জাতীয়

নগরীতে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত ৫ বছরের শিশুকে ছয় টুকরো করে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নির্মমতার শিকার শিশুটির নাম আলিনা ইসলাম আয়াত। সে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। আয়াত স্থানীয় একটি নুরানি মাদ্রাসার হেফজ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাদের বাসার পুরোনো ভাড়াটে আবীর আলী (১৯) মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশুটিকে অপহরণ করেছিল। অপহরণের পর শিশুটি কান্না করতে থাকায় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে হত্যা করে আবীর। পরে লাশ ছয় টুকরো করে ব্যাগে ভরে সাগরে ফেলে দেয়।

১৫ নভেম্বর শিশুটি নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে ইপিজেড থানায় জিডি করা হয়। এরপরও তার সন্ধান মিলছিল না। ছায়াতদন্তে নেমে নিখোঁজের প্রায় ১০ দিন পর শুক্রবার সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আবীর আলীকে গ্রেফতার করলে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবীর মুক্তিপণের জন্য শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর ইনস্পেকটর ইলিয়াস খান। পিবিআই-এর তদন্ত দল হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ছোরাসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করলেও সাগরে ফেলে দেওয়া লাশের টুকরোগুলোর সন্ধান পায়নি।

পিবিআই সূত্র জানায়, আয়াতের বাবা সোহেলের নয়াহাট এলাকায় তিনতলা একটি ভবন রয়েছে। পেশায় মুদির দোকানদার। আয়াত নিখোঁজ হওয়ার দিন সর্বশেষ আয়াতকে কোলে নিয়েছিল আবীর। এ কারণে আয়াতের পরিবার আবীরকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু সে জড়িত-এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তদন্ত দল একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায় আবীর তাদের পুরোনো ভাড়া বাসা অর্থাৎ আয়াতদের বাসা থেকে একটি ব্যাগ হাতে হেঁটে যাচ্ছে। এরপর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একপর্যায়ে সে আয়াতকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে।

পিবিআই ইনস্পেকটর ইলিয়াস খান বলেন, আয়াতদের ভবনে আবীরের পরিবার ২১ বছর ধরে বসবাস করে আসছিল। আবীরের জন্মও সেখানে। সম্প্রতি আবীরের মা-বাবার মধ্যে সেপারেশন হয়ে গেলে সে মায়ের সঙ্গে আকমল আলী রোডের একটি ভবনে চলে যায়। অন্যদিকে আবীরের বাবা আয়াতদের ভবনেই থেকে যায়। আবীরের মা গার্মেন্ট শ্রমিক আর বাবা একটি কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ। আবীর ছিল ভবঘুরে প্রকৃতির। মায়ের সঙ্গে নতুন বাসায় চলে গেলেও পুরোনো বাসায় (আয়াতদের) তার যাতায়াত ছিল।

আবীরকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের সূত্রে ইনস্পেকটর ইলিয়াস জানান, মুক্তিপণের জন্য আবীর শিশু আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। অপহরণের পর সে আগের বাসায় নিয়ে রাখে। কিন্তু শিশুটি চিৎকার দিতে থাকলে একপর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর লাশ একটি ব্যাগে ভরে আকমল আলী রোডের নতুন বাসায় নিয়ে যায়। একটি দোকান থেকে ছুরি কিনে এনে নতুন বাসায় শিশুর লাশ ছয় টুকরো করে পরদিন সকালে তিন টুকরো ও রাতে বাকি তিন টুকরো বেড়িবাঁধসংলগ্ন সাগরে স্রোতের মধ্যে ফেলে দেয়। যেখানে ফেলেছে, সেই জায়গাগুলো আমরা তার দেওয়া তথ্যে চিহ্নিত করেছি। কিন্তু পানিতে ফেলে দেওয়ার কারণে টুকরোগুলো উদ্ধার করা যায়নি। হয়তো স্রোতের টানে ভেসে গেছে।

পিবিআইয়ের কর্মকর্তা আরও জানান, টুকরো লাশ উদ্ধার না হলেও হত্যাকাণ্ডের কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। যে ছুরি দিয়ে লাশ টুকরো করা হয়েছে, সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। যে দোকান থেকে ছুরি কিনেছে, সেই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। দোকানদার তাকে শনাক্ত করেছে। পলিথিন ও স্কচটেপও যেখান থেকে নিয়েছে, তা শনাক্ত করা গেছে। খুনের পারিপার্শ্বিক প্রায় সব আলামতই পাওয়া গেছে।

জাতীয়

কেন্দ্রে কেন্দ্রে দলগুলো প্রার্থী এজেন্ট দিয়ে ভারসাম্য তৈরি না করলে পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে সবসময় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, পুলিশ দিয়ে কিন্তু ব্যালেন্স তৈরি হবে না। ব্যালেন্সটা তৈরি হবে রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তাদের ইলেকশন এজেন্ট, তাদের প্রার্থী, তাদেরই প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালেন্স তৈরি করতে হবে।

১৮-২২ নভেম্বর নেপালের ‘ইলেকশন অব হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও প্রভিনশনাল অ্যাসেম্বলি’ পরিদর্শন শেষে দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি।

হাবিবুল আউয়াল চান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হোক। সংলাপ চলুক। একই সঙ্গে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার, রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা চান।

সিইসি আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ একেবারেই হচ্ছে না বলে তারা দেখছেন। তবে এ সংলাপ হওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। তারা রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত হতে চান না। কিন্তু রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

জাতীয়

রাজধানীর লালমাটিয়ায় অভিযান চালিয়ে ২৮৮টি পরিবারকে বুধবার উচ্ছেদ করেছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ)। এ সময় ৮টি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিবারগুলো প্রায় ৬০ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছিল।

আদালতের রিট মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই উচ্ছেদ করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের মধ্যে অনেকের ছেলেমেয়ের পরীক্ষা চলছিল। এ অবস্থায় উচ্ছেদ হতে হবে-এমন ধারণাও ছিল না তাদের। উচ্ছেদ হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, লালমাটিয়ার কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের প্রায় চার বিঘা জায়গার ওপর এনএইচএ’র পুরোনো তিন তলাবিশিষ্ট ৮টি ভবন ছিল। সেখানে ২৮৮টি পরিবার বসবাস করত।

এসব পরিবার ভাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করলেও তাদের ওই ভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এছাড়া ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে নতুন ভবন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছিল এনএইচএ।

এটি নিয়ে দুপক্ষের মামলা চলেছে। উচ্চ আদালতে সে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ২০২১ সালে। সম্প্রতি নতুন করে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা করেন ভুক্তভোগীরা।

এর শুনানি ছিল আজ। জানা যায়, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো এনএইচএ’র ভবনগুলোয় প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাস করছিল। এখন সেখানে নতুন করে বহুতল ভবন করা হবে।

তবে ওইসব ভবনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৮৮টি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। মোহাম্মদপুরের অন্য একটি প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতি বর্গফুট ৬ হাজার টাকা করে পরিশোধ করে তাদের ফ্ল্যাট কিনতে হবে।

যদিও বেশিরভাগ ভাড়াটিয়ার ওইসব ফ্ল্যাট নেওয়ার সক্ষমতা নেই। এসব নিয়ে পরিবারগুলোর সঙ্গে এনএইচএ’র মতপার্থক্য চলছিল। এ অবস্থায় এনএইচএ জোরপূর্বকভাবে ওইসব ভবনে বসবাসকারীদের বের করে দিল।

লালমাটিয়া ডি-টাইপ কলোনির বাসিন্দা মো. ফয়সাল বলেন, এনএইচএ অমানবিক কাজ করেছে। ৬০ বছর ধরে বসবাসকারীদের টেনেহিঁচড়ে ভবন থেকে বের করে দিয়েছে। আবাসনের সমাধান না করেই তারা আমাদের বের করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা করা হয়েছিল। যার শুনানি হওয়ার কথা আগামীকাল (আজ)। কিন্তু সেসব আমলে না নিয়েই তারা আমাদের বের করে দিয়েছে।

এমন অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে, যাদের ঢাকায় থাকার আর কোনো বিকল্প নেই। তারা আমাদের কোনো নোটিশও করেনি। একটি সরকারি সংস্থার পক্ষে এমন কাজ করা কীভাবে সম্ভব?

