জাতীয়

বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধন করে সরকারি চাকরিজীবীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে এ ধরনের একটি খবর ছড়িয়েছে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে।

এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ১২৩ পয়েন্ট বেড়েছে। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ২৩১ কোটি টাকা।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকদিন পর বাজারে বড় উত্থান। তবে এটি কতদিন স্থায়ী হয়, সেটি বিবেচ্য বিষয়।

প্রসঙ্গত সরকারি কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুসারে বর্তমানে তারা ফটকা কারবারে বিনিয়োগ করতে পারেন না। তবে এই ফটকা কারবার বলতে শেয়ারবাজারকে বুঝানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক আইজিপি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) বেনজীর আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। সরকারি আরও অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার এখানে বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে বিতর্ক এড়াতে বিধিমালা সংশোধন করে তাদেরকে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩৯৬টি কোম্পানির ২৭ কোটি ৪৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৭৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৩৬৫টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ১৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ১২৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৯৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২০৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৬ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

শীর্ষ দশ কোম্পানি:

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে যেসব কোম্পানির শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো- ওরিয়ন ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, সী পার্ল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, সাইফ পাওয়ার, এশিয়াটিক ল্যাব, তৌফিকা ফুড লাভেলো, বেস্ট হোল্ডিং এবং মালেক স্পিনিং।

ডিএসইতে বৃহস্পতিবার যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হলো- ফনিক্স ফাইন্যান্স, এস আলম কোল্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আফতাব অটো, সিলকো ফার্মা, খান ব্রাদার্স পিপি, দেশবন্ধু পলিমার, ইস্কয়ার নিট কম্পোজিট, আমান কটন এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন।

অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নিউ লাইন, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, বিআইএফসি, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, হাক্কানি পাল্প, ওয়াটা কেমিক্যাল, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, উসমানিয়া গ্লাস এবং আলহাজ্ব টেক্সটাইল।

জাতীয়

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে এনবিআর থেকে ‘অবমুক্ত’ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (বোর্ড প্রশাসন) সুক্তি রানী সরকার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে মাধ্যমে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে ‘অবমুক্ত’ করা হয়।

আদেশে বলা হয়, বগুড়া কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-১–এ তার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার এনবিআর এনবিআর থেকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বদলিজনিত কারণে বিদায় করা হলো। এখন অনতি বিলম্বে ফয়সালকে বগুড়ায় যোগদান করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঢাকার আদালতের কাছে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিবরণ তুলে ধরেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এ ঘটনার পর তিনি আর এনবিআরে অফিস করেননি বলে জানা গেছে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজী ফয়সাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠা প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

ওই আদেশ অনুযায়ী, মাহমুদ ফয়সালকে ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা ৮৭টি হিসাবও অবরুদ্ধ থাকবে। এই জব্দের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় এসব সম্পদ হস্তান্তর বা বিনিময় করা যাবে না।

জাতীয়

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রাম ও সিলেটে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রংপুর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ভাঙনে শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। নেত্রকোনা, বান্দরবান, জামালপুরসহ কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত। রাজশাহীর বাঘায় তলিয়ে গেছে দেড় শতাধিক চাষির বাদাম খেত। কক্সবাজারে পাহাড় ধসে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে মেরিন ড্রাইভে। রাঙামাটিতে বন্যার পানিতে ভেসে নিখোঁজ রয়েছে স্কুলছাত্র। বগুড়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম, রৌমারী ও চিলমারী : ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির ফলে গত তিনদিন ধরে ঘরের ভেতর মাচা ও চৌকি উঁচু করে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ। চৌকিতে রান্না-বান্না, চৌকিতেই রাত কাটছে তাদের। বাড়ির চারপাশে থৈথৈ পানিতে অসহায় দিন কাটছে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী মানুষের। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা গ্রামের আসমত ও নুরবানু জানান, গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। ছেলে মেয়েকে উঁচু জায়গায় রেখে গরু-ছাগল পাহারা দিচ্ছি। এখনো কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি। যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে ১৫শ’ মানুষের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, বন্যাকবলিত কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, উলিপুর ও নাগেশ্বরীতে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি ইতিমধ্যে দুর্গত এলাকায় এক হাজার ২শত পরিবারকে ১০ কেজি করে চালসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিকে তলিয়ে গেছে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তহাট। চিলমারীতে তলিয়ে গেছে হাজারও একর জমির পাটসহ বিভিন্ন ফসল। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে ৩৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

রংপুর : গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও নদীর তীরবর্তী নিুাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে তিস্তার তীব্র স্রোতে নদী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার ২০টি ঘরবাড়ি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে প্রতিদিন তিস্তা নদীতে ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার পানি বাড়ে, আবার কমে যায়। এতে করে নিুাঞ্চলের মানুষরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতির মুখে পড়েছে। ডুবে গেছে বাদাম, পাটসহ শাক-সবজির ফসলি জমি।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : শাহজাদপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাড়ামহোনপুর, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর, পাকুরতলা, গুচ্ছগ্রাম, সৈয়দপুর, কৈজুরি ইউনিয়নের হাট পাঁচিল, শরিফমোড়, মোনাকষা গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাট পাঁচিল গ্রামের কোবাদ মাস্টারের দোতলা পাকা ভবনসহ এসব গ্রামের অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর, ফসলি জমি ও অসংখ্য গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নেত্রকোনা: কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও মদন ও সদর উপজেলায় অন্তত শতাধিক গ্রামের নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের অন্তত ৬৮টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিচু অঞ্চলের গ্রামের রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ভুক্তভোগীরা। এদিকে, অতিরিক্ত ঢেউয়ে হুমকিতে রয়েছে নেত্রকোনা-কলমাকান্দা সড়কের কিছু অংশ। মোহনগঞ্জে ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চত্বরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। গাগলাজুরের ভাটি বাংলা হাই স্কুলেও বন্যার পানি ঢুকেছে। কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিুাঞ্চল আবারও নতুন করে প্লাবিত হলেও মঙ্গলবার রাত থেকে ধীরগতিতে পানি নেমে যাচ্ছে।

বাঘা (রাজশাহী) : বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় ৩ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে দেড় শতাধিক চাষির রোপণ করা বাদাম। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে পদ্মার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাদাম রক্ষা করার চেষ্টা করছেন মানিকের চরে চাষিরা। মানিকের চরে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। তারা পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাদের মতো আরও ১৪টি চরের একই অবস্থা। তাদের আয়ের উৎস কৃষি কাজ। বর্তমানে চারদিকে পানি।
বগুড়া : সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বিকালে মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনা নদীতে পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টা ৫৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় কৃষকরা অপরিপক্ব পাট কেটে নিচ্ছেন। পাশাপাশি কয়েকটি এলাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব এলাকায় ভাঙনরোধে দ্রুত কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে।

জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ (সিলেট) : জকিগঞ্জের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে ডাইক ভেঙে এক মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে অবনতি হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ছবড়িয়া, রারাই, বাখরশাল, পৌর এলাকার নরসিংহপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ডাইক ভেঙে ও ডাইক উপচে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে প্রায় ৮৫টি গ্রামের লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে গোলাপগঞ্জে বন্যায় আবারও অবনতি ঘটেছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও বাড়িঘর। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় লোকজন ছুটছেন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে অঘোষিত ছুটি।

মৌলভীবাজার, কুলাউড়া ও বড়লেখা : মৌলভীবাজারে নদী ও হাওড়ের পানি বাড়ছে। মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে। জেলা শহর তীরবর্তী মনুনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর বাঁধ তীরবর্তী শতাধিক দোকান চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে মনুনদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বাহিরের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। ব্যবসায়ীরা বুধবার সকাল থেকে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, জেলায় ৫টি উপজেলাই বন্যাকবলিত। পরপর ৩ বার বন্যা হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৩২৭ জন। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ৮ হাজার ৭০৮ জন মানুষ উঠেছেন। ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যা বাড়ছে। বড়লেখায় উপজেলায় খোলেনি ৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলায় মাধ্যমিক স্তরের ষাণ¥াষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে গত সোমবার রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে পানি বেড়েছে জেলার তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলায়। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার বিকাল ৬টার দিকে সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমেছে ছাতক ও দিরাই পয়েন্টেও। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ মিলিমিটার।

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : দেওয়ানগঞ্জের নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ী সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক বুধবার দুপুরে ধসে যায়। রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে চুকাইবাড়ী গুচ্ছগ্রামের ১৩৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

কক্সবাজার : পাহাড় চাপায় মারা গেছেন দুই রোহিঙ্গা। এ সময় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এ সময় ডজনাধিক ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা ও পানিতে শতাধিক শেল্টার ক্ষতির মুখে পড়েছে। বুধবার ভোর রাতে উখিয়ার ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে বলে ক্যাম্প সূত্রের বরাতে জানিয়েছেন উখিয়া থানায় ওসি মো. শামীম হোসেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- উখিয়ার ক্যাম্প-১১ ব্লক ১ এফের দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন ও টেকনাফের লেদার মো. আলমের ছেলে মো. সিফাত। একইভাবে, একাধিক স্পটে পাহাড় ধসের মাটির সড়কের ওপরে আসায় কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে বেশ কয়েকঘণ্টা যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। পরে সেনাবাহিনী বুলডোজার দিয়ে মাটি সরিয়ে বেলা ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। মেরুং ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। এছাড়া কবাখালি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের পানি এখনো নামেনি। এছাড়া দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়িসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে লংগদু উপজেলার বাসিন্দারা। খাগড়াছড়ি-লংগদু সড়কের একাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে।

রাঙামাটি : বাঘাইছড়িতে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে কৃতিত্ব চাকমা নামে অস্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ হয়েছে। সে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের মধ্যম বাঘাইছড়ি গ্রামের মিলটন চাকমার ছেলে। কৃতিত্ব মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে পানিতে তলিয়ে নিখোঁজ হলেও গত ১৮ ঘণ্টায় তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) : নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্র“ ও বহুল আলোচিত কোনারপাড়াসহ ৫ গ্রাম। এছাড়া পাহাড় ধসের ঘটনাও রয়েছে অনেক এলাকায়। ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েছে এসব এলাকায়। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বৃষ্টিতে তার ইউনিয়নের ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা দেওয়ালসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

শেরপুর ও নালিতাবাড়ী : মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় শেরপুরের মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর পানি এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তবে উজানের পানি নেমে গিয়ে ভাটি এলাকার নিুাঞ্চলের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। নালিতাবাড়ী-নকলা মহাসড়কের বাইটকামারি সেতু সংলগ্ন সড়কের একাংশ ধসে গেছে।

সাঘাটা (গাইবান্ধা) : সাঘাটা উপজেলার ভরতখালীতে সড়ক ভেঙে গেছে। এতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙা অংশ দিয়েও তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। ওই এলাকার নদী তীরবর্তী নিুাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে গেছে। পানি প্রবেশ করায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, আবাদি জমির ফসল।

জাতীয়

সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সমুদ্রসীমা থেকে প্রতিটি সম্পদ আহরণ করতে চাই।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং মঙ্গলবার (০২ জুলাই) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

কৃষিতে বাংলাদেশ ভালো করছে এবং দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভালো গবেষক আছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এডিবির কাছে কৃষি গবেষণাও সহায়তা চান।

কৃষিপণ্য উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, আমরা কৃষিকে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা শিল্পায়নের পক্ষে, তবে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে।

বাংলাদেশের জনগণের মাথা পিছু আয় এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে আমাদের নিজস্ব পণ্যের বড় বাজার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি পণ্যের বাজারে বাংলাদেশে সক্ষমতা শক্তিশালী করতে এডিবি-এর কাছে লজিস্টিক সহায়তাও চান শেখ হাসিনা।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে সরকারের বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির উল্লেখ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং হত দরিদ্র বিমোচন করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

এডিবি-কে নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংসহ সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে বলেন শেখ হাসিনা।

এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, এডিবি নগর ও পানি নীতিতে তাদের সহায়তা মোট সহায়তার ১৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইংমিং ইয়াং বলেন, এডিবি বৃহত্তর পরিসরে কৃষি গবেষণায় সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়।

তিনি বলেন, এডিবি তাদের নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়।

এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এডিবি বিদ্যমান সম্পদের আরও ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের জন্য একটি সিটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে চায়।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের উপজেলাগুলোকেও বিবেচনা করতে বলেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।

জাতীয়

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রমের ষাণ্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) পরীক্ষার মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। বুধবার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সদ্য চূড়ান্ত হওয়া নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয় পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে আধা ঘণ্টা বিরতি রাখা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।

এ ছাড়া পরীক্ষার আগের রাতেই অনলাইনে প্রশ্ন পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী উত্তরপত্র লিখে নিয়ে যায়। আবার অনেকেই হলে গ্রুপ হয়ে আলোচনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে। হলে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করে অনেক শিক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা অনেকটাই নীরব ভূমিকায় ছিলেন। অতিরিক্ত পরীক্ষার সময় থাকায় অনেক শিক্ষার্থী আড্ডা দিয়ে সময় পার করেছে। পরীক্ষার প্রথম দিন এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানসম্মত হয়নি শ্রেণিভিত্তিক প্রশ্নপত্র। তাই খাতায় অনেক সহজ বিষয়ে উত্তর দিতে হয়েছে। পরীক্ষাকে কঠিন মনে হয়নি। যদিও পরীক্ষার আগের রাতে ব্যাপক ভয়ের মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলেন অভিভাবকরাও।

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে বেশ উৎফুল­। তবে কেউ কেউ ছিল হতাশ।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী পিয়াল বলে, পরীক্ষার নিয়মকানুন ও প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়ে খুবই টেনশনে ছিলাম। রাত জেগে অনেক পড়াশোনা করেছি। কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে একদম সহজ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সময়ও লেগেছে কম। মাত্র তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাখওয়াত বলে, পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এসেছে, যা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে লিখতে হয়। অনেকেই বিষয়গুলো ধরতে পারে না। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।

বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাহিন নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আমরা যেসব কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করে এসেছি, ওইসব বিষয় পরীক্ষায় আসেনি। বইয়ের ৩০ শতাংশ প্রশ্ন আমাদের কমন পড়েছে। বাকি প্রশ্নগুলো ধারণা করে লিখতে হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর কেউ ইচ্ছা করলে তিন ঘণ্টা পড়াশোনা করে দিতে পারবে। আরও মানসম্মত প্রশ্ন করা উচিত। অনেকেই পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পেয়েছে। তারা উত্তরপত্র মোবাইল ফোনে নিয়ে এসে পরীক্ষা দিয়েছে।

নুরুন নাহার নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি কেবল চূড়ান্ত হয়েছে। এখনো বিষয়গুলো বুঝে উঠতে পারছি না। প্রথমদিন সন্তানরা গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করে পরীক্ষা দিয়েছে। এটা ভালো হয়েছে নাকি খারাপ, বলা মুশকিল।

জেবল রহমান নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে পরীক্ষার টেনশনে সারা রাত ঘুমায়নি। পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হবে, এতে কী কী লিখতে হবে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। এই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে তারা হতাশ বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরীক্ষার সময় আরও কমিয়ে আনা দরকার। প্রশ্নপত্রের মান আরও বাড়াতে হবে। অতিসহজ প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে জানান তিনি।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আ ন ম সামসুল আলম বলেন, নতুন মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একধরনের মানসিক চাপে ছিল। প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তারা। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষায় শিক্ষকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, এদিন সকাল ১০টা থেকে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়ে, বিরতিসহ চলে পাঁচ ঘণ্টা। প্রথম দিনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা, সপ্তমে ধর্ম, অষ্টমে জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণিতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২০ হাজার ৬৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

দুই বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১ জুলাই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তবে দেরিতে অনুমোদন হওয়ায় নতুন এ পদ্ধতি ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে পুরোপুরি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এনসিটিবি সূত্র। এনসিটিবির প্রস্তুত করা খসড়া মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বিষয় মূল্যায়নে সাতটি পর্যায় বা স্কেল রয়েছে। মূল্যায়নের পর্যায়গুলো হলো অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। সবচেয়ে যে ভালো করবে, সে ‘অনন্য’ পাবে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, নতুন কারিকুলামের পরীক্ষার সময় পাঁচ ঘণ্টা রাখা হলেও সব শিক্ষার্থীর জন্য তা প্রযোজ্য নয়। অনেকে আগেই লিখে বের হয়ে যেতে পারবে। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন পাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। তবে যারা অনলাইনে উত্তরপত্র লিখে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে, এটাই সমস্যা। এখন আমরা প্রশ্নপত্র আরও গোপনীয়ভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পাঠাব। তবে অনেক শিক্ষক তা না বুঝে ফেসবুকেও শেয়ার করছেন। এ ছাড়া কেউ হাতে পেলেই সে উত্তর করতে পারবে এমন না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে।

গত বছর দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। এতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়, জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড়, শেরেবাংলা কৃষির শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও-খামারবাড়ি সড়ক, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে এসব সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্রেন থামিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। একই দাবিতে এদিন রাজশাহী, বেগম রোকেয়া ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন, পদযাত্রা ও বিক্ষোভ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলন করছেন। আজও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মকসূচি পালন করবেন তারা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শাহবাগ মোড় : বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর-টিএসসি-হাইকোর্ট-মৎস্যভবন হয়ে বিকাল পৌনে ৪টায় শাহবাগ মোড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এতে শাহবাগ মোড় অচল হয়ে পড়ে। দেড় ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করলে যান চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়।

তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ : বেলা সাড়ে ৩টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জেগেছে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আঠারোর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’, কোটা প্রথা নিপাত চাই, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ১ ঘণ্টা পর তারা অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, আন্দোলন যতদিন না সফল হবে, ততদিন আমরা ঘরে ফিরব না।

আগারগাঁও-খামারবাড়ি সড়ক : রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার দেশ আমার মা, বৈষম্য মানি না; কোটা বৈষম্য দূর কর, নইলে বুকে গুলি কর; সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে আগারগাঁও-খামারবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক : ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২ ঘণ্টা (বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত) ধরে অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না বলেন, বাংলাদেশের মেধাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমরা কখনোই এই বৈষম্য মেনে নেব না। এদিকে অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে আমিন বাজার পর্যন্ত এবং অপর লেনে চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী।

অবরোধ চলাকালে নেতাকর্মীসহ আটকা পড়েন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এ সময় তার অনুসারীরা গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা গাড়ি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অবস্থান করেন। এরপরেও শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই গাড়ি যেতে না দেওয়ায় একপর্যায়ে তিনি সিএন্ডবি পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে আরেকটি গাড়িতে হেমায়েতপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা দুই দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে রেললাইন অবরোধ করেন। ওই সময় ১ ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ করে রাখা হয়। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট হয়ে মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি প্রতিবাদ সভা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড় পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেন আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন তারা। প্রায় ১ ঘণ্টা পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে তারা রেললাইন অবরোধ তুলে নেন। পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক : কাফনের কাপড় পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ববির গেটসংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান নেন তারা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়ে। নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালের কাঁঠালতলা এলাকা থেকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার জিরো পয়েন্ট তীব্র যানজট দেখা দেয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেকে ব্যাগ-বস্তা মাথায় নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দেন। পরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছাড়লে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পটুয়াখালীর ইয়াসিন হাওলাদার বলেন, স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে বরিশালে এসে মহাবিপদে পড়েছি। বাসে ২ ঘণ্টা বসে থেকে বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করেছি। আমার অসুস্থ স্ত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

জাতীয়

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, সবার জীবনে শুদ্ধাচার গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৈতিকতা বাদ দিয়ে শুদ্ধাচার সম্ভব নয়। শুদ্ধাচার চলমান থাকলে জীবনে পথচলা অনেক সহজ হয়। অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, বিবেককে জাগ্রত রাখে।

সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রবর্তিত এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গাইডলাইন স্বরূপ। এর মাধ্যমে তারা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে মন্ত্রণালয় তথা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রবর্তনের ফলে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। যারা আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনা ও সেবায় নিযুক্ত হবেন তারা এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হবেন। মন্ত্রী এসময় এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং সততা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে নিতে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহবান জানান।

এদিন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।

উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভিশন, মিশন, কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ এবং কার্যাবলীর আলোকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৩টি দপ্তর-সংস্থা তাদের নিজস্ব ভিশন, মিশন কৌশলগত উদ্দেশ্য, কার্যাবলী, বাজেট বরাদ্দ ইত্যাদি বিবেচনা করে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন করা হয়।

জাতীয়

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রদান করবে।

এলক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ সরকার এবং কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে একটি ঋণচুক্ষি স্বাক্ষর হয়েছে। আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঋণচুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং কোরীয় এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হং কিয়েন স্বাক্ষর করেন।

সোমবার ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ‘সেকেন্ড স্ট্রেনেথিং সোশ্যাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম, সাবপ্রোগ্রাম-১’ প্রকল্প বাস্তবায়নে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো-বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার এবং সুরক্ষার অন্তর্ভূক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, কোরিয়া সরকার ১৯৯৩ সাল থেকে কোরীয় এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে নমনীয় সুদে বাংলাদেশকে বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে।

জাতীয়

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বোর্ড ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ (১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন) ডলার অনুমোদন করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে।

তৃতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ পাওয়ার মাধ্যমে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তিন কিস্তিতে মোট ২২৭ কোটি ৩৩ লাখ (২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ।

সোমবার (২৪ জুন) ওয়াশিংটনের আইএমএফ বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন করে। এদিন সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে এ অর্থ পাওয়া যাবে।

ঋণের প্রথম কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পায় বাংলাদেশ। এরপর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর। আর আজ সোমবার ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুমোদন করলো আইএমএফ এর বোর্ড সভা। দুই দিনের মধ্যেই এ অর্থ ছাড় হবে।

জাতীয়

সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ ৬ বছর ধরে ঝুলে আছে। দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে দুবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি, দুবার আইন মন্ত্রণালয় এবং একবার সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মত নেওয়া হয়। এছাড়া বিধিমালাটির ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেওয়া হয়। এভাবে দিনের পর দিন শুধু ঘষামাজার মধ্য দিয়ে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত । শিগগিরই গেজেট প্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ। তবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খসড়া বিধিমালা আরেকবার দেখতে চেয়েছেন, বুঝতে চেয়েছেন কী জারি করা হচ্ছে। সেই কারণে একটু সময় লাগছে। শিগগিরই জারি হবে।

সরকারি চাকরি আইনের গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। আইনটি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এর আগে অধ্যাদেশ ও রাষ্ট্রপতির আদেশ সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিধিমালা জারি করে প্রশাসন পরিচালনা করা হয়েছে। সেহেতু এই আইন কার্যকর করার পর প্রশাসন পরিচালনায় আগের প্রায় সব বিধিমালা, নীতিমালা হালনাগাদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই আইনের অধীনে বেশ কয়েকটি বিধিমালা ইতোমধ্যে জারিও করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে।

সময়ক্ষেপণের বিষয়টিকে অবহেলা ও গাফিলতি হিসাবে দেখছেন সাবেক সচিবরা। তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এবং কর্মকর্তারা সেই সুযোগ নিচ্ছেন। তারা বলেন, একটি বিধিমালা তৈরি করতে গিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর লাগার পরও সংশ্লিষ্ট কারও কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হয়নি। আদৌ এই বিধিমালা প্রণয়ন হবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

আবার সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির জন্য গত বছর ১৭ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ পদ্ধতিতে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্পদের আয়-ব্যয় নেওয়ার বিধান করার কথা। সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং বর্তমান মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মধ্যে তাকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি চলে যাওয়ার পর সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব মো. শামীম সোহেল বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি আমি দেখতাম না। বিধিমালা তৈরির বিষয়টি দেখতেন যুগ্মসচিব সফিউল আরিফ। তবে সম্প্রতি তাকে বদলি করে দেওয়ায় এখন আমাকে দেখতে হচ্ছে। কিন্তু আচরণ বিধিমালা কী অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করতে গিয়ে ৬ বছর সময় ব্যয় একটি অবহেলা। এটা দুঃখজনক। যত দ্রুত সম্ভব আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। তাছাড়া ১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালার বিধান বলে কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বা তা জমা দেওয়ার বিধান তো আছেই। তিনি আরও বলেন, সম্পদ হ্রাস বৃদ্ধির বিধান বিধিমালায় থাকা জরুরি। বরং প্রতিবছর সরকারকে জানানো উচিত কার কী পরিমাণ সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে।