জাতীয়

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হাউজের গুদামের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে হস্তান্তর করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকালে বিমানবন্দর থানা থেকে মামলাটি ডিবির উত্তরা বিভাগে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলার সর্বশেষ তদন্তের বিষয়ে জানান, এখন পর্যন্ত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

সূত্র জানায়, স্বর্ণ চুরির এ ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর)। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন রোববার।

বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি বা বেহাত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য যুগ্ম কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে কাস্টমস হাউজ।

এজাহারে শনিবার দিনগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারির লকার ভেঙে স্বর্ণগুলো নিয়ে গেছে।

শুল্ক বিভাগ জানায়, চুরি হওয়া স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামের লকার থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির মামলায় ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোজাফফর হোসেন জানান, সোমবার মামলার এজাহার আদালতে আসে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত তা গ্রহণ করে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক খোরশেদ আলমকে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

গত রোববার রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় স্বর্ণ চুরির ঘটনায় মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে উদ্ধার হওয়া ৪৮টি ডিএম বার যার ওজন ৮.০২ কেজি ও ২০২০ থেকে ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে আটক ৩৮৯টি ডিএম বার যার মোট ওজন ৪৭.৪৯ কেজি স্বর্ণ আলমারির লকার ভেঙে চুরি হয়েছে।

গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে পরদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কে বা কারা ৫৫ কেজি স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালংকার গোডাউন থেকে স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করেছে; যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪৫ কোটি টাকার বেশি।

সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণের বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস এ গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত স্বর্ণের হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।

জাতীয়

পোড়া বঙ্গবাজারে উঠছে ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন। নতুন নামে এই ভবনে দোকান থাকবে ৩ হাজার ৪২টি। থাকবে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে মার্কেট নির্মাণের সময়ে কোথায় বসে ব্যবসা করবেন এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১০ তলাবিশিষ্ট এই মার্কেটটির নাম হবে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’। এরই মধ্যে মার্কেটের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসের মধ্যে নকশা অনুমোদন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরই ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হবে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এই মার্কেট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের এনেক্সকো টাওয়ার মার্কেট (একাংশ), মহানগর শপিং কমপ্লেক্স (একাংশ), বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের আর্থিক ক্ষতি ৩০৩ কোটি টাকা।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান নির্মাণের নকশা তৈরির কাজ হচ্ছে। নকশা তৈরি করছে আলাদা তিনটি প্রতিষ্ঠান। নকশা চূড়ান্ত হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর ১০ তলা এই বিপণি বিতানে বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটটি ফ্লোর থাকবে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত দোকান থাকবে তিন হাজার ৪২টি। এর মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি, সপ্তম তলায় ৩১৩টি। অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীদের আবাস ও অন্য কক্ষ রাখা হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত নকশায় রাখা হয়েছে ২২টি খাবারের দোকানের জায়গা। এর বাইরে আরও ৮১টি দোকান বেশি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ বর্গফুট। বিপণি বিতানটিতে লিফট থাকবে আটটি। এর মধ্যে ক্রেতাদের জন্য চারটি ও মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য কার্গো লিফট থাকবে চারটি। থাকবে ১১টি সিঁড়ি। ছয়টি ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি। এছাড়া প্রতি ফ্লোরে চারটি করে টয়লেট থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮৩টি গাড়ি পার্কিং ও ১১০টি মোটরসাইকেল পার্কিং করা যাবে। ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ বর্গফুট আয়তনের এ ভবনটি তৈরি করতে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড।
বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখন অস্থায়ী চৌকিতে শামিয়ানা টানিয়ে ব্যবসা করছেন। এখানে অধিকাংশই জামাকাপড়ের দোকান। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেবে- এ উদ্যোগে আমরা অনেক খুশি। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো মার্কেটটি নির্মাণ করে দোকান হস্তান্তর করতে অন্তত তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে। এই সময়ে আমরা কোথায় যাব? কীভাবে ব্যবসা করব। কীভাবে টিকে থাকব। সিরাজুলের মতো ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ব্যবসায়ীরাও বলছেন, সিটি করপোরেশন যদি তাদের অস্থায়ীভাবে বসার জায়গার ব্যবস্থা করে দেয় তবে তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূূর তাপস ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখছেন। তার উদ্যোগেই এখন ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। নকশা তৈরির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়েই নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

জাতীয়

নাটোরের গুরুদাসপুরে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা ১১ বছরের শিশু মা হয়েছে। নবজাতক ও তার মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়।

রোববার দুপুর ১টার দিকে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নবজাতককে কোলে নিয়ে ওই মায়ের পাশে বসে তার শারীরিক খোঁজ খবর নেন।

প্রতিবেশী দাদার লালশার শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয় ১১ বছর বয়সি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ওই শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ধর্ষক জাহিদুল খাঁ (৪৫) নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে।

গুরুদাসপুরে ১১ বছর বয়সি এক শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণে গর্ভবতী হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন তার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার দুপুরে ওই শিশু মা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়।

রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শ্রাবণী রায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নবজাতককে কোলে নিয়ে তার নাম রাখেন ‘আলো’। এরপর নতুন পোশাক, খাবার ও নগদ অর্থ প্রদান করেন। এ সময় ওই শিশু মায়ের দাদি ও চাচি উপস্থিত ছিলেন।

ওই ধর্ষিতার দাদি বলেন, ইউএনও স্যার হাসপাতালে এসে মা ও সন্তানের পাশে দাঁড়ানোয় তিনি আবেগাপ্লুত। তিনি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন, মা ও নবজাতক সন্তান নিষ্পাপ এদের কোনো দোষ নেই। যে বা যারা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার শুরু হয়েছে। মা ও সন্তানকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য সহায়তার আশ্বাসও দেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে শিশুটিকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত। এরপর গত ১৮ জুন তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগীর দাদি। ১০ মাস পর ২৫ আগস্ট রাতে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার হেলেঞ্চা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫ এবং র‌্যাব-১০ যৌথ বাহিনী। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে আছেন।

জাতীয়

একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশন বসবে আজ রোববার। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন বিকাল ৫টায় শুরু হবে এ অধিবেশন। এর আগে তার সভাপতিত্বে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশন কত দিন চলবে তা ঠিক করা হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। তার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে এই ৯০ দিন গণনা শুরু হবে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিও চলছে।

সংবিধানে বলা আছে, একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার দিন এবং পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের বেশি বিরতি দেওয়া যাবে না। তাই সাধারণত ২ মাসের মধ্যে একবার অধিবেশন ডাকা হয়। তবে এই বিধান সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের (পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এদিকে অধিবেশন চলাকালে জাতীয় সংসদ ভবন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।

আদেশে শনিবার রাত ১২টা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব রকম অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও যে কোনো প্রকার সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষেধ করা হয়েছে। অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলেও জানানো হয়।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ২১ জন মারা গেছেন। এর আগে চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দুই হাজার ৩৫২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৯৮২ জন এবং সারাদেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) এক হাজার ৩৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট দুই হাজার ৪৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৮৮০ জন ও সারা দেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতালে থেকে এক হাজার ১৬৭ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭ জন ঢাকা সিটিতে ও চার জন সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) মারা যান।

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৬১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৪৫৬ জন এবং সারাদেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ১৬২ জন মারা যান।

চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক লাখ ২৭ হাজার ৬৯৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৫৯ হাজার ৫৯২ জন ও সারাদেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৬৮ হাজার ১০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৪৪৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৫৫ হাজার ২৩৩ জন এবং সারাদেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতাল ৬৩ হাজার ২১১ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বর্তমানে সারাদেশে মোট আট হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঢাকা সিটিতে তিন হাজার ৯০৩ জন এবং সারাদেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) চার হাজার ৭২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার হার শতকরা ৯৩ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি থাকার হার ৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।

গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যান।

জাতীয়

রাজধানীর চিরচেনা তীব্র যানজট এড়িয়ে চলাচলে একাংশের পথ খুলছে আজ। শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেট অংশ। এ ধাপে সাড়ে ১১ কিলোমিটার দূরত্বের পথটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।

মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার এবং র‌্যাম্পে ৪০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারবে। কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত মাত্র ১২ মিনিটে পৌঁছতে পারবেন নগরবাসী। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, এই অংশ চালু হওয়ায় বাঁচবে যাতায়াতের সময়, কমবে দুর্ভোগ।

