অর্থনীতি

স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভালো অবস্থানের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব।

মঙ্গলবার (২৩ মে) কাতারে হোটেল ওয়ালডর্ফ অ্যাস্তোরিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ এবং সৌদি অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ফয়সাল আলিব্রাহিমের কাছ থেকে এ প্রস্তাব আসে।

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

সৌদি দুই মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে ড. মোমেন বলেন, তারা বলেছেন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি ইস্যু দেখি। প্রথমত দেশের স্থিতিশীলতা, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ দেখেন, স্থিতিশীলতা দেখেন। বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভালো। যার কারণে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সৌদি দুই মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্ব খুবই ভালো, তাদের ভিশন ও কমিটমেন্টস খুবই ভালো।

তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খুব ভালো ও স্থিতিশীল সরকার রয়েছে।

সৌদি দুই মন্ত্রী বলেন, তারা পতেঙ্গা বন্দরে এবং এর পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কী করতে চান সে বিষয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছেন।

তারা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশকে তাদের বেশ কিছু পণ্যের প্রধান আঞ্চলিক বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যদি এটিকে সৌদি আরব আঞ্চলিক বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে সরবরাহ করতে পারবে।

দুই মন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে পেট্রোকেমিক্যাল, ডিজেল, বিমানের জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রধান বিতরণ কেন্দ্র করতে চান।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ইতোমধ্যে অনুমতি দিয়েছেন এবং শিগগিরই তাদের কাজ শুরু করতে বলেন।

পারস্পরিক লাভে শেখ হাসিনা মাতারবাড়ি, পায়রা বন্দর ব্যবহার ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ সহজ করতে যদি কোনো বাধা থাকে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই দেশের লাভে কৃষিসহ বিভিন্ন সেক্টরে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করে সৌদি আরব।

এ প্রসঙ্গে তারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

হজ ইস্যুতে আলাপকালে সৌদি দুই মন্ত্রী তাদের দেশে হাউজিং ও হাসপাতাল নির্মাণে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ করার অনুরোধ করেন।

দুই দেশের জনগণের লাভের জন্য সৌদি আরবে ওষুধ, পানীয় ও রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠা করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

এ সময় সৌদি দুই মন্ত্রী বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রশংসা করেন।

ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

অর্থনীতি

২৬ হাজার গ্রহকের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস লিমিটেড। এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতিতে প্রতারণা করছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আকতার হোসেন সোহেল এমএলএম প্রতিষ্ঠান ডেসটিনির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ডেসটিনি অকার্যকর হওয়ার পর তিনি প্রতারণার নতুন ফাঁদ পাতেন। সারা দেশেই তিনি ফেলেছিলেন জাল। তার জালে বেশি পড়েছেন সাবেক সেনা সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছিল অভিনব প্রতারণা। সম্প্রতি উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের এবং বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পড়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে এক পরিচালককে গ্রেফতার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। রোববার তাকে গ্রেফতারের পর সোমবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, একেক শ্রেণির লোকের কাছে একেক ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করতেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তরা। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে নিজেকে একজন সাবেক জিওসির ছেলে পরিচয়ে আকতার হোসেন সোহেল বলতেন, ‘আমি আপনাদের সন্তান। সেনাবাহিনীর রেশন খেয়ে বড় হয়েছি। আপনারা আমার বাবার মতো। আমি কি আপনাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারি?’ সাধারণ মানুষের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথমে ঢাকার আশপাশে কোনো প্রক্রিয়াধীন আবাসন প্রকল্পে নিয়ে যান ব্রাইট ফিউচারের কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে মিডিয়া হিসাবে জায়গা-জমির দাম-দর করেন। এরপর টাকা নেন। কিন্তু তারা প্লট দিতে পারেন না। গ্রাহক টাকা ফেরত চাইলে বলেন, ‘আমরা তো মিডিয়া হিসাবে কাজ করি। প্লটের জন্য যাদের কাছে টাকা দিয়েছি, তারা সেই টাকা অন্য প্রকল্পে ব্যয় করে ফেলেছে। তাই এ মুহূর্তে আপনার টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না। আমাদের নিজস্ব প্রকল্প আছে। আপনি চাইলে আমাদের প্রকল্পে এই টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনার বিনিয়োগের টাকার ওপর প্রতিমাসে লাখে তিন হাজার টাকা করে লাভ দেওয়া হবে। চার বছর পর আপনাকে মূলধনের দ্বিগুণ ফেরত দেওয়া হবে।’

সূত্রমতে, ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস লিমিটেড যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তাদের কাউকেই টাকা ফেরত দেয়নি। ঠিকমতো লাভও দেয়নি। দুই-এক মাস লাভ দেওয়ার পর টালবাহানা শুরু করে। এ বিষয়ে ৪ মে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী মীর মো. জান্নাত হোসেন। মামলায় ২০-২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই জালিয়াতচক্রে অর্ধশতাধিক সদস্য রয়েছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি আকতার হোসেন সোহেল, পরিচালক আলতাব হোসেন, মোজাম্মেল হক, হারুন অর রশিদ বাবু, হারুন অর রশিদ, মনির হোসেন, রাজা-উল করিম, ডিএমডি পারভিন আক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহম্মেদ এবং উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের কাজী শামসুর রহমান।

মামলার এজাহারে মীর জান্নাত হোসেন বলেন, ‘আসামিরা প্রলোভন দেখায় যে, আশুলিয়ার ইছরকান্দি মৌজায় তাদের অনেক জমি কেনা আছে। সেখানে আমাকে স্বল্প দামে পাঁচ কাঠার প্লট কিনতে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের কথায় বিশ্বাস করে আমি ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্লটের জন্য আট লাখ টাকা দিই। পরে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট আরও ৫০ হাজার টাকা দিই। শুধু তাই নয়, তাদের প্রলোভনে পড়ে আমি বিভিন্ন সময়ে আমার কয়েকজন আত্মীয়র কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে তাদের দিই। কিন্তু তারা আমাকে প্লট দিতে পারেনি। টাকা ফেরত চাইলে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। কিন্তু লভ্যাংশও দেয়নি। বেশ কিছুদিন ঘোরানোর পর এখন তারা পলাতক।’

গত জানুয়ারিতে পুলিশের এক গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িতে ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস লিমিটেডের অফিস রয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন হচ্ছে। পাওনা টাকা নিয়ে অনেকেই বিরোধে জড়াচ্ছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে এ নিয়ে আন্দোলনও হয়। বাড়িটি ঘেরাও করে আমানতকারীরা। কিন্তু টাকা লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা পুলিশের এখতিয়ারবহির্ভূত। তারপরও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের কাছে গ্রাহকরা তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানায়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। যে কোনো সময় তারা পালিয়ে যেতে পারে।’

রোবাবার রিমান্ড আবেদনে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাসান মাহামুদ উল্লেখ করেন, গ্রেফতার মোজাম্মেলসহ এজাহারভুক্ত আসামিরা সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। যাদের গ্রেফতার করা যায়নি, তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে। অন্য আসামিদের সঠিক নাম-ঠিকানা ও পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহের জন্য মোজাম্মেলকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

ভুক্তভোগী মেজর (অব.) মাহমুদ আকবর ভূঁইয়া বলেন, ২০১৯-২০ সালে আমি ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস লিমিটেডে চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। তারা আমাকে প্রতিমাসে লভ্যাংশ দিয়ে চার বছরের মধ্যে ৪৮ কিস্তিতে দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। সে অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে আট কোটি টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু কয়েকটি কিস্তি দেওয়ার পরই তারা লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। লভ্যাংশসহ তাদের কাছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা পাব। বেশ কয়েকবার তাদের অফিসে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। এখন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা লাপাত্তা। তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করতে পারছি না।

থানায় দেওয়া অভিযোগে লাভলী খাতুন নামের এক ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, ‘সরলবিশ্বাসে ব্রাইট ফিউচারের কাছে আমি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ টাকা পরিশোধ করি। আমাকে ৪৫টি কিস্তির মাধ্যমে দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ২-৩টি কিস্তি দেওয়ার পর থেকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।’ মহিউদ্দিন, হামিদা আলম, শাহানাজ, রফিক, রশিদ, সাজ্জাত, রুদ্র, আইয়ুবসহ আরও অনেকেই কাছে নিজেদের প্রতারিত হওয়ার কাহিনি তুলে ধরেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রতারণার বিষয়টি আমরা অবগত। একাধিক অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে চক্রের একজনকে ধরেছি। বাকিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক কোম্পানি অ্যাসেনচুয়েট টেকনোলজির কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন পরিশোধিত চিনি কিনছে সরকার। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই চিনি কেনা হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ৮২ টাকা ৮৫ পয়সা, দেশীয় খুচরা বাজারের দাম থেকে প্রায় ৬০ টাকা কম।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এই চিনি ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ওই চিনি কিনতে মোট ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা।

এর আগে ৮২ টাকা ৯৪ পয়সা দরে তুরস্কের একটি কোম্পানির কাছ থেকে চিনি ক্রয় করেছে সরকার।

দেশের বাজারে সম্প্রতি চিনির দাম কেজিতে ১৬ টাকা করে বাড়িয়ে প্রতি কেজি ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত এই দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করা হবে না বলে দুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে আজ (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির কাছ থেকে চিনি ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হলো।

র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও দেশটির একটি কোম্পানির কাছ থেকে চিনি কেনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকরা অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা হয়নি।

অর্থনীতি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য নতুন করে ৩ কোটি ‘ব্লাঙ্ক স্মার্ট কার্ড’ কিনছে সরকার। এতে মোট ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে।

মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভায় ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিন কোটি ‘ব্লাঙ্ক স্মার্ট কার্ড’ কেনা হবে।

নির্বাচন কমিশনের জন্য এসব ‘ব্লাঙ্ক স্মার্ট কার্ড’ কেনা হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ) থেকে। এতে ব্যয় হবে ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এর আগে গত ৯ মার্চ ‘ব্লাঙ্ক স্মার্ট কার্ড’ কেনার প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় জাতীয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায়।

অর্থনীতি

ঈদের মাস এপ্রিলে প্রবাসী আয়ে ছন্দপতন হলো। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে) ১৮ হাজার ১৭ কোটি ৪০ হাজার টাকা। অথচ গত মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার। মঙ্গলবার (২ মে) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের তিন মাস ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও মার্চের ধারাবাহিকতা হিসেব করে ঈদের মাসে দুই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসবে বলে ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও মার্চে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন যথাক্রমে ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার, ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার ও ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। কিন্তু এপ্রিল তা কমে আসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা থেকে হঠাৎ করে নিম্নমুখী হয় প্রবাসী আয়। এরপর ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠাতে নানামুখী উদ্যোগ নিলে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। মার্চ মাসেও সে ধারা অব্যাহত ছিল। এপ্রিলে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে ধরে নেওয়া হলেও ঈদ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্সের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় আয়ে আবার ছন্দপতন ঘটেছে।

প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানোর জন্য গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছিল। পদক্ষেপগুলো হলো- বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিপরীতে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা; প্রবাসী আয় পাঠানো প্রবাসীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া; প্রবাসী আয় বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা; অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া; ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ।

এছাড়া সেবার বিনিময়ে দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করার ব্যবস্থা করা হয়। ঘোষণা ছাড়াই সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ২০ হাজার মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়।

এ সব উদ্যোগের ফলে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছিলো। কিন্তু সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। বড় ধরণের ছন্দ পতন ঘটে প্রবাসী আয়ে। প্রবাসী আয়ের এ ছন্দ পতন টের পেয়ে প্রতি ডলারে আগের রেট ১০৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০৮ টাকা করা হয়। যা মঙ্গল (২ মে) থেকে কার্যকর হয়েছে।

অর্থনীতি

মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহণে ভারতকে টনপ্রতি ২২০ টাকা ফি (ট্রান্সশিপমেন্ট ফি, সিকিউরিটি চার্জ, প্রশাসনিক চার্জ) দিতে হবে। এর বাইরেও প্রতি চালানের ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং প্রতি কিলোমিটারে এসকর্ট চার্জ ৮৫ টাকা দিতে হবে। নির্দিষ্ট রুটের বাইরে অন্য রুটে ট্রানজিটের পণ্য পরিবহণ করা যাবে না।

সোমবার ভারতীয় পণ্য পরিবহণে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সংক্রান্ত একটি স্থায়ী আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। স্থায়ী আদেশে ট্রানজিটের ফি-রুট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

স্থায়ী আদেশে বলা হয়েছে, ট্রানজিট অপারেটর হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মোংলা ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ফলাফল সন্তোষজনক হলে যোগ্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ১০ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালান, ১০ লাখ টাকার নিঃশর্ত ব্যাংক গ্যারান্টি এবং ৫০ লাখ টাকা রিস্ক বন্ড জমা দিতে হবে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রমে ব্যর্থ হলে পণ্যের শুল্ক-করের জরিমানা অপারেটকে দিতে হবে। প্রাকৃতিক কারণে পণ্য নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে বা যানবাহন নষ্ট হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট অফিসকে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দিতে হবে।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের চালান স্ক্যানিং করা হবে। এরপর ইলেকট্রনিক সিল লক লাগানো হবে। স্ক্যানিং-এ অসঙ্গতি পাওয়া গেলে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করা হবে।

যেসব রুটে পণ্য পরিবহণ : মোট ১৬টি রুটে পণ্য পরিবহণ করা যাবে। এগুলো হলো, চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা; মোংলা বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা; চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল-ডাউকি; মোংলা বন্দর-তামাবিল-ডাউকি; চট্টগ্রাম বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি; মোংলা বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি; চট্টগ্রাম বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর; মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর; আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম বন্দর; আগরতলা-আখাউড়া-মোংলা বন্দর; ডাউকি-তামাবিল- চট্টগ্রাম বন্দর; ডাউকি-তামাবিল-মোংলা বন্দর; শেওলা-সুতারকান্দি-চট্টগ্রাম বন্দর; শেওলা-সুতারকান্দি-মোংলা বন্দর; শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-চট্টগ্রাম বন্দর এবং শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-মোংলা বন্দর।

অর্থনীতি

দেশে রেমিট্যান্সে এগিয়ে রয়েছে চার জেলা। প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা।

এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট। সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে বান্দরবান, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি জেলায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী আয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা এমন তথ্য মিলেছে। এই তথ্য চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ এই ৯ মাসের।

জুলাই থেকে মার্চ- এই ৯ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৬০৩ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলার। ঢাকায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। চট্টগ্রাম জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, কুমিল্লা জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৯৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আর প্রবাসীদের শহর তথা বাংলাদেশের লন্ডনখ্যাত সিলেটের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৮৮ কোটি ৬৫ মার্কিন ডলার।

দেশের সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় পাঠানো তিন জেলা হলো বান্দরবান, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি। উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলা ও পার্বত্য দুই জেলার প্রবাসীর সংখ্যা কম। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রেও।

যেসব এলাকার লোকেরা নিজ এলাকা থেকে বাইরে যেতে তুলনামূলক কম পছন্দ করেন বা করতেন এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কম সাহসী, সেসব এলাকার মানুষ প্রবাসে কম গেছেন।

অন্যদিকে, যেসব এলাকার মানুষের এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই এবং যেসব জেলার লোকেরা আগে থেকেই বিদেশে যান, সেসব জেলা থেকে প্রবাসে যাওয়ার হার বেশি।

আর এ কারণেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট জেলায় বেশি প্রবাসী আয় আসে বলে মনে করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশনবিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান।

তিনি বলেন, এক কোটিরও বেশি মানুষ দেশের বাইরে আছেন। এর মধ্যে বড় অংশ আছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশেও কাজ করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, তথ্যে দেখা যায়, দেশের সব জেলা থেকে সমানভাবে মানুষ প্রবাসে যায় না। নির্দিষ্ট ১০ থেকে ১২টি জেলা থেকেই বেশির ভাগ মানুষ প্রবাসে যায়। আবার পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের মানুষ কম যায়।
শরিফুল হাসান জানান, কুমিল্লা জেলা থেকে এক মাসে যে সংখ্যক মানুষ বিদেশে গেছেন, তা কিছু জেলার গত ৫০ বছরে লোকজনের বিদেশে যাওয়ার সমান। এ কারণে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রেও এ সব জেলা পিছিয়ে আছে।

তিনি বলেন, উল্টো তথ্য দেখা যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের মতো জেলাগুলোতে। তাদের এই প্রবাসে যাওয়া হঠাৎ করে হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ বাইরে গেছে; এই বাইরে যাওয়াকে অনুসরণ করে অন্যরা।

তিনি আরও বলেন, যেসব কারণে নির্দিষ্ট জেলাগুলো থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে বিদেশে কম যাচ্ছে, সেসব কারণ চিহ্নিত করে সমাধানে সরকার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রবাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও যোগাযোগ ভূমিকা রাখছে। যেসব এলাকা তুলনামূলক বেশি উন্নত, শিক্ষার হার বেশি, যোগাযোগ ভালো, সেসব এলাকার মানুষ বেশি সংখ্যক হারে দেশের বাইরে গেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই তিন মাসে প্রবাসে গেছেন তিন লাখ ২৩ হাজার ১০ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কুমিল্লা থেকে। এই জেলা থেকে গেছেন ২৬ হাজার ১৯৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৬১৯ জন গেছেন চট্টগ্রাম থেকে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৫ হাজার ৯৩৯ জন, টাঙ্গাইল থেকে ১৩ হাজার ৫৫৭ জন, নোয়াখালী থেকে ১১ হাজার ৭৫০ জন বিদেশে গেছেন।

এই সময়ে সব চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ প্রবাসে কাজের সন্ধানে গেছেন রাঙামাটি থেকে। এই জেলা থেকে ২২৭ জন বিদেশে গিয়েছেন। এরপর রয়েছে বান্দরবান ২৪০ জন, লালমনিরহাট ৪৪৪ জন ও খাগড়াছড়ি ‍৪৭৯ জন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, যেসব এলাকার বেশি সংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে গেছেন, সেখানে দারিদ্র্যের হারও কম। দারিদ্র্যের এ হার কমানো বা প্রবাসী আয় বাড়ানোর দুটি বিষয় একটি জায়গা থেকে উদ্ভূত।

এসব এলাকা চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিদেশমুখীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা ও মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে। এমনটি দেখানো হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ-পরিকল্পনায়।

