জাতীয়

রাজধানীতে শিশু-কিশোরদের জন্য বসতে যাচ্ছে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক এক আসর। চার দিনব্যাপী ‘স্মার্ট চিলড্রেন কার্নিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হবে শিল্পকলা একাডেমিতে।

আজ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় এ কার্নিভ্যালের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

সংবাদ সম্মেলনে পলক বলেন, ‘স্মার্ট চিলড্রেন কার্নিভ্যাল’ শুধু একটি অনুষ্ঠানই নয়; এটা আমাদের সন্তানদের সীমাহীন সম্ভাবনা এবং কল্পনার জগতকে প্রসারিত করার একটি বড় উদ্যোগ। এ কার্নিভ্যাল শিশু-কিশোরদের সহজাত প্রতিভা, কৌতূহল এবং তারা যে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠন করতে চায় তার প্রাথমিক আভাস। এই শিশু ও তরুণদের মনে তৈরি হবে আশাবাদে পরিপূর্ণ ও বিশ্ব মানবতাকে জাগ্রত করার অনন্ত প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত। তাদের সম্ভাবনাকে লালন-পালন ও প্রতিভার যথাযথ বিকাশ ঘটাতে এবং তাদের সফল হওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তিনি বলেন, আইসিটির ক্ষেত্রে আমরা অভূতপূর্ব পরিবর্তনের যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। প্রযুক্তি শুধু একটি হাতিয়ার নয়, এটি একটি গেম-চেঞ্জার। যা সীমানা অতিক্রম করে এবং আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করার সহায়তা দেয়। আজ আমরা দেখতে পাই যে আমাদের তরুণরা স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। যা সত্যিই অসাধারণ। তারা হলো ডিজিটাল নেটিভ, যারা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আমাদের ডিজিটাল যুগে নিয়ে যাবে।

কার্নিভ্যালে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিজিটাল অ্যানিমেটেড চিত্রাঙ্কন প্রদর্শন, গেমিং জোন ও কুইজ প্রতিযোগিতা, গল্প উপস্থাপন, রিডিং জোন, ভিডিও ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে অ্যানিমেটেড জায়ান্ট বই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও পারফরমেন্স, রণপা, জায়ান্ট গেম, রাইডিং জোন, ইমার্সিভ ডিজিটাল এনভায়রনমেন্টের আয়োজন করা হয়েছে।

কার্নিভ্যালের চতুর্থ দিন ৩০ সেপ্টেম্বর ৬টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব মো. সামসুল আরেফিন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ।

জাতীয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যে কোনো নির্বাচনে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছে। দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত।

রোববার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির ফোর্স সাপোর্ট উইংয়ের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান এসব কথা বলেন।

নাজমুল হাসান আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করব। আমরা যতটুকু জানি, আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে বিজিবি সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির ওপর অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব সব সময় পালন করে।

বিজিবি মহাপরিচালক নাজমুল বলেন, ২২৮ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যে লালিত ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বিজিবি। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এ বাহিনীর রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান। প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই বিজিবি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার সুমহান দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান আমাদের দায়িত্ব। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং দেশ গঠন ও জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবির অনবদ্য ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

জাতীয়

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় এই সংলাপে নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে। ওই আলোচনায় ১২ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিকও রয়েছেন। তবে এ তালিকায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন আয়োজনকারী কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ এবং কেএম নুরুল হুদার নাম নেই।

সংলাপ আয়োজনের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি জানান, বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি রোধে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের ভূমিকা কী হতে পারে; পোলিং এজেন্ট তার প্রার্থীর পক্ষে আইন ও বিধি অনুযায়ী কীভাবে দায়িত্ব পালন করে পোলিংকে স্বচ্ছতার রূপ দিয়ে নির্বাচন কীভাবে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারেন; নির্বাচনের ফলাফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটিয়ে কীভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করিয়ে আনতে পারেন; প্রার্থী কী ধরনের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করবেন এবং কীভাবে তাকে দায়বদ্ধ করবেন।

মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ভোট ভালো হলো কি খারাপ হলো এই দায়ভারটা নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়। কিন্তু আসলে কি তাই? নির্বাচন হচ্ছে একটা টিমওয়ার্ক। যে টিমের মধ্যে অনেকেই আছেন। তার মধ্যে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার, পোলিং এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আছেন। নির্বাচনে সবারই একটা দায়িত্ব থাকে। তিনি বলেন, প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসাবে একজন পোলিং এজেন্ট থাকেন। পোলিং এজেন্ট যদি সেখানে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে কি সেখানে কোনো অনিয়ম হতে পারে? পোলিং অফিসাররা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে কিন্তু কেউ অনিয়ম করতে সাহস পায় না। এ রকম সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলে কিন্তু একটি অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচন করা সম্ভব।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা সংলাপ থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি এবং ইমপ্লিমেন্ট করেছি। অভিযোগ করা হয়, আগে যে সংলাপগুলো করেছিলাম, সেই সংলাপের এক পারসেন্টও নাকি বাস্তবায়ন করিনি। আমি বলতে পারি, ৬০ পার্সেন্টের বেশি আমরা বাস্তবায়ন করেছি।

জানা গেছে, সংলাপে আলোচক হিসাবে ১২ জনকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তারা হলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামছুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ও বেগম কবিতা খানম। ইসির সাবেক তিনজন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী, মো. নুরুজ্জামান তালুকদার ও খোন্দকার মিজানুর রহমান। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, গ্লোবাল টিভির সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও একুশে টেলিভিশনের সিইও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর সুধীজনদের নিয়ে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করেছিল ইসি।

জাতীয়

ঢাকার রাস্তায় এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীলের (৫২) শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তিনি ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছেন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ভুবন চিকিৎসায় কোনো সাড়া দিচ্ছেন না।

রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভুবনের শ্যালক পলাশ চন্দ্র শীল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, চিকিৎসায় ভুবন সাড়া দিচ্ছেন না। যে কোনো দুঃসংবাদের জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

পলাশ বলেন, এ কথা শোনার পর তার বোন (ভুবনের স্ত্রী) রত্না চন্দ্র শীল অনবরত কেঁদে চলেছেন। তিনি তার স্বামীর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

রত্না শীল তার একমাত্র মেয়ে ভূমিকা চন্দ্র শীল ও দুই ভাইকে নিয়ে চার-পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালেই রয়েছেন।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ভুবনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার চলে। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে কি না, তা ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করার পর জানানো হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। তবে আজ বেলা ১১টা থেকে ভুবনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

গত সোমবার রাত ১০টার দিকে তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিজি প্রেসের সামনের রাস্তায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ ওরফে মামুনের প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। এ সময় মোটরসাইকেলে করে ওই পথ দিয়ে নিজ বাসায় ফেরার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ভুবন।

জাতীয়

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ‌রিয়ার আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধের আওতায় বি‌রোধী দ‌লের কারো কারো নাম থাক‌তে পা‌রে। ত‌বে নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটেনি, যাতে নতুন করে স্যাংশন আসতে পারে। এছাড়া নি‌ষেধাজ্ঞায় পড়াদের সংখ্যার বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। এটুকু বলতে পারি সেই সংখ্যাটা খুব বড় নয়, ছোট। এ ব্যাপারে আমরা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।

শুক্রবার রাতে গুলশা‌নে নিজ বাসভব‌নে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা।

শাহ‌রিয়া‌র আলম ব‌লেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের ভালো বৈঠক হয়েছে। তাদের কনসার্নের জায়গাগুলো নিয়ে যে আমরা কাজ করছি, সেটা দৃশ্যমান। তারাও বলেছে যে, আমরা উন্নতি করছি। প্রত্যাশা যে, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তারা নিশ্চয় তথ্য যাচাই করে তা করছে।

তি‌নি আরও ব‌লেন, বিরোধী দলের ভেতরেও পরিবর্তন লক্ষণীয়। সেটি ভিসানীতির কারণে হতে পারে। কাজের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা তৈরি করলে, আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করবো। তারা যদি না বলেন, তাহলে তো জানা কঠিন। তবে নিষেধাজ্ঞার তালিকা খুব বড় নয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ব‌লে‌ন, কোনো দে‌শের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে কারো কোনো হস্তক্ষেপ আমরা দেখতে চাই না। আমরা এটাকে গুড স্পিরিট হিসেবে দেখছি। কিন্তু মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে বিরোধী দল। তারা নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। স্যাংশনের তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের নামই বেশি থাকার কথা। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, এটাই প্রমাণ করে সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক। কেউ যদি কোনো নাশকতা করে, তবে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপি চাপে আছে উল্লেখ ক‌রে তি‌নি ব‌লেন, আমাদের কিছু হারানোর নেই। আমরা মোটেও দুশ্চিন্তা করছি না।

জাতীয়

নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পর ট্রাইব্যুনালের রায়ে জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে বিজয়ী হলেন মাত্র দুই ভোটে পরাজিত দেখানো আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ।

বৃহস্পতিবার নির্বাচনি মামলার এ রায় ঘোষণা করেন সিলেট যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক আরিফুজ্জামান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আদালতের ওয়েবসাইটে রায়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকে আব্দুল আহাদকে দুই ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীব। বিষয়টি তখন মেনে নিতে পারেননি পরাজিত মেয়র প্রার্থী জগ প্রতীকের ফারুক আহমদ। ওই বছরই তিনি সিলেট যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার পুনরায় গণনা চেয়ে মামলা করেন। পরে আদালত বাদীপক্ষের সাক্ষী ও বিবাদী পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করে ভোট পুনরায় গণনার নির্দেশ দেন। গণনায় ফারুক আহমদ তার জগ প্রতীকে চার ভোট বেশি পান।

জানা গেছে, ফলাফলে কারচুপির অভিযোগে করা মামলা দীর্ঘদিন চলার পর উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফায় আদালতে ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। এতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদের বৈধ ভোট হয় ২০৭১ আর আব্দুল আহাদের বৈধ ভোট হয় ২০৬৭। বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় ঘোষণা করেন।

সদ্য বিজয়ী ফারুক আহমদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আদালত যে মানুষের শেষ ভরসা তা-ই আজ প্রমাণ হলো। ভোট পুনর্গণনার রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আইনি লড়াই করেছিলেন।’

জাতীয়

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভারতে যে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে তা টোকেন হিসেবে। বাংলার মানুষের দুই দিনের খাবার তালিকার সমপরিমাণ মাছ। এতে ইলিশের বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না দেশে। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

দেশে উৎপাদিত ডিম ও আলুর দাম নির্ধারণ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যখন যে পণ্যের মজুদ কমে যায় তখন সেই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার। সেটা দেশি বা বিদেশি পণ্য হতে পারে।

টিপু মুনশি বলেন, তিন পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হবে। এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা।

কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও রয়েছে। এখন ন্যায্য দাম কার্যকর হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন পণ্যের যে দাম ঘোষণা করেছে তা কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের আছে চেষ্টাও। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন।

জাতীয়

নাটোর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

মনোনয়ন পাওয়ার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। নৌকা প্রতীকে তিনি নিরঙ্কুশ বিজয় এনে দিবেন। একইসঙ্গে সব বিভেদ ভুলে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করারও আহবান জানান তিনি।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপির মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় এখানে উপনির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে আগে অল্প কিছু দিনের জন্য এমপি হতে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন ফরম কিনেছিলেন দলটির ১৭ নেতা। তাদের মধ্যে থেকে সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে নৌকার প্রার্থী হিসাবে বেছে নিল আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল মতে- নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম- গুরুদাসপুর) আসনের ভোট গ্রহণ হবে ১১ অক্টোবর। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।

জাতীয়

পদ্মা পাড়ের সব বিক্রি করে ঢাকা এসে এক‌টি ভাড়া বাসায় উঠেছি। ছে‌লেকে এক‌টি দোকান ক‌রে দিয়েছিলাম এই মার্কেটে।

ভেবেছিলাম আবার নতুন ক‌রে পথচলার শুরু হবে। কিন্তু পাষণ্ড আগুন আমা‌র স্বপ্নকে বাঁচ‌তে দিল না। বাঁধতে দিল না ঘর।

এভাবেই বল‌তে বল‌তে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী বাবু বৈদ‌্যর মা সন্ধা বৈদ্য।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হ‌য়ে‌ছে পাঁচ শতাধিক দোকান। পুড়েছে শত শত মানুষের কষ্টে তিল তিল ক‌রে গড়ে তোলা স্ব‌প্নের দোকান।

এমনই এক দোকা‌নি বাবু বৈদ্য। পদ্মার ওপা‌রে বা‌ড়ি। সব কিছু বি‌ক্রি ক‌রে প‌রিবা‌রের স‌ঙ্গে চ‌লে এসেছেন রাজধানীর বু‌কে। এসেই রাজধানীর কৃষি মার্কেটে প্রায় আট থে‌কে ১০ লাখ টাকা খরচ ক‌রে দিয়েছেন দোকান। হঠাৎ ভোর রাত চারটার ‌দি‌কে ফো‌নের শ‌ব্দে ভেঙ্গে যায় ঘুম। ফো‌নের ওপাশ থে‌কে বল‌তে শো‌নেন মার্কেটে আগুন লেগেছে। সব ফেলে দৌড়ে এসেও বাঁচা‌তে পা‌রেননি কোনো কিছু।

বাবু বৈদ‌্য ব‌লেন, চারটার দি‌কে ফোন আসে। ফোন ধর‌তেই ব‌লে মার্কেটে আগুন লেগেছে। শুনেই আমি দৌ‌ড়ে আসি। এসে দেখি মার্কেটে দাও দাও ক‌রে আগুন জ্বলছে। কিছুই বাঁচা‌তে পারিনি। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন কি নি‌য়ে বাঁচব?

তি‌নি ব‌লেন, এখা‌নে আমার দুইটি দোকান ছি‌ল। দুইটি দোকা‌নেই আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ম‌রিচ গুড়া ও হলুদ গুড়া পাইকারি ও খুচরা বি‌ক্রি করতাম। আগুনের কোনো কিছুই সরা‌তে পা‌রি নাই। সব পুড়ে শেষ হ‌য়ে গেছে।

পোড়া দোকা‌নে দাঁড়িয়ে বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ কর‌ছি‌লেন বাবু বৈদ‌্যর মা সন্ধা বৈদ্য। তিনি ব‌লেন, আমার সব শেষ হ‌য়ে গেছে। অনেক কষ্ট ক‌রে ছে‌লে‌কে দোকান ক‌রে দিয়েছিলাম। সব পুড়ে শেষ হ‌য়ে গেল। এখন কিভাবে বাঁচব? কিভাবে ধার দেনা শোধ করব? কোথায় থাক‌ব? কি খা‌ব?

তিনি আরও বলেন, দেশ গাঁওয়ে সব বি‌ক্রি ক‌রে ঢাকা চ‌লে আস‌ছি। ভাড়ার এক‌টি বাসায় থা‌কি। দেশ থে‌কে যে টাকা আন‌ছিলাম তা দি‌য়ে ছে‌লের দোকান ক‌রে দিয়েছিলাম। ধার দেনাও ক‌রে‌ছি অনেক। আমার কিচ্ছু নাই সব শেষ।

কান্না কর‌তে কর‌তে সন্ধা বৈদ্য ব‌লেন, আমার সর্বশেষ সম্বল ছিল বাড়ির ভিটা। সেটা বিক্রি করে আমার ছেলেকে দোকানে মালামাল তুলতে টাকা হাতে তুলে দিয়েছি। আমার ছেলের দোকানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটা মালও বের করতে পারি নি। আমার থাকার জায়গাটি বিক্রি করে দিয়েছিলাম স্বপ্ন দেখে। আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার যা সম্বল ছিল সব শেষ।

এরআগে, বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে একটি ইউনিট এলেও মার্কেট বন্ধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারেনি সদস্যরা। যে কারণে আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, পৌনে ৬ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। তিনি জানান, ভোরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭ ইউনিট ও ১৩৭ জন কর্মী। আগুন নির্বাপণে এখনও আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অগ্নি নির্বাপণী সাহায্যকারী দল। এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণ, উদ্ধার অভিযান ও সার্বিক শৃঙ্খলায় ঘটনাস্থলে কাজ করে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এনএসআই, স্কাউটের ভলান্টিয়ার সদস্যরা। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মার্কেটে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়।

জাতীয়

এক দশক আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও সংস্থাটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (১৪) রায় পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি দূতাবাসের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মীসহ বিশিষ্টজনরা আদালতে হাজির হন।

রায়ের পর তাদের মধ্যে কেউ কেউ উদ্বেগও প্রকাশ করেন।

দুপুর ২টার দিকে রায় ঘোষণার জন্য আগেই সময় নির্ধারিত ছিল। বেলা পৌনে ২টায় দুই আসামি অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান তাদের আইনজীবীসহ আদালতে আসেন।

তার কিছুক্ষণ আগে আদালত এলাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধি।

এ সময় তারা একত্রে এজলাসে প্রবেশ করেন। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। ইংরেজিতে লেখা ৫০ পৃষ্ঠার মূল রায়ের সারাংশ পড়ে শুনান ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তিনি রায় পড়েন। এরপর আসামিদের দণ্ড ঘোষণা করেন৷ বিলুপ্ত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের সাজা দেওয়া হয়।

যদিও ৫৭(২) ধারা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড ছিল। তবে পুরো বিচারকাজে উপস্থিত থাকা ও সহায়তা করায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

আদালতের এ রায়ে রাষ্ট্র বা আসামিপক্ষের কেউ সন্তুষ্ট নয়। দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরও এত কম সাজা দেওয়ায় রায় পর্যালোচনা আপিলের কথা জানান ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভুঁইয়াও আপিল করবেন বলে জানান।

রায় শেষে জামিন বাতিল করে তাদের সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ বেষ্টনিতে যাওয়ার সময় আদিলুর সাংবাদিকদের বলেন, ন্যায়বিচার পাইনি, আপিল করব। পরে প্রিজনভ্যানে উঠানোর সময় পুলিশের সঙ্গে আদিলুরের কিছুটা বাগবিতণ্ডা হয়। হাত উঠিয়ে আদিলুর প্রতিবাদ করতে গেলে কয়েকজন পুলিশ তার হাত নামিয়ে দেন।

এ সময় উপস্থিত মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্টজনরা পুলিশের এ আচরণের প্রতিবাদ জানান।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, জাতিসংঘের ঢাকা অফিসের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার, মানবাধিকার কর্মী ইজাজুর রহমান, আদিলুরের বোন তাসকিন রহমান, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম, ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বাসির ফাস্ট সেক্রেটারি সাচা ব্লুমেনসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডিয়ান দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।

রায়ের পর বিদেশে পর্যবেক্ষকরা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্টজনরা।

রায়ের পর মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে যে আইনটির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, সেই আইনেই একজন মানবাধিকার কর্মীকে সাজা দেওয়া হলো, এটি আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। স্বাভাবিকভাবে একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন ও হতাশ।

রায়ের পর ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সিআর আবরার সাংবাদিকদের বলেন, নাগরিকদের ওপর যে চাপ এবং নাগরিকদের যে ভালনারেবল করে রাখা এবং সে যেন স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে না পারে, স্বাধীনভাবে তাদের কথাবার্তা বলতে না পারে, সেটি কিন্তু মোটামুটিভাবে আবার প্রতিষ্ঠিত হলো। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমার মনে হয় আমরা সেখান থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে যাচ্ছি।

এ মামলায় গত ২৪ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় রায়ের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করা হয়।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার।

ওই বছরের ১০ জুলাই নিহতের তালিকা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংগঠনটি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে একই বছর ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ডিবির উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম। ওইদিনই গ্রেপ্তার হন অধিকার সম্পাদক। পরে ওই বছরের ৯ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান আদিলুর।

তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ২৮ জনকে সাক্ষী করে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে পলাতক আসামি এলানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এলানও ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। এরপর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত আদেশের পর উচ্চ আদালতে মামলা বাতিল চাইলে উচ্চ আদালতের আদেশে বিচারকাজ স্থগিত হয়ে যায়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণকালে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। এরপর তাদের বিরুদ্ধে একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিচার চলাকালে আদালত মোট ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।