অর্থনীতি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে রুপিতে লেনদেন শুরু হয়েছে। উদ্বোধনের দিনে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে রুপিতে দুটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি ও আমদানির এলসি খুলেছে। তামিম এগ্রো লিমিটেড ১৬ মিলিয়ন রুপির বেশি রপ্তানির এলসি এবং নিতা কোম্পানি লিমিটেড প্রায় ১২ মিলিয়ন রুপির আমদানির এলসি খুলেছে। দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে রুপিতে লেনদেনের উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এসব তথ্য জানান।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার ভারত। বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে আর ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের আলোচনা চলছিল। ব্যবসায়ীরাও অনেক দিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এবার তা বাস্তব রূপ পেল। এখন ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও বাণিজ্য হবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা চালু হলো। এতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলো। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে। বাণিজ্যে দুদেশ আরও এগিয়ে যাবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দারুণ সফলতা রয়েছে। আমরা চাই- এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উভয় দেশ সহজভাবে বাণিজ্য করুক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলি রেজা ইফতেখার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বিডার চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যে অঙ্কের পণ্য ভারতে রপ্তানি করবে, একই অঙ্কের পণ্য রুপিতে আমদানি করা যাবে। তিনি বলেন, শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও আইসিআইসিআই ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য লেনদেন নিষ্পত্তিতে অংশ নিচ্ছে।

মেজবাউল হক জানান, ‘টাকা-রুপি কার্ড’ চালু প্রক্রিয়াধীন। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এসব কাদের আগ্রহে চালু হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের ইচ্ছায়। ভারত প্রথম প্রস্তাব দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশ এভাবে লেনদেন করছে। সম্ভবত বাংলাদেশ ১৯তম।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশ ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের প্রক্রিয়া চালু করতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনে ভারতের ব্যাংকগুলোতে রুপিতে ‘নস্ট্র অ্যাকাউন্ট’ খুলেছে সোনালী ও ইবিএল। নস্ট্র হিসাব হলো- বিদেশের কোনো ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করতে খোলা হিসাব।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরওয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৮ থেকে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় দেশের বাজারেও কমালেন আমদানিকারক ও পরিশোধন মিল মালিকেরা। বুধবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবলস অয়েল রিফাইনার্স এন্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার অব অ্যাসোসিয়েশন নতুন এই দাম ঘোষণা করেছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (খোলা) ৮ টাকা এবং বোতলজাতে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। এ ছাড়া পাম তেল (খোলা) ৫ টাকা এবং বোতলজাতে ১২ টাকা দাম কমানো হয়েছে।

আগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা, এখন ৮ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১৫৯ টাকা।  বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল আগে ১৮৯ টাকা, এখন ১০ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১৭৯ টাকা। আর ৫ লিটার বোতলের দাম ছিল ৯১৬ টাকা, তা কমিয়ে ৮৭৩ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম আগে ছিল ১৩৩ টাকা। এখন লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১২৮ টাকা।  একই সঙ্গে পাম তেলের এক লিটার বোতলের দাম ছিল ১৬০ টাকা। এখন ১২ টাকা কমিয়ে লিটারপ্রতি ১৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থনীতি

দেশে-বিদেশে সৃষ্ট নেতিবাচক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি চার ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হওয়া, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং আর্থিক খাতে অস্থিরতা।

আর দেড় বছর ধরে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগুলোর পর এখন অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে এসেছে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের চাপ। এ দুইটিতে এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতি তিন মাস পর এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চাপে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো অর্থনীতিতে পড়েনি। তবে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নির্ভরশীল। এ দুটি অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসব দেশে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমদানির ৭২ শতাংশই আসছে ভারত ও চীন থেকে। রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি আসছে এখন আমেরিকা থেকে। বর্তমানে যে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভূরাজনৈতিকভাবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এ দুটি দেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক। এছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বেশ কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তাদের সমালোচনা মানতে রাজি নয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চীনের দিকে এক পা বাড়িয়ে রেখেছে। যদিও মুখে বলছে সব দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে বাংলাদেশ মনোযোগী।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি নীতি এমনভাবে বিন্যস্ত করেছে যে গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কিছু বিধিনিষেধ এবং সাম্প্রতিক সময়ের ভিসানীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ রেমিট্যান্স আকারে দেশে চলে আসছে। যে কারণে হঠাৎ করে ওই দেশ থেকে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে।
সশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোতে হবে। এখনো ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েনি। যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগোচ্ছে। এর প্রভাব এখনো আছে। এই যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত করে যাচ্ছে। আর্থিক খাতে অস্থিরতা ছিল। এখন তা কাটতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোয় তারল্যের জোগান বাড়ছে। আগামী দিনে এ পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

