রাজনীতি

আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপি একা দেশ চালাবে না। এমনটা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটি জাতীয় সরকার গড়ে তুলব। যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল তাদের নিয়ে দেশ চালাব। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সন্দেহটা কোথায়? সন্দেহ কিন্তু আপনাদের ওপর আসতে শুরু করেছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ প্রশাসন-নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সন্দেহ কিন্তু আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) ওপর আসতে শুরু করেছে। আমরা চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হবো। আমরা চাই না, শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দু:শাসন আবার ফিরে আসুক।

শিক্ষা কাঠামোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৫৩ বছরে আমরা কী সাফল্য অর্জন করেছি শিক্ষাখাতে, বিশ্বের এক হাজার ইউনিভার্সিটি মধ্যে আমাদের একটি ইউনিভার্সিটি সিরিয়ালে আসে না। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি না। দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে শেখ হাসিনা। দেশের সব অর্জন ১৫ বছর শেষ করেছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিটেন্স, উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন তিনি। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। দেশকে ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল।

ইস্পাত কঠিন সময়ে ঐক্যের জায়গায় এক থাকতে হবে বলে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশীদ প্রমুখ।

রাজনীতি

সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে পতিত স্বৈরাচারের নেতারা তাদের বিপুল পরিমাণ পাচারের টাকায় বলিয়ান হয়ে এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য, অকার্যকর করার জন্য বিশাল অর্থে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে। তাদের একটি বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।

তিনি বলেন, পতিত সরকারের নেতৃবৃন্দ যারা এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে সে অর্থে বলিয়ান হয়ে তারা দেশে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদেরকে কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা সফল হওয়া মানে জাতির মৃত্যু। জাতি হিসেবে আমাদের অবসান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোন বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাবধান থাকুন। তাদের সকল হীন প্রচেষ্টাকে আমাদের ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিন। যে ভাবে নস্যাৎ করেছিলেন তাদের বন্দুকের গুলিকে। তাদের আয়না ঘরকে। প্রতি পায়ে তাদের অনাচারের শিকলকে। এ ব্যাপারে সবাই একমত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

তিনি আরও বলেন, বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক– সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

পতিত আ. লীগ সরকার রিজার্ভ তলানিতে রেখে গিয়েছিল: ইউনূস

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদেশে টাকা পাচার এবং রিজার্ভের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনো রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লণ্ডভণ্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম–সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশো দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে হয়েছে। বলা বাহুল্য এখনো আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে তা আসা শুরু করেনি।

তিনি বলেন, বন্ধু রাষ্ট্রগুলি শুধু যে আমাদের বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে তাই নয়, তারা এই সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষণীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে এগিয়ে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছে তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এবার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অন লাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গেও আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন।

তিনি বলেন, এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোনো বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক– সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যেমুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

ড. ইউনূস বলেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।

প্রতিটি হত্যার বিচার করব, শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইব: ড. ইউনূস

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১৫ বছরে সব গুম-খুন, অপকর্মের বিচার করব।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহীদি মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সাথে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯,৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই তালিকায় আরও নতুন নতুন শহীদের তথ্য যোগ হচ্ছে, যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে।

ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র শ্রমিক জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদকে স্মরণ করেন এবং তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত এবং সব অংশগ্রহণকারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, স্মরণ করছি তাদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। যারা নয় দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা এক দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা দেশকে এক হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের, আপনাদের ভাই-বোনদের, আপনাদের সন্তানদের যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমাদের সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি, যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা।

রাজনীতি

জাহাঙ্গীর আলম গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক।

‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে’ ভাইরাল হওয়া গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সেই যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে শুক্রবার ভোরে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বোনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

রোববার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়নি।

রিমান্ড মঞ্জুর হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করাসহ ফোনালাপের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ওসি।

মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ৩ অগাস্ট গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর তিনি ও তার লোকজন আত্মগোপনে চলে যান। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া এর মধ্যে শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইলে জাহাঙ্গীরের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

রাজনীতি

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কড়া সমালোচনা করে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি জানানো হয়েছে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) সংসদ সচিবালয়ের ক্যাবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের বৈঠকে এসব দাবি জানান বিশিষ্টজনরা।

কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনায় সংবিধান সংস্কার কমিশন কীভাবে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

তবে এ নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।

বৈঠকে অংশ নেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি নাসরিন বেগম, চৌধুরী মূকিম উদ্দিন কেজে আলী, জামিল উদ্দিন মিল্টন, ইঞ্জিনিয়ার কবির হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন।

সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মো. মুস্তাইন বিল্লাহ।

বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছেন। যা গত ১৫ বছর আমরা লক্ষ্য করেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট খুব জরুরি। কারণ, দ্বি-কক্ষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিতে ‘একক ক্ষমতার বলয়’ বা ‘এক ব্যক্তির শাসন’ চলে না। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী চাইলেই আইন প্রণয়ন ও বাতিল করতে পারে না।

৭০ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদের এক জায়গায় বলা আছে সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দান করলে তাদের আসন শূন্য হবে। ফলে কোনো সংসদ সদস্য চাইলেও তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া সম্ভব নয়। তার মানে হলো সরকারি দল যা চাইবে সংসদে তা-ই হবে!

তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো মুছে দিয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনা করে বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে আইনের শাসনের কবর রচনা করা হয়েছে। দেশের বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশোধনীর উদ্দেশ্য এক ব্যক্তির নেতৃত্বের অধীনে ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা। তাই এই সংশোধনী বাতিল চাই।

৭ ক ও খ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা, সংকুচিত ও নির্বাসিত করার জন্য এই ৭ ক ও খ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একনায়কত্ব চালিয়ে নিতে এবং মানুষের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি ও কণ্ঠরোধ করতে এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করে।

গণভোট বিষয়ে তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধানটি বাতিল করে মৌলিক বিষয়ে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বিলোপ করে কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে।

গণভোটের বিধান পুনর্বহালের পক্ষে মত দেন তিনি।

কাদের গণি চৌধুরী সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন,পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধনের প্রস্তাব আনেন।

সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম বলেন, দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাইছি।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন কীভাবে আমাদের সুপারিশ বা পরামর্শ বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। গণভোট,নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ অনেক কিছু রয়েছে যা বাস্তবায়ন করা কঠিন। কমিশন আমার এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি। তারা কেবল নোট হিসেবে নিয়েছে।

রাজনীতি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ২০২৫ সাল নাগাদ সকল সরকারি নির্মাণে পোড়ানো ইটের ব্যবহার বন্ধ হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি অফিসে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যেন নির্মাণ কাজে পোড়ানো ইট ব্যবহার না করা হয়। সরকারই হচ্ছে নির্মাণ কাজে ইটের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। রাস্তাঘাট ও ভবন নির্মাণে সরকার ইট ব্যবহার করে থাকে। বড় বড় কাজে ইট ব্যবহার হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, সরকারকে পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হবে। সরকার চাহিদা পত্র দিলেই এর সমাধান হতে পারে।

তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা। এটি বন্ধের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দেশের নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়া হবে না। ৩৪৯১ টি ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যদিকে জেলাগুলোতে অবৈধভাবে স্থাপিত ইটভাটাকে জনস্বার্থে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। তবে ব্লক ইট তৈরির কাজে প্রয়োজনে প্রণোদনা দেবে সরকার।

তিনি বলেন,নতুন কোন ইটভাটার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। যেকোনো ফর্মেই হোক না কেন আমরা ইটভাটার অনুমোদন দিচ্ছি না। যে সমস্ত এলাকা থেকে ইটভাটার দূষণ নিয়ে অভিযোগ আসছে আমরা সেইসব এলাকার ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তবে তিনি বলেন, জিগজ্যাগ ইটভাটাতে আপাতত আমরা কোন অভিযান চালাচ্ছি না কারণ অনেকেই জিগজ্যাগ ইটভাটায় ইনভেস্ট করেছে। আমরা এসব ইটভাটার মালিকদেরকে সতর্ক করে কমিটি গঠন করে দিয়েছি যাতে তারা নিয়ম-নীতি মেনে ইট উৎপাদন করে। এলাকা এবং কমিটি যদি পরিদর্শনকালে কোন অনিয়ম খুঁজে পায় তাহলে এসব ইটভাটা ভেঙে দেয়া হবে।

পরিবেশ দূষণে পলিথিনের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ৩ নভেম্বর থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে পলিথিন ব্যবহার বন্ধেও নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে ৩ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে পলিথিন উৎপাদন, বিক্রি, সরবরাহ ও বাজারজাত করার দায়ে ১২৪টি মোবাইল কোড অভিযান পরিচালনা করে ২৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১২ লাখ ৫২ হাজার ১ শত টাকা জরিমানা আদায় এবং ২৬৮৭১. ৬ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে।

হর্ন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ একথা উল্লেখ করে সৈয়দা রিজোওয়ানা হাসান বলেন, হর্নের আওয়াজ বন্ধ করাটা আমি জাতীয় কর্তব্য বলে মনে করি। কারণ এই হর্নের কারণে বহু মানুষ বধির হয়ে যাচ্ছে, তাদের শারীরিক অসুস্থতা বাড়ছে। কোন মধ্যম আয়ের দেশে এ ধরনের কার্যক্রম মেনে নেয়া যায় না।

তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই আওতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎ সংলগ্ন এলাকায় যানবাহনের হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করে এসব এলাকা হর্নমুক্ত এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে রাজধানী ঢাকার ১০টি রাস্তা হর্নমুক্ত ঘোষণা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে হর্নমুক্ত নীরব এলাকা ঘোষণা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, যেমন করেই হোক,গাড়ির হর্ন বন্ধ করা হবে। চালক কিছু হওয়ার আগেই হর্ন দেয়। এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

তিনি বলেন, একদিনে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তবে একটু হলেও আশা জেগেছে যে সরকার অবস্থান নিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হর্ন বন্ধ করার একটা ক্যাম্পেইন চালু করব আমরা।

তিনি বলেন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞ তরুণদেরকেও রাস্তায় হর্ন বন্ধ করার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। হর্ন বন্ধ করতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সবাই সচেতন হলে হর্নমুক্ত নীরব বাংলাদেশ করা সম্ভব হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, এখন জনগণের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে কিন্তু আইনের ছোট্ট গ্যাপ থাকায় আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আইনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো যাবে না। কিন্তু নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে কী শাস্তি হবে? ওই শাস্তির ধারায় গিয়ে এটাকে আবার ইনক্লুুড করা হয়নি। এ আইন সংশোধন করে শাস্তি যুক্ত করতে হবে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কিছু যানবাহন ব্রেক করে গতি নিয়ন্ত্রণ করে না। হর্ন বাজিয়ে চলে। হর্নের কারণে সড়ক দুর্ঘটনাও একটি বড় কারণ। সুতরাং হর্ন বন্ধ করলে সড়ক দুর্ঘটনাও কমতে পারে।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সেন্ট মার্টিন ও পর্যটন শিল্পকে একসঙ্গে রক্ষা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওই নরম ভূখ-ে কেউই কোন সামরিক ঘাঁটি করতে পারবে না। এখন যারা সেন্ট মার্টিন নিয়ে আন্দোলন করছেন তারা হলেন জাহাজ মালিক ও হোটেল মালিক। তারা ওখানকার স্থানীয় মানুষকে উসকে দিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এই যে পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বলা হচ্ছে তা কিন্তু একদিনের সিদ্ধান্ত নয়। বিভিন্ন সময়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোই পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা সীমিত পরিসরে বিধি-নিষেধ আরোপ করছি। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন কার্যক্রম চলবে। কাজেই পর্যটন যে বন্ধ- এ কথাটা তো ঠিক নয়। মিথ্যা প্রচারণা।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জনসচেতনতা ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সেন্ট মার্টিনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করতে আমরা কাজ করছি। গত বছর সেন্ট মার্টিন বন্ধ ছিল কিছু সময়। তখন তো কেউ প্রতিবাদ করেননি। এখন এমন কথা বলা হচ্ছে যে সেন্ট মার্টিনে দুর্ভিক্ষ হবে। হীন ব্যক্তিস্বার্থে কেউ কেউ এসব বিভ্রান্তিকর কথা ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে কোন বিভ্রান্তি নেই। এই বিভ্রান্তিগুলো রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, দেশের ৬৪ জেলায় ডিসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল দু মাসের মধ্যে অন্তত একটি নদী দূষণমুক্ত করতে হবে। তারা সময় ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা দেবে। ৪ নভেম্বর দুই মাস শেষ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু জায়গার ডিসি পরিবর্তন হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আমরা ৬৩টি জেলার কর্মপরিকল্পনা পেয়েছি। শুধুমাত্র রাঙ্গামাটি জেলার ডিসি মহোদয় জানিয়েছেন তাদের রাঙ্গামাটি জেলার নদীগুলো দূষিত নয়।