এসব বিষয়ে এনএইচএ’র চেয়ারম্যান একেএম শামীমুল হক বলেন, লালমাটিয়া ডি-টাইপ কোয়ার্টার বলে পরিচিত ৮টি ভবন পরিত্যক্ত হিসাবে চিহ্নিত।

সেখানে সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার বসবাসকারীরা সেটা খুলে ফেলেন। তাদের সঙ্গে এনএইচএ’র একটি মামলা চলছিল, সেটা ২০২১ সালে শেষ হয়েছে।

উচ্চ আদালত ৬ মাসের সময় দিতে বলেছিলেন। সেটাও পার হয়েছে। নতুন করে তাদের প্রত্যেককে নোটিশ করা হয়েছে। আর উচ্ছেদের কয়েকদিন আগ থেকে সেখানে মাইকিংও করা হয়েছে।

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন মেধা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে তরুণরাই বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বর্তমান বিশ্বে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা বাংলাদেশের তরুণরা সমাধান করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সজীব ওয়াজেদ জয় আজ সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে সিআরআইয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলার উদ্যোগে দেশের তরুণ সংগঠকদের ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন ।

তিনি বলেন, ‘আমার এই বিশ্বাসটাই আছে যে বাংলার মানুষ, আমরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি। আপনারা জানেন যে এখন সারাবিশ্বেই অনেক সংকট চলছে, যুদ্ধ চলছে, সমস্যা চলছে। এই একটি কোভিড মোকাবিলা করলাম আমরা দুবছর আগে। কোভিড যেতে না যেতে এখন যুদ্ধ, সন্ত্রাস, সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক চাপ পড়ছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, অনেকেই এখন ভয়ে ভয়ে থাকে যে, এই সমস্যা আমাদের দেশ কীভাবে মোকাবিলা করবে? উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এই কথাটা কেন বলছি এখানে। আপনারাই (তরুণ উদ্যোক্তারা) সেই সমস্যা সমাধাণের উদাহরণ। দেখেন সমস্যার কোনোদিন শেষ থাকে না। এই ১৪ বছর যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, এর মধ্যে আমরা কী কী সমস্যা দেখেছি? প্রথমেই ছিল বিদ্যুতের সমস্যা। এই যে লোডশিডং হয়, এটা আমরা কীভাবে সমাধান করবো ? তারপর অর্থনীতির। এত মানুষকে কীভাবে খাওয়ানো হবে। এই অর্থনীতিকে কীভাবে আগানো যায় ? এগুলো আমরা সমাধান করে দেখিয়েছি। ২০২০ সালে সারাবিশ্বে কোভিড মহামারীর কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আসলো কোভিড।

এটা নিয়ে সবাই ভয়ে ছিল। সবাই আতংকে। সারাবিশ্বেই আতংক। তবে কী দেখা গেল? আমরা বাংলাদেশে, নিজেদের মতো করে, নিজেদের পরিকল্পনায়, এই কেভিডকে কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় এমনকি সব থেকে ধনীর দেশের চাইতেও ভালভাবে মোকাবিলা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার নিজেরই আনন্দ লাগে যে, যখন দেখি আমাদেরই দেশে আপনারা (তরুণরা) রোবটিক হাব বানাচ্ছেন, এটা অসাধারণ। আমাদের দেশ থেকে আপনারা ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর জন্য দাবি করতে ইউএন-এতে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন, এটা অসাধারণ’। সবাই অসাধারণ কাজ করছেন- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা অসাধারণ। আমাদের দেশটি একটি অসাধারণ দেশ। নিজেরা লড়াই করে, রক্ত দিয়ে এই দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। এই ১৬ কোটি মানুষকে আমরা খাওয়াতে সক্ষম হয়েছি। এই ১৬ কোটি মানুষের দেশকে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে দরিদ্র থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছি।’

তরুণদেরকে দেশের ভবিষ্যত উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, আর এই তরুণ-তরুণীরা, এই ইয়াং বাংলার পুরস্কারজয়ীরা- আপনারাই হচ্ছেন ভবিষ্যৎ। আপনারা তরুণরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আপনারাই বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আমার আশা আছে, বিশ্বাস আছে, আপনারাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ থেকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করবেন। আর এটা আমাদের জীবনের মধ্যেই হবে। তিনিি বলেন,“আমরা নিজেদের পরিশ্রমে করবো। নিজেদের মেধা দিয়ে করবো, নিজেদের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করবো। আসলে নিজের মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস থাকে আর দেশপ্রেম থাকে তাহলে কিন্তু নিজের দেশের জন্য সবকিছু করা, নিজের দেশের মানুষের জন্য সবকিছু করা সম্ভব। নিজের মধ্যে যদি দেশপ্রেম আর স্বাধীনতার চেতনা না থাকে তাহলে আমি দেশের ভালো আমি কীভাবে চাইতে পারি ? তরুণরা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন, এগিয়ে নিয়ে যাবেন- এ আশা ব্যক্ত করে জয় বলেন, ‘আজকে একটি শব্দেই অনুভুতি জানাতে চাই যে, ’অসাধারণ’।

আজকে যারা পুরস্কৃত হয়েছে শুধু তারাই নন, যারা ফাইনালিস্ট এবং এই যে ৬০০ জন অংশ নিয়েছেন, আপনারা সকলেই আজকে বিজয়ী।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আপনারা দেশের ও দেশের মানুষের জন্য যেভাবে সেবা করছেন, এটা আমাদের সকল নাগরিকের এবং বিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ। আপনাদের মত তরুণ-তরুণীরা নিজের প্রচেষ্টায় কারো কাছে হাত না পেতে নিজের মেধায়, নিজের চিন্তাধারায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন, আপনারা কারো জন্য বসে নেই, এটাই হলো আমাদের চেতনা। এটাই আমাদের বিশ্বাস।

বেলা ৩টা জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ষষ্ঠবারের মত জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রদাণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই ইয়াং বাংলার কার‌্যক্রম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এবারের পুরস্কারের জন্য প্রায় ৬ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। তাদের মধ্য থেকে ২৮ জনকে চুড়ান্ত পর্বের জন্য বাছাই করা হয়। ৫টি ক্যাটগরিতে পুরস্কৃত করা হয় ১০ প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া দুইজনকে দেয়া হয় আজীবন সন্মাননা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সিআরআইয়ের ট্রাস্ট্রি নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেন, দেখতে দেখতে ছয় বছর কেটে গেল। আজকে ইয়াং বাংলার সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দুর দুরান্ত থেকে তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় অনেক কিছু করেছেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

জাতীয়

বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখনকার গড়ের চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ বাড়বে বলে জানা গেছে গবেষণায়।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলা হয়েছে, দৈনিক সংক্রমণ এখনকার এক কোটি ৬৭ লাখের চেয়ে ধীরগতিতে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে এক কোটি ৮৭ লাখে দাঁড়াবে।

এ সময়জুড়ে উত্তর গোলার্ধে শীত ঋতু বিরাজ করার কারণেই এমনটা ঘটবে বলে গবেষণায় ধারণা দেওয়া হয়েছে।

ওমিক্রনের দাপটের কারণে সর্বশেষ শীতে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের সর্বোচ্চ সময়ে জানুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ৮ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে বলে আগের গবেষণাগুলোতে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, সেই তুলনায় আসছে মাসগুলোতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা অনেক কম থাকবে বলে এবারের গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান প্রকাশ করা হয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামনের মাসগুলোতে এখনকার তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও মৃত্যু বাড়বে না বলেই প্রত্যাশা করছে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)।

আইএইচএমইয়ের পূর্বাভাস বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর গড় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নাগাদ দুই হাজার ৭৪৮ হতে পারে, এখন যা এক হাজার ৬৬০ জনের কাছাকাছি আছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে করোনায় প্রতিদিন ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ফেরার পাশাপাশি শীতে চার দেয়ালের ভেতর জনসমাগমের কর্মসূচি বাড়লে সামনে যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে ১০ লাখ ছাড়াবে বলেও অনুমান আইএইচএমইর।

জার্মানিতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এরই মধ্যে চূড়ায় পৌঁছেছে বলেও ইনস্টিটিউটটির ২৪ অক্টোবরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশের বেশি নেমে ফেব্রুয়ারিতে গড়ে এক লাখ ৯০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছবে বলেও ধারণা আইএইচএমইর।

জার্মানিতে সাম্প্রতিক সময়ে কোভিডের যে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে তার পেছনে ওমিক্রনের উপধরণ বিকিউ ১ ও বিকিউ ১.১ দায়ী এবং আসছে সপ্তাহগুলোতে এ উপধরণ দুটি ইউরোপের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়বে বলে তাদের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

তবে জার্মানিতে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি দ্রুতগতিতে বাড়া এখনো উদ্বেগের ক্ষেত্র হিসেবে রয়েই গেছে— বলেছে আইএইচএমই।

তাদের বিশ্লেষণ বলছে, সিঙ্গাপুরে সম্প্রতি হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি বাড়ার পেছনে দায়ী ওমিক্রনের নতুন উপধরণ এক্সবিবি; এটি বেশি সংক্রামক হলেও কম মারাত্মক।

তবে আগে যারা ওমিক্রনের উপধরন বিএ ৫-এ সংক্রমিত হয়েছিলেন তাদের দেহ এই এক্সবিবি ধরনকে প্রতিহত করতে পারবে বলেই মনে করা হচ্ছে; এ কারণে নতুন উপধরনটি বিশ্বজুড়ে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই ধারণা দিয়েছে আইএইচএমইর গবেষণা প্রতিবেদন।

জাতীয়

বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৭০ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করেছে সরকার। খুলনা রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খ. মহিদ উদ্দিনকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

এ ছাড়া সম্প্রতি পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে পদোন্নতি পাওয়া ৭ কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ৬২ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিরাজাম মুনিরা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জাতীয়

চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ তদন্তে যশোর শিক্ষা বোর্ড তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যদের আগামী সাত কর্মদিবসের মাঝে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে অভিযুক্ত শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

মঙ্গলবার কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব।

তিনি বলেন, প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ও উপ-কলেজ পরিদর্শক সদস্য হিসেবে রয়েছে। কমিটিকে পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্যাডে চিহ্নিত শিক্ষকদের নাম-পরিচয়সংবলিত একটি অস্বাক্ষরিত হাতে লেখা নথি মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের  সরবরাহ করেছেন।

এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলা প্রথমপত্রের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্রটি যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত।’

তাতে দেখা যায়, বাংলা প্রথমপত্রের বিতর্কিত প্রশ্নটি করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।

আর প্রশ্নপত্রটি পরিশোধনের (মডারেশন) দায়িত্বে ছিলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।

জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি বলেন, প্রশ্নটি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন নিয়মানুযায়ী, যশোর শিক্ষা বোর্ড অভিযুক্ত শিক্ষকদের শোকজ করবে। এর পর এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে। সে অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রথম দিনই দুই শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্রে একটি উদ্দীপকে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার মতো কথামালাযুক্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। আর কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নে ‘পীর’ সংক্রান্ত শব্দগত দিক জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জাতীয়

সিলেটে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল। রোববার রাত ৯টার দিকে নগরীর আম্বরখানা বড় বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আ ফ ম কামাল সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক ছিলেন।তার বাসা নগরের সুবিদবাজার এলাকায়।

সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি মাইনুল জাকির বলেন, প্রাইভেটকার আটকে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা কামালকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। নিহতদের লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

ওসি বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাজু নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি।

সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, কারা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে- তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। রাজনৈতিক বিরোধ থেকে এ হত্যাকাণ্ড কি না- তাও আমরা নিশ্চিত নই।

জাতীয়

বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেই বর্বর ঘটনাগুলো যেন দেশবাসী ভুলে না যায় এবং সেই দিন যেন আর ফিরে না আসে। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

রোববার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ২০১৩-১৪-১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসে ৫শ মানুষ নিহত হন। আহত হন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জন। আগুন-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে স্বামীহারা স্ত্রী, সন্তানহারা পিতা, পিতৃহারা পুত্র-কন্যা, আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে ভুক্তভোগী, পঙ্গুত্ববরণকারীরা এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শাহজাহান খানসহ দলটির সিনিয়র নেতা, সংসদ-সদস্য, এফবিসিসিআই সভাপতিসহ একটি প্রতিনিধিদল এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংসদ-সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা গাড়িতে মানুষ যাচ্ছে। সেখানে আগুন ধরিয়ে মানুষকে হত্যা করা হলো। কীভাবে মানুষ পারে মানুষের এমন ক্ষতি করতে? এটাই নাকি আন্দোলন! এই আন্দোলন তো আমরা কখনো দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘এটা সহ্য করা যায় না। এটা কোনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না। কাজেই আমি দেশবাসীকেও বলব এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে। ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যান।’

তিনি বলেন, ‘আমার শুধু একটাই আহ্বান থাকবে দেশবাসীর কাছে-তারা রাজনীতি করতে চাইলে সুষ্ঠু রাজনীতি করুক, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের গায়ে কেউ হাত দিলে তাদের রক্ষা নেই।’

আগুন-সন্ত্রাসীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দায়ীদের বিচার হচ্ছে, হবে এবং মহান আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। হয়তো প্রত্যেক কেসের (মামলা) বিচার চলছে না। কিন্তু যারা এ ধরনের অগ্নি-সন্ত্রাসে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, অনেকের বিচারের কাজ চলছে, অনেকে শাস্তিও পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা হুকুমদাত্রী বা হুকুমদাতা, তাদের কথাও আপনারা ভেবে দেখেন। যারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে আর মানুষকে কষ্ট দিতে পারে, আমি জানি না মানুষ কীভাবে আবার এদের পাশে দাঁড়ায়, এদের সমর্থন করে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ২০১৩-১৪-১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আন্দোলনের নামে অগ্নি-সন্ত্রাস করে। বাসে আগুন দিয়ে কীভাবে মানুষ হত্যা করে। এটা কি আন্দোলন? আমরা এটি আগে কখনো দেখিনি। শৈশব থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন করার। কারণ মানুষ দিয়েই তো আন্দোলন।’

কাঁদলেন-কাঁদালেন চাইলেন বিচার : সাধারণত প্রতিটি অনুষ্ঠানে মূল মঞ্চে রাখা হয় প্রধান অতিথি ও অতিথিদের। কিন্তু এ অনুষ্ঠানটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমা ও অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরাই ছিলেন মূল মঞ্চে। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন দর্শকসারিতে।

অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। পরে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন। সেসব ঘটনার বর্ণনা শুনে এবং তাদের কান্না দেখে প্রধানমন্ত্রীসহ অনুষ্ঠানে আগতরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী অনেককে কাছে টেনে নিয়ে সব রকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।

অগ্নি-সন্ত্রাসের শিকার সালাউদ্দিন ভূইয়া সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘আমি খুব সুন্দর ছিলাম, যেখানে চাকরির জন্য যেতাম, চাকরি হতো। এখন আমাকে দেখে কেউ কাজ দেয় না। আমার কাজ করার শক্তি আছে; কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। আমার পাশে কেউ বসে না। সবাই ভাবে আমি পাগল। আমার মনে অনেক কষ্ট।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

২০১৩ সালে পেশায় গাড়িচালক রমজান আলীর ছেলে মুনিরকে তার চোখের সামনে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সন্তানহারা রমজান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি তো রাজনীতি করি না। আমি তো খেটে খাওয়া মানুষ। আমার চোখের সামনে আমার ছেলেকে আগুনে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিল। সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না। এর চেয়ে এত কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই।’ এ সময় দর্শক আসনে বসে থাকা প্রধানমন্ত্রীকেও কাঁদতে দেখা যায়।

২০১৩ সালে মাদারীপুর থেকে ঢাকা আসার পথে আগুনে পুড়ে মারা যায় ১৭ বছরের কিশোর নাহিদ। তার মা রুনি বেগমও যোগ দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে দেখতে পারিনি, দেখার সুযোগ পাইনি বিএনপি-জামায়াতের কারণে।’ সন্তানহারা এই মা আর্তনাদ করে বলেন, ‘সন্তান হত্যার বিচার পাইনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার সন্তান হত্যার বিচার আপনি করবেন।’

রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবিলায় কাঁচপুরে দায়িত্ব পালন করছিলেন বিজিবির সুবেদার নায়ক শাহ আলম। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার আলেয়া বলেন, যতদিন বেঁচে থাকব, এই যন্ত্রণা কখনো ভুলতে পারব না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে স্বামীহারা এই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী তো রাজনীতি করেনি। তার তো কোনো অপরাধ ছিল না। সে তো দেশের কাজে নিয়োজিত। তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো?’

ট্রাক ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম ঢাকা থেকে মালামাল নিয়ে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার পথে দিনাজপুরের কাহারুল থানার ভাদগাঁওয়ে পেট্রোলবোমার শিকার হন। পুড়ে যায় তার শরীর। মৃত্যুগহ্বর থেকে বেঁচে ফিরলেও সারা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই ক্ষত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রফিকুল। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এর কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই।’

২০১৩ সালের ৩১ মার্চ রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাহেববাজারে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বোমায় সাব-ইনস্পেকটর মকবুল হোসেনের দুটি হাত উড়ে যায়। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। মকুবল বলেন, পুলিশের সদস্য হিসাবে গর্বিত। মানুষের সেবায় নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করি না। আমি আহত হয়েছি, পঙ্গুত্ববরণ করেছি; কিন্তু মনোবল হারাইনি। ওই সময় পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী মায়া বেগম বলেন, ‘আমার দুটি ছেলে আছে, তাদের একটা ব্যবস্থা করবেন। আমার সুস্থতার ব্যবস্থা করবেন।’

ফটোসাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘সেদিন আমি মৃত্যুর মুখে পড়ে যাই। আমার কাছে একটা ফোন আসে যে তারা পেট্রোল বোমা বিতরণ করছে। তারা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তাড়া করে ছুরিকাঘাত করে। আমরা কাজের সুন্দর পরিবেশ চাই। বিএনপি-জামায়াত এখন আবার শুরু করেছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ স্বামীহারা বিনা সুলতানা বলেন, ‘যারা এই বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মুহূর্ত। আমি এখনো সেই যন্ত্রণা নিয়ে চলছি। আমাদের সবার আকুতি, জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যের বিচার চাই। প্রয়োজনে আমি সাক্ষ্য দেব।’

অনুষ্ঠানে ক্ষতিপুরণ ও বিচার চান পঁচাত্তর-পরবর্তী জিয়াউর রহমানের সময়ে সামরিক আদালতে বিচারের মাধ্যমে দণ্ডিত সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী পরিবারের সদস্যরা।

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে টেন্ডার ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রেলওয়ের ২ একর জমি একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। এই সম্পদের মূল্য ছিল তখন কমপক্ষে ৫১ কোটি টাকা। হাওয়া ভবনের নির্দেশে মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে এর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এই বিএনপি নেতা। অথচ রেলওয়ের জমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেই নয়, এটি করার আইনগত অধিকার তার নাই। জয় গতকাল শুক্রবার তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে একথা বলেন।

তিনি বলেন, এমনকি যে সমিতির নামে জমিটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল, সেই সমিতির নামও সমবায় অফিসের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদে এ সব তথ্য প্রকাশ করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাদের জমির ন্যায্য দখল ফিরে পাওয়ার দাবি জানালে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে আসে।

জয় বলেন, জানা যায় ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা ছাড়ার আগে এটাই মির্জা আব্বাসের শেষ দুর্নীতি।

মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে পূর্বাচল সমবায় সমিতির নামক একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নগদ জমা নিয়ে জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জমির একটি অংশে রেলওয়ের অনুমোদনক্রমে একটি প্রতিষ্ঠান লিজ নিয়ে ব্যবসা করছিল। কিন্তু মির্জা আব্বাস পেশী শক্তি খাটিয়ে তাদেরও সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় রেলওয়ে প্রতিবাদ জানালেও মির্জা আব্বাসের ক্যাডার বাহিনীর প্রতাপের কাছে হেরে যায় তারা।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিএনপির শাসনামলে এভাবেই সন্ত্রাসীদের ক্ষমতার দাপটে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি কোথাও। এমনকি সরকারি কর্মচারীদেরও হুমকি-ধামকি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াতের এমপি-মন্ত্রীরা।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাই-ভাগ্নেসহ অন্যান্য স্বজন এবং মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামেও রাষ্ট্রের ৮শ’ কোটি টাকার জমি জালিয়াতি করে দলিল দিয়েছিল এই আব্বাস। এমনকি তারেক রহমানের হয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো ঢাকার যে চারজন এমপি, আব্বাস তাদের মধ্যেও অন্যতম।