অর্থনীতি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ১৫ অক্টোবরের পর খুলে দেওয়া হবে।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার বিষয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক ভার্চ্যুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সভায় যুক্ত ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মো. মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, করোনা বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবিরসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সভার ৫ দফা সিদ্ধান্ত
১. যদিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায় তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে শিক্ষার্থীরা পারিবারিক পরিমণ্ডলে কোলাহলের মধ্যে থাকে, এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি সংখ্যা বিবেচনা করা যায় কিনা সে বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে।

২. যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান করে রেখেছে তারপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে এ রি-ওপেনিং প্ল্যানকে আগামী সাতদিনের মধ্যে চূড়ান্ত করবে।

৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তার জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং সেল গঠন করবে এবং প্রতিদিন প্রতিবেদন তৈরি করবে। আগামী সাতদিনের মধ্যে মনিটরিং প্রতিবেদন তৈরি করার একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আগামী সাতদিনের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের যে সমস্ত শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছে, টিকাগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেনি কিন্তু শিক্ষার্থীর এনআইডি আছে, যাদের এনআইডি নেই কিন্তু তাদের বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে এবং যাদের বয়স এখনও ১৮ হয়নি তাদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাদের এনআইডি নেই কিন্ত তাদের বিয়স ১৮ এর ওপর তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে। তারপর সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর টিকাগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। টিকা পাওয়া শিক্ষার্থীদের শরীরে এন্টিবডি হওয়ার জন্য ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।  তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

৫. আগামী ১ সেপ্টেম্বর আবার যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং তা গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

অর্থনীতি

অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম মাইলফলক হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) প্রথমবারের মত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪ লাখ ৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। করোনার এই কঠিন সময়ে এটাকে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ার অর্থ হলো দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব। ব্যাংকাররা বলছেন, সংকটে পড়লে এ রিজার্ভ অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে কাজে দেবে। আমদানি দায় মেটাতে সমস্যায় পড়তে হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় চার লাখ আট হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের অর্ধেকের বেশি। চলতি বছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র অনুযায়ী, দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে এ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে। স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও ডলার এ তিন ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। এই অর্থ বিভিন্ন দেশের বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করা হয়। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচাও করে বাংলাদেশ।

অর্থনীতি

বৈশ্বিক মহামারি করোনার আঁচ লেগেছে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক অগ্রগতির মাইলফলকে। এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বের সেরা ১০০ কনটেইনার পোর্টের তালিকায় ৯ ধাপ পিছিয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরটি।

মেরিটাইম বিশ্বে মর্যাদার আসনে থাকা লন্ডনভিত্তিক শিপিংবিষয়ক বিশ্বের প্রাচীনতম সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টে ২০২১ সালের ব্যস্ত বন্দরগুলোর তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। ২০২০ সালের বন্দরের হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন সূচকের ওপর ভিত্তি করে এ তালিকা তৈরি করে লয়েডস লিস্ট। ২০২০ সালে এ তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৫৮তম।

সোমবার (২৩ আগস্ট) দিনগত রাতে তালিকাটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

লয়েডসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে ৬৩ কোটি ২০ লাখ একক কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। যা ২০১৯ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কম। আর একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন কমেছে ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের আমদানি রফতানির কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। এর আগে ৭ বছর বৈশ্বিক ক্রমতালিকায় এগিয়ে যাওয়ার পর এবার করোনার কারণে হোঁচট খেল বন্দর। ২০১৩ সালে কনটেইনার পরিবহনে বিশ্বে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল ৮৬তম।

লয়েডস লিস্টের তালিকায় বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে চীনের সাংহাই। এর পরের অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর বন্দর।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, লয়েডস লিস্টে ৯ ধাপ পিছিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এটা বন্দরের সক্ষমতার অভাব বা গাফিলতি নয়। ২০২০ সালে করোনার প্রথম ধাক্কাতে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের বড় বড় বন্দর, উন্নত দেশ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। মেরিটাইম বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছিল। তখনো চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন সচল ছিল। আশাকরি বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর সেরা ১০০ কনটেইনার পোর্টে সামনে অনেক এগিয়ে আসবে।

অর্থনীতি

দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায়ের জন্য একটি কোরীয় কোম্পানিকে কাজ দিচ্ছেন সরকার।

অর্থনীতি

ডিপোর ভেতরে ট্রায়াল শেষে হয়েছে। এখন চলতি মাসেই ভায়াডাক্টে উঠবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল।

ফলে মেইন লাইনে মেট্রোরেল চলাচল দেখবে নগরবাসী। অপেক্ষা করতে হবে মাত্র ১০ দিন। ভায়াডাক্টে ধীরে ধীরে চলবে মেট্রোরেল। এর পরে ১১০ কিলোমিটার গতি দিয়ে চালানো হবে। এরপরে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে স্বপ্নের মেট্রোরেল।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, চলতি মাসে ভায়াডাক্টের উপরে উঠবে মেট্রোরেল। এ ট্রায়াল রান খুব শতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা হবে। এরপরে গতি দিয়ে চলবে ১১০ কিলোমিটার। এর পরেই যাত্রীসহ ট্রায়াল রান শুরু হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেভাবে শুরুটা করে আমরাও একই পদ্ধতি ফলো করবো।

‘বার বার করোনার ধাক্কা সামলেও সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে কাজ। প্রথম নয়টি স্টেশনের অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ। প্রথম পাঁচটিতে বসেছে শেড। তিনটিতে বসানো হয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। জুলাই শেষে সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ’

তিনি আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য যে অগ্রগতি সেটা ৮৭ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অগ্রগতি এটা ৬৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আমাদের ইএন্ডেম সিস্টেমের ও রোল স্টোকের যে অগ্রগতি এটা ৫৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

শুক্রবার (২০ আগস্ট) তৃতীয় ও চতুর্থ কোচের সেট জেটি ঘাট থেকে দিয়াবাড়ীর ডিপোত নেওয়া হয়েছে। ছয়টি বগির সেট নিয়ে ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পাড়ি দেয় বিদ্যুৎচালিত এ ট্রেন। ফলে ২৪ সেট ট্রেনের মধ্যে চার সেট এখন দেশে। এভাবে জাপান থেকে আসবে আরও ২০ সেট।

মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল, ওয়াশিংসহ প্রতিটি কোচের ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপরই কোচগুলো লাইনে তোলা হবে। এ কাজে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। সব মিলিয়ে ২৪ সেট ট্রেনের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

অর্থনীতি

করোনার কারণে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।  এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই।  বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে (মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।

এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।  সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ল ১০ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মোট ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।  যা মোট প্রদান করা ঋণের ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

গত মার্চের শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা।  তার আগে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অর্থনীতি

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব কটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। সেই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।

গতকাল লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। শুরুতে মূল্যসূচকের উত্থান হওয়ায় নতুন মাইলফলকে পৌঁছে যায় শেয়ারবাজার। প্রথমবারের মতো ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৬ হাজার ৭০০ পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে। লেনদেনের শেষ দিকে এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরো বাড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা সূচকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অবস্থান।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ইসলামি শরিয়াহর ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ দুটি সূচকও এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সব কটি মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামও বেড়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২০৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২ হাজার ৬৬১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৪৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের ৯০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে—সাইফ পাওয়ার টেক, মালেক স্পিনিং মিলস, কেয়া কসমেটিকস, ইসলামীক ফাইন্যান্স, বিডি ফাইন্যান্স, ড্রাগন সোয়েটার ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৩৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৬টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

অর্থনীতি

মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আরোপিত ‘বিধি-নিষেধ’ তুলে নেওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের ভাসমান হাট-বাজারগুলো ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যটকদের সংখ্যাই বেশি।