তারা জানান, আগামী জুনে দ্বিতীয় ধাপে মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বাকি অংশ চালুর কথা রয়েছে। তখন এক্সপ্রেসওয়ের পুরোপুরি সুবিধা পাবেন নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকালে কাওলাপ্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে এক্সপ্রেসওয়ে উঠবেন। টোল পরিশোধ করে যাবেন আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে। সেখানেও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে তিনি বক্তব্য দেবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

জানা যায়, উদ্বোধনের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও এতে সবাই চলাচল করতে পারবে না। পথচারী, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি এতে উঠতে পারবে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। তবে চলাচল করতে পারবে চার চাকার গাড়ি।

এজন্য ওইসব গাড়িকে টোল গুনতে হবে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও হালকা ট্রাককে ৮০, বাস ও মিনিবাস ১৬০, মাঝারি ট্রাক ৩২০ এবং ভারী ট্রাক বা ট্রেইলরে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে টোলের টাকা থেকে নির্মাণ ব্যয় তোলা হবে।

এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার বলেন, দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে যাতে গাড়ি চলাচল করতে পারে, সেজন্য দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।

বর্তমানে মূল এক্সপ্রেসওয়ে ৬০ কিলোমিটার গতিতে বিরতিহীনভাবে গাড়ি চলবে। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের সুযোগ দেওয়া হলে দ্রুতগতিতে অন্যান্য গাড়ি চলতে পারবে না। মিশ্র গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে। ওই আশঙ্কা থেকে দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করা হচ্ছে, সেখানে ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্টে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরনিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। এই ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে মহাখালী ও বনানী অংশে দুটি র‌্যাম্প বন্ধ থাকবে। বাকি ১৩টি র‌্যাম্প দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে পারবে। তবে যেসব স্থানে গাড়ি নামবে, সেসব পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুয়েটের শিক্ষক গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ওইসব পয়েন্টের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। নইলে যানজট নিরসনের লক্ষ্য পূরণ হবে না। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের আশা, প্রথম ধাপের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার গাড়ি চলাচল করতে পারবে। যদিও ওই সংখ্যক গাড়ি এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

একনজরে প্রকল্প : জানা যায়, পিপিপি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কাওলা, কুড়িল, বানানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে কতুবপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ৩১টি র‌্যাম্প থাকছে। এসব র‌্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট এড়িয়ে সহজেই নগরবাসী ঢাকার বাইরে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।

এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫.৯৬ শতাংশ। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ৪১২.৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে।

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ১৬০ জন বিশ্বনেতা এবং নোবেলজয়ীর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের বিবৃতির বিপরীতে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে সরকার। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বলেছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রচারের অজুহাতে কোনো প্রকার পর্দাহীন হুমকি বাংলাদেশের জনগণকে আইনের শাসন বজায় রাখা থেকে বিরত করবে না। ‘নিপীড়ন বা হয়রানির’ অভিযোগগুলি এমন একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে যা মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকে একটি সমীচীন আবরণ হিসাবে ব্যবহার করে শিকার মানসিকতা থেকে উদ্ভূত বলে মনে হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে অযৌক্তিক ইঙ্গিত দেওয়ার পরিবর্তে আইনের সীমার মধ্যে কাজ করার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পরামর্শ দেওয়ার কথাও বলা হয়।

সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ একদল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব এবং কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন যা বাংলাদেশ সরকারের নজরে এসেছে। খোলা চিঠিটিতে সুস্পষ্টভাবে তথ্যের সুস্পষ্ট ফাঁক আছে এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অবমাননা। এটি সরকারের কাছে বিস্ময়কর- চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ইতিমধ্যেই সাব-জুডিস মামলার যোগ্যতা এবং বিচারিক কার্যক্রমের ফলাফল সম্পর্কে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং মানি লন্ডারিংবিরোধী আইন, ২০১২-এর সুনির্দিষ্ট বিধানের অধীনে এই মামলা দায়ের করেছে। গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের শ্রমিক ও কর্মচারীদের লভ্যাংশের অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। দুদকের তদন্ত দল দেখতে পেয়েছে যে, গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্যান্য বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে বন্দোবস্ত চুক্তি জাল করে ২৫২ মিলিয়ন ডলার অপব্যবহার এবং অবৈধভাবে টাকা হস্তান্তর করেছে।

আরও বলা হয়, অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ঢাকা বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করে। একাধিক লঙ্ঘনের জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক অবদান তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলে নিট লাভের ৫% ভাগ লভ্যাংশ ২০০৬ সাল থেকে না দেওয়া। আবার একটি কর ফাঁকির মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে হেরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে আপিল বিভাগ কোনো দুর্বলতা খুঁজে না পেয়ে আবেদনটি খারিজ করে দেয়, যার ফলে ড. ইউনুস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বকেয়া কর পরিশোধ করেন। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে।

শ্রমিকদের তাদের ন্যায্য লাভ থেকে বঞ্চিত করার মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুই দফায় সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন, একটি রক্ষণাবেক্ষণকে চ্যালেঞ্জ করে এবং আরেকটি ট্রায়াল কোর্ট কর্তৃক অভিযোগ গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে। তার আইনজীবীদের শুনানি করে সর্বোচ্চ আদালত প্রথম মামলাটি সঠিকভাবে শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে রায় দেন এবং অন্যটিতে অভিযোগ গঠনকে আইনি ও সঠিক বলে ঘোষণা করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি দুঃখজনক- চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা সাব-জুডিস মামলাগুলি স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিচার বহির্ভূত কর্তৃত্ব প্রয়োগ করার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যালোচনার একটি বিকল্প প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেছে যেটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সেখানে আরও বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা তাদের অভিযুক্ত বা প্রমাণিত আইন লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক লবিংয়ের আশ্রয় নেওয়া এই প্রথমবার নয়। গ্রামীণ ব্যাংক সার্ভিস রুলস, ১৯৯৩ অনুযায়ী নির্ধারিত অবসরের বয়স অতিক্রম করলেও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে তার চুক্তি বাতিল করার প্রসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত ছিল তার।

আরও বলা হয়, দেশের আইনের ঊর্ধ্বে নিজেকে ভেবে নিয়ে একটি সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে বারবার বহিরাগত হস্তক্ষেপ চাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, কর্পোরেট এবং আয়কর ফাঁকি দিয়ে এবং বছরের পর বছর ধরে কর্মীদের বঞ্চিত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনভোগী কর্মচারী- বাণিজ্যিক উদ্যোগে কথিতভাবে অপব্যবহার করেছেন। এবং পাচারকৃত অর্থের একটি বড় অংশ বিনিয়োগ করেছিলেন।

জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে ১৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও প্রেস ফ্রিডম সংস্থা। বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো সংস্থাগুলোর যৌথ ই-মেইল বার্তায় এ আহ্বান জানায়।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত মামলাগুলো বাতিলের আহ্বান জানিয়ে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ও অন্য সংস্থাগুলোর বার্তায় বলা হয়, সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিনকে নাজেহাল করা ও ভয়ভীতি দেখানো শিগগিরই বন্ধ করুন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) করা মামলা দ্রুত বাতিল করুন। ২৯ এপ্রিল আরটিভিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘রাজারবাগ দরবার শরীফ’ নিয়ে ভিডিও রিপোর্ট করায় ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

সংস্থাগুলো লিখেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করায় সরকারকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও চলাফেরার করার স্বাধীনতাসহ সাংবাদিকতা ও মানবাধিকার খর্ব করা হতো।

বার্তা পাঠানো অন্য সংস্থাগুলো হলো-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকেল ১৯ দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস, ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিশিপেশন, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে), ফোরাম ফর ফ্রিডম অব এক্সপেশন, ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, আইএফইএক্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইএফজে), ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স মিডিয়া ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা, পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এবং রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীসহ বিএনপির ৭ আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি ১৯ অক্টোবর ঠিক করেছেন আদালত।

বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

২০০৫ সালে বিচারপতি আব্দুল মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মিছিল সমাবেশ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বুধবার এই রায় কঠোরভাবে আপিল বিভাগ আইনজীবীদের মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করায় বিএনপির সাত আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।

এই সাত আইনজীবী নেতা হলেন—জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।

গত ১৫ আগস্টের শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে আসছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এছাড়া ওই দুজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মিছিল সমাবেশও করে আসছে।

জাতীয়

নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না-বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি এমনটা বলে থাকলে তাকে ধরা হবে। এ প্রসঙ্গে আজ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমি তো এ বিষয়ে কিছু জানি না। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কী মিন করে বলেছেন, কোন পরিস্থিতিতে বলেছেন, আমি জানি না।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার্সের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর তাকে ধরার প্রসঙ্গে নিজেকে ডিফেন্ড করবেন কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কি বলেছেন,‌ কি মিন‌ (বোঝাতে) করেছেন সেটা তিনি ভালো জানেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেট ভাঙব এ ধরনের কোনো কথা তো আমি বলিনি। বলেছি যে, আমাদের যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, আমরা চেষ্টা করি, কখনো কখনো আমাদের লোকবল কম থাকার কারণে এমন হয়। আমি জানি না কালকের প্রশ্ন কী ছিল। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী মিন করে বলেছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গতকালের মিটিংয়ের পরে তো আমি উনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলাম। এ বিষয়ে উনার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি।

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, প্রশ্নটা ছিল এ রকম যে, আপনি বলেছিলেন যখন ক্রাইসিস তৈরি হয় তখন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আরও ক্রাইসিস তৈরি হয়। এ কথাটি আপনি বলেছিলেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যে কথাটা আমি বলেছিলাম যে জেল জুলুমের ব্যবস্থা নিলে তারা…আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। হঠাৎ করে জেল দিলে ভোগান্তিটা বাড়বে।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমি বলেছিলাম, প্রয়োজন হলে ডিম আমদানি করব।

কোনোভাবেই তো বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না, আজকে একটা বাড়লে কালকে আরেকটার দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি অনেকটা এগিয়েছে, আমরা সে তুলনায় পিছিয়ে আছি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীলংকা আর আমাদের অবস্থাটা ভিন্ন। শ্রীলংকার বড় যে আয় সেটা হলো পর্যটন খাত। সেটা তারা রিভাইভ করেছে বলে তারা উন্নতি করছে। পাশাপাশি ছোট দেশ, সেজন্য তারা উতরে গেছে। আমাদের তো বিশাল বড় একটা দেশ। আমাদের চেষ্টা চলছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের একটু কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে।’

আপনি বলেছেন, একটা শ্রেণির কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যখন ক্রাইসিস শুরু হয় তখন ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আরও বেশি ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে। সে কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় সংসদেও আপনি এটি বলেছে। এখন তাহলে কি বলছেন সিন্ডিকেট বলতে কোনো কিছু নেই বাজারে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের একটি বিশাল অর্থ বিশাল ব্যাপার। আজ বলেন সিন্ডিকেটের অল্প কিছু, এই যে ডিম দেখেন, গ্রামে গ্রামে লাখ লাখ ডিম উৎপাদন হয়। সেখানে সিন্ডিকেটের কথা বলব কেমন করে। একজন দুজন তো ডিমের ব্যবসা করছে না। এই যে বিশাল জায়গায় দাম বাড়াচ্ছে তারা। সেটা তো বুঝতে পারি। সব জায়গায় তো সিন্ডিকেটের কথা বলি না। কিন্তু সুযোগ যে তারা নেয় না তা নয়। আমরাও চেষ্টা করি যে দামটা হওয়া উচিত, সেটার কথা চিন্তা করি।

এ বিষয়ে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কোনো হয়নি?-এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি উনার সঙ্গেই ছিলাম। হয়তো সময়ের স্বল্পতার কারণে উনি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি। আর অ্যাকচুয়ালি কী কথা উনি আমাকে বলবেন আমি সেটি জানি না। আপনার মুখ থেকে শুনলাম বা কাগজে দেখলাম। একটা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে উনি এ কথাটা বলেছেন।

ভারতের বাজার আর আমাদের বাজারের তারতম্য অনেক– এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ভারতের সঙ্গে সব বিষয়ে তুলনা করা সম্ভব নয়। আজ ভারতে চিনির দাম কম, কারণ তাদের উৎপাদন যেটা হয় চাহিদা মেটানোর পরও রপ্তানি করে। আর আমাদের ৯৯.৯ শতাংশ বাইরে থেকে আনতে হয়। সব জিনিস একরকম হবে তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো কোনো কোনো জিনিস একরকম হয়। পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেল, তখন ভারতে রেশনিং চালু করেছিল। যখন কাঁচা মরিচের দাম বাড়ল তখন ৩৫০ রূপিতে বিক্রি হয়েছে। এই মুহূর্তে দেখেন পেঁয়াজের ওপর ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা তাদের অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে কাজ করে। আমরা বিকল্প সোর্স থেকে আনার চেষ্টা করি। সব কিছু একরকম নয়। তবে হেবিটটা একরকম পাশাপাশি দেশ বলে।

শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি অনেকটা এগিয়েছে, আমরা সে তুলনায় পিছিয়ে আছি– এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা আর আমাদের অবস্থাটা ভিন্ন। শ্রীলঙ্কার বড় যে আয় সেটা হলো পর্যটন খাত। সেটা তারা রিভাইভ করেছে বলে তারা উন্নতি করছে। পাশাপাশি ছোট দেশ, সেজন্য তারা উতরে গেছে। আমাদের তো বিশাল বড় একটা দেশ। আমাদের চেষ্টা চলছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের একটু কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে।

ডিমের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সেদিনও বলেছি, ডিমের কি দাম হওয়া উচিত সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করবে না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দাম নিদিষ্ট করে দিয়েছে, এরকম দাম হওয়া উচিত। আমরা চেষ্টা করছি তারা যে দামটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেটা যেন বাজারে থাকে।

সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, গ্লোবাল অবস্থাটা দেখেন, আপনারা যখন দেখেন ইংল্যান্ডের দোকানেও যখন তিনটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না, সে বিষয়ে রেস্ট্রিকশন দিয়ে দেয়। জার্মানিও দোকানগুলোতে তেলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। আমাদের এখানেও নিশ্চয়ই প্রভাব পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হবে তেমন তো নয়, তবে আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে। গ্লোবাল এই দুরবস্থার মধ্যেও যেন আমরা ঠিক থাকতে পারি।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম প্রশ্ন করেন, সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক ধকল যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে লক্ষ্য করছি, নিত্যপণ্যের ব্যাপারে মৌসুমী ব্যবসা পরিচালিত হয়। মজুত আছে, সরবরাহ আছে, তারপরেও হঠাৎ করে জিনিসের দাম বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, ডাবের ক্ষেত্রে দেখলাম। রাতারাতি পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ১ হাজার টাকা দেখলাম। অনেক পণ্যের ব্যাপারে সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশে ব্যবসা করে মানুষের পকেট থেকে অনেক টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সাইফুল আলম তার প্রশ্নে বলেন, সিন্ডিকেটের কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও বলেন। তারা বলেন, সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যায় না। সেখানে হাত দিতে গেলে বিপদ আছে। আমরা মনে করি, সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী। সরকার দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। এ নিত্যপণ্যের মৌসুমী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে কী না তা প্রধানমন্তীর কাছে জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‌‌বিপদ আছে কে বলেছে, আমি ঠিক জানি না। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

তখন যুগান্তর সম্পাদক বলেন, দুজন মন্ত্রী বলেছেন, সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন? বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরব তো। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউস ব্যবসা করে। যখনই তারা দাম বাড়ায় আমরা আমদানি করি, বিকল্প ব্যবস্থা করি। যাতে তারা বাধ্য হয় দাম কমাতে। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। কাজেই সিন্ডিকেট থাকলে তা ভাঙা যাবে না, এটা কোনো কথা না। কত শক্তিশালী সিন্ডিকেট আমি জানি না, আমি দেখব কী ব্যবস্থা করা যায়।

উল্লেখ গত ১১ আগস্ট রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক ছায়া সংসদে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিমের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে বলেন, ডিমের দাম আমরা ঠিক করতে পারি না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না। আমাদের জানার দরকার-ডিমের সঠিক দামটা কত? সেটা জানতে মন্ত্রণালয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মাঠে নামাতে পারে। তবে আমরা সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিলাম, তারা (সিন্ডিকেট চক্র) বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিল। তখন ভোক্তারা পণ্য পেল না। এজন্য আমাদের সবদিকে খেয়াল রাখতে হয়।

এর আগেও বাণিজ্যমন্ত্রী নিত্যপণ্য নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারা পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দেবে। তখন ভোক্তা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ২৬ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তোপের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ করে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে সংসদে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কোনো কোনো সংসদ সদস্য তো সরাসরি বলেই ফেলেন যে, বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর যোগসাজশ রয়েছে।

এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার— আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটাও তো সইতে আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।