জাতীয়

ঢাকা দ্রুতগতির উড়াল সড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণ কাজের অংশীদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তরে আপাতত স্থিতাবস্থাই থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

দেনা-পাওনা নিয়ে থাই ও চায়না কোম্পানির বিরোধ সিঙ্গাপুরের আরবিট্রেশন সেন্টারে প্রথম মিটিং হওয়া পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আট বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে ইতালিয়ান থাই কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক। চায়না কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

পরে মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘কোর্টকে আমরা বলেছি যে, কাজ তো বন্ধ হয়ে আছে। তখন কোর্ট বললেন, যেদিন আরবিট্রেশন প্রসেসের প্রথম সিটিং হবে সেদিন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা থাকবে। অর্থাৎ আরবিট্রেশনের প্রথম মিটিংয়ের পর আর স্থিতাবস্থা থাকবে না, স্থিতাবস্থা না থাকলে শেয়ার হস্তান্তরে আর বাধা থাকবে না।’

এর আগে গত ১৬ মে এই উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজের অংশীদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পক্ষগুলোকে ৩০ মে পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা তুলে দিয়ে ১২ মে রায় দেন হাইকোর্ট।

জাতীয়

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে লাল-সবুজের পতাকাকে ৩৫ বছর ধরে বিশ্বের বুকে সমুন্নত রেখেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। বিরোধপূর্ণ বিভিন্ন দেশে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী হিসাবে নীল হেলমেটে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তারা শত্রæদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। শান্তির প্রশ্নে তারা উন্নত মমশীর। প্রতিবছরের মতো আজও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।

১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক পাঠানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে যাচ্ছে।

আইএসপিআর সূত্রে জানা গেছে, শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪৩টি দেশ ও স্থানে, ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে শেষ করেছে। বর্তমানে ১৩টি দেশে ৬ হাজার ৯২ জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে, যার মধ্যে রয়েছে ৪৯৩ জন নারী। শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের মোট ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহিদ হয়েছেন। এ বছর ৩ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায় মিশনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ। এরই মধ্যে পুলিশের প্রায় ২১ হাজার ৪৫৩ জন সদস্য বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে নারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন এক হাজার ৮১০ জন। সংঘাত ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা ব্যাপক প্রশংসা ও সুনাম কুড়িয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে ৩৬৪ জন সদস্য কাজ করছেন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ১২০ জন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৩টি দেশে মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সাউথ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা ও লিবিয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের ১২০ জন নারীসহ ৩৬৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ২৪ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন।

পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের পাশে থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে, আবার আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুলিশি সেবা প্রদান, পুলিশের প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের। ওই বছরের ২৯ মে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সিনাই অঞ্চলে প্রথম জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশের সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিকরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। যাদের মধ্যে অনেকে দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে ২৯ মে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

কর্মসূচি: এবারও বাংলাদেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত করা হচ্ছে। সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে এবং ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ-সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

দিবসের মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশে বেতারে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয়

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ রাখেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ না হওয়ায় একরকম অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার যাতে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এদিকে তৃতীয় নির্বাচনে দলীয় সংসদ-সদস্যদের প্রভাব বিস্তার ও নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা রোধ করতে আজও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। দলের কেউ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক কাছে দাবি করে বলেন, প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো ছিল। আশা করছি তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন এবং নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

তিনি আরও বলেন, কৌশলগত কারণে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে। ফলে নির্বাচনটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কাজেই নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিযোগিতা করলেও দলের অভ্যন্তরে বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টির সুযোগ নেই। তবুও নির্বাচনে কেউ যেন বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে না পড়েন-সে বিষয়গুলো দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনও অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। প্রথম দুই ধাপের চেয়ে ভোটার উপস্থিতও বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। এছাড়া কিভাবে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে দলের কেউ যদি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেন এবং নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করেন। অবশ্যই তাকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় নিয়ে আশা হবে।

