জাতীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত তদন্ত কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।

তদন্ত কাজ শেষ করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হইতে ২১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে নিহত ব্যক্তিগণের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন ও তাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ; গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হইতে ২১ জুলাই, ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ; এবং গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হইতে ২১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর বা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ ও কর্পোরেশন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ।’

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিবে এবং কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করিতে পারিবে।’

জাতীয়

দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। পাশাপাশি জামায়াত-শিবির ও তাদের অঙ্গ সংগঠনকে ‘নিষিদ্ধ সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ)-কে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন নং-৬৩০/২০০৯-এ ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখের প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত/প্রাপ্ত নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায়কে বহাল রেখেছে এবং সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে, যেখানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল৷

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তাদের সব অঙ্গ-সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাই সরকার, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে ‘নিষিদ্ধ সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

জাতীয়

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ঘটনায় কার গুলিতে কতজন হতাহত হয়েছে সেটা আমরাও প্রকাশ করব বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের সামনে রেখে তাদের পেছনে ছিল আসল ব্যক্তিরা।

তারা আগুন ধরিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। চরম ধৈর্যের সঙ্গে আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদের মোকাবিলা করেছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ঘটনায় পেছন থেকে পরামর্শ না দিলে এতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটতো না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সব হতাহতই কী পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আমরাও প্রকাশ করবো কার গুলিতে কতজন হতাহত হয়েছে।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির বৈঠকে কী বিষয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা জিজ্ঞাসা করেছেন আর কতদিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে। আমরা বলেছি, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। অল্পসময়ের মধ্যেই আমরা কাভার করতে পারবো। কারফিউ তুলে নিতে পারব, সামরিক বাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে।

তিনি বলেন, দুয়েকজন কিশোর নিহত হওয়ার কথা তারা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা একটি কিশোরের কথা জানালাম, তার বয়স কত, এখনো সার্টিফিকেট পাইনি, স্কুল থেকে বলা হয়েছে সাড়ে সতেরো। কিন্তু সেই ছেলেটি যে অন্যায় করেছে, সেটা জঘন্য। যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। তার ভিডিও অন্যান্য যে কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই আমরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছি। সে তো পুলিশ হত্যা করেছেই, পরে তাকে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। এই কাজ শেষ করে সে যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত, তাকে ফোন করে জানিয়েছে যে পুলিশ হত্যা করতে পেরেছি, তাকে ঝুলিয়ে দিয়েছি। অপরপ্রান্ত থেকে তাকে শাবাশ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, এই কিশোরকে আমরা কোথায় নেব, তার কাছেই প্রশ্ন রেখেছি। তাকে কিশোর সংশোধনাগারে রাখা হয়েছে, আইন অনুসারে তার ব্যবস্থা হচ্ছে। আর প্রাণহানির বিষয়ে বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তাদের দেখতে গিয়েছেন, তাদেরকে কিছু নগদ টাকা সাহায্য করেছেন। আমরা মনে করি, এই ঘটনা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছা করে কিংবা কারও প্ররোচনায় করেনি। তারা জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি কিছু বলেননি। তিনি আরেকটি প্রশ্ন করেছেন যে সেনাবাহিনী জাতিসংঘ লেখা এপিসি ভেহিকল ব্যবহার করেছে। আমি বলেছি, এটা জাতিসংঘ থেকে ফেরত এনেছে। সেনাবাহিনী তাড়াহুড়ো করে সেটা বের করেছে। যখন দৃশ্যমান হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যখনই তাদের নজরে এসেছে, তখনই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তদন্তের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চেয়েছে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের একজন সদস্যের একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন ছিল। আমরা সংখ্যা বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী করেছি। তদন্ত শুধু তাদেরই না, পুলিশেরও তদন্ত হবে। কেন পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হল, সেই তদন্ত হবে। কেউ ভুল করে থাকলে সেটাও আমরা দেখবো।

জাতীয়

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাকে বদলির মাধ্যমে নতুন পদে পদায়ন করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই পদায়ন করা হয়।

আদেশে বলা হয়, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ড. খ. মহিদ উদ্দিনকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) পদে; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামানকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) পদে এবং অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

জাতীয়

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের সঙ্গে দেখা করেছেন। এসময় তাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

সোমবার বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান সোহেল তাজ। পরে সন্ধ্যায় বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সোহেল তাজ।

