জাতীয়

দেশে করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ১১৯ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৫ ও নারী ৪৪ জন।
এর আগে গত ২৫ জুন ১০৮ জন, গত ১৯ এপ্রিল ১১২ জন এবং ১৮ এপ্রিল হয়েছিল ১০২ জনের মৃত্যুর রেকর্ড।

এদিকে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২৬৮ এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৯ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৪২ জন বেশি মারা গেছেন। গতকাল ৭৭ জন মারা যান। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা মহামারিতে মারা গেছেন ১৪ হাজার ১৭২ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ১১ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান থাকলেও আজ দশমিক ০১ শতাংশ বেড়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩৪ জন এবং ষাটোর্ধ ৫৯ জন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৪ জন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ২২ জন করে, খুলনা বিভাগে ৩২ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন রয়েছেন।
এদের মধ্যে ৯৯ জন সরকারি, ১৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে, ৪ জন বাসায় এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ২ জনকে।

আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ২৪ হাজার ৪০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ২৬৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৯ হাজার ২৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ৩৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। গতকালের চেয়ে আজ ৯৩৪ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৯১ শতাংশ কম। এদিকে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৪ ঘন্টায় ৯ হাজার ৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮১ জন। গতকাল ৭ হাজার ৭৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৬৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০৬  জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৯ জন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৩ হাজার ২৯৫ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৪৬ জন কম সুস্থ হয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪ হাজার ১০৩ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৯০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৭ শতাংশ কম।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৬২৮ জনের।

আগের দিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৮৪৪ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৪ হাজার ৭৮৪টি নমুনা বেশি সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৪ হাজার ৪০০ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৯ হাজার ২৬২ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৫ হাজার ১৩৮টি নমুনা বেশি পরীক্ষা হয়েছে।

জাতীয়

ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেইটে বিকট এক বিস্ফোরণে ভবন ধসে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ, আহত হয়েছে অনেকে।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই এলাকাটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে বলে স্থানীয়রা জানায়।

এতে তিনতলা একটি ভবন ধসে পড়ে; তার আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ঢাকার মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, “আমরা এই পর্যন্ত তথ্য পেয়েছি যে এই ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন।”

এদিকে এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

আহত অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ১২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। দুজনই পুরুষ।

ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “আহতদের মধ্যে চারজনের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। দুজনকে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়।”

রাত ১০টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিসাধীন স্বপন (৩৫) নামে একজন মারা যান।

ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশু এবং মধ্য বয়সী এক পুরুষ ব্যক্তির লাশ দেখেছেন। সেখানে আহত অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জান্নাত (২৫) নামে একজন মারা যান বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া‌।

ঢামেক হাসপাতাল জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “আমাদের এখানে এ পর্যন্ত ৩৯ জন রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে রাত সোয়া ১০টার সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাত (নামে এক নারী মারা গেছেন।”

নাহিদ নামে আহত এক যুবক ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের জানান, তিনি বাসে ছিলেন এবং খিলগাঁওয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। সাজ্জাদ নামে আরেক বাসযাত্রীও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহত পথচারীর মোহাম্মদ শাহ আলমের ছেলে সাগর তার বাবাকে ট্রলিতে করে ঢাকা মেডিকেল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। শাহ আলামের মাথায়-নাকে ব্যান্ডেজ।

সাগর বলেন, ঘটনার সময় তার বাবা ওই ভবনের নিচে ছিলেন। ছিটকে আসা কাচে তিনি আহত হন।

ঢাকা মেডিকেলে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন মো. মামুন (৩০), শাহ নেওয়াজ পাটয়ারী (৩৫), হৃদয়(২৩), আরিফুল ইসলাম (৩৯), মেহেদী হাসান নয়ন (২২), মাহাবুব আলম (৩৯), মো. মুসা শাহজাহান (৪৫), স্বপন (৩৫), মো. শহিদ (৬৫), সৈকত (৮), আবুল ফজল (২৮), সালেহা বেগম (৬০), লাকী আক্তার (৩২),সাজ্জাদ (১৮), আইয়ুব খাঁন (২৫), সুভাষ চন্দ্র সাহা (৬৫), আরমান (২৫), রতন (৩০),মোকতার (৩৫), আসাদ (৫৮)।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন আবুল কালাম আজাদ (৫৬), মোতালেব হোসেন (৪০), জামাল (৪০), নয়ন (৪০), আবুল কালাম (২৭) ও কালু (২৭)।

বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের বিভিন্ন ভবনের কাচ চৌচির হয়ে পড়ে। ছবি: ফেইসবুকবিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের বিভিন্ন ভবনের কাচ চৌচির হয়ে পড়ে। ছবি: ফেইসবুক
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে।

ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে।

সড়কের পাশের ওই ভবনের বিপরীত দিকে আড়ং রয়েছে। বিস্ফোরণে আড়ংসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে রাস্তায় পড়েছে।

সড়কের উপর লাব্বাইক ও আল মক্কা পরিবহনের দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসগুলোর কাচ ভেঙে পড়েছিল। এগুলোর ভেতরে রক্তের দাগও দেখা যায়।

রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে সড়কে থাকা একটি বাস দুমড়ে মুচড়ে যায়।
বিস্ফোরণের কারণ কী

বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।

বিস্ফোরণের পর স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, কোনো ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কোনো ভবনের জেনারেটর কিংবা এসি থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়।

“বৈদ্যুতিক সংযোগজনিত কোনো কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেনি বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। মাঝে সতর্কতামূলক কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়েছিল।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, “তিনতলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। অনেক ফ্রিজ থাকে সেখানে, তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ বলেন, গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তদন্তের পরই তা স্পষ্ট হওয়া যাবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুলও সাংবাদিকদের বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের যারা কাজ করেছে, তাদের সাথে কথা বলে যেটা বুঝেছি যে, এখানে কিছু গ্যাস জমে ছিল এবং এই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের সাতটা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দুইটা বাস বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।”

এটা নাশকতা কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে না।

“নাশকতা যদি হত, বোমা বিস্ফোরণ যদি হত, স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। আশেপাশের আপনারা গাড়ি দেখেছেন, বাস দেখেছেন, বাসে স্প্লিন্টারের কোনো আঘাত লাগেনি। কাজেই এটা বলা যায়, এটা বোমার কোনো ঘটনা নয়, গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।”

জাতীয়

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শুধু লকডাউন নয়, ভ্যাকসিন নির্ভরশীল হতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন কারখানা হবে গোপালগঞ্জে। শনিবার মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চীনের ভ্যাকসিনও চলে আসবে এবং ভ্যাকসিন কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে লকডাউন কার্যকর হলে এবং সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে খুব দ্রুতই করেনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সঙ্গে তিন কোটি ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত ১ কোটি ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। চীনের সঙ্গে দেড় কোটি ভ্যাকসিন চুক্তি ছাড়াও কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ভ্যাকসিন বুকিং দেওয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাতীয়

দেশে টানা এক সপ্তাহ করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সাত দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৮৪৮ জন এবং মারা গেছেন ৫২৩ জন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৫৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত এক দিনে করোনায় মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ২৩ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ, খুলনায় টানা তিন দিন সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সরকার এপ্রিলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর মে মাসে দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে এসেছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু জুনের শুরু থেকে আবার বাড়ছে। গত ২৩ জুন শনাক্ত হন ৫ হাজার ৭২৭ জন।

গত ২২ জুন ৪ হাজার ৮৪৬ জন, ২১ জুন ৪ হাজার ৬৩৬ জন, ২০ জুন ৩ হাজার ৬৪১ জন, ১৯ জুন ৩ হাজার ৫৭ জন এবং ১৮ জুন ৩ হাজার ৮৮৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন। গত এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগী বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুও। গত ২৩ জুন ৮৫ জন, ২২ জুন ৭৬ জন, ২১ জুন ৭৮ জন, ২০ জুন ৮২ জন, ১৯ জুন ৬৭ জন এবং ১৮ জুন ৫৪ জন করোনায় মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ৩০ হাজার ৩৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা আগের দিন ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৩ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে সাত জন, বরিশাল বিভাগে তিন জন, রংপুর বিভাগে সাত জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।

চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪১ জনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান এ তথ্য জানান।

জাতীয়

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তবে এ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে যেকোনো সময় শাটডাউন ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে একথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সারাদেশে শাটডাউনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় সরকার তা ঘোষণা দেবে। আগের চেয়ে বিধিনিষেধ আরও কঠোর হবে। করোনা সংক্রমণ কমানোর জন্য যা করা প্রয়োজন হবে আমরা তাই করব।

তিনি আরও বলেন, মাঝে আমাদের সংক্রমণ ৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনো অনেক জায়গা আছে, যেখানে সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে আছে। ইতোমধ্যে ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোতে লকডাউন দিয়েছি। তারপরও ঢাকার মধ্যে লোকজন এসে যাচ্ছে। সংক্রমণ কমানোয় পদক্ষেপ নিতে আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) কোভিড-১৯ কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’- এর সুপারিশ করা হয়।

এতে বলা হয়, দেশে কোভিড-১৯ রোগের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশটির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এটি প্রতিরোধে খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়, শাটডাউন চলা অবস্থায় জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেনো, সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন‘ ঘোষণা দেয় সরকার।

পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল রোজার ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক বসিয়ে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে বিধিনিষেধ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৬ জুন বিধিনিষেধ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার, যা ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত ২৯ এপ্রিলের পর থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৭ জনের।

বুধবার (২৩ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৬৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন।

সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৫৪ টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১২৬ টি, জিন এক্সপার্ট ৪৬টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩৮২ টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২৮ হাজার ৫৮০ টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৮ হাজার ২৫৬ টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৪ লাখ ৫ হাজার ৭৫টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৩১ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৮৫ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন ও ৩০ জন নারী। ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে সাতজন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, খুলনা বিভাগে ৩৬ জন, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে একজন করে দুইজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৬৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে নয়জন ও বাড়িতে ১০ জন, হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ৪৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের নিচে ১০ জন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৬৬৭ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ৬৩ হাজার ১৮২ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৬ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৩৪ হাজার ৫৮৬ জন।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জন। যা দেশে একদিনে করোনা শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর গত ৬ এপ্রিল একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছিল সাত হাজার ২১৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে।

জাতীয়

আগামী জুলাই মাসের ২৯ অথবা ৩১ জুলাই আরো ৭শ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সচিবালয় থেকে নির্বাচন উপযোগী ইউপির তালিকা প্রস্তুত করে কমিশন সভায় প্রস্তাবনা পাঠানো হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

যদিও একাধিক নির্বাচন কমিশনার কোভিড উধ্বমুর্খীর কারণে আপাতত ভোট করার পক্ষে না। তারপরও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ২৮ জুলাই শূন্য হওয়া তিনটি সংসদীয় আসনে ভোটের জন্য ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের মনোনীত দুই প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, শোকের মাস আগস্টে সাধারণত কোন নির্বাচন আয়োজন করে না কমিশন। সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে নির্বাচন কার্যক্রম শুরু করতে হবে কমিশনের। তার আগে জুলাইয়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউপির তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমধাপে স্থগিত ১৬৭টি ইউপির নির্বাচনের সাথে নতুন করে আরো দ্বিতীয় ধাপের ৫শ ইউপির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কমিশনের যে সভা অনুষ্ঠিত হবে সেখানে জুলাই মাসে ইউপির ভোট করার জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হবে।

ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের দায়িত্ব নির্বাচন ব্যাপারের সময়মতো কমিশনকে অবগত করা। সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। আগামী সপ্তাহে ভোটের তফসিল ঘোষণা হলে ২৯ অথবা ৩০ জুলাই ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যে ১৬৭টি স্থগিত ইউপি রয়েছে তার মধ্যে ৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মারা গেছেন। ওই ৪টি ইউপিতে শুধু চেয়ারম্যান পদে নতুন করে শিডিউল হবে। আর বাকী ১৬৩টি ইউপির ভোট যেখান থেকে স্থগিত করা হয়েছিলো সেখান থেকে শুরু হবে।

স্থগিত থাকা নির্বাচন ঈদের আগে অনুষ্ঠিত হবে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, কমিশন এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। ইউপির পরবর্তী ধাপের নির্বাচনের বিষয়েও কমিশন সভায় আলোচনার মাধ্যমে জানানো হবে।

গত ৩রা মার্চ প্রথমধাপের ৩৭১টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোট হওয়ার কথা ছিলো ১১ এপ্রিল। কোভিড পরিস্থিতির কারণে ভোট স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে গত ৩রা জুন স্থগিত ইউপির ভোটের তারিখ গত ২১জুন পুন:নির্ধারণ করা হয়। তবে সীমান্তবর্তী এলাকায় কোভিড পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে ১৬৭টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়। গত ২১জুন ২০৪টি ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

ভোটের আগেই এমপি হচ্ছেন তারা: ভোটের আগেই ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই প্রার্থী এমপি হচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুই প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবে কমিশন। ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আগা খান মিন্টু। এ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহজালাল জানান, চার প্রার্থীর মধ্যে বৈধ তিন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তাই আগা খান মিন্টু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। করোনা সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে জাতীয় পার্টি-জাপার মোস্তাকুর রহমান, বিএনএফের কেওয়াইএম কামরুল ইসলাম ও জাসদের আবু হানিফ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।

কুমিল্লা-৫ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের আবুল হাশেম খান ও জাপার জসিম উদ্দিন বৈধ প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু গত রবিবার বিকালেই জাপার প্রার্থী জসিম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেন। জসিম প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করায় হাশেম খান একাই প্রার্থী থাকলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, তারা জাপার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন পেয়েছেন। যাচাই করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন (২৪ জুন) এবিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

জাতীয়

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি বিচারপ্রার্থী জনগণকে ন্যায় বিচার দেওয়া যায় তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ হবে। তিনি বলেন, বিচারের নামে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখাও বিচারকদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে আমাদের সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসাবে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজিত বিশেষ ফুলকোর্ট সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আয়োজিত এই ফুল কোর্ট সভায় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ অংশ নেন। বেলা ৩ টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এই ফুল কোর্ট সভা চলে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদেরকে সংবিধান উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। যা বিশ্বে বিরল। তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা সবসময় বঙ্গবন্ধুকে পীড়া দিত। সেজন্য মানুষ যাতে সহজে বিচার পায় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

সভায় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ তাদের মতামত তুলে ধরেন। সেই মতামতে বিচার ব্যবস্থার নানা দিক উঠে আসে। বিচারপতিরা বলেন, সাধারণ মানুষের দোড়গোরায় দ্রুততার সাথে কিভাবে বিচার পাইয়ে দেওয়া যায় সেদিকটা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। মামলা দায়েরের পর বছরের পর বছর চলে যায় কিন্তু বিচারপ্রার্থীরা বিচারের আশায় ঘুরে বেড়ায়। কিভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন আনা যায় সেদিকটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

জাতীয়

রাজধানীসহ সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য হাহাকার চলছে। টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে টিকার সংকট। জেলা উপজেলা পর্যায়ে টিকার তথ্যও পাচ্ছে না মানুষ।

নতুন করে টিকার জন্য নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। আগে যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। কিন্তু নিবন্ধিতদের অনেকে উপজেলা পর্যায়ের। জেলা পর্যায়ে ছাড়া টিকা দেওয়া হচ্ছে না। আর যানবাহন ছাড়া নানা কারণে উপজেলার মানুষ জেলায় যেতে পারছেন না। দেশের ১২ লাখ মানুষ এখনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি। আদৌ তারা টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কি না, তা অনিশ্চিত। গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে করোনার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা দেওয়া শুরু হয়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও একই কোম্পানির নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে টিকার কোনো বিকল্প নেই। সংক্রমণ রোধে টিকাই অন্যতম হাতিয়ার।

দেশে সীমিত সংখ্যক যে টিকা আছে তার মধ্যে রাজধানীর মাত্র তিনটি কেন্দ্রে গতকাল সোমবার সকাল থেকে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্র তিনটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। ফাইজারের ১ লাখের কিছু বেশি টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে। এই টিকা অতি শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। শুধু ঢাকা শহরেই এই টিকা দেওয়া হবে। এদিকে ঢাকার চারটি কেন্দ্র এবং প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্রে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা আছে ১১ লাখ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঐসব জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ টিকা নিতে জেলা পর্যায়ে যেতে পারছেন না।

এদিকে সংক্রমণ রোধে টিকাই অন্যতম হাতিয়ার হলেও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। একমুখী হয়ে থাকার কারণে বর্তমানে টিকার এই সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশ টিকা উত্পাদন করছে, শুরুতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য প্রশাসন ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্টের বিচক্ষণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদিও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে টিকা পেতে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে গণহারে টিকা দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে মাস্কও পরতে হবে। স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের মহাসচিব ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম চালানোর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও ভালো। তাই দ্রুত যাতে টিকা পাওয়া যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। আর বঙ্গভ্যাক্সসহ যে তিন কোম্পানির টিকা দেশে উত্পাদন হতে যাচ্ছে, সংশ্লিষ্টরা যদি শর্ত পালন করে, তাহলে সবার সহযোগিতায় দ্রুত টিকা উত্পাদন করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধের অন্যতম হাতিয়ার হলো টিকা। টিকা ব্যাপক হারে দেওয়া উচিত।

No description available.

আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা মোকাবিলায় টিকা হলো অন্যতম হাতিয়ার। তবে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হলো টিকা। তাই গণহারে টিকা দিতে হবে। তিনি বলেন, ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সময় স্বাস্থ্য বিভাগের সাহসী ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। কিন্তু সাহসী ভূমিকার ঘাটতি ছিল। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমএনসিএইচ) ডা. মো. শামসুল হক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে টিকা দিলে ভালো হতো। ১২ লাখ টিকার মধ্যে আগে নিবন্ধিত কত জন সাড়া দেন সেটি দেখা হবে, যদি অনেকের সাড়া পাওয়া না যায়, তাহলে টিকার জন্য নতুন করে নিবন্ধনের আহ্বান করা হবে।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১৩ হাজার ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

একই সময় আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৮৪০ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪১ হাজার ৮৭ জনে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭১৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৬ জন।

সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫১০টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৩২টি, জিন এক্সপার্ট ৪৪টি, র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩৩৪টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২৫ হাজার ৭৭১ টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭১ টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৬৫৭ টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৩২ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন, খুলনা বিভাগে ২০ জন, বরিশালে তিনজন। এছাড়া রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহে দুইজন করে ৬ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে নয়জন এবং বাড়িতে আটজন মারা যান।

মৃত ব্যক্তিদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ৩১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সাতজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে দুইজন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন এক হাজার ৭৯৫ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭১৯ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ৫২ হাজার ৯৫৫ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৬২ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৮ হাজার ১৯৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে।