জাতীয়

দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৫ জন মারা গেছেন। গতকাল  রেকর্ডসংখ্যক ২১২ জন মারা গিয়েছিল। গতকালের চেয়ে আজ ১৭ জন কম মারা গেছেন। আজ মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১২১ ও নারী ৬৪ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৮৯ জনে। এদিকে আজ নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৭২ জন।

করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত ৭ জুলাই থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৩৭৫ জন, ৭০ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং নারী ৪ হাজার ৮১৪ জন, ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত ২৪ ঘন্টায় মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়,  শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী ১ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫১ জন এবং ষাটোর্ধ ৯২ জন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫১ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন, সিলেট বিভাগে ৭ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪৪ জন সরকারি, ২৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে, ১২ জন বাসায় মারা গেছেন আর ১ জনকে মৃতাবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শনাক্ত বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সুস্থতা বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ২৭ হাজার ৮৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ হাজার ৭৭২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ৩৬ হাজার ৫৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১ হাজার ৩২৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। এদিকে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৪ ঘন্টায় ১১ হাজার ৭১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৬ জন। ঢাকায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

গতকাল ১০ হাজার ৪৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৩ জন, যা ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩১ জন, গতকাল মারা যায় ২২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৬৯ লাখ ৩১ হাজার ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৭৫৫ জন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৬ হাজার ৩৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২৮৩ জন কম সুস্থ হয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৯ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ০১ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৮ শতাংশ কম।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৬ হাজার ২৩১ জনের।

আগের দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২০৯ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১২ হাজার ৯৭৮টি নমুনা কম সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৭ হাজার ৮৮৪ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৩৬ হাজার ৫৮৬ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৮ হাজার ৭০২টি নমুনা কম পরীক্ষা হয়েছে।

জাতীয়

দেশের বহুতল ভবন, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ফলে ছোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোও সময়মতো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে বড় বিপর্যয় ঘটছে। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকারী সংস্থা ফায়ার সার্ভিসের জরিপ বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, ৯০ দশমিক ৩৫ শতাংশ স্থাপনা অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ২২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

উল্লিখিত পরিসংখ্যান দেশের ভঙ্গুর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি উদাহরণ বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকির অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কলকারখানায় নিয়মিত মেজার টেস্ট ও ফায়ার ড্রিল না হওয়া এবং স্প্রিংকলার সিস্টেম না থাকার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা, যাচ্ছে প্রাণ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বলছে, অগ্নিনিরাপত্তা ও অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় নিয়মিত জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সন্তোষজনক-এই তিন ক্যাটাগরিতে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করেন। এক্ষেত্রে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক ব্যবস্থাদির ২২ ধরনের তথ্য নেওয়া হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৫০টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাকে এ জরিপ কার্যক্রমের আওতায় এনেছেন তারা। যেখানে মাত্র ৫০২টি স্থাপনকে ‘সন্তোষজনক’ বলা হয়েছে। যা মোটের ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৩ হাজার ৫১৮ স্থাপনাকে। জরিপে আসা মোট ভবনের মধ্যে যা ৬৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই জরিপে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে ১ হাজার ১৮৭টি। শতকরা হিসাবে যা ২২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ফায়ার সেফটি ও আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে আমরা স্থাপনাগুলো তিন ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করি। এক্ষেত্রে আমাদের একটি চেকলিস্ট রয়েছে সেগুলো দেখে এটি নিশ্চিত করা হয়। যারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমরা গুলশান শপিং কমপ্লেক্সকে ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়ে দিয়েছি। যেহেতু সিটি করপোরেশনের মধ্যে এটি তাই তাদের সুপারিশ করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ৬টি ক্যাটাগরির মোট ৫ হাজার ২০৭টি স্থাপনার জরিপ করে। এর মধ্যে রয়েছে-শপিংমল-মার্কেট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, হাসপাতাল-ক্লিনিক, আবাসিক হোটেল ও মিডিয়া সেন্টার। এই জরিপে দেখা যায়, ১ হাজার ৫৯৫টি শপিংমল ও মার্কেটের মধ্যে মাত্র ২৪টির অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক। আর ঝুঁকিপূর্ণ ৮৯৭টি ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৬৭৪। ১ হাজার ৫২৭টি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৯টি সন্তোষজনক, ১ হাজার ৭২টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৩৩৬টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ৮০৫টি ব্যাংকের মধ্যে ২০১টি সন্তোষজনক, ৫৯৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১১টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ৬৯৯টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৬৩টি সন্তোষজনক, ৫০২টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৩৪টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ৫৩৩টি আবাসিক হোটেলের মধ্যে ৭১টি সন্তোষজনক, ৪৩৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ৪৮টি মিডিয়া সেন্টারের মধ্যে ২৪টি সন্তোষজনক ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ।

জানতে চাইলে ঢাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ফায়ার সার্ভিসের উল্লিখিত জরিপে দেশের ভঙ্গুর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এটি আশঙ্কাজনক। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ৩ মাসে বহুতল ভবনে ‘ফায়ার ড্রিল’ (অগ্নিনির্বাপণ ও সচেতনতা মহড়া) হওয়ার কথা। কিন্তু তা নিয়মিত হচ্ছে না। ইন্ডাস্ট্রিতে স্প্রিংকলার সিস্টেম থাকার কথা, তাও অধিকাংশের নেই। এই ব্যবস্থায় পানির পাইপগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পর ফেটে গিয়ে পানি বের হতে থাকে এবং ফায়ার অ্যালার্ম বাজে। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। উন্নত বিশ্বে অধিকাংশ অগ্নিদুর্ঘটনা এই ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া অন্তত ৫ বছর পর পর মেজার টেস্ট করার কথা। যার মাধ্যমে ওই ভবনের বৈদ্যুতিক তারগুলোর অগ্নিপ্রতিরোধক সক্ষমতা দেখা হয়। এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট রাখার কথা। যা থেকে জরুরি পানি সরবরাহ করা যায়। যখন ফায়ার সার্ভিস থেকে লাইসেন্স দেওয়া হয় তখনও এই বিষয়গুলো নিশ্চিতের কথা বলা থাকে। কিন্তু পরে দেখা যায়, এগুলো সঠিকভাবে তদারকি হচ্ছে না। ফলে ভবনের অগ্নিঝুঁকি বাড়ছে।

জরিপ নিয়ে কথা হয় ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ অ্যান্ড ফায়ার প্রিভেনশনের সহকারী পরিচালক মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অগ্নিঝুঁকি নিরূপণের ক্ষেত্রে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আমরা বিবেচনাই নেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যেখানে কেমিক্যাল বেশি থাকে, মানুষ বেশি থাকে, দাহ্য বস্তু বেশি থাকে, মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে এবং পর্যান্ত অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা নেই-এমন অবস্থা যদি থাকে সেটাকে চিহ্নিত করি। নারায়ণগঞ্জের যে হাসেম ফুড ফ্যাক্টরি সেটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আর সন্তোষজনক বলা হয়, যদি সেখানে স্প্রিংকলার সিস্টেম থাকে, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ২৩ মিটার পর পর সিঁড়ি, ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকে, ওয়েল ট্রেইনড জনবলসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেটাকেই আমরা সন্তোষজনক অবস্থা বলি। বাংলাদেশে যমুনা ফিউচার পার্ক এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্প্রিংকলার থাকলে সেখানে শুধু দরকার ছিল পানি। এটি এমন একটি ব্যবস্থাপনা যেখানে প্রতি ১০ মিটার পর পর একটি ছোট চিকন একটি নজল থাকবে। আগুন লাগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি নিভে যাবে। ফায়ার সার্ভিসও লাগবে না, মালিকও লাগবে না। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কাতারসহ উন্নত বিশ্বে সাধারণ হোটেলেও তারা স্প্রিংকলার সিস্টেম স্থাপন করে রাখে। কারণ যাতে মানুষও মারা না যায়, সম্পদও রক্ষা হয়। ডিটেক্টর সিস্টেম স্থাপন। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বা সাইরেন বাজবে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের আইনে ছয়তলার উপরে হলে কোনো ভবনে আমরা বহুতল ভবন বলি। এখন সেটা আবাসিক হোক বা ইন্ডাস্ট্রি হোক। এসব ভবনে ফায়ার সেফটি প্ল্যান লাগবে, ইক্যুইপমেন্টগুলো স্থাপন করতে হবে।

২২ ধরনের তথ্য : বহুতল বাণ্যিজ্যিক ভবন পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক ২২ ধরনের তথ্য নেয়। সেগুলো হলো-ভবন সংশ্লিষ্ট রাস্তা, ভূগর্ভস্থ জলাধারের আয়তন ও ধারণক্ষমতা (স্প্রিংকলার ও রাইজার উভয়ই থাকলে শুধু স্প্রিংকলারের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে), ভূগর্ভস্থ জলাধার ব্যতীত নিকটস্থ পানির উৎসের (পুকুর/নদী-নালা/খাল), ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন ও ইন্টারনাল হাইড্রেন্ট সংক্রান্ত তথ্য, পাম্প, রাইজার ও স্প্রিংকলার সংক্রান্ত তথ্য, সিঁড়ি সংক্রান্ত তথ্য, লিফট সংক্রান্ত তথ্য, ডিটেকশন ব্যবস্থার বিবরণ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন সংক্রান্ত তথ্য, জেনারেটর সংক্রান্ত তথ্য, বয়লার ও জেনারেটর সংক্রান্ত তথ্য, ভবনের ছাদে লাইটনিং প্রটেকশন সিস্টেম স্থাপন বিষয়ক তথ্য, রেজিস্টারসমূহ সংরক্ষণ বিষয়ক তথ্য। আরও রয়েছে অভ্যন্তরীণ সাজসরঞ্জামাদি, ফ্লোর সংযোজন সংক্রান্ত, ভবনের উচ্চতা ২৬ মিটার বা ৮ম তলার উর্ধ্বে হলে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি এলাকায় তাপ, ধোঁয়া ও আগুনমুক্ত রিফিউজ এরিয়া তথ্য, ভবনের ছাদ নিয়ে বিস্তারিত, বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন বিষয়ক তথ্য, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষিত জনবল ও ভবন ব্যবহারকারীদের সমন্বয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সম্পর্কীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি।

জাতীয়

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে আরও ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ৮ হাজার নার্স নিয়োগের প্রস্তাবনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ১২ হাজার চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে ৪ হাজার চিকিত্সক কোন বিসিএস থেকে নেওয়া হবে—সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চলমান ৪২তম বিশেষ বিসিএস থেকে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।

পিএসসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে এখনো পর্যন্ত এ ধরনের কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র পেলে কমিশন সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে পিএসসি। তবে নতুন করে চিকিৎসকদের জন্য আলাদা বিসিএস গ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই। চলমান বিশেষ ৪২তম বিসিএস অথবা ৩৯তম বিসিএস থেকে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া সহজ হবে।

গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের ডাক্তার-নার্সরা গত দেড় বছর ধরে দিনরাত কাজ করছেন। অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন। তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় করোনাকালে আরও নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করা হবে।

সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী আরও ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের জন্য পিএসসিকে চাহিদাপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও পাঠানো হবে। ঐ সভায় চিকিৎসকদের মতো ৮ হাজার নার্স নিয়োগের জন্যও পিএসসি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালগুলোতে পদ থাকা সত্ত্বেও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পদে কোনো চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রথম ধাপে সাড়ে ৪ হাজার এবং ২০২০ সালে মে মাসে আরও অতিরিক্ত দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।

এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবং চলমান কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ৩৯তম বিসিএসে অপেক্ষমাণদের নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি পদে নিয়োগের সুপারিশ সম্পন্ন করেছে পিএসসি।

এদিকে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ৪২তম বিশেষ বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশিত হলে সাড়ে ৩১ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রিলিতে ৬ হাজার ২২ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। গত ৬ জুন মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় গত ২৪ জুন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরীক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমানে ৪২তম বিসিএস চলমান এবং অর্ধেকের বেশি পরীক্ষার্থীর ভাইভা হয়ে গেছে, এই অবস্থায় ৪২তম বিসিএস থেকেই দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হোক।

জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এনিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৫৯৩ জনে। গত ১১ দিন ধরে করোনায় শতাধিক মৃত্যু দেখছে বাংলাদেশ।

বুধবার (৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ১৬২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ১৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৬৩৯টি নমুনা। যেখানে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৯৮৭ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার ৪০২ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ২০১ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ ১১৫ জন। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৪ জন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছে।

করোনায় প্রথমবার দুই শতাধিক মৃত্যু, শনাক্ত ১১ হাজার ছাড়িয়ে

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১১৯ জন ও মহিলা ৮২ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১২ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১ জনের মধ্যে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৬ জন, ঢাকায় ৫৮ জন, রাজশাহীতে ১৮ জন, রংপুরে ১৪ জন, চট্টগ্রামে ২১ জন, ময়মনসিংহে ৮ জন, সিলেটে ৯ জন, বরিশালে ৭ জন মারা গেছেন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

জাতীয়

শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে আট ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট সূচকে এ তথ্য জানা যায়। গ্লোবাল সিটিজেনশিপ এবং রেসিডেন্সি পরামর্শক লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রতি বছর এই সূচক প্রকাশ করে। ভিসা ছাড়া কোন পাসপোর্ট দিয়ে কতটি দেশে ভ্রমণ করা যায় তার ওপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে সংগৃহীত আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ভ্রমণ তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করা হয়। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৮। চলতি বছর সেই অবস্থান থেকে আরো আট ধাপ নেমে বাংলাদেশ ১০৬ নম্বরে চলে এসেছে। বর্তমান সূচক অনুযায়ী আগাম ভিসা ছাড়া ৪১টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা। তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে লেবানন ও সুদান।

দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ নেপাল ১০৯, পাকিস্তান ১১৩ ও আফগানিস্তান ১১৬তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এশিয়ার তিন দেশ। প্রথম অবস্থানে রয়েছে জাপান, দ্বিতীয়তে সিঙ্গাপুর এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে বিশ্বের ৪১টি দেশে ভিসা ছাড়া অথবা অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে প্রবেশ করা যায়। দেশগুলো হলো—এশিয়া মহাদেশের ছয়টি দেশ ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও তিমুর। আফ্রিকা মহাদেশের ১৬টি দেশ—কেপ ভার্দ দ্বীপপুঞ্জ, কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ, গাম্বিয়া, গিনি বিসাউ, কেনিয়া, লেসোথো, মাদাগাস্কার, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিসিলি, সিয়েরা লিয়ন, সোমালিয়া, টোগো ও উগান্ডা।

ওশেনিয়ার সাতটি দেশ—কুক আইল্যান্ডস, ফিজি, মাইক্রোনেশিয়া, নিউই, সামাউ, টুভালু ও ভানুয়াতু। ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১১টি দেশ— বাহামা, বার্বাডোজ, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডস, ডোমেনিকা, গ্রানাডা, হাইতি, জ্যামাইকা, মন্ডসেরাত, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিন্স ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো। আমেরিকার মাত্র একটি দেশ বলিভিয়া।

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

আজ বুধবার (৭ জুলাই) এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

বুধবার (৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভারতের মুম্বাইয়েরে পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিলীপ কুমার। তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর।

অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন দিলীপ। গত ৩০ জুন তাকে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।

রবিবার তার আ্যকাউন্ট থেকে একটি টুইট করে দিলীপ কুমারের অসুস্থতার কথা জানানো হয়। টুইটে স্ত্রী সায়রা বানু, কিংবদন্তি অভিনেতার জন্য প্রার্থনা করার আবেদন করেছিলেন। চিকিৎসক ডা. নিতীন গোখলের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে তার চিকিৎসা।

চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে পানি জমেছে। করা হয় একাধিক পরীক্ষা।শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণ তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয় আইসিইউতে। এদিন সকালে চিকিৎসকরা জানান অভিমেতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।

জাতীয়

করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে আরোপিত বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নের জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ১-৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

বুধবার (৩০ জুন) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।

এর আগে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাতদিন মানুষের চলাচলে ‘বিধি-নিষেধ’ আরোপ করে ২১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এ সময় অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিধি-নিষেধের সময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এরইমধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, বিনা কারণে বাড়ির বাইরে গেলেই গ্রেফতার করা হবে।

১ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত আরোপ করা ‘বিধি-নিষেধ’ হলো:

১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে পরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকান বন্ধ থাকবে।

৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকাদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ডভ্যান/কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, রেল ও স্থল) এবং সংশ্লিষ্ট অফিসসমুহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪. টিকা কার্ড দর্শন সাপেক্ষে টিকা দেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঢালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি সময় নির্ধাররণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাফ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটিই দেশে একদিনে করোনায় শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে ২৮ জুন দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৬৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৫০৩ জনে। গত চারদিনে টানা শতাধিক মৃত্যু দেখলো দেশ।

বুধবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন ৮ হাজার ৮২২ জনসহ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৮৬ নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ হাজার ১০৫টি নমুনা। যেখানে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৫০ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ১১৫ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ ৫৭ জন। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চারজন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ৭২ জন ও মহিলা ৪৩ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ৯ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১৫ জনের মধ্যে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৩০ জন, ঢাকায় ১৭ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জন, রাজশাহীতে ২৩ জন, সিলেটে তিনজন, রংপুরে ১১ জন, ময়মনসিংহে ছয়জন ও বরিশালে দুইজন মারা গেছেন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

জাতীয়

দেশে করোনা সংক্রমণ এখন সর্বোচ্চ চূড়ায়। টানা তিন দিন শতাধিক মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল ১১২ জন, সোমবার ১০৪ জন এবং রবিবার ১১৯ জন করোনায় মারা গেছেন। গত সাত দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ২৮৫ জন এবং মারা গেছেন ৬৮৬ জন।

নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় ঊনত্রিশ দিনে আরো এক লাখ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় গতকাল দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেনের তীব্র সংকট। রোগীদের অক্সিজেনের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। অনেকের ৬ হাসপাতাল ঘুরেও মিলছে না অক্সিজেন। এ কারণে গ্রামাঞ্চলের রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এক বছর আগে। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনা রোগিদের উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অন্যতম। যেসব রোগির শ্বাসকষ্ট সহনীয় মাত্রায় থাকে, তাদের শ্বাস গ্রহণের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যাঁদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তাঁদের শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। সাধারণ রোগিদের জন্য আইসিইউতে যে অক্সিজেন দিতে হয়, তার পরিমাণ এক মিনিটে ৫/৬ লিটার। কিন্তু করোনা রোগির জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তার পরিমাণ মিনিটে ৭০/৮০ লিটার।

অনেক সরকারি হাসপাতালে আছে। তবে জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ হাসপাতালে নেই। বেসরকারি দুই থেকে তিনটি হাসপাতাল ছাড়া কোথাও এই অক্সিজেন নেই। বাতাসের মাধ্যমে এই অক্সিজেন তৈরি হয়। পিএসএ জেনারেটর স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে এই অক্সিজেন উত্পাদন করা সম্ভব। কিন্তু সময়মতো তা করা হয়নি।

জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের অক্সিজেন সংকটের কারণে গতকাল রোগী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যশোরে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও এই জেলার সবগুলো উপজেলা হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন আছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন।

পটুয়াখালীর দশমিনায় ৫০ শয্যার হাসপাতালে মাত্রাতিরিক্ত অক্সিজেন সংকট। অক্সিজেনের অভাবে রোগীরা মারা যাচ্ছে। নওগাঁয়ের পত্নীতলায় অক্সিজেন সংকট প্রকট। যশোরের শার্শায় গুরুজবাগান হাসপাতালটি ৫০ শয্যার। সেখানে অক্সিজেনের প্রকট সংকট। সেখানকার রোগীরা যশোরে দৌড়াচ্ছেন। এমন অবস্থা এখন সারাদেশের জেলা-উপজেলায় দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে দেশে ৭ হাজার ৬৬৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। দৈনিক হিসেবে এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।

দৈনিক হিসেবে এটি দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এদের নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট ১৪ হাজার ৩৮৮ জনের মৃত্যু হল। করোনা ভাইরাসে গত ২৮ জুন ৮৩৬৪ জন শনাক্ত ও ১০৪ জন মারা যান। গত ২৭ জুন ৫২৬৮ জন শনাক্ত ও ১১৯ জন মৃত্যু, গত ২৬ জুন ৪৩৩৪ জন শনাক্ত ও ৭৭ জনের মৃত্যু, গত ২৫ জুন ৫৮৬৯ জন শনাক্ত ও ১০৮ জনের মৃত্যু, গত ২৪ জুন ৬০৫৭ জন শনাক্ত ও ৮১ জনের মৃত্যু এবং গত ২৩ জুন ৫৭২৭ জন শনাক্ত ও ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ৪ হাজার ২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২০ ডিসেম্বর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর ৯৯ দিনে আরো ১ লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ায় ২৯ মার্চ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়ায়। ততদিনে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ, দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে হুহু করে। মাত্র ১৬ দিনে আরো ১ লাখ মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়লে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ এপ্রিল ৭ লাখ পেরিয়ে যায়। এই ১ লাখ শনাক্তে সময় লাগে ৪৭ দিন।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে আসে মে মাসে। পরের ১ লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগে দেড় মাস; দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে যায় ৩১ মে। ৯ লাখ শনাক্ত রোগীর দুঃখজনক মাইলফলকে পৌঁছানের আগে সোমবার রেকর্ড ৮ হাজার ৩৬৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকার।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার থেকে আবার সারা দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১ জুলাই থেকে সাত দিনের জন্য কঠোর লকডাউন জারির ঘোষণাও দিয়ে রাখা হয়েছে।

ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ২ হাজার ২৬৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ৩ হাজার ৯৯৮ জন থেকে কমে ৩ হাজার ০৬৮ জন এবং খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৪৬৪ জন থেকে কমে ১ হাজার ৩৬৭ জন হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৮১১ জন থেকে বেড়ে ১ হাজার ১২ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৮৮৩ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ঢাকা জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এই হার আগের দিনের মতোই সাড়ে ১৯ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার।

তবে রংপুর বিভাগে এই হার ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৫ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার।

জাতীয়

সিলেট বিভাগের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। থাকলেও অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। রয়েছে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে লোকবল সংকট। পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেই। ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা। কোনো কোনো উপজেলায় হাসপাতালও নেই। এসব কারণে বিভাগের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি কোনো কাজে আসছে না। কয়েক বছর ধরে যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, লাইট, অ্যানেস্থেশিয়া মেশিন ও ডায়াটার্মি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এক্স-রে মেশিন ও ইনকিউবেটরসহ আরও অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি কাজে আসছে না।

গাইনি বিভাগে চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে। জেলার ওসমানীনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পরও গড়ে উঠেনি উপজেলা হাসপাতাল।

এ কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে এখানকার মানুষকে ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী অন্য উপজেলা বালাগঞ্জ হাসপাতাল অথবা সিলেট শহরে যেতে হয়।

হবিগঞ্জ জেলার ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের ২টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিকল পড়ে আছে ২টি অ্যানালগ এক্স-রে মেশিনও। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও তার ফিল্ম নেই। এ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান সংকট রয়েছে। জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি রুম মেরামত করে সেখানে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম।

মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এদিকে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে আল্ট্রাসনো ও এক্স-রে মেশিন সচল থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ডেন্টাল মেশিনটি। জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত লোকবল নেই। অপরদিকে জনবল ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় ১২ বছরেও চালু করা যায়নি চুনারুঘাট উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি ৩ বছর ধরে নষ্ট। ৪ বছর তালাবদ্ধ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাগার। সাধারণ এক্স-রে, ইউরিন টেস্ট, রক্ত, ব্লাড সুগার, হিমগ্লোবিন, ব্লাড গ্রুপিংসহ সাধারণ পরীক্ষা সেবা দিতে ব্যর্থ এই হাসপাতালটি। এই জেলার কুলাউড়া হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন ১৯৯৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। এরপর ২৬ বছর কেটে গেছে। উদ্বোধনের দিনই শুধু খোলা ছিল রুমটি।

এরপর আর রুমের দরজা খোলা হয়নি। শুধু এক্স-রে নয় ইসিজির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ১৫ বছর ধরে অকেজো।

শুধু এক্স-রে মেশিন নয়, ৫ বছর ধরে আধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি টেকনিশিয়ানের অভাবে অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজ করার পরও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। এতে আতঙ্কে থাকতে হয় ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের।

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপ?জেলার ৫১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে। ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা। রোগীদের নিুমানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। জেলার দিরাই উপজেলা হাসপাতালটি ২০১৬ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এটিতে চিকিৎসকসহ লোকবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের এক্স-রে রুমে ভূতুড়ে পরিবেশ। রক্ত, ইউরিনসহ কোনো ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ঝাড়ুদাররা এ মেশিন রাখার রুমটি দখলে নিয়ে থাকছেন।