অর্থনীতি

দেশে খেলাপি ঋণ ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিকে উদ্বেগজনক হিসাবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে তারা বলেছে, মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরি বাড়ার হার অনেক কম। এতে ভোক্তার আয় কমেছে। ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। অন্যান্য খাতের তুলনায় শিল্প খাতের কর্মীদের মজুরি সবচেয়ে কম বেড়েছে। এতে শিল্প খাতে উৎপাদন কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে এখনো কিছুটা অস্থিরতা রয়েছে। তবে তা আগের চেয়ে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ অক্টোবর প্রকাশ করেছে। কিন্তু এটি এতদিন কারিগরিক ত্রুটির জন্য খোলা যায়নি। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি ডাউন করা সম্ভব হয়েছে।

প্রতিবেদনে সার্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের দিকে তাকিয়ে আছে। এ বছরে দেশে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। এর সুফল অর্থনীতিতে আসছে। একই সঙ্গে রাজস্ব ও আর্থিক খাতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবহণ ও জ্বালানি খাতের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তাবায়ন হলে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বেড়েছে রেকর্ড হারে। ২০২১ সালের জুনে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশে। গত জুনে তা আরও বেড়ে ডাবল ডিজিটে অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ গত জুনে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে। খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দায় ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্বেগজনক হিসাবে মনে করছে।

প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণখেলাপিদের নিবিড় তদারকির মধ্যে রাখার কথা বলেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে ঋণ আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণভাবে নিবিড় তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়া সমস্যাকবলতি ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করছে। প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নামে এই নীতিমালাটির আওতায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন অনুপাত, সম্পদের গুণগত মান ও লাভজনকের একটি সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এটি যখন সীমার নিচে চলে যাবে তখন ওই ব্যাংককে এই নীতিমালার আওতায় বিশেষ ব্যবস্থায় তদারকি করা হবে। নীতিমালাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। অচিরেই এটি জারি করা হবে। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ দেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) সে দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তদারকি করতে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি ও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি দুটোই উদ্বেগজনক এতে কোনো সন্দেহ নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে পুরো অর্থনীতি এলোমেলো হয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে মূলত দুটি কারণে। একটি ডলারের দাম বৃদ্ধি ও দুই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। ডলার বাজার ঠিক রাখতে পারলে ও বাজারে সঠিক তদারকি হলে মূল্যস্ফীতির হার এতটা বাড়ত না। কিন্তু প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি। এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় টাকা ছাড়িয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে গেছে। টাকা ছাড়ানো, ডলারের দাম ও উৎপাদন খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ও সতর্ক দৃষ্টি রাখলে এ হার নিয়ন্ত্রণ করা যেত।

তিনি বলেন, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশসহ বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামও কমছে। কিন্তু দেশে এ হার কমছে না।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকে যেসব জালজালিয়াতি হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। কারণ জালজালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণের প্রায় পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে গেছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বাড়ছে তা উদ্বেগের বিষয়। এ হার গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত মে মাসে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ায় ও দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া জলবায়ু সম্পর্কিত মৌসুমি কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্যের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মূলত এসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এর মধ্যে এবার খাদ্য ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। এই দুই খাতের মূল্যস্ফীতির বাদ দিলে তা ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে দাঁড়ায়। এসব কারণের পাশাপাশি দেশে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়া মূল্যস্ফীতি হার প্রধানত বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্যবহির্ভূত খাতে কমে। আবার খাদ্যবহির্ভূত খাতে বাড়লে খাদ্য খাতে কমে। এতে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে একটি ভারসাম্য থাকে। কিন্তু এবার বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই একসঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। বিদেশ থেকে বেশি দামে পণ্য কেনায় প্রধানত আমদানির মাধ্য মূল্যস্ফীতি দেশে এসেছে। বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্যের প্রভাব ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানির দাম সমন্বয় করায় মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় দেওয়ার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। ব্যাংক জালজালিয়াতি করলে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া খেলাপি হলে তাদের অন্য ব্যবসায় ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলে যারা ব্যবসা করবেন তারা খেলাপি হওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসবেন। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাংক খাতের দুর্নাম হবে।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি পণ্যের মূল্য সমন্বয় এ কারণে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর সঙ্গে আরও একটি কারণ হচ্ছে দেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনের যোগে ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করে পণ্যের দাম ঠিক করছেন ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ খাতে তদারকি প্রয়োজন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপানো বন্ধ, ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এতে সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি হয়তো বাড়বে। কিন্তু রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়ে ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মূল্যস্ফীতির হারও স্থিতিশীল হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, খাদ্যপণ্যের মধ্যে সবজি, রুটি, শস্যজাতীয় পণ্য, ফল, মাছ, শুকনো খাবার সব খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত খাতে আবাসন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পরিবহণ, বিভিন্ন জ্বালানি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলের খাবার সবকিছুর দাম বেড়েছে।

