অর্থনীতি

সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার করদাতা কালো টাকা বৈধ করেছেন। দেশের ইতিহাসে এক বছরের এত কালো টাকা আগে কখনও সাদা করা হয়নি।

বুধবার (৭ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ দফতর হতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রায় সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ টাকা সাদা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি। ব্যাংক বা নগদে রাখা এই বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করেছেন প্রায় সাত হাজার করদাতা। বাকি টাকা জমি-ফ্ল্যাট ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাবে এই তথ্য জানা গেছে। শিগগিরই চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে একাধিকবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও তা তেমন একটা কাজে লাগেনি। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩২ হাজার ৫৫৮ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছিলেন। তখন অবশ্য সাড়ে তিন হাজারের বেশি কালোটাকা সাদা হয়েছিল।

বিদায়ী অর্থবছরের মতো এত ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব একটা দেওয়া হয়নি। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে জমি-ফ্ল্যাটেও টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, জুন মাস শেষে প্রাথমিক হিসাবে করদাতা ১১ হাজার ৮৫৯ জন। তাদের প্রায় ৬০ শতাংশই নগদ টাকা সাদা করেছেন। শেয়ারবাজারে গত মে মাস পর্যন্ত ৩৮৯ জন টাকা সাদা করেছেন। জুন মাসে যারা কালোটাকা বিনিয়োগ করেছেন, তারা বিনিয়োগের এক মাসের মধ্যে জানানোর শর্ত থাকায় এখনো চূড়ান্ত হিসাব হয়নি।

অর্থনীতি

জরিমানা বাড়িয়ে এবার কালো টাকা সাদা করা বা অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আগের মতো ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে নয়, ২৫ শতাংশ কর এবং ওই করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্র কিনেও টাকা সাদা করা যাবে। একইভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে একই হারে কর ও জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাবে।

১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকায় নতুন শিল্পকারখানা করা যাবে। জমি ও ফ্ল্যাট কিনে এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাবে। আগামী ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুরো অর্থবছর জুড়ে এ সুযোগ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কালোটাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগটিও অব্যাহত রাখা হয়েছে। কালোটাকা সাদা করলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা এ নিয়ে প্রশ্ন করবে না।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১ সালের অর্থবিল পাসের সময় কিছু ধারা সংশোধন করে পাস করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময়ে দেওয়া নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা ও এফডিআর, সঞ্চয়পত্র কিনে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি ৩০ জুন, অর্থাৎ আজ শেষ হচ্ছে। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারেও একই হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আজ শেষ হচ্ছে। উল্লেখ্য এর আগে গত ৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারসহ বেশ কয়েকটি খাতে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পাস হওয়া অর্থবিলে আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে প্রশ্নাতীতভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলো।

পাশ হওয়া অর্থবিলে দেখা যায়, ২৫ শতাংশ কর ও করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটসহ পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কর এবং মোট করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা গুণতে হবে। তবে ওই টাকায় কেনা শেয়ার এক বছরের মধ্যে বিক্রি করলে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরণের সুযোগের বাইরেও আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে। এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হারে আয়কর ও জরিমানা দিয়ে যে কেউ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন তবে অর্থের উৎস জানাতে হবে।

জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার কতিপয় সংশোধনীসহ অর্থ বিল-২০২১ পাসের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এই বিল পাস হয়। অর্থবিল পাসের সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।

বিলে ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু অর্থবছরের জন্য আর্থিক বিধান, বিদ্যমান কতিপয় আইন সংশোধনসহ কর প্রস্তাবসমূহ অনুমোদন করা হয়েছে। বিল পাসের প্রক্রিয়ায় সরকারি দলের উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান, বিএনপির হারুনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন, রুমীন ফারহানা এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে সরকারি দলের সদস্যদের আনা সংশোধন প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়। বাকী প্রস্তাবগুলো কন্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।