৮ মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের নির্বাচনের ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল ঘোষণাসহ নানা অনিয়মের প্রশ্ন তোলেন পরাজিত প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগে-পরে অনেক স্থানে সংঘাত-সহিংসতায় ঘটনাও ঘটে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটের মাঠে একই চিত্র দেখা যায়। বৃদ্ধি পায় সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা। কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তারসহ নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে অনেক সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার সারা দেশে ৮৭ উপজেলায় তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে তৃতীয় ধাপের ২২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা করা হচ্ছে।

বিএনপিবিহীন নির্বাচনে পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে আওয়ামী লীগে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৭.৫৭ শতাংশ। এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৬.১০ শতাংশ। দুই ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগ কাজে আসেনি। আজ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

জাতীয়

কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস আবাসনের যে ভবনে বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন, সেই ভবনের সেপটিক ট্যাংকে থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো ফরেনসিক স্টেটের জন্য বুধবারই (২৯ মে) ল্যাবে পাঠানো হবে। এই মাংস ‘মানুষ’র বলে প্রমাণ হলে ডিএনএ টেস্টের জন্য ডাকা হবে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনারের মেয়ে ডরিনকে।

তারপরেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে সেটি এমপি আনারের মরদেহের খণ্ডিত অংশ কি না।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে এমনটাই বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মূল অপরাধীর কাছ থেকে যে যে তথ্য আমরা পেয়েছি; সেসব তথ্য নিয়েই কলকাতায় এসেছিলাম। আর সে কারণে বাংলাদেশ থেকে এসেই আমাদের প্রথম কাজ ছিল সঞ্জীবা গার্ডেনসের বিইউ ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাট পরিদর্শন করা। পরিদর্শনের পরেই আমাদের তদন্তের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, এই ফ্ল্যাটের কারা প্লাম্বিং এবং বিল্ডিংয়ের কাজটা করেছে তা জানতে। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এবং পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের প্রতিটা দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছে।

তারপরই তাদের সহযোগিতায় এদিন সেপটিক ট্যাংক থেকে বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার হয়েছে। এটা ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে। তারপর ডিএনএ টেস্ট করা হবে। এরপরই আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব সেটি এমপি আনারের দেহ কি না।

হারুন আরও বলেছেন, এ বিষয়ে সংসদ সদস্যের মেয়ে ডরিন আমার কাছে ফোনকল করেছিলেন। আমি তাকে বলেছি তৈরি হওয়ার জন্য। আসার জন্য প্রস্তুত হতে বলেছি। হয়তো অল্প ক’দিনের মধ্যেই তিনি চলে আসবে।

ডিবিপ্রধান বলেন, কলকাতায় খুব দ্রুত ফরেনসিক রিপোর্ট বের হয়ে যায়। এরপরই মৃত এমপি আনারের মেয়ে এবং ভাইকেও ডাকা হতে পারে। তারপরই আমরা এ বিষয়ে আপনাদের জানাবো।

সিআইডির তথ্যমতে, এদিন সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের সাথে কিছু চুলও উদ্ধার হয়েছে। এ বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা পুরো বিষয়টা জানি। তবে ফরেনসিক বা ডিএনএর জন্য এক টুকরো মাংস হলেই যথেষ্ট।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা এখনই তল্লাশির কাজ শেষ করছি না। যেমন খাল বা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির কাজ চলছে, সেটা চলতে থাকবে।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে সঞ্জীবা গার্ডেনসের কর্মী পরিচয় দেওয়া সিদ্ধেশ্বর মন্ডল একদলা মাংস উদ্ধারের তথ্য জানান।

ওই সময় আবাসনটিতে স্থানীয় পুলিশ, সফররত বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) টিম ও অন্যান্যরা অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন। ভবনের সেপটিক ট্যাংকে খোঁজ করা হচ্ছিল আনারের দেহাংশ। সেসময় ভবনটি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা সিদ্ধেশ্বর মন্ডলের কাছে পরিস্থিতি জানতে চায় । তিনি বলেন, ট্যাংক থেকে মাংস উদ্ধার হচ্ছে।