এতে বলা হয়, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খাতে খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। এর মাধ্যমে অন্যান্য খাতেও মূল্যস্ফীতির ছোবল বিকশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার অনেক কম। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। সার্বিকভাবে মজুুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্প খাতে বেড়েছে ৭ শতাংশ। অন্যান্য খাতে আরও বেশি বেড়েছে। শিল্প খাতে মজুরি কম বাড়ার কারণে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে কিছুটা উদ্বৃত্ত দেখা দিলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা এখনো রয়েছে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতির কারণে এ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

এতে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালুর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। এছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনের ফলে অর্থনীতিতে আরও গতিশীলতা আসবে।

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমেরিকাতে ১৮ দিন ঘুরে আসলেন। এখন আবার ব্রাসেলসে যাবেন। চারদিকে ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন। ঘুরে ঘুরে যদি কোনো রকমে সামাল দেওয়া যায়- সে চেষ্টা করছেন। আর ঘোরাঘুরি করে কোনো লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বিদায় নিতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের সব মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আপনাদের হাত থেকে তারা বাঁচতে চায়। এখনো বলছি, দুর্গাপূজার ছুটি থাকবে। এ সময়ে নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দিন। সব মানুষ ভোট দেবে এবং ভোট দিতে যাবে। আপনার তো কোনো প্রয়োজন নেই আর।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতই যদি জনপ্রিয় হন তাহলে সুষ্ঠু একটা ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়? পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বানিয়েছেন, উড়াল সেতু বানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়েছেন, লোকজন তো আপনাকেই ভোট দেবে। তাহলে দেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটা আপনি করবেন না। কারণ জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে বলবে এক কথা আর কাজ করবে আরেকটা। নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন একটা টিম এসেছিল। তাদের বলেছেন, ‘এখানে তো আমরাই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে এসেছি। আর গত দুটি সুষ্ঠু নির্বাচন তো আমরাই করেছি। আবার করব। আমার ওপর আস্থা রাখেন আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করব।’ এটা হচ্ছে শিয়ালের মুরগি বর্গা দেওয়া। আর না। এনাফ ইজ এনাফ।

বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে বাসা থেকে গভীর রাতে দরজা ভেঙে গ্রেফতার এবং থানায় নিয়ে নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ্যানিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা করেছে। এসব আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সাবেক সংসদ-সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা, যার কপালে স্বৈরাচারের গুলির দাগ রয়েছে। সেই এ্যানিকে অন্যায়, বেআইনিভাবে আক্রমণ করেছে, আহত করেছে। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার। পুলিশ কর্মকর্তা যাদের জনগণের টাকায় বেতন হয়, তারা তার ওপর নির্যাতন করেছে। এ্যানির মতো একজন সাহসী নেতা কোন অবস্থায় আদালতে দাঁড়িয়ে বলে যে, চোর-ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না, আমাকে তারা (পুলিশ) যেভাবে মেরেছে।’

ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখান থেকে আপনারা একটা বার্তা পাবেন। সেই বার্তা হচ্ছে, মুখ বুঝে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, বাবা-মা, ভাই ও বোনদের বাঁচাতে চান তাহলে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে এবং রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। লড়াই ও সংগ্রাম করে তাদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। অন্যথায় আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে। কালকে আপনাকে সেভাবে মারবে। অনেকে বলে তরুণদের ক্ষোভ মোবাইল সেটে। ক্ষোভ মোবাইল ফোনে দিলে হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। বাংলাদেশটাকে তাদের বিচারকের ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে। তাদের একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি। মুখে কলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ৬৪৮ ভাইকে গুম করে দিয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিচারবহিভর্‚তভাবে হত্যা করেছে। এই এক বছরে মধ্যে ২২ জন যুব নেতা, ছাত্রনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিসহ সর্বক্ষেত্রে সরকারের দলীয়করণ, লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’র উদ্যোগে এ ছাত্র কনভেনশন হয়। এতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন, ১৫ অক্টোবর নয় দফা দাবি আদায়ে সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনে নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়। কনভেনশনে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেওয়ায় মিলনায়তনসহ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ বিরোধী ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশে পরিণত হয়।

জাতীয় ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাগপার একাংশের রাশেদ প্রধান, আরেক অংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এলডিপির নুরুল আলম, বিএনপির কবি আবদুল হাই শিকদার, রকিবুল ইসলাম বকুল, শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ। ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ছাত্র অধিকার পরিষদের তারিকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের মশিউর রহমান খান রিচার্ড, ছাত্রলীগের জেএসডি) তৌফিক উজ জামান, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের মেহেদি হাসান মাহবুব, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের মেহেদি হাসান মুন্না, জাগপার ছাত্রলীগের আব্দুর রহমান ফারুকী, ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহম্মেদ শাকিল, ছাত্র জমিয়তের নিজাম উদ্দিন আল আদনান, জাতীয় ছাত্র সমাজের (পার্থ) সাইফুল ইসলাম, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম) সানজিদ রহমান শুভ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতির ফহিবুর রহমান মুনির, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহমেদ ইসহাক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শহীদুল ইসলাম রিয়াজ, ছাত্রদলের মানসুরা আলম, ছাত্র ফেডারেশনের ফারহানা মানিক মুনা প্রমুখ।

অর্থনীতি

চলতি মাস অক্টোবরের প্রথম ছয় দিনে প্রবাসীরা বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন ৩২ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন হাজার ৫৬০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে)। ৬ দিনের এই প্রবাসী আয় আগের মাসের সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রোববার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম ৬ দিনের প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে পাঁচ কোটি ৪১ হাজার ৯০ মার্কিন ডলার। আগের মাস সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন এসেছিল চার কোটি ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০ মার্কিন ডলার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় এসেছিল। সে হিসাবে অক্টোবর মাসে কিছুটা ভালো সূচনা হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে এসেছে চার কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। রাষ্ট্র মালিকানাধীন দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৭ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। আর বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ১১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর তিন মাসে যথাক্রমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার ও ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।

অর্থনীতি

বাজারভিত্তিক ডলার রেটের শর্ত পূরণ না করায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানিকারকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দর বেঁধে দেওয়া অবাস্তব হিসাবে দেখছে সংস্থাটি।

এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক যে দরে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে সেটিও বাজারভিত্তিক নয় বলে জানিয়েছে আইএমএফ। আর বাজারভিত্তিক ডলার রেট না করায় রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে কমছে এমন ধারণা দাতা সংস্থাটির। পাশাপাশি বাংলাদেশ ফরেন একচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) যে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে তার বৈধতা আছে কিনাসহ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রশ্নে জর্জরিত করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। কিন্তু কোনো জবাবে সন্তোষ প্রকাশ করেনি আইএমএফ-জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার, তারল্য সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমফের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন রাহুল আনন্দ।

অপর একটি সূত্র জানায়, তারল্য সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা রিজার্ভ কমাতে সরাসরি প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে। এসব বিষয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

এদিকে সকালে আইএমএফের সঙ্গে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আবারও ঋণের সুদ হার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি একদিনের ব্যবধানে ঋণের সুদ হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি সামাল দিতেই এমন সিদ্ধান্ত। সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট বা স্মার্ট রেট বাড়িয়ে সাড়ে ৩ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বদলে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে।

এতে বলা হয়, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এক্ষণে, মূল্যস্ফীতি পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশের স্থলে সর্বোচ্চ ৩.৫ শাতংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের স্থলে সর্বোচ্চ ২.৫ শাতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। তবে কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মার্জিন ২ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।

মাত্র একদিন আগেই (বুধবার) নীতি সুদহার বা রেপো রেট একবারে দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন নীতি সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে নতুন নীতি সুদহার বা রেপো রেট হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারও বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল।

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এত দিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন। দেশে সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমেছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১২ শতাংশের উপরেই ছিল। আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে ওঠে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর শহরে সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

সিপিটিইউর কাজে সন্তুষ্ট আইএমএফ : সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) কাজে আইএমএফ সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিপিটিইউর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আইএমএফের ক্লাইমেট পলিসি ফিসক্যাল অ্যাফেয়ার্স ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ইকোনমিস্ট সুফাচল সুফাচালাসাই সিপিটিইউতে আসেন।

বৈঠকে তিনি জানতে চান টেকসই সরকারি ক্রয় নীতিমালা তৈরি এখন কোন অবস্থায় আছে। এছাড়া এই নীতিমালা তৈরিতে স্টেকহোল্ডারদের (সুবিধাভোগী) মতামত নেওয়া হয়েছে কিনা। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছ কিনা। এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চান। এর জবাবে সিপিটিইউর পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে যে, এই নীতিমালা তৈরিতে সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছে।

ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজনও করা হয়। অর্থাৎ একটি নীতিমালা অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে যেসব প্রক্রিয়া পার করতে হয় তার সবই করা হয়েছে। বর্তমানে নীতিমালাটির প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ৯ অক্টোবর সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট পলিসিটি মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি বোধ হয় সম্ভব হচ্ছে না। এর পরের সপ্তাহে হতে পারে। আইএমএফ প্রতিনিধি সিপিটিইউর কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। কেননা যেসব প্রক্রিয়া মেনে নীতিমালাটি করা দরকার সবই আমরা করেছি। এছাড়া দ্রুততার সঙ্গে এটি করায় আইএমএফ খুশি হয়েছে।

অর্থনীতি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ বানাতে ‘দিন বদলের ইশতেহার’ ঘোষণা করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়েই শেখ হাসিনা’র সরকার ২০০৯ সালে ঘোষণা করেছিলেন ‘ভিশন-২০২১’।

বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার পদক্ষেপ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে বিলিয়ন ডলারের দশ মেগাপ্রকল্প নিয়ে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আরও ৫ মেগাপ্রকল্প আছে।

আর এই অক্টোবর মাসেই উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি। যেটাকে নেটিজেনরা বলছেন শেখ হাসিনার ‘অক্টোবর চমক’।

১০ মেগাপ্রকল্প- ১. এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, ২. পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ৩. পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, ৪. মেট্রোরেল, ৫. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৬. রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প,  ৭. মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, ৮.  পায়রা সমুদ্র বন্দর,  ৯.  দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, ১০. মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র।

এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আরও ৫ মেগাপ্রকল্প হচ্ছে- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল।

এই ১৫ মেগাপ্রকল্পের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেছে। আর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে গত দুই সেপ্টেম্বর। আর গতকাল (৫ অক্টোবর) উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প, ২৩ অক্টোবর মেট্রোরেল ও ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এক মাস পরে সেপ্টেম্বরেই প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

প্রকল্প সুত্র মতে,  ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। তবে এ রেলপথ এখনই উদ্বোধনের জন্যে প্রস্তুত। বাকি  কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন নির্মাণ, যেসব স্টেশন নির্মাণ হয়নি সেখানে এখন ট্রেন থামবে না।

তবে ভাঙ্গা যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ, এই অংশের উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। পদ্মা রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন , ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্য তিন প্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় সাপেক্ষে উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তিন প্রকল্প হচ্ছে – ১. খুলনা-মংলা রেল প্রকল্প, ২. দোহাজারী- কক্সবাজার রেলপথ  প্রকল্প, ৩. আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেলপথ প্রকল্প।

মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্প

দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এরইমধ্যে মেট্রোরেল নিয়মিত চলাচল করছে। আর ২৩ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এরইমধ্যে এ অংশে পরীক্ষামূলক চলাচল করছে।

এ রেলপথ উদ্বোধনের পরে ঢাকাবাসীকে  উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে মেট্রোরেলে লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল কাজ শেষ। এ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে৷ ২৮ অক্টোবর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

এ প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করেন সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের আকাশ যাত্রার সর্ববৃহৎ প্রকল্প

৭ অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনও এখন দৃশ্যমান। চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে বাড়বে উড়োজাহাজ চলাচল ও যাত্রীসেবার মান। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংকেত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাদেশের ১৪০ সেতু উদ্বোধন 

২২ অক্টোবর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে ১৪০টি সেতু, ১২টি ওভারপাস ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (ভিআইসি) উদ্বোধন করা হবে। সেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণের চেক দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণের অপেক্ষায় রয়েছে এই দুই প্রকল্পও।

প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে থাকা বাকি ৮ প্রকল্পও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই একে একে উদ্বোধন করবেন। কারণ এর পরেই রয়েছে জাতীয় নির্বাচন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক মেগাপ্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর ঘটিয়েছেন। এবার দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যেতে ঘোষণা করেছেন রূপকল্প-২০৪১।

এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতে নিয়েছেন মেট্রোরেলের আরও পাঁচটি প্রকল্প, যার মধ্যে আছে পাতাল রেলও। সঙ্গে নিয়েছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৮ মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে’তে রুপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা।

যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৮ লেনে রুপান্তর করার প্রকল্পও।

অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৷ এই প্রকল্পটি বাস্তায়নে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে ৷

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে প্রকল্পটি ৷

নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের প্রথম ব্যাচের জ্বালানি (নিউক্লিয়ার ফ্রেস ফুয়েল) ইউরেনিয়াম গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে দেশে আনা হয় ৷

বৃহস্পতিবার(৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠানিকভাবে এ ইউরেনিয়াম হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। এ সময় রূপপুর প্রকল্প সাইটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন।

রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ জ্বালানি হস্তান্তর করবেন। এ সময় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন ৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রস্তুতির কাজ সব চূড়ান্ত। জ্বালানি আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের ৩৩তম দেশ হিসেবে যুক্ত। এটা একটা মাইলফলক অর্জন। আইএইএ এর গাইডলাইন মেনে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পারমাণবিক বিদ্যুতের জ্বালানি ইউরেনিয়াম থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপশক্তি পানিকে বাস্পে পরিণত করে টারবাইন ঘোরায় এবং এর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কয়লা, গ্যাস, তেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশের ওপর যে দুষণে প্রভাব পড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউরেনিয়াম ব্যবহারে এ ধরনের কোনো দুষণের প্রভাব নেই।

তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। সে পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রূপপুর প্রকল্পে সব রকম অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ প্রকল্পে থ্রি জি প্লাস প্রযুক্তির ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রিঅ্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে কোরক্যাচার নামেরর নিরাপত্তা যত্রাংশ।

এছাড়া তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত এর মাত্রা পর্যবেক্ষাণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যে নিরাপত্তা নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

আবার কয়লা, গ্যাস, তেলের চেয়ে ইউরেনিয়ামের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিবেশ বান্ধবের পাশাপাশি এই সব জ্বালানি থেকে অধিক সাশ্রয়ী ৷

