অর্থনীতি

বিশ্বের ‘ট্যাক্স হেভেন’ দেশগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার (৫.৯১ বিলিয়ন ডলার) অফশোর সম্পদ রয়েছে। যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৬০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে, বাকিটা ইউরোপ ও আমেরিকায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ট্যাক্স অবজারভেটরির সম্প্রতি প্রকাশিত ‘অ্যাটলাস অফ অফশোর ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

যেসব দেশে অন্য দেশ থেকে গোপনে অর্থ পাচার বা জমা রাখার সুযোগ রয়েছে সেই দেশগুলোকে বলা হয় ‘ট্যাক্স হেভেন’। লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো বিভিন্ন দেশে অর্থের উৎস জানানোর ঝামেলা নেই। করের হিসাব-নিকাশও নেই। এ ধরনের ট্যাক্স হেভেন দেশে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদ ক্রয় করতে পারে। এই সম্পদকে বলা হয় অফশোর সম্পদ।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. এমকে মুজেরি বলেন, দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে সম্পদ ও অর্থ পাচার একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি বলেছে, দেশ থেকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। এটি একটি অনুমান নির্ভর। আমার ধারণা, আরও বেশি টাকা পাচার হয়েছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অবসর অর্থ হিসাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে এই বিনিয়োগের অর্থ বৈধ না অবৈধ সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় না। তিনি বলেন, এই পাচার রোধ করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ হচ্ছে না। কারণ যারা পাচারের সঙ্গে জড়িত তারা অনেক প্রভাবশালী। দেশি কাগজে অনেক পাচারের খবর বের হয়েছে। কোনোটির বিচার না হওয়ায় এটি স্থায়ী সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, টাকা পাচার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পুঁজি পাচারের ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। তা না হলে বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের যে পতন সেটি থামানো যাবে না। পুঁজি পাচার থামাতে না পারলে অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়বে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অফশোর বিনিয়োগের ২০২২ সালের তথ্য দিয়ে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে ট্যাক্স হেভেনে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন অফশোর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ১৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এরমধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, হংকংসহ এশিয়ার ট্যাক্স হেভেনগুলোতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্যাক্স হেভেনে আবাসন খাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ করা মোট অফশোর সম্পদের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। এই বিনিয়োগের বেশিরভাগই হয়েছে সিঙ্গাপুর ও দুবাইতে। এছাড়া লন্ডন ও প্যারিসে কিছু বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে।

এতে আরও বলা হয়, অফশোর আবাসন শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীর মালিকানাধীন হয় কিংবা জটিল অফশোর কাঠামোর মাধ্যমে ভিন্ন দেশের কোনো বাসিন্দার মালিকানাধীন হয়ে থাকে যেখানে প্রকৃত মালিকের পরিচয় অস্পষ্ট থাকে।

ট্যাক্স অবজারভেটরির মতে, না জানিয়ে এই অফশোর বিনিয়োগে শূন্য দশমিক ৫ বিলিয়ন কর পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দুবাইয়ের শতভাগ রেডিমেট (প্রস্তুত) আবাসন সম্পদ কিনেছেন বা অপ্রস্তুত আবাসন সম্পদ কেনার জন্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন এমন কিছু ব্যক্তির তালিকা ফাঁস হয়েছে। তালিকায় ৩৯৪ জন বাংলাদেশির নাম এসেছে। ওই বছর তারা মোট ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের সম্পদ কিনেছেন। সেবার বাংলাদেশিরা মোট ৬৪১টি সম্পদ কিনেছিলেন। তবে অবজারভেটরির মতে, ওই বছর সর্বমোট ৫৩২ জন বাংলাদেশি সেখানে বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনেছেন। কারণ ফাঁস হওয়া সম্পদ কেনার ঘটনার সঙ্গে ট্যাক্স অবজারভেটরি নিজেদের আনুমানিক হিসাবও দিয়েছে। যেখানে ফাঁস হওয়া ঘটনার সঙ্গে ফাঁস না হওয়া ঘটনাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে কারা এসব সম্পদ কিনেছেন, সেই তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশিরা দুবাই শহরে প্রস্তুত ও অপ্রস্তুত সম্পদ কিনেছেন এবং যাদের কথা ফাঁস হয়েছে, এমন বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৪০৫ জন এবং তাদের কেনা সম্পদের মূল্য ছিল ২১ কোটি ১২ লাখ ডলার; সেই বছর বাংলাদেশিরা মোট ৬৫৭টি সম্পদ কিনেছিলেন।

এতে বলা হয়, ২০২২ সালে যে ৫৩২ জন বাংলাদেশি আবাসন কিনেছেন, তাদের কেনা সম্পদের অর্থের মূল্য ছিল ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ২০২০ সালে সে সংখ্যাটা ছিল ৫৬২ জন; অর্থের মূল্য ছিল ৩৭ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পদ কেনার হার কমলেও তার অর্থের মূল্য বেড়েছে।

অর্থনীতি

রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের জন্য কানাডা, কাতার, সৌদি আরব এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টন সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৩২ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার টাকা।

এর মধ্যে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া, ৪০ হাজার টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) এবং ৪০ হাজার টন ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার।
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ভার্চ্যুয়ালি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত পৃথক প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় প্রথম লটের ৪০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ২৮৫ ডলার, যা আগে ছিল ৩২৭ দশমিক ৭৫ ডলার।

আরেক প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা আদেন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় পঞ্চম লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ২২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৫১৯ মার্কিন ডলার, যা আগে ছিল ৫৫৪ ডলার।

সচিব বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের কাতার কেমিক্যাল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (মুনতাজাত) থেকে ১৩তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ২৯ লাখ ১১ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ২৭৯ দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার, যা আগে ছিল ২৮২ দশমিক ৫০ ডলার।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ১৪তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৯১ কোটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ২৭৬ দশমিক ১৭ ডলার, যা আগে ছিল ২৮৮ দশমিক ৩৩ ডলার।

এ ছাড়া ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ২৮৯ দশমিক ৫০ ডলার, যা আগে ছিল ৩৬৬ দশমিক ৩৭৫ ডলার।

অর্থনীতি

বাজেটের সুবিধা নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে হলে প্রথমে লুটপাট বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে ভঙ্গুর ব্যাংক খাত। কমিয়ে আনতে হবে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে খেয়ে ফেলছে । সার্বিক বিষয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট সমাধান থাকা দরকার। একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ।

কেমন বাজেট দেখতে চান?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : প্রতি বছর বাজেট আসে, বাজেট যায় কিন্তু তাতে নাগরিকের কী লাভ! বিশেষ মহল সুবিধা ভোগ করে। সেজন্য বলব এবারের বাজেটে মোটা দাগে কয়েকটি চাওয়ার মধ্যে একটি হলো নাগরিককে তিন বেলা পেটভরে খাওয়ার সুবিধা দিতে হবে। এরপর বাসস্থান, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব সুবিধা সব নাগরিক সমানভাবে পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে কোনো স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি চলবে না। এসব মৌলিক অধিকারের বরাদ্দে কোনো লুটপাট করা যাবে না। এছাড়া বাজেটের উচ্চ ব্যয় মেটাতে আয় বাড়াতে হবে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রান্তিক মানুষের দুর্ভোগ কমাতে করণীয় কী?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে আবার কমেছেও। কিন্তু বাংলাদেশে শুধু বেড়েছে, কমার লক্ষণ নেই। প্রায় সব দেশের মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমছে না। কারণ এখানে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এখানে ধনী-গরিবের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। যে ধনী সে আরও ধনী হচ্ছে। আর যে গরিব সে আরও গরিব হচ্ছে। সেজন্য আয়বৈষম্য যেন সন্তোষজনক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়-বাজেটে তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ভঙ্গুর ব্যাংক খাত দিয়ে কীভাবে বাজেট বাস্তবায়ন হবে?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : বাজেট বাস্তবায়নে লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে চলাচল করবে। কিন্তু ভঙ্গুর ব্যাংক খাত দিয়ে তা কী করে সম্ভব, এটি একটি বড় প্রশ্ন। আসলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কাগজ-কলমে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা দেখালেও প্রকৃত খেলাপি আরও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই। বড় অঙ্কের এ ঋণ ঢেকে রেখে ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়ন সম্ভব নয়। এছাড়া দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেকে আমানত তুলে নিয়েছেন। এর আগে পিপলস লিজিং অবসায়ন করে আমানতকারীদের বিপদে ফেলেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে লুটপাটে জড়িত কারও বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। লুটপাটের শিকার ফারমার্স থেকে পদ্মা ব্যাংকে রূপ নেওয়া এ ব্যাংকটিকে বাঁচাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। সে টাকা গেল কোথায়? তার কোনো হিসাব নেই। ব্যাংক তো বাঁচল না। এখন একীভূত করা হচ্ছে। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকে ব্যাংক খাতে লুটপাট শুরু হয়। যা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকে। প্রথমে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি। এরপর বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি, বেসিক ব্যাংকে লুটপাট ও ফারমার্স ব্যাংকে ভয়াবহ ঋণ জালিয়াতিসহ অন্যান্য আরও অনেক জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের তৎকালীন পর্ষদ সরাসরি জড়িত ছিল। তাই কোনো অবস্থায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে ঋণ বিতরণের সঙ্গে রাখা উচিত নয়। পর্ষদ পলিসি দেবে। আর তা কার্যকর করবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সেজন্য বাজেটে আর্থিক খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতার আগে ২২ পরিবার লুটেপুটে খেয়েছে। এখন খাচ্ছে অন্তত ২২০০ পরিবার।

পাচার করা টাকা ফেরতে বাজেটে কেমন প্রতিশ্রুতি চান?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়েছে। এসব টাকা দেশে থাকলে অনেক উন্নতি করা যেত। মূলত দুর্নীতি যত বাড়বে টাকা পাচারও তত বাড়বে। সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে সব দেশেই কম বেশি টাকা পাচার হয়। তবে এ দেশের মতো এত বেশি টাকা পাচার পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে জানা নেই। টাকা পাচারের কারণে ডলার সংকট শুরু হয়। আর ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ নেমে আসে তলানিতে। সেজন্য আসন্ন বাজেটে পাচার করা টাকা ফেরতে সুনির্দিষ্ট এবং শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : অর্থনীতি চলছে ভুল পদ্ধতিতে। এখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। সেজন্য বাজেটে এসব বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে নিম্নমুখী ধারা, এর কারণ এবং উত্তরণের উপায় কী?

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : রেমিট্যান্স কমার প্রধান কারণ হুন্ডি। এটা বন্ধ না হলে রেমিট্যান্স বাড়বে না। আর রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার তৈরি করতে হবে। পণ্যের মানে ভিন্নতা ও নতুনত্ব আনতে হবে।

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ : সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংক

অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত আবারো কমে ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, ১৭ এপ্রিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা এক হাজার ৯৮ কোটি মার্কিন ডলারে।

একই দিনে মোট রিজার্ভের পরিমাণ দুই হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। গত বছরের এ সময়ে মোট রিজার্ভের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল (৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১১৮ কোটি ডলার)।

ঈদের আগে ৮ এপ্রিল বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন বা দুই হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। ওই দিনে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫৩৯ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত ১০ দিনে বিপিএম-৬ এর রিজার্ভ কমেছে ২১১ মিলিয়ন বা দুই কোটি ১১ লাখ ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা আইএমএফের কাছে প্রকাশ করতে হয়।

এছাড়া আইএমএফের ঋণচুক্তি অনুসারে প্রতি তিন মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের হিসাব দিতে হয়। তবে এ তথ্য প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে আছে। প্রতি মাসে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে কষ্ট হবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষপ্রান্তে রয়েছে।

অর্থনীতি

ঈদুল ফিতরের আগে ১২ দিনে প্রবাসী আয় এলো ৮৭ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ হাজার ৬০৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে)।

ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিলের ১২ দিনে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৬ মার্কিন ডলার। মার্চে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৬৬ মার্কিন ডলার। আবার গত বছরের এপ্রিল মাসে একই সময়ে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ৫ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৬ মার্কিন ডলার।

এ হিসাবে ঈদের আগের ১২দিনে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। মূলত ইদের আগে দেশে আত্মীয়-স্বজনদের কেনাকাটা ও ব্যয় মেটানোর জন্য প্রবাসী আয় পাঠানো হয়। আর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলের প্রথম ১২দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এবং দেশে বাণিজ্যরত বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ২৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।

অর্থনীতি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশীয় সামষ্টিক অর্থনীতিতে চলমান সংকটের নেতিবাচক প্রভাব আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ ও বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতার প্রভাব বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আমানতের প্রকৃত সুদের হার ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। যা আমানতকারীদের ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত করে। ত্বরিতগতিতে এসব সমস্যার সমাধান না করলে দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর-২০২৩ প্রান্তিকের প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক বেশি নেতিবাচক কথাবার্তা যেমন বলেছে, তেমনি আশার বাণীও শুনিয়েছে। আগে শুধু আশাবাদই প্রকাশ করা হতো, নেতিবাচক দিকগুলো আড়াল করা হতো। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তির শর্ত হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে বেশি নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্যও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশজ প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য সরকারের নীতি পদক্ষেপ অনুসরণ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাত যেমন- কৃষি, রপ্তানিমুখী শিল্প, আমদানি বিকল্প শিল্প ও কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (সিএমএসএমই) খাতে অবাধ ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের মাত্রা কমানো, তারল্য সংকট হ্রাস, ব্যাংকিং খাতে দায় সম্পদের ভারসাম্যহীনতা রোধ এবং কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোতে অস্থিরতার প্রভাব দীর্ঘায়িত হচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই অর্জিত হয়নি। এমন কী গত বছরের তুলনায়ও অগ্রগতি কম হয়েছে। টাকার প্রবাহ, অভ্যন্তরীণ ঋণ, বেসরকারি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, মূল্যস্ফীতির হার কমানোর মতো অর্থনীতির প্রধান সূচকের কোনো খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর বিপরীতে বেড়েছে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দশমিক ৯০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায়ও টাকার প্রবাহ বেশি হলেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হচ্ছে।

এর কারণ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ডলারের আয় কমে যাওয়ায় নিট বৈদেশিক সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। ডলার সাশ্রয় করতে আমদানি ব্যয় কমানো হয়েছে। এ কারণে টাকার প্রবাহ বেড়েছে কম।

চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর বিপরীতে বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছিল ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা এবং গত বছরের তুলনায় এ খাতের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।

ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। ওই সময়ে অর্জিত হয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ও গত বছরের তুলনায় এ খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করার ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে অধিকতর উৎপাদনমুখী খাত যেমন- কৃষি, সিএমএসএমই ও আমদানি বিকল্প খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ অব্যাহত রাখার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি রয়েছে।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত সরকারের পুঞ্জীভূত নিট ঋণের স্থিতি ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আগের বছরের একই সময় শেষে ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। চলমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটাবস্থা বিবেচনায় সরকারের গৃহীত কৃচ্ছ্রসাধন নীতির ফলে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারি খাতে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও খাদ্যবহির্ভূত খাতের বিশেষ করে পোশাক ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের মূল্য বাড়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ পণ্য মূল্য সমন্বয়হীনতা এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার বেড়েই চলেছে। তবে পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ডিসেম্বরে কিছুটা কমার পর জানুয়ারিতে আবার বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এসে সামান্য কমেছে। ২০২১ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ অতিক্রম করে। যা এখনও অব্যাহত। ফেব্রুয়ারিতে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এদিকে ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার ৫ শতাংশের নিচে। যা মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় অর্ধেক কম। ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে আমানতের সুদ হার ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি ব্যাংকে আমানত রাখতে আমানতকারীদের নিরুৎসাহিত করে।

সূত্র জানায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড় হিসাবে এখনও নিæমুখী রয়েছে। বড় কোনো দেনা পরিশোধ করলেই রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়লেও রিজার্ভ বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা বেড়েছিল ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই সময়ে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে গত ৩ মাস ধরে রপ্তানি আয় প্রতি মাসে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আসছে।

এদিকে ব্যয়ে কঠোর লাগাম টানার ফলে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় কমেছে ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ বাড়ছে। এতে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় এমনটি হচ্ছে। এতে রিজার্ভ কমে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে নেমেছে। রিজার্ভ কমায় ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। যা মূল্যস্ফীতির হার উসকে দিচ্ছে।

অর্থনীতি

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে মানসম্পন্ন সেবা, অনুকূল পরিবেশ ও সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী স্মার্ট ট্যুরিজম গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ পর্যটন শিল্পে অনেক সমৃদ্ধ। নদী, সমুদ্র, পাহাড়, বন ও অপরূপ প্রকৃতির সমাহারে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশেরও পর্যটন খাতে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

সোমবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আটাবের নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পর্যটন একটি বিরাট শিল্প। জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান বৃদ্ধিতে আটাবকে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ স্মার্ট ট্যুরিজমের অন্যতম উপাদান। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে যার উদাহরণ হলো ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা।  শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আটাবকে সহযোগিতা করা হবে।

আটাব প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির  বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান এডিশনাল আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু কালাম সিদ্দিক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আটাবের সাধারণ সম্পাদক আফসিয়া জান্নাত সালেহ।

ইফতার মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক গভর্নর মুফতি মাওলানা ড. কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী।

উল্লেখ্য,গত ১০ মার্চ আটাবের নতুন কমিটি গঠিত হয়।

অর্থনীতি

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসতে শুরু করেছে। আগামীতে আসবে-যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, মানুষের আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা সেই কাজটি করেছি। যাদের টাকা আছে, তারা নিয়ে আসবে, আবার নিয়ে চলে যাবে। এই জিনিসটাই করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছি, ঈদের পর আরও বেশি ডলার আসা শুরু করবে। আইনটা মানুষের পছন্দ হয়েছে। এখন ডলার আসবে।

রোববার (২৪ মার্চ) গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ বলে যারা দাবি করেন, আসলে প্রতিপক্ষ নই। যারা কথা বলেন, কে তাদের নেতা বোঝা মুশকিল। যারা কথাবার্তা বলেন, তাদের কথাবার্তা শুনে যা মনে হয়, তাদের নেতাকে আমরা চিনি। তিনি বসে আছেন লন্ডনে। লন্ডন থেকে তিনি কী ধরনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বোঝা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন দৃশ্যমান হবেন, অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে চলে আসুন। অন্ধকার থেকে যেসব কাজ করছেন, তা মোটেই কাম্য নয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, তারা কয়েকদিন আগে বলছিলেন, দেশে সব শেষ হয়ে গেছে, বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে গেছে! দেশ শ্রীলংকা কী হলো? হয়নি। নতুন যে ব্যাংকটি হলো, একবার তারা বাংলাদেশে ঘুরে গেছে। তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে তৈরি। তারা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা, ব্যাংক ও বন্ধু দেশ আসছে। আমি দুঃখিত যে, আমরা শ্রীলংকা হলাম না। আমরা ওপথে যাইনি।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে স্কুল কাছে হওয়ার বিষয়টি অত্যাবশ্যক। ১৫ বছরে দায়িত্বকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটি করেছেন। শিক্ষার হারে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ সময়ে শতভাগ শিশুর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে, ৭০ ভাগ শিশুর মাধ্যমিকে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সময়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার উপরের দিকে মান নষ্ট হয়নি। যেহেতু নিচের দিকে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে, সে জন্য মনে হতে পারে শিক্ষার মানটা ভয়াবহ হারে কমে গেছে।

ভিয়েতনামের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সেখানে শিল্পের আউটপুটের কম্পোজিশনের আউটপুট কী? তাদের শিক্ষায় প্রযুক্তি নির্ভরতা বেশি। দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি হওয়ার কারণে বিদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক বেশি। আমাদের এখানে নেই।

আগামীতে সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে সময়োপযোগী করে ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইশতেহারে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বশাসনের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। ব্যাংকের বিষয়ে সমস্ত দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেটা মনে মনে করবে, সেটা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, একটি কথা বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে সঞ্চিত রাখার দরকার সেটা বাধ্যতামূলক করা হবে। যাতে অন্যথা না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এর অর্থ হলো, ব্যাংকের নিজস্ব একটা স্ট্রিগার মেকানিজম থাকার দরকার। সেটা হলো ব্যাংককে যদি খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে হয়, তাহলে তার ঋণ বিতরণের ক্ষমতা কমে যাবে। এটা একটি স্ট্রিগার।

আর একটি বিষয় হলো, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ঋণ। ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি থেকে কথাটি বলছি, কিন্তু এটা স্পষ্ট নয়। একটি হলো ব্যবসায়ীর গাফিলতির কারণে বা ক্ষমতা আছে কিন্তু দিচ্ছে না। আরেকটি হলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা বৈশ্বিক প্রতিকূল অবস্থার কারণে ঋণের টাকা দেওয়ার ইচ্ছা থাকার পরও সে দিতে পারছে না। এই ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতকে ইচ্ছাকৃত করা উচিত নয়। সেই কাজটিই হবে যা ইচ্ছাকৃত। আর অন্যটা হলো পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা বা বৈশ্বিক পরিস্থির কারণ সৃষ্ট, বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।

মূল প্রবন্ধে কাজী ইকবাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইস্তেহারে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। সেগুলো হলো, বেসরকারি খাতকে প্রধান্য; ক্ষুদ্র-কুটির-এসএমই ও বৃহৎ শিল্পের মাধ্যমে শিল্প উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজার নির্ভর শিল্পায়ন। ইশতেহারে উল্লেখিত বৈদেশিক বিনিয়োগ ও দেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রযুক্তি স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু দেশে যে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে বা বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেখানে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্ঠা ড. তৌফিক ই-এলাহী চৌধুরী, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, নির্বাচনী ইশতেহার ড্রাফ্ট কমিটির অন্যতম সদস্য সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।

অর্থনীতি

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপ থেকে পুণরায় গ্যাস উত্তোলনের জন্য ওয়ার্কওভার কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ওয়ার্কওভার কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক। আগামী দুই মাসের মধ্যেই ওয়ার্কওভার কাজ শেষে এই কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়- দেশের সবচেয়ে পুরনো তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ২৩টি কূপ থেকে প্রতিদিন ৩৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড যুক্ত হচ্ছে। তবে নানা কারণে বন্ধ রয়েছে ৪টি কূপ। এর মধ্যে ২০০০ সালে খনন করা ২৯ দশমিক ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১৪ নম্বর কূপটি থেকে গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি উঠায় ২০২১ সালের পহেলা নভেম্বর থেকে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাই তিতাস, মেঘনা, বাখরাবাদ ও হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের বন্ধ থাকা ৭টি কূপের ওয়ার্কওভার কাজ শুরু করেছে বিজিএফসিএল। এর মধ্যে ৪টি কূপের ওয়ার্কওভার কাজ করবে বাপেক্স। আর দ্রুত গ্যাস উত্তোলনের স্বার্থে বাকি কূপগুলোর ওয়ার্কওভার কাজ করবে বিদেশী প্রতিষ্ঠান।

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, তিতাসের কূপগুলোতে গ্যাস চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমছে। গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক রাখতে কয়েকটি কূপে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বন্ধ কূপগুলোর ওয়ার্কওভার শেষ হলে বিজিএফসিএলের গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন আরও বাড়বে।

অর্থনীতি

আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আগামী বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাত অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। আগামী বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসরকরি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আশা করি, এ পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও সংসদ-সদস্য এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, এনবিআর-এর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সংসদ-সদস্য ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতায়ন করতে হবে। এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ১২০০ কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেল, এটা নিয়ে অভিযোগের পরও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ব্যাংক খাতে এখন ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। বিভিন্ন ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে অনেক খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানোর প্রবণতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে এখন ১৪ শতাংশ গুনতে হচ্ছে। বাড়তি এ সুদের কারণে অনেকে খেলাপি হয়ে পড়বে। আবার ডলারের সরকারি দর ১১০ টাকা বলা হলেও আমদানির সময় কিনতে হচ্ছে ১২৪ টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান বলেন, বহির্বিশ্বের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক কারণে আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে মূলস্ফীতি ও খেলাপিতে এই প্রভাব বেশি পড়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাই উদ্যোক্তাদের বিকাশে সর্বাÍক নীতিসহায়তা অব্যাহত থাকবে।