রাজনীতি

বিতাড়িত স্বৈরাচার দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে কিনা সরকারকে এ বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলতে চাই, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা জনগণের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।

বুধবার রাতে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে একদিকে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে অধিকার বঞ্চিত মানুষের চাওয়া পাওয়ার হিসেব, অপরদিকে পলাতক স্বৈরাচারের প্রতিশোধের আগুন সবমিলিয়ে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি বিরাজমান। পলাতক স্বৈরাচার গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়মের পাহাড় তৈরি করেছিল। কেড়ে নিয়েছিল জনগণের সকল অধিকার। সেই হারানো অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা আর অনিয়মের পাহাড় ভাঙতে স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। অবৈধ ক্ষমতা আর অবৈধ সুবিধা হারানো পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে জনগণের দাবি আদায়ের এই আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

জনগণের অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে চক্রান্তের জাল বিছিয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সারাদেশে একটি পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। জনগণের মনে অসহিষ্ণুতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে এসব ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের অপতৎপরতা উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিয়েছে।

জনগণের যৌক্তিক আন্দোলন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ ‘সাবোটাজ’ করছে কিনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনতার আন্দোলনে যেই শিক্ষার্থীরা সামনের কাতারে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলো, হঠাৎ করেই এখন তারা কেন একে অপরের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠলো? জনমনে এই প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার এমন একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুর চালাবে? কেন আগুন ধরিয়ে দেবে? এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবে ‘করণীয় নির্ধারণ’ই হোক সরকারের প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখা দরকার, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে দেশের কোটি কোটি পরিবারকে প্রতিদিন সাধ এবং সাধ্যের সঙ্গে আপোষ করতে হচ্ছে। পারিবারিক খরচ মেটাতে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে অনেকের কাছেই ‘সংস্কারের চেয়ে সংসার’ অগ্রাধিকার হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।

বাজার নিয়ন্ত্রনের আহ্বান জানিয়ে প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে এই স্পর্শকাতর ইস্যু ব্যবহার করার সুযোগ নিতে পারে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সেই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলতে চাই, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন। জনগণকে আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় থাকুন। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। সরকারের কোনো কাজ কিংবা কথা যেন ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাটল ধরার কারণ না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দাবি আদায়ে আন্দোলন করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং অবশ্যই জনগণের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে এই আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি এবং পলাতক স্বৈরাচার যাতে গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকে লক্ষ্যচ্যুত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার। স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা যাতে জনগণের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা জরুরি। দেশে-বিদেশে পালিয়ে কিংবা লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা যাতে জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে নাশকতা করতে না পারে সেই ব্যাপারে সরকার ও জনগণকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।

অন্তর্ববর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই এ সরকার পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনগণের যেকোন অভাব অভিযোগ যথানিয়মে সরকারের কাছে উপস্থাপন করলে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সুযোগ পাবে না। হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশে সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার কায়েম করতে হলে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি।

দেশের চলমান পরিস্থিতি জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, সরকারকে আরেকটু সময় দিন। আরেকটু ধৈর্যের পরিচয় দিন। শান্ত থাকুন। পরিস্থিতির উপর সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখুন। দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবেগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে।

রাজনীতি

 ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রায় দেড়-সহস্রাধিক শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না উল্লেখ করে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লবের আবদুস সালাম হলে ৩৪তম ডা. মিলন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, অনৈক্যের জন্যই কিন্তু আমাদের আজকের এই অবস্থা, আমরা এগুতে পারিনি। আজকে আমাদের প্রয়োজন হলো যে দলগুলো আছে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামা। দেরি না করে আমাদের এটা করা দরকার। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষকে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

প্রবীণ এ রাজনীতিক বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, সবাই আলাদাভাবে আমরা যে বক্তব্যগুলো রাখি এবং লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখে কাজ করি, তাতে দেশের অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে। অনৈক্যের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে। একদিকে না গিয়ে আমরা বিভিন্ন দিকে ছুটবো; এই জিনিসটাকে আমরা উপলব্ধি যত দ্রুত করি ততই ভালো।

তিনি বলেন, ডা. মিলন, নূর হোসেনদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আরেক স্বৈরশাসকের বিদায় হয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে প্রায় দেড়-সহস্রাধিক শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ডা. মিলন-নূর হোসেনসহ জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা যে কারণে জীবন দিয়েছেন, তাদের স্বপ্নের-আকাঙ্ক্ষার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সেই আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের এখন অঙ্গীকার করতে হবে যে, এবার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা যেন কোনো অশুভ শক্তির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান প্রমুখ।

রাজনীতি

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ প্রায় ৫,১৫২.৫৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে চট্টগ্রামের (ক্যাচমেন্ট ২ এবং ৪) পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি প্রকল্পসহ মোট ৫,৯১৫.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য মোট পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

পাঁচটি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ১,০৯৫.৯৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে, ৪,৭৮৭.৫০ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা থেকে এবং বাকি ৩২.৫৫ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে।

অনুমোদিত পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু নীতিগত বিষয় সমন্বয় করার এখন সময় এসেছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত করার দিকে নজর দিয়েছে। এখন তারা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে উপদেষ্টারা মানবসম্পদ, শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের হার কম ছিল উলে¬খ করে তিনি বলেন, বিগত বছরের মতো বিভিন্ন কারণে এডিপি ছাঁটাই হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, দু-একদিনের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের চলমান প্রকল্পগুলো দুর্নীতি ও অনিয়ম পরিহার করে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুরোধ করা হবে।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপদেষ্টাদের চিঠি দেবেন।

তিনি আরেক প্রশ্নকর্তাকে জানান, চলতি অর্থবছরের শেষে, শিক্ষা খাতে বিশেষ করে শিক্ষাগত সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক ও গবেষণার উপকরণ এবং অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য অন্যান্য খাতের তুলনায় আনুপাতিকভাবে বেশি বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আর আশা প্রকাশ করেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অধিক সংখ্যায় এগিয়ে আসবে এবং অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবে।

সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো ৪৫৯.৯৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবসহ পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ, ৯৩.৫০ কোটি টাকা দিয়ে যুব উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ১১০.১৫ কোটি টাকা খরচসহ মংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও অবমুক্ত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, ১ম সংশোধিত প্রকল্প, এবং ৯৯.৮৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় সহ জরুরি বহু খাতের রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনা ২য় সংশোধিত প্রকল্প।

এছাড়া একনেক বৈঠকে ব্যয় না বাড়িয়ে দুটি প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হয়।

রাজনীতি

সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে- এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে… যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম… এটি কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

তারেক রহমান বলেন, তবে সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুঁথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্যকর।

তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা প্রয়োজন। জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের এ বার্ষিক সাধারণ সভা হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।

‘গণতন্ত্রকামীদের সর্তক থাকতে হবে’

তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলমান যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই ভেতরে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আজকের সভায় অনেক বক্তা তাদের বক্তব্যে তা তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন। বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র নানা কৌশলে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা শুরু করেছে। অপশক্তি দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সবাই যদি আমরা সতর্ক থাকি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গুম-হত্যা-নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদদের আকাঙ্ক্ষা, একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একইসঙ্গে পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়াও কিন্তু আমাদের কর্তব্য।

তিনি বলেন, এজন্য যথাযথ আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পলাতক মাফিয়াদের পুনর্বাসন ঠেকাতে তাদের একদিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন, অন্যদিকে তাদের অবশ্যই জনগণের রাজনৈতিক বিচারের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। যদি এ দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারি আমরা… আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গণবিরোধী বিতাড়িত অপশক্তি বাংলাদেশে রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।

‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রয়োজন’

তারেক বলেন, খুনি, লুটেরা, মাফিয়া ও স্বৈরাচারী রাজনৈতিক অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে হলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। ভোটের অধিকারের সুযোগ পেলে জনগণ তাদের রাজনীতির ক্ষমতা প্রয়োগ করে গণহত্যাকারী খুনি, লুটেরা, পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না’

তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগের স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে দেড় দশকের বাংলাদেশ বর্তমান প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। বিএনপির কাছে গণতন্ত্র বা ব্যক্তিস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।

‘এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে নিশ্চিতভাবে বাকস্বাধীনতা থাকবে’

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিএনপি।

তিনি বলেন, বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি, সেখানে সাগর-রুনির বিচারের বিষয়ে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা। এ লক্ষ্যে অর্জনে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।

সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন,  আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যেকোনো মানুষের মধ্যেই যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ইস্যুতে দ্বিমত-ভিন্নমত থাকবে, থাকতেই পারে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য।

তিনি আরও বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সঙ্গে তার অবৈধ মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী বা বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব, প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কতিপয় সাংবাদিকের পলায়নের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে, অবৈধ রাষ্ট্রশক্তি নয়, বরং শেষ পর্যন্ত জনগণের রায়ই কিন্তু চূড়ান্ত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীসহ অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

ফ্যাসিবাদী আমলে চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিনের জামায়াতের আমীর নরুল ইসলাম বুলবুলসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

এতে বিএনপির আসাদুজ্জামান রিপন, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, আবদুল সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, ইথুন বাবু, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ছিলেন।

রাজনীতি

ডেলিগেশন অব ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূত সেবাস্টিয়ান রিগার ব্রাউনের আমন্ত্রণে ইইউভুক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এবং সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৮ দেশের প্রতিনিধিগণ হলেন- জার্মানির রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রোস্টার, ইটালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও অ্যালেস্যান্ড্রো, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্টিয়াগা, ফ্রান্সের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ক্রিস্টিয়ান বেক, নরওয়ের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ম্যারিয়ান রেবেকনায়েভেলস্রুড, সুইডেনের হেড অব পলিটিক্যাল ও ট্রেড অ্যান্ড কমিউনিকেশন লোভিসা হোফম্যান এবং নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজ উওদস্ট্রা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রদূত ও জামায়াত নেতারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাজনীতি

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে আওয়ামী লীগের সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং দলের নেতা-কর্মীরাও পালিয়েছেন।

প্রায় সাড়ে তিন মাস পেরোলেও এখনো প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না তারা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ, প্রশাসন, বিচার, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সংবিধান সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছে। গঠন করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

এই সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করার পর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের কথা ওঠে এবং বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিএনপিসহ অংশীজনদের কেউ কেউ সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পক্ষে মতও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান বা মতামত জানার চেষ্টা করা হয় পক্ষ থেকে। তবে দলের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ্যে তুলে ধরার মতো অবস্থায় নেই আওয়ামী লীগ। এর মধ্যেই দলটির দুই-একজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে নয় এবং সংবিধান সংস্কারেও তাদের সমর্থন নেই।

আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের মতে, সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত সংসদ। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার, সংসদ বা কোনো কর্তৃপক্ষই কেবল এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করতে পারে।

আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানান, জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, নাকি বর্তমানে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে সে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।

যদিও বিশিষ্টজনরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুবিধার কথা বলে আসছেন। তুলে ধরছেন চ্যালেঞ্জের কথাও। মানবাধিকার সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংসদের দুটি কক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। এই ব্যবস্থা চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা এই সুপারিশ সংস্কার কমিশনকেও দিয়েছি।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশন প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক ধরনের মতামত আছে। অনেক রকম গুরুত্বপূর্ণ, অভিনব, সৃজনশীল প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনেও এমন প্রস্তাব এলে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো। সব পর্যালোচনা করেই সরকারকে সুপারিশ দেবো। কিছু সুপারিশ নতুন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করবে।

রাজনীতি

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশ করছেন অনেকেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। তবে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। কারণ অভ্যুত্থানের অনেক আগেই দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাব প্রথম উত্থাপন করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ সংসদের পক্ষে দলটির অবস্থান আরও স্পষ্ট।
গত ১৩ জুলাই রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা রূপরেখা প্রকাশ করে বিএনপি। এই রূপরেখার পঞ্চম দফায় ‘উচ্চ-কক্ষবিশিষ্ট’ আইনসভার কথা বলা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই রূপরেখার ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ৫ আগস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে। সেই সংস্কার আন্দোলন এখন রাষ্ট্র সংস্কারে রূপ নিয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের দায় নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিষয়টি। দ্বিকক্ষ আইনসভা বা সংসদ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে চলছে নানা আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা চাওয়া দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনীতিক দল বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট গঠন করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শেখ হাসিনার মত দৈত্য, আরেকটা দৈত্য যাতে সৃষ্টি না হয়, এজন্য ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে অন্যতম দ্বিকক্ষ সংসদ। আর এই প্রস্তাব সর্বপ্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়। বিএনপি সব সময় বিশ্বাস করে জনগণ সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। আর এ কারণেই বিএনপি দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের বাস্তবায়ন চায়।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের জন্য আগে দরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাতা না হলে সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছি। এ কারণে ৯৩ অনুচ্ছেদের দিকে তাকালে এসব প্রস্তাবনা এই সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারবে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, সব অধ্যাদেশ জারি করা যাবে, শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া।

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিকক্ষ আইনসভা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা, চুল চেরা বিশ্লেষণ।