অর্থনীতি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্য, গ্যাস ও সারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সংকট সৃষ্টি হয় মার্কিন ডলারের। যে কারণে টাকার বিপরীতে বেড়ে যায় ডলারের দাম। ডলার ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আমদানি ব্যয়কে উসকে দেয়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার ও খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়। অপরদিকে সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে ভর্তুকিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অর্থ বিভাগের হিসাবে চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে শুধু কৃষি, বিদ্যুৎ ও খাদ্যে অতিরিক্ত ভর্তুকি গুনতে হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ডলার মূল্যবৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত অভ্যন্তীরণ ঋণের সুদ পরিশোধে বাড়তি ব্যয় হবে ৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির’ বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, চলতি ও আগামী উভয় বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধের ব্যয় মোকাবিলা করা। চলমান যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয় ভর্তুকিতে। যদিও এখন পণ্যের দাম নিম্নমুখী। কিন্তু ২০২২ সালের জুনের পর সব ধরনের পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। ফলে সরকারকে একদিকে বেশি মূল্যে আমদানি করে সাশ্রয় মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ভর্তুকি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণ সুদ ব্যয় বেশি হওয়ায় এ খাতেও খরচ বেড়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজেটে ভর্তুকি খাতে ব্যয় অনেক বেশি যাচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এতে কিছুটা মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। আর মূল্যস্ফীতি হলে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে। অবশ্য তাদের সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে। তিনি সুদ ব্যয় প্রসঙ্গে বলেন, সার্বিকভাবে চলতি বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বাড়ছে। আর এ ব্যয়ের বড় অংশ যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বিশেষ করে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। যদিও এ বছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমানো হচ্ছে। এতে আগামীতে এ খাতে সুদ কিছুটা কমবে। এই অতিরিক্ত সুদ ব্যয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে কম ঋণ গ্রহণ এবং বৈদেশিক খাত থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, বৈদেশিক ঋণ রির্জাভের জন্য ভালো। বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন আছে। বর্তমান জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। এটি নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে খাদ্য, কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খাদ্যে ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি, বিদ্যুতে ১৮ হাজার কোটি এবং কৃষিতে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই তিন খাতের ভর্তুকিতে আরও ব্যয় হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। তাহলে এসব খাতে মোট ভর্তুকি দাঁড়াবে ৬০ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে সারের মূল্য প্রতি কেজিতে ৮১ টাকা পর্যন্ত উঠে। সেই দামে আমদানি করে কৃষককে দেওয়া হচ্ছে কেজি ২০ টাকা দরে। ১ আগস্টের আগে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কৃষককে দেওয়া হয় ১৬ টাকা দরে। বেশি মূল্যে কিনে কম মূল্যে কৃষককে সার দেওয়ায় এ খাতে অস্বাভাবিক ভর্তুকি ব্যয় বেড়েছে।

এদিকে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে সব ধরনের গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এর আগে জানুয়ারিতে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। নতুন ঘোষণায় ফেব্রুয়ারিতে আবাসিক এবং শিল্প-কলকারখানায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে অন্তত ৫ শতাংশ। আর পাইকারিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য দাম বাড়ছে অন্তত আট শতাংশ। সরকারের আগেই আভাস দিয়েছিল যে, এখন থেকে প্রতিমাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় হতে পারে। এই সমন্বয়ের পরও কেন এ খাতে ভর্তুকি বাড়ছে সে প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শেষ সময় এসে সমন্বয় করা হচ্ছে। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতে সমন্বয় না হওয়ায় ভর্তুকি বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। এদিকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের একটি প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার টন খাদ্য আমদানির চুক্তি করা হয়। যদিও বাজেটে আমদানির লক্ষ্য ছিল ৭ লাখ টন। এজন্য খাদ্য খাতে ভর্তুকি বাড়ছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এ বছরই আরও নয় হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা বেশি গুনতে হবে সুদ ব্যয়ে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ব্যয়ের বড় অংশ যাবে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয়ে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র খাতে। বর্তমান ব্যাংকের আমানতের সুদ হার চার থেকে সাড়ে চার শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদ হার সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বহাল আছে। ফলে ব্যাংকের আমানতকারীরা এখন সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ বেশি করছেন। যে কারণে এখনে সুদ ব্যয় অনেক বেড়েছে। অর্থ বিভাগের মতে, সঞ্চয়পত্রকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি টুলস হিসাবে দেখা হচ্ছে। যে কারণে এখানের সুদ হার অনেক বেশি রাখা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে সে সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। এখাত থেকে মোট ঋণের মাত্র ২০ শতাংশ নেওয়া হবে। ফলে সুদ ব্যয়ও কমবে।

অর্থনীতি

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তবে কৃষিতে উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও তার প্রভাব নেই বাজারে। দেশি-বিদেশি নানা প্রভাবকের কারণে মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়া।

যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের সঞ্চয়ে। একমাত্র প্রবাসী আয়ই পথ দেখাচ্ছে—ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রেমিট্যান্স। এই সময়ে প্রবাসগামী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বিদায়ী মার্চ মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। টাকার অংকে যা ২১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে)। একই সময়ে প্রবাসে গেছেন এক লাখ ৯ হাজার ৫০২ জন। প্রবাসে যাওয়া জনশক্তি বা দেশে আসা প্রবাসী আয় দুটোই বিএমইটি বা ব্যাংকিং খাতের মতো দুটো ফর্মাল চ্যানেলে। এর বাইরে ইনফর্মাল চ্যানেলে অর্থ যেমন এসেছে; বিপুলসংখ্যক মানুষও সরকারের হিসাবের বাইরে বিভিন্নভাবে কাজের সন্ধানে বিদেশে গেছেন। যা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাবে নেই।

প্রবাসে যাওয়া জনশিক্ত ও প্রবাস থেকে পাঠানো বৈদেশিক আয় দুটোই সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে বেশি। অর্থনীতির প্রধান তিন ভিত্তির অন্যতম প্রধান ভিত্তি প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক খবরে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।

চলতি ২০২৩ সালের তিন মাস জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রবাসী আয় এসেছে যথাক্রমে ১৯৫ কোটি ৮৯ ডলার, ১৫৬ কোটি ৫ লাখ ডলার ও ২১০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অর্থ বছরের হিসাবে ২০২২-২৩ এর জুলাই-মার্চ ৯ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ৬০৩ কোটি তিন লাখ ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং করোনা মহামারির বছর ২০২০-২১ অর্থ বছরে এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।

করোনা মহামারিতে প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। পরের বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী আয় কমতে থাকে। এ সময় প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিলে প্রবাসী আয় ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। গত চার মাসে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। সর্বশেষ মার্চ মাসে অব্যাহত এ ইতিবাচক ধারার প্রতিফলন দেখা যায়।

করোনা পরবর্তী প্রবাসী আয়ের মতো প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। করোনা মহামারির মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হয়, করোনা পরবর্তী বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। চাহিদা বাড়ে বিদেশি জনশিক্তর। বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জনশক্তির যোগানদাতা। এসব দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশের অদক্ষ-আধা দক্ষ জনশক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অবদান রাখছে। করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশিদের প্রবাসে যাওয়ার হারও বেড়ে যায়। বিএমইটি তথ্যতে বিষয়টি ফুটে ওঠে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রবাসে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। এটা একক বছর হিসাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের প্রবাসে যাওয়া। আগের ২০২১ সালে যায় ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বছর ২০২০ সালে প্রবাসে যায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। আগের বছর ২০১৯ সালে প্রবাসে গিয়েছিলেন ৭ লাখ ১৫৯ জন।

প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার একরেটে যাওয়াকে গুরুত্ব দেন ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, এক রেট না হওয়ার কারণে বাজারে কিছুটা অস্থির হওয়ার সুযোগ থাকে। এই অস্থিরতা রোধে উদ্যোগ নিতে হয়েছে।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো কার্যকর করতে হবে। পর্যবেক্ষণ জোরদার করার তাগিদ দেন তিনি।

খাদ্য উৎপাদনে নানা প্রচেষ্টার ফলে দেশের পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের কারণে খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাড়ছে দানাদার খাদ্যের বাইরে অন্যান্য খাদ্যের দামও। সর্বশেষ মার্চ মাসের মূল্যস্ফীতি উঠেছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে । মূল্যস্ফীতির আঘাত মানুষের সঞ্চয়ে লেগেছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে বাড়তি ব্যয় মেটাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কেনার বিপরীতে মানুষ বেশি বেশি ভাঙছে।

রপ্তানি আয় এখনো ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের ফেব্রুয়ারি মারে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তথ্য বলছে, রপ্তানি আয়ে এখনো ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলেও তা কমে আসছে।

এ সময়ে ডলারের চাহিদা কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কার্যত কোনো কাজে আসছে না। চলতি অর্থ বছর ২০২২-২৩ এর প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এক হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য।

একমাত্র প্রবাসী আয়ই ইতিবাচক ধারায় আছে। অবশ্য এর জন্য সরকারকে নানা রকম উদ্যোগ নিতে হয়েছে। প্রবাসী আয় বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো—বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিপরীতে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা, প্রবাসীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, প্রবাসী আয় বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।

এছাড়া সেবার বিনিময়ে দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ফরম ‘সি’ পূরণ করার শর্ত শিথিল করার ব্যবস্থা করা হয়। ঘোষণা ছাড়াই সেবাখাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ২০ হাজার মার্কিন ডলার দেশীয় মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব উদ্যোগের ফলে প্রবাসী আয় যেমন বাড়ছে। যে হারে প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্য বাড়ছে তাতে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারাকে আরও টেকসই করবে।

অর্থনীতি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীলতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

এছাড়া ভর্তুকিতে মাত্রারিক্ত ব্যয়ের ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি জোর দিতে বলা হয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ বাড়াতে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে এসব বিষয়সহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৭ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বাজেটের তুলনায় এর আকার প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। এর মধ্যে ভর্তুকির আকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থ বিভাগের এই প্রাক্কলন আজ বাজেট প্রাক্কলন পরীক্ষাসংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

এ সভায় অনুমোদনের পর আগামী ৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ৯ মে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এক সভায় তা চূড়ান্ত হবে। আর পহেলা জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ ও মুদ্রা বিনিময় হার বাড়ানো এবং টাকা ছাপানো বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বর্তমান সরকার টাকা ছাপিয়ে বাজেটের ভর্তুকি দিচ্ছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, পুরো সামষ্টিক অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে আছে, যা আমাদের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকার একদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছে না, কারণ টাকা ছাপাতে হচ্ছে।

অন্যদিকে ঋণের সুদের হারে ক্যাপ দিয়ে রেখেছে এবং ডলারের সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। আর ডলার সংকট যতদিন থাকবে, পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত হবে না। বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি-কোনোটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

প্রতিবছরই বাজেট প্রণয়নের আগে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পৃথকভাবে ধারাবাহিক বৈঠক করে অর্থ বিভাগ। এটিকে প্রাক-বাজেট বৈঠক বলা হয়। ওই বৈঠকে মূলত মন্ত্রণালয়গুলোর সম্ভাব্য ব্যয়ের আকার চূড়ান্ত করা হয়। পাশাপাশি কোন খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার, কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে-এসব বিষয়ে সুপারিশ নেওয়া হয়।

সম্প্রতি শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট বৈঠকে উঠে আসা প্রস্তাবগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা, অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসছে।

সেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজেটে আরও দিকনির্দেশনা রাখতে বলা হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকের কাছ থেকে ধানচাল সংগ্রহ ও ক্রয় আরও জোরদার এবং কৃষিতে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। যদিও চলতি অর্থবছরে কৃষিতে ১৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি রয়েছে।

এছাড়া আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ও কর প্রণোদনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী বাজেটে গুরুত্ব কোনটি পাবে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখা, উভয়ের মধ্যে যে কোনো একটি অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এছাড়া ব্যাংক খাত নিয়েও সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান ব্যাংক সুদহারের ওপর সরকার ক্যাপ বসিয়ে রাখার কারণে এটি বাড়ছে না। সেখানে বলা হয়, ব্যাংকের সুদহার মূল্যস্ফীতি থেকে কম হলে সঞ্চয় হবে না। বর্তমান মূল্যস্ফীতির চেয়ে ব্যাংক সুদহার কম। এজন্য ব্যাংকের সুদহার পুনর্গঠন করতে হবে।

মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দেওয়া প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছে-বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ব্যক্তি আয়করমুক্তসীমা ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ। এছাড়া জাতীয় বাজেটে দরিদ্র জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে মহামারি-পরবর্তী দারিদ্র ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাতে জোর দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নানা কারণে আগামী বাজেট সরকারের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এটি হবে শেষ বাজেটে। পাশাপাশি এই বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর ঋণ প্রভাব থাকবে। সংস্থার শর্তমতে, কর জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর এই উদ্যোগ নতুন বাজেটে থাকতে হবে। ফলে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আইএমএফ-এর শর্ত পালন করাও কঠিন হবে। এরই মধ্য দিয়ে সরকারকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের আরও অভিমত, চলতি বাজেটে ২০ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হবে। এ প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বড় ধরনের বাড়ানো উচিত হবে না। এ বছর যে রাজস্ব আহরণের হার, সেটি খুব বেশি বাড়ানো যাবে না।