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, সাড়ে ৪ গ্রাম ইউরেনিয়ামে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার জন্য কয়লা প্রয়োজন ৪০০ কেজি, তেল ৩৫০ লিটার এবং গ্যাস ৩৬০ ঘনমিটার। এই হিসেবে ৬০ টন তেল ও ১০০ টন কয়লার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তার জন্য ইউরেনিয়াম প্রয়োজন এক কেজি।

পাবনার রূপপুর ইউনিয়নে ১২০০ একর অর্থাৎ ৩৬০০ বিঘা জমির ওর নির্মিত রাশিয়ার প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

স্বাধীন বাংলাদেশের এটি সর্ববৃহৎ প্রকল্প ৷ এর জন্য ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ৷ এ প্রকল্পটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে এবং দুইটি ইউনিটেই স্থাপন করা হয়েছে রাশিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি থ্রি জি+ ভিভিইআর-১২০০ রিআ্যাক্টর। দুই ইউনিটি বিশিষ্ট এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

এই প্রকল্পটি আগামী বছর সেপ্টেম্বর দিকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছে ৷ সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলে উৎপানে শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান ৷

এই প্রকল্প টানা ৬০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর আরও ২০ বছর বর্ধিত করা যাবে ৷ পরবর্তীতে আরও ২০ বছর বাড়িয়ে মোট ১০০ বছর উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান ৷

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন-রোসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান সাইবেরিরয়ায় নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রেটস প্লান্টে (এনসিসিপি) রূপপুরের এ জ্বালানি উৎপাদন করছে।

রাশিয়ার ওই কারখানা থেকে বিশেষ বিমানে জ্বালানি ঢাকায় আনা হচ্ছে। এর পর সড়ক পথে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রকল্প সাইটে নেওয়া হয়।

ইউরেনিয়াম আমদানি, পরিবহন, সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার(আইএইএ) নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। সেই গাইডলাইন বা নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করেই সব ধরনের ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, রূপপুরে প্রথম ব্যাচের এ জ্বালানি সাত ধাপে দেশে আনা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ এসে পৌঁছেছে যা বৃহস্পতিবার হস্তান্তর হবে ৷ পরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাকি ৬ ধাপের ইউরেনিয়াম এসে পৌঁছবে ৷

এই প্রথম ব্যাচে যে পরিমাণ জ্বালানি আসবে তা দিয়ে এক বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। একেকটি ইউনিটে ১৬৩ টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি লোড করা হবে ৷ দুইটি ইউনিটেতে ৩২৬টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি ৮০ টন ইউরেনিয়াম ৷

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যত দিন চালু থাকবে ততদিন রাশিয়ার কোম্পানিটি এই প্রকল্পের জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে। এ সংক্রান্ত আলাদা চুক্তি রয়েছে কোম্পানিটির সঙ্গে।

চুক্তি অনুযায়ী তারা নিয়মিত প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে। তাছাড়া পাররমাণবিক জ্বালানির বর্জ্যও নিয়ে যাবে রাশিয়া, সে চুক্তিও করা হয়েছে দেশটির সঙ্গে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হস্তান্তর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বায়লানিউজকে বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সুরক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সব শর্ত মানা হয়েছে এবং সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ইউরেনিয়াম কমিশনিং এর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটি পারমাণবিক রূপ পাবে। মাত্র ছয় বছর সাত মাসে আমরা প্রকল্পের এই রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছেন ৷ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ৷ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হবে স্মার্ট বাংলাদেশের মূল্য ভিত্তি এবং এখান থেকেই শুরু হবে ৷

অর্থনীতি

আইটি বা ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে কোনো উৎসে কর কাটা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে ফ্রিল্যান্সারের আয় থেকে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে বলে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছিল, নতুন ব্যাখ্যার মাধ্যমে সেটি থেকে সরে এলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে একটি স্পষ্টীকরণ চিঠি দিয়েছে। যেটিতে ‘আইটি ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে কোনো উৎসে কর কর্তন করা হবে না’ বলে উল্লেখ করা হয়।

গতকাল রোববার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত একটি সার্কুলার জারি করে অথোরাইজড ডিলার ব্যাংকগুলোয় পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এফই সার্কুলারের (পত্র নং ১৪) শিরোনাম ছিল ‘আয়কর আইন, ২০২৩’র ১২৪ ধারা (আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫২ছ) অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং ইত্যাদি বাবদ প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের উপর উৎসে কর কর্তন ও জমাদান প্রসঙ্গে। ’

সার্কুলারে বলা হয়েছিল ‘বৈদেশিকমুদ্রা ও নীতি বিভাগ কর্তৃক ৬ আগস্ট জারিকৃত এফই সার্কুলারের (পত্র নং-৮) প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে। আয়কর আইন, ২০২৩’র ১২৪ ধারা (আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫২ কিউ) অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং ইত্যাদি বাবদ প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের উপর উৎসে কর কর্তন ও জমা প্রদান এবং নির্ধারিত জমা কোডের বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল-১১ কর্তৃক নির্দেশনা (সংযুক্তি দ্রষ্টব্য) প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে উক্ত নির্দেশনাটি যথাযথভাবে পরিপালনের জন্য আপনাদের অনুরোধ করা হলো। ’

এ বিষয়ে রাজস্ব কর অঞ্চল-১১’র একটি চিঠিও সংযুক্ত করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ফ্রিল্যান্সারদের আয় থেকে দিতে হবে ১০ শতাংশ কর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় আইটি ফ্রিল্যান্সারদের আয়ে কোনো উৎসে কর কাটা হবে না।

এরপর রোববার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের একই বিভাগ থেকে বিষয়টি স্পষ্টীকরণ করে অথোরাইজ ডিলার ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ কর্তৃক ২৭ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এফই সার্কুলার লেটার (নং-১৪) স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যে জানানো যাচ্ছে, আয়কর আইন, ২০২৩’র ১২৪ ধারার (২) এবং ষষ্ঠ তফসিলের অংশ ২ এর দফা ২১ অনুযায়ী আইটি ফ্রিল্যান্সিং খাত হতে কোনো উৎসে কর কাটা যাবে না।

অর্থনীতি

ফ্রিল্যান্সারদের সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের ১০ শতাংশ করে কর দিতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে নির্দেশনাটি যথাযথভাবে পরিপালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক (এফইপিডি) মো. সরোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সার্কুলার জারি করে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোরে প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর অঞ্চল-১১ এর মঙ্গলবারের (১২ সেপ্টেম্বর) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ জারি কর করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, আয়কর আইন-২০২৩ এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং ইত্যাদি বাবদ বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ ব্যক্তির হিসেবে পরিশোধ করার আগে জমাকৃত অর্থের ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে নেওয়ার বিধান করা হয়েছে। কর বাবদ কেটে নেওয়া অর্থ ব্যাংক ঢাকার কর অঞ্চল-১১ এর অনুকূলে নিয়ম অনুযায়ী জমা দেবে।

অনুমোদিত সব ডিলার ব্যাংককে এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

অর্থনীতি

এক মাস তিন দিনের ব্যবধানে স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা সোনা) দাম কমার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে সোনার দাম কমানো হয়েছে।

এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম এক হাজার ২৮৪ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম হয়েছে ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা।

আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর ) বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক ভূইয়া লিটন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।

স্বর্ণের নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ২৮৪ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ২২৫ টাকা কমিয়ে ৯৫ হাজার ৪১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৪৯ টাকা কমিয়ে ৮১ হাজার ৭৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৮ হাজার ১১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বর্ণের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার ১ হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের রুপা ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের রূপা ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপা ১ হাজার ৫০ টাকা ভরি বিক্রি হচ্ছে।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সোনার দাম কিছুটা বাড়ানো হয়। সে সময় সব থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ২২২ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ এক হাজার ২৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে এটাই স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।

সে সময় ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৪১ টাকা বাড়িয়ে ৯৬ হাজার ৬৩৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৮১৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা বাড়িয়ে ৬৯ হাজার ৫১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তার আগে ১৮ আগস্ট সোনার দাম কমানো হয়। তারও আগে ২১ জুলাই সোনার দাম বাড়ায় বাজুস। সে সময় সব থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭৭৮ টাকা।

এর আগে গত ২০ জুলাই ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৭৭৭ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম দুই হাজার ২৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৯৬ হাজার ২২৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ভরির দাম এক হাজার ৯২৪ টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪৬৪ টাক এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে এক হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৮ হাজার ৭০১ টাকা করা হয়।

তারও আগে গত ৭ জুন সব থেকে ২২ ক্যারেট প্রতি ভরির সোনার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৬৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ৯৫৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ হাজার ৫৪০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে এক হাজার ১৬৬ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা করা হয়।

তার আগে ২৮ মে ২২ ক্যারেট প্রতি ভরির সোনার দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা কমিয়ে ৯৬ হাজার ৬৯৪ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ১৭৪ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ৩২০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ১৪০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতি দাম ভরিতে ২৯১ টাকা কমিয়ে ৬৫ হাজার ৯৬০ টাকা করা হয়েছিল।

গত ০২ এপ্রিল ২২ ক্যারেট প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা বাড়িয়ে ৯৯ হাজার ১৪৪ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৪৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৪ হাজার ৬৫৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ১২৩ টাকা এবং আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৫৯৩ টাকা করা হয়।

এদিকে স্বর্ণালংকার কিনতে ক্রেতাদের বাজুস নির্ধারিত দামের থেকেও বাড়তি অর্থ গুণতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণালংকার বিক্রি করা হয়। সেই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে নতুন দাম অনুযায়ী এক ভরি সোনার অলংকার কিনতে ক্রেতাদের ১ লাখ ৮ হাজার ৫২১ টাকা গুণতে হবে।

অর্থনীতি

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ এ মুহুর্তে রপ্তানিতে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবেনা বলে মনে করেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভিসা নীতিতে এমন কোন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নেবে না যাতে যে সব শ্রমিক পোশাক তৈরি করে সে শ্রমিক কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক দুই সভাপতি এবং বর্তমান সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদী বক্তব্য রাখেন। সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিমসহ বর্তমান কমিটির নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

রপ্তানি বাণিজ্যে এ মুহুর্তে মার্কিন ভিসা নীতির প্রভাব না পড়ার কারণ ব্যাখ্যায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তির ওপর দেওয়া হয়েছে, দেশের ওপর দেওয়া হয়নি। কোন ব্যবসায়ীর ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে কোন সমস্যা হবে না। কারণ, করোনার অভিজ্ঞতা বলছে রপ্তানি বাজারে সশরীরে না গিয়েও ব্যবসা করা সম্ভব।

ফারুক হাসান বলেন, ব্যবসায়ীদের কাজ হচ্ছে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজগুলো ঠিকভাবে সম্পন্ন করা। সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ইউএসটিআরের কর্মকর্তারা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিজিএমইএ অফিসে এসেছেন। সেখানে তারা নভেম্বরের মধ্যে শ্রমআইন সংশোধন এবং শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিজিএমইএ এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।

সম্প্রতি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচার সংক্রান্ত সংবাদ প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, পাচারের অভিযোগ সঠিক নয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার মাধ্যমে দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন করা হয়েছে, ক্রেতাদের কাছে উদ্যোক্তাদের ছোট করা হয়েছে। এর পেছনে একটি চক্র কাজ করছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনো তদন্তই হয়নি, সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্প খাতকে ঘিরে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

এ প্রসঙ্গে সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এ মিথ্যাচারের মাধ্যমে আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।

তিনি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, যেসব কারখানার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পাশে রয়েছে দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ সংগঠনগুলোর নির্বাচন কোন পক্ষ চায়না। সবাই চায় এ মুহুর্তে ব্যবসা সঠিকভাবে চলুক।

পোশাক খাতের আগামীর চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ, উদ্ভাবনী পণ্যের চাহিদা যোগানসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়।