এ পর্যটকদের ঘিরে অনেকটাই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বরিশালের পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িয়ানা ও ঝালকাঠির ভীমরুলির ভাসমান বাজার এবং আশপাশের কাদি কাটা পেয়ারা-আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন সবজির বাগানগুলো।

তবে, পর্যটক বাড়লেও এখনো ক্রেতাদের সংকট রয়েই গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। ফলে লেবু ও পেয়ারার মৌসুম চললেও পাওয়া যাচ্ছে না আশাব্যঞ্জক দাম।

আর স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন, সড়কপথে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে রপ্তানি বাড়বে এবং কৃষকও ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

স্থানীয়রা জানান, লকডাউন তুলে নেওয়ার পর শুক্রবার (১৩ আগস্ট) ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভাসমান পেয়ারা হাট ও বাগানের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে আটঘর-কুড়িয়ান ও ভীমরুলিতে আসেন। এতে কাঠের নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে জীবন্ত হয়ে ওঠে এসব এলাকার খাল ও শাখা নদীগুলো। তবে, সেদিনও আশানুরূপ দাম ওঠেনি পেয়ারার। স্থানীয় কৃষক উজ্জ্বল জানান, করোনাকালে এ অঞ্চলে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে যায় আর লকডাউনে দূরের ক্রেতা ছিলোই না। স্থানীয় ক্রেতারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী পণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছেন। তাই দামও ছিলো স্থানীয় ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে স্থানীয় পাইকার বিজয় শাওজাল বলেন, ছোট পুঁজি নিয়ে স্থানীয় পাইকাররা ব্যবসা করেন। আর দূরের ব্যবসায়ীদের লগ্নি (সুদ) বেশি থাকে। তাই তারা যেভাবে পণ্য কিনতে পারেন, স্থানীয় পাইকাররা সেভাবে পারেন না। আবার লকডাউনের মধ্যে স্থানীয় পাইকারদের যানবাহন ম্যানেজ করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। সড়ক পথের ঝামেলায় অনেকের পণ্যে মাঝপথেও পচন ধরেছে, লোকসান হয়েছে।

এ করোনার মধ্যে সবমিলিয়ে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে সেটা সঠিকভাবে সঠিক সময়ে বাজারে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় বেশি তা কেউই কিনতে চায়নি।

তবে, লকডাউন উঠে যাওয়ায় এখন ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাসমান এসব বাজারে আসা কৃষকের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তিন জেলা বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের প্রায় ৫৫ গ্রামে কাদি কেটে বিশেষ ধরনের ফসলের ক্ষেত তৈরি করে পেয়ারার চাষ করা হয়। সেসঙ্গে বোম্বাই মরিচ, লেবু, আমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলেরও আবাদ হয়। আর এসব ফসল আশপাশের ভাসমান হাট-বাজারেই বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে এসব অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র পর্যন্ত তিনমাস ভাসমান বাজারে পেয়ারার দাপট থাকে। যে কারণে মহামারি আর লকডাউন কাটিয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলিসহ বিভিন্ন খালের ভাসমান হাটে পেয়ারায় সয়লাব।

ভীমরুলির হাটে জাত, আকার ও ধরন বুঝে দেশি পেয়ারা মণপ্রতি তিনশো থেকে ছয়শো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জাত ও সাইজ অনুযায়ী ৮০ পিস লেবু বিক্রি হচ্ছে দেড়শ থেকে চারশো টাকায়। একই ধরনের দামে ভীমরুলির পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারেও পেয়ারা ও লেবু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভাসমান বাজারে এখন আমড়া, বোম্বাই মরিচ, কলা, পেঁপে, কচু, কাঁকরোলসহ বিভিন্ন সবজি পাওয়া যাচ্ছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, চাষিরা যে আবাদে লাভবান বেশি হবেন, তাতেই তো আগ্রহী হবেন। ফলে এ এলাকায় কাদি কেটে পেয়ারা, আমড়া, লেবু চাষে কৃষকরাও ঝুঁকছেন বেশি।