তিনি বলেন, বিবেকের তাড়নায়, সাধারণ নাগরিক হিসাবে সমন্বয়কদের সঙ্গে দেখা করতে ডিবিতে এসেছি। দেশের ওপর সবার হক আছে, এজন্য এসেছি। ছাত্র-ছাত্রীদের বুকে যেন আর একটা গুলিও না করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ, প্রতিটা প্রাণহানির বিচার করতে হবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই দেশ তোমাদের, আশা ছাড়া যাবে না। সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সম্পদ ধ্বংস হয়েছে তা জনগণের টাকায় আবার করা যাবে। কিন্তু প্রাণের তুলনায় এই সম্পদ কিছুই নয়।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার নিরাপত্তার কথা বলে আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে মিন্টো রেডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে শনিবার সারজিস, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।

জাতীয়

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে বিবৃতি দিতে জোর-জবরদস্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি গুজব।

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডিবি হেফাজতে আনা হয়েছে। তারা ভালো আছেন। রোববার রাতে তাদের পরিবারের সদস্যরাও এসে তাদের দেখে গেছেন। শিগগিরই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।’

আজ সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে সাংবাদিকদের ডিবি প্রধান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধে জোর করে ছয় সমন্বয়কদের দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগটি গুজব। যারা এই গুজবটি ছড়িয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ- গুজব ছড়াবেন না। ডিবি একটি আস্থার জায়গা। সেখানে কাউকে আটকে রাখা হয় না। জোর করে বিবৃতি নেওয়া হয় না। তারা বরং অনুভব করেছেন যে, সরকার তো সব দাবি মেনেই নিয়েছে। যে কারণে তারা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরাও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, ছাত্র ছিলাম। এই ছয় সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এখানে এনেছি। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। এই সমন্বয়কারীদের ঘিরে অনেক গুজব চলছে। আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিবার ও সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা তাদের নিয়ে আসছি। তাদের পরিবার কিন্তু বলেছে যে, ওরা ভাল আছে। ওদের পরিবার কাল রাতে এসেছিল। আজকেও ডিবিতে এসেছে। তারা নিজেরাও দেখেছেন ওরা কেমন আছে।’

হারুন বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করি, যদি কোনও ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, আমাদের কাছে আসেন, তাহলে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাদের দেখভাল করা। সেটাই আমরা করছি।’

তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতেও পরিবারের লোকজন ডিবিতে এসেছে, দেখা করেছে। আজও দেখা করেছে, কথা বলেছে, সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ওরা যে ভালো আছে সেজন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।’

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এই কোটাবিরোধী আন্দোলনটা করেছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের ভেতরে ঢুকে একটি গোষ্ঠী ও জামায়াত-বিএনপি চক্র ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড করেছে। পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে হত্যা, মানুষ হত্যা করেছে।

রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোতে আগুন লাগিয়েছে। আমরা মনে করি, যদি আবারও চক্রান্তকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করে, তাহলে এই সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের দেখা দরকার।’

জাতীয়

কারফিউ শিথিল হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। জনমনে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকলেও সব জায়গাতেই ছিল মানুষের কর্মব্যস্ততা।

রাজধানী ঢাকায় যারা এতদিন ঘর থেকে বের হননি তারাও এদিন বেরিয়ে এসেছিলেন। ছুটির দিন হলেও মূূলত কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কেটেছে বেশির ভাগ মানুষের। এদিন সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার পাশাপাশি পেশাগত নানা কজেও যুক্ত ছিলেন।

শুক্রবার খোলা ছিল অনেক কারখানা। পোশাক শ্রমিকদের অনেকেই যার যার কর্মস্থলে গেছেন। কাজ সেরেছেন। শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছিলেন রোজগারের আশায়। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ ঘরে বসে থাকতে রাজি নন। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন রাস্তায় রিকশা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনও চলেছে অনেক বেশি।

রাজধানীর বাংলামটরে রিকশাচালক হাতেম আলি বলেন, চাকা না ঘুরলে আমাদের পেট চলবে না। তাই সব বন্ধ থাকলে আমাদের বিপদ। আমরা আর এসব গ্যানজাম চাই না। কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা খেয়ে বাঁচতে চাই। আজকে সকাল থেকেই রিকশা চালিয়েছি। আয়ও গত কয়েক দিনের চেয়ে ভালো। আগামী সপ্তাহে অবস্থা যেন আরও ভালো হয়।

সপ্তাহে শুক্রবারের সন্ধ্যাতেই বাকি ছয় দিনের বাজার সারেন সিঙ্গেল মাদার নূর-জাহান তন্বী। পেশায় ব্যাংকার তন্বী থাকেন সেগুনবাগিচায়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটেছে- তা ন্যক্কারজনক। প্রাণভয়ে বাসা থেকেই বের হইনি। শুক্রবার কারফিউ অনেকটাই শিথিল ছিল। তাই অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন, আমিও তাই। দুই মেয়েকে নিয়ে বাজার সেরেছি। তিনি বলেন, আমরা এমন ঘটনা আর চাই না। স্বস্তি ফিরে আসুক সবখানে। সবকিছু স্বাভাবিক হোক। আগের অবস্থায় ফিরে আসুক।

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সেনাবাহিনী, পুুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। টহল থাকলেও নগরজুড়েই ফিরে এসেছে স্বস্তি। গত কয়েক দিন ধরে যারা বের হয়েছেন- তাদের কেটে যাচ্ছে শঙ্কাও। সাধারণ মানুষ বলছেন, সাম্প্রতিক সৃষ্ট পরিস্থিতি ছিল চরম ভয়ংকর ও আতঙ্কের। কারফিউ জারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। শুক্রবার নগরের সড়ক, বাজারসহ বিভিন্ন শপিংমলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারেন।

এদিন সড়কে দেখা মিলেছে রিকশা-সিএনজি, বাসসহ ব্যক্তিগত গাড়িও। ঢাকার ফার্মগেট, মিরপুর, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কল্যাণপুর, বনানী, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল করতে দেখা গেছে। মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে বাড্ডার সড়কসহ নগরের বিভিন্ন সড়কে বৃহস্পতিবার যানজট ছিল। শুক্রবার কোনো কোনো সড়কে যানজট ছিল। বৃহস্পতিবারের তুলনায় এদিন মানুষের চলাচল অনেক বেশি দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কাউফিউ শিথিল করা হয়। সাধারণ মানুষও ঘর থেকে বের হতে থাকে। খোলা হয় অফিস-আদালত। খোলে ব্যাংক, কারখানাও। পাশাপাশি সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

জাতীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

এর আগে আজ বিকালে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সাদা পোশাকের কিছু ব্যক্তি তাদের তুলে নিয়ে যায় বলে নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

নাহিদের বাবা বলেন, বিকাল ৪টার পর সাদা পোশাকে কয়েকজন এসে নাহিদ, আসিফ ও বাকেরকে তুলে নিয়ে যায়। তবে তারা কোথায় নিয়ে গেছে সেটি জানতে পারেননি। গত কয়েকদিন ধরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তাদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের সামনে পুলিশের উপস্থিতি ছিল। এর আগে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছিলেন এই দুই সমন্বয়ক।

এদিকে কোটা আন্দোলনকারীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পৌনে ৪টার দিকে একটি খুদে বার্তায় গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ও তাদের চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডের সামনে ডিবি পুলিশের অবস্থান নেওয়ার কথা জানান।

আসিফ মাহমুদের দেওয়া ওই বর্তায় বলা হয়, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আমাকে (আসিফ), নাহিদ ভাই আর বাকেরকে গৃহবন্দি করেছে ডিবি পলিশ। ওয়ার্ডের সামনে ও হাসপাতালে ডিবি পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

এছাড়া হাসপাতালের সামনে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। আমাদের সব ধরনের কমিউনিকেশন বন্ধ করে রাকা হয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

এদিকে, তাদের তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ডিবির আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে কল করা হলেও তারা তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।

জাতীয়

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, নরসিংদী জেলখানসহ সারাদেশে যারা নজিরবিহীন তান্ডব ও নৈরাজ্য চালিয়েছে তাদেরকে খুুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

আজ দুপুরে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আরো বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। যারা বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে তাদেরকে খুুঁজে বের করতে সরকারের পক্ষ থেকে করণীয় সব কিছু করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নরসিংদী জেলখানায় যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে সেজন্য সরকার সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনীসহ সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে কাজে লাগিয়ে আজ নরসিংদীসহ দেশের পরিস্থিতি শান্ত করেছেন।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী-১ আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুুখ।

জাতীয়

চলমান কারফিউ আরও শিথিল হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে এই কারফিউ বলবৎ থাকবে। তবে এসব এলাকায় শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্যান্য জেলায় কারফিউর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকেরা।

গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ২০৪ জন নিহত হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। এরপর ধাপে ধাপে কারফিউ শিথিল করছে সরকার।