জাতীয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া দুই আসামির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ও মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

জাহাঙ্গীর আলমের পারিবারিক সূত্র জানায়, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজশাহী নগরীর খোঁজাপুর ইদগাহ মাঠে তার জানাজা হয়। পরে ভোর ৬টার দিকে খোঁজাপুর কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই সোহরাব হোসেন, ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিজানসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

ফরিদপুর ও ভাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ভোর ৬টায় মহিউদ্দিনের লাশ গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গার জান্দি গ্রামে পৌঁছায়। তার শতবর্ষী মা সেতারা বেগম ছেলেকে দেখেন না ১৭ বছর ধরে। ফাঁসির আদেশ ও কার্যকরের বিষয়ও জানতেন না তিনি। ফাঁসি কার্যকরের রাতে বাড়িতে কী কারণে চেয়ার-টেবিল আনা হচ্ছে তাও জানতেন না এই বৃদ্ধা।

পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন যখন লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তখন ‘এত লোক কেন, লাশ কার’ এই বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সেতারা বেগম। পরে বেলা ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, আমার ভাই ড. মহিউদ্দিনকে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পানি থাকায় বাবার কবরের পাশে দাফন করা সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার থেকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের আহমেদ। ২ ফেব্রুয়ারি তার লাশ বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হয়। এই হত্যা মামলার তদন্তে ওঠে আসে পদোন্নতি না পাওয়ার ক্ষোভে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

এ মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া দুজনকে খালাস দেন আদালত।

পরে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তার স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন।

জাতীয়

আশুরার দিন রোজা রাখলে এক বছরের সগিরাহ গোনাহ মাফের আশা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি (সা.)।

হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-হজরত আবু কাতাদাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।

আশুরার রোজা রাখার পদ্ধতিও ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখ; ইয়াহুদিদের মতো নয়; আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, যখন রাসূল (সা.) মদিনাতে এলেন তখন ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখতেন।

তারা জানল, এ দিন মুসা (আ.) ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবি (সা.) তার সাহাবিদের বললেন, মুসা (আ.) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার দিক থেকে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হকদার। কাজেই ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ।’ (বুখারি)

জাতীয়

বৃহস্পতিবার ওই কার্যালয় নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনার পর রাতে কার্যালয়ের ভবন মালিক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান এ মামলা করেন। এতে তিনি অবৈধভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রবেশ করে গেট ভাংচুর ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।

রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত প্রিতম-জামান টাওয়ারে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কলাপসিবল গেট ও তালা ভাঙার অভিযোগে সংগঠনটির একাংশের সভাপতি নুরুল হক (নুর) ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ওই কার্যালয় নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনার পর রাতে কার্যালয়ের ভবন মালিক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান এ মামলা করেন। এতে তিনি অবৈধভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রবেশ করে গেট ভাংচুর ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।

শুক্রবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া।

তিনি বলেন, রাতে ভবনের মালিক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার এজাহারনামীয় আসামি ১৭ জন। এজাহারনামীয় আসামির মধ্যে নুর ও রাশেদ রয়েছে। আর অজ্ঞাত আসামি ৭৫ থেকে ৮০ জন করা হয়েছে মামলায়। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

শিগগিরই নতুন কার্যালয় কিনব: নুরুল হক

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা নিজস্ব কার্যালয় কেনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের কয়েক লাখ টাকা হয়ে গেছে, যা নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা দিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদ নিজস্ব কার্যালয় কিনবে।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে পুরানা পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের আগে প্রিতম–জামান টাওয়ারের সামনের রাস্তায় সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান নুরুল হক।

কার্যালয় বুঝিয়ে না দিলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দাবি, অনতিবিলম্বে এই কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করতে হবে। কার্যালয় খুলে দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ছয় মাস আমরা কার্যালয়ে থাকতে পারব। ছয় মাস পর আমাদের কার্যালয় ছেড়ে দেব।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত প্রিতম-জামান টাওয়ারে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয় ভবনের মালিকপক্ষ। বিকালে তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এতে নুরসহ আহত হন ৩০ নেতাকর্মী।

রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত প্রিতম-জামান টাওয়ারের মালিক মশিউর জামান বৃহস্পতিবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট ও তালা ভাঙার অভিযোগে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

শুক্রবার রাতে পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ভবন মালিক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ১৭ জন। এর মধ্যে নুর ও রাশেদের নামও রয়েছে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ জনকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি।

জাতীয়

নেত্রকোনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন রেবেকা মমিন। তার মৃত্যুতে আসনটি ১২ জুলাই শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়।

শুক্রবার রাতে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতিবিদকে না দিয়ে একজন আমলাকে কেন মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এখানে যে কেউ মনোনয়ন পেতে পারে। কে ব্যবসায়ী, কে আমলা সেটা বিবেচ্য নয়।

১১ জুলাই মারা যান সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন। তার মৃত্যুতে নেত্রকোনা-৪ আসনটি ১২ জুলাই শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই আসনের উপনির্বাচনের জন্য ২৪ জুলাই পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন আগ্রহীরা। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ জুলাই; আর মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে।

নেত্রকোনা-৪ আসনের (মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়ি ও মদন উপজেলা) উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন মোট নয়জন। তারা হলেন- সাজ্জাদুল হাসান, মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদ ইকবাল, মদন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সাবেক সদস্য মমতাজ হোসেন চৌধুরী, গোলাম বাকী চৌধুরী, এম মঞ্জুরুল হক, রোমান মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আলী আতহার খান ও নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতা শফী আহমেদ।

জাতীয়

পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর দাবি আদায়ে টানা ১০ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা সরগরম। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের একদফা দাবিতে তাদের এ আন্দোলন। সারা দেশ থেকে আসা শত শত শিক্ষক অনেকটা মানবেতরভাবে এখানে রাতদিন অবস্থান করছেন। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগররা দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো আশ্বাস পাননি। তাদের অনেকের আশা ছিল-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। তাদের কষ্টের কথা শুনবেন, বুঝবেন। অথচ কেউই তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং সরকারের তরফ থেকে অনেকটা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যয় বাড়িয়ে এ রকম অযৌক্তিক দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা এমন কথা শুনতে নারাজ। তাদেরও সাফ কথা। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে সরকার পদে পদে অন্যায় ও বৈষম্য করে আসছে। এবার তারাও দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবেন না। শিক্ষামন্ত্রীর ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। সাক্ষাৎ না পেলে এবং সুষ্ঠু সমাধান না হলে তারা আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, গত ১১ জুলাই থেকে তাদের এই কর্মসূচি চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি চলছে ১৬ জুলাই থেকে। আন্দোলনের সপ্তম ও নবম দিনে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনার ডাক পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং ১৯ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু এসব বৈঠক থেকে তারা দাবিপূরণে কার্যকর কোনো আশ্বাস পাননি। তাই তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। তারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বললেই তাদের দাবি আদায় হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি দাবি আদায়ে ইতিবাচক কিছু হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের হতাশ করা হয় তাহলে আমরণ অনশনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ওপর শিক্ষক সমাজের কোনোদিনই আস্থা ছিল না। তিনি শিক্ষকদের মন্ত্রী নন। এ কারণেই এমন কথা বলতে পেরেছেন। শিক্ষকরা সাড়ে চার বছরে এই প্রথম শিক্ষামন্ত্রীর দেখা পেয়েছেন। তিনি শিক্ষকদের নিয়ে তাদের দাবির বিষয়ে বৈঠক করেছেন। কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন। অথচ কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি রাখার আগ্রহ নেই। আসলে তিনি শিক্ষকদের কষ্ট বোঝেন না। তাই শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে শিক্ষকরাও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কোনো বাছবিচার ছাড়াই বলে দিলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয়করণ সম্ভব নয়। এমনকি এও বলেছেন, কিসের ভিত্তিতে জাতীয়করণ করা হবে, সেটা পর্যালোচনা করতে হবে। আমাদের সাফ কথা, ৬শ স্কুল-কলেজ এই সরকার যার ভিত্তিতে জাতীয়করণ করেছে, সেটিই হবে এমপিওভুক্ত সাড়ে ৯ হাজার বিদ্যালয় জাতীয়করণের মানদণ্ড।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। কিন্তু দাবি আদায়ে তারা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার পন্থা বেছে নিয়েছে। তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বই এখন মিতব্যয়িতার নীতি অনুসরণ করছে। এমন সময়ে হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির এই আন্দোলন কতটা যৌক্তিক সেটা বিবেচনার দাবি রাখে। তারা শিক্ষামন্ত্রীর কথায় সন্তুষ্ট না-ও হতে পারেন। কিন্তু তিনি সত্য কথা বলেছেন। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকদের বাড়ি পাঠানোর চেয়ে এমন সত্য কথা বলা অনেক ভালো।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষক আন্দোলনে অনেক সংগঠন আছে। প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীরা তাদের খুবই একটা ক্ষুদ্র অংশ। বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সব শিক্ষক সংগঠন যোগ দেয়। তারা সবাই জাতীয়করণের ব্যাপারে দুটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এবং নির্বাচনের পর কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে ‘কনভিন্সড’। বিটিএ নেতারাও সেখানে কনভিন্সড ছিলেন। কিন্তু পরে কেন তারা বেঁকে বসলেন সেটা বুঝতে পারছি না।’

আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষক নেতা বলেন, সরকারি শিক্ষকরা যা পড়ান তারাও তাই পড়াচ্ছেন। নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই যোগ্যতা। তাহলে বেতন-ভাতা ও পেনশন ভিন্ন হবে কেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বেতন-ভাতার অনেক বৈষম্য আছে। বেতন কম দিয়ে তাদের চাকরি শুরু হয় এবং চাকরি শেষে তাদের তুলনায় সামান্য পয়সা দেওয়া হয়। তাও বছরের পর বছর হয়রানি করে। এসব কারণে তারা সারাজীবন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার মানেও। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আগে বেতন-ভাতা প্রদানে সরকারকে স্মার্ট হতে হবে।

এদিকে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা জানান, চাকরিতে যোগদান থেকে শুরু করে অবসরজীবন পর্যন্ত পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। একজন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক চাকরির শুরুতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান। কিন্তু সরকারি স্কুলে দেওয়া হয় ১৬ হাজার। তারা মূল বেতনের শতভাগ উৎসব-ভাতা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়) বা বোনাস পেলেও বেসরকারিতে দেওয়া হয় মাত্র ২৫ শতাংশ। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে সব চাকরিজীবী এমনকি এনজিও কর্মীদেরও শতভাগ উৎসব-ভাতা দেওয়া হয়। চিকিৎসা-ভাতা এক মাসে ৫০০ টাকা পান তারা। যেখানে একজন ডাক্তারের ভিজিট সর্বনিু ৬০০, ৮০০ বা ১০০০ টাকা, সেখানে একটি পরিবারকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি শিক্ষকদের দেওয়া হয় দেড় হাজার। আবার বাড়িভাড়া বাবদ এক মাসে এক হাজার টাকা পান। কিন্তু সরকারি শিক্ষকদের মূল বেতনের ৪৫-৫০ শতাংশ দেওয়া হয়। তারা প্রশ্ন রাখেন, দেশের কোন অঞ্চলে এই টাকায় ভাড়া থাকা যায়?

শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আরও অনেক ধরনের বৈষম্যের মধ্যে আছেন। তাদের কোনো বদলি নেই। অনেকে পরিবার এবং বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বহুদূরে চাকরি করছেন বছরের পর বছর। কিন্তু বদলি হয়ে নিজ এলাকায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এককালীন অবসর-ভাতা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে চাকরি জীবনে অবসর খাতে ৬ শতাংশ ও কল্যাণ খাতে ৪ শতাংশ মিলিয়ে মোট ১০ শতাংশ বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। অথচ অবসরে গেলে এককালীন কিছু টাকা পেতে ৪-৫ বছর লেগে যায়। এই টাকা দেওয়া ছাড়া আর কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। অনেক শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর সময়মতো অবসরের টাকা না পেয়ে টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারেন না। খাওয়ার কষ্ট ছাড়াও রোগেশোকে মারা যান। বিপরীতে সরকারি শিক্ষকদের বেতন থেকে অবসর খাতে কোনো টাকা কাটা হয় না। এমনকি তারা অবসরে যাওয়ার পর যখন নিয়মানুযায়ী এককালীন পেনশন তুলে নেওয়ার পর মাসে মাসে যে অবসর ভাতা পান সেখানে চিকিৎসা বাবদ খরচও ভাতার সঙ্গে যুক্ত করা থাকে।

শিক্ষকরা আরও জানান, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ডিসিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় আন্দোলন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার বা ঊর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের এসব কষ্ট বা দুর্দশার কথা আমলে নেয়নি। তাই এখন লাখ লাখ শিক্ষক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে প্রেস ক্লাবে জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান করছে। এখন একটাই দাবি জাতীয়করণ। জাতীয়করণ করলে শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি কোনো বৈষম্য আর থাকবে না।