আর এসব দেশীয় ফল, সবজি শুধু খেতেই ভালো তা নয়, প্রচুর পুষ্টিগুণও রয়েছে বলে জানিয়ে নেছারাবাদের কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, উৎপাদিত ফসলের গুণগতমানের জন্য এ অঞ্চলের প্রতিটি বাজার বেশ জনপ্রিয়, সেসঙ্গে দেখার মতোও। গাছপালা ঘেরা শাখা নদী ও খালের ওপর সবুজ ফসলভর্তি নৌকাগুলো দেখলেই প্রকৃতিপ্রেমীর মন মিশে যাবে ঘন সবুজের ছায়ায়।

ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহিম মিয়া বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পেয়ারার ভরা মৌসুম। তাই এ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভাসমান পেয়ারা হাট-বাগান ও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে এ অঞ্চলে আসেন। তবে করোনার কারণে এবারে দূরের পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা কম।

অর্থনীতি

চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে সরকার। দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। আগে আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। তবে এই সুবিধা তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।

করোনার মধ্যে চালের দাম ঊর্ধ্বগতিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক কমানোর পরিপত্র জারি করেছে।

এতে বলা হয়, চাল আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে ১০ শতাংশ এবং শর্ত সাপেক্ষে সমুদয় রেগুলেটরি ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের বাজারে প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি শুল্ক কমানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় আমাদের অনুরোধ করেছে। ওই অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা এই পরিপত্র জারি করেছি।

অর্থনীতি

বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ের বাণী আউড়াচ্ছিলেন, সেই তখনই, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মাটি আর মানুষের শক্তিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীনতার পর চার বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ঘাতকের হাতে প্রাণ দিতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু সেই সেই সময়ের মধ্যেই নবগঠিত দেশকে মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে বড় কাজগুলোর সূচনা করে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশকে কীভাবে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন জাতির পিতা? কী ছিল তার অর্থনৈতিক দর্শন?

বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের ভাষায়, সত্তরের দশকের সেই বিশ্ব বাস্তবতায় এই বাংলার একজন সমাজতন্ত্রী না হয়ে ‘একজন প্রয়োগবাদী সাহসী অভিভাবক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

“তাই সংবিধানের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সম্পদের মালিকানার ধরন হবে রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত এবং সমবায়ভিত্তিক। কাজেই তিনি বাংলাদেশি ধারায়, বাঙালি গণমানুষের উপযোগী সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন এবং সেই বিশ্বাসে অটল ছিলেন।”

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে বুধবার এক ভার্চুয়াল সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছিলেন ফরাসউদ্দিন। সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল- ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন: শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ’।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ছিলেন আলোচকদের মধ্যে।

মূল প্রবন্ধে ফরাসউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালেই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র করার দৃঢ় সংকল্পের কথা বলেছিলেন কবি অন্নদাশঙ্কর রায়কে।

১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরুর পর নানা বিষয়ে মতদ্বৈততা ও বিতর্ক এমনিতেই ছিল। তার মধ্যে ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের পর মাওলানা ভাসানী সমাজতান্ত্রিক ধারা নিয়ে দল থেকে আলাদা হয়ে যান। কিন্তু মূল ধারায় সোহরাওয়ার্দীকে সামনে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ধারাটি শক্তিশালী করেন।

ফরাসউদ্দিন বলেন, “১৯৬০ এর দশকে ধনতান্ত্রিক বিশ্বে যখন ইনকিলাব ও দুনিয়ার মজদুর এক হও স্লোগানে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠল, তখন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সক্ষমতা মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত। সেই প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং ও বীমা খাতকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়।

“পাকিস্তানের লজ্জা হতে পারে যে এখন প্রতিবছর বাংলাদেশে সাড়ে এগার হাজার কোটিপতি তৈরি হচ্ছে, এবং ৪৩ হাজার অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের কাছে ব্যাংকের অর্ধেক আমানত জমা থাকছে।”

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর ৮ জানুয়ারি সে দেশের কারগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। লন্ডন হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে ৩২ নম্বরে নিজের বাসায় না গিয়ে বঙ্গবন্ধু সরাসরি চলে যান তখনকার রেসকোর্স ময়দানে। লাখো জনতার উদ্দেশে সেদিন ভাসন দেন জাতির পিতা।

সেদিনের কথা তুলে ধরে ফরাসউদ্দিন বলেন, “ওই দিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা বোনেরা কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবকরা কাজ না পায়।

“বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আজ থেকে যেন লুটতরাজ না হয়, চুরি ডাকাতি না হয়।… এটাই কিন্তু জাতির পিতার আজীবনের সাধনা, আত্মত্যাগের রাজনীতির উপজীব্য এবং মোটাদাগে অর্থনীতির দর্শন।”

ফরাসউদ্দিনের ভাষায়, এই দর্শনে সমাজ সংস্কারের সুষম এবং সমতা প্রবণ জাতিগোষ্ঠী গড়ার প্রত্যয় ফুটে উঠে। ‘সবার সাথে সখ্য, কারও সাথে বৈরিতা নয়.- এই ঘোষণা দিয়ে কোনো সামরিক ব্লকে না গিয়ে বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে থাকার সাহসী পথ নেন। তার সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববাসীর শুভকামনা পেতে বিরাট অবদান রাখে।

“তিনি কখনো ধনতান্ত্রিক অবাধ বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি অনেকটা বিশ্বাস করতেন ব্যক্তি খাত থাকবে, কিন্তু একটি কাঠামোগত পরিমণ্ডল সেখানে নিয়ামক ব্যবস্থা থাকবে। তিনি মানুষে মানুষে, নারী পুরুষে, ধনী নির্ধনে, গ্রামে শহরে বৈষম্য পরিহারের কথা বলেছেন।”

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাবেক গভর্নর বলেন, “ওই দলিলে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে বিত্তবানদের ওপর অধিক কর ধার্য করে সেই অর্থ দিয়ে বিত্তহীন এবং দরিদ্রদের কল্যাণে নানা অর্থনৈতিক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।

“সমবায়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছেন, ‘আসুন সমবায়ের জাদুস্পর্শে সুপ্ত গ্রামগুলোকে জাগিয়ে তুলি। নব সৃষ্টির উম্মাদনায় জীবনে জয়গানে তাকে মুখরিত করি’।”

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর তোফায়েল আহমেদ বলেন, “শোষিত মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন।”

দরিদ্র মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ‘অপরিসীম ভালবাসার’ কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, “বঙ্গবন্ধু তার প্রত্যেক ভাষণে বলতেন, ‘আমার গরীব ‍দুঃখী মানুষ। তারা যদি হাসিমুখে বাঁচতে না পারে, তাহলে আমার এই রাজনীতি করার কোনো অর্থ হয় না।’”

তিনি বলেন, ১৯৭০ এর নির্বাচনের সময় যে ১১ দফা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ব্যাংক, বীমা, পাটশিল্প ও বস্ত্রখাত জাতীয়করণের কথা বলা হয়েছিল।

“দরিদ্র মানুষকে তার ন্যায্য পাওনা দেওয়ার জন্যই বঙ্গবন্ধু এসব করতে চেয়েছিলেন,” বলেন তোফায়েল।

সালমান এফ রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করার পর একটি সাম্যের অর্থনীতি করতে চেয়েছিলেন।… দেশের অর্থনীতি কীভাবে চলবে তার একটি নীল নকশা করে গিয়েছিলেন। সেই নকশা অনুযায়ীই এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন ও দেশ পরিচালনা করছেন “

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আরও আগেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাত বলে সালমান এফ রহমানের বিশ্বাস।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করছেন। তার দেখানো পথেই তিনি হাঁটছেন।”

এফবিসিসিআই এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সঞ্চালনায় এ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।

এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি একে আজাদ, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।