রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের একটা গোষ্ঠী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে; কিন্তু এ বাংলাদেশে আর কোনোদিন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কারসাজি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধিকারীদের খুঁজে বের করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা।

সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর এটি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম বৈঠক।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্যের পর দলের নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এই বৈঠকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে বলেও সূচনা বক্তৃতায় আভাস দেন তিনি। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে গণভবনে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ-অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে। তবে মানুষের কষ্ট কমাতে তার সরকার কাজ করছে।

তিনি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে ও দুরভিসন্ধি করে যারা পণ্য মজুত করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেশে আর কখনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। বাজার নিয়ে কেউ যেন কোনো খেলা খেলতে না পারে, সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি। এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলিতা দরকার।

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট হতে দেবে না, ভোটার যেতে দেবে না— এমন হুমকির পর, নানা বাধা বিপত্তির পরও জনগণ স্বত:স্ফূর্ত ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। তিনি আরও বলেন, দল ক্ষমতায় থাকলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সেটা এবার প্রমাণিত হয়েছে। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা অন্য পথে হাঁটছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির শাসনামলে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা পেয়েছে মাত্র ৩০ আসন। এরপর থেকে তারা দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস চালায়। নির্বাচন করবে না সেটা তাদের ব্যাপার; কিন্তু এ দেশের মানুষ নির্বাচন গ্রহণ করেছে। অথচ কিছু আঁতেল ভোট নিয়ে ধূম্রজাল তৈরির চেষ্টা করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা, কেন বাড়ল সেটাই প্রশ্ন। কেউ যদি অবৈধভাবে মজুত করে থাকে, তাকে সাজা পেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন, নির্বাচন কিভাবে করব— সেটা নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। দেশের একটা গোষ্ঠী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে; কিন্তু এ বাংলাদেশে আর কোনোদিন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে দেওয়া হবে না। অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

রাজনীতি

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। ফলে একক দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও আর থাকছে না।

সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভা শেষে গণভবন গেটে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এদিকে সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে দলীয় প্রতীকের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেন নেতারা। তবে বেশির ভাগ নেতা দলীয় কোন্দল ও সংঘাত থেকে নেতা-কর্মীদের দূরে রাখতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক না রাখার পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও নেতাদের এই মতামতের প্রতি নিজের সমর্থন জানান।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়।

রাজনীতি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সরকার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেছেন, এ লড়াইকে আরও সংগঠিত, শক্তিশালী এবং বেগবান করতে হবে। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। জয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের সাইহাম স্কাই ভিউ টাওয়ারের সামনে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।

‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না: গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর’ শীর্ষক এ কর্মসূচি হয়। টেবিলে বিছানো কাপড়ে রিকশাচালকসহ সাধারণ মানুষ ৭ জানুয়ারির ভোটের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করেন। তৃতীয় দিনের এ কর্মসূচির শুরুতে বক্তব্য দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বক্তব্যের মাঝে মাঝে গণসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ গণস্বাক্ষরসহ অন্য কর্মসূচিগুলো আমাদের মূল লড়াইকে বেগবান করবে। অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী সরকারের বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় আন্দোলন করেছি। গণসভা, গণমিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশসহ লাখ লাখ মানুষের বিভিন্ন কর্মসূচি করেছি। কিন্তু এখন কেউ লজ্জাহীন হলে তো লজ্জা দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হয়ে যারা জনগণের সেবা করতে চান তারা হলেন রাজনীতিবিদ। আর জনগণের সমর্থন ছাড়াই যারা জনগণকে শাসন করতে চায় তারা তো গণবিরোধী শাসক। আমরা সে রকম একটি গণবিরোধী শাসক চক্রের অধীনে আছি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন- এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।

এদিকে বিকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন সরকারের উচিৎ জিয়াউর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা; কিন্তু তারা নির্লজ্জের মতো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করছে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ঋণ দিয়ে তিনি গার্মেন্টস শিল্প চালু করেছিলেন। বেকারত্ব দূর করতে নানা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ১৬ হাজার কর্মী পাঠিয়ে তিনি প্রথম প্রবাসী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘শহীদ জিয়া ও বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান ও ডা. আশফাক নবী কনকের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. শহীদুল আলম, ডা. শহীদুর রহমান, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকা, অ্যামট্যাবের দবির উদ্দিন তুষার প্রমুখ।

রাজনীতি

অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে বিএনপি সবসময় অন্ধকার গলিপথ খুঁজে বেড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) জানে যে তারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত। সেজন্য নির্বাচন করতে চায় না। নির্বাচন নষ্ট করে দিয়ে কীভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়, সে পথ তারা খুঁজে বেড়ায়, অন্ধকারের গলিপথ খুঁজে বেড়ায়। আলো ঝলমল নির্বাচন আর জনগণের পথে তারা পথ হারিয়ে ফেলে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শুধু এই নির্বাচন নয়, বারবারই তারা (বিএনপি) প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং হারার ভয়েই তারা নির্বাচন করেনি। কিন্তু জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, তারা নির্বাচিত আসবে কী করে? ২০০৮ সালের নির্বাচনে যেখানে অনেকে মনে করেছিল বিএনপি বোধ হয় সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের সমান সমান। কিন্তু তারা যে সমান সমান নয়, সেটা প্রমাণ হলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে। সে নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিল, এককভাবে আওয়ামী লীগ পেল ২৩৩ আসন। আর বিএনপি ২০ দলীয় জোট নিয়ে পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট।

২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা বলেন, ২০ দলীয় জোট নিয়ে ৩০ সিট পাওয়ার পর থেকেই তারা নির্বাচন চায় না। তারা নির্বাচন নষ্ট করার জন্য অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, রেলে আগুন দেওয়া; এ রকম অমানবিক কার্যক্রমই তারা করে যাচ্ছে। যত বেশি তারা অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে, মানুষ তত বেশি তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের (বিএনপি) একটিই দক্ষতা আছে, অগ্নিসন্ত্রাস করা, বাসে আগুন দেওয়া, লঞ্চে আগুন দেওয়া, রেলে আগুন দেওয়া, রেলের লাইন খুলে দিয়ে রেলের পাত খুলে ফেলে দিয়ে মানুষ মারা, মানুষ মারার ফাঁদ পাতায় তারা ওস্তাদ।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ নির্বাচনে বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়। এ নির্বাচনে বিজয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিজয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জানুয়ারির যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। আমি বলব অধিকার শুধু নয়, সাংবিধানিক অধিকার, তা আমরা নিশ্চিত করেছি।

৭ জানুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে মন্তব্য করে পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। হ্যাঁ, নৌকা মার্কা দিয়েছি, সেই সঙ্গে বলেছি, যারা নির্বাচন করতে চায়, করতে পারবে। উন্মুক্ত করে দিয়েছি, কাজেই সেখানে নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে।

এখনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দোয়া করবেন, এখনো চক্রান্ত শেষ হয়নি, এখনো শুনি তারা আবার লাফালাফি করে। নির্বাচন বাতিল করতে হবে, এই করতে হবে, সেই করতে হবে। যাই হোক জনগণের ভোটে আমরা সরকারে এসেছি। জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাব।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৫২ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বনানীর সেতু ভবনের অডিটোরিয়ামে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৫ জুন বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। পরের দিন থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এক যুগেও কাজ সমাপ্ত না হওয়া বিআরটি প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে চালু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এ বছরের জুনের মধ্যে বিআরটি প্রকল্প শেষ হবে। এখন নিচের অংশের ভোগান্তি নেই।

২০১১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বিআরটি প্রকল্পের জন্য একটি প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে। ১ ডিসেম্বর ২০১২ সালে একনেক ঢাকা বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এরপর গত ১২ বছরেও প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি।

রাজনীতি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারাগারে আটক সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে মিছিল করেছে বিএনপি।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে সোমবার সকালে বিক্ষোভ মিছিলটি শান্তিনগর মোড় থেকে শুরু হয়ে কাকরাইলে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় নেতাকর্মীরা সরকারের পদত্যাগ, ডামি নির্বাচন বাতিল ও অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।

মিছিলে অংশ নেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকূল ইসলাম, সহযুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পারভেজ রেজা কাকন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, আকরামুল হাসান মিন্টু, রবিউল ইসলাম রবি, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতা ডা. সালাউদ্দিন মোল্লা, ডা. শরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হালিম খোকন, এজমল হোসেন পাইলট, আশরাফ বাবু, তারেক উজ জামান তারেক, হুমায়ুন কবির, যুগ্ম সম্পাদক শওকত আরা উর্মি, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মহসিন মোল্লাহ্, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুন প্রমুখ

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

তিনি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সকাল ৮টায় ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস বাসস’কে এ কথা জানান।

ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০ আসনে পড়েছে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্র।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন ঢালিউড অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ।

রাজনীতি

২০টি ভোটকেন্দ্র পোড়ানো, ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ প্রতিটি নাশকতার ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। বিএনপি বাস ও ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, যেন মানুষ ভোট দিতে না যায়।

শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।

তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্বাস্থবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও গোলাম রব্বানী চিনু।

ঢাকা-১৭ আসনের নৌকার প্রার্থী আরাফাত বলেন, বিএনপি ভোট বর্জনের রাজনীতি করছে। তারা বলছে- মানুষ যেন ভোট দিতে না যায়। এজন্য বিএনপি সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করেছে। ভোটের দিন মানুষ যাতে ভোট দিতে না যেতে পারে, সেজন্য হরতাল ডেকেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরাফাত বলেন, আসলে তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না যে মানুষ ভোট বর্জন করবে। যেহেতু তারা এটা বিশ্বাস করে না, সেজন্য তারা প্রথমে লিফলেট বিতরণ করেছে, এরপর হরতালের ডাক দিয়েছে। নতুন করে নাশকতা করে এবং মানুষকে পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। হুমকি দিচ্ছে যেন মানুষ ভোট দিতে না যায়।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের এই নেতা দাবি করেন, ২০টি ভোটকেন্দ্র পোড়ানো, ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ প্রতিটি নাশকতার ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত।

আরাফাত বলেন, প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রে যখনই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যখনই কেউ ধরা পড়ছে, পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে হয় সে স্বেচ্ছাসেবক দলের, হয় ছাত্রদল, না হয় যুবদল, না হলে বিএনপির কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী। তারা অনেকেই ধরা পড়ার পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিচ্ছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার বিএনপি-জামায়াত দেশের ২০টিরও বেশি ভোটকেন্দ্র আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। রাজবাড়ীর একটি স্কুলে পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশের এক সদস্যকেও তারা হত্যা করেছে। রামুতে রাখাইন মন্দিরে আগুন দিয়েছে। ডেমরা ও কুমিল্লায় দুটি বাসে আগুন দিয়েছে। ভোলায় বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর ও হামলা করেছে। এই চিত্র শুধু গত দুই দিনের। নির্বাচনের বিরোধিতা ও সন্ত্রাসের ইতিহাস বিএনপির ডিএনএতেই আছে।

রাজনীতি

 দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।   শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ভোটারের প্রতি আমাদের আহ্বান, রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে যারা আপনাকে গত ১৫ বছর অধিকার বঞ্চিত রেখেছে, তাদেরকে আপনি অন্তত একদিন (রোববার) বয়কট করুন। বিশ্বাস রাখুন, আপনার এই একদিনের সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী সরকারের কবর রচিত হবে, ইনশাআল্লাহ। স্বাধীনতার সম্মান-গৌরব-মর্যাদা ফিরে পাবে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত, লাল-সবুজের পতাকা। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে আজ ভোট বর্জন করি। আসুন আমরা আওয়াজ তুলি, ৭ জানুয়ারী ভোট বর্জন করুন। ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ৭ জানুয়ারি সারাদিন-পরিবারকে সময় দিন। আপনি-আপনার পরিবার-স্বজন-বন্ধুবান্ধব-পরিচিতজন এবং প্রতিবেশীদেরও, ভোটের নামে বানর খেলার আসর বর্জন এবং ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করুন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ জানুয়ারি আরেকটি একতরফা পাতানো নির্বাচনের সবচেয়ে অন্ধকারময়-তিমিরাচ্ছন্ন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে।