তিনি জানান, ঢাকাসহ সারাদেশের নদ-নদী ও খাল খনন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানসহ দেশের কিছু জায়গায় নদী ও খাল খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শহরে যেকোনো একটা নদীকে দূষণমুক্ত করতে দেশের নদ ও নদী সমূহের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণও নদী ও খাল খননে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করছে।

কপ২৯ সম্মেলন নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এ সম্মেলন নিয়ে আমাদের অবস্থানটা খুবই স্পষ্ট। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব ব্যাংক অর্থ সাহায্য দেবে বলেছে। বাংলাদেশের থেকে এই সম্মেলনে বলা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে টার্গেটটা ছিল তা সম্পূর্ণ করতে। কারণ এ টার্গেট থেকে তারা এক চতুর্থাংশ ফান্ড দিয়েছে।

জলাবদ্ধ ভবদহ নিয়ে তিনি বলেন, ২০০৫ সাল থেকে ভবদহ বিল নিয়ে কাজ করেছি। ২০২৪-এ এসে এখনো ভবদহ বিল নিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। এটাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা উচিত ছিল। এখানে আমরা চেষ্টা করছি আপাতত পানি কমিয়ে আনতে। সেখানকার মানুষকে বাঁচাতে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রোক্রেডিট রেগুলারিটি অথরিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছে, ওখানে ঋণ আদায় স্থগিত রাখবে। পরে এটি শিথিল করে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতায় থাকা মানুষদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য বলা হয়েছে। সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে জুম মিটিং করব।

উপদেষ্টা বলেন, ভবদহের সমস্যার সমাধানে এবার শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকব না। বুয়েট আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞ এনে এর কারণ নির্ণয় করা হবে।

রাজনীতি

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় ১৯৯৯ সালে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়, যার চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তারেক রহমানকে প্রেসিডেন্ট ও ডা. জোবাইদা রহমানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে ২৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান।

পরিচালকরা হলেন– অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক আবুল হাসনাত মোহা. শামীম, ডা. সৈয়দা তাজনীন ওয়ারিস সিমকী, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন, কৃষিবিদ খন্দকার মাহফুজুল হক বাচ্চু, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অ্যাডভোকেটে মোহাম্মদ আলী, আমিরুল ইসলাম কাগজী, ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কৃষিবিদ আনোয়ারুননবী মজুমদার বাবলা, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অধ্যাপক শেখ মুনির উদ্দিন. প্রকৌশলী একেএম জহিরুল ইসলাম, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, প্রকৌশলী উমাশা উমায়ন মনি চৌধুরী ও সাংবাদিক হাফিজ আল আসাদ সাঈদ খান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কার্য্করী কমিটির পরিবর্তে এই ‘বোর্ড অব ডাউরেক্টস কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় ১৯৯৯ সালে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়, যার চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা এনে দেবে স্বচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা’– এই শ্লোগান নিয়ে এই অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছে।

রাজনীতি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রী এবং তাদের স্বজনদের জন্য ওয়েটিং লাউঞ্জ উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আজারবাইজান থেকে দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা এ লাউঞ্জ উদ্বোধন করেন।

এর আগে তিনি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান শেষে আজ সন্ধ্যা ৮টায় দেশে ফেরেন।

ওয়েটিং লাউঞ্জের উদ্ধোধন করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজারবাইজান যাবার পথে প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে একটি লাউঞ্জ উদ্বোধন করে গিয়েছিলাম। এ লাউঞ্জটা প্রবাসীদের জন্য ডেডিকেটেড, যাতে তাদের পথে পথে ঘুরতে না হয়। বিদেশ যাওয়া এবং ফেরার সময় যেন তারা এটি আরামে ব্যবহার করতে পারেন। আর আজ প্রবাসীর স্বজনদের জন্য ওয়েটিং লাউঞ্জ উদ্বোধন করা হলো।

প্রধান উপদেষ্টা আজ প্রবাসীর পরিবার পরিজনের জন্য কেবল এর যাত্রা শুরু হলো উল্লেখ করে এই ওয়েটিং লাউঞ্জকে কিভাবে আরো আরামদায়ক ও স্বস্তিদায়ক করা যায়, সেজন্য প্রবাসীদের স্বজনদেরকে তাদের মতামত ও পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানান।

‘প্রবাসীর স্বজনদের জন্য এই লাউঞ্জ উদ্বোধন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা ওয়েটিং লাউঞ্জে উপস্থিত প্রবাসীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিমানবন্দরের মাল্টিলেভেল কার পার্কিং এলাকার দ্বিতীয় তলায় এই প্রশস্ত ও আরামদায়ক ওয়েটিং লাউঞ্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া নতুন লাউঞ্জটিতে নির্ধারিত অপেক্ষমাণ কক্ষ, বেবিকেয়ার কক্ষ, নারী-পুরুষের জন্য নামাজের স্থান এবং সুলভ মূল্যের ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি সব প্রবাসী নাগরিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিবেদিত।

রাজনীতি

নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল নির্মাণের ফলে একইসাথে বন্দরের যানজট নিরসন হবে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্থবায়নের ফলে বেনাপোল স্থলবন্দরের দক্ষতা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে এবং আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত যানের টার্নএ্যারাউন্ড টাইম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল এর উদ্বোধন শেষে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন,বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে স্থলপথের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ বন্দরের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এবং ৪৫০ থেকে ৫০০টি বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আগমন করে। কিন্তু বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের পর ব্যবহারযোগ্য কোন টার্মিনাল না থাকায় অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাক সড়কের উপর অবস্থান করতো। ফলে সেখানে সার্বক্ষণিক যানজটের কারণে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতো।

নবনির্মিত কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি নির্মাণের ফলে পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের পর এ টার্মিনালে নিরাপদে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল উদ্বোধন ও পরিদর্শন শেষে স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা স্থলবন্দরের ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিকরণ, বন্দরের অভ্যন্তরে যানজট নিরসন, নতুন ওয়্যারহাউজ বা শেড নির্মাণ, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইক্যুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং এর ব্যবস্থাকরণ, বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি দুর্নীতি নির্মূল ও বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় অংশের চেয়ে উন্নত সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরে নবনির্মিত কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালটি ৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করা হয়েছে। টার্মিনালটিতে এক সাথে প্রায় ১৫০০টি ট্রাক ধারণের সক্ষমতা রয়েছে। এখানে পার্কিং ইয়ার্ড, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সকল সংস্থার কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য কার্গো ভবন, টার্মিনাল ব্যবহারকারীদের বন্দর সেবা ভবন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আধুনিক ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা ও সিসিটিভি স্থাপন, আধুনিক মানের ওয়াশ ব্লক, ১০০ মেট্রিকটন ক্ষমতার ওয়েব্রীজ স্কেল ও ড্রেনেজ সিস্টেমসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানযট নিরসন এবং স্থলপথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণে ২০২২ সালে ৩২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হয়।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম।

রাজনীতি

আর কখনো যেন ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তেমন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা : ৩১ দফার আলোকে সংস্কার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আকাঙ্ক্ষার কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, আমরা সবাই এমন দেশ গড়তে চাই, যেখানে আর কখনো ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করবে জনগণের মালিকানা ও অংশীদারি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি লেভেলে নিশ্চিত করা হবে, কেউ জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না।

তিনি বলেন, আজ আমরা যারা এখানে উপস্থিত রয়েছি, আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা আছে; সেটিই স্বাভাবিক। তবে আমি বিশ্বাস করি, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ধারার মধ্যেও বৃহত্তর পরিসরে আমাদের সবার মধ্যে একটি বিষয়ে আদর্শিক ঐকমত্য রয়েছে। আর সেই বিষয়টি হলো, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সময় তথাকথিত উন্নয়নের রাজনীতি দেখার প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, পতিত সেই রাজনীতির ভিত্তি ছিল দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন। অন্যদিকে জনগণের ভোটে বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, আপনারা দেখতে পাবেন, আমাদের ৩১ দফার আলোকে, জনগণের ক্ষমতায়ন ও অংশীদারির রাজনীতি। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা।