আন্দোলনের দশম দিনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই প্রেস ক্লাবের সামনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষক নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার হয়েও মানুষের সেবা করেন না। ঘটনাক্রমেই তিনি রাজনীতিবিদ হয়েছেন। তিনি ঘটনাক্রমেই একবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। সেখানে সফল হতে পারেননি। আবার সরকারের এই আমলে ঘটনাক্রমেই তিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। কাজেই শিক্ষকদের দুঃখ-দুর্দশা তিনি কীভাবে বুঝবেন। কিন্তু আমরা শিক্ষকরা ঘটনাক্রমে শিক্ষক হইনি। আমরা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে অনেক ভালো চাকরি না করেও শিক্ষকতায় এসেছি। ভেবেছিলাম, এখানে সম্মান আছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পেটের দায়ে আমাদের আজ রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। আমরা সরকারপ্রধানের কাছে আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান রাখছি।’

জাতীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুর ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কন্ফারেন্সে যুক্ত হয়ে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে হওয়ায় ওই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন থেকে আর ক্রসিংয়ের ঝামেলা পোহাতে হবে না তাদের। নতুন যুগের সূচনা ঢাকা-চট্টগ্রাম এই রেলপথ।

জানা গেছে, ৩২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুরো অংশ ডাবল লাইনে উন্নীত হচ্ছে। এ পথে আর কোনো ট্রেনকে ক্রসিংয়ে পড়তে হবে না বলে কমে আসবে যাত্রার সময়।

কুমিল্লা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ সিঙ্গেল লাইনের হওয়ায় এতদিন ক্রসিংয়ে পড়ে অনেক ট্রেনের যাত্রায় বিলম্ব হত। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেত।

আখাউড়া পৌর এলাকার কয়েকজন জানান, নানা কাজে ফেনী যাতায়ত করতে হয়। প্রতিবারই দেখা যায় আখাউড়া কিংবা ফেনীতে নির্ধারিত সময়ের আগেও ট্রেন চলে আসে। পরে কুমিল্লা-আখাউড়া অংশে ক্রসিংয়ের কারণে সব সময়ই ট্রেনের বিলম্ব হয়।

এই ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন হওয়ায় পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আর কোনো ট্রেনকে ক্রসিংয়ে পড়তে হবে না। অনির্ধারিত যাত্রা বিরতিতে সময়ও নষ্ট হবে না। পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের রেলযোগাযোগ আরও সহজ হবে।

লাকসাম রেলওয়ে জংশনের সহকারী মাস্টার ইকবাল হোসেন বলেন, আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন রেলপথে ট্রেন চলাচলের বিষয়টিতে রেলওয়েতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে।

নতুন এ পথে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ এ দুই ধরনের ট্রেনই চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে এই পথে মোট ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে এ পথ দিয়ে ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচলের সক্ষমতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে মালবাহী ট্রেন চলাচলের সক্ষমতাও কয়েক গুণ বাড়বে।

লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন করতে ২০১৪ সালে ছয় হাজার ৫০৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয় একনেকে। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর শুরু হয় নির্মাণ কাজ। ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে লাকসাম পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

ডাবল লাইন নির্মাণ এবং বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়নে এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এক হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। আর এক হাজার ২৬ কোটি টাকার বেশি অর্থায়ন করেছে সরকার।

জাতীয়

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের (তৃতীয় টার্মিনাল) গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করবে জাপান। তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।তাদেরই এ কাজ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের কাজ দেওয়ার জন্য কী ধরনের শর্ত দেওয়া হবে, সেটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।

শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এটিজেএফবি ডায়ালগে এসব কথা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

ডায়ালগের আয়োজন করে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সভাপতি তানজিম আনোয়ার। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ।

বিমানের নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চেয়েছিলাম অক্টোবরের মধ্যে নিউইয়র্কে ফ্লাইট চালু করতে। তবে ফ্লাইটের অনুমতির ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানকে আবেদন করতে হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সময়মতো আবেদন না করায় প্রক্রিয়াটা পিছিয়ে গেছে। আমরা বিমানকে লিখিতভাবে জানিয়েছি এ বিষয়টি। তাছাড়া কোভিড-১৯ কারণেও কিছুটা পিছিয়েছে এ প্রক্রিয়া। তবে আমি এ বছরেই নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আশাবাদী।

বিমানের উড়োজাহাজ কেনা প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানের বহর বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন ও কার্গো সক্ষমতা বাড়াতে বলেছেন। এ কারণেই এয়ারক্রাফট কেনা হবে। তবে শুধু এয়ারবাস কেনা হবে, বোয়িং কেনা হবে না, সেটা নয়। যে প্রতিষ্ঠান ভালো অফার দেবে তাকেই বেছে নেবে বিমান। আমাদের সঙ্গে বোয়িংয়ের আগে থেকেই সম্পর্ক আছে, এয়ারবাসের ইস্যুও এসেছে। এয়ারবাস বোয়িং থেকে ভালো অফার দিলে আমরা ওদিকেই যাব।

হেলিকপ্টারের অপারেটরদের হ্যাঙ্গার ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে মো. মফিদুর রহমান বলেন, হেলিকপ্টার খাত দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। আমরা তাদের স্বল্প ভাড়া নির্ধারণ করেছি। যেহেতু এটা সরকারি জায়গা, পৃথিবীর কোনো দেশেই এগুলো ফ্রি দেয় না। তাই আমরাও ভাড়া নির্ধারণ করেছি। তবে তাদের ভাড়া অনেক কম ধরা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব করেছি, অর্থ মন্ত্রণালয় এই ভাড়া চূড়ান্ত করবে। আমরা তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সহানুভূতিশীল হয়ে ভাড়া নির্ধারণ করেছি।

জাতীয়

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন যেসব রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাবে সেগুলোর খসড়া তালিকা চূড়ান্ত হতে পারে রোববার। এদিন নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠেয় কমিশনের সভায় নতুন দল নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তোলা হচ্ছে। নতুন দল নিবন্ধন নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা ও আগ্রহ রয়েছে। এ বৈঠকে নেত্রকোনা-৪ আসনের তপশিল ঘোষণা হতে পারে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কমিশন বৈঠকে দুটি এজেন্ডা রয়েছে। একটি হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও আরেকটি হচ্ছে নেত্রকোনা-৪ আসনের উপনির্বাচন। এ দুটি এজেন্ডা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। আলোচনার পর কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবেন, ইসি সচিবালয় তা বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় ১২টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডি)। ওইসব রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয় সক্রিয় রয়েছে কিনা তা দুই দফা যাচাই করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই দুই দফার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নতুন দল নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।

আরও জানা গেছে, আইন অনুযায়ী নিবন্ধন পেতে ২১ জেলা ও ১০০ উপজেলা বা থানায় কার্যকরী কমিটি ও কার্যালয় এবং প্রতিটি উপজেলায় দলের অন্তত ২০০ ভোটার থাকার নিয়ম রয়েছে। নির্বাচন কমিশন দুই দফায় এসব দলের মাঠ কার্যালয় ও কমিটি যাচাই করেছে। ওই দুই ধাপে পাওয়া প্রতিবেদন রোববার কমিশন সভায় তোলা হচ্ছে। এতে যারা শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তারা নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

জাতীয়

রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ এত বাড়ছে যে, অন্য রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরাও ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে এক নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে হাসপাতালগুলোতে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের অবহেলাও রয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪৯ জন রোগী। সরকারিভাবে এ সময়ের মধ্যে মৃত্যুর কোনো তথ্য না জানালেও কাছে তথ্য রয়েছে, চিকিৎসাধীন এক শিশু শুক্রবার মারা গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় বছরের শিশু তাশফিন আহানাফের মৃত্যু হয়েছে।

তাশফিন আহানাফ আরটিভি অনলাইনের শিফট ইনচার্জ আবুল হাসানের ছেলে। আরটিভি অনলাইনের ডেপুটি চিফ নিউজ এডিটর বিপুল হাসান জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর শিশুটি ছয়দিন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। শরীরে রক্তক্ষরণ হওয়ায় রক্তের প্লাটিলেট অনেক কমে যায়। এজন্য তিন ব্যাগ রক্ত দিতে হয় তাকে। পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার দুপুরের পর শিশুটির মৃত্যু হয়।

হাসপাতালে একদিকে ডেঙ্গু রোগীর চাপ, অন্যদিকে সাধারণ রোগী। এক নাকাল অবস্থা। শুক্রবার দুপুরে রাজধানী শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে রোগীর অভিভাবকরা শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছিলেন। ২ মাস ১৭ দিন বয়সি শিশু আলিফের মুখে অক্সিজেন মাস্ক। নানির কোলে ছটফট করছিল শিশুটি। পেছনে দাঁড়িয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে গুমড়ে কাঁদছেন শিশুটির মা। তীব্র শ্বাসকষ্টে ছটফট করছে শিশুটি। মুমূর্ষু শিশুটির বাবা মো. রাসেল স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

