জাতীয়

বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও রাজশাহী সদরের সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু।

তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই।

সোমবার বিকালে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপি দীর্ঘসময় থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রয়েছে। আমরা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। দেশের সব রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের মানুষ মনে করেন গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর গণমানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্যই আমরা রাজপথে রয়েছি।

মিনু বলেন, কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আবু সাইদ চাঁদের এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বিদ্বেষ ও ক্ষোভ নেই। দলের পক্ষ থেকে বিশেষ করে রাজশাহীতে বিএনপির সিনিয়র নেতা হিসেবে আবু সাইদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন- সে কারণে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। সরি বলছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে শুক্রবার রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুরে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ওই সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কবরস্থানে’ পাঠানোর হুমকি দেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদ।

ওই দিন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করব ইনশাআল্লাহ।

জাতীয়

কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের বাড়তি দামে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সঙ্গে বেড়েছে আদা-রসুনের দামও। তবে বাজারে এসব পণ্যের কোনো ধরনের সংকট নেই। তবুও মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায়। এছাড়া দ্বিগুণ দাম বেড়ে বাজারে আদার কেজি ৪০০ টাকা। ফলে বাজারে এসব পণ্য কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে।

এদিকে রোজার ঈদের পর থেকেই কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ এই অজুহাতে মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে এই পণ্যের কোনো ধরনের সংকট নেই।

রাজধানীর খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে ৩৫-৪০ টাকা ছিল। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা আগে ৪৫ টাকা ছিল।

নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. সিদ্দিক বলেন, কুরবানির ঈদ ঘিরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে কোনো সংকট নেই। আমরা খুচরা বিক্রেতা বেশি দাম দিয়ে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। তবে ক্রেতার সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগে ২৪০ টাকা ও দুই সপ্তাহ আগে ২২০ টাকা ছিল।

নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. ওমর ফারুক বলেন, ঝড় ও বৃষ্টির কারণে মরিচের খেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কম। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা। যা এক মাস আগেও ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। যা আগে ২৫০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা এক মাস আগে ১২০ টাকা ছিল। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকায়, যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বাজারে পণ্য কিনতে এসে ক্রেতারা জানান, মূলত কুরবানির ঈদ ঘিরে বাজারে সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যারা মূল্য বৃদ্ধি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে আমাদের ক্রেতাদেরই ভোগান্তি হচ্ছে।

জাতীয়

প্রতি বছর ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সমগ্র দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় সাড়ম্বরে পালিত হয়। বছর ঘুরে দিবসটি যখন আমাদের জীবনে ফিরে আসে, তখন স্মৃতির পাতায় অনেক কথাই ভেসে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ থেকে আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের গৌরবময় সুনাম ও অর্জনের এই বীজ রোপিত হয়েছিল সেদিন, যেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা-১৯৮১-এর ১৭ মে ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে-স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এ বছর শেখ হাসিনার ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বার্ষিকী।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলেছিল স্বৈরশাসকরা। সংবিধান স্থগিত করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। রাজনীতিকদের বেচাকেনার সামগ্রীতে পরিণত করে রাষ্ট্রীয় মদতে দলভাঙার নীতি অবলম্বন করা হয়েছিল। জেনারেল জিয়া সদম্ভে ঘোষণা করেছিল— ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম’ এবং ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ানস।’ জেল, জুলুম, হুলিয়া, গুম-খুন ইত্যাদি ছিল নিত্যকার ঘটনা। প্রতিদিন সান্ধ্য আইন জারি ছিল। চারদিকে গড়ে তোলা হয়েছিল এক সর্বব্যাপী ভয়ের সংস্কৃতি। ’৭৬-এর ১ আগস্ট স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া সীমিত পরিসরে ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ করার অনুমতি দেয়।

আমরা যারা জেলে ছিলাম এবং যারা জেলের বাইরে ছিলেন তারা দলকে সংগঠিত করেন। শ্রদ্ধেয় নেতা মহিউদ্দীন আহমদকে সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্যে ’৭৭-এর ৩ ও ৪ এপ্রিল মতিঝিলের হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমবেত হয়। মতবিরোধ নিরসন এবং দলীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার্থে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

এক বছর পর ’৭৮-এর ৩ থেকে ৫ মার্চ ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শ্রদ্ধাভাজন নেতা আবদুল মালেক উকিল সভাপতি, শ্রদ্ধেয় নেতা আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক ও কারান্তরালে থাকাবস্থায়ই আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। সেই দুর্দিনে দলকে সংগঠিত করতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। দুঃসময়ের সেই দিনগুলোতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

’৮১-এর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনে সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা জীবনপণ চেষ্টা করে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে আওয়ামী লীগের ঐক্য ধরে রেখে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর দলের নেতৃত্বভার অর্পণ করেছিলাম। কাউন্সিলে অনেক আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ও দলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আমরা সাব্যস্ত করি মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্বপ্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের পতাকা তারই হাতে তুলে দেবো।

মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। দলের শীর্ষ পদে তাকে নির্বাচিত করে আমরা ভারতের রাজধানী দিল্লি গিয়েছিলাম এবং তার সঙ্গে পরামর্শ করে আগমন দিনটি নির্ধারণ করেছিলাম। যেদিন তিনি ফিরে এলেন সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেছিল শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকেই তারা ফিরে পেয়েছে। সম্মেলনের সমাপ্তি দিবসে সবার সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যার নাম প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। সেদিনের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের দৃশ্য চোখের সামনে ছবির মতো ভেসে ওঠে। আজ যা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। সেদিন মনে হয়েছে, আমরা আবার বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাছে, যে রক্তের কাছে আমরা ঋণী, যে ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না, সেই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে ঋণের বোঝা কিছুটা হয়তো হালকা করতে পেরেছি। সভানেত্রী হিসেবে তার নাম শুনে নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং বিপুল করতালির মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে।

শেখ হাসিনা সভানেত্রী, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবদুর রাজ্জাক এবং আমি পুনর্নির্বাচিত হই। কাউন্সিল অধিবেশনের সার্বিক সাফল্য কামনা করে তিনি একটি বার্তা প্রেরণ করে বলেছিলেন— ‘আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে যান।’ বার্তাটি সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক সম্মেলনে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। দলের শীর্ষ পদ গ্রহণে তার সম্মতিসূচক মনোভাব সম্পর্কে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে আমি বলেছিলাম— ‘আমরা সবাই একটি সুসংবাদের অপেক্ষায় আছি।’ শেখ হাসিনা তার বার্তায় সর্বপ্রকার দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে ‘আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির’ মাধ্যমে কাউন্সিলর ও নেতাদের বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচি সোনার বাংলা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গণবিরোধী স্বৈরশাসকের ভিত্ কেঁপে উঠেছিল। ’৮১-এর ১৭ মে দেশে ফিরে আসার আগে জেনারেল জিয়ার নির্দেশে ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম আমরা।
১৭ মে এক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বৃষ্টিমুখর দিনে শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। যেদিন তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, সেদিন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না, ছিল সর্বব্যাপী সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ। সামরিক স্বৈরশাসনের অন্ধকারে নিমজ্জিত স্বদেশে তিনি হয়ে ওঠেন আলোকবর্তিকা, তথা অন্ধকারের অমানিশা দূর করে আলোর পথযাত্রী।

ওই দিন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ বোয়িং বিমানে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে সেই সময়ের ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বিকাল সাড়ে ৪টায় এসে পৌঁছেন। সারা দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ তাকে সংবর্ধনা জানাতে সেদিন বিমানবন্দরে সমবেত হন। ওই সময় লাখো জনতা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিল— ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম’; ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা  নেব’; ‘ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’; ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না’; ‘আদর্শের মৃত্যু নাই, হত্যাকারীর রেহাই নাই’। বিমান বন্দরে অবতরণের পর লাখ লাখ লোক তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছিল। সেদিন শুধু মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুই যেন শেখ হাসিনার বেশে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। আমরা যখন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যাই রাস্তার দু’পাশে লাখ লাখ লোক। এমন দৃশ্য যা বর্ণনাতীত। মঞ্চে উঠে তিনি শুধু ক্রন্দন করলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হৃদয়ের আবেগ ঢেলে সেদিন বলেছিলেন— ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি।

শুধু নেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাই, আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। স্বামী-সংসার-ছেলে রেখে আপনাদের কাছে এসেছি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি।

বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই। স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালী জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতা-বিরোধীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ওদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।

ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করি। আপনাদের ভালোবাসার আশা নিয়ে আমি আগামী দিনের সংগ্রাম শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা না পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের ভার সরকারের  কাছে নয়, আমি আপনাদের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একটানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (তখন একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল) হিসেবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দলের জন্য ১৮ বছর  কাছে থেকে কাজ করেছি। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তাকে কাছ থেকে দেখেছি। আমার বারবার মনে হয়েছে যখন তার কাছে বসেছি, ক্যাবিনেট মিটিং বা সভা-সফর করেছি, তখন স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধুর কথা বারবার ভেসে উঠেছে। প্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দলকে সংগঠিত করেছেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬-এ তিনি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন।

