রাজনীতি

লন্ডনে চিকিৎসারত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে সেখানে পৌঁছেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় হিথ্রো বিমানববন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া চিকিৎসারত আছেন। তাই তাকে দেখতে এসেছি। এটি আমার দায়িত্ব।

এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ অকার্যকর। যে যতই চেষ্টা করুক এটি অকার্যকরই থাকবে।

লন্ডনে কতদিন থাকবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতদিন থাকব তা বলা মুশকিল। এটি ম্যাডামের চিকিৎসার ওপর নির্ভর করবে।

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়ে গেছে। তারা ব্যাংক লুট করে রাজকোষ শূন্য করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে কুয়েত সিটির আল আরদিয়া খাইমায় আয়োজিত এক সর্বদলীয় প্রীতি সমাবেশ ও গণসংবর্ধনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। হাফেজ মাওলানা নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের আমির আরও বলেন, বিগত জালেম সরকার দেশের মানুষের ওপর নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছিল। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইসলামী নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। জালেম সরকার দেশের আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি করে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছিল। মানুষকে কথায় কথায় পুলিশ দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল। মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রবাসীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করে বিগত সরকার তাদের ভিসা ও পাসপোর্ট না দিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি করেছিল। বিদেশি দূতাবাসে অসৎ লোকদের নিয়োগ দিয়ে প্রবাসীদের পকেট কাটার ব্যবস্থা করেছিল। সৎ লোকেরা ক্ষমতায় এলে সব দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করে ইনসাফ কায়েম করবে। আপনারা যারা প্রবাসে আছেন আপনারাই বাংলাদেশের প্রতিনিধি। আপনারা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উন্নত করবেন, এটাই আমরা আশা করি।

তিনি বলেন, প্রবাসী ভাইদের নীতিবান হতে হবে। সব ক্ষেত্রেই যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। আপনারা যে দেশে আছেন সে দেশের আইনকানুন ভালোভাবে মেনে চলতে হবে এবং দেশের ভাবমর্যাদা উন্নত করতে হবে।

আপনারা নিজেদের পরিবার-পরিজনদের এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখবেন। আপনারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিকসহ সব ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলবেন। আমরা সবাই মিলেমিশে দেশ গড়ার কাজে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান জামায়াত আমির।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, দেশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে যে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে সেরকম স্বৈরাচার সরকার যেন আর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আর কোনো ফ্যাসিবাদী সরকারকে মানবে না। আমিরে জামায়াতের নেতৃত্বে আমরা সবাই বাংলাদেশকে একটি আদর্শবাদী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সংগ্রাম করছি।

এদিন দুপুরে জামায়াত আমিরকে বিদায় জানান বাংলাদেশ দূতাবাসের ১ম সচিব মনিরুজ্জামানসহ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ডা. শফিকুর রহমান ওমরাহ পালন শেষে ১২ জানুয়ারি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।

রাজনীতি

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৪৩৭.০৭ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণসহ ৪,২৪৬.৭২ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

চলতি অর্থবছরে একনেকের ৬ষ্ঠ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

একনেক সভা শেষে এনইসি সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে অবহিত করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশনের সচিব ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ২৪৬.৭২ কোটি টাকার মধ্যে ৩,৬৩২.০১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে, ২০৫.৭৯ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এবং ৪০৮.৯২ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে।

অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন এবং চারটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তারা এখন প্রক্রিয়া করছেন এবং এইভাবে দ্রুত পদ্ধতিতে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছেন যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে।

তিনি জানান যে এখন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে এবং পরিকল্পনা কমিশন স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।

সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক প্রসঙ্গে ড. মাহমুদ বলেন, রপ্তানি আয় আবার বাড়ছে এবং রেমিট্যান্সের অভ্যন্তরীণ প্রবাহেও গতি এসেছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে আরও তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় রয়েছে।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে ‘সুযোগের জানালা’ হিসেবে উল্লেখ করে ড. মাহমুদ বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশ এ ধরনের সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করতে পারবে।

তিনি আরও জানান যে সরকার পরিসংখ্যান আইন সংশোধন করতে পারে যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান ও মজুরি হার সম্পর্কিত নিজস্ব তথ্য প্রকাশের অনুমতি দিতে পারে।

আজকের সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল: মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ১,৫৩৮.১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সংরক্ষণ ড্রেজিং, অতিরিক্ত ১৬৯.৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জাহাজ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত), ১১৩.৮৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস এন্ড সেফটি সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) স্থাপন (৪র্থ সংশোধিত), ২৬৫.৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মসুর ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদার করা, ৪৯৯.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ৪৩৯.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে লোহার সেতু পুনর্নির্মাণ/পুনর্বসন (২য় সংশোধিত), ৬৪৬.৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ কূপ (অন্বেষণ কূপ) অনুসন্ধান প্রকল্প, ৬৮.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নেপালের লুম্বিনি সংরক্ষণ এলাকায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ মঠ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প এবং অতিরিক্ত ৬৮.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (চতুর্থ সংশোধিত)।

এছাড়া পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যেই অনুমোদিত নয়টি প্রকল্পের বিষয়েও একনেক সভায় অবহিত করা হয়।

সভায় সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

যশোরের রাজনীতিতে এখন আলোচিত মানুষ এসকেন্দার আলী জনি। তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের যশোর জেলা কমিটির বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক।

তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকারের সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা।

এরপর থেকেই যশোরের রাজনীতিতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছেন এসকেন্দার আলী জনি। কয়েকটি মিডিয়া ওই ভিডিও’র সূত্র ধরেই সংবাদ প্রকাশ করায় তা আরও প্রচারিত হয়।

বিষয়টিকে আজগুবি ও আষাঢ়ে গল্প বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেছেন, এমন একটি ঘটনা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে ঘটে যাবে আর তা অন্য কেউ জানবে না, বিষয়টি খুবই হাস্যকর। এ ঘটনায় মিডিয়ার আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

জেলা যুবদল নেতারা বলছেন, দলীয় কার্যালয়ের ‘টি-বয়’ থেকে সংগঠনের পদ-পদবী লাভ করার ভার সামলাতে না পেরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে এসকেন্দার আলী জনির। এ কারণে তিনি মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কথা বলতেন। তাই জেলা বিএনপির সুপারিশে কেন্দ্রীয় যুবদল জনিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তারপর থেকেই তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে গেছেন। এবার তিনি যা বলেছেন, তা কোনো বিবেচনাতেই মানুষের সুস্থ মস্তিষ্কপ্রসূত নয় বলে মনে করেন যুবদল নেতারা।

ভিডিওবার্তায় এসকেন্দার আলী জনি যা বলেছেন

৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভে এসে এসকেন্দার আলী জনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। ’

তার দাবি, যশোর ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ৫ তারিখের পর (কোন মাসের ৫ তারিখ তা উল্লেখ করেননি তিনি) তাকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করেছেন যুবদলের জেলা সেক্রেটারি রানা। এসকেন্দার আলী জনির অভিযোগ, শুধু ওবায়দুল কাদের নন, যুবদল নেতা রানা আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।

জনির ফেসবুক লাইভ ছিল ২৭ মিনিটের। তিনি তার অভিযোগের তদন্ত চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। পাশাপাশি এসব বিষয় নিয়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করারও হুমকি দিয়েছেন।

কে এই এসকেন্দার আলী জনি?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসকেন্দার আলী জনির বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গায়। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের জীবদ্দশায় দলের যশোর জেলা কার্যালয়ে টি-বয় হিসেবে যোগদান করেন। তিনি জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আগতদের আপ্যায়ন করতেন এবং রাতে কার্যালয়েই থাকতেন। সে সুবাদে তিনি দলের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।

সেই সূত্রে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এভাবেই তিনি জিয়া পরিষদের কমিটিতে যুক্ত হন। পরে তাকে প্রথমে জেলা যুবদলের সদস্য ও পরে প্রচার সম্পাদকও করা হয়। এরইমাঝে তিনি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্যে নিজের নাম প্রচার করতে থাকেন। বিষয়টিতে কেউ পাত্তা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মনগড়া ও অশ্লীল কথাবার্তা লিখতেন ও বলতেন।

