অর্থনীতি

মহামারিতে যখন বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, তখন বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ১২ দিনেই রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসেনি।

সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক মাসে ১২ দিনে ১০৬ কো‌টি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থাৎ, ১ দশমিক ০৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় আট হাজার ৯৫৪ কোটি টাকার বেশি। এখানে ডলার প্রতি ৮৪ টাকা ধ‌রা হয়েছে।

এর আগে কখনো এতো পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নভেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর আগে মাত্র ১২ দিনে কখনও এতো রেমিট্যান্স অর্জিত হয়নি।

রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স অর্জিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সারা বিশ্ব। এই সময় আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কষ্ট করে অর্থ পাঠিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।’

অর্থনীতি

চীনের উদ্যোগে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৫টি দেশ নিয়ে গঠিত হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য জোট, আগামী দিনের বিশ্ব বাণিজ্যে যার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের শেষদিন ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)’ নামে নতুন এই জোট গঠনের চুক্তি হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের ১০ দেশের সঙ্গে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড এই জোটে থাকছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের প্রভাব খর্ব করতে বারাক ওবামার সময়ে ১২ দেশের ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’ (টিপিপি) চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন।

আরসিইপি চুক্তি ওবামার সেই জোটের জন্যও বড় ধাক্কা হয়ে এল এবং চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাশা পূরণের পথকে আরও মজবুত করল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেকজান্ডার ক্যাপ্রি বলেন, “এই জোট চীনের ভূ-রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণে নিশ্চিতভাবেই সাহায্য করবে।”

বিবিসি লিখেছে, নতুন এই জোটের আওতায় পড়বে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে যে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা তৈরি হবে, তা আকারে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো নিয়ে গঠিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও বড় হবে।

এশিয়ার আরেক বড় অর্থনীতির দেশ ভারতেরও এই চুক্তিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু সস্তা চীনা পণ্যে বাজার ভরে যাওয়ার আশঙ্কায় নরেন্দ্র মোদীর দেশ গতবছর এ আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।

এরপরও নয়া দিল্লির জন্য দরজা খোলা থাকছে বলে রোববার আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা মন্তব্য করেছেন।

চীনের উদ্যোগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ বাণিজ্য জোট এবং ওবামার সময়ে হওয়া টিপিপিতে অনুপস্থিতির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অঞ্চল এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়বে বলে মত বিশ্লেষকদের।

কেবল তাই নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর বাজার ও প্রযুক্তির উপর বেইজিংয়ের যে নির্ভরশীলতা রয়েছে, আরসিইপি তা থেকে তাদের সরে আসার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সুবিধা করে দেবে বলে ধারণা আইএনজির বৃহত্তর চীন বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ আইরিস পেংয়ের।

আরসিইপির মাধ্যমে চীন এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক অংশীদার হওয়ার ক্ষেত্রেও নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে পারবে; এর মাধ্যমে এশিয়ায় বাণিজ্য নীতি কেমন হবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যাবে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।

সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে শুল্ক কমিয়ে আনাই নতুন এই আরসিইপি জোটের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তেজনা ও মহামারী পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে অনলাইনে আসিয়ান দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলনের সাইডলাইনে রোববার এই আরসিইপি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

“আরসিইপি শিগগিরই স্বাক্ষরকারী দেশগুলোতে অনুমোদিত হবে এবং এরপর এটি কার্যকর হবে; এটি কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখবে,” আশাবাদ ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন জুয়ান ফুকের।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এ জোটের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে সদস্য দেশের ভেতর কিছু শুল্ক তুলে নেওয়ার কথাও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু শুল্ক শিগগিরই উঠে যাবে; কিছু কিছু উঠতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

তবে কোন কোন পণ্যে শুল্ক কমবে এবং কোন কোন দেশ শিগগিরই শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

