অর্থনীতি

ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, রিজার্ভের পতন কিছুটা হলেও থামানো গেছে।

আইএমএফের কাছ থেকে এক টাকাও আসেনি। কিন্তু রেমিট্যান্স ২৪ শতাংশ বেড়েছে, এ মাসে ৩০ শতাংশ ছাড়াবে। জুন শেষে রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ছাড়াবে।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সেমিনার অন বাংলাদেশ ম্যাক্রোইকোনোমিক ল্যান্ডস্কেপ: চ্যালেঞ্জেস ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অ্যান্ড দ্য পাথ এহেড’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে না। ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দরের ব্যবধান নেই বললেই চলে। ডলার অর্থপাচার ঠেকানো গেছে।

রেমিট্যান্সের দর ম্যানিপুলেশন হচ্ছে না দাবি করে গভর্নর বলেন, দুবাইয়ে একটা গ্রুপ ডলার ম্যানিপুলেশন করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা এতে প্রভাবিত হইনি।

তিনি আরও বলেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার কারণে প্রাইভেট সেক্টর ক্রেডিট গ্রোথ কমেছে। পলিসি রেট বাড়ার কারণেই যে কমেছে সেটা নয়। সরকারের ঋণ ১২ শতাংশ ছিল সেটা কমে ৯ শতাংশ হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে ঋণ দিতে হবে। শুয়ে শুয়ে প্রফিট করার দিন শেষ হয়ে আসছে। ঋণ দিয়ে প্রফিট করতে হবে।

এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বয়ান পরিবর্তনের কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, আমাদের সমগোষ্ঠী কোনো দেশ এখন আর এলডিসিতে নাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালেই এলডিসি যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের শিল্প খাতের চাপে এলডিসি উত্তরণের সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালে নিয়ে আসি। গ্রাজুয়েশনের অনেক ভালো দিক আছে। দরিদ্র হয়ে থাকার মধ্যে কোনো সম্মান নেই। আমরা কেন মধ্য আয়ের দেশ হতে পারব না! আমরা তো মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে আছি। কেন আমরা ট্যারিফের সুবিধার জন্য নিম্নআয়ের দেশ হয়ে থাকব।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হলো, ব্যাংক ও রাজস্ব খাত। তবে এনবিআরের কার্যকর সংস্কার না হলে ব্যাংক খাত এগোবে না।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন ইআরএফ এর সহ-সাধারণ সম্পাদক মানিক মুনতাসির।

অর্থনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, ব্যাংক ডাকাতরা দেশের জনগণের সম্পদ লুট করেছে। এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের অর্থনীতি নিয়ে রোববার সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, এস আলম গ্রুপের সব সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধেও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত ১২টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ৬ মাসে দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থসচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান।

বৈঠকে জানানো হয়, পতিত সরকারের ফেলে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কমেছে মূল্যস্ফীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য) এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তবে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ বিদায়ি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

ওই বছরের আংশিক হিসাবে যা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সব বাহিনীর সমন্বয়ে রোববার ৬টা থেকেই ‘সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার’ কাজ শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং অপূর্ব জাহাঙ্গীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শফিকুল আলম বলেন, যারা ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশ দিয়েছেন। ‘এ ব্যাপারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তারা (ব্যাংক ডাকাতরা) যেন আইনের আওতার বাইরে না থাকে। যে করেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছেন, আসলে তারা দেশের সাধারণ মানুষের টাকা নিয়েছেন। তাই যেভাবে হোক তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।’

সভায় অধ্যাপক ইউনূস অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, শুরুতে অর্থনীতি খুব বাজে অবস্থায় ছিল। সেই জায়গা থেকে এখন ভালো জায়গায় এসেছে। তবে আরও ভালো জায়গায় নিতে হবে। এটা সরকারের চ্যালেঞ্জ। শফিকুল আলম বলেন, বেক্সিমকোর সঙ্গে কিছু জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতার সুষ্ঠু সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, প্রবাসী আয়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অভিবাসন বাড়ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এখনই এটা নিয়ে উৎসব করার কিছু নেই। এ খাতে এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অধ্যাপক ইউনূস অভিবাসন বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে যেসব দেশ বর্তমানে বাংলাদেশি অভিবাসনগামীদের ভিসা বন্ধ রেখেছে, তা কীভাবে দ্রুত চালু করা যায়, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ব্যাংকের চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নগদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট করেছেন, এমন ১২ জন অপরাধী চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা কীভাবে টাকা নিয়েছেন সেগুলো বের করতে আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিচ্ছি। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সবগুলো সংস্থা এ নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ওই বৈঠকে আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা দিতে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে।

সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিনিধিদলও শিগগিরই আসছে। এর বাইরে আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে কথা বলছি। এক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- গত ১৫ বছরে দেশ থেকে যে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২৮ লাখ কোটি টাকা) অর্থ পাচার হয়েছে, তা দেশে ফিরিয়ে আনা। এই টাকা কারা নিয়েছেন, কোথায় গেছে- এগুলো চিহ্নিত করতে পারলে কাজ অনেক এগিয়ে যাবে। প্রথমে যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সেখানে এই টাকা-সম্পদ জব্দ করতে হবে। পরে তা দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে।

সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন আমরা একটা স্থিতিশীল জায়গায় আসছি। বর্তমান যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রিজার্ভের অবস্থা সামনে আরও ভালো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম আরও বলেন, দ্রুত আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে। সব বাহিনীর সমন্বয়ে ‘সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার’ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কাজ শুরু করেছে। কমান্ড সেন্টার সমন্বয় করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেন্টারটির সঙ্গে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড, আর্মড ফোর্স ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যুক্ত থাকবেন।

রাজধানীসহ দেশের কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে কমান্ড সেন্টার থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ৫ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের জুলাইয়ে যা ছিল ১১ শতাংশ। আগামী জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসবে। মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি বছরে নয় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হবে।

বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া পরিশোধে ভর্তুকি ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে চলতি বছরে প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কূপ খনন করে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

২০২৮ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫শ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিটিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অটোনমি (স্বায়ত্তশাসন) নিশ্চিত করতে বলেছেন।

প্রেস সচিব বলেন, বর্তমানে টাকা ছাপানো বন্ধ। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ আছে। নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় অব্যাহত আছে। দেশের ১ কোটি পরিবার ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছে। ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। যে পরিমাণ মজুত আছে আর আমদানি হচ্ছে তাতে পণ্যের দাম আরও কমে আসবে।

তিনি বলেন, দেশে কোরিয়ান ইপিজেড নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। জমি জটিলতার কারণে তারা বিনিয়োগ করছিল না। পতিত স্বৈরাচাররা এই সমস্যা তৈরি করেছিল। এখন এই ভূমি সমস্যার সমাধানে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। কোরিয়ান ইপিজেডকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিনিয়োগে আর কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, এই ইপিজেডে কোরিয়ার অনেক বড় কোম্পানি আছে। আশা করছি, সমস্যা সমাধানের ফলে সেখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।

শফিকুল আলম জানান, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। পুলিশের তথ্য বলছে, গত ৫ বছরের মধ্যে খুন সবচেয়ে কম।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের পালিয়ে যেতে যারা সহায়তা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? জবাবে প্রেস সচিব বলেন, যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের বেশির ভাগই ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে। ওই সময়ে দেশে কোনো সরকার ছিল না। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। পুলিশকে কাজে ফেরাতে অনেক সময় লেগেছে। এরপরও এ অপরাধে কারা জড়িত ছিল, তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

অর্থনীতি

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবার ২০ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করেছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ২ হাজার ২০ কোটি ডলারে ওঠে। গত সপ্তাহে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল মাত্র ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় কমেছিল। বৈদেশিক অনুদান আসার প্রবণতাও বেড়েছে। ডলারের প্রবাহ বাড়ায় আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে।

ব্যাংকগুলোয় ডলারের প্রবাহ বাড়ায় এখন ব্যাংক নিজেরাই আমদানির দেনা ও বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে। পাশাপাশি চলমান ঋণের কিস্তির অর্থও পরিশোধ করছে। ব্যাংকে ডলার থাকার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে এখন কোনো ডলার বিক্রি করছে না। উলটো ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে বকেয়া দায় পরিশোধ করছে।

এর আগে জানুয়ারির শুরুর দিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১৬৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।

অর্থনীতি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দু’টি বড় কোম্পানি আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ এবং মাসদার বাংলাদেশের বন্দর উন্নয়ন, বন্দর পরিচালনা ও লজিস্টিকস সহায়তা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের (এডিপিজি) সিইও আহমেদ ইব্রাহিম আল মুতাওয়া এবং মাসদারের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রধান ফাতিমা আলমাধলুম আলসুওয়াইদি সাক্ষাৎ করে এসব বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা এই বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত।’

এডিপিজি ও মাসদারের নির্বাহীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের টিম নিয়ে আসুন এবং যতগুলো কারখানা স্থাপন করতে চান, করুন।’

আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ হলো চতুর্থ বৃহৎ বন্দর পরিচালনা ও লজিস্টিকস কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ডেনমার্কের এপি মুল্যার মায়ের্স্ক এবং সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের পর তারা বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় আগ্রহ প্রকাশ করলো।

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত তিন বে টার্মিনালের মধ্যে একটি টার্মিনালকে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ উদ্যোগে অর্থায়ন ও পরিচালনা এবং বহুমুখী টার্মিনাল ও কন্টেইনার রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির সিইও আল মুতাওয়া বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উষ্ণ মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠান মাসদার বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমিতে ২৫০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

মাসদারের আঞ্চলিক বিনিয়োগ প্রধান ফাতিমা আলমাধলুম আলসুওয়াইদি বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন ধারণা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বেশি সহায়ক।’

সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আলহুমৌদি, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

দুবাই শাসকের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে ফেব্রুয়ারিতে আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন আবদুল্লাহ আলী আলহুমৌদি।

অর্থনীতি

ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে এই ডিজেল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জনা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ২০২৫ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়।

তারেই আলোকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে চুক্তির আওতায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেডের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল (০.০০৫% ‘সালফার’) ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

এই ডিজেল আমদানির ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ এক হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল ডিজেলের মূল্য ধরা হয়েছে ৫.৫০ ডলার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৬ থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। পাইপলাইন নির্মাণের আগে এনআরএল থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে।

অর্থনীতি

চলতি জানুয়ারির ২৫ দিনে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) এলো ১৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২০ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা)।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানুয়ারি মাসের প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে ছয় কোট ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ ডলার। আগের মাসে ডিসেম্বর প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৫ ডলার। আর আগের বছর জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন এসেছিল ৭ কোটি চার লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৩ ডলার। এ হিসাবে চলতি জানুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা কমেছে।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২৪ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ে এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। বেসরকারি বড় এ ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার ডলার।

অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে আন্না বিয়ার্দে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বব্যাংকের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ তথ্য জানান।

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘আমি আমাদের সমর্থন প্রকাশ করতে চাই। আপনারা যেকোনো সহায়তার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন’।

তিনি আরও উল্লেখ করেন ব্যাংকটি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন প্রসারিত করতে আগ্রহী।

আলোচনায় তারা জুলাই বিপ্লব, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

কোনো নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান জনস্বার্থে এ রিট করেন।

নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা করার আবেদন জানানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, সরাষ্ট্র সচিব, পার্লামেন্ট সচিব ও রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমা করার ক্ষমতা অবাধ, যার কোনো নীতিমালা নেই। কে, কিসের ভিত্তিতে ক্ষমা পাচ্ছে তার কোনো নীতিমালা নেই। যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইতোমধ্যেই এই ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি ক্ষমা পেয়েছে। যার মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই জোসেফ, আসলাম ফকির অন্যতম।

অর্থনীতি

অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা না পেলে সংস্কার পক্ষের মানুষ ধৈর্যহারা হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এ ছাড়া সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকে সরে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রথম অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা না পেলে সংস্কার পক্ষের মানুষ ধৈর্য হারা হবে। এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি; তাহলে আমরা যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চায় তারা ধৈর্য হারা হয়ে যাবে। সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকেও সরে যেতে পারে।

তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার যতটা মনোযোগ পাচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অর্থনৈতিক ম্যানিফেস্টো নেই। অনেকেই বলছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সেক্টর বেশি মনোযোগ পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো মনোযোগ নেই। অবিবেচকভাবে পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এ সময় অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক আশিক চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতি

উন্নয়নকে সবসময় পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত দুইদিনের বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।

শুক্রবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাপা ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)। রেহমান সোবহান বলেন, দেশের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মানলেই পরিবেশ সুরক্ষা করা সম্ভব। অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ।

পরিবেশ সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করে বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নিজেই একজন পরিবেশবিদ। তিনি ইতোমধ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয়নি; বরং ওই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে এমন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

একই অনুষ্ঠানের পৃথক অধিবেশনে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদী আইনে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। তিস্তা নিয়ে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে যাবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি নুর মোহাম্মদ তালুকদার। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বেনের প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম। স্ব-অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিবেশ রক্ষামূলক কাজের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা কঠিন হচ্ছে উল্লে­খ করে তিনি বলেন, এ কাজে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দীর্ঘ পথচলায় বাপার অনেক অর্জন থাকলেও সারা দেশে কার্যকর পরিবেশ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। দেশে স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা নিয়ে ভুক্তভোগীরা আন্দোলন করছেন, যাদের অনেকের কাছে বাপা পৌঁছাতে পারেনি। প্রথম অধিবেশনে ‘রাজনীতিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাপা ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম’, দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘নদনদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ এবং তৃতীয় অধিবেশনে ‘বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টিদূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রথম অধিবেশনে বক্তৃতায় অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো পরিবেশের সমস্যাগুলো আমলে নিতে শুরু করেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পরিবেশ আন্দোলনের কারণেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পরিবেশের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

‘নদনদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদী আইনে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এজন্য সম্মতিপত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি এলেই বাংলাদেশ ওই আইনে স্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে ভারত ও চীন- এ দুই দেশের সঙ্গেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে বাংলাদেশ জটিল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তবে তিস্তা নিয়ে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে যাবে বলে তিনি উল্লে­খ করেন।

এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল লতিফ, বেন-এর বৈশ্বিক সমন্বয়কারী খালেকুজ্জামান, বাপার সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও খুশী কবির, বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির প্রমুখ।

শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ’, ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ‘বন, পাহাড়, উপকূল ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক তিনটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হবে।