রাজনীতি

সরকারি বিভিন্ন সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ‘এক ঠিকানায় সব নাগরিক সেবা’ স্লোগানে যাত্রা শুরু করেছে নাগরিক সেবা বাংলাদেশ।

২৬ মে (সোমবার) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ কার্যক্রমের পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রশিক্ষিত নাগরিক সেবা উদ্যোক্তরা এ সেবাগুলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রদান করবেন।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

তন্মধ্যে গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্র কার্যক্রম শুরু করেছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নীলক্ষেত কেন্দ্রও কার্যক্রম শুরু করবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি এ সেবার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে, নানাবিধ হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।

একইভাবে সেবার সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এক ঠিকানায় প্রয়োজনীয় সব সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সেবা কেন্দ্র তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতেও আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দেন তিনি।

এ সেবার আওতায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিতভাবে সেবার আপডেট ও সমন্বয়ের বিষয়ে জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো সেবা এর আওতায় আনা যায় সবগুলোকে দ্রুত নিয়ে আসা।

এ সময় বিভিন্ন নাগরিক সেবার প্রসঙ্গ টেনে প্রফেসর ইউনূস বলেন, এমন ব্যবস্থা আমাদেরকে অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যাতে জন্ম গ্রহণ করা মাত্রই শিশুরা জন্ম নিবন্ধন সনদ পেয়ে যায়। এটাই যেন হয় তার নাগরিক স্বীকৃতি।

নাগরিক সেবা কেন্দ্রের পরিচালনা ও মালিকানা সম্পর্কে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা জায়গার মালিকদের সাথে চুক্তি করে ভাড়া পরিশোধ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাড়া হ্রাসকৃত হারে নির্ধারিত হবে। উদ্যোক্তারা নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইউটিলিটির দায়িত্ব নেবেন। সেবা মান বজায় না রাখলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।

নাগরিক সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ২০০ জন নারী ও পুরুষ নির্বাচন করা হয়। তাদের ডিজিটাল লিটারেসি, গ্রাহক সেবা ও ডিজিটাল সেবা প্রদানে নিবিড় প্রশিক্ষণ শেষে ১০০ জন উদ্যোক্তাকে (৫০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ) সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

রাজনীতি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এমন একটি নির্বাচন হবে যেখানে একটি ইতিহাস তৈরি হবে। প্রত্যেকটি মানুষ হাসিমুখে ভোট দিয়ে বের হবে। কেউ গিয়ে দেখবে না যে, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে এসেছে। ভোট হবে স্বচ্ছ, কোনো ধরনের কারচুপি হবে না।
রোববার (২৫ মে) দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় দখিনা দাওয়া সেন্টারে আয়োজিত চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, মানবিক করিডোর না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের অবস্থান সরকারকে জানানো হয়েছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি বলেন, এই দেশে সকল নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। চা শ্রমিকদের দায়িত্বও সরকারকে অন্যান্য নাগরিকদের মতো সমানভাবে নিতে হবে। তারা এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা যদি জনগণের ভোটে দায়িত্ব পাই, তাহলে তাদের সম্মানের সঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করব। তাদের সন্তানদের প্রতিভার বিকাশে পাশে থাকব।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, চা শ্রমিকদের শিক্ষিত করে আধুনিক বাগান ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করার চিন্তা আমাদের রয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে আমরা কাউকে বিবেচনা করি না। আমরা একটি বন্ধুপ্রতিম সমাজ গড়তে চাই। চা শ্রমিকদের উদ্দেশে বলতে চাই—আপনার ডাক দিতে সময় লাগবে, কিন্তু আমাদের পৌঁছাতে সময় লাগবে না। আমরা সবাই এই দেশের মালিক। ধর্মের ভিত্তিতে এ দেশে আর কাউকে বিভক্ত করা যাবে না।

উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগরীর আমীর মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর প্রকৌশলী এম. সায়েদ আলী, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ইয়ামীর আলী প্রমুখ।

চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াও ডা. শফিকুর রহমান সকাল ১০টায় ১০০০ নারীর উপস্থিতিতে মহিলা সমাবেশ, মৌলভীবাজার জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের ১৩০০ জন প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সম্মেলন, শমশেরনগর ইউনিয়ন, শরীফপুর ইউনিয়ন ও হাজীপুর ইউনিয়নে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে মতবিনিময় ও পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে জামায়াত

 দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সোমবার (২৬ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ জামায়াত আমির। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাকিদের বলেন, আমাদের সবার দাবি ছিল অর্থবহ একটি সংস্কার হবে। এই সংস্কার ও বিচারের মধ্য দিয়েই একটা অর্থবহ নির্বাচন হবে।

তিনি সেদিন বলেন, আমরা বলেছি দুটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। গ্রহণযোগ্য সংস্কার হতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। আমরা মনে করি সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণা হলে অনেকটাই সংশয় কেটে যাবে।

রাজনীতি

মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে, এমনটি বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালন উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে গুম সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এই আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের হিসাবে উল্লিখিত গুমের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হবে। এদের মধ্যে অধিকাংশ এখনো নিখোঁজ, অনেকেরই মরদেহ পাওয়া গেছে আবার অনেকদিন পর কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এটি বিগত আওয়ামী শাসনামলের একটি বর্বর দুঃশাসনের নমুনা।

তিনি আরও বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের ১০-১৫ বছরেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের গুমের ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এছাড়াও গুমের শিকার হয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষও।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহে আমি এই গুম হওয়া মানুষদের অসহায় পরিবারের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আর কোন ব্যক্তি যাতে গুমের শিকার না হয় সেজন্য রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আর যেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের মতো অমানবিক ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। রাজনৈতিক দর্শন বা রাষ্ট্রীয় সীমানাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গুমের শিকার সব ব্যক্তি ও পরিবারকে আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।

রাজনীতি

আজ শনিবার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার দল দুটির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপি এবং রাত ৮টায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, বিএনপির বৈঠকে যোগদানের বিষয়টি পরে জানানো হবে।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে শনিবার রাতে বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

তিনি জানান, চলমান বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন।

সূত্র জানায়, জামায়াত মনে করে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়। তারা চায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

এর আগে, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

সূত্র মতে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা ইস্যুতে আলোচনা হবে। এর মধ্যে নির্বাচন, বিচার, সংস্কার, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনার বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।

রাজনীতি

১০ মাস পার করার আগেই মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সংকটটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনার কথাও প্রকাশ পেয়েছে।

আর ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকারও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।এদিকে ১০ মাস না যেতেই অন্তর্বর্তী সরকার কেন এই সংকটে পড়লো তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এই সংকটের জন্য রাজনৈতিক চাপকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এই রাজনৈতিক চাপ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই দায়ী। আর সেটি হলো নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকা বলে অনেকে মনে করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, সরকার সেদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দিচ্ছে না। যদিও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর মধ্যেই সংকটে পড়লো অন্তর্বর্তী সরকার। আর অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংকট তখনই তৈরি হলো যখন রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা আটদিন ধরে আন্দোলন চলে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়ে এই আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এদিন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও দ্রুত দাবি আদায় না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এর আগের দিন বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে নির্বাচন, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ এবং মব সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। রাখাইনের মানবিক করিডোরবিষয়ক সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারের থেকে আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে গণমাধ্যমে এ বিষয়গুলো এসেছে।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার রাতে শোনা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন। এদিন সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি তার এই ভাবনার কথা জানান। পরে রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পদত্যাগের কারণ হিসেবে ড. ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাপ, অনৈক্য, নানা ইস্যুতে তার বাসভবন ঘিরে আন্দোলন, তার বিরুদ্ধে দেশ বিক্রির অভিযোগ, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য বিএনপির অব্যাহত চাপ, বিভিন্ন দাবিতে একের পর এক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে জিম্মি করার চেষ্টা ইত্যাদি কারণে তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

যদিও শুক্রবার (২৩ মে) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না।

তিনি বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের সংকটে পড়ার প্রধান কারণ দ্রুত নির্বাচনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়া, যা এই সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক লোড কাঁধে নিচ্ছে, যা তাদের নেওয়ার কথা ছিল না। হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক এটা মানুষ চায়। কিন্তু সব ধরনের কাজ হাতে নিয়েছে। সংস্কার, বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া, রাখাইনের করিডোর দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে হাত দিয়েছে। ক্ষমতায় পাঁচ বছর থাকতে চায় এ রকম কথাও শোনা যাচ্ছে। অথচ এত লোড নেওয়ার কথা ছিল না। এ কারণে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ বিএনপির কোনো দাবি নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা (বিএনপি) কখনও তার পদত্যাগ দাবি করিনি। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে যদি তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, সেটিও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, বিএনপির প্রধান দাবি নির্বাচনের রোডম্যাপ। দলটি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ না চাইলেও এই বছরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থন আর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি ৷ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। সবমিলিয়ে অন্তর্ভুক্তি সরকারের ওপর থেকে বিএনপির সমর্থন উঠে যাওয়ার আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যেও এ ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির সমর্থন না থাকলে এই সরকারকে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন বলেই তারা মনে করছেন। আর বিএনপি শুধু একা নয়, এই দলটির সঙ্গে ডান বাম অনেক রাজনৈতিক দলও রয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনুসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকার নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও সরকারের চিন্তিত হওয়ার একটি ইঙ্গিত উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন, এর বাইরে একদিনও এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর অনেক সময় আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের তিনটি কঠিন দায়িত্ব- একটি সংস্কার, অন্যটি বিচার, আরেকটি নির্বাচন। শুধু নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্বটা নেইনি। আমাদের আরও দুটি দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো পালন করতে পারছি না।

রাজনীতি

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তার দল সরকার গঠন করতে পারলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকল আবারও চালু করতে কাজ করবে।

বগুড়া শহরের পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন কনভেনশন হলে ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আজ তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক দল অনেক কথাই বলবে। তাদের অতীত ইতিহাস দেখে তাদের বিশ্বাস করবেন। এক্ষেত্রে দেশের অধিকতর উন্নয়নের স্বার্থে সবার প্রথমে বিএনপিকে সবাই বেছে নিবে।’

সেমিনারে এক শিক্ষার্থীর পাটকল বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি উৎপাদন ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। কোন কিছু বন্ধ করা বিএনপির রাজনীতি নয়। তাই সরকার গঠন করতে পারলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকল আবারও চালু করতে কাজ করবে বিএনপি। একই সাথে শ্রমিকদের সকল বকেয়াও পরিশোধ করবে। ”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের এই সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন— জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ৷

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের ৩১ দফা ভবিষ্যৎ রাজনীতির দর্শন।দেশে বিগত বছরগুলো বেশি নির্যাতিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। আমরা সবার আগে ভোটের অধিকার চাই। আমরা চাই নির্বাচিত সরকার ভোটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করুক।’

আরও বক্তৃতা করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়াটার স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট ড. ফয়সাল কবীর শুভ, বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মী কাজী জেসিন, আবহাওয়া গবেষক ও সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্তফা কামাল পলাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক, এইচআর বিশেষজ্ঞ শারমিন সুলতানা জয়া এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জুলকারনাইন জাহাঙ্গীর।

সেমিনারে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পাঁচ শতাধিক দল নিরপেক্ষ নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত তরুণ ও অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তাদের প্রশ্ন করেন ও মতামত জানান।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও মাহবুবুর রহমান, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ওবায়দুর রহমান চন্দন (রাজশাহী), এম এ খালেক ও অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম (রংপুর), বিএনপির সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সহ-সম্পাদক রায়হান আমিন রনি, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিএম সিরাজ, কাজী রফিক, মাহবুবুর রহমান, ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম (রংপুর জেলা আহ্বায়ক), যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।

রাজনীতি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এ তিনটি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব মোটা দাগে তিনটি এবং তিনটাই কঠিন দায়িত্ব। এর একটা হচ্ছে সংস্কার, আরেকটি হচ্ছে বিচার, অপরটি নির্বাচন।’

আজ শুক্রবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এই দায়িত্বটা জাতীয় দায়িত্ব। আমরা আগে থেকেই বলছি যে আমরা ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিয়েছি। এ দায়িত্বটা পালন করা তখনই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে যখন আমরা সকলের সহযোগিতা পাব।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একটা সময় দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘কালকে আমাদের মিটিং এর পরে আমরা অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আমাদের যে যে দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো আসলে পালন করতে পারছি কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেবার পর থেকে যার যত রকম দাবি আছে সব দাবি নিয়ে তারা রাস্তায় বসে পড়ছে। এসব কারণে ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ছে। সে অচল অবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কিনা। প্রত্যাশার বিষয়টা এক আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। বড় দাগের তিনটা দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিবন্ধকতা গুলোকে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব সকলে মিলে সেটা চিন্তা করছি।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্বে থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, সেখানে ফিরে যাবো।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। রিফর্ম কমিশন গঠন করেছি, কমিশন তাদের রিপোর্ট, দিয়েছে সেই রিপোর্টের উপর রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। আমরা নির্বাচনের একটা সময় বলে দিয়েছি যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অবশ্যই হবে।’