অর্থনীতি

ব্যাংকের শাখার প্রায় সব সুবিধাই মিলছে উপশাখাগুলোতে। এসব উপশাখায় ব্যাংকিং সুবিধা পেতে গ্রাহকদের তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সাধারণত, একটি ব্যাংকের শাখা চালাতে ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ খরচ ও জনবল নিয়োগ দিতে হয় তার তুলনায় উপশাখা চালাতে অনেক কম খরচ ও জনবল নিয়োগ দিতে হয়। শাখার মতো জাঁকজমকপূর্ণ প্রশস্ত অবকাঠামোর দরকার হয় না উপশাখাগুলোতে। আবার উপশাখা খোলার ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ঝামেলাও অনেক কম। এসব কারণে ব্যাংকগুলো এখন উপশাখা খোলার দিকে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩০টি ব্যাংক গত মাস পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৫টি উপশাখা খুলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩২৮টি উপশাখা খুলেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এর পরের অবস্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। তারা ৩০১টি উপশাখা খুলেছে। আর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ খুলেছে ১৮২টি উপশাখা। এছাড়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫৯টি, সোশ্যাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক ৫৪টি করে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৪০টি, যমুনা ব্যাংক ৩৮টি এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৩২টি উপশাখা চালু করেছে। দেশে ৬০টি ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলো সারাদেশে ১০ হাজার ৬৩০টি শাখা খুলেছে। শাখানির্ভর ব্যাংকিংসেবা সব মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছাতে পারেনি। শাখানির্ভর ব্যাংকিং খাতের ঋণ ও ব্যাংকিং সুবিধা মূলত ব্যবহার করছে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং বড় ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। নিম্নবিত্ত সাধারণ জনগণ এবং ছোট শিল্প ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা যথেষ্ট পরিমাণে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সব মানুষকে ব্যাংকিংসেবা দিতে নতুন নতুন সেবা চালুর প্রক্রিয়া ২০০৯ সাল থেকে অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঐ বছর থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংসেবার ধারণা ব্যাপকভাবে ব্যাংকিং নীতিতে স্থান করে নিয়েছে। খরচ কমিয়ে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং ধারণার একটি হলো উপশাখা ব্যাংকিং।

উপশাখা বিষয়ে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, স্বল্প ব্যয়ে মানুষকে বেশি সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের ব্যাংকই সবার আগে উদ্যোগ নেয়। এক্সপ্রেস ব্যাংকিং হিসেবে আমরা প্রথম কাজ শুরু করি। উপশাখা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দেওয়ার আগে থেকেই আমরা এমন মডেলে কাজ শুরু করি। ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সেন্টার হিসেবে কাজ শুরু হয়। গার্মেন্টস এলাকা, বিআরটিএ, জমি রেজিস্ট্রেশন অফিসে কাজ শুরু হয়। অন্য ব্যাংকগুলো উপশাখাকে ডিপোজিট হান্টিং সেন্টার করলেও আমরা সার্ভিস সেন্টার হিসেবে তা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি এবং পেরেছি। ৬০ ফুট থেকে শুরু করে ১ হাজার ফুট পর্যন্ত আয়তনে আমাদের উপশাখাগুলো রয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনআরবিসির উপশাখা ৩২৮টি থাকলেও এখন তা ৪৫০ হয়ে গেছে। এ বছর শেষে উপশাখা সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০০টিতে।

তিনি বলেন, খরচের দিক থেকে উপশাখাকে স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবার আউটলেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে প্রচলিত শাখা স্থাপনের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ব্যয়সীমার চেয়ে উপশাখা স্থাপনের ব্যয় এবং প্রচলিত শাখা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবার জন্য নির্ধারিত ফি, চার্জ ও কমিশনের চেয়ে ব্যাংকিং বুথে সেবা প্রদানের ফি, চার্জ, কমিশন প্রভৃতি কম ছাড়া বেশি হবে না। উপশাখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবা আউটলেটের মাধ্যমে অধিকতর আর্থিক সেবাভুক্তি নিশ্চিত করা।

এই বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ওসমান আলী বলেন, উপশাখা অত্যন্ত যুগোপযোগী ব্যাংকিং ধারণা। এখানে বৈদেশিক লেনদেন ছাড়া ব্যাংকের সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। অনেক এলাকায় ব্যাংকের শাখা খোলার মতো পরিস্থিতি নেই কিন্তু সেখানকার মানুষের ব্যাংকিং সেবা দরকার। এই পরিস্থিতিতে উপশাখা কার্যকরী সমাধান। শাখা খোলার জন্য ব্যাংকের বিভিন্ন খাতে বেশ মোটা অঙ্কের খরচ করতে হয়। উপশাখা খোলার ক্ষেত্রে এই খরচ অনেক কম।

একসময় ব্যাংকের ব্যবসা হিসেবে শাখা ব্যাংকিং, কৃষি শাখা, এসএমই শাখা, বুথ (কালেকশন বুথ, ফাস্ট ট্র্যাক, সেবাঘর ও ইলেকট্রনিক বুথ) ও ব্যবসা উন্নয়ন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বল্প ব্যয়ে ব্যাংকিংসেবা কীভাবে মানুষের নাগালে পৌঁছানো যায়, তারই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথ স্থাপন-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, ব্যাংকিং বুথের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুটের মধ্যে। এরপরই ব্যাংকগুলো বুথ স্থাপন জোরদার করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারির মাধ্যমে ব্যাংকিং বুথকে উপশাখায় রূপান্তর করে।

অর্থনীতি

করোনার সময়েও চলতি বছরের ১০ মাসে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল বন্দর ও স্থল শুল্ক স্টেশন শুধুমাত্র ভারতীয় পণ্য আমদানি করে প্রায় একশ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, এ পথে বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি করা হলে উভয় দেশে রাজস্বের পরিমাণ দ্বিগুণ হতো।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের সুপারিন্টেনডেন্ট মীর লিয়াকত আলি জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, ভুট্টাও পাথর আমদানি করে রেল ভাড়া বাবদ ৪৯ কোটি ৩০ লাখ এক হাজার টাকা আদায় হয়েছে। সেই সঙ্গে দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশন ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ চার হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।

দর্শনা সিএন্ডএফ এজেন্ট ও খান ট্রান্সপোর্টের সত্ত্বাধিকারী মো. রানা খান বলেন, সরকার এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। বৃষ্টি হলে কাদা পানিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা দেখে দেশের অনেক আমদানিকারকরা এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হয়ে ফিরে যায়।

দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ পরিচালক মো. শাফায়েত হোসেন জানান, করোনার কারণে রাজস্ব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, ভুট্টার পাশাপাশি ভারত থেকে জিরা, গরম মসলা ও ফল জাতীয় দ্রব্যাদি আমদানি করা হলে বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব ছিল।

দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান জানান, এ বন্দরের মাধ্যমে মালামাল আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি করা গেলে উভয় দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পেতো। বন্দর শ্রমিকরা বছরের ১২ মাস কাজ করতে পারতো। খুলে যেতো দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল বন্দরের সম্ভাবনার নতুন দ্বার।

অর্থনীতি

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে সব ধরনের মাছের। ইলিশ মাছের দাম চড়া হওয়ায় অন্য সব মাছের দাম বাড়ানো হয়েছে দাবি ক্রেতাদের।

আর বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ নদীতে কম ধরা পড়ায় দাম তুলনামূলক একটু বাড়তি থাকে।
অন্যদিকে ডিম, গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতো থাকলেও দাম বেড়েছে সব ধরনের মুরগির।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর ফকিরাপুল, টিঅ্যান্ডটি বাজার, কমলাপুর, বাসাবো, খিলগাঁও, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজার ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

এসব বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে প্রতি কেজি শিং মাছের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। আর প্রতিকেজি রুই (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, মৃগেল ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাস ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাতল ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, কৈ মাছ ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, মিররর কার্প ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে প্রতি এককেজি কাঁচকি ও মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি টেংরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি চিংড়ি (ছোট) ৩৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বাগদা ও গলদা ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

এদিকে ডিম, গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতো থাকলেও দাম বেড়েছে মুরগির। এসব বাজারে বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিমের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৮০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের বাজার। এসব বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা, গরু মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা, মহিষ ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। আর বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিদরে।

মাছের দাম বাড়া নিয়ে টিঅ্যান্ডটি কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা হামিদ মিয়া বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ নদী বা খাল-বিলে কম ধরা পড়ে। এ সময় ইলিশ মাছ সাগরে চলে যায়। এতে বাজারে মাছ কম আসে দামও বেশি থাকে। আর ইলিশের দাম বাড়ার সঙ্গে অন্য মাছেরও দাম বেড়ে যায়।

এ বিক্রেতার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ এ বাজারের ক্রেতা সারা বলেন, বাজারে ইলিশ কম থাকলেও অন্য সব মাছের সরবরাহ বেশি। তবে কেন দাম বেশি হবে। মাছের সরবরাহ কম হলে দাম বেশি সেটা মেনে নেওয়া যায়।

অর্থনীতি

আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদেরর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই সময়ের পর আর রিটার্ন দাখিলের জন্য সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ বিবেচনায় সময় বাড়ানো হবর কিনা – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ ৩০ তারিখের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে আইনি উপায়ে পরবর্তীতে জমা দিতে ( জরিমানা দিয়ে) পারবেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

অতীতে এই সময়ে আয়কর মেলা আয়োজন হলেও এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় মেলা হচ্ছে না। এর বদলে আয়কর অফিসগুলোতে সবধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সময় এনবিআরের জনবল সংকট এবং অটোমেশন কার্যত ব্যর্থ হওয়ায় অসন্তোষের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, অটোমেশনের নামে বাইরের প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে। নিজেদের লোকবল তৈরির চেয়ে যন্ত্রপাতি কেনায় অগ্রগামী হয়ে গিয়েছি। এর দায় কার, তা নির্ধারণে অন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এনবিআরের দায় কি আমি নেব নাকি। অন্য সংস্থা নির্ধারণ করুক।

এ সময় সময় জানানো হয়, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এক দশমিক ১৪ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত চার মাসে ৮৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেক নিয়ে নানা ধরনের জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। এসব জালিয়াতির সঙ্গে কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তা এবং একটি প্রতারক চক্র জড়িত।

এবার জালিয়াতি বা প্রতারক চক্রের নজর পড়েছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের চেকের দিকে। স্বয়ং একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক নিয়ে অভিনব প্রতারণা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদের কয়েকজন পরিচালক প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তাদের এ প্রতারণা করতে বাধ্য করেছেন।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অনুসরণ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে ঘটনাটি ধরা পড়েছে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠানো এক চিঠিতে বিধিবহির্ভূতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো চেক ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে চেক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের টাকা স্থানান্তর ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারে না। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারও হিসাব নেই।

ফলে অন্য কাউকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেকও দেয়া হয় না। কিন্তু তারপরও ঋণের অর্থছাড়ে বেআইনিভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেক ব্যবহার করার কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে। তারা নিয়ম মেনে চেক ইস্যু করলেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে ঋণের টাকা তুলে নেয়ার কাজে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী নতুন প্রজন্মের বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএস), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএস) ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)-এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু পরিচালক প্রভাব খাটিয়ে বেআইনিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক দিয়ে ঋণ বা লিজের অর্থছাড় করতে বাধ্য করেছেন কর্মকর্তাদের।