সিদ্ধেশ্বর মন্ডল বলেন, আমার ভগ্নীপতি ভূষণ শিকারী ট্যাংক পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিল। উদ্ধার হওয়া মাংস ওজনে তিন-চার কেজির মতো হবে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাহেদুর রহমান।

জাতীয়

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এতে ৮৪ লাখের বেশি মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৩২ লাখ শিশু।

সোমবার (২৭ মে) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের একমাত্র প্রচেষ্টা, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে ইউনিসেফ। এ সময় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রাথমিক সতর্কতামূলক প্রচারণা ও প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে সর্বাত্মক সহায়তা করছে। ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটি ও আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণের জন্য ইউনিসেফ দেশব্যাপী ৩৫টি গুদামে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, জেরিক্যান, মোবাইল টয়লেট, স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) ও পরিবারের জন্য উপযোগী (ফ্যামিলি) কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী মজুত করে রেখেছে।

এছাড়া, আমাদের দুটি সেবাপ্রদানকারী দল (র‍্যাপিড রেসপন্স টিম) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাথমিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউনিসেফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছে। তবে সব খাতে মেয়ে, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমরা সরকার ও অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। পাশাপাশি প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তা ও ত্রাণ দিতে সমন্বিত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করছি। আমাদের অগ্রাধিকার হলো সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের জীবন রক্ষা করা ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা; বিশেষ করে শিশুদের, যারা এই ধরনের দুর্যোগের সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে তাদের সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জাতীয়

’৭০-র ঘূর্ণিঝড় থেকে সিডর-আইলা কিংবা নার্গিস কোনো ঝড়েই এমনটা ঘটেনি। টানা ১২-১৪ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায়নি কোনো ঘূর্ণিঝড়। অথচ রোববার দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা রিমালের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। একটানা ১৪ ঘণ্টা এই ঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে দেশের উপকূলীয় এলাকাজুড়ে। এমনকি সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিভাগীয় শহর বরিশাল অতিক্রম করতেও ঝড়টি সময় নিয়েছে প্রায় ১৩ ঘণ্টা।

আর এই সময়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছিল ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অথচ স্থলভাগে ওঠার পর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ার কথা রিমালের। কিন্তু সম্পূর্ণ উলটো আচরণে পুরো দক্ষিণা ল পার করে উত্তরা লের দিকে চলে যায় এই মাঝারি আকারের ঘূর্ণিঝড়। পুরো বিষয়টিকে বিস্ময়কর আর উদ্বেগের বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশ।

রোববার দুপুরের পর বাংলাদেশে আঘাত হানতে শুরু করে রিমালের অগ্রভাগ। স্থলভাগে উঠে আসার পর পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও বরগুনা অ লে বেশি তাণ্ডব চালায় ঝড়টি। আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, মাঝারি আকারের ঝড় ছিল রিমাল। স্থলভাগে ওঠার সময় এর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০-১৪০ কিলোমিটারের কমবেশি হবে এমনটাই বলেছে তারা।

কলাপাড়া রাডার স্টেশনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর দাায়িত্বশীলদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোটামুটি এই গতিবেগ নিয়েই উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে রিমাল। তবে বিপত্তি বাধে অন্যত্র। সমুদ্র থেকে স্থলভাগে উঠতে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় নেয় ঝড়টি।

স্থানীয় আবহওয়া বিভাগের উচ্চ পর্যবেক্ষক বশির আহম্মেদ নিশ্চিত করেছেন এই তথ্য। কেবল এটাই নয়, রোববার মধ্যরাত ১২টার দিকে বরিশাল নগর অতিক্রম করতে থাকা রিমালের এই তাণ্ডব অব্যাহত থাকে পরদিন সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত। বশির আহম্মেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার মধ্যরাতে আঘাত হানার সময় রিমালকেন্দ্রিক বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় তা বেড়ে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দাঁড়াচ্ছিল। এর ঠিক ১৩ ঘণ্টা পর সোমবার দুপুর ১টার রেকর্ডেও বরিশালে বাতাসের গতিবেগ মেলে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় যা বেড়ে ১১০ কিলোমিটারে পর্যন্ত দাঁড়াচ্ছিল। আবহাওয়া বিভাগের তথ্যেই প্রমাণ মেলে যে, দুপুর ২টার পর বরিশালে কমতে শুরু করে বাতাসের গতি। ৪টা নাগাদ বরিশাল অতিক্রম সম্পন্ন করে রিমাল। অর্থাৎ বরিশাল অতিক্রম করতে ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়েছে মাঝারি ক্ষমতার এই ঝড়।

একই ধরনের তথ্য এসেছে সাগর পারের কলাপাড়া, বরগুনার তালতলী ও উপকূলের অন্য এলাকা থেকে। তালতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজভি উল হক জমাদ্দার বলেন, রোববার বিকাল থেকেই ঝড়ের তাণ্ডব অনুভব করতে শুরু করি আমরা। পরিস্থিতি শান্ত হয় মধ্যরাতের পর। একটানা এত দীর্ঘ সময় ঝড় চলার কোনো স্মৃতি আমার জীবনে নেই। সিডর-আইলার সময় ৩০ থেকে বড়জোর ৪০-৪৫ মিনিট ঝড়ের তাণ্ডব দেখেছি। কিন্তু এবারই এত দীর্ঘ সময়ের ঝড় দেখলাম।

কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার তালুকদার বলেন, আমার বয়স এখন ৭০-এর বেশি। জীবনে অনেক ঝড়-জলোচ্ছ্বাস দেখেছি। কিন্তু এ রকমটা আর কখনো দেখিনি। ১২-১৩ ঘণ্টা ধরে একইভাবে ঝড় হতে পারে এটা এই প্রথম দেখলাম। বরিশাল নগরের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক বলেন, ঝড় শুরু হলে অপেক্ষা করি কখন শেষ হবে। কিন্তু এবারের ঝড় যেন শেষই হচ্ছিল না। কুয়াকাটার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি সাগর পারে। বহু ঝড় দেখেছি। কিন্তু এবারের এই ঝড় আমার কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ১২-১৪ ঘণ্টার ঝড়ে এখানে কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়াও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে অতিক্রমের কারণে এই দুর্বল ঝড়ই বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু গাছপালা, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এটা হওয়ার কথা নয়। কেবল ঝড়ের দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণেই হয়েছে।

বরিশাল আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আঘাত হানার বিষয়টি আমাদেরও ভাবাচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও গবেষণা ছাড়া কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইমেজ অ্যান্ড ইনফরমেশনের পরিচালক হাসান আবিদুর রেজা বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা ধারণা করছি তা হলো, উপকূলের কাছে এসে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে রিমাল। এর চোখ তৈরি হয়েছে স্থলভাগের একেবারে কাছে আসার পর। তাছাড়া রিমালের পুরো ডিরেকশন ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে। এবার কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ কিংবা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে খুব একটা আঘাত করেনি এই ঝড়। পুরো বলয়টাই দেশের দক্ষিণ উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। ঝড়ের দীর্ঘস্থায়িত্বের পেছনে এটা একটা কারণ হতে পারে। স্থলভাগের খুব কাছে এসে পূর্ণমাত্রার শক্তি অর্জন করায় স্থলভাগে ওঠার পরও একদিকে যেমন এর দুর্বল হতে দেরি হয়েছে, তেমনি ঝড়ের পুরোটাই বরিশাল অ লের ওপর দিয়ে যাওয়ায় সময়ও বেশি লেগেছে। উত্তরা ল পর্যন্ত যেতে যেতে ঝড় কিন্তু ঠিকই দুর্বল হয়েছে। আরেকটা হতে পারে যে, স্থলভাগে ওঠার পর গতি কমে যাওয়ায় পটুয়াখালী-বরিশাল অ ল পার হতে বেশি সময় লেগেছে। তবে এসবই প্রাথমিক ধারণা। গবেষণা ছাড়া এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা বা সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়।

জাতীয়

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) মো. আনোয়ারুল আজিম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার আগে ব্ল্যাকমেইল করার পরিকল্পনা ছিল মাস্টারমাইন্ড শাহীনের। আনারের নগ্ন ছবি তোলার উদ্দেশ্য ছিল। সঙ্গে থাকবে কোনো নারী। এ ধরনের ছবি দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করা হবে।

দুদিন এভাবে অর্থ আদায়ের পর তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল। এ উদ্দেশ্যেই এমপি আনারকে সঞ্জীবা ভবনে ডেকে নেওয়া হয়। ফ্ল্যাটে পাওয়া রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা হবে। শেষ পর্যন্ত মরদেহ পাওয়া না গেলেও ডিএনএ রিপোর্ট প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে। এদিকে ডিবির তিন সদস্যের একটি দল ঘটনা তদন্তে আজ ভারত যাচ্ছে।

সঞ্জীবা ভবনের সেই বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ভবনে প্রবেশের পর আনারের পকেটে থাকা ১০ হাজার রুপি কেড়ে নেয় কিলাররা। তারা এমপি আনারকে দিয়েই তার বন্ধু গোপালের কাছে ফোন দিয়ে ৪ লাখ ২০ হাজার রুপি আনায়। তাদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে সন্দেহ হয় আনোয়ারুল আজিম আনারের। সেখানে থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বাধা দেয় খুনিরা। এ সময় তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর একপর্যায়ে এমপি আনারের মুখে চেতনানাশক প্রয়োগ করে ভাড়াটে খুনিরা। এতে জ্ঞান হারান তিনি। এ অবস্থাতেই তার উলঙ্গ ছবি তোলা হয়।

কিলারদের ভাবনায় ছিল, এমপির জ্ঞান ফেরার পর ওইসব ছবি দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইলিং করবে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণেও জ্ঞান না ফেরায় তাকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুমের চিন্তা শুরু করে। প্রথম পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় লাশ গুম করার বিষয়ে।

এর অংশ হিসাবে লাশ টুকরো টুকরো করে হাড়, মাংস এবং চামড়া আলাদা করা হয়। এরপর এমপি আনার হত্যার খবর প্রকাশ হলে শুরু হয় তোলপাড়। সন্ধান শুরু হয় মরদেহের। কিন্তু ২৫ মে পর্যন্ত আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশের সন্ধান মেলেনি। উদ্ধার হয়নি আনারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ডিবি সূত্র জানায়, জ্ঞান না ফেরার কারণে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে এমপি আনারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করতে পারেনি কিলাররা। এরপরও তারা চার লাখ ৩০ হাজার রুপি আদায় করেছে। আনারকে দিয়েই তারা গোপালের কাছে টাকা চেয়ে ফোন করায়। গোপাল তার ম্যানেজারের মাধ্যমে ওই টাকা পাঠান ঘাতকদের কাছে।

সূত্র আরও জানায়, হত্যা মিশন সম্পন্ন করতে গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে একটি ভারতীয় সিম নম্বর ব্যবহার করে মূল সমন্বয়ক আক্তারুজ্জামান শাহীন। এই সিমের সূত্র ধরেই দ্রুত সময়ে সব খুনি শনাক্ত করে দুদেশের পুলিশ।

শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় অনেক তথ্যই যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে গোয়েন্দারা বলেন, শাহীনকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগবে। তারা জানান, সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই বাসা থেকে যে রক্ত সংগ্রহ করছে সেগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এটা হলে লাশ পাওয়া না গেলেও মামলার অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে ডিবির তিন সদস্যের একটি দল আজ রোববার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হবে। ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮টার ফ্লাইটে দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে তদন্ত টিমের।

ডিবির এ টিমের নেতৃত্ব দেবেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মো. আ. আহাদ ও অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহিদুর রহমান। এর আগে ভারতীয় পুলিশের চার সদস্যের একটি টিম বাংলাদেশে এসে কয়েক দফায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আনার। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। বাসাটি খুনিরা ভাড়া নেয় ১১ মাসের জন্য।

এমপি খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত আটজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