বিচার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আগে ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে শুরু হচ্ছে।

রাজনীতি

দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মগবাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক জামায়াত আমীর এ আহ্বান জানান।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সময় চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টায় দলটিকে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, চলমান বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছেন।

দলটি মনে করে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান না। তার চায় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

এর আগে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।

রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ড. ইউনূস বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে আগামী জুনের পরে হবে না।

তিনি এই নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সে বিষয়ও নিশ্চিত করেননি।

তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকখাতকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো দুর্বল। একইসঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভঙ্গুর রয়েছে। বিপ্লবের নয় মাস পরও বড় পরিবর্তন আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুলে দেবে এবং একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে সহায়তা করবে।

‘ঐক্যে পৌঁছানো সহজ ব্যাপার নয়, কোন কোন কমিশন থাকা উচিত, তা নিয়েই রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে মতপার্থক্য শুরুতেই রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি তৈরি পোশাকখাত নিয়ে একটি কমিশন থাকা উচিত ছিল; আবার কারো অভিযোগ, শিক্ষাখাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম হয়েছে নারী সংস্কার কমিশনকে ঘিরে, যা অনেক পরে গঠিত হয়। এই কমিশন ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের সুপারিশ করে, যাতে নারীদের অধিক অধিকার দেওয়া হয়, আর এতেই ইসলামপন্থি দলগুলো বিক্ষোভ শুরু করে। ’

আওয়ামীলীগ ইস্যুতে ড. ইউনূস বলেন, ১২ মে নির্বাচন কমিশন আওয়ামীলীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে, ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

রাজনীতি

সালাতের শিক্ষাই উজ্জীবিত হয়ে আদর্শ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সকলকে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

রোববার (১৮ মে) বাদ আছর রাজধানীর শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদে কাফরুল পশ্চিম থানা জামায়াত আয়োজিত এক সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ও সর্বজনীন জীবনবিধান। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে বলেছেন। ইসলামের সুবিধাজনক বিষয় মানব, আর অন্যগুলো মানবো না-এমনটি করার কোনো সুযোগ নেই বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রেই ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক।

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের অনুশাসন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। অন্যথায় দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় ক্ষেত্রেই আমাদেরকে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আদালতে আখেরাতের ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করে সকলকে নামাজের বিষয়ে অতিশয় যত্নশীল হওয়ার আহবান জানান তিনি।

তিনি বলেন, নামাজ আল্লাহর দেওয়া বিধান ও শেখানো পদ্ধতি। আর আল্লাহর রাসুল (স.) আসরের নামাজের বিষয়ে বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন। এ নামাজকে সালাতুল উসতা হিসাবে উল্লেখ করে বিশেষভাবে যত্নশীল হওয়ার নিদের্শ প্রদান করা হয়েছে। তাই আমাদেরকে নামাজের শিক্ষার আলোকে জীবন গঠন করে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে। বস্তুত, নামাজই আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্যতম মাধ্যম। কারণ, ইয়াওত তাবাগুন তথা হাসরের ময়দানে সবার আগে নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত নামাজের শিক্ষা ব্যক্তি জীবন, পরিবার ও রাষ্ট্র গঠনে আত্মনিয়োগ করা। তিনি দেশকে ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকলকে জামায়াতের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান জামায়াত আমির।

থানা আমীর আব্দুল মতিন খানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আতিক হাসান রায়হানের পরিচালনায় সুধি সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শাহ আলম তুহিন, কাফরুল জোন টিম সদস্য তারেক রেজা তুহিন, থানা কর্মপরিষদ সদস্য মতিউর রহমান ও সুলতান মাহমুদ, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ ছায়েফুল্লাহ, নাসিমুল আলম, আমিনুর রাহমান আমান, খন্দকার মাহবুবুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।