জাতীয়

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদসহ ৩০ বুদ্ধিজীবীর পরামর্শ নিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এজন্য আগামী ১৩ মার্চ বিকেল তিনটায় এক বৈঠক আয়োজন করে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সংস্থাটি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বুধবার (৯ মার্চ) নির্বাচন ভবনে তার দপ্তরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজন, গণমাধ্যম, নারী নেত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ নিয়ে তৈরি করবেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ। ধারাবাহিক সংলাপের প্রথম সভায় ৩০ বুদ্ধিজীবী/শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ইসি।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরেটস প্রফেসর ডক্টর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর বোরহানউদ্দিন খান, সোশিয়লজির অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

এছাড়াও রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, অধ্যাপক আখতার হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য তানভির হাসান, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মফিজুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মোহাব্বত খান, অধ্যাপক ডক্টর মোবাশ্বের মোনেম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. ফেরদৌস হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামছুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিম আরিফ সিদ্দিকি।

আগামী ২২ মার্চ বিশিষ্টজন এবং ৩০ মার্চ গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠক করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন তারা শপথ নিয়ে প্রথম অফিস করেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর পুরোদমে এখনো কাজ করেনি কমিশন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা নিবেদন, সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ভোটার দিবস উদযাপন ও নানা আনুষ্ঠানিকতা করেছেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর এতো তাড়াতাড়ি আগের কোনো কমিশন মতবিনিময় বা সংলাপে বসার উদ্যোগ নেননি। অবশ্য দায়িত্ব নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন- আমরা দলগুলোকে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারি।

নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন ২০১৭ সাল। সে বছর ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে কার্যত ওই সংলাপ শুরু হয়েছিল। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার কমিশন।

সর্বশেষ সংলাপ থেকে আসা সুপারিশের মধ্য থেকে দুটো প্রধান ভাগে ভাগ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে একটি অংশ নিজেদের এখতিয়ারভুক্ত। অন্যদিকে সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। সরকারের এখতিয়াভুক্ত সুপারিশগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় কমিশন। আর অন্যগুলো নিজেদের কর্মপরিকল্পনার ভেতর অন্তর্ভুক্ত করেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনেই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই হাতে নিতে নির্বাচনী প্রস্তুতি। আর তার আগেই সংলাপের আয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন সচেতন মহল।

জাতীয়

সংক্রমণ কমার ধারায় দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার নেমে এসেছে ওমিক্রনের দাপট শুরুর আগের পর্যায়ে, জানুয়ারির পর প্রথমবারের মত দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছে এক জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ৩২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার হায়েছে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এর আগে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। পরদিন শনাক্তের হার ২ শতাংশের ঘর ছাড়ায়, করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন এই হারকে জানুয়ারির শেষ দিকে নিয়ে যায় রেকর্ড ৩৩ শতাংশে। ফেব্রুয়ারি থেকে শনাক্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও কমতে শুরু করে।

বাংলাদেশ কোভিডে মৃত্যুহীন দিন দেখেছিল সর্বশেষ গতবছরের ৯ ডিসেম্বর। আর সর্বশেষ ১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল ৮ জানুয়ারি। এরপর রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুও বাড়তে থাকে।

তবে ওমিক্রনে মৃত্যু হয়েছে ডেল্টার সময়ের চেয়ে অনেক কম। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৪৩ জনের মৃত্যুই সংক্রমণের এবারের ঢেউয়ে সর্বোচ্চ। ডেল্টার সময় আড়াইশ ছাড়ানো মৃত্যুও বাংলাদেশ দেখেছে।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ৯৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে সেরে উঠেছেন দুই হাজার ৮২৪ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৭০ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।

মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ

গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ২৩৮ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা,যা মোট আক্রান্তের ৭৩ শতাংশের বেশি।

যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে তিনি পুরুষ। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা। তার বয়স ছিল ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬০ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৪৪ কোটি ৯৮ লাখের বেশি।

জাতীয়

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবারে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে ৩ অথবা ৪ এপ্রিল। রমজান শুরুর সময় ৩ এপ্রিল ধরে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সময়সূচি অনুযায়ী, ৩ এপ্রিল প্রথম রমজানে ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ভোররাত ৪টা ২৭ মিনিট এবং ইফতারির সময় ৬টা ১৯ মিনিট।

তবে দূরত্ব অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১১ মিনিট পর্যন্ত যোগ করে ও ১০ মিনিট পর্যন্ত বিয়োগ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেহরি ও ইফতার করবেন। এমনটি জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটি আরও জানায়, সেহরির শেষ সময় সতর্কতামূলকভাবে সুবহে সাদিকের ৩ মিনিট আগে ধরা হয়েছে এবং ফজরের ওয়াক্ত শুরুর সময় সুবহে সাদিকের ৩ মিনিট পরে রাখা হয়েছে। অতএব, সেহরির সতর্কতামূলক শেষ সময়ের ৬ মিনিট পর আজান দিতে হবে। এছাড়াও সূর্যাস্তের পর সতর্কতামূলক ভাবে তিন মিনিট বাড়িয়ে ইফতারের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয়

দেশে প্রথমবারের মতো ই সিম চালুর ঘোষণা দিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন।

আগামী ৭ মার্চ থেকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে গ্রাহকরা ই সিম নম্বর নিতে পারবেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে টেলিফোন অপারেটর কোম্পানিটি।

মোবাইল ফোনে এমবেড করা ই সিম ব্যবহার করে অপারেটরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে। এজন্য ইসিম সাপোর্ট করে এমন একটি মোবাইল ডিভাইস থাকতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ জন্য আলাদা করে কোনো সিম কার্ড কিনতে হবে না। অর্থাৎ প্রচলিত প্লাস্টিক সিম কার্ড ছাড়াই গ্রাহকরা পাবেন মোবাইল সংযোগের সুবিধা।

প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “এ ধরনের উন্নত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অগ্রণী হিসেবে, এ যাত্রায় যুক্ত হতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রামীণফোনের নতুন ই সিম সংযোগ পেতে হলে ক্রেতাদের ইসিম সমর্থন (সাপোর্ট) করে এমন ডিভাইস নিয়ে গ্রামীণফোনের এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারে (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) যেতে হবে।

সেখানে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে ইসিমের জন্য অনুরোধ করতে হবে। সিম কেনার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, গ্রামীণফোনের অনলাইন শপের মাধ্যমেও ইসিমের জন্য অনুরোধ করা যাবে।

ই সিম সমর্থন করে এমন ডিভাইসে থাকা ক্যামেরা দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করে ই সিম সক্রিয় করতে ইন্টারনেট সংযোগ (মোবাইল ডেটা অথবা ওয়াইফাই) চালু করতে হবে।

বহু নেটওয়ার্ক এবং নম্বর একটি ই সিমে সংযুক্ত করা যাবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটা নির্ভর করবে হ্যান্ডসেটের ওপর।

জাতীয়

মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা হয়।

এতে বলা হয়, সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সকল জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান উচ্চারণ করবেন। এছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষকগণ ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান উচ্চারণ করবেন।

জাতীয়

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, করোনার কারণে বন্দিদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ। তাদের পরিবারের সঙ্গে সপ্তাহে একদিন ১০ মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি ভিডিওকলের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

রোববার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কমপ্লেক্সে ১২তম ব্যাচ ডেপুটি জেলার এবং ৫৯তম ব্যাচ কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কারাগারে দায়িত্ব পালন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর ও চ্যালেঞ্জিং। কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং বৃদ্ধি করা হয়েছে বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই ২০০ বছরের ইতিহাসের সকালের নাস্তায় রুটি ও গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে চার দিন সবজি-রুটি, দুদিন খিচুড়ি, একদিন হালুয়া-রুটি দেওয়া হচ্ছে, যা যুগান্তকারী পরিবর্তন। বাংলা নববর্ষসহ বিশেষ দিবসগুলোতে উন্নত মানের খাবারের জন্য বন্দি প্রতি বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবন ও যৌবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন কারাগারের চার দেয়ালের ভেতরে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারাগারের ভেতরে বসেই। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামক গ্রন্থ দুটিতে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন এবং কারাগারের বিষয়াবলি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই কারাগারেই নির্মমভাবে শহিদ হয়েছেন জাতীয় চার নেতা। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শৈখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা জানি কারাগার ক্রিমিন্যাল জাস্টিস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কারাগারে নিরাপদে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের সাজা কার্যকর করা হয়েছে কারাগারে। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস ও কারাগারের নাম একসঙ্গে মিশে আছে I

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, কারাগার এখন কেবল শাস্তি কার্যকর করার জায়গা নয়; বরং কারাবন্দিদের বিভিন্ন প্রকার কর্মমুখী প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যম। দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে দেওয়ার ন্যায় গুরুদায়িত্ব পালন করছে কারাগারগুলো। দেশের সব কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অধিকাংশ জেলা কারাগারে বন্দিদের যুগোপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বন্দি শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের আয়ের অর্ধেক বন্দিকে দেওয়া হচ্ছে ।

তিনি আরও বলেন, কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

পরে মন্ত্রী রিক্রুট ডেপুটি জেলাদের রেঙ্ক ম্যাচ প্রদান এবং রিক্রুট প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রশিক্ষণার্থীদের অন-আর্মড কম্ব্যাট ও পিটি ডিসপ্লে উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) শপথ গ্রহণ করেছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাদের শপথ পাঠ করান।

রোববার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ আলী আকবর।

অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

আগামীকাল (সোমবার) থেকে তারা নির্বাচন কমিশন ভবনে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। সেখানে সকালে তাদের বরণ করে নেওয়া হবে। পরে দুপুর ১টায় নতুন কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা রয়েছে।

শনিবার বিকালে সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বাধীন অপর চার নির্বাচন কমিশনার হলেন— অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নিয়োগ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লে­খ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠিত হলো। নির্বাচন কমিশন আইনের অধীনে গঠিত এটিই প্রথম কমিশন।

নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার পর যেদিন প্রথম চেয়ারে বসেন, সেদিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাদের দায়িত্বকাল।  আগামীকাল (সোমবার) এই কমিশন দায়িত্ব নেবেন।  গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার কমিশন বিদায় নিলে দ্বিতীয়বারের মতো পুরো কমিশন ফাঁকা হয়ে পড়ে।

জাতীয়

দেশে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আরও ১১ জন মারা গেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১ জন বেশি মারা গেছেন। গতকাল মারা গিয়েছিল ১০ জন। আজ ১১ জনসহ এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৬ জনে। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ২৫ হাজার ৬৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ জন। আগের ২৪ ঘন্টায় ২৭ হাজার ৪৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৫১৬ জন। গতকালের চেয়ে করোনা সংক্রমণ কমেছে দশমিক ০৫ শতাংশ। গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আজ তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ হাজার ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৮৬৩ জন। শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আজ এই জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১ জন মারা গেছেন। গতকাল এই জেলায় ২ জন মারা গিয়েছিল।

আজ চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ জন জন, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ২ জন করে এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। তবে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে আজ করোনায় কেউ মারা যায়নি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৯৩৬ জন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৮২ জন। সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৯২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

জাতীয়

আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জেতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার রাতে পৃথক বার্তায় এ অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

অভিনন্দন বার্তায় রাষ্ট্রপতি কার্যালয় থেকে বলা হয়, এক ম্যাচ হাতে রেখেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। টাইগারদের জয়ের এ ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।

অপর অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওয়ানডে সিরিজ জয়লাভ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।  এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল টাইগাররা।

ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে আফগানিস্তান ৪৫.১ ওভার খেলে ২১৮ রান করে গুটিয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশ পায় ৮৮ রানের জয়।

আফগানিস্তানে বিপক্ষে এ সিরিজ জয়ের মাধ্যমে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজে জয় পেল। সিরিজের শেষ ম্যাচটি আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয়

বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধানতম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র। এ দেশের ৯৮.৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। ভাষাবিকাশের ইতিহাসে ১৩৭২ বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ পুরোনো এ ভাষা। পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা ছিল বাংলা। সুলতানি আমলেও এ অঞ্চলের অন্যতম রাজভাষা ছিল বাংলা। মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচিত হয়েছিল বাংলায়। আরাংকান রাজসভার আনুকুল্যে বাংলা সাহিত্যের প্রভূত সমৃদ্ধি সাধিত হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী বাংলার নবজাগরণ উত্থান এবং বাংলার কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক বিকাশকে এক সূত্রে গ্রথিত করেছিল বাংলাভাষা ও সাহিত্য। বর্তমানে মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠবৃহত্তম ভাষা।

মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বিভাগোত্তর কালে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু বে-আইনিভাবে ক্ষমতার দাপটে বাংলার বদলে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেছিল জিন্নাহ-নাজিমুদ্দীন গংরা। ফলে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জিন্নাহর ‘সাধের পাকিস্তান’ কায়েমের পর ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি বাংলাভাষা আন্দোলনকে মূলীভূত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ স্ফূর্ত হয়েছিল বায়ান্নোর চেতনার শক্ত পাটাতনে দাঁড়িয়ে ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালের উত্তাল আন্দোলন ও সংগ্রামের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর ইশারায় ও তার উদাত্ত আহ্বানে গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বহু রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে একটি স্বাধীন স্বদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মূল অঙ্গীকার ছিল জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রয়োগ; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও আমরা তার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব করতে পারিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখনো জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষার পূর্ণ প্রয়োগ নয় কেন?

আমরা জানি, ১৯৪৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তরুণ তুর্কি শেখ মুজিবুর রহমান স্থির ও অচঞ্চল কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ‘বাংলাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করা হোক’। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নানা আন্দোলন, সংগ্রাম, মিছিল, মিটিং, সভা ও সমাবেশ শেষে এবং সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর রহমানসহ নাম না জানা শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা। বস্তুত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষাবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে গৃহীত হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করা হয়।

দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন ‘…আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে, সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু হবে। বাংলাভাষার পণ্ডিতরা পরিভাষা চালু করবেন, তারপরে বাংলাভাষা চালু হবে তা হবে না। পরিভাষাবিদরা যত খুশি গবেষণা করুন। আমরা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাভাষা চালু করে দিব, সে বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে, পরে তা সংশোধন করা হবে’।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু তার দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষিত এ প্রতিশ্রুতি সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাই তো আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলা। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যার সংবিধান বাংলাভাষায় লেখা হয়েছে এবং যার সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রভাষা একটি এবং তা হলো বাংলাভাষা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩ এ বলা হয়েছে-‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের কাল-বিলম্ব না করে বাংলায় রায় লেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি দাপ্তরিক কাজে বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করা হয়। এতদসত্ত্বেও স্বাধীনতার তিন বছর পর তিনি অত্যন্ত বিষাদের সঙ্গে লক্ষ করলেন যে, সরকারি-বেসরকারি অফিসে ও আদালতে এবং উচ্চশিক্ষায় অবাধে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষার চর্চা চলছে। এতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাভাষা প্রচলন সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়-‘দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষা করার পরও বাংলাদেশের বাঙালি কর্মচারীরা ইংরেজি ভাষায় নথি লিখবেন সেটি অসহনীয়। এ সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তী নির্দেশ সত্ত্বেও এ ধরনের অনিয়ম চলছে। আর এ উশৃঙ্খলতা চলতে দেওয়া যেতে পারে না’। এর আগে ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণকালে এবং ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাভাষাকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। মাতৃভাষার পক্ষে তার এ শক্ত অবস্থানের কারণে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনে তুমুল উদ্দীপনা প্রদীপিত হয়েছিল। চাকরি, পদোন্নতি, নথিপত্রে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচারে বাংলাভাষার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে বাংলাভাষা শেখার একটা ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট অকালে গণ-দুশমনদের বুলেটের আঘাতে তার জীবনাবসানের পর জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন প্রচণ্ড প্রতাপে বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাভাষার ওপর ঔপনিবেশবাদের ভূত আবার চেপে বসে। বাংলাদেশ বেতার, চালনা বন্দর, পৌরসভা, রাষ্ট্রপতি শব্দের পরিবর্তে যথাক্রমে রেডিও, পোর্ট অব চালনা, মিউনিসিপাল করপোরেশন, প্রেসিডেন্ট ব্যবহারের বাতিক বাড়তে থাকে। এ নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৯৭৯ সালে আবার সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এর কোনো বাস্তব প্রয়োগ ঘটে না। ফলে ১৯৮৪ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষ’ নামীয় একটি প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পের ১৮ নম্বর কার্যক্রমটি ছিল সব অফিসের সাইনবোর্ড ও কর্মকর্তাদের নামফলক বাংলায় লিখতে হবে। নথিপত্র বাংলায় লিখে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর বাংলায় দিতে হবে। সে অনুযায়ী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রতিনিয়ত বাংলায় স্বাক্ষর করছেন। কিন্তু সর্বত্র এ নির্দেশনা শতভাগ ফলবতী হয়নি। ফলে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে ১৯৮৭ সালে ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন’ প্রণীত হয়। এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশে সর্বত্র তথা অফিস-আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব ও অন্যান্য আইনানুগ কার‌্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। বাংলাভাষা প্রচলন আইনের ৩(১) উপধারায় বলা হয়, উল্লিখিত কোনো কর্মস্থলে কোনো ব্যক্তি বাংলাভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহলে সে আবেদন বে-আইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে। ধারা ৩(৩)-এ উল্লেখ করা হয়, যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ আইন অমান্য করেন তবে তিনি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু বরাবরের মতো এ আইনও পূণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। সে কারণে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তে বাংলাদেশ আইন কমিশন উচ্চ আদালতে আইনটি কার্যকর করার পাশাপাশি ন্যায়বিচারে সবার সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করে। অন্যদিকে ২০১২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানান রীতি অনুরসণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে ‘সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা’ নামক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। এতদসত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিসে, উচ্চ আদালতে বাংলাভাষার পূর্ণ প্রচলন ঘটেনি। সরকারি অফিসে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তার কর্মকাণ্ডে প্রধানত বাংলা ব্যবহার করলেও বাণিজ্যিক বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এবং করপোরেট অফিসে বাংলার উপস্থিতি খুবই কম বা কোনো ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক নথিপত্রে ইংরেজি ভাষার প্রচলন থাকায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকে ‘বাংলাভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’-এর লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ঋণ অনুমোদনের চিঠিতে বাংলা ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এ নির্দেশের বাস্তবায়ন খুব কমই লক্ষ করা যায়। প্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসা এবং উচ্চশিক্ষায়ও ১৯৮৭ সালের বাংলাভাষা প্রচলন আইনের প্রয়োগের তেমন বালাই নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকেও বাংলার প্রয়োগ নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দের একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজাউল হক নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বাংলাভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ অনুযায়ী অফিস-আদালত, গণমাধ্যমসহ সর্বত্র বাংলাভাষা ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি দূতাবাস ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সাইনবোর্ড, নামফলক ও গাড়ির নম্বর-প্লেট, বিলবোর্ড এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখা ও প্রচলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশের তিন মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে এ আদেশটি কার্যকর করতে বলে। কিন্তু সে আদেশের বাস্তবায়নে লক্ষ্যযোগ্য কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এরপর ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার এবং গাড়ির নতুন প্লেটে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ অনুরোধেরও পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেনি। অপার বিস্ময় জাগে এই দেখে যে, ষোলো কোটি বাঙালির এই বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে লেখা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-এর ওয়েবসাইটে সরকারি পঞ্চাশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নামের তালিকা, সেটি ইংরেজিতে বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে ব্র্যাকেট বন্দিতেও বাংলা নামের বালাই নেই। অথচ প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, সেটির নামকরণ বাংলায় করার কথা রয়েছে। যেমন, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাভাষা প্রচলন আইন থাকার পরও আমারা ডিপিডিসি, বিআরটিসি, টেলিটক, বিটিএমসি, বিজিবি, বিটিসিএল, বিজেএমসি ইত্যাদি নামকরণ দেখতে পাই। অথচ প্রতিবেশী দেশ নেপালে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিদেশি ভাষা পরিত্যাগ করে স্থানীয় নিজ ভাষায় মাত্র দুই মাসের মধ্যে নামকরণ করেছে।

আসলে বাংলাভাষার প্রয়োগ সাধনে আমাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করে। তা না হলে প্রেরক ও প্রাপক বা আদান ও প্রদানকারী বহিরঙ্গে বাঙালি হলেও বিয়ে, জন্মদিন, বউভাত গায়ে হলুদসহ নানা আয়োজনের আমন্ত্রণপত্র ইংরেজিতে রচনা করবেন কেন? দ্বিতীয়ত যে রোমান হরফে বাংলা লেখার বিরুদ্ধে পাকিস্তান জামানায় এত আন্দোলন করেছি আমরা, সেই আমরা কেনইবা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে রোমান হরফে বাংলা লিখছি? স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেই শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়াশোনা ও ভাব বিনিময়কালে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ এক লেখায় আফসোস করে বলেছেন, ‘বাংলা ছাড়া তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় অন্য কোনো বিভাগে বাংলায় প্রশ্নপত্র রচিত হয় না।’

দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বাংলা গান পরিবেশনের বিরতিতে কথোপকথনকালে উপস্থাপক ও শিল্পী হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা মিশ্রণে অদ্ভুত বাক্য বিনিময় করে থাকেন। এফএম রেডিওর উপস্থাপকদের তো মনে হয় তাদের মাতৃভাষা ইংরেজি, কখনো হিন্দি বা অন্য ভাষা। আর এখানে তারা কষ্ট করে বাংলা বলছেন। সবশ্রোতা বাঙালি হওয়ার পরও জকি নামক এসব উপস্থাপক কুল হ্যালো ভিউয়ার্স, হ্যালো লিসেনার্স বলে জগাখিচুড়িসমেত বিকৃত ভাষায় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন।

আমাদের নতুন প্রজন্ম স্মার্টনেস প্রকাশের প্রত্যয় থেকে ভিন্ন ভাষার মিশ্রণে নতুন নতুন অদ্ভূতুড়ে শব্দ ব্যবহার করছে। ট্রিট, জোশ, পিনিক, অসাম, মাগার, বিন্দাস, প্যারা, প্রাংক, মাইরালা, খ্রাপ (খারাপ), সেইরাম, ভাল্লাগছে, আম্রা (আমরা), এক্টা, আজিব, তার ছিঁড়া, Kmn,

ekdm Bay/Bai, Wlc, Bandu, Wcm, Gf, Tnxq, R8, Hbd, Gm/Gd, Nc, Knk, Srsly ইত্যাদি উচ্চারণে ও লেখায় তারা ভাব বিনিময় করছে।

বস্তুত বাংলাভাষার এ দীনদশার মূল কারণ আমাদের কোনো ভাষানীতি নেই, নেই কোনো ভাষা পরিকল্পনা। বিকৃতিকারীদের জন্য নেই কঠোর কোনো শাস্তির ব্যবস্থা। অথচ একুশের চেতনার কথা হরহামেশা আমরা বলি, ভাষা নিয়ে কত-শত গর্ব করি; কিন্তু অন্তরে ও বাইরে গভীর অনুরাগ লালন করি না। একুশের যে স্লোগান ‘মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘সর্ব স্তরে বাংলাভাষা চালুক কর’, ‘মাতৃভাষা হবে শিক্ষার বাহন’ তার প্রতি আনত হই না। কিন্তু চীন, কোরিয়া, জার্মানি, জাপান, তুরস্ক, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইরানি প্রমুখ জাতি মাতৃভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তাই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে আমাদের আগে মাতৃভাষার দ্বারস্থ হতে হবে। রবীন্দ্রনাথ যে বলেছেন ‘আগে চাই বাংলাভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন’-সে কথা সর্বাগ্রে মানতে হবে। ভাষার গাঁথুনি সবল করার পাশাপাশি বাংলাভাষাকে অর্থনৈতিক স্রোতধারার সঙ্গে সংযোগ সাধন করতে হবে। এরপরে পর-ভাষার প্রতি নজর দিতে হবে। কারণ শেকড় শক্ত-পোক্ত না হলে সে বৃক্ষ কোনদিন ফলবতী হয় না, তেমনি শত-সহস্র শাখায় সেটি পল্লবিতও হয় না।

সেলিম আকন্দ , লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক