনে) না, আমি কী করব? স্বতন্ত্রে যাব কেন? স্বতন্ত্রে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা। যেহেতু বিএনপি করছে (নির্বাচন) না। আর যেখানে আমার অপশন আছে, সেখানে স্বতন্ত্রে যাব কেন, নাচতে নামছি যখন, ঘোমটা দিলে হবে নাকি। স্বতন্ত্র বলতে কোনো জিনিস আছে নাকি? স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে অংশ নেব কেন, যখন বেটার অপশন আছে।’

এ সময় বিএনপি থেকে পদত্যাগের কথাও জানান তিনি। যদিও তার এক ঘণ্টা পর তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখা হতেই পারে।’ জয়ের নিশ্চয়তা পেয়ে নির্বাচন করছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দাখিল করতে বলেছেন, করেছি। নৌকার প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছি, আর কী চান।’

বিএনপি ছাড়ার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে চলা সম্ভব না হওয়ায় দলটির রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছি। জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি আরও উন্নত। তাই নৌকার হয়ে ভোট করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আসা, আমি তো মনে করি এটা প্রমোশন। বিএনপির ২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়া ভুল ছিল। ২০১৮-তে নির্বাচনে যাওয়া ভুল ছিল। এবারও নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল। নির্বাচনে গিয়ে দেখতাম কারচুপি হয় কি না?’

শাহজাহান ওমর বলেন, ‘আসলে বিএনপিতে কেউ কোনো কথা বলতে চায় না। শুধু তারেক রহমান বিষয় না। সব মিলিয়ে আমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। বিএনপি থেকে অবসর নেওয়ার বিষয়ে ২০২২-এ আমি চিঠি দিয়েছি। আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি।’

গত ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তাকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার বিকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান শাহজাহান ওমর। পরদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। ঢাকা থেকে অনলাইনে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার দাবি, স্বেচ্ছায় বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে গেছেন।

এর আগে শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া বিএনপি সরকারের আমলে আইন প্রতিমন্ত্রী ও ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয়

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ওসির পর এবার সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) বদলির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জাতীয়

শুরু হলো গৌরবদীপ্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই মাসের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

এই বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে রচিত হয় সবচেয়ে বড় গৌরবের অধ্যায়।ডিসেম্বরের বেশ কিছু ঘটনা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়কে দ্রুত ত্বরান্বিত করে। বাঙালি জাতির গৌরবের এই বিজয়ের ৫৩ বছর ইতোমধ্যে পার করছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।

এই জাতি হাজার বছরের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসে। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে উঠা আন্দোলনই একপর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।

স্বাধীনতার জন্য ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এই আন্দোলন-সংগ্রাম ১৯৭১ সালের মার্চে এসে স্ফুলিঙ্গয়ে রূপ নেয়। সাত মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে জাতিকে দিক-নির্দেশনা দেন। বাঙালির এই স্বাধীনতার আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে থাকে পাকিস্তানি জান্তারা।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বর্বরোচিতভাবে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। শুরু হয় বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি নিধন অভিযান।

তবে পাকিস্তানের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষ। হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চলে বাঙালির মরণপণ যুদ্ধ। বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে বাঙালি বিজয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকে। ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়।

একপর্যায়ে বাঙালির বীরত্বের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। এই ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের পরিণতি বিজয়ে দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই মাসের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তির অবস্থান প্রকাশ্যে চলে আসে। যদিও আগে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়।

কিন্তু ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ জাহাজ পাঠায়। সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এছাড়া আগে থেকেই ভারত সার্বিকভাবে বাংলাদেশে পক্ষে দাঁড়ায় এবং সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় মিত্রবাহিনী অংশ নেয়।

শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয় ভারত। তবে পাকিস্তানের পক্ষের ছিল চীন। বাংলাদেশের বিজয়কে ঠেকাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব আনা হলে তাতে ভেটো দেয় রাশিয়া যা বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত আরও জোরালো হয়ে উঠে।

মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ মরণপণ যুদ্ধের কাছে টিকতে না পেরে এবং বিশ্ব জনমতের চাপে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স) মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর (ভারতীয় বাহিনী) যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। রক্তক্ষয়ী এই মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

জাতীয়

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তফশিল অনুযায়ী ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ২ হাজার ৭৪১ জন প্রার্থী। এই নির্বাচনে মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভোটের ৫২ দিন আগে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।

তফশিল অনুযায়ী, আজই (৩০ নভেম্বর) ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন।

রিটার্নিং অফিসে উপস্থিত হয়ে ২ হাজার ৭২০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর ২১ জন প্রার্থী অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যা ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি জানিয়েছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৩৯ জন প্রার্থী অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য ৩৬৯ জন নিবন্ধন করলেও শেষ দিনে (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২১ জন।

জাতীয়

জমি রেজিস্ট্রির পর দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা হবে দলিল। সেবাপ্রার্থী চাইলে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন। প্রথমবারের মতো সম্প্রতি সেবাধর্মী এমন বিশেষ উদ্যোগ কার্যকর করেছে ঢাকা জেলাধীন সব সাবরেজিস্ট্রি অফিস। অপরদিকে জমি বা সম্পত্তির ক্রেতার মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে অথবা মেসেজ পাঠিয়ে দলিল সরবরাহ করার তারিখ জানিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে এ কার্যক্রম আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে শুরু করা হবে। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম।

এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রার বলেন, দলিলের নকল ও মূল দলিল যথাসময়ে দলিলগ্রহীতার হাতে পৌঁছে দিতে আমরা এখন জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর এ সংক্রান্ত রসিদে ফোন নম্বর সংবলিত একটি সিল মেরে দিচ্ছি। যেখানে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নম্বর লেখা থাকছে। দলিলটি কবে নাগাদ সরবরাহ করা হবে, সম্পত্তির ক্রেতা চাইলে সময়ে সময়ে ফোন করে সেটি জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া ভবিষ্যতে আমরা জমির ক্রেতা বা গ্রহীতার ফোন নম্বরও সংরক্ষণ করব। এর ফলে দলিল প্রস্তুত হওয়ার পর প্রথমে মেসেজ পাঠিয়ে দলিল সরবরাহ করার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সরাসরি কল করে জানানো হবে। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ছাড়াও জেলার আওতাধীন ২৩টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে কোন কর্মচারী এই কল রিসিভ করবেন, তার নাম, পদবি ও ফোন নম্বরসহ একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তিনি জানান, আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে এ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দলিল রেজিস্ট্রির ফরমেটে যেখানে গ্রহীতা বা ক্রেতার ভোটার আইডি লেখা হয়, এর নিচের লাইনে মোবাইল নম্বরও যুক্ত করা হবে। তবে যারা ব্যক্তিগত প্রাইভেসির কারণে ফোন নম্বর দিতে চাইবেন না, তাদেরটা যুক্ত করা হবে না। সেখানে লেখা থাকবে ক্রেতা দিতে আগ্রহী নন।

সূত্র জানায়, জমি রেজিস্ট্রেশনের ১১৫ বছরের ইতিহাসে এমন সিদ্ধান্ত এর আগে কেউ নেয়নি। বিশেষ করে সবার হাতে মোবাইল ফোনের যুগে এমন উদ্যোগ অনেক আগে নেওয়া সম্ভব ছিল। সময়মতো এটি করা গেলে দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে মানুষের নানামুখী ভোগান্তি অনেকখানি কমে আসত। ১৯০৮ সালে দলিল রেজিস্ট্রি প্রথা শুরু হয়। কিন্তু দলিল রেজিস্ট্রিসহ এ সেক্টরের বিভিন্ন কাজে শুধু জটিলতা সৃষ্টি করে একশ্রেণির অসাধু চক্র সব সময় নানাভাবে ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। যে কারণে এখনো সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোয় জনগণের প্রাপ্য সেবা পাওয়া নিয়ে নানামুখী অভিযোগ প্রবল। যদিও এ সেক্টরে বেশ কিছুসংখ্যক সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছেন।

ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম জানান, জনগণের ভোগান্তি দূর করতে তিনি ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স-জুড়ে নানামুখী সেবা চালু করেছেন। সক্রিয় হেল্প ডেস্ক ছাড়াও সেবপ্রার্থীদের বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে গণশুনানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার তিনি এটি করে যাচ্ছেন। তবে এ কাজটি তাকে প্রতিদিনই করতে হচ্ছে। স্টাফদের তিনি বলে দিয়েছেন, যারা যে সমস্যা নিয়ে আসবেন, তাদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর এন্ট্রি করে রাখতে। কোনো কারণে তিনি ব্যস্ত থাকলে তাদেরকে ফোন করে পরবর্তী সময়ে ডেকে আনা হচ্ছে। এজন্য একটি পৃথক রেজিস্টার মেনটেইন করা হচ্ছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে একজন স্টাফকে পাবলিক রিলেশন বা গণসংযোগ রক্ষা করার বিশেষ দায়িত্ব সোমবার অফিশিয়ালি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে তিনি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সারপ্রাইজ ভিজিট করছেন। ঢাকা জেলার আওতাধীন সাবরেজিস্ট্রি অফিস পরিদর্শন করে সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি সেটি তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।

তিনি জানান, পুরোনো দলিল ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট ভবনটির উপরের দিকে আরও একতলা বর্ধিত করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া তিনি পুরো বালাম বহি স্ক্যান করে ডিজিটাল অটোমেশনে নিয়ে যেতে চান। এজন্য পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।

অহিদুল ইসলাম বলেন, এ কথা সত্য যে, এখনো আমরা মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছি না। এছাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিন থেকে একধরনের নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ধারণা ভেঙে দিতে আমরা কাজ করছি। হয়তো একদিনে কিংবা এভাবে সম্ভব হবে না, তবে শুরুটা করে যেতে চাই। এখন এ সার্ভিসে অনেক উচ্চশিক্ষিত, অপেক্ষাকৃত প্রতিশ্রুতিশীল এবং পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অধিকতর মেধাবীরা যুক্ত হচ্ছেন। ফলে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসে আমাদের সময়কার থেকে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করার মতো অনেক সহকর্মী তৈরি হচ্ছে।

জাতীয়

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান সোমবার খুলনায় বলেছেন, আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা আছে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার। আমাদের ওপর পশ্চিমা দেশের কোনো চাপ মোটেও নেই। যেটা আছে, ওটা রাজনৈতিক সমস্যা। আমাদের সমস্যা নয়। আমাদের প্রতি কোনো চাপ নেই। দেশের প্রতি চাপ আছে কিনা আমি জানি না। সেটা সরকার বুঝবে, সেটা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বুঝবেন। অন্যদিকে, বগুড়ায় নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, সারা দেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই। সব রকম পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা চাই নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হোক। আমরা এখনো আশাবাদী সবাই নির্বাচনে আসবে।

আজ সোমবার সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান আরও বলেন, সারা দেশের মানুষ, রাজনৈতিক দলসহ সবার চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। শপথ নেওয়ার পর থেকে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া।

আহসান হাবিব আরও বলেন, আমরা একবারও বলিনি তফশিল পেছানোর কথা। সব দল অংশগ্রহণ করুক এটা আমাদের মনেপ্রাণে ইচ্ছা। তফশিল পেছানোর বিষয়ে কোনো দল আবেদন করলে আমরা আন্তরিকভাবে কমিশন মিটিংয়ে বিবেচনা করার চেষ্টা করব। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচিত সরকারকে শপথ নেওয়াতে হবে। ফলে আমাদের টাইম ফ্রেমের মধ্যে যদি সম্ভব হয় অবশ্যই করব।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে কমিশনার আরও বলেন, মনে রাখতে হবে আপনারা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা সবাই যেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিরপেক্ষ হয়ে পালন করেন। কখনো দলীয় মনোভাব পোষণ করা যাবে না বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কখনো অতিউৎসাহী হয়ে এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নীতিমালা অনুসরণ করে খবর সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা দেশব্যাপী কর্মরত থাকেন। তাদের কাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করবেন।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, রেঞ্জ ডিআইজি মো. মঈনুল হক, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।

বগুড়ায় রাশেদা সুলতানা : সোমবার দুপুরে বগুড়ার বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে রাজশাহী বিভাগের চার জেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, আমরা চাই যতগুলো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আছে তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আমরা বারবার চেষ্টা করছি যারা নির্বাচনে আসতে চাইছে না তাদের নির্বাচনে আনতে। আমরা এখনো আশাবাদী তারা নির্বাচনে আসবেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক সংবিধান মেনে সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩০টি দল অংশগ্রহণ করছে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিভাগের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আল মারুফ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন।

এছাড়া বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তিন জন প্রতিমন্ত্রীসহ একাদশ জাতীয় সংসদের ৬৯ জন সদস্য বাদ পড়েছেন। আওয়ামী লীগের বাদ পড়া আসন এবং গতবার জোট শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলো মিলিয়ে মোট ১০৪টি আসনে নতুন মুখ এসেছে। মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন ২২ নারী। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের  কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ৩৪ জন।