তিনি বলেন, আমরা যদি একটি রুলস-বেসড রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে আসতে পারি, সারা পৃথিবী থেকে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল নিজ গতিতেই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পাবলিক সেক্টরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে; দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।

বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে চায় বলেও জানান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ঠিক যেভাবে আজ থেকে দুই দশক আগে, বিএনপি সরকারের সময়, বাংলাদেশে মিডিয়া নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো, কার্টুন আঁকতে পারতো; আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাকে নিয়ে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে মিডিয়ার একাংশ ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছিল; মিডিয়া ট্রায়াল ও প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন করেছিল। কিন্তু আমরা তার প্রতিদানে কোনো মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করিনি, কাউকে হেনস্তা করিনি, কোনো সম্পাদককে জেলে পাঠাইনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৬ বছরে আমার নিজের, আমার দলের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা আপনাদের অনেকের ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন এবং ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে। সেই উপলব্ধিকে ধারণ করে, আমরা সব নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব, ফেইসবুক ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের কারণে কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে কাউকে হেনস্তা করা হবে না। সত্য গোপন করতে মেইনস্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়া যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটির প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না। তবে দেশ গঠনের দায়িত্ব সবার এবং আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সীমিত ডিকার্বনাইজেশন সক্ষমতা সম্পন্ন বেশিরভাগ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সবুজ শিল্প বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও রেয়াতি ডিকার্বনাইজেশন ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে ক্লাইমেট ক্লাবের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনে জার্মানি ও চিলি আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের জলবায়ু ক্লাব নেতাদের সভায় বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন আরও বেশি দ্রুত ও টেকসই উপায়ে হ্রাস এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৩ শতাংশ কমাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্যে পৌঁছানোর জন্য উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে ব্যাপক আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

তিনি বিশেষ করে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রমাণিত কম নির্গমন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও স্থাপন করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক ডিকার্বনাইজেশন প্রযুক্তির জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন। অর্থায়নের সীমিত সুযোগ রয়েছে এমন দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো সবচেয়ে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের অধিক মূলধন বিনিয়োগ করা শিল্পের জন্য একটি বাধা হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের শিল্পের জন্য রেয়াতি অর্থের সুযোগ লাভকে উৎসাহিত করে শিল্প ডিকার্বনাইজেশনের ক্ষেত্রে অর্থায়নের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬.৮ এর অধীনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

আমদানিতে সুষম কার্বন খরচ আরোপ করে একটি সুষম ক্ষেত্র তৈরি করতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ বা সীমা সমন্বয় করের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তির ওপর জোর দিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।

শিল্পের ডিকার্বনাইজেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন বিশ্বব্যাপী স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবনের জন্য প্রণোদনা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ কিছু খাত টেকসই ব্যবস্থা অনুশীলনের তুলনায় ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, এসব ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টার ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্বন সীমা সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মতো নীতিগুলি অপরিহার্য।

অন্যদিকে, এসব নীতি বাংলাদেশের মতো বিশেষভাবে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশের কোম্পানিগুলির প্রতিযোগিতামূলকতাকে প্রভাবিত করতে পারে। অধিক নির্গমন নীতির কারণে উচ্চ উৎপাদন খরচের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী তাদের কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে, যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, ‘অতএব, স্বল্পোন্নত দেশগুলির জন্য তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার কারণে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে। ’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খণ্ডিত উপায়ে উচ্চাভিলাষী প্রশমন নীতিগুলো শিল্প কর্মকাণ্ডকে এমন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কার্বন মূল্যের কোনো নীতি নেই বা কম কঠোর, যা কার্বন নির্গমনের দিকে ধাবিত করে এবং এইভাবে সামগ্রিক বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসের বৈশ্বিক লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

তিনি বলেন, ইইউ প্রস্তাবিত কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) রপ্তানিকৃত পণ্যগুলোতে নির্গমনের মান পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করে এবং কার্বন নির্গমন প্রতিরোধ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তাদের জলবায়ু নীতি শক্তিশালী করতে উৎসাহিত করতে পারে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনকে সমর্থন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও উদীয়মান বাজারে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।