অর্থনীতি

করোনা পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা।

রোববার (১৭ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম এবং বর্তমান সরকারের টানা ১৪তম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট। আসন্ন বাজেটে প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি
আগামী বাজেটে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রাক্কলন করা হযেছে। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ১৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায়
আগামী অর্থবছরে সম্ভাব্য রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছর মোট আয় ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটে মোট আয় বাড়ছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি জিডিপির প্রায় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া আছে। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হবে নতুন অর্থবছরের বাজেটে।

এছাড়া আগামী বাজেটে মোট আয়ের মধ্যে এনবিআর বর্হিভূত খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত রাজস্ব ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের ঘাটতি
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে ২৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।

অর্থনীতি

রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের বড় একটি অংশ উদ্ধারে নিউ ইয়র্কের আদালতে দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংক হেরে গেছে বলে ফিলিপাইনের সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট রায়ে ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই’ উল্লেখ করে তিন বছর আগে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মামলা খারিজ করে দিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে সাইবার হ্যাংকিংয়ের চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ২০‌১৯ সালে এ মামলায় পক্ষভুক্ত ফিলিপাইনের একটি ক্যাসিনো মালিকের প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে দেশটির এনকোয়ারার ও ফিলস্টার সোমবার এ খবর প্রকাশ করেছে।

নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট গত ৮ এপ্রিল এ রায় দেয় বলে ব্লুমবেরি রিসোর্টু কর্প সোমবার ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জকে (পিএসই) অবহিত করেছে। সেখানে ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ারের অভাবে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা বাতিল করে দিয়েছে নিউ ইয়র্কের আদালত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখের মধ্যে ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারের জন্য ২০২০ সালে এ মামলা করেছিল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ মামলায় সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ও ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্টু কর্প, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্প (আরসিবিসি) এবং ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করেছিল।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে।

রিজল ব্যাংকের এই শাখার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভেররিজল ব্যাংকের এই শাখার মাধ্যমে লেনদেন হয় বাংলাদেশের রিজার্ভেরওই অর্থ স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারের বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মেলেনি।

রিজার্ভ চুরির তিন বছরের মাথায় ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলা পরিচলানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনরকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা, ক্ষতিপূরণ ও আদায়ে এ মামলা দায়ের করেছিল বলে ২০১৯ সালের অক্টোবরে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই সময় মামলা নিষ্প‌ত্তিতে তিন বছরের মত সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।

আজমালুল হোসেন জানান, মামলার ১০৩ পৃষ্ঠার এজাহারে ১৫ জন ব্যক্তি ও সাতটি প্রতিষ্ঠানকে এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনকে রাখা হয়েছে বিবাদীর তালিকায়।

এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডজনখানেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

কয়েক বছর ধরে ‘জটিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে’ আসামিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে।

তিন বছর পরই গত ৮ এপ্রিল এ রায় হয় বলে জানায় এনকোয়ারার ডটকম। সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, আরসিবিসি ব্যাংকসহ ফিলিপাইনের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলায় অর্থ সরিয়ে নেওয়া/চুরি/অপব্যবহার, ষড়যন্ত্র ও প্রতারণায় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের পক্ষ থেকে তাদের দেশের আদালতে একটি মামলা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওই মামলার রায়ে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলাতেও তাকে আসামি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে মতিঝিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে যে মামলাটি করা হয়েছিল, সেখানে সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ আদালতে এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

অর্থনীতি

সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার পরও দেশ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার কোনোভাবেই থামছে না। মোট অর্থ পাচারের ৮০ ভাগই হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে। পাচার রোধে দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) রাষ্ট্রীয় সাতটি সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু আসছে না কোনো কার্যকর ফল। পাচার বন্ধ না হওয়ার নেপথ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতাসহ ১১ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্পদ পুনরুদ্ধার অর্থাৎ বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরতের ক্ষেত্রেও ৪টি প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত হয়েছে।

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২০ ও ২০২১) উঠে এসেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি এটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ বছরে দেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলার ৮৮ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

দুদকের প্রতিবেদনে অর্থ পাচারের কারণ ও প্রতিকার এবং পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে সীমাবদ্ধতা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দুদককে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান  বলেন, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃত। তবে মানি লন্ডারিং কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় বাধা হলো সমন্বয়হীনতা। দুদক ছাড়াও আরও ছয়টি সংস্থা এ আইন প্রয়োগের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কিন্তু কোনো সংস্থার সঙ্গেই কোনো রকম সমন্বয় নেই। যখন কোনো দায়িত্ব সবাইকেই দেওয়া হয়, তখন মূলত কোনো দায়িত্বই কাউকে দেওয়া হয় না। যখন সবাই অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করে, তখন মূলত কেউই সঠিকভাবে কাজ করে না বা করতে পারে না। বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধ অন্যান্য সংস্থাগুলোও কাজ করবে। তবে অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি দুদককে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দিলে কাজে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি হবে। অর্থ পাচার ঠেকানো ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত কার্যক্রমে গতি ফিরবে।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই অর্থ পাচারের অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো সংস্থাগুলো করে থাকে। বাংলাদেশেও এক্ষেত্রে (অর্থ পাচার প্রতিরোধ) সফলতা পেতে চাইলে দুদককে ক্ষমতা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে দুদক কাজ করবে। এছাড়া অর্থ পাচারের কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। একইসঙ্গে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরতের ক্ষেত্রেও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থ পাচার ঠেকাতে ৭ সংস্থা : বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট-সিআইডি), মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদক শুধু ‘ঘুস ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থের মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে। বাকি ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধের তদন্তভার সিআইডি ও এনবিআরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর কাছে ন্যস্ত। দুদকের এ আইনি সমস্যার সমাধানে ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদক সচিব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।

অর্থ পাচারের কারণ ও প্রতিকার : বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় অর্থ পাচার ঠেকানো ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিরোধ না হওয়ার পেছনে অন্তত ১১টি উল্লেখযোগ্য কারণ পাওয়া যায়। দেশে আইন থাকলেও এসব কারণেই মূলত এর সুফল জনগণ পাচ্ছে না। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্থ পাচার প্রতিরোধ না হওয়ার কারণগুলো হলো-১. দুদকসহ অন্য সাতটি সংস্থার বিদ্যমান ব্যবস্থায় অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তার দ্বারা সার্ভিলেন্স পরিচালনা ও আন্ডারকভার অপারেশনের কোনো বিধান বা ব্যবস্থা নেই। এর সমাধানে প্রো-অ্যাক্টিভ অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২. মানি লন্ডারিং ও আর্থিক অপরাধ উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং টেকনিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাগুলোতে ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং টেকনিক অবশ্যকীয়ভাবে ব্যবহার করতে হবে। ৩. দুদকসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোতে মূলত রিঅ্যাক্টিভ অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আন্ডারকভার অপারেশন পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশেষায়িত লোকবল নিযুক্ত করতে হবে। ৪. ক্রস-বর্ডার অপরাধের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণ পেতে গ্লোব নেটওয়ার্ক বা এন্টি করাপশন এজেন্সিগুলো নিয়ে গঠিত আঞ্চলিত প্লাটফরমে বাংলাদেশকে অবশ্যই সংযুক্ত হতে হবে। ৫. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় কৌশলপত্রের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পলিসি ও গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে। ৬. মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) প্রণয়ন ও প্রেরণ, বিদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন, এপিজির সঙ্গে যোগাযোগ, মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশনের জন্য ডকুমেন্ট তৈরি, প্রস্তুতি গ্রহণ ইত্যাদি কাজের জন্য বিদ্যমান অর্গানোগ্রামে নেই ডেডিকেটেট শাখা বা ডেস্ক নেই। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ লোকবল নিয়োগ করে মানি লন্ডারিং অনুবিভাগে পৃথক ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। ৭. বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি না থাকায় শুধু ইউনাইটেড ন্যাশন কনভেনশন এগেইনস্ট করাপশনের (আনকাক) আওতায় তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণ কিংবা সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আইনি সহযোগিতা চুক্তি করতে হবে। ৮. বিদ্যমান অনুসন্ধান ও তদন্তের সংখ্যার বিপরীতে কর্মরত তদন্তকারী কর্মকর্তার সংখ্যা অপ্রতুল। এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং, ব্যাংক ও বিমা সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান ও তদন্ত, ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং, ডিজিটাল ফরেনসিক, সার্ভিলেন্স ও আন্ডারকভার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও স্টাডি ট্যুরের আয়োজন করতে হবে। ৯. এমএলএআর প্রেরণ পরবর্তী কার্যক্রমের কোনো আপডেট তথ্য থাকে না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে পাঠানো এমএলএআরের সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করা এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দুদক, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সমন্বয় সভা করতে হবে। ১০. অনুসন্ধান/তদন্তকারী কর্মকর্তার নামে ডোমেইন সংবলিত ইমেইল (অফিসিয়াল) না থাকায় বিদেশি এজেন্সি বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা। এক্ষেত্রে সব অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের স্ব স্ব নামে ডোমেইন সংবলিত অফিসিয়াল ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। ১১. তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে সর্বোপরি দুর্নীতি প্রতিরোধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যোগদান করতে হবে।