অর্থনীতি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘোষিত লকডাউনেও সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকবে। আগামী তিন দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম আগের নিয়মে চললেও ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়মে হবে ব্যাংক লেনদেন। রবিববার (২৭ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত আগের নিয়মেই চলবে ব্যাংকিং কার্যক্রম। ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়মে ব্যাংকের লেনদেন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করবে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামীকাল সোমবার থেকে ফের লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রথম তিনদিন কিছুটা শিথিলতা থাকলেও ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে। সর্বাত্মক এ লকডাউনেও শিল্প কল-কারখানা খোলা থাকবে। এই সময়ে রপ্তানিমুখী কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে ব্যাংকিং সেবা খোলা রাখা হবে।

এর আগে রবিববার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কিছু শর্তাবলী সংযুক্ত করে ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে থেকে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।

অর্থনীতি

২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ঘোষিত বৈদেশিক আয়ের ওপর এই ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা পাবেন প্রবাসীরা।

অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত এই প্রণোদনা নিয়ে ভয় ও সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম মান্নান।

শনিবার (২৬ জুন) ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: বেসরকারি খাতের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে মন্ত্রী এই সংশয় প্রকাশ করেন। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এবং বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এম এ মান্নান বলেন, রেমিটেন্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা নিয়ে সব সময় আমার একটা সংশয় আছে। মুহিত সাহেবের (সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) সংশয় আছে ২ শতাংশ প্রণোদনা নিয়ে। তখন আমি অর্থের জুনিয়র মন্ত্রী (অর্থ-পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী) ছিলাম। আমি তখন একটা মতামত দিয়েছিলাম জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে। আমি বলেছিলাম, এটা (প্রণোদনা) ওপেন করবেন না। এটা ছোট পরিসরে আসা দরকার। ব্যাপকভাবে সমান্তরালভাবে এটা করার দরকার নেই। কারা সৌদি আরবে ২০০ থেকে ৩০০ ডলারে কাজ করেন তাদের আমরা চিনি। তাদের সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। সবাইকে না দিয়ে শুধু তাদের যদি দিতাম তাহলে অনেক ভালো হতো। তাদের ৩ শতাংশ দিলে আরও ভালো হতো। কিন্তু সবাইকে সমানভাবে প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আমার একটা বিষয়ে ভয় হচ্ছে সত্যিই একটা প্যারালাল পদ্ধতি চলছে কিনা। সবাই সমান্তরালভাবে ২ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছে কিনা এটা দেখা দরকার।

‘ইট ইজ কোভিড অ্যাফেকটেড বাজেট’ (করোনা প্রভাবিত বাজেট) মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি কয়েকটি কথা শুনেছি। কয়েক জন বলেছেন, এটা একটা কমন পয়েন্ট। ইট ইজ এ  কোভিড অ্যাফেকটেড বাজেট। এটা সত্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু আমরা নয়, সারা পৃথিবীতে একই অবস্থা চলছে।

দেশের অগ্রগতি হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, গত কয়েকদিন আমি কয়েকটি সেমিনারে যোগ দিয়েছি এবং বলছি। কোভিডের মধ্যেও আমরা ভালো করেছি। আইএমএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ভালো করছি। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের থেকেও অনেক সূচকে আমরা এগিয়ে। এটা আমাদের অনেক বড় ক্রেডিট।

কৃষি খাতের অবদান তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, আমাদের অগ্রগতির কেন্দ্রীয় পিলার হলো কৃষি। কৃষি খাতে আমরা নজর দিচ্ছি। এই বাজেটে কৃষিতে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনেক ঘাটতি আছে এটা আমি ফিল করি। তবে আমি ছোট খাটো আমলা ছিলাম, শুরুতে যা দেখেছি তার থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সাগর চেঞ্জ না হোক পুকুর চেঞ্জ হয়েছে, এটা আমি বলবো আমাদের ভাষায়।

রিজার্ভ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সরকারের একটা সংস্থা আছে এই বিষয়ে। সরকার কোনো একটা দেশকে লোনও দিচ্ছে এখান থেকে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অর্থনীতিবিদ ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএস সিদ্দিকী, বাংলাদেশের পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড: এম মাসরুর রিয়াজ, সাবেক ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অর্থনীতি

সাম্প্রতিক বজ্রপাতে প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের চার জেলায় ৭ হাজার ২০০ তালের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকেই পর্যায়ক্রমে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তালের চারা রোপণ করবেন তারা।

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে বড় গাছ দরকার, এর মধ্যে একটা হলো তাল গাছ। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ গাছগুলো যদি আমরা রোপণ করি, তাহলে ১০-১৫ বছর পর সুফল পাব। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বজ্রপাতের প্রভাব কমাতে অন্য উঁচু গাছের সাথে এবার তাল গাছ যুক্ত করলাম।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের বন ও পরিবেশ উপ কমিটি দেশের কয়েকটি জেলা চিহ্নিত করেছে, যেখানে বজ্রপাত বেশি হয়। মানুষকে সচেতন করতে এবং উদ্বুদ্ধ করতে সেই জেলাগুলোতে আমরা তাল গাছ রোপণ করবো।

দেলোয়ার বলেন, আপাতত কেরানিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে তারা তালের চারা রোপণ করবেন। পরে চারা পাওয়া সাপেক্ষে অন্য জেলাগুলোতে নজর দেবেন। প্রাথমিকভাবে চারা রোপণের পর সেগুলোর পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। পাশপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করবো। এগুলো আমরা বিনামূল্যে মানুষকে বিতরণ করব। উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সচেতন করা।

মুজিবর্ষ উপলক্ষে গত বছর এবং এ বছর মিলিয়ে সারাদেশে তিন কোটি গাছের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে তালের চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, তালের চারা পাওয়াটা কঠিন। কোনো নার্সারি বা বন বিভাগে কেউ এই চারা করে না। আঁটি পাওয়া যায়। আমরা পাঁচ থেকে সাত হাজার তালের চারা সংগ্রহ করেছি।

বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক প্রাণহানি বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে বজ্রপাতে তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।

২০১১ সালের পর থেকে বজ্রপাতের পরিমাণও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। বজ্রপাতে ২০১৫ সালে ৯৯ জন, ২০১৬ সালে ৩৫১ জন ও ২০১৭ সালে ২৬২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন চার শতাধিক।

অর্থনীতি

জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতেই যাচ্ছে। নিজেদের হাতে এ কার্যক্রম রাখতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাত যুক্তি নাকচ করে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইসির সচিবের কাছে রোববার এক লাইনের চিঠি দিয়ে সরকারের ওই সিদ্ধান্ত সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চিঠিতে এ কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইসির হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম রাখার চেষ্টা আবারও ব্যর্থ হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পেয়েছি। এটি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে কমিশনাররা বসে সিদ্ধান্ত দেবেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের হাতে রাখতে ৭ জুন সাত যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি। জবাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৭ মের একটি চিঠির বরাত দিয়ে রোববারের চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’ চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে দেওয়া নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালনের অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৭ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত। এজন্য এ সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রিস অ্যান্ড ডিভিশনস’ এ সুরক্ষা বিভাগের দায়িত্বগুলোর মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। চিঠিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ সংশোধনেরও কথা বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ইসির কাজ নয়। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বর্তমানে নাগরিকদের ১২২ ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১২১ ধরনের সেবাই নির্বাহী বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ দিয়ে আসছে। একটি মাত্র সেবা ইসি দিচ্ছে। এছাড়া সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের যে ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়। তারা জানান, সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে এ সেবা দিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