আমি সেই মন্ত্রিসভার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম। কাছে থেকে দেখেছি দৃঢ়তা ও সক্ষমতা নিয়ে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ‘ইনডেমনিটি বিল’ বাতিল করে সংবিধানকে কলঙ্কমুক্ত করে জাতির জনকের হত্যার বিচারকার্য শুরু করেছিলেন। ২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই বিচার বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৮-এর নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে তিনি শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কাজই সম্পন্ন করেননি, মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ক্ষেত্র গড়ে দিয়েছেন এবং যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমাণিত হলে আদালতের রায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ১৪ বছরের বেশি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত।

২০১৩তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়, আর ২০১৪তে সরকার গঠনের পর বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়ে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। জাতির জনককে আমরা ১৫ আগস্ট হারিয়েছি। নিষ্পাপ শিশু রাসেলকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে। জাতির জনকের দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যদি সেদিন দেশে থাকতেন, খুনিচক্র তাদেরও হত্যা করত। সেদিন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে শহিদের রক্তে গড়া আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়ে আমরা সঠিক কাজটিই করেছিলাম। ইতিহাস সৃষ্টি করে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। রক্তেভেজা সেই পতাকা হাতে তুলে নিয়ে দল ও দেশকে তিনি প্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নতি, জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার হার ও খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, সফলভাবে করোনা অতিমারী মোকাবিলা এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের যাবতীয় কৃতিত্বের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করেছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এত উন্নয়নমূলক কাজসম্পন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে যা এই ক্ষুদ্র লেখায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
২০০৮-এর নির্বাচনে ‘রূপকল্প’ তথা ‘ভিশন-২০২১’ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। রূপকল্পে ঘোষিত হয়েছিল বাংলাদেশ হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘মধ্যম আয়ের দেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন নয় বাস্তব।

ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। লকডাউনের কারণে আমাদের খাদ্যোৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য তিনি বারবার নির্দেশনা দিয়ে বলছেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।’ সুখের বিষয় বিগত বছরগুলোতে সারা দেশে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। যার সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে। বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন রকম বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে দেশের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। তবে আমি মনে করি এটি সাময়িক। ধৈর্যসহকারে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব। বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে কী আছে এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে সুধী সমাজে আলোচনা হচ্ছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।” “আমরা আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।” সেই সঙ্গে তিনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর রূপরেখা ঘোষণা করে এর চারটি স্তম্ভের কথা বলেছেন, যেমন, (১) স্মার্ট সিটিজেন; (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট; (৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট সোসাইটি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সফল বাস্তবায়নের পথ ধরেই এবারের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেছেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’ এসব কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে ‘স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।’ এ জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি, এ চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে উপরোক্ত  চারটি ভিত্তির কথা পুনরুল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের জনশক্তিকে স্মার্ট হতে হবে, প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখতে হবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে।” তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সবকিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-কৃষিসহ সবকিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করতে সক্ষম হব।”

আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্দীপনামূলক যে দৃঢপ্রতিজ্ঞ মনোভাব নিয়ে উদয়াস্ত কাজ করছেন, তার নির্দেশিত নির্দেশমালা যদি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি, তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর কর্মসূচীও আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পরবো। আসলে তিনি তার পিতার মতোই অন্তর থেকে যা বিশ্বাস করেন, তাই বলেন এবং বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন; কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে চলেছেন।  সেদিন  বেশি দূরে নয়, যেদিন স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। আমরা সেই পথেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছি। ইনশাআল্লাহ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নপূরণ হবে। এটাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে আমাদের প্রত্যাশা।

তোফায়েল আহমেদ : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
[email protected]

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে হামলা ও ভাঙচুরর ঘটনায় বিএনপিপন্থি ১৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় ২৫ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

বুধবার রাতে বারের সহকারী সুপারিন্টেডেন্ট মো. রফিকউল্লাহ বাদী হয়ে শাহাবাগ থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় আসামি হিসেবে যাদের ‍নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, বারের এডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. মহসিন রশিদ, এডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রমুখ।

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে এ ঘটনা ঘটছে। দু’পক্ষই বলছে, তাদের কয়েকজন আইনজীবী সহকর্মী আহত হয়েছেন।

জাতীয়

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি ও এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনাসহ আট প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, টিসিবির জন্য ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি সংগ্রহের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্মার্ট মেট্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর (স্থানীয় এজেন্ট: মার্ক লাইন এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা) চিনি সরবরাহ করবে।

পাশাপাশি ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এসব তেল সরবরাহ করবে এইচএইচ এন্টারপ্রাইজ।