সম্পদ পুনরুদ্ধারে বাধা ও করণীয় : কমিশনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে বড় ৪টি বাধা রয়েছে। এগুলো হলো-১. বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দুদকের আইনি সীমাবদ্ধতা। অর্থ পাচার রোধ ও বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে দুদকের অগ্রণী ভূমিকা দেখতে চাইলে দুদককে পর্যাপ্ত আইনি ক্ষমতা দিতে হবে। ২. বিদেশ থেকে অর্থ ফেরতের সার্বিক প্রক্রিয়া জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি দমন সংস্থার সঙ্গে দুদকের এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। ৩. বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরতে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি সহায়তা। এজন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার জন্য দুদক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডেডিকেটিড লোকবল নিয়োগ করে দেশ-বিদেশে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. অর্থ পাচারের অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

অর্থনীতি

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে রিয়েল টাইম অ্যাপস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

শনিবার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স সেন্টারে দি চিটাগাং চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি আয়োজিত পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে সব পর্যায়ে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে। মিল পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ভোক্তা যাতে স্বস্থিতে থাকেন, সেজন্য যা করা দরকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাই করবে।

চট্টগ্রামের ব্যাসায়ীরা সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এবং খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার যদি স্বাভাবিক কাজ করে, তাহলে পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সহযোগিতার জন্যই কাজ করে, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে। চলমান বিশ্ববাণিজ্যে অস্থির পরিস্থিতিতেও সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পণ্য মজুত থাকার পরও সরবরাহে ঘাটতি বা মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। সরকার ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক উঠা-নামা করলে সেটা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের নিতে হবে।

আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেন, পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে মিলার হতে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে সাপলাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখা, বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা, প্রত্যেক দোকানে ক্রয়-বিক্রির মূল্য তালিকা প্রদর্শন, পণ্য পরিবহনকে বাধা মুক্ত রাখা, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ১৩ টন ওজনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করতে হবে৷

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে শুল্ক সমন্বয় করার অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা সমন্বয় করা, ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ইস্যুর ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা, এইচএস কোর্ড কোন কারণে ভুল হলে উচ্চহারে জরিমান না করে তা সংশোধনের সুযোগ দেওয়া, আমদানি, মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিকভাবে লভ্যাংশ নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক সময়ে পণ্য বাজারে এলে কোনো সমস্যা হবে না।

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলেমর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আলোচনায় অংশ নেন চিটাগাং চেম্বারে নেতারা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা, আমদানিকারক, মিলালিক ফেডারেশনের নেতারা, দোকান মালিক সমিতির নেতারা, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন, খাতুনগঞ্জ ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ছগির আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ এবং চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল হোসেন।

অর্থনীতি

ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের কারণে খাদ্যশস্য রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় মার্চ মাসে বিশ্বে খাবারের উচ্চমূল্য নতুন রেকর্ড গড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

বিশ্বে গম, উদ্ভিজ্জ তেল, ভুট্টাসহ বেশ কয়েকটি শস্যের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেইন। যুদ্ধের কারণে এইসব শস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দাম বেড়ে যাচ্ছে।

এফএও শুক্রবার জানায়, প্রধান শস্য ও উদ্ভিজ্জ তেলের বাজারে ধাক্কা লগায় মার্চে খাদ্যের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে।

খাদ্যমূল্য নিয়ে নিয়মিত সূচক প্রকাশ করে এফএও। সংস্থাটি বলছে, তাদের খাদ্যমূল্য সূচক ফেব্রুয়ারিতেই রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, গত মাসে দাম সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

ফ্রেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে খাদ্য মূল্যসূচক ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। একে ‘মহাকায় মূল্যবৃদ্ধি’ বলে বর্ণনা করেছে এফএও।

বিশ্বে ৩০ শতাংশ গম আসে ইউক্রেইন এবং রাশিয়া থেকে। ‍যুদ্ধের কারণে এই শস্যের রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। আবার রাশিয়া পটাশ এবং ফসফেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সারের উপাদানও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করে।

এফএও গতমাসে বলেছিল, ইউক্রেইনে যুদ্ধের কারণে খাবার ও ভোজ্যপণ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। সেই হিসাবে মার্চে এফএও’র খাদ্য মূল্যসূচকে সিরিয়ালের দাম রেকর্ড ১৭ শতাংশ এবং সবজির দাম ২৩ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে।

বিশ্বে শস্য উৎপাদন ঠিকমত না হওয়ার কারণে ইউক্রেইন যুদ্ধের আগে থেকেই খাদ্যর দাম ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে ছিল। আর এখন যুদ্ধের কারণে কৃষ্ন সাগর অঞ্চল থেকে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দাম আরও অতিরিক্ত বেড়েছে।

চিনি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দামও মার্চ মাসে একলাফে অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে এফএও।

জাতিসংঘের এই সংস্থা এবং ইউক্রেইন সরকারের হিসাবমতে, ইউক্রেইনের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জমিতে শীতকালীন শস্য এবং সূর্যমুখী উৎপাদন হয়। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় এবারের শস্যবীজ বপনের মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হবে।

ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও ভোজ্যপণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে খাবারের দাম আরও ৮ থেকে ২২ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এফএও।

মার্চের খাদ্যমূল্যসূচকে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম। এক বছর আগের তুলনায় উদ্ভিজ্জ তেলের দাম রেকর্ড ৫৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’।

বিশেষ করে বেড়েছে সূর্যমুখী তেলের দাম।ইউক্রেইন বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক দেশ।

অর্থনীতি

ঈদ উপলক্ষে জনসাধারণ ও গ্রাহকদের মধ্যে আগামী ২০ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন নোট বিতরণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নতুন নোট বিশেষ ব্যবস্থায় বিনিময় করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশনস ও পাবলিকেশনস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জিএম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কাউন্টারের মাধ্যমে এসব নতুন নোট বিনিময় বা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের ৩২টি শাখার মাধ্যমেও গ্রাহকেরা নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন।

একই ব্যক্তি একাধিকবার নতুন নোট নিতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে আরও জানানো হয়, নোট উত্তোলনকালে কেউ চাইলে কাউন্টার থেকে মূল্যমান নির্বিশেষে যে কোনো পরিমাণ ধাতব মুদ্রা নিতে পারবেন।

অর্থনীতি

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং শিল্পের ঋণের সুদ ভর্তুকিতে সরকারের ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে।

এটি জাতীয় বাজেটের ৪১ শতাংশের সমান। বিপুল অঙ্কের মধ্যে টিকা কেনা ও বিতরণে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সংকট মোকাবিলায় দ্রুত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং তাদের বেতনভাতা জোগানে ৪১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