তারা হলেন, চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ আমান, তার চাচাতো ভাই তানভীর ভূঁইয়া ও শাহীনের গার্লফ্রেন্ড সেলেস্তি রহমান। তারা ডিবিতে রিমান্ডে আছে। শুক্রবার আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এছাড়া কলকাতা পুলিশের কাছে গ্রেফতার আরেক আসামি জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে ভারতের পুলিশ। অপর চারজন পলাতক রয়েছে। তাদের মধ্যে সিয়াম নেপালে, শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে এবং মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশেই রয়েছে।

ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া পলাতক আসামি মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশেই আছে। এখন তারা চেহারা পরিবর্তন করে বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। এমপি আনারের দুটি মোবাইল ফোন এখনো উদ্ধার হয়নি। ডিবির ধারণা, ফোন দুটি মোস্তাফিজ ও ফয়সালের কাছে রয়েছে।

শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করছি। এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, হত্যাকাণ্ডে দুটি গ্রুপ জড়িত।

একটি মদদদাতা গ্রুপ এবং অপরটি হলো বাস্তবায়ন গ্রুপ। মদদদাতা গ্রুপের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীন একজন মেয়েসহ তিন সদস্যের একটি টিম নিয়ে ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান। এ টিমে ছিল হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন গ্রুপের মূল ব্যক্তি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল ভূঁইয়া (আমানুল্লাহ)। সেখানে কে কি কাজ করবে, কে গাড়ি ভাড়া করবে, কে গাড়িতে থাকবে সবকিছু ঠিক করে গলাকাটা বাহিনীর প্রধান শিমুল ভূঁইয়া।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বাসায় যাওয়ার পর প্ল্যান ছিল প্রথমেই তারা হত্যা করবে না। শুরুতে তাকে হানি ট্রাপের মতোই ভয় দেখাবে, নুড ছবি তুলবে, এই ছবি দিয়ে তাকে দুদিন ব্ল্যাকমেইল করবে। এমপির ভারতের ও বাংলাদেশের বন্ধুদের কাছ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে যত টাকা পারে আদায় করবে। টাকা আদায় শেষ হলে হত্যা করা হবে।

হাতিয়ে নেওয়া ওই টাকার একটি অংশ যারা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করবে তাদের দেবে। কিন্তু সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে এমপির মুখে ক্লোরোফর্ম (চেতনানাশক) দেওয়া হয়। এতে অচেতন হয়ে পড়লে তখন তারা এমপির নুড ছবি তোলে। কিন্তু পরে আর এমপি আনারের জ্ঞান ফেরে না। তখন তাদের প্রথম প্ল্যানটি ভেস্তে যায়। তখন তারা প্ল্যান করে হত্যা করে এমনভাবে গুম করতে হবে, যাতে বোঝা না যায় এই জায়গাতে হত্যা করা হয়েছে।

এজন্য তারা এমপির মোবাইল ফোনগুলো বেনাপোল সীমান্তের কাছে নিয়ে এমপি আনারের বিরোধী পক্ষের লোকজনকে ফোন করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ফোন করে বলবে ‘শেষ’। যাতে যাদের ফোন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পেছনে ঘুরবে।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া আমাদের কাছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আমরা একটি টিম নিয়ে ভারত যাব। সেখানে গ্রেফতার জিহাদের কাছে আমরা বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইব। বাসা বাড়ি সবকিছু মেলাব। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করব।

তিনি বলেন, সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে এর আগেও দুবার হত্যার চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমবার তাদের প্ল্যান ছিল গত নির্বাচনের আগে বাংলাদেশেই হত্যা করবে। দ্বিতীয়বার তাদের প্ল্যান হয় গত জানুয়ারির ১৭-১৮ তারিখে। ওই সময় এমপি আনার ও এই চক্র উভয়ই কলকাতায় ছিল। কিন্তু এমপি হোটেলে থাকায় সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। তৃতীয় ধাপে এসে প্ল্যান বাস্তবায়ন হয়েছে।

কি কারণে এমপিকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, এই হত্যার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। পূর্বশত্রুতা থাকতে পারে, আর্থিক বিষয় থাকতে পারে, রাজনৈতিক বিষয় থাকতে পারে। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নকারীদের ৪-৫ জন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা।