১৪৮ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকার সয়াবিন তেল এবং ৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার চিনি কেনা হবে। প্রতি কেজি চিনি ৮২ টাকা ৯৪ পয়সা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৪৬ টাকা ১০ পয়সা দামে কেনা হচ্ছে।

জাতীয়

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রতীক পেয়েই ছেলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে মা জায়েদা খাতুন আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় তাজউদ্দীন অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তিনি রিটার্নিং অফিসারের হাত থেকে তার পছন্দের প্রতীক বরাদ্দের (টেবিল ঘড়ি) চিঠি বুঝে নেন। পরে তিনি বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীদের মুখোমুখি হন।

এ সময় তিনি বলেন, নগরবাসীর কাছে মেয়র পদে (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে নিজের জন্য একটি ভোট চাচ্ছি এবং সবার সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি একটি সুষ্ঠু ভোট উপহার দেওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় তার সমর্থনে অডিটোরিয়ামের বাহিরে শত শত কর্মী-সমর্থক ঘড়ি ঘড়ি বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তিনি ওখানে কিছুক্ষণ থেকে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ঠেলে তার নিজ বাড়ি পার্শ্ববর্তী কানাইয়া গ্রামের দিকে চলে যান।

এ সময় সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গেই ছিলেন এবং তিনি সবাইকে তার হয়ে মায়ের জন্য (টেবিল ঘড়ি) প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে গত তিন বছরে নগরবাসীর জন্য তার নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন এবং কতিপয় ব্যক্তির দ্বারা তিনি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও হয়রানির শিকার বলে দাবি করেন।

মঙ্গলবার নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সকাল ৯টায় প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঝে তাদের পছন্দের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। মেয়র পদে দলীয় প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীক থেকে তাদের পছন্দের প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তবে একাধিক প্রার্থীর একই প্রতীক দাবি থাকলে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের দলীয় প্রতীক নৌকা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন দলীয় প্রতীক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন (হাতপাখা), জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (রনি সরকার) বরাদ্দ পেয়েছেন (হাতি) প্রতীক।

মেয়র পদে আটজনসহ ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত আসনে মোট ৩২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এতে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৭৭ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ২৩৯ জন।

জাতীয়

বিতর্কিত দুই ব্যক্তিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাজিয়ে পুলিশ প্রটোকল দেওয়ার ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদককে অবশেষে সুনামগঞ্জ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।

পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন মঙ্গলবার এক আদেশে তাকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করেন।

পুলিশ সদর দপ্তর এ বিষয়ে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদদককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জনস্বার্থে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। উল্লেখিত কর্মকর্তা সংযুক্ত কর্মস্থলে যোগদানে নিমিত্ত ২ মে (মঙ্গলবার) বর্তমান কর্মস্থলের দয়িত্বভার অর্পন করবেন। অন্যথায় ৩ মে (বুধবার) থেকে তাৎক্ষনিকভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হিসেবে গণ্য হবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জে দায়িত্বরত পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যা তুলে ধরা হয়েছে তার চেয়েও বেশি তথ্যউপাত্ত ছিল তদন্ত প্রতিবেদনে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয় বেশ কয়েকদিন আগে।

এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল সিলেট সফরে আসেন পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। এ সময় সাংবাদিকরা রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চান।

এ সময় আইজিপি নিয়মানুযায়ী রিপন কুমার মোদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন।

এ সময় তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাকে শস্তির আওতায় আনা হবে।

আইজিপি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এমন অপকর্ম করে ছাড় পাওয়া যাবে না। শুধু রিপন কুমার মোদক নয় পুলিশে অপকর্ম করে কেউই ছাড় পাবে না। কেউ অন্যায় করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘পুলিশ প্রটোকল দিলেন অ্যাডিশনাল এসপি, ‘সোর্সকে সাজালেন বিশেষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপরই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে কমিটি করে সিলেটের তৎকালীন রেঞ্জ ডিআইজি।

তদন্ত কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার সময়ই র‌্যাবের অভিযানে তার দুই বন্ধু ভুয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুছ ওরফে ডলার নাহিদ ও বিজন রায়কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ডলার নাহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে ঘটনা আদ্যপান্ত তুলে ধরেন। এ সময় রিপন কুমার মোদকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করা হয়।

জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ দাবি তুলে ধরেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সব প্রকার মানবাধিকারের চালিকা শক্তি’ শীর্ষক সভায় আয়োজন করে সম্পাদক পরিষদ।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-১. স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করা। আইনগুলোর মধ্যে যেসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করতে পারে, সেগুলো আইন থেকে বাদ দেওয়া। ২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। আর যদি তা বাতিলে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে এমন একটি ধারা যুক্ত করতে হবে, যেখানে বলা থাকবে, এই আইন গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকতার কারণে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার ও গ্রেফতার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে হবে। ৩. যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একেবারেই মুছে ফেলে। ৪. সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য আইন হতে পারে, যা সংবিধানের চেতনার মধ্যে রয়েছে।

সম্মানিত অতিথি হিসাবে সভায় বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে এটিকে গণমাধ্যমবান্ধব করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিধান করারও আহ্বান জানান।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। যতক্ষণ না এটি বন্ধ করতে পারছেন, সংশোধন না করতে পারছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মামলা দায়ের করবেন। অভিযোগ এলেই গ্রেফতার করে চালান দিয়ে কারাগারে পাঠাতে পারবেন না। জামিন পাওয়ার অধিকার থাকতে হবে। সবাই বলেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা দরকার। অবশ্যই পর্যালোচনা দরকার এবং সংশোধন দরকার। এটি ঝুলিয়ে রাখা ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলব অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর কথা বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে কোথায় কোথায় সংশোধন করতে সেগুলো সংশোধন করে দিন। সাইবার জগতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের আদালত ও আইনকানুন দরকার, সেটিও ঠিক করে বলে দিন। সুতরাং সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিধানও করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার করে এটিকে গণমাধ্যমবান্ধব করেন।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক আরও বলেন, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো দরকষাকষি চলতে পারে না। আবার ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও কোনো রকমের দরকষাকষি চলতে পারে না। দুটোই থাকতে হবে। ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তার বিধানও করতে হবে, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। একই সঙ্গে বাকস্বাধীনতাও নিরাপদ করতে হবে। এই দুটো নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতে সাইবার জগতে ভূমিকা রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকে সাইবার জগতের সঙ্গে খাপ খাওয়া হবে।

দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, সাংবাদিকদের অবস্থা এখন করুণ। তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে; একটা আইন করে, আরেকটা সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে। আমাদের মধ্যে যে বিভাজন এটা দূর হবে কিনা সন্দেহ আছে। আমরা দেখেছি, অনেক ইস্যুতে সাংবাদিকদের একপক্ষ দাঁড়ায়, আরেকপক্ষ কিছুই বলে না।

নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ভিন্নমত প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না, দেবেও না। যে আইনের জন্য সবাইকে ভুগতে হচ্ছে, অনুনয় করে লাভ হবে না। সরকারের মন্ত্রী, এমপি পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে সংশোধন করা হবে, কিন্তু হয়নি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে জনগণকে সমন্বয় করে আন্দোলন করতে হবে।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশে মতপ্রকাশের যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে। বুঝে নেন, ওইভাবে বলতে পারছি না। সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে বলা আছে, কিন্তু কীভাবে ক্ষমতাসীনরা বিরক্ত হবেন না, সেটার ব্যাখ্যা পরিষ্কার করা নেই। যে কারও বিরুদ্ধে যে কোনো সময় ডিএসইতে মামলা হতে পারে।

ডেইলি স্টার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন-ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন প্রমুখ। সভায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

মো. আবদুল হামিদ। সাফল্য আর সফলতার স্বর্ণশিখরে অধিষ্ঠিত হয়েও বললেন, এখনো কিছু বিষয় তাকে কষ্ট দেয়। তারও যন্ত্রণা আছে। যন্ত্রণা এই সংসদে রাজনীতিবিদদের অংশীদারত্ব নিয়ে। পোড় খাওয়া, তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদদের সংখ্যা এখন হাতে গোনা যায়; বাকিরা হয় অবসরপ্রাপ্ত কিংবা সাবেক। এখন সেনাবাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা চাকরিজীবন শেষ করেই রাজনীতিতে চলে আসেন। ব্যবসায়ীরা আসেন, না হয় এসে ব্যবসায়ী বনে যান। টিকিট নেন, এমপি, মন্ত্রী হয়ে যান। এটা তাকে যন্ত্রণা দেয়। যখন সংসদের দিকে তাকান তখন হতাশার কালো মেঘে অহংকারের আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ।

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সেই দিন ছিল ২১ এপ্রিল। তিন সাংবাদিকের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা সময় কাটে এই নন্দিত সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষটির। তখন তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। ৪০ একর বিস্তৃত বিশাল বঙ্গভবনের বাসিন্দা। এই সাক্ষাৎকার যখন ছাপা হলো, তখন তিনি বঙ্গভবনে আর নেই। তিনি বসবাস করছেন নিকুঞ্জ-১ এ মাত্র সাড়ে তিন কাঠার প্লটে নিজ বাড়িতে। আর বঙ্গভবনে তখন মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। ২১ এপ্রিল তিনি ছিলেন গুলশানে নিজস্ব ফ্ল্যাটে। এখন বঙ্গভবনের বাসিন্দা।