এসকেন্দার আলী জনি বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করে কোনো ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।

বিএনপি ও যুবদল নেতৃবৃন্দ যা বলছেন

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বুধবার (০৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন মানুষকে যে কেউ ভারতে পার করে দেবেন, তা অন্য কোনো সংস্থা বা সাংবাদিকেরা জানবেন না, এটি অসম্ভব। যিনি এই অভিযোগ করেছেন তিনি একজন অসুস্থ মানুষ। তার আষাঢ়ে ও আজগুবি গল্পের কোনো সত্যাসত্য যাচাই না করেই একটা ছেলের বিরুদ্ধে নিউজ করে দেওয়া হলো। একবারও ভেবে দেখা হলো না, যিনি এই অভিযোগ করছেন তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান কী, তিনি যা বলছেন বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল থাকতে পারে কি না।

অনিন্দ্য ইসলাম আরও বলেন, অসুস্থ কোনো ব্যক্তির মন্তব্য নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো মিডিয়া এভাবে নিউজ করতে পারে, তা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে কল্পনা করা যায় না।

এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের আগে অন্তত দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে যাচাই করে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক।

যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বাংলানিউজকে বলেছেন, জনি বিভিন্ন সময় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করতেন। নেতাদের অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতেন। সে কারণে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু গত বছরের ৩০ নভেম্বর জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবর দলীয় প্যাডে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জনির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন।

রানা আরও জানান, জেলা বিএনপির চিঠি কেন্দ্রীয় যুবদলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যার ভিত্তিতে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন সংগঠনের যশোর জেলা কমিটি থেকে জনিকে বহিষ্কার করেন, যা সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম হোসেল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন। মূলত সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে যান জনি।

যশোর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগর কমিটির আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বাংলানিউজকে বলেছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের সিনিয়র নেতাদের চরিত্র হনন এবং বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেওয়ায় এসকেন্দার আলী জনিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সাথে সংগঠনের কোনো যোগাযোগ নেই। ফলে তার বিষয়ে এখন সংগঠন কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না।

তিনি বলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বা অন্য যে কেউ যদি ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতেন তাহলে এতদিন মিডিয়ায় চলে আসতো। জনির কাছ থেকে শুনতে হবে কেন?

এ বিষয়য়ে জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জনির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রাজনীতি

চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। সেখানে ব্রিটিশ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে দেওয়া ডক্টরস প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক কেনেডি একজন স্বনামধন্য লিভার বিশেষজ্ঞ। লিভারের ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ে কাজের জন্য তিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে তার। ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি লন্ডনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সালে বার্টস অ্যান্ড দ্য লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

অধ্যাপক কেনেডি ক্রনিক হেপাটাইটিস বি (সিএইচবি) রোগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার এই গবেষণার প্রধান লক্ষ্য ছিল লিভারের ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো। এ বিষয়ে প্রায় দুই শতাধিক গবেষণাপত্র, একশর কাছাকাছি পিয়ার রিভিউয়েড আর্টিকেলসহ একাধিক বইও লিখেছেন তিনি।

অধ্যাপক কেনেডি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা এবং এইচবিভি ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া ইউরোপীয় লিভার রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের এইচবিভি ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস গাইডলাইন কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ইউনাইটেড কিংডম অ্যাডভাইজরি প্যানেলের (ইউকেএপি) হয়ে রক্তের ভাইরাস রোগ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকেন অধ্যাপক কেনেডি। তিনি ব্রিটিশ ভাইরাল হেপাটাইটিস গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান।

দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রফেসর কেনেডির রোগী দেখার ফি ৩৫০ পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩ হাজার টাকা। আর রোগীর ফলোআপে ফি নেন ২৫০ পাউন্ড বা ৩৭ হাজার ৫৩৫ টাকা।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাতারি আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে দীর্ঘ সাত বছর ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয় খালেদা জিয়ার। এরপর তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যান।

রাজনীতি

‘‘নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে মানুষ কতটুকু সংস্কার চায় তার ওপর,” রূপা হক ঢাকায় সাক্ষাৎ করতে এলে বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য দুটি সময় নির্ধারণের কথা আবারও তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য রূপা হক সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে।

”নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে মানুষ কতটুকু সংস্কার চায় তার ওপর।”

বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নির্বাচনের রূপরেখা দেওয়ার দাবির মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছিলেন।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সংসদ সদস্য রূপা হক শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তাদের আলাপের বিষয় তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাক্ষাতের সময় রূপা হক বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তখন ছিল একটি ভুয়া সংসদ, ভুয়া এমপি এবং ভুয়া স্পিকার। পুরো দেশ এখন তাদের কণ্ঠস্বর ফিরে পেয়েছে; যা এতদিন জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।”

রুপা হক বলেন, “বাংলাদেশ.২ দেখে আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত হয়েছি।”

আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আবার বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূস তাকে জুলাই মাসের গণজাগরণ এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে জনগণের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনা তুলে ধরেন।

এসময় ঢাকায় ডেপুটি ব্রিটিশ হাই কমিশনার ও উন্নয়ন পরিচালক জেমস গোল্ডম্যান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রূপা হক যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডার চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ চৌধুরী এবং টেকসই উন্নয়নবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে বৈঠক করেন।

লুৎফে সিদ্দিকী যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের এ দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইউকেবিসিসিআই) একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে রয়েছে।

ইউকেবিসিসিআই চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ এবং ইউকেবিসিসিআই সভাপতি এম জি মৌলা মিয়া এ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন।

রাজনীতি

আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটা পদ্মা সেতু তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে কমপক্ষে চারটা পদ্মা সেতু তৈরি করা যেতো। তাহলে বাকি তিনটা গেলো কোথায়? হিসাব একেবারেই পরিষ্কার। দেশের টাকা দিয়ে যারা বিদেশে ‘বেগমপাড়া’ গঠন করেছেন, তারাই এই টাকা চুরি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান।

কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়াদ্দরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যেখানেই মেগা প্রকল্পের কথা হয়েছে, সেখানেই মেগা দুর্নীতি হয়েছে। স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত এই (২০২৪) সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে নিজেদের বাপ-দাদার তালুক মনে করতেন, তারা চেতনার কথা বলতেন। চেতনার কথা বলে বলে এই জাতিকে তারা লুণ্ঠন করেছেন, গণহত্যা চালিয়েছেন। তাদের সন্তানরা আকাম-কুকাম করে ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছেন। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে তারা বিদেশে পাচার করেছেন। শুধু তাদের গত সাড়ে ১৫ বছরের আমলে যার হিসাব বেরিয়ে এসেছে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের প্রায় পাঁচগুণ।

জামায়াত আমির বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পিওনের অ্যাকাউন্টে ছিল সাড়ে চারশ কোটি টাকা? পিওনের যদি এত টাকা হয় মালিকের কত টাকা? হ্যাঁ, মালিকের টাকাও বের হয়ে আসছে। আপনাদের একেবারেই নিকটে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র। এখান থেকে মালিকের পরিবার শুধু একটা প্রকল্প থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। এভাবে যেখানেই মেগা উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই মেগা ডাকাতি করা হয়েছে।’

সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যক্ষ খন্দকার এ কে এম আলী মুহসিন, ড. আলমগীর বিশ্বাস, মাওলানা আবদুল মতিন, ঝিনাইদহ জেলা আমির আলী আজম মোহাম্মদ আবু বক্কর, পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল, মেহেরপুর জেলা আমির তাজউদ্দিন খান, মাগুরা জেলা আমির এবিএম বাকের, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন, রাজবাড়ী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইমরান হোসাইন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র নাথ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার চাই। আমরা বৈষম্য চাই না। আমরা আমাদের গর্বের সন্তানদের কথা দিচ্ছি, তোমরা যেমন জীবন দিয়ে জাতিকে আরেকবার স্বাধীনতা এনে দিয়েছো, আমরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে তোমাদের দাবি পূরণ করবো ইনশাআল্লাহ।

এর আগে মুফতি আমীর হামজার অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে কিছুক্ষণ পরপর ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন জেলার সাংস্কৃতিক শিল্পীরা। বেলা ১১টার দিকে জামায়াতের আমির মঞ্চে ওঠেন।

আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করেছে। ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংক ডাকাতি করেছেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা বোনের মেয়ে লন্ডনের এমপি বানিয়েছেন। ভাগ্যক্রমে তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এখন তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছিল তাদের ইনকাম সোর্সের জায়গা আর কলিজা ছিল অন্য দেশে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান দেশে নেই। সবার ঠিকানা বেগমপাড়ায়। তারা দেশকে যদি ভালোবাসতো তাহলে তারা দেশেই থাকতেন।

শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘শেষ করবে না কেন? তাদের সন্তানতো এদেশে লেখাপড়া করে না। তিলে তিলে শিক্ষাব্যবস্থাকে নষ্ট করে জাতির মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করে দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা কোটাজালে বন্দি, যা পৃথিবীর কোথাও নেই।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট করেছিল। আমরা সরকারকে বলেছি, এই সিন্ডিকেটের হাত ভেঙে দিতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের ওপর আর অর্থনৈতিক শোষণ চালানো যাবে না। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আপনারা নামুন। ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের সঙ্গে নামবে ইনশাআল্লাহ।

রাজনীতি

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এখন নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যেতে জনগণের সঙ্গে ছাত্রদের ঐক্যের মেলবন্ধন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঠাকুরগাঁও পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা ছাত্রদলের আয়োজনে এক সমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলে।

ছাত্রদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের রাজনীতি-গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করেছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তারা কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে হত্যা করেছে। এই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় এবং তারা দেশের সবকিছুকে ধ্বংস করে দেয়। আজ তোমাদের আন্দোলন, একই সঙ্গে জনগণের আন্দোলন—সব মিলিয়ে হাসিনা যখন দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, তখন আমাদের সামনে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। আজ যেটা প্রয়োজন, তা হচ্ছে ঐক্য। বিশেষ করে জনগণের ঐক্যের সঙ্গে ছাত্রদের ঐক্য।’

বিগত বছরগুলোতে ছাত্ররা অনেক ত্যাগ শিকার করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব যোগ করেন, ‘তোমরা অনেক মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছ। আজ আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হতে পেরেছি। প্রিয় বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তোমাদের এই ছাত্রদল গঠন করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। পরে ৭ নভেম্বর জনগণ তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। এরপর তিনি মাত্র চার বছর বেঁচে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই চার বছরেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি একদিকে রাজনীতি ও অন্যদিকে অর্থনীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটান।’

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পড়াশোনায় মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তোমাদের উদ্দেশে একটা কথা বলতে চাই, সবার আগে পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জাতীয়তাবাদী দলের যে দর্শন, তা জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা সব সময় এ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাইব। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাইব। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে চাইব। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখব। আজকে অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই চক্রান্তের কাছে আমরা মাথা নত করব না।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি দূর করে, বৈষম্য দূর করে জনগণের একটা সরকার যেন প্রতিষ্ঠা করতে পারি, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে পারি, সেই দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রদের সব সময় জ্ঞানভিত্তিক চর্চা করতে হবে, জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’

রাজনীতি

“অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে নজিরবিহীন পরিবর্তন ঘটেছে, তাকে আত্মসাৎ করার প্রবণতা থেকে সকল পক্ষকেই সতর্ক থাকতে হবে।”

জামায়াতে ইসলামীকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলে দলটির আমিরের দেওয়া বক্তব্য ‘ইতিহাসের নির্মম রসিকতা’ বলেছেন স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলকারী আসম আবদুর রব।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি জেএসডির সভাপতি রব বলেন, ‘‘১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে এবং মানবতাবিরোধী অবস্থান করেও স্বাধীন দেশে জামায়াতে ইসলামকে দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা ইতিহাসের নির্মম রসিকতা ছাড়া কিছুই নয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যার সাথে জড়িত থাকা দেশপ্রেমের পরিচয় নয়।”

গত ২৫ ডিসেম্বর রংপুরের পাগলাপীরে জামায়াতে ইসলামীর এক সমাবেশে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দেশে পরীক্ষিত দুটি দেশপ্রেমিক শক্তি আছে– একটি সেনাবাহিনী, আরেকটি জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ সরকার এ দুই শক্তিরই ক্ষতিসাধন করেছে। আগেই সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন করেছে। পরে জামায়াতকে তছনছ করে দিতে উঠে পড়ে লাগে।”

তার ওই বক্তব্য ‘মুক্তিকামী মানুষের জন্য অসম্মানজনক’ মন্তব্য কর আসম আবদুর রব বিবৃতিতে বলেন, “অন্যদের বীরত্ব লড়াই সংগ্রামকে অস্বীকার করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার রাজনীতি গত ১৫ বছর জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এক জাতি এক নেতা এক দেশ- অপ্রতিরোধ্য করার পরিণতিও আমরা দেখেছি।

“এবার ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে নজিরবিহীন পরিবর্তন ঘটেছে, তাকে আত্মসাৎ করার প্রবণতা থেকে সকল পক্ষকেই সতর্ক থাকতে হবে।”

রাজনীতি

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা। শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ঢাকা সমাবেশ’ থেকে এ আহ্বান নেতারা।

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহত-আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা, বাজার ব্যবস্থার সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।

সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এরইমধ্যে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে, এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচন সাংঘর্ষিক নয়, এটি পরস্পরের পরিপূরক। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, আগেও স্বৈরাচারী সরকার বলতো ‘গণতন্ত্র চান, না উন্নয়ন চান?’ কিন্তু দুটো পরস্পরবিরোধী ছিল না। একই গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকলে গণতন্ত্র অভিযাত্রায় যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে।

এই নেতা বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান ও জাতীয় চার মূলনীতি বাতিলের দাবি এবং জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক সামনে এনে জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভিন্নমত পোষণ করলেই আগের মতো স্বৈরাচারের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার, জঙ্গি ও নৈরাজ্যবাদী শক্তির পথকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।

নয়া যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়ে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, শুধু স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন ঘটালে চলবে না, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণঅভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তি মিলে একটি ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বলতো উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। এজন্য ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার’। আর এখন অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, ‘বারবার দরকার, সংস্কার পার্টির সরকার’। এটি জনগণ সহ্য করবে না। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের বয়ানের কবর দিতে চাই। কিন্তু যদি কেউ আওয়ামী লীগের কারণে মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিতে আসে, তাহলে আমরা আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তরের কথা কেউ বুঝতে পারছে না। তবে, নানা ধরনের ছলে-বলে-কৌশলে দীর্ঘ দিনদিন ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা চলছে। এই অপচেষ্টা বাদ দিয়ে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় জনজীবনে সংকট বেড়েছে। পতিত আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট বহাল রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে না। তাই রাজপথে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতা দখলের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে প্রিন্স বলেন, একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ঘাতক চক্র বাহাত্তরের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু একাত্তরকে বাদ দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কথা ভাবার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের সংগ্রামের পথ ধরে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে আমরা আর স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় আসতে দেব না, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিহত করব এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এ জন্য বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।

সিপিবির কেন্দ্রীয় সহকারী সম্পাদক মিহির ঘোষের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তৃতা দেন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ক্ষেতমুজর নেতা প্রদীপ ভৌমিকের ছেলে সুজন ভৌমিক, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষক নেতা কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশের শুরুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গণসংগীত পরিবেশন করে।

সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময়, ২০ জানুয়ারি পল্টন হত্যা দিবসে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া শপথ গ্রহণ এবং ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি ও হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা।