আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ভাষণে ইউন সুক-ইওল বলেন, ‘উদারপন্থী দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন শক্তি উৎখাত করতে, আমি জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করছি।’

‘বিধ্বংসী ও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির আগ্রাসনের মুখে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং মানুষের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না’-যোগ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট।

ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির শীর্ষ নেতা হান ডং-হুন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন। তিনি সামরিক আইন জারির ঘোষণাকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন।

এদিকে প্রেসিডেন্টের সামরিক শাসন জারির পর জরুরী বৈঠক ডেকেছে অন্যতম বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত সংসদে নিজেদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে বাঁধার সম্মুখীন হন ইউন সুক-ইওল।

আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে অভিবাসন বিভাগ। হারিয়ান মেট্রোর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে ৭ হাজার ৮২২ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের মোট ৪১ হাজার ২৩৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্দোনেশিয়ার ১২ হাজার ৫৮৮ জন। মিয়ানমারের ৭ হাজার ১১২ জন নাগরিক গ্রেফতার। চলমান অভিযানে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ১ হাজার ৬০৭ জন নিয়োগকর্তাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা।

সোমবার ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. শামসুল আনোয়ার নাসারাহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/১৯৬৩, পাসপোর্ট অ্যাক্ট ১৯৬৬ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩ অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত, অভিবাসন বিভাগ ১৭ হাজার ৮২৫টি এনফোর্সমেন্ট অপারেশন চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে জনসাধারণের অভিযোগসহ চিহ্নিত হটস্পট অবস্থানগুলোতে প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, কেডিএন অন্যান্য সংস্থা যেমন রয়্যাল মালয়েশিয়ান পুলিশ (পিডিআরএম), রয়্যাল মালয়েশিয়ান কাস্টমস ডিপার্টমেন্ট (জেকেডিএম), স্থানীয় কর্তৃপক্ষের (পিবিটি) সমন্বয়ে অবৈধ অভিবাসী রোধে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এবং অবৈধ অভিবাসীকে রক্ষাকারী দল যারা অভিবাসন আইনের অধীনে আইন লঙ্ঘন করে তাদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সময়ে সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে মন্ত্রী বলেন, আমরা আরও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি, কিন্তু আমরা আইন ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধীদের সঙ্গে আপনয়, বরং এটা রক্ষা করা আমাদের অধিকার।

আন্তর্জাতিক

ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাংলাদেশের পতাকায়ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ লঙ্ঘন করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে ওই কনভেনশন লঙ্ঘনের কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।

এতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বাংলাদেশ সরকার আরও জানাতে চায় যে, বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি প্যাটার্নে এসেছে, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল।

এতে আরও বলা হয়, যেহেতু কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সেই দেশের সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানায়। ভারতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও অকূটনীতিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কূটনৈতিক মিশনে যেকোনো সহিংসতা প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানায়।

প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় কূটনীতিকদের আচরণ বিষয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে সই করা হয় ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপলোম্যাটিক রিলেশন। এতে মোট ৫৩টি আর্টিকেল বা ধারা রয়েছে।

এ চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল কিছু নিয়ম-নীতি এবং সেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন। সেসময় স্বাধীন দেশগুলো ওই চুক্তিতে সই করেছিল। পরে ধাপে ধাপে যেসব দেশ স্বাধীন হতে থাকে তারাও এই চুক্তিতে নিজেদের অন্তর্ভূক্ত করে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই চুক্তিতে সই করে ১৯৭৮ সালে। এই চুক্তির ১২নং ধারায় বলা হয়েছে, কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে গ্রাহক দেশকে। আর মিশনের অফিস এলাকায় বিদেশি কূটনীতিক মিশন প্রধানের অনুমতি ছাড়া গ্রাহক দেশের সরকারও প্রবেশ করতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, সিরিয়ার সংকটের বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোকেই ব্যবস্থা নিতে।

দেশটিতে তাকফিরি সন্ত্রাসীদের পুনরুত্থানের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল যেন এই পরিস্থিতিতে কোনো সুযোগ নিতে না পারে এবং তাদের শোষণের প্রচেষ্টা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