আবদুল হামিদ তার উত্তরসূরিকে বঙ্গভবনে অধিষ্ঠিত করে ফিরে গেলেন। একই সঙ্গে রেখে গেলেন তার মানুষের আকাক্সক্ষার অভিপ্রায়কে, যেন মানুষ বাঁচে-বাড়ে সম্প্রীতির অচ্ছেদ্য বন্ধনে, সর্বজনীন মানবিক আত্মীয়তায়।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গানে আসা-যাওয়ার পথের ধারের পঙ্ক্তিতে ব্যক্ত করেছিলেন-
“আসা-যাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন।/ যাবার বেলায় দেব কারে বুকের কাছে বাজল যে বীন/ সুরগুলি তার নানাভাগে/ রেখে যাবো পুষ্পরাগে,/ মীড়গুলি তার মেঘের রেখায় স্বর্ণলেখায় করব বিলীন/… … … মনের কথার টুকরো আমার কুড়িয়ে পাবে কোন উদাসীন।”

এভাবেই প্রজন্ম পরম্পরায় আমাদের গড়তে হবে সৌহার্দের সেতু, সম্প্রীতির আলিঙ্গনে ধারণ করতে হবে ‘মত ও পথ’র পার্থক্যকে।

সোমবার রাষ্ট্রপতির বাসভবনে ‘প্রবীণের বিদায়’ এবং ‘নবীনের আগমন’র আনুষ্ঠানিকতায়, দেশের মানুষের অভিষেক মূর্ত থাক-রবি ঠাকুরের ভাষায়-‘সুরগুলি তার নানাভাগে, রেখে যাবো পুষ্পরাগে’/ মীড়গুলি তার মেঘের রেখায়…’/… …’ আমাদের উত্তর পুরুষেরা যেন সেই স্বর্ণ লেখার কথাগুলো খুঁজে পায় দেশের আপামর মানুষের প্রতি মমতায়, ভালোবাসায়।

এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আবদুল হামিদ। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি ছাত্রলীগে জড়িত হন। ছাত্রজীবনেই কয়েক দফা কারাবরণ করেন। ১৯৫৯ সালে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। আইন পেশায় নিয়োজিত হয়ে দুদফা বারের সভাপতি নির্বাচিত হন। ছয়বারের এমপি আবদুল হামিদ। জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, সংসদের উপনেতা, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি পদে ১০ বছর ৪১ দিন সফলতা, দক্ষতা, বিশ্বাস, আস্থা ও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত আব্দুল হামিদ এক সফল মানুষের নাম হয়ে উঠেছে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন। যে বিদায় অবিস্মরণীয় ইতিহাস হয়ে থাকবে।

১০ বছরে কি কোনো সংকট, সমস্যা মোকাবিলা করেছেন, বিব্রত করেছে কোনো ঘটনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল হামিদ বলেন, রাষ্ট্রপতি সময়কালে কঠিন কোনো সংকট বা সমস্যা সামনে আসেনি এটা ঠিক নয়। জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়নি, তা-ও বলা যাবে না। দু-চারটা ঘটনা যে মনের বিরুদ্ধে হয়নি, এ কথাটা কি করে বলি। চিফ জাস্টিস সিনহার বিষয়টি যেভাবে কৌশলে সুরাহা করেছি তাতে জাস্টিস সিনহাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

আবদুল হামিদ সুস্থ রাজনীতির চর্চা হোক, এটা চান। তিনি মনে করেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু রাজনীতি নয়, রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষকে ভালোবাসার জন্য, মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। মানুষই তার মূল শক্তি। মানুষ ধনী কি গরিব, শিক্ষিত কি অশিক্ষিত, সেটা বড় কথা নয়। মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে কৃত্রিমতা, মেকি কিছু থাকবে না, এটাই সত্য-তিনি বিশ্বাস করেছেন মানুষকে সত্যিকার ভালোবাসলে ভালোবাসা পাবেনই। তিনি তা পেয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল হামিদ বলেন, ক্ষমতায় যাব, এটা বড় কথা নয়। ভালো মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করব, এটাই বড় কথা। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় যাব, না দিলে যাব না-এই সত্য মেনে নিলেই বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেছি, তার প্রশংসা করেছি। দল পরিবর্তন করে যদি জিয়াউর রহমান, এরশাদের প্রশংসা করি-তাদের রাজনীতি বা অন্য কোনো রাজনীতিতে যুক্ত হই, তাদের প্রশংসা করি তবে মানুষ হিসাবে জনগণ আমাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে। অবশ্য এখন নীতি পরিবর্তন করা মানুষের অভাব নেই।

বিদেশি কূটনীতিক আর বিদেশের কাছে ধরনা দেওয়ার রাজনীতির মূল্যায়ন করতে বললে আবদুল হামিদ বলেন, এটা রাজনীতির দেউলিয়াপনার সর্বোচ্চ প্রকাশ। ভাবতে অবাক লাগে এখন আমরা কোন স্তরে চলে যাচ্ছি। কই, তাদের (বিদেশি/কূটনীতিক) দেশের কোনো সংকট-সমস্যা নিরসনে তো তারা আমাদের ডাকে না। নাক গলানোর সুযোগ দেয় না। কাজেই তাদের এ ধরনের তৎপরতা দেশের মর্যাদা, সম্মানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে।

অবসর জীবনে কাজ কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কখনো রাষ্ট্রপতি হতে চাইনি। চেয়েছি মানুষের মধ্যে থাকতে। এমনকি জাতীয় রাজনীতিতেও যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিশোরগঞ্জে মানুষের রাজনীতিই আমার কাছে মুখ্য ছিল। এখনো আছে। সেটাই আমার চারণভূমি। চেষ্টা করেছি কিশোরগঞ্জের হাওড়ের উন্নয়ন করতে। কিছু হয়েছে, কিছু হয়নি। কিশোরগঞ্জের উন্নয়নের জন্য, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে আমার আরও অনেক চাওয়ার আছে, পাওয়ার আছে। অবসর জীবনে লেখালেখি করবেন; ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও হাওড়ে সময় কাটাবেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আমরা দেখেছি তিনি বারবার তার হাওড়ের মানুষের কাছে ছুটে গেছেন। বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন, রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার প্রটোকলে ‘বন্দিত্ব’র কথা। কথাগুলো তিনি অকপটে ব্যক্ত করেছেন-তাতে তার মানুষরা উপলব্ধি করেছেন তিনি তাদেরই সন্তান রয়ে গেছেন। যাকে তারা ‘ভাটির শার্দুল’ অভিধা দিয়েছেন, সেই শার্দুল কেমন আপাদমস্তক ভাটির সন্তান রয়ে গেছেন তার একটি ছোট্ট উদাহরণ আমি উল্লেখ করি-তিনি যখন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করতেন তখন সংসদের সুদীর্ঘ অধিবেশন শেষে তাকে বহনকারী গাড়িতে উঠে চালককে বলতেন, ‘ভাসাও!’ যেন হাওড়ে নাও ভাসাবার আদেশ। তার এই ‘ভাসাও’ শব্দটি শুনে যে কেউ বিস্মিত হবেন কিন্তু তার চালক বুঝতেন এই শব্দের অর্থ। দেশের সবচেয়ে সুরম্য অট্টালিকা সংসদ ভবনের ইট-পাথরের রাজ্য থেকে চালক ‘ভাসিয়ে’ নিতেন তার বাহনটিকে। একই সঙ্গে এ মানুষটি নগরে-হাওড়ে একাকার ছিলেন তার অস্তিত্বে। এখানেই একজন প্রকৃত জননেতার সার্থকতা। তিনি গণমানুষের আর গণমানুষ তার বুকের গভীরে। এরকম মানুষের কথাই লিখেছিলেন কবি শামসুর রাহমান-“ধন্য সেই পুরুষ, নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে/সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে;/ ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে/প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মত উপত্যকায়;/ ধন্য সেই পুরুষ, হৈমন্তিক বিল থেকে যে উঠে আসে/রঙ-বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে।/ধন্য সেই পুরুষ কাহাতের পর মই-দেয়া খেত থেকে যে ছুটে আসে/ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।”
[ধন্য সেই পুরুষ। শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা, পৃ. ৩১৮]

কবি ‘উঠে আসা’ পুরুষের কথা লিখে তাকে ‘ধন্য’ বলেছিলেন। কিন্তু ‘ধন্য’ সেই পুরুষ, যখন তার মানুষের কাছে, প্রকৃতির কাছেই ফিরে যান তখন তা আরও বেশি তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে।

সামনে নির্বাচন। রাজনীতিতে কোনো সংকট বা সমস্যা দেখেন কি-এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় সংসদে দেওয়া শেষ ভাষণে আমার কিছু কথা বলেছি। বলেছি, যে কোনো সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে। তবে সে আলোচনা হতে হবে আন্তরিক, খোলা মনে। আন্তরিক হলে সমস্যার সমাধান হবে না-এটা বিশ্বাস করি না। সরকার সত্যিকার অর্থে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন দিতে চায়, বিরোধী দলও নির্বাচনে অংশ নেবে-মূল লক্ষ্যই হবে এটা। তবেই আলোচনা সফল হবে।

আবদুল হামিদ বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন তিনি। অবসরে আর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়াবেন না। মানুষ তাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, তাদের কোনোভাবেই অসম্মান করবেন না আর কোনো পদ বা পদবি গ্রহণ করে। দেশবাসীর প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি আমৃত্যু সে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ থাকতে চান।

জাতীয়

যানজটবিহীন মহাসড়ক আর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশ কম ভাড়ায় স্বস্তিতেই ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে তারা এবার রাজধানীতে ফিরে আসছেন।

মঙ্গলবার বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে ঈদ শেষে রাজধানীতে ফেরা যাত্রীদের চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল না। সড়ক-মহাসড়কে ছিল না যানজট। সময় মতো ছেড়ে এসেছে ট্রেন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি শেষে পথের বিড়ম্বনা ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে পেরে সবাই খুব খুশি।

এদিকে রাজধানী এখনো অনেকটাই ফাঁকা। ব্যস্ত নগরীর চিরচেনা যানজট নেই। সোমবার সরকারি অফিস খুললেও গতকালও বিভিন্ন অফিসে ছিল ঈদের আমেজ।

পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী শনিবার থেকে বেশির ভাগ শিল্প-কারখানা খুলবে। তাই বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পরিবহণে যাত্রীর চাপ বাড়বে। এর আগ পর্যন্ত যাত্রী চাপ কম থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তারা আরও জানান, যাত্রী কম হওয়ায় এখনো অনেক গাড়ি আসন পূর্ণ না করেই ঢাকায় ফিরছে।

কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার ঢাকায় আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ট্রাভেলসের স্লিপার বাসে ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে মাত্র ৬ ঘণ্টা। ৩০ আসনের বাসে ২৩ জন যাত্রী ছিলেন। বাকি সাতটি সিট ফাঁকা ছিল। ভাড়া নিয়েছে ১৩০০ টাকা। তিনি বলেন, এবার বাড়তি ভাড়া ও সড়কে যানজট ছিল না। তাই বেশ আরামেই ঢাকায় এসেছি।

প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা হাসিবুল হাসান। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে আড়াই ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছি। পথে কোথাও যানজট ছিল না। রাস্তায় গাড়ির চাপও কম ছিল। এত অল্প সময়ে ঢাকায় আসতে পারব- এটা কল্পনাতেও ছিল না।

সড়ক পথের মতো স্বস্তিতে রাজধানীতে ফিরছেন নৌপথের যাত্রীরাও। ঝালকাঠি থেকে ঢাকা আসা মসিউর রহমান খান বলেন, এবার সুন্দরবন-১২ লঞ্চে ঢাকা এসেছি। সাধারণত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লঞ্চে যেমন যাত্রীর চাপ থাকে, গতকালও তেমন চাপ ছিল। ডাবল বেডের কেবিনের ভাড়া নিয়েছে ২৫০০ টাকা। তিনি বলেন, যাত্রী চাপ না থাকা ও ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় হয়রানি ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে পেরেছি।

অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনে কমলাপুর আসা যাত্রী সাইদুল ইসলাম জানান, এ বছর ঈদে ট্রেনে যাতায়াত করতে কোনো ঝামেলা হয়নি। অনলাইনে ঘরে বসেই টিকিট কাটতে পেরেছি। এটা ছিল বড় স্বস্তির বিষয়। এরপর স্টেশনেও বাড়তি যাত্রীর চাপ কম ছিল। তাই ঈদের আগে স্বস্তিতেই বাড়ি যেতে পেরেছি। আর ফিরতেও কোনো সমস্যা হয়নি।
ঢাকা রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির জানান, সোমবার অফিস-আদালত শুরু হওয়ায় কর্মজীবীরা রোববার থেকেই ঢাকা আসতে শুরু করেছেন। এর বাইরেও যাদের এক বা দু’দিন অতিরিক্ত ছুটি নেওয়া আছে তারা এখন ফিরছেন।

তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় রেলপথে আসা-যাওয়ায় এবার বেশ স্বস্তি ছিল। সময় মেনেই প্রতিটি ট্রেন চলাচল করছে। কিছু ট্রেনের ১০ থেকে ২০ মিনিট বিলম্ব হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এমনটা হচ্ছে। বিভিন্ন স্টেশনে নির্ধারিত বিরতির চেয়ে যাত্রী ভিড়ের কারণে অতিরিক্ত ১-২ মিনিট সময় বেশি দিতে হচ্ছে।