অর্থনীতি

ডলার সংকট সমাধানে ব্যাংকগুলোতে ডলারের দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে অনুৎসাহিত হচ্ছে প্রবাসীরা। ফলে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স ব্যাপকহারে কমে গেছে, যা ছিলো তার আগের সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে সৌদি আরবের প্রবাসীরা। দেশটি থেকে এসময় প্রবাসী আয় আসে ৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

রেমিট্যান্স পাঠানোয় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা। দেশটি থেকে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরব আমিরাত। দেশটি থেকে এসময় ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রবাসী আয় এসেছে।

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, কুয়েত থেকে ১১ কোটি ৭৯ লাখ, কাতার থেকে ১১ কোটি ৩৮ লাখ, মালয়েশিয়া থেকে ৭ কোটি ৮৩ লাখ, ইতালি থেকে ৮ কোটি ৬৫ লাখ, ওমান থেকে ৪ কোটি ৫ লাখ এবং বাহরাইন থেকে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা রেমিট্যান্স আসে।

দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কমেছে প্রবাসী আয়। দেশে গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রবাসীদের এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার কম। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

গত এপ্রিল থেকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দেয়। এরপর ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে ডলার সংগ্রহ শুরু করে। ফলে গত এপ্রিল, জুলাই ও আগস্টে ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল।

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ওপর আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এরপরেও ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম রেমিট্যান্স আসে।

২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ বা ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ বা ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতি

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন থাকলেও এখন আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয় এবং ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির অনুমোদন ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও ৮টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে এবং রপ্তানির সময়সীমা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

গত বছর দুর্গাপূজায় ১১৫টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে সময় ইলিশ সংকটের কারণে মাত্র ১ হাজার ১০৮ টন ২৮০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল।

অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিবছর গড়ে আকর্ষণীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে। একই সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষের জানমাল রক্ষায় বৈশ্বিকভাবে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ খাতে বিশ্বব্যাংক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। বেসরকারি খাতে ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪০০ কোটি ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

শনিবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, বেসরকারি খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ থেকে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভালো। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪০০ কোটি ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে শুধু করোনার দুই বছর ছাড়া বাকি সময়ে গড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে ৩ শতাংশ এবং পরের বছর প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি যখন টালমাটাল তখনও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য কারণে বিপর্যয়কর পরিবেশের মধ্যে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। এদের রক্ষায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় উপকূলে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। উপকূলীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো। একই সঙ্গে আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষকে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে দুর্যোগ প্রতিরোধে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করার ব্যবস্থা রেখেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্রুত লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। উপকূলীয় এলাকার ৬ হাজার কিলোমিটার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকা উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক সহায়তা করছে। এ সহায়তার অংশ হিসাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ১২ লাখ মানুষকে রক্ষা করতে এক হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ৫৫০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্রের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাস সহ্য করতে পারবে।

২০২০ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪৮-সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসাবে চমৎকার কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য একটি টেকসই এবং স্থিতিশীল পথ তৈরি করতে সহায়তা করছে।

এতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাও চালু করেছে। এতে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ত্বরান্বিত হওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টি শক্তিশালী হবে।

বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর সদস্য দেশগুলোতে শর্ত বাস্তবায়ন সাপেক্ষে তাদের সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে ঋণ দিয়ে থাকে। গত অর্থবছরের জন্য আইডিএ ঋণ অনুমোদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে। প্রতিশ্রুতি ছিল ২১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। প্রতিশ্রুতির দিক থেকে শীর্ষে ছিল নাইজেরিয়ার ২৪০ কোটি ডলার। তৃতীয় অবস্থানে ছিল কঙ্গো ২১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চতুর্থ ছিল ইথিওপিয়া ১৯০ কোটি ডলার।

অর্থনীতি

ব্যবসায় পরিবেশের আরও উন্নতির লক্ষ্যে এবং তাদের প্রয়োজন বিবেচনায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা এক বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি সংলাপ প্লাটফর্ম বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। বিল্ডের এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বুধবার বিল্ডের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির ৯ম সভায় এ প্রস্তাব আনা হয়। বিল্ড ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সচিবালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় যৌথ-সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)’র প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম।

বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম তার ‘ট্রেড লাইসেন্স-নিডস র‌্যাশনালাইজেশন অ্যান্ড সিম্পলিফিকেশন’ শীর্ষক উপস্থাপনায় ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন বিবেচনায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা এক বছর থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত করার এবং নবায়ন ফি কমানোর প্রস্তাব করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তৈরি পোশাক বহির্ভূত খাতসমূহের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের খাতভিত্তিক সাব-কন্ট্রাক্টিং রুল গঠন করতে হবে। তিনি ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমার প্রস্তাবে ইতিবাচক মত দেন।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম বৈশ্বিক উত্তম চর্চাসমূহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর জন্য শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রকে বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ করেন।

অর্থনীতি

বর্তমান প্রবৃদ্ধির কাঠামো টেকসই নয়। নতুন করে সংস্কার না হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২০৩৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ নামের এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে এ কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য তিনটি বাধা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ণ। এই তিন বাধা দূর করতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে, এমন মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কয়েক দশক ধরে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। অর্থনীতির তেজিভাব কখনো স্থায়ী প্রবণতা নয়। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি সব সময় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। তবে কয়েকটি দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ১০-এ থাকা দেশগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ পরের দশকেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০১০-১৯) যেসব দেশ শীর্ষ ১০-এ ছিল, সেসব দেশ আগের দশকে শীর্ষ ১০-এ ছিল না।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংক কিছু সুপারিশ করেছে। যেমন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের শুল্ক-করহার অন্য দেশের তুলনায় বেশি, যে কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু দেশের আর্থিক খাত অতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিক খাতের উন্নতি হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে আধুনিক নগরায়ণই বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক নগরায়ণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্র আজ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ও বাইরের রোহিঙ্গাদের এবং বাংলাদেশে আশ্রয়দানকারী গোষ্ঠীর জন্য ১৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিশেষ করে বাংলাদেশে কর্মসূচিগুলোর জন্য প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হবে। এ কর্মসূচির অধীনে মিয়ানমারে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বেঁচে যাওয়া ৯ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাদের জীবনরক্ষামূলক উদ্যোগ এবং বাংলাদেশে তাদেরকে আশ্রয়দানকারী গোষ্ঠীর ৫ লাখ ৪০ হাজার সদসস্যের জন্য এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, নতুন এ সহায়তা খাদ্য, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসেবা, সুরক্ষা, শিক্ষা, আশ্রয় এবং মানসিক-সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার ও জনগণসহ এই অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী অন্যান্য দেশের উদারতারও প্রশংসা করেছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তা ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে প্রায় ১.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল।

অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার মধ্যে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক ৯৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি এবং ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে ৭৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘স্বীকার করছি যে, বার্মার (মিয়ানমার) পরিস্থিতি বর্তমানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন এবং প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক নয়। আমরা এই সমস্যার সমাধান খোঁজার জন্য বাংলাদেশ সরকার, রোহিঙ্গা এবং বার্মার অভ্যন্তরের জনগণের সাথে কাজ করছি।’

তিনি মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে বিতাড়িত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান ও সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবদান রাখার জন্য অন্যান্য দাতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের জীবনরক্ষামূলক কাজ করার জন্য মানবিক সহায়তাকারী মার্কিন অংশীদারদেরও প্রশংসা করেছেন।

অর্থনীতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রতিটি অফিসে সরকারি অর্থ যাতে আইন ও নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ব্যয় হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির নিকট মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল বার্ষিক অডিট ও হিসাব রিপোর্ট পেশকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

রাষ্ট্রপ্রধান সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আপত্তি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।

বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন জানান, সাক্ষাৎকালে সিএজি প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এর সুদের হার হবে শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া ৩ বছরের রেয়াত কালসহ ১৫ বছরের মধ্যে এই সহায়তার অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের মন্ত্রীর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সংকট মোবিলায় এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ কোটি ডলার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া এই ঋণ দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। প্রথম ধাপের ৫০ কোটির পর বাকি ৫০ কোটি নিয়ে আলোচনা হবে।

এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সফল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খরচ কমিয়েছি। প্রকল্পগুলো তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করার কৌশলের প্রশংসা করেছে এডিবি। বাজেট সহায়তা আমরা যেকোনো সময় পেতে পারি। আলোচনা হচ্ছে কিছু শর্ত তো থাকবেই। যেমন টাকা ধার নিলে তো কবে পরিশোধ করা হবে সেটিও তো একটি শর্ত। তিনি জানান, আমার বাড়ি হাওর এলাকায়। তাই বলে আমি যে প্রকল্প টেনে এনেছি সেটি ভাবার কারণ নেই। এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী নিজের এ রকম প্রকল্প চান।

বৈঠক শেষে এডিমন গিন্টিং বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এ ঋণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা অনেক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক ব্যবস্থাপনা ভালো করেছে।

তিনি আরও বলেন, হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতি গ্রস্থ অবকাঠামো উন্নয়নে জরুরি একটি প্রকল্প নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

অর্থনীতি

রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছে এমন ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার।

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বিকল্পভাবে রাশিয়া থেকে কীভাবে আমদানি করা যায়- তা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা জানান।

ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সেখানে দেশের খাদ্যশস্য মজুদ এবং ইউক্রেন-রাশিয়া থেকে আমদানির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ডলার ব্যবহার করে কীভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানি করা যায় সে বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। পাশাপাশি ডলার সাশ্রয় ও আয় বাড়ানো, ওষুধ খাতে রপ্তানি বাড়িয়ে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ২৪ ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার দিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্য আমদানি করতে পারবে বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানিতে কোনো বাধা নেই। সেটি আলোচনা হলো, ক্লিয়ার হলো আজ।

এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধ খাতে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে এবং অন্যান্য খাত থেকেও যাতে ডলার আয় বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে নানারকম অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়াকে সুইফট থেকে বাদ দেওয়ায় বিপদে পড়েছে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশও। রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সম্ভব না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যারা রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে, তাদের বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছে।

গত ১৬ আগস্ট একনেক সভায় রাশিয়া থেকে কীভাবে তেল আমদানি করা যায়, সেদিকটা পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যদি পারে, বাংলাদেশ কেন পারবে না প্রধানমন্ত্রী এমনটিও বলেছেন বলে সভা পরবর্তী গণমাধ্যমকে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

জানা গেছে, রাশিয়ার ওপর আমেরিকাসহ ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় যেকোনোভাবেই তেল কেনার গ্রাহক খুঁজছে দেশটি। এ মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের কাছে আবারো পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রোসনেট। আগে তেল কেনায় আগ্রহী না হলেও এখন বাংলাদেশ ভেবে দেখছে বিষয়টি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা করতে কমিটি গঠন করেছে বিপিসি।

অর্থনীতি

ওএমএসে বিক্রির জন্য চালের বরাদ্দও দ্বিগুণ করেছে সরকার।

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আগামী সেপ্টেম্বরে ১৫ টাকা কেজি দরে সারাদেশে চাল বিক্রি শুরু হবে। সেই সঙ্গে খোলা বাজারে (ওএমএস) বিক্রির জন্য চালের বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “চালের পর্যাপ্ত সরকারি মজুদ আছে। সাধারণ মানুষের জন্য আমরা ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু করব।”

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বছরে পাঁচ মাস হয়; প্রথম ধাপ চলে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। আরেক ধাপ চলে মার্চ ও এপ্রিল মাসে। সরকার নির্ধারিত ৫০ লাখ পরিবার এই সুবিধায় চাল কিনতে পারে।

সাধন মজুমদার বলেন, “প্রতিকেজি ১৫ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পাবেন ভোক্তারা।”

ওএমএস ডিলারদের বরাদ্দ দ্বিগুণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের ২ হাজার ১৩ জন ওএমএস ডিলার আছে। আগে একজন ডিলার এক টন করে চাল পেতেন। এবার প্রত্যেক ডিলারকে প্রতিদিন দুই টন করে চাল দেওয়া হবে।

ওএমএসে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করে সরকার। এক ব্যক্তি এক দিনে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএসের চাল বিপণনের ফলে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এই কর্মসূচিতে তালিকাভুক্ত পরিবার চাল কিনতে পারবেন। ৫০ লাখ পরিবার যখন উপকৃত হবে তখন বাজার থেকে চাল কেনা লাগবে না। ফলে বাজারে চালের চাহিদা কমবে এবং দাম কমবে।”