রোববার ইরানের পার্লামেন্টের একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় মাসুদ পেজেশকিয়ান সিরিয়ার সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং আলেপ্পো ও ইদলিবসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী ও বিদেশি সমর্থিত তাকফিরি সন্ত্রাসীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, মুসলিম দেশগুলো এতে হস্তক্ষেপ করবে এবং এই দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আমেরিকা ও ইসরাইলকে সুযোগ নিতে দেব না’।

পেজেশকিয়ান বলেন, তাকফিরি সন্ত্রাসীদের আক্রমণ আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন পেয়েছে। এই কর্মকাণ্ডগুলো আমেরিকা ও ইউরোপীয় অস্ত্র ব্যবহার করেই পরিচালিত হচ্ছে।

বুধবার থেকে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের মিত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আলেপ্পো অঞ্চলে প্রবেশ করে কিছু এলাকা দখল করেছে। সিরিয়ার সরকার ও জনপ্রিয় বাহিনীর সঙ্গে তাদের তীব্র সংঘর্ষ চলছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী রুশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পালটা অভিযান পরিচালনা করছে।

সিরিয়ার সংকট

২০১১ সালের মার্চ থেকে সিরিয়া বিদেশি সমর্থিত সহিংসতায় জর্জরিত। দামেস্ক দাবি করে আসছে, পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে, যা আরব দেশটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।

গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন

পেজেশকিয়ান পশ্চিমা-সমর্থিত ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। বিশেষত গাজা উপত্যকা এবং দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে।

তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ এবং রক্তপাত চাই না। যারা যুদ্ধ ও রক্তপাত ঘটায়, তারাই নিজেদের শান্তি ও মানবাধিকারের সমর্থক বলে দাবি করে।

তিনি আরও বলেন, গাজা এবং লেবাননের যুদ্ধ চলাকালীন ইসরাইলি বাহিনী ১০ হাজার শিশু হত্যা করেছে এবং তথাকথিত মানবাধিকারের সমর্থকরা কেবল নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। এটি একটি লজ্জাজনক আচরণ।

পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারিতা

পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেছেন, গাজা এবং লেবাননে যে ‘ন্যক্কারজনক’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন ও অস্ত্র সরবরাহের ফল।

তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একত্রিত হওয়া এবং সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের মতো ইসলামি দেশগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো অত্যন্ত জরুরি। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রধান হিসেবে ভারতীয় কশ্যপ প্যাটেলকে মনোনীত করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার (১ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

এর মাধ্যমে বর্তমান এফবিআই প্রধান ক্রিস্টোফার রেইকে বিদায় করার ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেছিলেন প্যাটেল। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নিরাপত্তা ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে প্রকাশ্যে সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে রাম মন্দির সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘১৫০০ সালেও সেখানে (অযোধ্যায়) একজন হিন্দু দেবতার মন্দির ছিল। সেটা ধ্বংস করা হয়। তারা (ভারতীয় হিন্দুরা) ৫০০ বছর ধরে সে মন্দির পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছে।’

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই এফবিআইকে ঢেলে সাজানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমর্থন না জানালে যেকোনো কর্মীকে এই সংস্থা থেকে বহিষ্কার করা উচিত।

সেপ্টেম্বরে শন রায়ান শো শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘এফবিআইর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা শুধু গোয়েন্দাগিরিতে ব্যস্ত থাকে। আমি ওই (এফবিআই) ভবনে কর্মরত সাত হাজার কর্মীকে বের করে এনে তাদেরকে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে মোতায়েন করব, যাতে তারা অপরাধীদের পিছে ধাওয়া করতে পারেন। আপনারাও এক ধরনের পুলিশ। পুলিশের মতো আচরণ করুন। পুলিশের দায়িত্ব পালন করুন।’

এফবিআইর বর্তমান পরিচালক রেই’র চাকরির মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত। তবে সেই মেয়াদের আগেই যে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে, ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় এটা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেল। প্যাটেলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান এই আবেদন করেছেন। বুধবার আইসিসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সহিংসতার সময় এবং তার পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত অপরাধগুলোর তদন্ত করা হয়েছে।

একটি বিস্তৃত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পর কার্যালয় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে বর্তমানে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও মিয়ানমার প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং যিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিশেষ করে নির্বাসন এবং নিপীড়নের মতো অপরাধমূলক দায় বহন করেন। এসব অপরাধ মিয়ানমার ও আংশিকভাবে বাংলাদেশেও সংঘটিত হয়েছে।

করিম খানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমার কার্যালয় দেখতে পেয়েছে যে, এই অপরাধগুলো ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্রবাহিনী তাতমাদাও, জাতীয় পুলিশ, সীমান্তরক্ষী পুলিশ এবং কিছু অরোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকের সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে।’

মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদনের বিষয়ে করিম খান বলেছেন, এটি মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন। শিগগির আরও আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেছেন, এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকদের জন্য এটি নির্ধারণের সময় এসেছে যে, এই আবেদনটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করে কিনা। যদি আইসিসির স্বাধীন বিচারকরা পরোয়ানাটি জারি করেন,

তবে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার সব প্রচেষ্টা আদালতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করব। আমরা এই মনোযোগ আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে অব্যাহত রাখব। কারণ আমরা এই পরিস্থিতিতে আরও আবেদন জমা দেব।

আন্তর্জাতিক

এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হল, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জের ধরে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, উভয়পক্ষই এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে। এরপর বুধবার ভোর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হল, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জের ধরে।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ১০-১ ভোটে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পরপরই হোয়াইট হাউসে বক্তৃতা দিতে আসেন বাইডেন।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সঙ্গে তার কথা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪ টায় যুদ্ধবিরতি শুরু করতে তারা দুজনেই সম্মত হয়েছেন।

“বৈরিতার স্থায়ী অবসানের লক্ষ্য নিয়ে এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পরিকল্পনা করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের যা অবশিষ্ট আছে, তাদের আর ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে দেওয়া হবে না।”

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। একই সময়ে লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েল সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে, যাতে হিজবুল্লাহ সেখানে আবার কোনো অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ না করতে পারে।

এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাসান ফাদলাল্লাহ লেবাননের আল জাদেদ টিভিকে বলেছেন, এ চুক্তি লেবাননের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সম্প্রসারণকে সমর্থন করলেও হিজবুল্লাহ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

“হাজারো মানুষ আমাদের প্রতিরোধে যোগ দেবে। আমাদের নিরস্ত্র করার যে প্রস্তাব ইসরায়েলি দিয়েছিল, সেটা ভেস্তে গেছে।”

হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে আসা ইরান, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র দল হামাস কিংবা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসা হুতি বিদ্রোহীরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন এক এক্স পোস্টে লিখেছে, “এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ইসরায়েলি ও লেবানিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহু মাস ধরে চলা আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি।”

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিব বলেছেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে লেবানিজ সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ৫ হাজার সদস্যকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা হবে।

ইসরায়েলের নেতা নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রস্তুত। কিন্তু হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করলে তার ‘কঠোর জবাব’ ইসরায়েল দেবে।

তার ভাষায়, এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলকে এখন ইরানের হুমকির বিষয়ে আরো মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিশ্রাম, রসদের সরবরাহ বাড়ানো এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আরও বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যাপক শ্রম সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শ্রম সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় শ্রম ও ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদল তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি একথা বলেন।

প্রফেসর ইউনূস প্রতিনিধি দলকে বলেন, “আমরা আমাদের শ্রম আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডের সম মানসমম্পন্ন করতে চাই। এটা আমার অঙ্গীকার।” তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কেবলমাত্র দেশের শ্রম আইন সংস্কার করতে এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ নিরসনের জন্য একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন শ্রম বিভাগের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি থিয়া মেই লি ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি ফে রড্রিগেজ।

দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শ্রম অধিকার গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশ থেকে পোশাক ও জুতা ক্রয়কারী শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো শ্রম আইন সংস্কার ও বাংলাদেশের কারখানায় শ্রমিক-বান্ধব পরিস্থিতি তৈরিতে অধ্যাপক ইউনূসের পদক্ষেপকে সমর্থন করে।

সরকার ও স্থানীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৮-দফা চুক্তিসহ পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে কেলি ফে রড্রিগেজ বলেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত সাড়ে তিন মাসে শ্রম খাতের জন্য যা করেছেন, ‘সেগুলো সবই তার বিস্ময়কর সাক্ষ্য।

মার্কিন কর্মকর্তারা মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে লাখো গার্মেন্টস ও পাদুকা শ্রমিককে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কারখানায় ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রতি বছর মজুরি পর্যালোচনার আহ্বান জানান।

পোশাক কারখানায় ন্যূনতম মজুরির সুবিধাদান প্রসঙ্গে থিয়া মে লি বলেন, ‘এটি ব্যবসার জন্য ভালো ও অর্থনীতির জন্যও ভালো।’ তিনি বলেন, কর্মী ইউনিয়ন হল ‘গণতন্ত্রের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র।’

তিনটি শীর্ষ মার্কিন ব্র্যান্ড পিভিএইচ, ক্যালভিন ক্লেইন এবং গ্যাপ ইনকর্পোরেটেডের সিনিয়র কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

পিভিএইচ কর্পোরেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল ব্রাইড বলেছেন, তারা বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারকে সমর্থন করেছেন। তারা কম্বোডিয়ায় অনুরূপ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন।

প্রফেসর ইউনূস ব্র্যান্ডগুলোকে প্রতি জানুয়ারিতে তাদের অর্ডারের মূল্যবৃদ্ধি ঘোষণা করার আহ্বান জানান, যাতে বাংলাদেশের নির্মাতারা সেই অনুযায়ী শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে পারে।

বৈঠকে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডেবও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রফেসর ইউনূসের ব্যাপক শ্রম সংস্কারকে পূর্ণ সমর্থন করে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার সাথে অংশীদার হতে চাই।’

আন্তর্জাতিক

“আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদেরই লড়াই করতে হবে।”

জুলাই মাসের কোনো একদিন কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ছোট্ট একটি নৌকায় করে নাফ নদী পেরিয়ে রফিক প্রবেশ করেন মিয়ানমারে, যে দেশ থেকে তিনি জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিলেন ২০১৭ সালে। তার উদ্দেশ্যে ছিল, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে যোগ দেওয়া।

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের ওই আশ্রয় শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। গত এক বছরে সেখানে সশস্ত্র দলগুলোর সদস্য সংগ্রহ এবং সহিংসতা- দুটোই বেড়েছে। ৩২ বছর বয়সী রফিকের মত হাজারো রোহিঙ্গা সেখান থেকে মিয়ানমারে ফিরে গেছেন যুদ্ধে যোগ দিতে। ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত অন্তত চারজনের বক্তব্য এবং দুটি ত্রাণ সংস্থার অভ্যান্তরীণ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জেনেছে রয়টার্স।

রফিক রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদেরই লড়াই করতে হবে।”

একহারা গড়নের শ্মশ্রুমণ্ডিত এই যুবক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে এসেছেন, কারণ সেখানে যুদ্ধ করার সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আশ্রয় শিবিরেই রফিকের সঙ্গে রয়টার্সের কথা হয়। তিনি বলেন, “লড়াই করা ছাড়া আমাদের আর পথ নেই।”

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে ২০১৬ সালে দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা।

মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হচ্ছেন।

রোহিঙ্গাদের অনেকে আবার সেই সব গোষ্ঠীর হয়ে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন, তাদের নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে। তারা লড়াই করছেন রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে।

রয়টার্স ১৮ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরের ভেতরে কীভাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সংগঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কথা বলেছেন। পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর লেখা দুটো অভ্যন্তরীণ ব্রিফিং দেখেছে রয়টার্স।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহ করেছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া, রোহিঙ্গাদের যুদ্ধে নামাতে জান্তা বাহিনীর অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রলোভন এবং এসব বিষয়ে বাংলাদেশি কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়টার্স পেয়েছে।

সেখানকার রোহিঙ্গা যোদ্ধা, ত্রাণকর্মী এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে রয়টার্স কথা বলেছে যারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। আর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মুসলমান রোহিঙ্গারা সুরক্ষা চেয়েছিল। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান রয়টার্সকে বলেন, কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) খুব বেশি কর্মী আছে বলে তিনি মনে করেন না।

কিন্তু নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।

অধ্যাপক খান বলেন, “দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে হতাশায় ভোগা শরণার্থীরা সহজেই জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি অপরাধী চক্রের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে। এর প্রভাব এ আঞ্চলের অন্য দেশের ওপরও পড়বে।”

গত বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা।

তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানে পৌঁছানোর পর জান্তার সেনারা তাকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আফনা বলেন, “আমি যখন জান্তা সেনাদের সঙ্গে থাকতাম, তখন আমার মনে হত, আমি সেই লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে, হত্যা করেছে।”

ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়ছে জান্তা বাহিনী। মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায় আরাকান আর্মিকে সমর্থন দিচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

মিয়ানমারে টিকে থাকা রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যে আরাকান আর্মি দায়ী, আর তাদের সঙ্গে লড়ার বিষয়ে আরএসও যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে, চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে সেই বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছিল।

আবু আফনা বলেন, “আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।”

আবু আফনার ভাষ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ যুগিয়েছে।

একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং আরেক রোহিঙ্গা যুবকও রয়টার্সকে একই কথা বলেছে। ওই দ্বিতীয় রোহিঙ্গা যুবকের ভাষ্য, তাকে জান্তার পক্ষে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

তারা এটাও বলেছেন, জান্তা বাহিনী এর বিনিময়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথিপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের।

কারও কারও জন্য নাগরিকত্বের নথিপত্র দেওয়ার বিষয়টি খুবই খুবই লোভনীয় একটি প্রস্তাব, কারণ মিয়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এখন তাদের জীবন আবদ্ধ বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে।

আবু আফনা বলেন, “আমরা টাকার জন্য যুদ্ধে যাইনি। গিয়েছিলাম নাগরিকত্বের জন্য, ফিরে পেতে চেয়েছিলাম জন্মভূমি।

মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ‘নাগরিকত্ব ও আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি ও জবরদস্তি’ করে জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য দলে টানার তথ্য একটি ত্রাণ সংস্থার জুন মাসের ব্রিফিংয়ে রয়টার্স দেখেছে।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধার তথ্য অনুযায়ী, প্রলোভন দেখিয়ে ১৩ বছরের এক শিশুকে পর্যন্ত জোর করে যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তা বাহিনী।

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায় বলে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন । তারা এও মনে করেন, বাংলাদেশ কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে তাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দর কষাকষির জায়গা আরো বাড়বে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের রয়টার্সকে বলেছেন, তিনিও মনে করেন, সরকারের এখন রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

কাদের বলেন, বিগত বাংলাদেশ সরকারের আমলে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিলেও সার্বিক দিক নির্দেশনা না থাকায় সেভাবে সমন্বয় ছিল না।

রোহিঙ্গা যোদ্ধা আবু আফনা রয়টার্সকে বলেছেন, এ বছরের শুরুর দিকে কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মংডুতে নিয়ে যান।

সেদিনের এক কর্মকর্তার কথা থেকে উদ্ধৃত করে আফনা বলেন, “এটা তোমাদের দেশ, তোমরা লড়াই করে তোমাদের অধিকার ফিরিয়ে নাও।”

তবে রয়টার্স স্বাধীনভাবে তার এ কথার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

‘আতঙ্কের মধ্যে বসবাস’

রাখাইন রাজ্যে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও উন্নত মহড়া চালানো আরাকান আর্মিকে হটিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

তবে মংডুর লড়াই ছয় মাস ধরে চলছে এবং রোহিঙ্গা যোদ্ধারা বলছে, অতর্কিত হামলাসহ কৌশল বিদ্রোহীদের অভিযানের গতি কমিয়ে রেখেছে।

পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “আরাকান আর্মি ভেবেছিল তারা খুব শিগগিরই বিজয় অর্জন করবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে মংডু তাদের ভুল প্রমাণ করেছে।”

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের এবং বিষয়টির সাথে পরিচিত অন্য এক ব্যক্তির ভাষ্য, এ বছরের শুরুর দিকে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই আলোচনায় কোনো সমঝোতা হয়নি।

তারা রয়টার্সকে বলেছেন, রোহিঙ্গা বসতিতে আরাকান আর্মির আক্রমণের কৌশলে বাংলাদেশ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে, কারণ সহিংসতার কারণে শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর চেষ্টায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

যদিও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের অবস্থানে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

বর্তমানে কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আরএসও ও আরসা সেখানে প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়ছে।

মারামারি এবং গোলাগুলি এখন রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাতে মানবিক সহায়তাকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি রয়টার্সকে বলেন, ২০১৭ সালে শিবিরগুলো প্রতিষ্ঠার পর এখনই সহিংসতার ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

“চলতি বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে। বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন করছে। এমনকি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার জন্য হুমকি দিচ্ছে।”

বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককেনস সতর্ক করে বলেছেন, শরণার্থী শিবিরের জন্য বরাদ্দ আন্তর্জাতিক তহবিল আগামী ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

শরণার্থীদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “উপার্জনের পথ না পেলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।”

গত মে মাসে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরিৎ উল্লাহ নিয়মিত রেশন জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এক সময় ধান ও চিংড়ি চাষ করতেন শরিৎ। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ এখন পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে।

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে কিছুই নেই। আমরা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি।”

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনের কাছে ‘এন্টি পার্সনাল’ স্থলমানই সরবরাহ করার ‘নতুন হুমকির’ নিন্দা করেছেন।

রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানানোর কয়েকদিন পর তিনি এ নিন্দা করলেন।

এন্টি পার্সনাল মাইন নিষিদ্ধ চুক্তির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে কম্বোডিয়ায় একটি সম্মেলনে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বজুড়ে ল্যান্ডমাইন অপসারণ ও ধ্বংসের প্রশংসা করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘তবে হুমকিটি রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- সমঝোতায় উপনীত হওয়া কিছু পক্ষের নতুন করে এন্টি পার্সনাল মাইনগুলোর ব্যবহার, সেইসাথে কিছু পক্ষের এই অস্ত্রগুলো ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে পড়া।’

তিনি সমঝোতায় স্বাক্ষরকারীকে ১৬৪টি রাষ্ট্রের প্রতি ‘তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ ও সমঝোতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এই সমঝোতায় সম্মত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন রয়েছে। তবে রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র এ সমঝোতায় সম্মত হয়নি।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাহবানা গুতেরেসের পক্ষ থেকে তার এ বক্তব্যটি প্রদান করেন।

মন্তব্যটি বিশেষভাবে ইউক্রেনের দিকে ইঙ্গিত করেছে কি না, তা জানতে এএফপি গুতেরেসের অফিস ও মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করেছে।

সম্মেলনে ইউক্রেনীয় দল মার্কিন ল্যান্ডমাইন সরবরাহ সম্পর্কে এএফপি’র প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনের ঘোষণা যে এটি কিয়েভে কর্মী-বিরোধী ল্যান্ডমাইন পাঠাবে। অবিলম্বে মানবাধিকার কর্মীরা এর তীব্র নিন্দা জানায়।

সম্মেলনটি কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটি ১৯৬০-এর দশক থেকে তিন দশকের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী বোমা ও মাইন বিস্ফোরিত দেশগুলোর অন্যতম কম্বোডিয়া।

১৯৭৯ সাল থেকে কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০,০০০ মানুষ স্থলমাইন ও অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক বিস্ফোরণে নিহত এবং এর দ্বিগুণ লোক আহত হয়।