এছাড়া করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বাবদ ব্যয় হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রণোদনার ঋণের যে সুদ, সেটির অর্ধেক সরকার বহন করতে গিয়ে ভর্তুকি গুনতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, করোনা মোকাবিলায় কয়েকটি খাতে যে খরচ হয়েছে, সেটি না করে উপায় ছিল না। বিকল্প কোনো পথও ছিল না। ওই সময় জীবন রক্ষা করা জরুরি ছিল। ব্যবসায়ীদের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, এতে তারা উপকৃত হয়েছে। যে কারণে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় অর্থনীতির ক্ষতি বাংলাদেশে কম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শিল্প খাতে ঋণের সুদ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ভালো। তবে আগামী দিনে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। সরকার অর্থের যে অতিরিক্ত জোগান দিয়েছে, পুনরায় কোনো ধরনের ধাক্কা না লাগলে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে স্বাস্থ্য খাতে। এরপর ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় অনেক শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম। বৈদেশিক বাণিজ্যেও ভাটা নেমে আসে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিক মোকাবিলায় চারটি নীতি বা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের ব্যয় বাড়ানো, প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও অর্থের জোগান বৃদ্ধি।

করোনা স্বাস্থ্য খাতের মতো অর্থনৈতিক খাতে মারাত্মক আঘাত করেছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে নানা ধরনের ২৮টি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এটি জিডিপির ৬ শতাংশের সমান।

সূত্র জানায়, ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা সরাসরি দেওয়া হয়েছে চলতি বাজেট থেকে। অবশিষ্ট ৮টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধমে। এ অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসব অর্থ ঋণ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৪০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে। ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনভাতাও পরিশোধ করা হয়েছে। সরাসরি উপকৃত হয়েছেন ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৯ জন উদ্যোক্তা (ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়)।

তবে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের ঋণের যে সুদ আসছে এর ৫০ শতাংশ সরকার নিজেই ভর্তুকি হিসাবে পরিশোধ করছে। বাকি ৫০ শতাংশ পরিশোধ করছেন উদ্যোক্তারা। ফলে এ খাতে সুদ ভর্তুকি হিসাবে সরকারকে গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এটিও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের একটি ব্যয়।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রত্যেক মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মনে করেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের আর্থিক সহায়তা ও ছাড় করা হয়েছে। অর্থ সংকটে টিকা কেনায় যাতে বাধা না হয়, সেটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যমতে, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ২৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ১২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এটি গত ১১ মার্চ পর্যন্ত ছিল ২২ কোটি ডোজ। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের ২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার, চীন থেকে ৭ কোটি ৭০ লাখ সিনোফার্ম ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার সিনোভ্যাক এবং ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২২ কোটি টিকা কেনা ও বিতরণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংকট পুরোপুরি ফুটে ওঠে। সারা দেশে দেখা দেয় নার্স ও চিকিৎসকের সংকট। রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালগুলোর। এ পরিস্থিতিতে ৪ হাজার চিকিৎসক, ১৪০০ মিডওয়াইফারি, ৮১২৮ জন সিনিয়র নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই মিডওয়াইফারি ও সিনিয়র নার্সদের বেতনভাতা চলতি জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে ২১৬ কোটি টাকা। আর চিকিৎসকের বেতন বাবদ গুনতে হবে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা প্রতিমাসেই পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যয়সহ মোট প্রয়োজন ৪১০ কোটি ১১ লাখ টাকা।

উল্লিখিত খাত ছাড়াও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা খাত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আরও বেশি মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি খাতে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের সুবিধা।

কৃষকের সারের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরও আগের দামেই সার দেওয়া হচ্ছে তাদের। সরকার এক্ষেত্রে বড় ধরনের ভর্তুকি পরিশোধ করছে। জ্বালানি তেলের মূল্য একদফা সমন্বয় করলেও আর নতুন করে বাড়েনি।

অর্থনীতি

ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত মার্চ মাসের রপ্তানি আয়ে আগের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রয়েছে; আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হযেছে ৫৫ শতাংশ।

সাম্প্রতিক কয়েক মাসের ইতিবাচক ধারা বজায় রেখে সবশেষ মার্চের ৩১ দিনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

মার্চের এ উচ্চ প্রবৃদ্ধি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের মোট রপ্তানির ঝুড়িকেও বেশ শক্তিশালী করেছে। এ সময়ে মোট তিন হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৮৯৪ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি হয়।

ইউরোপের দেশ ইউক্রেইনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্ব বাণিজ্যে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়; আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা সামনে আসে। তখন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানিখাত আক্রান্ত হওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

যুদ্ধের মাসেও রপ্তানি ইতিবাচক থাকার বিষয়ে বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার বাজারে সরাসরি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। তবে ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলে রপ্তানি স্বাভাবিক থাকায় রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে।

“কোভিডের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর বাংলদেশে প্রচুর ক্রয়াদেশ এসেছে। সেই হিসেবে আগামী জুন পর্যন্ত রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু সম্প্রতি গ্যাস সঙ্কট ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের মার্জিন কমে গেছে।”

ইপিবির সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বরাবরের মত রপ্তানিতে পোশাকের আধিপত্য বজায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে তিন হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।

পোশাক ছাড়াও এসময়ে ১১৫ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে; যাতে প্রবৃদ্ধি রয়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি।

তবে গত কয়েক মাসের মত রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে পাটখাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ পিছিয়ে আছে। পাট ও পাটজাত পণ্য খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৯৫ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য।

অর্থনীতি

রোজার মাসকে সামনে রেখে প্রবাসীরা চলতি বছরের মার্চ মাসে ১৮৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত আট মাসের মধ্যে পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের পরে এটাই সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৪৯ কোটি ডলার, যা মার্চ মাসের চেয়ে ৩৭ কোটি ডলার কম। গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহী করতে সরকার প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ করেছে। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর টানা এক বছরেরও বেশি সময় বৈধপথে রেমিট্যান্স বেড়েছিল।

তবে গত ছয়মাস সেই ধারার পতন হলেও আবারও রোজার ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

অর্থনীতি

মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের গতি বাড়াতে নেওয়া উদ্যোগে দাতাদেশ এবং সংস্থাগুলোর কাছ থেকে গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসের তুলনায় ঋণ এবং অনুদানের অর্থছাড় প্রায় ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাতাদেশ ও সংস্থা মিলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৫৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের ঋণ ও অনুদান ছাড় করেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাস পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার এই ছাড় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ বা ২১৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার বেশি।

গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিভিন্ন দাতাদেশ এবং সংস্থা মিলে মোট ৩৭৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড় দিয়েছিল।

ফাইল ছবিফাইল ছবিইআরডি‘র এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অনুবিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) পিয়ার মোহাম্মদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে উন্নয়ন প্রকল্পের গতি বাড়াতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “গত দুই অর্থবছরে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

“এই কারণে এবার আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বাস্তবায়নের গতি কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছি।

“এসব বৈঠকে আমরা প্রকল্প পরিচালকদের সাথে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন বা অর্থছাড়ে কোনও সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাদের জানানোর জন্য বলেছি।”

এসব কারণে এবার অর্থছাড়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা এডিবি’র অর্থায়নে চলমান বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে বৈঠকে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করেছি এবং অর্থছাড়ও বাড়ানো হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা খাতে অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেন পিয়ার মোহাম্মদ।

২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বৈদেশিক সম্পদের খাত থেকে ৮৮ হাজার কোটি টাকা গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

ফাইল ছবিফাইল ছবিতবে এ মাসের শুরুতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় তা সংশোধন করে ৭০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সে হিসাবে এ অর্থবছরে ৮০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
দাতাদের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে নতুন করে ২২ শতাংশ বেশি প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাতাদের কাছ থেকে নতুন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৪৮৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

জুলাই থকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয় এই প্রতিশ্রুতি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩৯৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছিল।

এদিকে চলতি অর্থব্ছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে পুঞ্জীভূত পাওনা থেকে দাতাদের মোট ১৩৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয় ১১৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা।