অর্থনীতি

চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট কনটেইনার জট নিরসনে সকল আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণত আমদানি পণ্যের মধ্যে ৩৮ ধরণের পণ্যবাহী কন্টেইনার বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে (অফডক) নিয়ে রাখা হয়। জাহাজ থেকে ওই সকল পণ্যবাহী কনটেইনার অফডকে নেয়ার পর আমদানিকারকগণ অফডক থেকে পণ্যের খালাস নেয়।

কিন্তু ঈদুল আজহা এবং কঠোর লকডাউনের প্রেক্ষিতে বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস ন্যূনতম পর্যায়ে পৌঁছায় বন্দরের জেটিসমূহে কনটেইনারের স্তূপ পড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে প্রতিদিন ৫ হাজার কনটেইনার খালাস হয়ে থাকে তার স্থলে বর্তমানে ৫০০ কনটেইনার প্রতিদিন খালাস হচ্ছে।

বিশেষ করে গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানাসহ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিল্পের কাঁচামালসহ অন্য সকল পণ্য আমদানি হলেও আমদানিকারকগণ তা খালাস নিচ্ছে না। এতে করে পূর্বের এলসি অনুযায়ী পণ্য আমদানি হলেও প্রতিদিন তা জমে ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে কনটেইনার সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার রাখা সম্ভব। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে তা পরিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গতকাল রবিবার থেকে আমদানি পণ্যবাহী সকল কনটেইনার স্থানীয় পর্যায়ে থাকা ১৮টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সকল আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার অফডকসমূহে পাঠানো যাবে। গতকাল রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ মেরাজ উল আলম সম্রাট স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, অফডক সমূহে স্থানান্তরের সময় শতভাগ কন্টেইনার স্ক্যানিং করতে হবে। অফডকে স্থানান্তরিত পণ্যবাহী কনটেইনার কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

অর্থনীতি

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে আগামীকাল শুক্রবার ( ২৩ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে দেশব্যাপী শুরু হবে কঠোর বিধিনিষেধ। যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তবে এই সময়েও ব্যাংক খোলা থাকবে। লেনদেন চলবে সীমিত সময়ের জন্য। ঈদের ছুটি শেষে আগামী রবিবার (২৫ জুলাই) ব্যাংক খোলা থাকবে। যেখানে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত।

কঠোরতর বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখা নিয়ে ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে বলা হয়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত বিধিনিষেধ চলাকালে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই সময়ে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পরিপালন করে সীমিত সংখ্যক লোকবলের মাধ্যমে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জরুরি বিভাগসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক শাখা খোলা রাখতে পারবে ব্যাংকগুলো। শাখা খোলা রাখার ব্যাপারে বলা হয়েছে, নিজ বিবেচনায় খোলা রাখা যাবে।

এই সময়ে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ সার্বক্ষণিক সেবা চালু রাখতে হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে ব্যাংকের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কার্যালয়ে যাতায়াতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

অর্থনীতি

মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসার বাইরে যাচ্ছেন না। ঈদের দিন সালামিতে সব সময়ের মতো নতুন টাকার চাহিদা এখন আর নেই।

তবে ভোক্তার চাহিদা বাড়বে এই আশায় গুলিস্তানের মোড় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বসেছে নতুন নোটের বাজার।

রাজধানীর নতুন নোটের বাজার গুলিস্তান মোড়  ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ফুটপথে টুলের ওপর নতুন নতুন নোট সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি দোকানে। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা।

রাশেদুল হক নতুন টাকা কিনতে এসেছেন গুলিস্তানের মোড়ে। তিনি বলেন, আমি ১০ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল কিনেছি ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। তার অল্প কিছুক্ষণ আগে আরেক ক্রেতা ১০ টাকার ১০০টি নোটের একটি বান্ডিল কিনেছেন ১ হাজার ১৮০ টাকা দিয়ে। ১০ টাকার নতুন নোটের ১০০টির দাম একটু বেশি। কারণ অন্যান্য নোটের তুলনায় ১০ টাকার নোটের চাহিদাও বেশি।