মো. রাসেল এই প্রতিবেদককে বলেন, ছেলের নিউমোনিয়া হওয়ায় ১০ দিন আগে চাঁদপুর থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা জানান, আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন। সেদিন শয্যা না থাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। খরচ মেটাতে না পারায় ফের এখানে আসছি। কিন্তু আজও আইসিইউ ফাঁকা নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এখন কোথায় যাব সেটিও বুঝতে পারছি না। শুধু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেই নয়, সাধারণ শয্যাও খালি নেই এই হাসপাতালে।

শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু রোগীর চাপে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। ভর্তি হতে না পেরে অনেকেই ফিরে যাচ্ছে। শিশুদের আইসিইউ সাপোর্ট পিআইসিইউ ও এইচডিইউতেও শয্যা খালি নেই। বাধ্য হয়েই অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা আরও জানান, শুরুতে চারতলার ১১৪নং ওয়ার্ডের ১২টি বিছানায় ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি করা হয়। এতে করে ওই ওয়ার্ডে অন্য রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরে নিচতলার দুই নম্বর ওয়ার্ডে ১৬টি বিছানা ডেঙ্গু কর্নার করা হয়। তাতেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এখন পুরো ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। ৪২টি শয্যার সবগুলোতেই রোগী ভর্তি আছে। শয্যা সংকটে হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে শিশু হাসপাতালের মতো একই চিত্র দেখা গেল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। শয্যা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের ৩১৩ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর বিছানায় ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি আছে আট বছর বয়সি দুই শিশু নাহিম ও সাজিদ। মোহাম্মাদপুর এলাকার বাসিন্দা সাজিদের মা সোনিয়া আক্তার বলেন, আট দিন আগে সাজিদের জ্বর আসে। বাড়িতেই প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। সুস্থ হওয়ার পর ফের জ্বর আসে। এরপর তাকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে যাই। শয্যা না পেয়ে এখানে আসি। বৃহস্পতিবার এখানে আসার পর ডেঙ্গু পজিটিভ হয়। শয্যা না পাওয়ায় অন্য রোগীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে।

একই বিছানায় ভর্তি শিশু নাহিমের বোন জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ভাইকে নিয়ে পাঁচ দিন আগে এখানে ভর্তি করাই। এখন শারীরিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শয্যা ফাঁকা না থাকায় আরেক রোগী সাজিদকে তাদের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের বেশ উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। শুক্রবার ৩১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য পাঁচজন রোগীকে অপেক্ষা করতে দেখা দেখা যায়। তাদের মধ্যে ৫ দিনের নবজাতক ও এক বছর তিন মাস বয়সি মুমূর্ষু শিশু ছিল। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে রোগী কম থাকলেও এখন শিশুদের দুটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি করা হচ্ছে। বড়দের জন্য ষষ্ঠতলায় দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। শয্যা সংকটে শিশুদের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেভাবে রোগী বাড়ছে এমনটা চলতে থাকলে আরও বিছানা লাগবে। চিকিৎসক অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, দুপুরে শিফট পরিবর্তন হওয়ায় এমনটি হয়েছে।

এদিন মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘুরে সেখানেও অনেক রোগীকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। হাসপাতালটির ডি-ব্লকের তিনতলায় অন্তত ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন ভর্তি হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১২ জন, মার্চে ২ জন, মে’তে ১১ জন, জুনে ৩৮ জন এবং জুলাই মাসের শুক্রবার পর্যন্ত ৫১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল ডা. একেএম জহিরুল হোসাইন খান বলেন, এখানে ২১ জন মেডিকেল অফিসার, ১৩ জন কনসালটেন্ট, ৩ জন সহযোগী অধ্যাপক ও ২ জন সহকারী পরিচালকসহ মোট ৩৯ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন নার্স রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এর বাইরে কিছু সহায়ক জনবল রয়েছেন। সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালের ৮০০টি শয্যা ডেঙ্গু চিকিৎসা ডেডিকেটেড করা হয়েছে। ঘোষণার পর চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুই মাসের জন্য ৩৬ জন চিকিৎসককে সংযুক্তি দিয়েছে। তারা এখনো যোগদান করেনি। এছাড়া নার্সিং অধিদপ্তর কোনো চিঠি দেয়নি। শুনছি বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চিকিৎসক-নার্স দিলে রোগীদের সেবা দিতে সহজ হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জ্বরসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন। কিন্তু ডেঙ্গুর ভিড়ে অন্য রোগীদের সহজে ঠাঁই মিলছে না। আবার হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। এমন প্রেক্ষাপটে রোগীদের মানসম্মত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। তাই ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দিলেই হবে না। সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে। রোগীরা সেবা নিয়ে সুস্থ ও সন্তুষ্ট কিনা সেটিও দেখতে হবে। সবার আগে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে সব দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগে মশা নিমূর্ল করতে হবে।

জাতীয়

সরকারের অনুমতি ছাড়া কেজি স্কুলসহ কোনো ধরনের বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা করা যাবে না। প্রকাশকদের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না বইয়ের বোঝা। আদায় করা যাবে না ইচ্ছেমতো ফি। খাত ও ফি’র হার থাকবে নির্দিষ্ট। চলমান ৫৭ হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে নিবন্ধন নিতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো প্রতিষ্ঠান পূর্ব অনুমোদন ছাড়া পরিচালনা করা যাবে না।

এ ধরনের নানা বিধান রেখে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) নিবন্ধন বিধিমালা তৈরি করছে সরকার। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বর্তমানে এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আছে। প্রক্রিয়া শেষে যাবে মন্ত্রিসভায়।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, কিন্ডারগার্টেনসহ (কেজি) বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের স্কুল তত্ত্বাবধানের জন্য ২০১১ সালের একটি বিধিমালা ছিল। সেটি যুগোপযোগিতা হারিয়েছে। বিশেষ করে অধিভুক্তি আর রেজিস্ট্রেশনের দিক সহজ করাসহ বিভিন্ন দিকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে জনস্বার্থে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে তত্ত্বাবধান করতে চাইলে আইনি ভিত্তি প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন সামনে রেখে এবারের বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। বিধিমালা কেউ প্রতিপালন না করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জানা যায়, প্রস্তাবিত এই বিধিমালার আওতায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানকারী নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি স্কুল এবং অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে। উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার (টিইও) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি মেট্রোপলিটন ও অন্য বিভাগীয় শহরে ৫ হাজার, জেলায় ৩ হাজার, উপজেলায় ২ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তিনি যাচাই শেষে তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে পাঠাবেন। তিনিই প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা চলমান প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চূড়ান্ত অনুমতি দেবেন। আবেদন করার ৬০ দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন বা বাতিল করতে হবে। প্রাথমিক অনুমতির মেয়াদ হবে সনদ দেওয়ার পর থেকে এক বছর। এই মেয়াদ শেষ হলে নবায়নের আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। আর পূর্ব তদন্ত ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান নবায়ন করা যাবে না।

প্রাথমিক অনুমোদনের পর নিতে হবে নিবন্ধন। শহরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত স্কুল নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। জেলায় ১০ হাজার এবং উপজেলায় ৮ হাজার টাকা। নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি, উপস্থিতি এবং শিক্ষা সমাপনের হার বিবেচনায় নেওয়া হবে। অনুমোদন বা অনুমতি কর্তৃপক্ষ ডিপিইও হলেও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হবেন বিভাগীয় উপপরিচালক (ডিডি)। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে ৫ বছর। নিবন্ধন সনদে নানা শর্ত উল্লেখ থাকবে। পাঠদান অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন না নিলে অনুমতি বাতিল হয়ে যাবে। নিবন্ধন সনদ প্রতিষ্ঠানকে সংরক্ষণ করতে হবে।

মেয়াদ শেষে নবায়ন করতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ দিন আগেই আবেদন দাখিল করতে হবে। নবায়নের মেয়াদ ৫ বছর। আর এজন্য নতুন নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফি’র ৫০ শতাংশ দিতে হবে। কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিল হলে ফের আবেদন করা যাবে। এ বিধিমালার আগে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আবেদন করে থাকলে তা এই বিধির আলোকেই নিষ্পন্ন হবে। ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ও এই বিধিমালার অধীনে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে গণ্য হবে। আগে নিবন্ধিতগুলো এই বিধিমালার আলোকে নবায়ন করতে হবে। আর আগে নিবন্ধিত কিন্তু পাঠদান শুরু করেনি, সেসব বিদ্যালয়কেও এই বিধিমালার অধীনে কাজ করতে হবে।

বর্তমানে কেজি স্কুল ব্যক্তিগত সম্পদের মতো পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করছেন। কিন্তু প্রত্যেক স্কুলের একটি ব্যবস্থা কমিটি থাকবে। কমিটিই চালাবে প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান শিক্ষক, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ২ জন থাকবেন। প্রতিষ্ঠাতা পাওয়া না গেলে ইউএনও বা ডিসির ২ জন প্রতিনিধি থাকবেন। এছাড়া থাকবেন নিকটতম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। প্রতিনিধি নির্বাচনে ভূমিকা রাখবেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

নির্বাচিত সদস্যরা সভাপতির কাছে পদত্যাগ করতে পারবেন। এভাবে কোনো পদ শূন্য হলে ১৫ দিনের মধ্যে বিধান অনুসরণ করে পূরণ করতে হবে। এভাবে কমিটি গঠনের পর প্রথমসভায় প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি বাদে বাকিদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাথমিক শাখা থাকলে তার জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি ইউএনও বা ডিসি অনুমোদন দেবেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ হবে ৩ বছর। এ কমিটিতে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও একজন অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য থাকবেন। কমিটির বৈঠক স্কুলেই করতে হবে। প্রতি ২ মাসে অন্তত একটা সভা হবে। তিনজন সদস্য ছাড়া কোরাম পূর্ণ হবে না।

ব্যবস্থাপনা কমিটির ৫ ধরনের কাজ আছে। এগুলো হলো-শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, তাদের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ, শৃঙ্খলার ব্যবস্থা, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা এবং বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করা। বিদ্যালয়ের সংরক্ষিত ও সাধারণ নামে দুটি তহবিল থাকবে। সংরক্ষিত তহবিলে এলাকা অনুযায়ী স্থায়ী আমানত বা সঞ্চয়পত্র আকারে থাকতে হবে। এরমধ্যে আছে- মেট্রোপলিটনে ১ লাখ, জেলায় ৭৫ হাজার, উপজেলা ও পৌরসভায় ৫০ হাজার এবং ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা।

ব্যবস্থাপনা কমিটির পূর্বানুমোদন ছাড়া এই টাকা তোলা যাবে না। আর সাধারণ তহবিলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুদানের অর্থ থাকবে। সভাপতি ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে উভয় তহবিল পরিচালিত হবে। ব্যক্তির নামে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে ৫ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করতে হবে। আর এই তহবিলের লাভের টাকা নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে। সঞ্চয়পত্র, আমানত ও অনুদানের অর্থ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় ব্যয়ের পর অবশিষ্ট থাকলে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যয় করা যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আয়-ব্যয়ের হিসাবসংক্রান্ত পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেবে।

এ ধরনের প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হবে ৩০:১। এই অনুপাত পূরণ করা হলেই শুধু জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে শাখা খোলা যাবে। আর স্কুল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত খুলতে হবে। কিন্তু কমপক্ষে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান থাকতেই হবে। একাধিক ক্যাম্পাস খোলা যাবে না। ইচ্ছেমতো টিউশন ফি নির্ধারণ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে উপজেলা/থানা/মহানগর শিক্ষা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পুনঃভর্তি বা নবায়নের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনুদান আদায় করা যাবে না। আর সহপাঠ কার্যক্রম, বিশেষ সুবিধা ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফি আদায় করা যাবে। তবে আয়-ব্যয় বিবরণী অভিভাবকদের জানাতে হবে।

শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতোই হতে হবে। থাকতে হবে একই ধরনের প্রশিক্ষণ। পঞ্চম শ্রেণির বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৬ জন শিক্ষক থাকতে হবে। নিয়োগের জন্য জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এরপর একটি বোর্ড নিয়োগ দেবে এবং এ বোর্ডে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি থাকবেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা শিক্ষাবর্ষ শেষের ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি এসব বিদ্যালয়ই বহন করবে, সরকার নয়।

বিদ্যালয় ভাড়া কিংবা স্থায়ী বাড়িতে হোক, মেট্রোপলিটন এলাকায় অন্যূন দশমিক ৮ একর, পৌরসভায় দশমিক ১২ এবং অন্য এলাকায় দশমিক ৩০ একর ভূমিতে হতে হবে। ভবন ও ভূমি ভাড়া নেওয়া যাবে। তবে এ বিধিমালার আগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ভূমির পরিমাণ কম হলে সে ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ এবং শিক্ষকদের কক্ষ থাকতে হবে।

বিদ্যালয়ে এনসিটিবির পাঠ্যবই অবশ্যই পড়াতে হবে। পাশাপাশি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঠ্যবই পড়ানো যাবে। তবে এ ধরনের সর্বোচ্চ ২টি বই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। আর নিজের ইচ্ছামতো বই পাঠ্যভুক্ত করা যাবে না। পাঠ্যবই নির্বাচনে শিশুদের ধারণ ক্ষমতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি বই নির্বাচনে দেশের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কিছু না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম থাকতে হবে। ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘ শিশু সনদের আলোকে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেট থাকতে হবে। শিক্ষা সফর, চিকিৎসা, খেলার ব্যবস্থা থাকতে হবে।