তবে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এটি ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট। এছাড়া ইসির যে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এমন জবাব দিল, সেখানে এটিসহ সাত ধরনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা কোনো জনবল নির্বাচন কমিশনে নেই। ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য কারিগরি জনবল ডেটা প্রসেসিং করে, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটিশনে নিয়োজিত কর্মকর্তারা স্মার্টকার্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ করছেন। এসব কর্মকর্তা ২০০৮ সাল থেকে এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এই দীর্ঘ ১২ বছর সময়কালে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ ও পারদর্শী করে তোলা হয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত আলাদা কোনো জনবল না থাকায় এসব কার্যক্রম অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করা হলে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিশাল একটি জনবলের প্রয়োজন হবে, যা ব্যয়সাপেক্ষ। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে ২০০৯-২০১০ সালেও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে একটি সংস্থা কাজ শুরু করলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফলে তা নির্বাচন কমিশনের কাছে রয়ে যায়। পরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এর মাধ্যমে এর কার্যক্রম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।

অর্থনীতি

বংশাল শাখার নিজেদের অভ্যন্তরীণ অডিটে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার হদিস পায়নি ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকাগুলো ক্যাশ ইনচার্জ সরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শাখার ম্যানেজার।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাতে এমন অভিযোগের পর ব্যাংকের ইমরান ও রিফাত নামে দুই কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বংশাল থানা পুলিশ। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি।

বংশাল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) আবুল কালাম জানান, ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ম্যানেজার আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা তাদের ক্যাশ ইনচার্জ সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যাংকের ওই শাখার ইন্টারনাল অডিটে এ টাকা সরানোর বিষয়টি ধরা পড়ে বলে জানা যায়।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ইমরান ও রিফাত নামে দু’জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, মামলা দায়েরের পর আটকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরে এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) রাতে ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখা ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক তাদের দুই কর্মকর্তাকে থানায় সোপর্দ করেছেন। তার অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ অডিটের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

থানায় সোপর্দ করা দুই কর্মকর্তা ওই টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যাংকটির ম্যানেজার। তাই আটক দুই কর্মকর্তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

অর্থনীতি

মহামারীর মধ্যে গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ ৭ শতাংশ কমেছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে কমে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে।

বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে ৫ হাজার ২০১ কোটি টাকার বেশি অর্থ বাংলাদেশিরা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা করেছেন।

এর মধ্যে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে জমার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন অন্তত ৫০০ কোটি টাকা হতে হয়। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা এখন জমা আছে, তা অন্তত ১০টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান।

সারা পৃথিবীতে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না।

তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে। তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।

দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য হল, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটাই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

বিদেশি ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে কয়েক মাস আগে একটি রিট আবেদন হয়েছে হাই কোর্টে।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কতজনের কত টাকা আছে সেই তালিকা চেয়েছে সরকারের কাছে। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার দশ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর।

নয় কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক।

এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬ সালে তা ৬৬ কোটি ১৯ লাখে দাঁড়ায়।

পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে নেমে এলেও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের বছরে তা আবারও বেড়ে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে দাঁড়ায়।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমানো অর্থের পরিমাণে এবার বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। ৮৯ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ২.৫৫ বিলিয়ন হয়েছে। পাকিস্তানিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬৪ কোটি ২২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের ২৪৩টি ব্যাংকের যে হিসাব দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে, তাতে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৩৭৭ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক। এর পরের অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জমার পরিমাণ ১৫২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক। তালিকায় এর পরে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্রান্স, হংকং, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও লুক্সেমবুর্গের নাম।

অর্থনীতি

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে বিশ্বের যে তিনটি দেশ এগিয়ে আছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে শেষ হওয়া এমডিজির (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) পর শুরু হয়েছে এসডিজি বাস্তবায়ন। এই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে শুরু থেকে ভালো করছে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও আইভরি কোস্ট এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের সূচকে শুরু থেকে উন্নতি হচ্ছে।

এসডিজির এবারের সূচকে বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর এ স্কোর ছিল ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে যখন এসডিজি গৃহীত হয়, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বিশ্বের ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভুটান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় ৭৫তম স্থানে রয়েছে ভুটান। দেশটির স্কোর ৭০। মালদ্বীপ রয়েছে ৭৯তম অবস্থানে (স্কোর ৬৯.৩), ৮৭তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা (স্কোর ৬৮.১), ৯৬তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল (স্কোর ৬৬.৫)। বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এর পরে রয়েছে ভারত ১২০তম অবস্থানে (স্কোর ৬০.১), পাকিস্তান ১২৯তম অবস্থানে (স্কোর ৫৭.৭) এবং ১৩৭তম স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান (স্কোর ৫৩.৯)।

এসডিজি অর্জনে এগিয়ে থাকা শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এসডিজি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৫ সালে এসডিজি গৃহীত হওয়ার পর এই প্রথম এর সূচকের স্কোর আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে। কোভিড মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য হার বেড়ে যাওয়া এবং বেকারত্ব বৃদ্ধির করণে এমনটি হয়েছে।

এবারের তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। তালিকায় এর পরে রয়েছে সুইডেন (৮৫.৬), ডেনমার্ক (৮৪.৯), জার্মানি (৮২.৫) ও বেলজিয়াম (৮২.২)। আর সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের স্কোর ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর উপরে রয়েছে দক্ষিণ সুদান ও চাদ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কোরের দিক দিয়ে যে তিন দেশের অবনমন ঘটেছে, সেগুলো হলো ভেনেজুয়েলা, টুভালু ও ব্রাজিল।

অর্থনীতি

রাজশাহী: করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে গেল শুক্রবার (১১ জুন) থেকে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এর প্রভাবে রাজশাহীতে আমের দাম ও ক্রেতা কমতে শুরু করেছে।

এতে করে ক্রেতা সংকটে ভুগছেন রাজশাহীর আম ব্যবসায়ীরা। সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা না থাকায় রাজশাহীর আমের হাটে বেচা-কেনায় এরই মধ্যে ধস নেমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়ে গেছে দর। আর হঠাৎ এ দরপতনে বাগান মালিকরাও বিপাকে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকে বাগান থেকে এখন আম নামানো থেকে বিরত থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন জাত আমখ্যাত গোপালভোগ ও খিরসাপাত (হিমসাগর) এবং ল্যাংড়া জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্য গোপালভোগ আম প্রায় শেষ। পুরোদমে বাজারে রয়েছে হিমসাগর আম। আর চলতি সপ্তাহেই উঠতে শুরু করেছে ল্যাংড়া আম। কিন্তু হাটে আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এমনিতেই দেশে লকডাউন চলছে। তার ওপর রাজশাহী শহরে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ জারি করা হয়েছে। আর তাই এই বিশেষ লকডাউনের কারণে দূরের পাইকাররা রাজশাহীতে আসতে পারছেন না। আর পাইকাররা আসতে না পারায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি করতে পারছেন না। তাই অনেককে বাধ্য হয়েই এখন কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়ে গেছে দর। ক্রেতার উপস্থিতি না বাড়লে আমের দাম আরও কমার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর, মহানগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, সাহেব বাজার, শালবাগান ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।

সোমবার (১৪ জুন) আমের হাট বানেশ্বরে দেখা যায়, গাছ থেকে নামানো আম বিক্রির জন্য হাটে আনছেন বাগান মালিকরা। গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়াসহ বাহারি জাতের আমের সরবরাহ বেড়েছে আমের হাটে। সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বাহনে ক্যারাটে ভরা আম নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষায় বাগান মালিকরা। তবে ক্রেতা না আসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কেনা-বেচায় ছেদ পড়েছে। লকডাউন ঘোষণার আগে ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও এখন বানেশ্বর হাট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে।

সোমবার বানেশ্বর হাটে ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া খিরসাপাত ১ হাজার ৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ এবং গোপালভোগ আম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রধানতম এই আমের মোকাম থেকে ঢাকা বা রাজশাহীর মূল শহরে নিয়ে যারা আম বিক্রি করছেন তারা আবার আম বেশি দরেই বিক্রি করছেন। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে কথা হয় আম ব্যবসায়ী অনুপ কুমার সাহার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের আগে প্রতিমণ ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া খিরসাপাত ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ ও গোপালভোগ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজাট ২০০ টাকা মণ দারে বিক্রি করেছি। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় বর্তমানে বিভিন্ন জাতের আম প্রতিমণ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। না হলে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুঠিয়ার এই বানেশ্বর হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে প্রচুর আম আমদানি হচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে দূর-দূরান্তের ক্রেতা নেই, আবার রাজশাহী শহর থেকেও কেউ আসতে পারছেনা। তাই আড়তদাররা কম দামে আম কেনার সুযোগ নিচ্ছেন।

আম ব্যবসায়ী নাহিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনে দূরের পাইকাররা আসতে পারছেন না। এতে পড়ে গেছে দর। লকডাউনের আগে দৈনিক ৩০-৪০ মণ আম বিক্রি করতাম। বর্তমানে ১২-১৫ মণ আম বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে আমের দাম মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে।

আমের বাগান মালিক জুয়েল রানা বলেন, ১০ বিঘা আমের বাগান কিনেছিলাম। আমের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে ক্রেতা সঙ্কটে আমের দাম পাচ্ছি না। দাম পড়ে যাওয়ার কারণে আম বিক্রির যে টাকা আশা করেছিলাম তা সম্ভবত পূরণ হবে না।

পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের ইজাদার ওসমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, একদিনে কঠোর লকডাউন আরেক দিকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি! সব মিলিয়ে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় এই আমের মোকামে এখন আমের ক্রেতা কম। তাই ব্যবসায়ীরা কম দামেই আম বিক্রি করছেন। বানেশ্বর হাটে আম কিনতে আসা পুঠিয়ার আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠানোর জন্য আম কিনতে এসেছেন। দাম তুলনামূলকভাবে কম। তবে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে বানেশ্বর হাটের মত রাজশাহীর অন্যসব আমের বাজারেও বেচাকেনায় মন্দা চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মহানগরের বিনোদপুর এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল জহির বাংলানিউজকে বলেন, পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট থেকে আম কিনে এখানে আম বিক্রি করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে খুব সমস্যা হয়ে গেছে। মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তাই ব্যবসাও খুব খারাপ যাচ্ছে।

শিরোইল বাসস্ট্যান্ড এলাকার আম ব্যবসায়ী শফিউর রহমান বলেন, লকডাউনের কারণে বেশিক্ষণ দোকান খোলা রাখতে পারছেন না। লকডাউনের পর থেকে ক্রেতা নাই। বাজারে ক্রেতা না থাকায় অনেক আম ব্যবসায়ীরাই এখন ভ্যানে করে শহরে কম দামে আম বিক্রি করছেন। তাই আমের দোকনগুলোতে চাপ কম। এখন আম নিয়ে বিপদে আছেন।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন, করোনা সংক্রমণের কারণে আম বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আর জেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দিলেও আম ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সব ধরনের ছাড় রয়েছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বিঘ্নে আম পরিবহন ও বিক্রি করতে পারবেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সারা দেশের ক্রেতারা এখন খুব সহজে আম কিনতে পাচ্ছেন। লকডাউন থাকলেও বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস, পিকআপভ্যান ও ট্রাকে করে আম পরিবহন করা যাচ্ছে আগের মতই। তবে, মানুষ বাইরে বেরোতে না পারায় সাধারণ ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই এখন আমের দামও কিছুটা কম।

এখনও আম মৌসুমের অনেকটা সময় আছে। আর গতবারের তুলনায় এবার তুলনামূলকভাবে আমের দামও ভালো। লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও বয়বসায়ীরা আমের ভালো দাম পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।