এ বিষয়ে নতুন নোট বিক্রেতা রাজিব হোসেন বলেন, আমরা নতুন নোট যে দরে কিনে আনি তার সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেশি পেলেই বিক্রি করে দিচ্ছি। আবার ১০০ টাকার নোটের বান্ডিলে বেশি নেওয়া হয় সর্বোচ্ছ ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে নতুন নোট বিনিময় কমে গেছে গত বছর থেকেই। প্রয়োজন ছাড়া কেউ আসে না নতুন নোট কিনতে। দুই বছর আগে যে পরিমান নতুন নোট বিক্রি হতো করোনার পর থেকে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

আরিফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ৫০ টাকার নোটের ১০০ টির একটি বান্ডিল ৫ হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিনিময় হচ্ছে। ২০ টাকার নোটের ১০০ টির একটি বান্ডিল ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২০১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ৫০০ ও ১০০০ টাকার একশটির এক বান্ডিলের বিনিময়ের জন্য দিতে হচ্ছে বাড়তি ২০০ টাকা। ২ ও ৫ টাকার নতুন নোট সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থেকে ঈদের আগে নতুন নোট বিনিময় করা হলেও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নতুন টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের করে বিক্রি করা হচ্ছে গুলিস্তানের মোড় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বট তলায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলায় নতুন টাকার বিনিময়কারী আবদুল আলীম বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা খুব খারাপ। গেলো বছর করোনার সময় থেকে শুরু হয়েছে এই অবস্থা। সাধারণ সময়ে যে পরিমান নতুন নোট বিনিময় হতো এখন তার চেয়ে অল্প কিছু বেড়েছে। বিগত সময়ে ঈদের আগে পরিমান নোট আমরা বিনিময় করেছি তা অর্ধেকে নেমে এসেছে করোনাকালীন ঈদে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পুলিশ বক্সের সামনে নতুন নোট বিক্রিতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। মাঝে মধ্যে এসে উঠিয়ে দিলেও কিছুক্ষণ পরে আবারও পসরা সাজিয়ে বসে যাচ্ছেন বিক্রেতারা। চলছে বেচাকেনা।

এদিকে ঈদের আগে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে নতুন টাকা দেওয়া হলেও সেখানে ৫শ ও ১ হাজার টাকার নোট দেওয়া হয়। আর ক্রেতাদের অধিকাংশেরই চাহিদা রয়েছে ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোটের। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলা ও গুলিস্তানের মোড়ই একমাত্র ভরসা ঈদের আগে নতুন নোট প্রত্যাশীদের।

অর্থনীতি

আমের রপ্তানি বাড়াতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, দেশের আমকে আমরা ব্যাপকভাবে বিশ্ব বাজারে নিয়ে যেতে চাই।

সেজন্য রপ্তানি বাধাসমূহ চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দিতে তিনটি ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। উৎপাদন থেকে শিপমেন্ট পর্যন্ত আম নিরাপদ রাখতে উত্তম কৃষি চর্চা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজ চলছে। এর ফলে আগামী বছর আম রপ্তানির পরিমাণ অনেক বাড়বে।
রোববার (১৮ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে ভার্চ্যুয়ালি ‘আম রপ্তানি বাড়াতে করণীয়’ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ড. রাজ্জাক বলেন, এ বছর আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি ‘লকডাউন’ এবং বাজার না থাকায় চাষিরা আম বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছে ও আশানুরূপ দাম পায়নি। সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি যেতে হবে। যাতে চাষিরা আশানুরূপ দাম পায় ও আম চাষে আরও আগ্রহী হয়।

তিনি আরও বলেন, আম বাংলাদেশের একটি উচ্চমূল্যের অর্থকরী ফসল। বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, আমের উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে প্রতিবছর আমের উৎপাদন বাড়ছে। আম রপ্তানির সম্ভাবনাও অনেক। কিন্তু রপ্তানিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। অনেক দেশ বাংলাদেশের চেয়ে কম উৎপাদন করেও রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, দেশে প্রতিবছর আমের উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে আম উৎপাদনে সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হলেও এর পরিমাণ উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম। ২০১৯-২০ সালে দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হলেও রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২৭৯ মেট্রিক টন। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে থাইল্যান্ড সর্বোচ্চ ৭৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আম রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও পাকিস্তান ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আম রপ্তানি করেছে। সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৫০ হাজার ডলারের আম রপ্তানি করেছে।

আম রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চার অভাব, রপ্তানিযোগ্য উন্নতজাতের অভাব, সেলফ লাইফ কম, সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে শনাক্তকরণের অভাব, আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিংয়ের অভাব, ব্র্যান্ডিং ইমেজ সৃষ্টি না হওয়া, রপ্তানি কার্যক্রমে দক্ষতা, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের অভাব প্রভৃতি। সেজন্য আম রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধান, রপ্তানি চাহিদা অনুযায়ী জাত নির্বাচন, ফাইটোস্যানিটারি পদ্ধতি ও আমদানিকারক দেশের উত্তম কৃষি চর্চা মেনে আম উৎপাদন, সার্টিফিকেশন, উন্নত প্যাকিং, বিমান বন্দরে কার্গো ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।

এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থাপ্রধান, আমচাষি, ব্যবসায়ী, শাকসবজি ও ফল রপ্তানিকারক এবং প্রাণ গ্রুপ, স্কয়ার ফুড, এসিআই, আকিজ ফুড, ব্র্যাক ডেইরিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

ঈদ সামনে রেখে ১৭ লাখেরও বেশি পরিবারে এখন উপচানো আনন্দ। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনার ৪৩২ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বৃহস্পতিবার ১৭  লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন শ্রমিক জনপ্রতি দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়ে গেছেন। বেশির ভাগ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এবং কিছু টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেওয়ার পরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। সে অনুযায়ী কিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। যোগ্য সবাইকে টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থের সংস্থান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পাঁচটি প্যাকেজে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। পাঁচ প্যাকেজের প্রথমটি ছিল দুই হাজার ৫০০ টাকা করে নিম্ন আয়ের মানুষকে নগদ সহায়তা। মোট ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, নৌপরিবহন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবারই ১৭ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে সহায়তার টাকা পৌঁছে দিয়েছে। অর্থাৎ বাদ পড়েছে চার হাজার ২৫৬ জন। যাঁরা টাকা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে দিনমজুর ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন, পরিবহন শ্রমিক দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৩২ জন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫০ হাজার ৪৪৫ জন ও নৌপরিবহন শ্রমিক এক হাজার ৯৪৮ জন।

এঁদের বেশির ভাগ টাকা পেয়েছেন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে। বাকিদের টাকা গেছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। নগদ, বিকাশ ও রকেট তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৬ জনকে টাকা পাঠানো হয়েছে। আর ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৫৮৮ জন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যাঁদের টাকা পাঠানো হয়েছে, তাঁদের টাকা তোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা যেন না হয় সে জন্য খরচসহ পাঠানো হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯০ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন দিনমজুর দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন। এখানে সংখ্যায় কোনো হেরফের হয়নি। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩৬১ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার ২৯৫ টাকা। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৫৩ জনকে দুই হাজার ৫১৫ টাকা করে ৩৪৯ কোটি ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ২৯৫ টাকা পাঠানো হয়েছে। আর ৪৭ হাজার ৫৩৬ জন দিনমজুরকে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।

দুই লাখ ৩৫ হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিককে টাকা পাঠানোর কথা থাকলেও বাদ গেছে চার হাজার ৬০১ জন। টাকা পেয়েছেন দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৩২ জন পরিবহন শ্রমিক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫১০ টাকা পেয়েছেন। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছয় হাজার ৯৯৮ জন ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিবহন শ্রমিককে নগদ সহায়তা বাবদ সরকারের ব্যয় ৫৭ কোটি ৯৪ লাখ ৩১ হাজার ৫১০ টাকা।

৫০ হাজার ৪৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে ৪৯ হাজার ৩৯১ জনকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১২ কোটি ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৫ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর এক হাজার ৫৪ জনকে দুই কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। সরকারের ব্যয় ১২ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৫ টাকা।

এদিকে নৌপরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা শেষ দিকে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় এক হাজার ৬০৩ জনের কথা বলা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এক হাজার ৯৪৮ জনকে টাকা পাঠিয়েছে। এঁদের সবাইকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে চার কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার ২২০ টাকা পাঠানো হয়েছে।

দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, নৌপরিবহন শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পাঠানোয় সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪৩২ কোটি ৫৫ লাখ চার হাজার ৩৯০ টাকা। এ টাকা চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত অর্থবছর কর্মহীন, অতিদরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিতে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ দুই হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৮৭৫ কোটি টাকা।

অর্থনীতি

ঈদ উদযাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ অনুদান সংক্রান্ত চিঠি দু’মাসেরও বেশি সময় সদস্যদের মাধ্যে গোপন রাখায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী পরিষদের এক সভায় এ ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। সভায় বলা হয়, করোনা আক্রান্ত সাংবাদিকদের চিকিৎসা সহায়তা এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিএফইউজের সভাপতিকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও তা

ডিইউজেসহ বিএফইউজের আওতাধীন কোনও ইউনিয়নকে অবহিত বা এ সংক্রান্ত অনুদান বিতরণের কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সভায় আরো বলা হয়, সাম্প্রকিকালে ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হলে সাংবাদিক অন্তঃপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন একটি মহতী উদ্যোগ নিয়ে নানামহল থেকে বিভ্রান্তি ও ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়। প্রায় দু’মাস আগে টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত ডিইউজের সদস্যরা ঈদ অনুদান থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তাই ঈদুল আজহারের আগেই ডিইউজের সদস্যদের মাঝে ঈদ অনুদান বিতরণের জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট ও বিএফইউজের প্রতি জোরালো দাবি জানানো হয়।

১০ কোটি টাকা সাংবাদিকদের করোনা দুর্যোগের সময় অনুদান দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়ার পর বিএফইউজের নির্বাহী পরিষদের দু’দফা অনলাইন সভা এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হলেও বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে গোপন রাখায় ডিইউজেসহ অন্য ইউনিয়নের সদস্যরা বঞ্চিত হয়েছেন। সভার অপর এক প্রস্তাবে বিএফইউজের কল্যাণ তহবিলে গচ্ছিত অর্থ এই আপদকালীন সময়ে সদস্যদের জন্যে সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। অপর এক প্রস্তাবে আসন্ন ঈদের আগে সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা ও বকেয়া পরিশোধের জন্য গণমাধ্যম মালিকদের প্রতি দাবি জানোনো হয়।

ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় সভায় সংগঠনের সহ সভাপতি এমএ কুদ্দুস, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ জিহাদুর রহমান জিহাদ, প্রচার সম্পাদক আছাদুজ্জামান, ক্রীড়া সম্পাদক দুলাল খান, জনকল্যাণ সম্পাদক সোহেলী চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য সুরাইয়া অনু, সাকিলা পারভীন, শাহনাজ পারভীন এলিস, রাজু হামিদ, ইব্রাহীম খলিল খোকন, সলিমুল্লাহ সেলিম, অজিত কুমার মহলদার, আবু জাফর সূর্য, নাগরিক টিভির ইউনিট প্রধান শাহনাজ শারমিন উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদ্য সাবেক হওয়া সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক এই বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। রবিবার (১৮ জুলাই) প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে ড. শামসুল আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে জিইডিতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেটি আমি সূচারুভাবে পালন করেছি। এখন যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখে নতুন দায়িত্ব দিচ্ছেন সেটিও যথাযথভাবে পালন করবো ইনশাআল্লাহ। আমার প্রধান কাজ হবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বৃদ্ধি করা।

ড. শামসুল আলমের হাত ধরে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন পরিকল্পনা। যেগুলো এখন চলমান। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে তার হাত ধরে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১) সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করে ‘দিনবদলের পদক্ষেপ’ ২০১১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে বাংলাদেশের প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) তৈরি করে জিইডি। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র, সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র প্রণীত হয়েছে তার সময়ে। বর্তমানে ১০০ বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষের পথে। এগুলোর বাইরে তার দায়িত্ব পালনকালে এমডিজি অর্জন বিষয়ক ১৫টি গ্রন্থ, তার তত্ত্বাবধান ও সম্পাদনায় ৬৩টি মূল্যায়ন প্রতিবেদন, অধ্যয়ন ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