বলা হচ্ছে, দ্বিকক্ষ সংসদ থাকবে। উচ্চকক্ষের নাম হবে জাতীয় পরিষদ, নিম্নকক্ষ হবে জাতীয় সংসদ। সংসদ নির্বাচন হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে। জাতীয় পরিষদের ২০০ আসন হবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। আইনসভার মেয়াদ হবে ৪ বছর। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কেউ দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না।

রাজনীতি

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবিরকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার এক বার্তায় তার প্রেস উইং এ তথ্য জানায়।

বিশিষ্ট সাংবাদিক নূরুল কবির শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে অভিযোগ করেন, সম্প্রতি হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন।

বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা এই ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে কোনো সাংবাদিক হয়রানির ঘটনা বরদাশত করবে না। নূরুল কবির দীর্ঘ কর্মজীবনে দেশের একজন সম্মানিত সম্পাদক। সততা ও নৈতিকতা মেনে সাংবাদিকতা করা গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তি সবসময় যুক্তি দিয়ে কথা বলায় প্রধান কণ্ঠস্বর।’

সাংবাদিক নূরুল কবির কলম্বোতে অনুষ্ঠিত এশিয়া মিডিয়া ফোরামে অংশ নিতে গত ১৮ নভেম্বর শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলেন। ২২ নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি।

ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লেখেন, গত ১৮ নভেম্বর একটি মিডিয়া কনফারেন্সে যোগ দিতে বিদেশে যাচ্ছিলাম। মনে করেছিলাম বিমানবন্দরে আমাকে হয়রানির দিন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ভুল ভেবেছিলাম। বরং দ্বিগুণ হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এ সময় আমাকে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়। পরে ২২ নভেম্বর ফেরার সময়ও আবার এক ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়। দেশপ্রেমিক হওয়াটা গোয়েন্দা সংস্থার চোখে সন্দেহের বিষয়। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা বা সরকারে যারা তাদের তত্ত্বাবধান করেন তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হলাম।

তিনি আরও লেখেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে যতবারই বিদেশ গিয়েছি ততবারই ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ হেনস্তা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, অপেক্ষা করানো, পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া, গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে পাসপোর্টের পাতার ছবি তোলা। অনেক সময় ফ্লাইট ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে কাগজপত্রগুলো ফেরত দেন তারা।

রাজনীতি

বিগত আওয়ামী স্বৈরাচারের সময় প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা এসব গায়েবি মামলা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে বলে তিনি সবাইকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
শনিবার (২৪ নভেম্বর) বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তারেক রহমান নেতাকর্মীদের এ আশ্বাস দেন।

রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি। এতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিকেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য নিজের ৩১ দফার বিষয়ে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কবিরের এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় আমাদের প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এটি গায়েবি মামলা নামে সারা দেশে পরিচিত। অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, চলমান প্রক্রিয়া এটি। একবারে হয়তো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে নিশ্চয় আমরা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করার বা করাতে সক্ষম হবো।

এ সময় বগুড়ার অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে আনছে, কিন্তু আদালতে সঙ্গে সঙ্গে জামিন হচ্ছে। অথচ আগে বিএনপির নেতাকর্মীর জামিন হয়নি এত দ্রুত। এ বিচারকদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, আমাদের সঙ্গে ওদের পার্থক্যটা এখানেই। আমরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, সেটিকে আমরা ভাঙতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যের শিকার যাতে মানুষ না হয়, সেই প্র্যাকটিসটা আমরা গড়ে তুলতে চাই। এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। বিগত স্বৈরাচার সরকার শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, প্রতিটি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা দেখেছি কোনটা ডামি নির্বাচন, কোনটা নিশিরাতের নির্বাচন, কোনটা দেখেছি ভোট ডাকাতির নির্বাচন। কোনোবারই প্রকৃত জনপ্রতিনিধি ছিল না। তাই তারা যা ইচ্ছা তাই করেছে। আমরা আগামী দিনে চাইছি প্রকৃত একজন জনপ্রতিনিধি। আগামী দিনে যারা যোগ্য, সেই যোগ্য মানুষটিকে যোগ্য জায়গায় স্থান যদি আমরা দিতে পারি, তাহলেই এ দেশটাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারবো।

রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে সব তথ্য নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, এখানে একটি বিষয় আছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কিছু বিষয় থাকে। এ বিষয়, যেগুলোকে স্বাভাবিক নিরাপত্তার নজরে দেখতে হবে। সব ডিসক্লোজ করা সব সময় বোধ হয় করা যায় না, সম্ভব না। এর বাইরে যেগুলো থাকবে সেগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ থাকবে। যে কেউ দেখতে পারবে। এ সিস্টেমটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে।

ফারাক্কা বাঁধ থেকে পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন আরেক নেতা। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। আর পতিত স্বৈরাচার সরকার ইচ্ছা করেই করেনি প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য। এটা আন্তর্জাতিক লবি, আমরা সময়মতো অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করবো। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করবো আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য।

দলীয় আরেক নেতার ভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে তার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এ কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণ করবো।

এর আগে সকালে রাজশাহীতে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, চেয়ারপারসনের বিদেশবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মাহাদী আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

কর্মশালায় আলোচনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম হীরা ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব এ বি এম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম আলীম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী ও শফিকুল হক মিলনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

পিরোজপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাসুদ বিন সাঈদী বলেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যখন যে যেভাবে এসেছেন তারাই দেশটাকে তাদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করে লুটেপুটে খেয়েছেন। দেশের সম্পত্তি, দেশের অর্থ সব বিদেশে পাচার করেছে।

আমরা দেখেছি বিদেশে বেগম পাড়া হতে। এর একটি কারণ হলো নীতি-নৈতিকতার সমৃদ্ধ আমরা রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশে আমরা পাইনি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে পিরোজপুরে টাউন ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পিরোজপুর জেলা শাখা দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল একটা বৈষম্যহীন ন্যায় ইনসাফ নীতি-নৈতিকতার সম্পন্ন একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য। আমরা দীর্ঘ ৫৩ বছর দেখেছি যে ন্যায় ইনসাফ তো বহুদূরের কথা বরং শোষণ বঞ্চনায় ভরপুর একটি রাষ্ট্র। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা ছিলেন তারা এই জাতিকে দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, মানুষ দুর্ভিক্ষে না খেয়ে থেকেছে। কিন্তু শেখ সাহেবের সন্তানেরা সোনার মুকুট পড়ে বিয়েসাদি করেছেন। এটাও দেখেছি ব্যাংক ডাকাতি করেছে, ব্যাংক লুটপাট করেছে।

তিনি আরো বলেন, এই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান যে গণ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশ এই গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফসল নয়। এই গণঅভ্যুত্থানে বিগত ১৭টি বছর বাংলার মেহনতি, শ্রমিক, জনতা, ছাত্র-জনতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সংগ্রামের ফসল। যদিও আমাদের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৩৬ দিনে আন্দোলন এটা পূর্ণতা পেয়েছে। কিন্তু আন্দোলন শুধু ছাত্র-জনতা নয় আন্দোলন ছিল গোটা দেশবাসীর। সেই সাথে এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা। যদি ৫ আগস্টের আন্দোলনে আমাদের শ্রমিক ভাইদের ব্যাপক অংশগ্রহণ না থাকতো তাহলে স্বাধীনতা আমরা পেতাম নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ তবে আরো হয়তো সময় লেগে যেত। আমরা এই বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই।

মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন বাংলাদেশ একটি শোষণ বঞ্চনাহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। তারা চায় সংবিধানের আলোকে সকল ধর্মের বর্ণের মানুষের সমান অধিকার। যে কারণে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চায় কিছু সোনার মানুষ তৈরি করতে। কারণ সোনার মানুষ যদি তৈরি না হয় সোনার রাষ্ট্র তৈরি হবে না। যে কারণে আজকের এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আমার সম্মানিত শ্রমিক ভাইদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আসুন আগে আমি নিজেকে গড়ি, এরপর আমার পরিবারকে গড়ি, এরপর সমাজ গড়ার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি।

তিনি বলেন, এই পিরোজপুরের মাটিতে আমরা নতুন করে আর কোনো জালেম স্বৈরাচারকে দেখতে চাই না। শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, নারী, পুরুষ মেহনতি জনতা সকলে মিলেমিশে একটি শান্তিপূর্ণ পিরোজপুর আমরা চাই। এই পিরোজপুরে আর কোনো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি দেখতে চাই না। কোনো শ্রমিক আর কোনো মামলার শিকার হন তাও দেখতে চাই না। এজন্য সবার আগে যেটা প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগে নিজেকে গড়া এরপর পরিবার গড়া এরপরে সমাজ গড়া।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পিরোজপুর জেলা সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা হারুনুর রশিদ খান, কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। প্রধান বক্তা ছিলেন মো. আলহাজ কবির আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও অঞ্চল পরিচালক বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ বরিশাল অঞ্চল। বিশেষ অতিথি অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ, জেলা আমির বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, অধ্যক্ষ জহিরুল হক, জেলা সেক্রেটারি।