চেকের অর্থ কয়েক হাত ঘুরে পরিচালকদের পকেটে গেছে ঋণের টাকা হিসাবে। যেগুলো পরে তারা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে তুলে নেয়া ঋণের অর্থ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে কোনো জামানতও নেই। ফলে ঋণের অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ লিজিং এবং ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) সভাপতি ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম হওয়ায় এখন এর ব্যবহারে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। আগে জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর করা যেত। এ প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম হওয়ায় তা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেক শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারে। অন্য কোনো গ্রাহকের নামে সরাসরি টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে না।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোয় যাদের হিসাব রয়েছে, তারাই গ্রাহক। গ্রাহকদের নামে চেক ইস্যু করে ব্যাংক। এসব চেক দিয়ে গ্রাহকরা টাকার লেনদেন করেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হিসাব খুলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সবাই হিসাব খুলতে পারে না। কেবল দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারে। এসব হিসাবের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেকবই ইস্যু করে। এসব চেক দিয়ে কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেন করা যায়।

এর বাইরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেক ইস্যু করা যায় না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের বেতনভাতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেকের মাধ্যমেই পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। এসব চেক বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতিতে লেনদেন করতে হয়। এর বাইরে লেনদেন করা যায় না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই বিধি ভঙ্গ করে আলোচ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেআইনিভাবে তাদের ঋণগ্রহীতাদের নামে টাকা ছাড় করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে টাকা তুলে অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে ঋণের টাকা গ্রাহকের হিসাবে বিতরণ করেছে।

সূত্র জানায়, একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা দ্রুত সরানোর জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেক ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা এই প্রক্রিয়ায় মুহূর্তেই টাকা স্থানান্তর করা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ঋণ বা লিজের অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করেছে। নয়টি চেকের মাধ্যমে প্রায় ২৭ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, যার সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন পরিচালক।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে উজ্জ্বল মল্লিক ও সোমা ঘোষের নামে ৬৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এই ঋণ গ্রাহকদের দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯টি চেক। এসব চেক গ্রাহকরা এফএএস ফাইন্যান্সে জমা করে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছে।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও একটি চেক ব্যবহার করে ১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে জমা করে। পরে এসব অর্থ গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি অর্থ ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া হয়। ওই টাকা দিয়ে পরে এসএ এন্টারপ্রাইজের একটি ঋণ হিসাব সমন্বয় করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক পিকে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। পিকে হালদার যখন রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি, তখন এ ঋণটি সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হিসেবে পিকে হালদার এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্সে পিকে হালদারের বেনামে বিপুল শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন। ফলে তারা পছন্দের লোকজন উচ্চ পদে বসিয়ে ঋণের মোটা অঙ্কের অর্থছাড় করাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চেক ব্যবহার করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে স্থানান্তর করা হয়। পরে এই টাকা দিয়ে এমেক্সকো নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আগের ঋণ শোধ করা হয়। যেটি পিকে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেনামি কোম্পানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফারমার্স ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে।

এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মাহবুবুল হক (বাবুল) চিশতীকে ঋণের টাকা ছাড় করাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করা হয়েছে। চেকের অর্থ প্রথমে ফার্মার্স ব্যাংকে এবং পরে তা এডিএম ডাইয়িং অ্যান্ড ফিনিশিং কোম্পানির চলতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে তা পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য একটি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এভাবে আরও কয়েক দফা স্থানান্তরের পর নগদ আকারে তুলে নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির ক্ষমতার পরিবর্তনে সারা বিশ্বে নানা হিসাবনিকাশ চলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকার ক্ষমতা নিলে ট্রাম্পের রক্ষণশীল নীতিতে পরিবর্তন আসবে। এতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো লাভবান হবে।

বিশেষ করে এর আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে অকার্যকর করে দেয়ায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

কিন্তু বাইডেন রক্ষণশীল নীতি থেকে সরে আসবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। আর এটি বাস্তবায়ন হলে রফতানি, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সহায়তা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে।

যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। তবে বাংলাদেশের শ্রমিক ইস্যুতে কিছুটা চাপ পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সাধারণভাবে অর্থনীতিতে যে সংরক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করে আসছিলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে তার প্রভাব পড়ত।

বাইডেন ক্ষমতায় এলে তার কিছুটা পরিবর্তন হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে পরোক্ষভাবে হলেও উপকৃত হবে বাংলাদেশ।

এ ছাড়া ট্রাম্পের কারণে বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পলিসি নিচ্ছিল, তাতে পরিবর্তন আসবে। যেমন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

সংস্থাটিকে অকার্যকর করে দেয়ার পলিসি নিয়েছিল তারা। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, এই সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কাজে আসছে না। মনে হচ্ছে, জো বাইডেন সেই সব পলিসি থেকে সরে আসবেন।

কারণ, ইতোমধ্যে বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতায় এলে বিশ্ব বাণিজ্যসহ অন্যান্য ইস্যুতে সহজ নীতি গ্রহণ করবেন। সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে, তাদের জন্য বিভিন্ন সহায়তার কথা বলা হচ্ছে।

সেটি এগিয়ে নেয়ার জন্য আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে রক্ষণশীল নীতিতে ছিলেন ট্রাম্প।

তার বক্তব্য ছিল-যুক্তরাষ্ট্র সবার আগে অগ্রাধিকার। সেখানেই বিনিয়োগ করতে হবে। ক্ষমতার পরিবর্তন এলে ওই নীতিতে পরিবর্তন আসবে।

এতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার পথ তৈরি হবে। তবে কতটুকু আসবে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, বিভিন্ন পলিসির ওপর বিনিয়োগ নির্ভর করে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র যে ইন্দো-প্যাসেফিক স্টাডিজ নিয়ে আসছে, তাতে কোনো পরিবর্তন দেখি না। কারণ, চীনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান্তরালে এখানে কিছু করার চিন্তা করছে তারা।

ফলে এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, টিকফাসহ অন্যান্য চুক্তিতে ডেমোক্র্যাটরা শ্রমিক ইস্যুকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেবে। তাদের দলের মধ্যে সব সময়ই শ্রমিকের বড় প্রভাব থাকে।

এতে বাংলাদেশের শ্রমিক ইস্যুতে মার্কিন চাপ কিছুটা বাড়বে। আর জিএসপি (বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার খাত) ইস্যুতেও তেমন কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।

অর্থাৎ, জিএসপি আবার খুব সহজে আমরা ফিরে পাব-সেটি মনে হয় না। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার হার বাড়বে।

সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, অনেকে বলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক হলে তাদের বাজার আমরা দখল করতে পারব।

তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, অতীতে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বড় ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সব ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়), বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রফতানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমদানির ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান ষষ্ঠ। রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে আমেরিকা।

২০১৯ সালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যা বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৯ শতাংশ। এরমধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে।

বিনিয়োগের দিক থেকে রয়েছে দেশটির শক্তিশালী অবস্থান। সর্বশেষ বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিনিয়োগ ছিল ১৭ দশমিক ৪০ কোটি ডলার।

এ হিসাবে বাংলাদেশ চতুর্থ বড় বিনিয়োগকারী দেশ। এদিকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়েও তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪১ কোটি ডলার।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ৫২তম বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। কিন্তু রানা প্লাজা দুর্ঘটনার জেরে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয় তারা। এরপর সুবিধা ফিরে পেতে সব ধরনের চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কিছু পরিবর্তন হলেও তা খুব বেশি নয়।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় না ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর খুব একটা বেশি প্রভাব পড়বে। কারণ, নতুন করে ডেমোক্র্যাট দল ক্ষমতায় এলেও সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে।

আর বাংলাদেশের মূল ইস্যু হল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। কিন্তু এটি বাংলাদেশের দাবি থাকলেও তারা দিচ্ছে না।

টিকফা অ্যাগ্রিমেন্ট রয়েছে। এখানেও আলোচনা হয়; কিন্তু সিদ্ধান্ত কিছুই হয় না। জো বাইডেন এ ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আনবেন বলে মনে হয় না।

কারণ, দেশের মধ্যে প্রেসারে থাকবে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে আরেকটি ইস্যু রয়েছে-সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই। এখানেও সরকারের করণীয় কিছু নেই।

এখানে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো সিদ্ধান্ত নেয়। আর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তারা কয়েকটি বিষয় দেখে।

এরমধ্যে রয়েছে: প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, সুশাসন এবং সহজে ব্যবসা করার সূচক এবং গুণগত মানসম্পন্ন মানবসম্পদ। এসব দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।

সে কারণে উৎপাদনশীল খাতে খুব বেশি বিনিয়োগ আসে না। সরকার পরিবর্তন হলেও এ খাতে পরিবর্তনের তেমন সম্ভাবনা নেই।

জানা গেছে, টানা সাড়ে ৮ বছর পর্যন্ত ঝুলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি সুবিধা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের ২৪৩টি পণ্যের জিএসপি সুবিধা ছিল।

মোটা দাগে খাতগুলো হল: প্লাস্টিক, সিরামিক, গলফ খেলার উপকরণ, কার্পেট, চশমা, পতাকা এবং চুরুট ইত্যাদি। যদিও ওই তালিকায় তৈরি পোশাক ছিল না।

কিন্তু ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এর জের ধরে ওই বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জিএসপি স্থগিত করে।

আর ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। জিএসপি স্থগিত হওয়ার মানে হল-যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বা শুল্কছাড় সুবিধা পেত, সেগুলো আর পাচ্ছে না।

ফলে এসব পণ্য রফতানিতে প্রচলিত হারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে পণ্যভেদে শুল্কহার ১২-২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই হারে শুল্ক দিয়ে রফতানি করায় দেশটির বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে।

এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ বলেন, জিএসপি সুবিধার আওতায় যেসব পণ্য ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রে মোট রফতানির ৫ শতাংশেরও কম।

আর পোশাক খাতে তারা এ সুবিধা দেবে না বলে বহু আগেই জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের পর কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

আর এই শর্তগুলো পূরণ হলে ৬ মাস পর বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৮ বছর চলছে। এ ক্ষেত্রে মূল্যায়ন না করে শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।

২০১৫ সালে মোট ১২২টি দেশের জিএসপি সুবিধা নবায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য-ব্রাজিল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলা, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ড অন্যতম।

কিন্তু বাংলাদেশ ও রাশিয়াকে জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়নি।

জানতে চাইলে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (অ্যামচেম) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত বাণিজ্যিক।

বিনিয়োগ ও রফতানিতে শীর্ষে আছে দেশটি। যখন থেকে গার্মেন্ট রফতানি শুরু হয়, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে ছিল। এখনও সেটি ধরে রেখেছে।

বর্তমানে তৈরি পোশাকের এক-পঞ্চমাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করছি। ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব পণ্য রফতানি করা হয়, সেগুলোর চাহিদা সেখানে রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে চীনের রফতানি কমলে আমাদের বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। তৈরি পোশাকে আমাদের জিএসপি ছিল না। তবে জিএসপির জন্য বেশ কিছু পণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তার মতে, সরকার পরিবর্তন হলেও বাণিজ্যিক নীতির তেমন পরিবর্তন হয় না। তবে একটি সম্ভাবনা রয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আগে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। যার নাম টিকফা।

এটি নিয়ে ৫টি মিটিং হয়েছিল। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হলে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, দেশটির বড় দুটি এজেন্সি রয়েছে।

এগুলো হল: ইউএসটিআর (ইউনাইটেড স্টেড ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ) এবং ইউএসটিডিএ (ইউনাইটেড স্টেড ট্রেড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)। এই দুটি সংগঠন তাদের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট করে।

আর বাংলাদেশের নেগোসিয়েশনগুলো হয় ইউএসটিডিএ-র সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে এই সংস্থার নতুন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে পারলে আমরা লাভবান হব।

তিনি বলেন, সবার আগে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে পারলে বড় বিনিয়োগ আসবে।

জানা গেছে, প্রযুক্তি ও পুঁজি-দু’দিক থেকেই সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৯৯ লাখ বর্গকিলোমিটারের এ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩৩ কোটি।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার সাড়ে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ৫৭ হাজার ২২০ ডলার। এ কারণে দেশটির ক্ষমতা পরিবর্তন সারা পৃথিবীতেই বড় বার্তা দেয়।

অর্থনীতি জাতীয় রাজনীতি

আন্দোলন-নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে মন্তব‌্য করেন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘যে কারণে বিএনপির রাজনীতি এখন লাইফ সাপোর্টে আছে।’

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে, দলের জেলা কমিটির বিশেষ বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার অপরাধীদের প্রশয় দেয় না। এখানে দলীয় পরিচয়েও কেউ রক্ষা পায় না। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের শেকড়। জনগণ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে।’

দলীয় নেতা-কর্মীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘দলকে শক্তি করতে হলে তৃণমূল থেকে নিবেদিত কর্মীদের তুলে আনতে হবে। মাদকসেবী, মাদক কারবারি, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, ভূমি দখলকারী, ধর্ষকদের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ষকের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা চিরতরে বন্ধ রাখতে হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ‌্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীনের সভাপতিত্বে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি।

বিশেষ বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ মমতাজ বেগম প্রমুখ।

অর্থনীতি

ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিশ্চিতকরণে আসেমভূক্ত (এশিয়া ও ইউরোপ) দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা একমত প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, আমাদের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে যত বিলম্ব হবে তত সমস্যা তৈরি হবে। যত কম সময়ে এই করোনা মোকাবিলা করা যাবে অর্থনীতিতে তত কম প্রভাব পরবে। এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনের (আসেম) অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্দশ সভা শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের সভাটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের সভার আয়োজক দেশ ছিল বাংলাদেশ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, এবারের সভার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলা : একটি শক্তিশালী, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিতকরণ’। আসেম অংশীদার ৪৫টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এশিয়া-ইউরোপ অঞ্চলের প্রতিনিধিরা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে সকলকে স্বাগত জানান।

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সভায় শুধু কোভিড নয়, এর প্রভাবে বিভিন্ন দেশের আর্থ সামাজিক স্তরে যেসব ক্ষত তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থা থাকলেও অন্যান্য অনেক দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। সবাই চেষ্টা করবেন কত দ্রুত আমরা এই সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি এবং অর্থনীতিকে স্বাভাবিক স্তরে নিয়ে যেতে পারি। নিজে ভালোভাবে বাঁচতে হলে আগে অন্যকে ভালো ভাবে বাঁচাতে হবে। সেই প্রতিপাদ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখান থেকে আমরা সামনের দিকে চলার পথ পাবো।

সভা সূত্রে জানা গেছে, সভায় বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা বলেন, বর্তমান অবস্থা ও অভূতপূর্ব পরিস্থিতি হতে উত্তরণে ও বৈশ্বিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে শক্তিশালী বহুপাক্ষিক সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যান্য এলাকার ন্যায় এশিয়া ও ইউরোপ অঞ্চলের দেশসমূহও এ মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করছে, যা তাদের কর্মসংস্থান, আয়, ব্যবসায়, বিনিয়োগ, বাণিজ্যসহ জীবনের অন্যান্য সকল পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। ফলশ্রুতিতে, কোভিড-১৯ এর অপ্রতিরোধ্য বিস্তারের কারণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহের (এসডিজি) বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ বর্তমানে অনেক আসেম অংশীদার দেশের উপর যেভাবে প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

মহামারির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব হ্রাস, জীবন, জীবিকা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সুরক্ষা এবং কোভিড-১৯ এর কার্যকর সমাধান বের করাকে সবচেয়ে জরুরি সমষ্টিগত অগ্রাধিকার বলে সভায় একমত প্রকাশ করা হয়। এশীয়-ইউরোপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা, কার্যকর অংশিদারিত্ব গড়ে তোলা এবং পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন অর্থমন্ত্রীরা। কোভিড-১৯ যে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে তা মোকাবিলা এবং একটি শক্তিশালী, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তারা একত্রিত হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।