তারল্যের জোগান বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট থেকে বাংলাদেশে উদ্ভূত সমস্যার মধ্যে এখনো মূল্যম্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। এ দুটি খাতে এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে হবে এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জোগান বাড়াতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধানে আরও জোর দিতে বলা হয়েছে। কারণ, একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানির বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি গত অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৭ শতাংশ কমেছে।

একই সঙ্গে রেমিট্যান্স বাড়াতে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও প্রবাসীদের অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার উদ্যোগকে আরও জোরালো করতে হবে। ইতোমধ্যে এ খাতে হুন্ডির বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বেশ সুফল পাওয়া গেছে। এই ধারাবাহিকতা চলমান রাখলে হুন্ডির প্রবণতা আরও কমবে। তখন প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে আগামী দিনে এ দুই খাতে চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে এলেও বাংলাদেশে এ হার একটি ঊর্ধ্বমুখী পথ অনুসরণ করেছে। বিশেষ করে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত খাত থেকেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিনিময় হারের ওপর চাপ কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। আমদানি ব্যয় কমার কারণে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি কিছুটা কমেছে। বিনিময় হার ধরে রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

অর্থনীতি

দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখতে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যাতে দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে। দেশে দীর্ঘসময় ধরে গণতন্ত্র থাকায় আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়ন ও উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছি।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তাদের জন্য ফিতা কেটে নতুন অফিস উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত না থাকলে এ অর্জন সম্ভব হতো না।’ গণতন্ত্রের ধারা যে দীর্ঘ সংগ্রামের ফল, তা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একদিনে আসেনি।’

পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ, সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন কার্যালয় সম্পর্কে সংসদনেতা বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সংসদ একটি স্মার্ট অফিস পেয়েছে। এই অফিস কাজের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং সংসদ সচিবালয়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সংসদ লাইব্রেরিকে অমূল্য আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হওয়ার জন্য অতীতের সংসদ অধিবেশনের কার্যবিবরণী অধ্যয়নে এখানে কিছু সময় ব্যয় করার জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। এতে কার্যবিবরণীর উদ্ধৃত করে সংসদে বক্তব্য দেওয়া যাবে।’

দেশের প্রকৃত ইতিহাস সবাইকে জানাতে সংসদে একটি আর্কাইভ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই ইসাডোর কানের মূল নকশা (সংসদের নকশা) রক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। আমরা ৪ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংসদের সম্পূর্ণ নকশা সংগ্রহ করেছি।’

অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, অক্টোবরের মধ্যে সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম ও সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হবে।

অর্থনীতি

ঈদুল-আজহাকে সামনে রেখে গত জুন মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। গত মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এ পরিমাণ গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রবাহ। এর আগে, এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। এ হিসেবে রেমিটেন্স বেড়েছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

রেমিট্যান্সে চাঙ্গাভাবের মধ্যে ঈদের আগে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের ৫২ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবার ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে ক্রমান্বয়ে ডলারের দর বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি রপ্তানি বিল কেনার দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে আজ থেকে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা কার্যকর করেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল কেনার গড় দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা সরকারি ৫টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৩৯ কোটি ৯২ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকে এসেছে ৫২ কোটি ২২ লাখ ডলার। বেসরকারি ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৬ ব্যাংকে এসেছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

অর্থনীতি

ঈদ উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। ফলে তারা ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। অনেকে আগের সঞ্চয় ভেঙেও টাকা তুলছেন। গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে গ্রাহকদের বাড়তি টাকার জোগান দিতে না পেরে অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা নিয়েছে।

রোববার ও সোমবার-এ দুই দিনে বিভিন্ন ব্যাংক অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধা নিয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কলমানি থেকে ধার নিয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা, স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে ব্যাংকগুলো শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় সার্বিকভাবে তারল্যের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এই সহায়তা নিতে হয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোয় জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে তারল্য কমেছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায়। এপ্রিলে তারল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে সংকট এখনো কাটেনি। ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করা হয় কুরবানির ঈদের সময়। এ কারণে এক মাস আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছিল যে, ঈদের সময় কোনো ব্যাংকে যাতে নগদ টাকার সংকট না হয়। প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও সহায়তা নিতে বলা হয়েছিল। এর আলোকে ব্যাংকগুলোও নগদ টাকার জোগান আগে থেকেই নিশ্চিত করে রাখে। এক সপ্তাহে ব্যাংকগুলো শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সুবিধা নিয়েছে ২৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ জুন ২ হাজার ৭০০ কোটি, ২২ জুন ৩ হাজার ৫০০ কোটি, ২১ জুন ৭ হাজার ৪০০ কোটি, ২০ জুন ৬ হাজার ৫০০ কোটি, ১৯ জুন ৪ হাজার ৬০০ কোটি এবং ১৮ জুন ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিয়েছে।

ঈদের আগে গত রোববার ও সোমবার ছিল ঈদের আগে শেষ ব্যাংকিং লেনদেন। ওই দুই দিন গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি টাকা তুলেছেন। এ কারণে ওই সময়ে ব্যাংকগুলোও নগদ টাকার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছে। রোববার কলমানি মার্কেট (এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের এক দিনের জন্য ধার) নিয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং একই দিনে অন্য ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি বা ৬ থেকে ১৪ দিনের জন্য ধার নিয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। সোমবার কলমানি থেকে ধার নিয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সীমিত পরিমাণে ২৪ থেকে ৯২ দিন মেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি ধার নিয়েছে কিছু ব্যাংক। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া বিশেষ তারল্য সুবিধার আওতায় নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

এসব ব্যাংক ৩৪ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এবার ঈদের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির দায় মেটানোর জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে ব্যাংক থেকে ডলার কেনা বাবদ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যায়নি। উলটো রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কিনেছে। এতে একদিকে কিছু টাকা ব্যাংকগুলোয় এসেছে, অন্যদিকে ডলার নিয়ে রিজার্ভ কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ ছিল। ভোক্তাদের সার্বিকভাবে কেনাকাটার পরিমাণও কম। যে কারণে আগের চেয়ে নগদ টাকার চাহিদাও ছিল কম।

অন্যান্য বছর ঈদের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও এবার তেমন একটা বাড়েনি। গত রোজার মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৮ কোটি ডলার। এবার কুরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে ২৬ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি ডলারের বেশি। রেমিট্যান্স কম আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বেশি ডলার কিনতে পারেনি। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহও বাড়েনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোয় আমানত প্রবাহ নিম্নমুখী ছিল। এপ্রিলে এসে কিছুটা বেড়েছে। জুনে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয় বলে আমানত প্রবাহ কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ডলার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে। এ খাতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এছাড়া গড়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়া এবং আমানত প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার কারণে তারল্য প্রবাহ কমেছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেবে সাড়ে ২২ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে জাপান। স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এজন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান এবং জাইকার বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিদো। ইআরডি ও জাইকা থেকে পাঠানো পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা (পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) শক্তিশালী করতে ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোনের অংশ হিসেবে জাপানি ওডিএ (অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স) ঋণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুতই এ বাজেট সহায়তা ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের জন্য উন্নয়ন নীতি কর্মসূচি বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এ ঋণের বার্ষিক সুদ হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

ইচিগুচি তমোহিদে বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ঋণ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই তহবিল সরকারের বাজেটের চাহিদা মেটাতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এবং সংস্কার পরিকল্পনাকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে।

অর্থনীতি

জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হয়েছে। আলোচিত অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিল। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। পরে সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে বাজেট পাস হয়।

গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন।

এবারের বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে নতুন অর্থবছরে মোট জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং সুসংহত অভ্যন্তরীণ চাহিদার কল্যাণের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। আর মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্য রাখা হয়েছে নতুন বাজেটে।

অর্থনীতি

রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে খাদ্যশস্য আমদানি কমাচ্ছে সরকার। এজন্য আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও গম কম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কমপক্ষে ৩১ কোটি মার্কিন ডলার (৩২৮০ কোটি টাকা) সরকারের সাশ্রয় হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।

তবে চাহিদা পূরণে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বেশি পরিমাণে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। এজন্য কৃষককে চালের উপযুক্ত মূল্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পহেলা জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমন ও বোরো ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এরপরও খাদ্যশস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে তা আগামী সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো যাবে। এছাড়া অন্যান্য বছর কষ্ট করতে হলেও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ বছর কষ্ট করতে হচ্ছে না। কারণ আমাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পরিস্থিতি ভালো।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আগামী অর্থবছরে খাদ্যশস্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে খাদ্য আমদানি খাতে চলতি অর্থবছরে ৮ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ কমিয়ে আগামী বাজেটে ৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বরাদ্দ কমছে ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা বা ৩০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি (প্রতি ডলার মূল্য ১০৮.৭০ টাকা)।

প্রসঙ্গত খাদ্যশস্য আমদানি খাতে টাকায় বরাদ্দ রাখা হলেও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে মূল্য পরিশোধ করা হয় মার্কিন ডলারে। সেটি সরকার টু সরকার বা বেসিরকারি পর্যায়ে আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য শোধ দিতে হয়।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে ডলারের মূল্য ৮০ টাকা ধরে খাদ্যশস্য আমদানির ব্যয় নিরূপণ করা হয়েছিল। ওই হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছরের জুন থেকে মার্কিন ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে টাকার মূল্যের অবনতি ঘটে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দেয়। দেশ যেন এই সংকটের মুখে না পড়ে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে বিদ্যমান সংকট ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে খাদ্যশস্য আমদানি ব্যয় ২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮ হাজার ২৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি পায় ৫ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা বা ৫২ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার।

সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরে ডলার সাশ্রয় করতে চলতি অর্থবছরের চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে নামিয়ে ৪ লাখ টন করেছে সরকার। একইভাবে ৭ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ লাখ টন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে চলতি অর্থবছরে চাল ও গম মিলে মোট ১৬ লাখ টন আমদানি থেকে কমিয়ে আগামী অর্থবছর ১১ লাখ টন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে।

অপরদিকে আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারে নিতে হবে। ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে খাদ্যশস্য আমদানিতে ডলার ব্যবহার কম করা হবে। যে কারণে চাল ও গম আমদানিতে বরাদ্দও কমানো হয়েছে। ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ লাখ ৫৫ হাজার টন চাল এবং ৩৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে।

এদিকে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে চাল কেনা হবে ১৯ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন। আর গম কিনবে এক লাখ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ পর্যায় থেকে চাল ও গম কেনার জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার মর্তে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, খাদ্যশস্য সংগ্রহে এক ধরনের ব্যালেন্স করা হয়। যেমন: চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ পর্যায় থেকে কম কেনাকাটা করা হয়েছে। কিন্তু খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ ছিল বেশি। আবার আগামী অর্থবছরে আমদানি কমানো হলেও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সংগ্রহ বেশি পরিমাণ করা হবে। তবে কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পান, এজন্য প্রতি কেজি চালের মূল্য ৪৪ টাকা ধরা হয়। তিনি আরও বলেন, কৃষক মূল্য কম পেলে সরকারকে ধান ও চাল দিতে আগ্রহবোধ করবে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৪ জুন পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টন এবং গম ৩৪ লাখ ৪০ হাজার টন। একই সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যায় থেকে ৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৮৬ হাজার ৩৮৫ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারণত সরকার চাল ও গম সংগ্রহ করে সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তা বিতরণ করে। সেখানে দেখা গেছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল ও গম বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। চলতি অর্থবছরে চাল ও গম মিলে ২ হাজার ৩ মেট্রিক টন বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৯২৩ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থনীতি

এক মাস পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করল। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২ কোটি ডলারে।

এর আগে ২২ মে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৬ কোটি ডলার। এর পরের দিন রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলারে নেমে আসে। এরপর থেকে প্রায় এক মাস রিজার্ভ ছিল ২৯ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ডলারের ঘরে। মে ও জুনের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১১৮ কোটি ডলারের মতো পরিশোধ করতে হবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। তখন রিজার্ভ আবার কমে যেতে পারে।

সূত্র জানায়, রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে বলেছে নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমদানির দায়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে। এজন্য রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আমদানির ডলার বিক্রি কমিয়ে দেওয়ায় এলসি খোলার প্রবণতা যেমন কমেছে, তেমনই ব্যাহত হচ্ছে আগের এলসির দেনা পরিশোধ। ফলে ব্যাংকগুলো এখন এলসির অর্থ পরিশোধের মেয়াদ বাড়াচ্ছে।

বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভে স্বস্তি ফেরাতে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় আসন্ন কুরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। ফলে রিজার্ভে কিছু ডলার যোগ হচ্ছে। এতে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, ঈদের পর বৈদেশিক ঋণের কিছু অর্থ ছাড় হবে। ফলে রিজার্ভ বাড়তে পারে।