অর্থনীতি

রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ৩০ দেশ। এর মধ্যে সৌদি আরব এক নম্বরে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই শীর্ষে ছিল দেশটি। মাঝে কয়েক মাস সৌদি আরবকে টপকে শীর্ষস্থানে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ দু’মাস (মে-জুন) সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। ফলে আবারও শীর্ষ স্থানে চলে এসেছে সৌদি আরব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৩৫২ কোটি ডলার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ২৪ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

গত এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার দিক থেকে শীর্ষ দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে প্রায় ২৬ কোটি ডলার বা ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। শেষ দুই মাসে সৌদি আরব থেকে এভাবে না বাড়লে এবার যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে থাকত।

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত অর্থবছরে দেশটি থেকে এসেছে ৩০৩ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য। সেখান থেকে এসেছ ২০৮ কোটি ডলার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা কুয়েত থেকে ১৫৬ কোটি ডলার এসেছে। এছাড়া কাতার থেকে ১৪৫, ইটালি থেকে ১১৯, মালয়েশিয়া থেকে ১১৩, ওমান থেকে ৭৯ এবং বাহরাইন থেকে ৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে ৪২ কোটি ডলার, ফ্রান্স থেকে ২৯ কোটি ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রায় ২৪ কোটি ডলার, কানাডা থেকে প্রায় ১৪ কোটি ডলার, গ্রিস থেকে ১৩ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৩ কোটি ডলার, জর্ডান থেকে প্রায় ১৩ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রায় ১২ কোটি ডলার, জাপান থেকে ১১ কোটি ডলার, জার্মানি থেকে ১১ কোটি ডলার, মরিশাস থেকে প্রায় ১১ কোটি ডলার, স্পেন থেকে আট কোটি ডলার, ব্রুনাই থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার, লেবানন থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার, পর্তুগাল থেকে প্রায় চার কোটি ডলার, ইরাক থেকে প্রায় চার কোটি ডলার, সুইডেন থেকে তিন কোটি ডলার, মালদ্বীপ থেকে প্রায় তিন কোটি ডলার, সাইপ্রাস থেকে প্রায় তিন কোটি ডলার এবং আয়ারল্যান্ড থেকে দুই কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানি শিল্পোদ্যোক্তা সজল ডি. ক্রুজ বলেন, বিদায়ি অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছি। তার আগের অর্থবছরে পাঠিয়েছি চার কোটি টাকার মতো। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে এ টাকা পাঠাই। ছুটিতে অন্য কোথাও যাই না। বাংলাদেশে গিয়ে ঘোরাঘুরি করি। দেশের প্রতি প্রাণের টান আছে। যে টান কখনো ভুলে থাকতে পারি না। ২০০৪ সালে জাপানে আসি লেখাপড়া করতে। লেখাপড়া শেষ করে কিছু দিন চাকরি করি। স্বপ্ন দেখি উদ্যোক্তা হওয়ার। এরপর গঠন করি কোম্পানি। এভাবেই আজকে একটি অবস্থানে এসেছি। রেমিট্যান্সে প্রণোদনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। তবে দেশের ভেতর এবং বাইরে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আরও বেশি সম্মানিত করলে খুশি হতাম।

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ২১৬১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আসে ২১০৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে বিদায়ি অর্থবছর রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ৫৮ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ মাস জুনে এসেছে ২২০ কোটি ডলার। যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২১ সালের জুলাইতে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে মহামারি করোনার মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভরা করোনার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে বেশির ভাগ মানুষের আয় কমলেও তখন হুন্ডি চাহিদা তলানিতে নামে। যে কারণে বৈধ চ্যানেল ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর বিকল্প ছিল না। ফলে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে তখন।

অর্থনীতি

বিশ্ব বাণিজ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের আধিপত্য কমছে। বৈশ্বিক রিজার্ভের মধ্যে ডলারের অংশও কমে যাচ্ছে। ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশেরই আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক দায় বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক দেশ এখন বৈদেশিক বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশও বৈশ্বিক লেনদেনের কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে।

এর মধ্যে ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে সে দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। চীনা মুদ্রা ইউয়ানে এলসি খুলে সে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার বিষয়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত ওই মুদ্রায় কোনো এলসি খোলা হয়নি।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশের মুদ্রাকে স্থিতিশীল মুদ্রা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে-মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড, ইউরোপীয় অঞ্চলের মুদ্রা ইউরো, জাপানি মুদ্রা ইয়েন ও চীনা মুদ্রা ইউয়ান। এর মধ্যে মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড, ইউরোপীয় অঞ্চলের মুদ্রা ইউরোই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশি সচল। চীনা ও জাপানি মুদ্রা ওই দেশ ছাড়া অন্যত্র চলে না। যে কারণে এ দুটি মুদ্রা আইএমএফের স্বীকৃতির পর বৈশ্বিক বাণিজ্যে সচল হতে পারেনি।

২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চীনা মুদ্রায় এলসি খোলার অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত এ মুদ্রায় কোনো এলসি খোলা হয়নি। কারণ ইউয়ান চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে চলে না। ফলে চীনে ইউয়ানে রপ্তানি করে ওই মুদ্রা চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে ব্যবহারের সুযোগ নেই। যে কারণে রপ্তানিকারকরা চীনা মুদ্রায় এলসি খুলছেন না। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে চীন থেকে ১৪ হাজার কোটি ইউয়ান পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি করা হয়েছে ৪০৬ কোটি ইউয়ান। ফলে চীন থেকে ওই মুদ্রায় আমদানি করার মতো যথেষ্ট ইউয়ান বাংলাদেশের হাতে নেই। তারপরও ইউয়ানে বাণিজ্য করতে হলে ডলার দিয়ে ইউয়ান কিনতে হবে। যা বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে।

একই অবস্থা হবে ভারতীয় মুদ্রা রুপিতেও। বাংলাদেশ ভারত থেকে বছরে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি রুপির পণ্য আমদানি করে। এর বিপরীতে ভারতে রপ্তানি করে ১২ হাজার কোটি রুপি। ফলে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে পাহাড়সম ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এত বিপুল অঙ্কের আমদানির দায় মেটানোর মতো রুপি বাংলাদেশের হাতে নেই। এ কারণে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত ভারতে যে পরিমাণ রপ্তানি হচ্ছে তা হবে রুপিতে। ওই রুপি দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা হবে। এ হিসাবে দুই দেশের মধ্যে ১২ হাজার কোটি রুপির বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় হবে। এতেও সমস্যা হবে বাংলাদেশ থেকে যারা পর্যটক বা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন, তাদের অনেকে রুপি নিয়ে যান। তখন তারা রুপির সংকটে পড়বেন। বাধ্য হয়ে তারা ডলার নেবেন। এতে ডলারের ওপর চাপ বাড়বে।

এছাড়া যেসব রপ্তানিকারক ভারতে রপ্তানি করেন তারা রুপিতে মূল্য আনলে সেগুলো ভারতেই খরচ করতে হবে। অন্য কোথাও করা যাবে না। কিন্তু একজন রপ্তানিকারকের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে লেনদেন করতে হয়। রপ্তানির কাঁচামাল অনেক সময় ভারত থেকে না এনে অন্য দেশ থেকেও আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রেও রপ্তানিকারক সমস্যায় পড়বেন। অন্য দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে তাকে ডলারে এলসি খুলতে হবে। তখন রুপি বিক্রি করে ডলার কিনতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। এ কারণে রপ্তানিকারকরা রুপিতে পণ্যের মূল্য নিতে আগ্রহী হবেন না।

২০২০ সালে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে সেদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার বিষয়টি সমীক্ষা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এটি এখনো শেষ হয়নি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফলে রাশিয়া এখন ডলারে লেনদেন করতে পারছে না। চীনা মুদ্রায় বেশিরভাগ লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ চীনা মুদ্রায় রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন করতে গিয়েও সফল হয়নি। কারণ যথেষ্ট মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই।

এদিকে শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমদানিতে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করলে সুবিধা পাওয়া যাবে। খরচ কমবে। বাংলাদেশ মোট আমদানির ৪০ শতাংশই করে ভারত ও চীন থেকে। কিন্তু রপ্তানি করে কম। এছাড়া গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে এ দুই মুদ্রার মানও টাকার চেয়ে বেশি কমেছে। টাকার মান কমেছে ২৬ শতাংশ, ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান কমেছে ৩২ শতাংশ, চীনা মুদ্রার মান কমেছে ২৮ শতাংশ। এসব কারণে দেশের রপ্তানিকারকরা ডলারের বাইরে স্থানীয় মুদ্রায় এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রায় পণ্য আমদানি করলে ব্যয় কম হবে। এতে বৈদেশিক লেনদেনে সাশ্রয় হবে। এ কারণে ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রায় লেনদেনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু ডলারের বিকল্প এখন কোনো মুদ্রা দাঁড়াতে পারেনি বলে সেটি সফলও হয়নি।

তবে ভূরাজনৈতিক কারণে এখন অনেক দেশই ডলারের বিকল্প মুদ্রা খুঁজছে। এক্ষেত্রে চীন অনেক দূর এগিয়েছে। তারা রাশিয়া, ইরান, ভারতের সঙ্গে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন করছে। নিজস্ব আমদানি-রপ্তানির বাইরে চীনা মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি করছে।

ভারতের বৈদেশিক লেনদেনের প্রধান মুদ্রা ডলার। কিন্তু দেশটি জাপানের সঙ্গে দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন সম্পন্ন করছে। এতে বছর শেষে যে লেনদেন বকেয়া থাকছে, পরের বছর তা সমন্বয় করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়াও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করছে। এর মাধ্যমে ডলারের উত্তাপ থেকে তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে ব্রিকস ব্যাংক নিজস্ব মুদ্রা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বর্তমানে ৮টি দেশ রয়েছে। আরও ১৯টি দেশ এতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।

বিশ্বে রিজার্ভ মুদ্রাব্যবস্থায় ২০০১ সালে যেখানে ডলারের অংশ ছিল ৭৩ শতাংশ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই হার আরও কমে হয়েছে ৫৮ শতাংশ।

অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার এতদিনের (গ্রস) হিসাবের পাশাপাশি নিট হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এ নিট তথ্য প্রকাশ শুরু করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন হিসাব অনুযায়ী নিট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার (২ হাজার ৩৫৬ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার)। আগের (গ্রস) হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার (২ হাজার ৯৯৭ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার)।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সাপ্তাহিক নির্বাচিত অর্থনৈতিক সূচকে এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে বৈদেশিক মুদ্রার তথ্য প্রকাশ আসছে। এ হিসাবের মধ্যে থাকতো রিজার্ভ থেকে গঠন করা ইডিএফ’র মতো বেশ কয়েকটি তহবিলের অর্থ। যার পরিমাণ ৬ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার (৬৪০ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার)।

রিজার্ভের অর্থে গঠন করা তহবিলগুলো হলো রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ( ইডিএফ); যা রপ্তানিমুখি শিল্পের জন্য। এবং লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) নামে দুটি তহবিল থেকে বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে অর্থ এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচির জন্য।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ নেওয়ার সময় শর্ত ছিল চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রচলিত পদ্ধতির হিসাবায়নের পাশাপাশি নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ছে

আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন ডলারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর একই পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আগে এ দুই দরের মধ্যে বেশ ব্যবধান থাকত।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে আন্তঃব্যাংকের গড় দামে ডলার বিক্রি করত। এখন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম একই হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও ডলারের দাম বাড়াতে হয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকার বেশি হতে পারবে না।

সোমবার ও বুধবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দর একই ছিল। অর্থাৎ ১০৯ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। এর আগে ডলারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকত। সর্বনিম্ন দর ১০৮ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সার মধ্যে থাকত। সর্বোচ্চ দর ১০৯ টাকার মধ্যেই রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বাফেদার বাধার কারণে এর বেশি বাড়তে পারছে না।

বাফেদার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমদানিতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা। আন্তঃব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০৯ টাকা করে ডলার কিনে তা আমদানির দায় মেটাতে ১০৯ টাকা করে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করলে ব্যাংকের ক্ষতি হবে। কারণ এ খাতে ব্যাংকের সেবা দেওয়ার বিপরীতে যে খরচ হচ্ছে তা উঠছে না।

বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী যে দামে ব্যাংক ডলার কিনছে তার চেয়ে এক টাকা বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। তবে কোনোক্রমেই তা ১০৯ টাকার বেশি হবে না। ফলে আন্তঃব্যাংক থেকে ১০৯ টাকা করে ডলার কিনে তা একই দরে আমদানির বিল পরিশোধে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা বেশি দিন সম্ভব হবে না।

আন্তঃব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে আমদানিতেও এর দাম বাড়বে। নগদ ডলারের দামও বেড়েছে। এখন সর্বোচ্চ ১১২ টাকা করে কোনো কোনো ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করছে। তবে বেশির ভাগই ব্যাংকই বিক্রি করছে ১১০ থেকে ১১১ টাকার মধ্যে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে রুপিতে লেনদেন শুরু হয়েছে। উদ্বোধনের দিনে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে রুপিতে দুটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি ও আমদানির এলসি খুলেছে। তামিম এগ্রো লিমিটেড ১৬ মিলিয়ন রুপির বেশি রপ্তানির এলসি এবং নিতা কোম্পানি লিমিটেড প্রায় ১২ মিলিয়ন রুপির আমদানির এলসি খুলেছে। দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে রুপিতে লেনদেনের উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এসব তথ্য জানান।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার ভারত। বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে আর ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের আলোচনা চলছিল। ব্যবসায়ীরাও অনেক দিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এবার তা বাস্তব রূপ পেল। এখন ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও বাণিজ্য হবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা চালু হলো। এতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলো। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে। বাণিজ্যে দুদেশ আরও এগিয়ে যাবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দারুণ সফলতা রয়েছে। আমরা চাই- এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উভয় দেশ সহজভাবে বাণিজ্য করুক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলি রেজা ইফতেখার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বিডার চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যে অঙ্কের পণ্য ভারতে রপ্তানি করবে, একই অঙ্কের পণ্য রুপিতে আমদানি করা যাবে। তিনি বলেন, শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও আইসিআইসিআই ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য লেনদেন নিষ্পত্তিতে অংশ নিচ্ছে।

মেজবাউল হক জানান, ‘টাকা-রুপি কার্ড’ চালু প্রক্রিয়াধীন। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এসব কাদের আগ্রহে চালু হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের ইচ্ছায়। ভারত প্রথম প্রস্তাব দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশ এভাবে লেনদেন করছে। সম্ভবত বাংলাদেশ ১৯তম।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশ ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের প্রক্রিয়া চালু করতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনে ভারতের ব্যাংকগুলোতে রুপিতে ‘নস্ট্র অ্যাকাউন্ট’ খুলেছে সোনালী ও ইবিএল। নস্ট্র হিসাব হলো- বিদেশের কোনো ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করতে খোলা হিসাব।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরওয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৮ থেকে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় দেশের বাজারেও কমালেন আমদানিকারক ও পরিশোধন মিল মালিকেরা। বুধবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবলস অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার অব অ্যাসোসিয়েশন নতুন এই দাম ঘোষণা করেছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (খোলা) ৮ টাকা এবং বোতলজাতে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া পাম তেল (খোলা) ৫ টাকা এবং বোতলজাতে ১২ টাকা দাম কমানো হয়েছে।

আগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা, এখন ৮ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১৫৯ টাকা।  বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল আগে ১৮৯ টাকা, এখন ১০ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১৭৯ টাকা। আর ৫ লিটার বোতলের দাম ছিল ৯১৬ টাকা, তা কমিয়ে ৮৭৩ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম আগে ছিল ১৩৩ টাকা। এখন লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১২৮ টাকা।  একই সঙ্গে পাম তেলের এক লিটার বোতলের দাম ছিল ১৬০ টাকা। এখন ১২ টাকা কমিয়ে লিটারপ্রতি ১৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থনীতি

দেশে-বিদেশে সৃষ্ট নেতিবাচক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি চার ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হওয়া, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং আর্থিক খাতে অস্থিরতা।

আর দেড় বছর ধরে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগুলোর পর এখন অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে এসেছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের চাপ। এ দুইটিতে এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতি তিন মাস পর এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চাপে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো অর্থনীতিতে পড়েনি। তবে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নির্ভরশীল। এ দুটি অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসব দেশে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমদানির ৭২ শতাংশই আসছে ভারত ও চীন থেকে। রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি আসছে এখন আমেরিকা থেকে। বর্তমানে যে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভূরাজনৈতিকভাবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এ দুটি দেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক। এছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বেশ কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তাদের সমালোচনা মানতে রাজি নয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চীনের দিকে এক পা বাড়িয়ে রেখেছে। যদিও মুখে বলছে সব দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে বাংলাদেশ মনোযোগী।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি নীতি এমনভাবে বিন্যস্ত করেছে যে গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কিছু বিধিনিষেধ এবং সাম্প্রতিক সময়ের ভিসানীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ রেমিট্যান্স আকারে দেশে চলে আসছে। যে কারণে হঠাৎ করে ওই দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে।
সশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোতে হবে। এখনো ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েনি। যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগোচ্ছে। এর প্রভাব এখনো আছে। এই যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত করে যাচ্ছে। আর্থিক খাতে অস্থিরতা ছিল। এখন তা কাটতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোয় তারল্যের জোগান বাড়ছে। আগামী দিনে এ পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

তারল্যের জোগান বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট থেকে বাংলাদেশে উদ্ভূত সমস্যার মধ্যে এখনো মূল্যম্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। এ দুটি খাতে এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে হবে এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জোগান বাড়াতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধানে আরও জোর দিতে বলা হয়েছে। কারণ, একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানির বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি গত অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৭ শতাংশ কমেছে।

একই সঙ্গে রেমিট্যান্স বাড়াতে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও প্রবাসীদের অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার উদ্যোগকে আরও জোরালো করতে হবে। ইতোমধ্যে এ খাতে হুন্ডির বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বেশ সুফল পাওয়া গেছে। এই ধারাবাহিকতা চলমান রাখলে হুন্ডির প্রবণতা আরও কমবে। তখন প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে আগামী দিনে এ দুই খাতে চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে এলেও বাংলাদেশে এ হার একটি ঊর্ধ্বমুখী পথ অনুসরণ করেছে। বিশেষ করে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত খাত থেকেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিনিময় হারের ওপর চাপ কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। আমদানি ব্যয় কমার কারণে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি কিছুটা কমেছে। বিনিময় হার ধরে রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

অর্থনীতি

দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখতে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যাতে দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে। দেশে দীর্ঘসময় ধরে গণতন্ত্র থাকায় আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়ন ও উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছি।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তাদের জন্য ফিতা কেটে নতুন অফিস উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত না থাকলে এ অর্জন সম্ভব হতো না।’ গণতন্ত্রের ধারা যে দীর্ঘ সংগ্রামের ফল, তা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একদিনে আসেনি।’

পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ, সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন কার্যালয় সম্পর্কে সংসদনেতা বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সংসদ একটি স্মার্ট অফিস পেয়েছে। এই অফিস কাজের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং সংসদ সচিবালয়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সংসদ লাইব্রেরিকে অমূল্য আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হওয়ার জন্য অতীতের সংসদ অধিবেশনের কার্যবিবরণী অধ্যয়নে এখানে কিছু সময় ব্যয় করার জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। এতে কার্যবিবরণীর উদ্ধৃত করে সংসদে বক্তব্য দেওয়া যাবে।’

দেশের প্রকৃত ইতিহাস সবাইকে জানাতে সংসদে একটি আর্কাইভ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই ইসাডোর কানের মূল নকশা (সংসদের নকশা) রক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। আমরা ৪ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংসদের সম্পূর্ণ নকশা সংগ্রহ করেছি।’

অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, অক্টোবরের মধ্যে সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম ও সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হবে।

অর্থনীতি

ঈদুল-আজহাকে সামনে রেখে গত জুন মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। গত মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এ পরিমাণ গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রবাহ। এর আগে, এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। এ হিসেবে রেমিটেন্স বেড়েছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

রেমিট্যান্সে চাঙ্গাভাবের মধ্যে ঈদের আগে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের ৫২ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবার ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে ক্রমান্বয়ে ডলারের দর বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি রপ্তানি বিল কেনার দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে আজ থেকে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা কার্যকর করেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল কেনার গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা সরকারি ৫টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৩৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকে এসেছে ৫২ কোটি ২২ লাখ ডলার। বেসরকারি ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৬ ব্যাংকে এসেছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

অর্থনীতি

ঈদ উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। ফলে তারা ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। অনেকে আগের সঞ্চয় ভেঙেও টাকা তুলছেন। গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে গ্রাহকদের বাড়তি টাকার জোগান দিতে না পেরে অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা নিয়েছে।

রোববার ও সোমবার-এ দুই দিনে বিভিন্ন ব্যাংক অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধা নিয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কলমানি থেকে ধার নিয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা, স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে ব্যাংকগুলো শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় সার্বিকভাবে তারল্যের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই সহায়তা নিতে হয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোয় জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে তারল্য কমেছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায়। এপ্রিলে তারল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে সংকট এখনো কাটেনি। ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করা হয় কুরবানির ঈদের সময়। এ কারণে এক মাস আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছিল যে, ঈদের সময় কোনো ব্যাংকে যাতে নগদ টাকার সংকট না হয়। প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও সহায়তা নিতে বলা হয়েছিল। এর আলোকে ব্যাংকগুলোও নগদ টাকার জোগান আগে থেকেই নিশ্চিত করে রাখে। এক সপ্তাহে ব্যাংকগুলো শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ জুন ২ হাজার ৭০০ কোটি, ২২ জুন ৩ হাজার ৫০০ কোটি, ২১ জুন ৭ হাজার ৪০০ কোটি, ২০ জুন ৬ হাজার ৫০০ কোটি, ১৯ জুন ৪ হাজার ৬০০ কোটি এবং ১৮ জুন ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছে।

ঈদের আগে গত রোববার ও সোমবার ছিল ঈদের আগে শেষ ব্যাংকিং লেনদেন। ওই দুই দিন গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি টাকা তুলেছেন। এ কারণে ওই সময়ে ব্যাংকগুলোও নগদ টাকার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছে। রোববার কলমানি মার্কেট (এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের এক দিনের জন্য ধার) নিয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং একই দিনে অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি বা ৬ থেকে ১৪ দিনের জন্য ধার নিয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। সোমবার কলমানি থেকে ধার নিয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সীমিত পরিমাণে ২৪ থেকে ৯২ দিন মেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি ধার নিয়েছে কিছু ব্যাংক। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া বিশেষ তারল্য সুবিধার আওতায় নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

এসব ব্যাংক ৩৪ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এবার ঈদের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির দায় মেটানোর জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে ব্যাংক থেকে ডলার কেনা বাবদ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যায়নি। উলটো রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কিনেছে। এতে একদিকে কিছু টাকা ব্যাংকগুলোয় এসেছে, অন্যদিকে ডলার নিয়ে রিজার্ভ কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ ছিল। ভোক্তাদের সার্বিকভাবে কেনাকাটার পরিমাণও কম। যে কারণে আগের চেয়ে নগদ টাকার চাহিদাও ছিল কম।

অন্যান্য বছর ঈদের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও এবার তেমন একটা বাড়েনি। গত রোজার মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৮ কোটি ডলার। এবার কুরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে ২৬ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি ডলারের বেশি। রেমিট্যান্স কম আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বেশি ডলার কিনতে পারেনি। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহও বাড়েনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোয় আমানত প্রবাহ নিম্নমুখী ছিল। এপ্রিলে এসে কিছুটা বেড়েছে। জুনে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয় বলে আমানত প্রবাহ কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ডলার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে। এ খাতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এছাড়া গড়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়া এবং আমানত প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার কারণে তারল্য প্রবাহ কমেছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেবে সাড়ে ২২ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে জাপান। স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এজন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান এবং জাইকার বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিদো। ইআরডি ও জাইকা থেকে পাঠানো পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা (পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) শক্তিশালী করতে ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোনের অংশ হিসেবে জাপানি ওডিএ (অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স) ঋণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুতই এ বাজেট সহায়তা ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের জন্য উন্নয়ন নীতি কর্মসূচি বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এ ঋণের বার্ষিক সুদ হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

ইচিগুচি তমোহিদে বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ঋণ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই তহবিল সরকারের বাজেটের চাহিদা মেটাতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এবং সংস্কার পরিকল্পনাকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে।