অর্থনীতি

আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা এবং প্রবাসী আয়ে উৎসাহিত করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ফলে আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

এ সময় রিজার্ভ কমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড-পরবর্তীকালীন চাহিদা বাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়। এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরে তা কমতে শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরও বেড়ে যায়। সবশেষ ৩১ মের হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ হয়েছে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। যা চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষি খাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে সরকার। তিনি বলেন, পতিত জমি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।

অর্থনীতি

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। নগদ আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা। খেলাপিরা দিয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশ। আর সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। নগদ আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩০০ কোটি টাকা। খেলাপিরা দিয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪%।

তবে উলটো চিত্র ছোট এবং মাঝারি খেলাপির ক্ষেত্রে। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি থেকে ব্যাংকটির পাওনা ৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এখানেও আদায়ের লক্ষ্য ৩৩৫ কোটি টাকা। আদায় ৪৮১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যের ১৪৪%। অর্থাৎ ছোটরা টাকা দিলেও বড় ঋণখেলাপিরা টাকা দিচ্ছেন না।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের অন্যান্য খেলাপি থেকে ব্যাংকটির পাওনা ৭ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্য ৭০০ কোটি টাকা। আদায় ৪৩০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যের ৬১%। অর্থাৎ ছোটরা টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সে তুলনায় শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রবণতা খুবই কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ওপর করা ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক একটি প্রতিবেদন।বাকি দুই ব্যাংকের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের অবলোপন করা ঋণের অংক ১৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা বা ১০ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকগুলো লক্ষ্যের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। এই চার ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে আদায় করেছে মাত্র ৩১৭ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে চার ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের তুলনায় এই আদায়ের অংক ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। একইভাবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে চার ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকগুলো আদায় করতে পেরেছিল ৫৯১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। সেই হিসাবে ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর কম আদায় হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

জানা গেছে, সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তদারকি সত্ত্বেও রাষ্ট্র্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২২ সালের সমঝোতা স্মারকের আওতায় ব্যাংকগুলোকে যেসব লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো অর্জন তো দূরের কথা, ধারেকাছেও যেতে পারেনি ব্যাংক চারটি। উলটো খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে মাত্র ৫টি শাখায়। বড় গ্রাহকের সীমাতিরিক্ত ঋণ কমিয়ে আনার শর্তও পরিপালিত হয়নি। শীর্ষ খেলাপিসহ অন্য খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ আদায়ও সন্তোষজনক নয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের অর্ধেকের বেশি উচ্চ সুদবাহী হওয়ায় পরিচালন ব্যয়ও কমছে না।

সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের শর্ত পরিপালন, খেলাপি ঋণ এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনাসহ প্রায় ৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে ২০০৭ সাল থেকে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালেও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমওইউ সই হয়। এমওইউতে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, ঋণ প্রবৃদ্ধি যথাযথ রাখা, খেলাপি ঋণ ন্যূনতম সীমায় নামিয়ে আনা, শীর্ষ ২০ খেলাপিসহ অন্যান্য খেলাপি থেকে নগদ আদায় জোরদার, লোকসানি শাখা ও পরিচালন ব্যয় কমানো, বৃহদাংক ঋণের এক্সপোজার কমিয়ে আনা এবং ঋণ প্রদানে শীর্ষ শাখা ব্যতীত অন্যান্য শাখার মাধ্যমে ঋণ বিতরণের শর্তারোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়নি। এ সময় ৪টি ব্যাংকে প্রকৃত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৩ কোটি টাকা, যা উদ্বেগজনক। অন্যদিকে, আলোচ্য সময়ে রূপালী ব্যাংক ছাড়া অন্য ৩টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলকৃত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিআরএআর) সংরক্ষণ করতে পারেনি। বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বছরের পর বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিতে থাকা পুরো খাতের জন্য খারাপ বার্তা। কারণ কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলে তার আর্থিক ভিত্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ফলে ওই ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থাও কমে যায়। এছাড়া অন্য দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে তাদের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। তাই ব্যাংকগুলোর মূলধন ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, সমঝোতা স্মারকের ২০২২ সালের জুনভিত্তিক পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিসেম্বরের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ন্যূনতম ১৩ শতাংশে এবং অন্য ৩টি ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ ন্যূনতম ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা প্রদান করা হলেও কোনো ব্যাংক সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। সেই সঙ্গে আলোচ্য সময় শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৫ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, ২২ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ।

২০২৩ সালের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ন্যূনতম মূলধন ১০ শতাংশে উন্নীত করা, ঋণের প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত সীমায় রাখতে পরিকল্পিতভাবে ঋণ প্রদান ও আদায়, খেলাপি ঋণের হার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনা, বড় গ্রাহকের অনুকূলে নতুন করে ঋণ প্রদান বন্ধ রাখাসহ তা সীমার মধ্যে নামানো, খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায় সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা, উচ্চ সুদবাহী আমানতের হার ৪০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা এবং তাদের কোর ব্যাংকিং সল্যুয়েশন (সিবিএস) শতভাগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতি

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিদেশি প্রভুদের সাহায্যে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। আজকে বিএনপি-জামায়াত চক্র নিজের নাক কেটে গণমানুষের যাত্রা ভঙ্গ করতে চায়।

শুক্রবার বিকালে সাভারের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমদের সভাপতিত্বে আয়োজিত জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চেৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রমুখ।

অর্থনীতি

চলতি মাসের শুরুর দিকে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপরই সরকার ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।

তাতে বাজারে কিছুটা সুখবর আসতে শুরু করে। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কমে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ছিল ৮০ টাকা। যা এ সপ্তাহেও অপরিবর্তীত রয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে বেশ নেমে এলেও খুচরায় এখনো সেভাবে তার প্রভাব পড়েনি। আর খুচরা পর্যায়ে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়।
শুক্রবার (১৬ জুন) খিলগাঁও, গোড়ান, বনশ্রী এবং মালিবাগ এলাকায় বিভিন্ন মুদিদোকান ঘুরে দেখা গেছে দোকানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। যা দোকানিরা পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনছেন ৪৫ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকায়। যা পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকায়, এমনটাই জানিয়েছেন বেশির ভাগ মুদিদোকানি।

মেরাদিয়া হাটের পেঁয়াজ বিক্রেতা শিকদার মিয়া  বলেন, পাইকারি বাজার থেকে দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। আর খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারের ঢোকার পরও দাম কমছে না। যদিও এ পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে থেকে আমরা কিনতাম ৯০-১০০ টাকায়। এখন বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় দেশি পেঁয়াজের দাম কমে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়। আমি মনেকরি দেশি পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার কম হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বর্তমানে আলু বিক্রি করছি প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। এই দাম শুনলে অনেক ক্রেতা গরম হয়ে যান। কিন্তু আমরা কী করব? পাইকারি বাজার থেকে আজ (১৬ জুন) আলু কিনেছি প্রতি কেজি ৩৫ টাকায়। তো সেখানে ৫ টাকা মিনিমাম লাভ তো আমাদের করতে হয়।

গোড়ান এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মাসুদ পারভেজ বলেন, আমার দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫০ টাকা কেজি, আর দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকায়। তবে ভারতের পেঁয়াজ বেশিরভাগই নষ্ট পড়ছে। সামনে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। কারণ বাজারে এখন যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আছে। আর ভারতীয় রসুন বিক্রি করছি ১৫০ টাকা কেজি এবং দেশি রসুন ১৪০ টাকায়। বাজারে এখন দেশি আদা পাওয়া যাচ্ছে যার দামও অনেক বেশি। প্রতি কেজি দেশি আদা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে আমদানি হওয়ার পরেও বাজারে পেঁয়াজের দামে সন্তুষ্ট নয় ক্রেতারা। খিলগাঁও বাজারে পেয়াজ কিনতে এসেছিলেন সোলাইমান সবুজ নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। যদিও পেঁয়াজ রান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে সরকার যে পেঁয়াজ আমদানি করেছে তার বেশিরভাগই নিম্নমানের। ফলে ক্রেতারা দাম বেশি হলেও ভাল মানের দেশি পেঁয়াজ কিনছেন। যে কারণে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসার পরও দেশি পেঁয়াজের দাম কমেনি। আর বাজারে ভাল মানের আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে কোরবানির ঈদের আগেই সব ধরনের পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।

অর্থনীতি

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নতুন নোট বাজারে আসছে। আগামী ১৮ জুন থেকে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নতুন নোট বাজারে ছাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৫ জুন পর্যন্ত নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন গ্রাহকরা।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। তফসিলি ব্যাংকের ৮০টি শাখা থেকে নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহক।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১৮ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত) ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের শাখা থেকে ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট বিশেষ ব্যবস্থায় বিনিময় করা হবে। একই ব্যক্তি একাধিকবার নতুন নোট গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে নোট উত্তোলনকালে কেউ ইচ্ছা করলে কাউন্টার থেকে মূল্যমান নির্বিশেষে যেকোনো পরিমাণ ধাতব মুদ্রা গ্রহণ করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অর্থনীতি

অর্থনৈতিক সংকট ও রিজার্ভ বাড়াতে মধ্যমেয়াদে (২০২৪-২৬) ৫টি খাতে বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচি নিচ্ছে অর্থ বিভাগ। যার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণের সুদ হারে করিডোর বা বাজারভিত্তিক চালু ও একক মুদ্রা বিনিময় হার বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

এছাড়া অস্বাভাবিক ভর্তুকির অঙ্ক ও সরকারের ঋণব্যয় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে কম ঋণ নেওয়া। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্সিয়াল আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে। সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে আগামীতে রাজস্ব আয় (বর্তমান পর্যায় থেকে ১.৭ শতাংশ) বাড়ানো এবং তিন মাস অন্তর জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। শিগগিরই এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে প্রতিটি সংস্কারই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরি জানান, ডলারের মূল্য এখন অনেক বেশি। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে ধারণা করা হচ্ছে ডলারের মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ হারে করিডোর চালু করা দরকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করা যেতে পারে।

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানো প্রসঙ্গে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জানান, সঞ্চয়পত্র এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে কাজ করছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল। কারণ এখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা বা সুদ অন্য ক্ষেত্র থেকে বেশি পাওয়া যায়। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অনেকে সঞ্চয়পত্র বেছে নিচ্ছেন। সরকার এ খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমালে এর বিক্রি কমবে। এতে অনেকেই কিনতে পারবে না। এখানে খুব বেশি কড়াকড়ি না করাই ভালোই। জানা গেছে, চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। সেখানে ব্যাংক ঋণের সুদহার এবং একক মুদ্রানীতি হার বাজারভিত্তিক চালুর ঘোষণা আসতে পারে। প্রসঙ্গত আইএমএফের শর্তে একই কথা হয়েছে। সংস্থাটি বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিপরীতে ঋণের সুদহারে করিডোর চালু করতে বলেছে। পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে শর্ত দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সুদ হারে করিডোর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হবে। তবে ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কত হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতি মাসে নির্ধারণ করে ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আগামী জুলাই থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমান ব্যাংক ঋণের সুদ হারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্যাপ আরোপ করে রেখেছে।

যে কারণে আমানত ও ঋণের সুদ ৬-৯ শতাংশের মধ্যে বিরাজ করছে। অপরদিকে ডলারের মূল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করে দিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সংস্কারের আওতায় সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কাজ হবে ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা বা যৌক্তিকরণ। টাকার অবমূল্যায়ন ও বিশ্ব বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলে সরকারের অস্বাভাবিক ভর্তুকি ব্যয় বেড়েছে। এ ব্যয় সরকারের দায়কে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রস্তাবিত (২০২৩-২৪) বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ৫০ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ভর্তুকি ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগ সংস্কার কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা এবং ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে গত আগষ্টে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্য বাড়ানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় একটি ফর্মুলাভিত্তিক নতুন পদ্ধতি চালু করা হবে। যা পেট্রোলিয়াম পণ্যের ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা দূর করবে।

ভর্তুকি কমানো ছাড়াও সংস্কার কর্মসূচিতে সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কম নেওয়া, নগদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রেজারির সঙ্গে অ্যাকাউন্ট আওতা বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ব্যবহার বাড়ানো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মধ্যমেয়াদি এই সংস্কার কর্মসূচির পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং ৯ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, মধ্যমেয়াদে সরকার সতর্ক রাজস্বনীতি অনুসরণ করবে। এর মধ্যে বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। যা প্রস্তাবিত বাজেটে আছে জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। সেখানে আরও বলা হয়, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করনীতি এবং রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার করা হবে।

অর্থ বিভাগ সংস্কার কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছে, বৈশ্বিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা দরকার। এ উদ্দেশ্যে মধ্যে মেয়াদে বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

গরীব-ধনী সব শ্রেণির মানুষের জন্য বাজেট উপহার দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যান্যা বছরের ন্যায় এবারও আমরা ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবো না। সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে।

একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে জানান, প্রস্তাবিত বাজেট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের প্রয়োজন মোতাবেক করা হয়েছে, তবে সংস্থাটির যেসব পরামর্শ আমাদের জন্য ভাল কিংবা গ্রহণযোগ্য সেগুলো নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশও সেটা করে থাকে।

শুক্রবার আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষিষমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম,শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসন,জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে সহায়তা করেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, গত  ৫ বছর ধরে যেসব পদক্ষেপ বা প্রাক্কলন গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। যেটা বাদ আছে সেটা আগামীতে করা হবে।
তিনি জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় আছে তখন রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, এখন সেটা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে আমরা যেখানে এখনও পৌঁছাতে পারেনি, সেখানে পৌঁছাতে পারবো।

এক প্রশ্নের উত্তরে জানান অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ধীরে ধীরে কর্মসংস্থান তৈরি করছি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিখাতেও উল্লেখ করার মত কর্মসংস্থান হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামীলগ ক্ষমতায় এলে তখন দেশে মোট কর্মসংস্থানের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি  ১১ লাখ।এ সময়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করযোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে টিআইএন সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যেমন আমদানি-রপ্তানিকারক কিংবা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন। গরীব মানুষের জন্য কিন্তু টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট করহার না কমানোর বিষয়ে তিনি জানান, গত কয়েকবছর ধরে ক্রমান্বয়ে কর্পোরেট করহার কমানো হচ্ছে। গত তিন বছর ২.৫ শতাংশ হারে কমাতে কমাতে কর্পোরেট করহার বর্তমানে ২৭ শতাংশে চলে এসেছে। আরও কমালে রাজস্ব আহরণের জায়গা সংকোচিত হয়ে যায়। দেশের স্বার্থে সেটি করা ঠিক উচিত হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পুঁজিবাজারের বিষয়ে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কোন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ না থাকলেও বাজার গতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রিয় ব্যাংক ও সরকার সেটি নিয়মিত করে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।

অর্থনীতি

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত বা মন্দ হিসাবে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায় ওঠেছিল।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনটি রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অনুমোদন করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। এর বেশি হলেই তা ঝুঁকি।

২০২০ সালে করোনার প্রভাব মোকাবিলা ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি করা যাবে না। পরের বছর ২০২১ সালে বলা হয়, একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, কেউ তার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি হবেন না।

করোনার প্রভাব কমে আসলে গত বছরের জুনে সার্কুলার দিয়ে জানানো হয়, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কিস্তির ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করলে খেলাপিমুক্ত থাকা যাবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই হার কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে। এ সিদ্ধান্তের প্রভাবে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে ডিসেম্বর প্রান্তিকে। কিন্তু চলতি বছর থেকে তা তুলে নেওয়ায় আবারো বেড়েছে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ খেলাপি।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আলোচিত সময় ঋণ বিতরণের অংক ১১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এ খাতে খেলাপি ঋণ ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪১ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক বাজারের বিবেচনা করলে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম গ্রাহক পর্যায়ে লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা কমানো যায় বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

শনিবার (২৭ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকনোমি’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে বেশি ভর্তুকি দিয়েছে। এখানে এখন কিছু করা যেতে পারে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন দেশের বাজারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয় না।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনার পর বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি লিটার ডিজেলে ৫ টাকা এবং প্রতি লিটার অকটেনে ১৩ টাকা মুনাফা করে।

২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এই ৭ বছরে বিপিসি মোট ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। কর দেওয়ার পর মোট মুনাফা ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। আর এই সময়ে ৭ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কর দিয়েছে বিপিসি।

অর্থনীতি

এ পথে সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইনের ট্রায়াল হবে আর অক্টোবরে শুরু হবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি প্রায় ৯২ ভাগ বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন।

শুক্রবার (২৬ মে) প্রকল্পের পরিচালক আফজাল বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা-মাওয়া অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে পুরোদমে। আর অক্টোবরে যাত্রীবাহী রেল চালানোর পরিকল্পনা আছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালাতে কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

এ প্রকল্পের কাজ দু’অংশে বিভক্ত হয়ে চলমান রয়েছে। প্রথম অংশ ঢাকা-ভাঙ্গা, দ্বিতীয় অংশ ভাঙ্গা-যশোর।

ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে মোট দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার, এরমধ্যে ৭৭ কিলোমিটারে রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। এরমধ্যে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে এ বছরের ৪ এপ্রিল। আর কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ২৩ কিলোমিটারে পাথর বসানোসহ রেললাইনের কাজ বাকি আছে মাত্র সাড়ে ৬ কিলোমিটার।

এ অংশে একের পর এক নির্মাণ হচ্ছে রেললাইন। এই সাড়ে ৬ কিলোমিটার লাইন বসানোর কাজ শেষ হলেই ঢাকা-ভাঙ্গা রুটের কাজ সম্পন্ন হবে।

অন্যদিকে ভাঙ্গা-যশোর কাজের অগ্রগতিও ভালো। এ অংশের অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে এ অংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলছে পুরো কর্মযজ্ঞ।

পুরো প্রকল্পে ১৪টি নতুন রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে এখন। একইসঙ্গে পুরনো ৬টি স্টেশনকেও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে এ প্রকল্পের আওতায়।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, স্টেশন নির্মাণ, সিগন্যালের কাজসহ অন্যান্য কাজ খুবই দ্রুতগতিতে চলছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

একইসঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া রেলপথ ব্যবহার করতে পারবে ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ। ফলে কম খরচেই ঢাকার সঙ্গে পণ্য ও যাত্রীরা চলাচল করেতে পারবে।