ড. শামসুল আলম এ বছর সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং কর্তৃক বাংলাদেশে এ সময়ে ইকোনমিস্ট অব ইনফ্লুয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির ১৬তম বার্ষিক সম্মেলনে এ বছর তাকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি তাকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক ২০১৮-এ ভূষিত করে। তার গবেষণাগ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি। মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

অর্থনীতি

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত দ্বিতীয় জেটিতে জাহাজ ভিড়েছে। জেটি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে মাতারবাড়ীতে একসাথে দুটি জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ তৈরি হলো। এতে করে আগের চেয়ে বেশি পণ্য উঠানামা করা সম্ভব হবে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা আশা করছেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ‘হরাইজন ৯’ নামে পানামার পতাকাবাহী ১২০ মিটার দীর্ঘ এবং ৯ মিটার গভীরতাসম্পন্ন জাহাজটি জেটিতে ভেড়ে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, মাতারবাড়ীতে দ্বিতীয় জেটি চালু হওয়ায় বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা আরো সচল হবে এবং সাথে সাথে বন্দরের সক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বর্ধিত বন্দরসীমার অংশ হিসাবে মাতারবাড়ীতে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প যার অন্যতম হচ্ছে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প। এতদিন এই কেন্দ্রের মাত্র একটি জেটি ছিল। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মাতারবাড়ি চ্যানেল দিয়ে প্রথমবারের মত বাণিজ্যিক জাহাজ প্রবেশ করে। এর মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে মাতারবাড়ী চ্যানেল। মূলত মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হেভি লিফট বা ভারী কার্গো নামানোর জন্য এই জেটি ব্যবহৃত হচ্ছিল। এরপর জুন পর্যন্ত গত ছয় মাসে ১৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে জেটিতে ভেড়ে।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাতারবাড়ী জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর সমন্বয়কারী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, এখন থেকে আমরা একসাথে দুটি জাহাজ জেটিতে ভিড়াতে পারবো যার মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শনিবার প্রথম জেটিতে আরো একটি জাহাজ ভিড়বে। ডিসেম্বর নাগাদ অপেক্ষমান না রেখেই সরাসরি আরো বেশি পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হবে ২০২৫ সালে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে এই জেটিতে। কিন্তু তার আগেই জেটিতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়েছে আড়াইশ মিটার প্রস্থ, ১৬ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করবে। গভীর সাগর থেকে জাহাজগুলো চ্যানেল দিয়ে জেটিতে প্রবেশের জন্য বসানো হয়েছে পথ নির্দেশক ছয়টি বয়া। জাহাজ প্রবেশের চ্যানেলের একপাশে নির্মিত হচ্ছে তিনটি জেটি যেগুলো ব্যবহৃত হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ সামগ্রী উঠানামার কাজে। আর আশেপাশেই গড়ে উঠবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর।

অর্থনীতি

করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে কোরবানির পশুর বাজার নিয়ে শঙ্কা ও স্বস্তি দুটিই রয়েছে। স্বস্তি হলো গত বছরের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নেই। পর্যাপ্ত গরু-মহিষ যেমন রয়েছে, তেমন হাটও হচ্ছে দেশব্যাপী। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো। তবে শঙ্কাও রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন চলছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-মহিষ আনা-নেওয়া করতে পারবে কি না, হাটে আনলে সঠিক দামে বিক্রি হবে কি না—এমন নানা ধরনের শঙ্কার কথা বলছেন প্রান্তিক চাষি ও খামারিরা।

ফলে গরু-মহিষসহ কোরবানির পশু, পশুর চামড়া, পরিবহনব্যবস্থাসহ দেশের ৭৫ হাজার কোটি টাকার কোরবানির বাজার কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে খামার মালিক, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা আশার কথাই বলছেন। তাঁদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে হাটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নিলেও পশু আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখলে গতবারের তুলনায় বাজার অনেক ভালো হবে। হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকবে, ক্রেতারাও সুবিধামতো কিনতে পারবেন। এতে কোরবানিকে ঘিরে বিপর্যস্ত অর্থনীতির গতি অনেকটাই ফিরে আসবে। এরই মধ্যে অনলাইন ও খামারগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি জমে উঠেছে। খামার পর্যায়ে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গরু বিক্রি শেষ হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে কোরবানির জন্য গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৫ লাখ থেকে এক কোটি ১০ লাখ। চলতি বছর দেশে কোরবানির যোগ্য পশু রয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ৯ লাখের বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

কোরবানির যোগ্য এসব পশুর বাজারমূল্য ৫৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে মোট পশুর মধ্যে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার রয়েছে গরু-মহিষ। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে এসব গরু-মহিষের মধ্যে ৮৫ শতাংশই ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ছোট গরু। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুসারে এসব গরু-মহিষের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। সে হিসেবে ছোট গরুর বাজারমূল্য গড়ে ৯০ হাজার টাকা হিসাবে ৩৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। বাকি বড় গরু-মহিষের বাজারমূল্য গড়ে দুই লাখ টাকা বলছেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃস্থানীয় খামারিরা। সে হিসেবে এসব গরু-মহিষের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।

প্রাণিসম্পদের হিসাবে দেশে চলতি বছর কোরবানির যোগ্য ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। বাজারদর অনুসারে ছাগল-ভেড়ার গড় বাজারমূল্য সাত হাজার টাকা। সে হিসেবে দেশে কোরবানির যোগ্য ছাগল-ভেড়ার মোট বাজারমূল্য পাঁচ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা রয়েছে।

এ ছাড়া উট-দুম্বাও রয়েছে চার হাজার ৭৬৫টি। গত বছর এসব উট-দুম্বা বিক্রি হয়েছে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকায়। সে হিসেবে উট-দুম্বার মোট বাজারমূল্য ২৩৮ কোটি টাকা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এর বাইরে রয়েছে পরিবহন ও খাদ্যের খরচ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু-মহিষ আনতে প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া দিতে হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এসব ট্রাকে ২০টি করে গরু-মহিষ আনা যায়। অর্থাৎ প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য পরিবহন খরচ পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সে হিসেবে কোরবানির পশু বেচা-বিক্রিকে ঘিরে পরিবহন খাতে লেনদেন হবে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গো-খাদ্যের বাজার রয়েছে দৈনিক ১১৩ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে কোরবানির পশু বেচাকিনিতে লেনদেন হয় প্রায় ৫৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

যদিও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরানের মতে এই সংখ্যা আরেকটু বেশি হবে এবার। তিনি বলেন, গো-খাদ্যের উপকরণের আমদানি ব্যয় বেশি। ফলে গরু মোটাতাজাকরণে চাষিদের খরচও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় সার্বিকভাবে ১০ শতাংশ বেশিতে গরু বিক্রি করতে হবে।

তাঁর মতে গরু আনা-নেওয়া যদি নির্বিঘ্ন হয়, রাস্তায় চাঁদাবাজি ও জোর করে পাইকারদের গরু পথে আটকে রাখা না হয় তবে কোরবানির পশুর বাজার খুবই ভালো হবে। তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। প্রতিবছর কোরবানির সময়গুলোতে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। রাত জেগে এসব সমস্যার সমাধান করতে হয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই কোরবানির হাটের সময়গুলোতে সরকারিভাবে একটি কন্ট্রোল রুম বা মনিটরিং সেল খুলতে হবে। যেখানে ফোন দিলে সমস্যার সমাধান হবে।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে এবার অনেকটাই গতি ফিরবে কোরবানিকে ঘিরে। কোরবানির অর্থনীতির মূল চালিকা পশু বেচাকেনা হলেও আরো কয়েকটি দিকে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চামড়াশিল্পের কর্মকাণ্ড। দেশে সারা বছরের কাঁচা চামড়ার চাহিদা পূরণ হয় মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে।

পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে চামড়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিবছর দেশে দেড় কোটিরও বেশি পশুর চামড়া পাওয়া যায়। এর বড় অংশই আসে কোরবানির পশু থেকে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের মূল বাজার চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাজারসহ এই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। এ ছাড়া ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মসলাজাতীয় পণ্যের ব্যবসাতেও ব্যাপক গতি আসে। কোরবানির বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এসব পণ্যের। কোরবানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো কামার আইটেম। ছুরি, বঁটি, দা, চাপাতি, কুড়াল, রামদা ছাড়া কোরবানিই সম্ভব নয়। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোরবানিতে এই পণ্যের বাজারও এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

আগামী ২০ কিংবা ২১ আগস্ট দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। কিন্তু এরই মধ্যে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বিক্রি। রাজধানীর আশপাশের খামারগুলোতে এরই মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ গরু বিক্রি শেষ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন। এ ছাড়া বেচাকেনা চলছে অনলাইন হাটেও।

অর্থনীতি

আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ধরনটাই চাকরিমুখী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মা-বাবার প্রত্যাশা থাকে সন্তানরা লেখাপড়া শেষ করে ভালো কোনো চাকরি করবে। আর যে পড়াশোনা করছে তারও লক্ষ্য থাকে চাকরি। পড়াশোনা শেষে নিজে উদ্যোক্তা হবে, বিশেষ করে কৃষিকাজে যুক্ত হবে, এমন ধ্যানধারণা এখনো অনেকের মধ্যেই বিরল। নওগাঁর সোহেল রানা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। গতানুগতিক চাকরির পেছনে না ছুটে, সমন্বিত বাগান গড়ে তোলেন তিনি। দেশের বাজার ছাড়িয়ে এখন যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করছেন নিজের কৃষি খামারের ‘ব্যানানা’ আম ও ‘আম্রপালি’ আম। বাগান থেকে বছরে আয় করছেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তার বাগানে বর্তমানে আম, বরই, পেয়েরা, বিভিন্ন জাতের মসলা, ফুলসহ প্রায় ৩০০ জাতের গাছ রয়েছে। নওগাঁয় অনেক তরুণ তাকে অনুসরণ করে তৈরি করেছেন এই রকম বাগান। তারাও দেখেছেন সাফল্যের মুখ।

সোহেল রানা বলেন, উচ্চশিক্ষা শেষে কৃষিতে উদ্যোগ নেওয়ায় শুরুতে মানুষ হাসাহাসি করলেও এখন আমাদের খামার দেখে অনেক তরুণ অনুপ্রাণিত হয়ে, পরামর্শ নিয়ে কৃষি কাজে এগিয়ে আসছেন। শিক্ষিত তরুণরা কৃষিতে এলে এই খাত আরো অনেক সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান নিয়ে মাস্টার্স শেষ করে সোহেল রানা ঢাকায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সাংবাদিকতা করেন কিছু দিন। এরপর ২০১৫ সালে গ্রামে ফিরে গিয়ে ছোট ভাই আব্দুল বারীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের ১২ বিঘা জমিতে শুরু করেন ‘রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম’ নামে সমন্বিত কৃষি খামার। মাত্র দুই জন স্থায়ী কর্মী নিয়ে খামার শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যান সোহেল। এখন প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে বিস্তৃত তার এগ্রো ফার্ম।

ব্যানানা ম্যাংগো বা কলা আম

রূপগ্রাম এগ্রো ফার্মের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালে সাপাহার গোডাউনপাড়া এলাকায় ৭০ বিঘা জমি লিজ নেন সোহেল। শুরু করেন ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামে আধুনিক সমন্বিত কৃষি খামার ও এগ্রো ট্যুরিজম কেন্দ্র। তার সেই খামার ভিনদেশি উচ্চমূল্যের নানা ফল উত্পাদন করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে বড় অবদান রাখছেন। এছাড়া দেশি, বিদেশি ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের পাশাপাশি পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে কাজ করছেন তিনি। কৃষির সব শাখার সমন্বয়ে ব্যাপকভাবে কৃষি পর্যটন উন্নয়নে কাজ করছেন সোহেল রানা।

নানা বয়সি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ আধুনিক কৃষি বিষয়ে বাস্তব ধারণা পাচ্ছেন বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে এসে। এছাড়া আলাদাভাবেও তিনি তিন জায়গায় যথাক্রমে ৩০ বিঘা, আট বিঘা ও ১২ বিঘার আমবাগান করেছেন।

হঠাৎ কেন কৃষির সঙ্গে নিজেকে জড়ালেন? উত্তরে সোহেল জানান, গাছপালা, বাগান করা নিয়ে তার বাবার প্রচুর আগ্রহ ছিল। তিনি বলেন, ‘বাবাকে দেখতাম হাট থেকে এবং বৃক্ষমেলা থেকে এমন কি নতুন কোথাও বেড়াতে গেলে সেখান থেকেও বিভিন্ন গাছের চারা কিনে এনে বাড়িতে লাগাতেন। এসব দেখে আমারও গাছ ও বাগানের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয় ছোটবেলায়।’ প্রধানত বাবার উত্সাহেই তিনি কৃষিকাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বলে জানান সোহেল।

আম্রপালি আমের নামকরণ যেভাবে হলো – Engineer’s Diary

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? এ প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা বললেন, ফল উত্পাদন ও রফতানির পাশাপাশি এগ্রো ট্যুরিজম বিকাশে বিশাল উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এখানে দর্শনার্থী যারা আসেন তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে বাগানে হেঁটে নানা ফলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন এ জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী রাস্তা তৈরি করে আলাদা আলাদা প্লট তৈরি করা হয়েছে। এখানে ট্যুরিস্ট এসে নির্ধারিত ফি দিয়ে গাছ থেকে নিজ হাতে ফল পেড়ে খেতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় মৌসুমি ফল পছন্দ করে সংগ্রহ করতে পারবেন। ছোট শিশু ও শিক্ষার্থীরা ফল দেখে গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। সেইভাবে গড়ে তোলার প্রত্যাশার কথা জানালেন সোহেল।

বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের বাগানে বারির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ‘গ্লোবাল গ্যাপ’ অনুসরণ করে উত্পাদিত আম্রপালি আম গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যে সফলভাবে রপ্তানি করেছেন সোহেল রানা। ইতিমধ্যে আড়াই টন আম বিলেতের বাজারে গেছে। আমের গুণমানে সন্তুষ্ট হওয়ায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার আম্রপালির পর যুক্তরাজ্যের বাজারে ৫০০ কেজি ‘ব্যানানা’ আম রফতানি করেছেন সোহেল। তিনি আশা করছেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ টন আম রপ্তানি করতে পারবেন। সাপাহার উপজেলা কৃষি অফিস এক্ষেত্রে তাকে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। এছাড়া সাপাহারে বেসরকারি সংস্থা ‘ঘাসফুল’ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পিকেএসএফ-এর সহায়তায় নিরাপদ আম উত্পাদনে এসইপি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে।

রূপগ্রাম খাড়িপাড়া এলাকায় সোহেল ৩০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম’। এখানে আম, লিচু, মাল্টা, ড্রাগন, থাই পেয়ারা, কদবেল, লেবু, কলা, ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেল চাষ হচ্ছে। রয়েছে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, দেশি মুরগির খামার। এছাড়া এখানে তুলসি, বাসক, নিশিন্দা, অ্যালোভেরা, কুসুম, পারুল, বিষজারণ, নিম, সোনালু, যষ্ঠিমধু, দইগোটা, হরিতকি, বহেড়া, আমলকি, শতমূলসহ নানা প্রজাতির ওষুধি গাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন দেশি গাছ সংরক্ষণ ছাড়াও এখানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। খামারের তিনটি পুকুরে চাষ হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। রয়েছে কবুতরসহ বাহারি পাখি।

‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ গড়ে তোলা : রূপগ্রাম এগ্রো ফার্মের চার বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সোহেল রানা নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রায় ৭০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক। এখানে বাণিজ্যিক ফল উত্পাদনের জন্য লাগানো হয়েছে গৌড়মতি, বারি-৪, আম্র্রপালি, ব্যানানা, সূর্যডিম, বারি-১১, বারি মাল্টা-১ জাতের আম। খাটো জাতের নারিকেল, অ্যাভোকাডো, ড্রাগন ফল, লংগান, ডুমুর, মালবেরি, বলসুন্দরী ও কাশ্মিরী আপেল কুল, পার্সিমন, থাই পেয়ারা।