আজ এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এক গভীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অভিনব মডেলের ডামি নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৫ বছরের মতো আবারও ক্ষমতায় থাকতে এক বিপজ্জনক খেলার আয়োজন করা হয়েছে। আবারও প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের দলদাস রাষ্ট্রযন্ত্র শুধু দেশের মানুষকেই অগ্রাহ্য করেনি, তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিতই করেনি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্য তথাকথিত ভোট রঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর বিপদের অতলে। ইতোমধ্যে এ তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের নৃশংসতম বর্বরোচিত ন্যক্কারজনক ঘটনার পরই আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি। প্রকৃত দোষীদের আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সাত সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মহানগর ডিবি পুলিশ প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নাকি বিএনপি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনায় বিএনপিকে দুষছেন। কি হাস্যকর বয়ান। ক্রসফায়ারের নিত্যদিন একই কাল্পনিক গল্পের মতো তাদের প্রতিটি ঘটনায় গল্প তৈরি থাকে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে তুলে নিয়ে গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এখন তাদের নৃশংস নির্যাতন করে দোষ চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও তাদের দলীয় পুলিশ প্রশাসনের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতে বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর দায় চাপিয়ে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহিংস হিসেবে দেখাতে পারে। যেমনটা তারা ১৯৯৬,২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। প্রায় প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায়  আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটা প্রকাশ হচ্ছে কোনোটা ঢাকা দিচ্ছে পুলিশ।

রিজভী আরও বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দিয়ে নারী শিশুসহ চারজন সাধারণ নিরীহ মানুষকে নৃশংসতমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এই বর্বরতার ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি। এ ক্ষমতা লিপ্সু সরকারের কোনো তদন্তের ওপর দেশের জনগণের ন্যূনতম আস্থা-বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের তদন্তের টার্গেট থাকে বিএনপিকে দোষী বানানো। অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনোটাই আখেরে ধোপে টেকেনি।

গত ৪৮ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের গ্রেপ্তার, মামলা, আসামি এবং আহতদের তালিকা তুলে ধরেন তিনি।

রিজভী জানান, এ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫৫ নেতাকর্মীকে, আহত হয়েছে ৬০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩৫৫ নেতাকর্মীকে।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুধুই জনগণের কল্যাণের জন্য, কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি হচ্ছে মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি।

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রথমবার যারা ভোট দিতে যাবেন তাদের জীবনের প্রথম ভোটটি যেন ব্যর্থ না হয় সেজন্য তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য তরুণ সমাজের প্রতি এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট প্রদানের জন্য দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বরিশাল বিভাগীয় সদরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, আর ওদের (বিএনপি-জামায়াত) রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে। তাদের কি মানুষ চায়? মানুষ তাদের চায়না।”

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশ এবং ২৬ ডিসেম্বর রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় অন্যান্য নির্বাচনী সমাবেশের মতো এদিনও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ধিক্কার জানাই ওই বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী দল। এই সন্ত্রাসী দলের কোন রাজনীতি করার অধিকার বাংলাদেশে নেই। কারণ তারা মানুষ পোড়ায়। মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে আর ওদের রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে। তাদের কি মানুষ চায়? মানুষ তাদের চায়না। আর তাদের দোসর হচ্ছে ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা যারা গণহত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগ করেছে, মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে, সেই জামায়াত। কাজেই খুনি, মানি লন্ডারিংকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীদের সাথে জুটেছে যুদ্ধাপরাধীদের দল। এরা নির্বাচন চায়না, নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আহ্বান আপনারা ৭ তারিখে সকাল সকাল সকলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন মার্কাটা কি? জনতা চিৎকার করে বলে ওঠে ‘নৌকা’।

নূহু নবীর নৌকা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কৃপায় একদা মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন ।

তিনি বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েই আজকে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেটা মাথায় রেখে ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ অর্থাৎ ২১০০ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের পরিকল্পনা আমরা করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এটা একমাত্র আওয়ামী লীগই করতে পারবে। আর নৌকা মার্কায় ভোট দিলে তারাই পারবে আর কেউ পারবেনা। অগ্নি সন্ত্রাসী বা লুটেরা বা এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীরা কেউ পারবেনা -সে কথাটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এসময় বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের প্রত্যেকের জন্য ভোট প্রত্যাশা করেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এবং এত দীর্ঘ সময় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে। যখন ওই জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়নি বরং বাংলাদেশ পেছনে চলে গিয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কাজেই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।

তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি-সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটাতেই আমরা বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, নতুন ভোটার যারা সেই নতুন ভোটারদের কাছে আমার আহ্বান, যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আসবেন তারা নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার প্রথম ভোটটি ব্যর্থ হোক, কাজেই আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকাকে জয়যুক্ত করবেন।

তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। সেই ব্যথা বেদনা বুকে নিয়ে দেশের মানুষগুলোকে আমি আমার আপন পরিবার হিসেবে গ্রহণ করেছি। আর এই পরিবারকে কিভাবে রক্ষা করতে হবে, কিভাবে উন্নতি করতে হবে, আমি সেভাবেই বাংলাদেশের মানুষকে দেখি এবং আপনাদের জন্যই আমি কাজ করে যাই, দেশকে উন্নত করতে চাই।

তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সব হারিয়েও আমি বাংলাদেশে এসেছি। সে সোনার বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই যে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সেজন্য আমার জীবনে যত বাধাই আসুক। সব বাধা অতিক্রম করে আজকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এগিয়ে যাব। আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদ চাই। আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই।

প্রধানমন্ত্রী এসময় ভোট দেবেন কিনা, জানতে চাইলে উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সমস্বরে চিৎকার করে নৌকায় ভোট প্রদানের অঙ্গীকার করেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রখ্যাত অভিনেতা ও অভিনেত্রী মীর সাব্বির ও তারিন জাহান সমাবেশে বক্তৃতা করেন।

সমাবেশ পরিচালনা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন।

মঞ্চে এসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা উভয়েই মঞ্চের প্রান্তে জনতার কাছে গিয়ে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। জনগণও তাদের হাতের পতাকা নেড়ে জবাব দেয়।

শুরুতেই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে স্বাগত জানাতে বরিশালের সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী গান পরিবেশন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ছেলেমেয়েরা সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জনশক্তি হয়ে গড়ে উঠবে। এভাবে স্মার্ট জনশক্তি হিসেবে তাদেরকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, আমাদের অর্থনীতি সেটাও স্মার্ট হবে এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও স্মার্ট হয়ে গড়ে উঠবে। তার জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের বলব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। কারণ শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনদিন কোন দেশ উন্নতি করতে পারে না। এ কথাটা সবার মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন জনগণের উন্নয়ন করছি তখন দেখি বিএনপি-জামায়াত অগ্নি সন্ত্রাস করছে। তারা রেল লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করার ফাঁদ পাতে। রেলের বগিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে মা ও সন্তানকে। মা তাঁর সন্তানকে ছাড়েনি বুকে আগলে ধরে রেখেছে, দুজনে সেভাবেই আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছে।

এই দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন, তারা ২০০১ সালে শুরু করেছিল এরপর ২০১৩ ও ১৪ সালে একই ঘটনা ঘটায়, এরপর আবার এখন সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এই বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেখানে এককভাবে ২৩৩টি আসনে বিজয়ী হয় তখন বিএনপি জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। কেননা তাদের ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের দুর্নীতি-দু:শাসন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দেশের মানুষের নাভিশ^াস উঠিয়েছিল। সেটা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি অন্ধকার যুগ। দেশের গ্যাস বিদেশিদের কাছে বিক্রির মুচলেকা দিয়ে চক্রান্ত করে ক্ষমতায় এসেছিল খালেদা জিয়া।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘৯৬ থেকে-২০০১’ সময়টা বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, আবার ২০০৯ থেকে ২০২৩ গত ১৫ বছরের বাংলাদেশ, আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজ, নানা অবকাঠামো যতদূর পেরিছি আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। যেখানে দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ছিল আজকে সেখানে ৪ কোটি ৯২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ কোটি।”

তিনি বলেন, এই বরিশাল এক সময় ছিল শস্য ভান্ডার। বরিশালের সেই সুনাম আবারো আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। তারজন্য এই অঞ্চলে খাদ্য মজুদ রাখার জন্য আমরা সাইলো নির্মাণ করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল বিভাগে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তাঁর সরকার দেশে এ পর্যন্ত ৪টি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় করেছে, ইনশাআল্লাহ বরিশালেও একটি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় করে দেওয়া হবে।

বরিশালের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসতে পারলে বিভাগটি নিয়ে তাঁর আগামীর চিন্তা সম্পর্কে দলটির সভাপতি বলেন, এখানে সরকার বিশ^বিদ্যালয় করেছে, মেরিন একাডেমী করে দিয়েছে, তাছাড়া প্রত্যেকটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে দিয়েছে। বিশ^ব্যাংকের দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে সরকার প্রমত্তা পদ্মার ওপর সেতু করে দেওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে এর দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে, এই অঞ্চল সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে।

তিনি স্মরণ করেন, ছোটবেলায় এই বরিশালে যখন আসতেন আগের দিন সন্ধ্যায় স্টিমারে চড়লে পরদিন দুপুরে নামিয়ে দিত।

তখন এখানে ঘোড়ারগাড়ি চলতো – বলতেন কালীবাড়ি রোড সুধীরবাবুর বৈঠক খানার কাছে যেতে হবে। পরে এখানে গাড়ি চালু হয়। আর আজকের সেই অবহেলিত বরিশাল যে কতটা উন্নত তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এই বিভাগে আমরা নৌবাহিনী ঘাঁটি করেছি, সেনানিবাস তৈরী করেছি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে, এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি সেখানে সোলার প্যানেলসহ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আমরা ঢাকায় নিচ্ছি যা ভবিষ্যতে বরিশালেও আমরা নিয়ে আসবো। শিল্প, কল-কারখানা যাতে গড়ে ওঠে তার ব্যবস্থাও করবো।

মুজিববর্ষে তাঁর অঙ্গীকার- ‘বাংলাদেশে একটি মানুষও আর গৃহহীণ থাকবেনা’, সেকথার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬২৩টি পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর দিয়েছি। এই বরিশাল বিভাগের জেলা-উপজেলা পর্যন্ত যদি কেউ ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকে আমরা বিনাপয়সায় তাকে ঘর করে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড এবং ওয়াইফাই কানেকশন যাতে হয় সে ব্যবস্থা তাঁর সরকার আগামীতে করে দেবে। পাশাপাশি ভাঙ্গা থেকে বরিশাল এবং কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত ৬ লেনের রাস্তা করে দেব এবং ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

জনসভাকে কেন্দ্র করে বরিশাল উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে যোগদানের কথা থাকলেও সকাল থেকেই লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। রাতেও অনেকে আসেন আগে থাকতে। সকাল থেকেই ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে এবং রঙিন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন হাতে, রঙিন টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ, শ্লোগানে চারদিক মুখরিত করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কর্মী ও সমর্থকদের অনুষ্ঠানস্থলের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। ঢোল, নির্বাচনী প্রতীক নৌকার পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা ছিল হাতে হাতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতা আশপাশের এলাকা, রাস্তাঘাট ও ফাঁকা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, অর্থাৎ নৌকার আদলে তৈরি মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের আগেই শহরটি মানবসমুদ্রে পরিণত হয়।