তারা হলেন, জাহিদ, সিয়াম, মোস্তাফিজ, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। শিমুল ভূঁইয়া এর আগে পাঁচ থেকে ছয়টি গলা কেটে মার্ডার করেছে। কি কারণে হত্যা সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হত্যার মূল কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত শেষে বলা যাবে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকার ডিবিপ্রধান বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কিছুই বলা যাবে না। তবে অনেক বিষয় আছে। তদন্ত শেষ করে আমরা আপনাদের জানাতে পারব। আমরা অনেক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না। প্রমাণ পেয়েছি বলেই কলকাতায় হত্যা মামলা হয়েছে। আমাদের দেশে একটি মামলা হয়েছে। কলকাতায় মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। নিশ্চয়ই তারা আলামত পেয়েছে। কলকাতায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে আমরাও যাব।

জাতীয়

বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ পরিণত হয়েছে, যা সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ শক্তিমাত্রার ঝড় হিসাবে রোববার রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান রাত ৯টার দিকে জানান, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাছ ধরা সব নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে বলা হয়েছে। রাতেই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও ভারতের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যাবে। এ সময় বাতাসের গতি ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাবে, যা প্রচণ্ড দমকা ও ঝড়ো হওয়া হিসাবে ১২০ থেকে ১৩০ মিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে। ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। চট্টগ্রাম ও বরিশালে বেশি বৃষ্টিপাত হবে। ফলে চট্টগ্রামে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর মাঝামাঝি যে কোনো জায়গা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। পটুয়াখালী ছাড়াও সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট। বিডব্লিউওটি’র বার্তায় বলা হয়, এ ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ শক্তিমাত্রা হতে পারে ক্যাটাগরি-১।

এদিকে শনিবার সচিবালয়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে শনিবার রাত থেকেই মহাবিপদ (১০ নম্বর) সংকেত দেখানো হতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা বুঝতে পেরেছি ঘূর্ণিঝড়টি আসন্ন। রাত ১২টা-১টা নাগাদ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হতে পারে। এমন একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পূর্বাভাস পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে রোববার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি মূল আঘাত হানবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসাবে এরই মধ্যে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাদের প্রতিটি জেলার গুদামে পর্যাপ্ত শুকনো খাবারসহ যেসব জিনিস দরকার হবে, এগুলো মজুত রেখেছি। অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে যেন ঢাকা থেকে সরবরাহ করা যায়, সেই প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছি। ঘূর্ণিঝড়টিতে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কমবেশি সব জেলা আক্রান্ত হতে পারে। ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে। সেজন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড, রেডক্রস সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এর আগে আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হলে রেমালের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করবে রোববার বেলা ৩টা থেকে। সেক্ষেত্রে রোববার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। রেমাল একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ ‘বালি’।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্তমানে যে অবস্থান দেখাচ্ছে তাতে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের ওপর দিয়েই অতিক্রম করার আশঙ্কা আছে। তবে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলায় রেমালের আঘাত হানার আশঙ্কা বেশি বলে জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

তিনি জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হলে ৩ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এদিকে সাগরে নিম্নচাপ থাকলেও সারা দেশে মৃদু ও মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ শনিবারও অব্যাহত ছিল। রাজধানী ঢাকাসহ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে রেমালের প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় উপকূলীয় অঞ্চলে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিওটিএ।

সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৮৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, ওষুধ ও সুপেয় পানি। প্রস্তুত রয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা। বরগুনায় জোয়ারে নদনদীর পানির উচ্চতা তিন ফুট বেড়েছে। এ জেলায় ৭৬৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। খুলনার কয়রায় ১১৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মলি­ক বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে শক্তি অর্জন করছে এবং শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার মধ্যে যে কোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়, তাহলে রোববার (আজ) বেলা ৩টা থেকেই এর প্রভাব শুরু হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার মধ্যে যে কোনো সময় এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রেমাল একটি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়টি সর্বপ্রথম যেখানে আঘাত হানবে, সেখানের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেমালের গতিবেগ নিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, সিডরের মতো অত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় নয় এটি, সিডরের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল।

এদিকে তাপপ্রবাহ থাকলেও সারা দেশে বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম ও বরিশালে শনিবার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ: চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামসহ দেশের চার সমুদ্রবন্দরের জন্য তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়ার পর লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে লাইটার জাহাজ ব্যবহƒত হয়। দুপুর পর্যন্ত বহির্নোঙর ও জেটিতে পণ্য খালাস স্বাভাবিক ছিল। তবে এরপর বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে পণ্য ওঠানামা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসাবে সকালে বন্দর ভবনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের সভাপতিত্বে এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে যখন যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হবে, এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

মোংলা বন্দরের ব্যাপক প্রস্তুতি, কোস্ট গার্ডের মাইকিং: মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোংলা বন্দরের সভাকক্ষে শনিবার বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস (ইপিজেড), এনএসআই, ডিজিএফআই প্রতিনিধিসহ মোংলা বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি ও জুমের মাধ্যমে অংশ নেন। গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। ৪নং সতর্কতা সংকেতের পর থেকে বন্দরের সব অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। কোস্ট গার্ড মাইকিং করে মানুষজনকে সতর্ক করছে এবং সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলেছে।

জাতীয়

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার তিন সন্দেহভাজনের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারত থেকে আসা চার তদন্তকারী। বৃহস্পতিবার রাতে তারা বেইলি রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ের ওয়ারী বিভাগের কক্ষে সন্দেহভাজন এবং ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে কথা বলেন।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা ডিবি কার্যালয়ে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ওয়ারী বিভাগের কক্ষ থেকে বেরিয়ে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের দপ্তরে যান।

পরে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘ডিবি হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ডিবির কাছে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিল, সেই একই বর্ণনা ভারতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছেও দিয়েছে।

“আর ভারতে গ্রেফতার হওয়া এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশ বা দেহের অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে দেশের পুলিশ।”

তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা ঢাকার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। বৃহস্পতিবারই তারা বাংলাদেশে আসেন।

আনার খুনের ঘটনায় ডিবি হেফাজতে থাকা তিনজন হলেন- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তাদের আটক করে বাংলাদেশের পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, আনার হত্যার হোতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল।

ভারতের কলকাতায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের মাস খানেক আগেই ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় বসে খুনের ছক আঁটা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেছেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে লাশ উদ্ধার করা কঠিন।

তবে কী কারণে আনার হত্যার শিকার হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ধরা পড়া সন্দেহভাজন তিনজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা হারুন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “প্রায় সব কিছু চিহ্নিত হয়েছে। কারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।”

দুই দেশের গোয়েন্দারা একমত হতে পারলে সেই ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে।”

জাতীয়

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তার ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দ থাকবে।

দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলামের পক্ষে দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত গোপালগঞ্জে তার ৮৩টি দলিলের সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, দুদকের পিপি আবেদনে বলেছেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী-জীশান মির্জা ও মেয়েদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তারা বাংলাদেশে নামে-বেনামে অর্জিত সম্পদসমূহ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এছাড়া বেনজীর আহমেদসহ তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান ও মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ রয়েছে। তাই বেনজীর আহমেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামীয় অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের আবেদন করেন।

এরপর বিচারক আদেশে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত পিপির বক্তব্য শুনলাম। অপরাধসংশ্লিষ্টের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দাখিল করা দরখাস্ত ও সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পর্যালোচনা করা হলো। ৮৩টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। তাই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হলো। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এই মর্মে আরও আদেশ প্রদান করা হলো যে, ওই হিসাবগুলোর (৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) ওপর অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ জমা করা যাবে কিন্তু কোনো অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।

প্রসঙ্গত, এর আগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পদ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুসন্ধানের জন্য দুদক গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন সংস্থার উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে দাবি করা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এর পর থেকেই বেশ আলোচনায় পুলিশের সাবেক এই আইজিপি।